শেষটা সুন্দর পর্ব ৪

#শেষটা_সুন্দর
#সিজন_২
#পর্ব_৪
#নিশাত_জাহান_নিশি

রক্তে রঙ্গিন হওয়া নূরের লাল চোখ দুটো আবার নীলাভ রং ধারন করেছে। নূর পুরোপুরি শান্ত হয়ে গেছে। হুট করে নূর চাঁদনীর দিকে একবার তাকিয়ে চাঁদনীর কাঁধে মাথা রেখে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলল।

চাঁদনী ঘন ঘন শ্বাস ফেলে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে নূরকে দুই হাতে চেপে ধরে এক্টু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আয়মন, হিমেল আর নীড়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,

–“কাজ হয়ে গেছে। নূর ভাইয়াকে বেডে শোয়াতে হবে। তোমাদের হেল্প লাগবে।”

ওরা তিনজন এক এক করে এসে নূরকে ধরাধরি করে বেডে শুইয়ে দিলো। এতোক্ষনে চাঁদনীর হাত খোঁপাটা খুলে চুল গুলো নিজেদের মুক্ত করে ফেলেছে। ঘূর্ণায়মান পাখার বাতাসে চুল গুলো নিজেদের স্বাধীন মনে করছে। চাঁদনীর মুখের সর্বএ ওরা জাতীয় পতাকার মতো উঁড়ু উঁড়ু করছে। ব্যাপারটা চাঁদনীর কাছে খুব বিরক্তিতে ঠেকছে। তাই সে চুল গুলো গুটিয়ে আবার হাত খোপা করে নিলো।

আয়মন নূরকে বেডে শুইয়ে দিয়ে নূরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আয়মনের পাঁচ আঙ্গুলের দাগ নূরের ডান গালটাতে স্পষ্ট ভেসে উঠেছে। এই মুহূর্তে আয়মন নিজেকে খুব বেশি অপরাধী মনে করছে। এই প্রথম বার বাধ্য হয়ে নূরের গায়ে হাত তুলতে হলো। টানা বিশ বছরের ফ্রেন্ডশিপ ওদের। জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে ওরা দুজন দুজনের পাশে থেকেছে। সুখ, দুঃখ শেয়ার করে নিয়েছে। একজনের দুঃখে আরেক জন মুর্ছা যেতো। কিন্তু আজ এক্টা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য ফ্রেন্ড হয়ে বেস্ট ফ্রেন্ডের গায়ে হাত তুলতে হলো।

আয়মনের দুচোখে পানি চিকচিক করছে। নিজেকে আর সামলাতে না পেরে আয়মন নূরের থেকে মুখ সরিয়ে পিছনে ঘুরে চাঁদনীর দিকে তাকাল। চাঁদনীর ঠোঁট থেকে এখনো রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। চাঁদনীর বিষাদ ভরা চেহারাটা দেখে আয়মন আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারল না। হুট করে চাঁদনীকে বুকের সাথে চেপে ধরল। চাঁদনী আয়মনের বুকে মাথা রেখে শান্ত স্বরে বলল,,,,,,

–“নূর ভাইয়াকে এখনি রিলিজ করার ব্যবস্থা কর। আমি বাড়িতে নিয়ে ওর সেবা করব। এখানে থাকলে সে আরো বেশি পাগলামী করবে। হসপিটালে বেশি সিনক্রিয়েট করা যাবে না। নূর ভাইয়ার সেন্স আসার আগেই আমাদের কাজটা সেরে ফেলতে হবে।”

আয়মন চাঁদনীকে বুক থেকে তুলে চাঁদনীর ঠোঁটে লেগে থাকা রক্ত গুলো ওর ডাওন হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মুছে চাঁদনীর কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,

–“আমি জানি, আমার বোন ঠিক পারবে নূরকে স্বাভাবিক করে তুলতে। এক্টা সময় পর হয়তো নূর তোকে রোজের চেয়ে ও বেশি ভালোবাসবে। তবে তোকে আরো বেশি ধৈর্য্যশীল হতে হবে।”

চাঁদনী অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে আয়মনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

–“আমাকে পারতেই হবে ভাইয়া। আমার ভালোবাসায় হিউড জোর আছে। আমি কখনো ক্লান্ত হবো না। নূর ভাইয়াকে আমি আমার করে নিবো। শুধু তোরা আমার পাশে থাকিস।”

আয়মন মুচকি হেসে বলল,,,,,

–“অলটাইম পাশে পাবি। যেখানেই থাকি ছুটে চলে আসব।”

আয়মন আর কথা না বাড়িয়ে নীড় আর হিমেলকে নিয়ে ডক্টরস রুমে চলে গেলো। কেবিনের দরজা খোলার সাথে সাথেই বাড়ির সব মুরুব্বিরা হুড় মুড়িয়ে কেবিনে ঢুকে পড়লেন। নূরের আম্মু এসে নূরের মাথার পাশে বসে নূরের মাথায় হাত বুলাতে লাগল। চাঁদনীর আম্মু এসে চাঁদনীকে ঝাপটে ধরে চাঁদনীর চোখে, মুখে অসংখ্য চুমো খেতে লাগল। জায়মার আম্মু এসে জায়মার পাশে দাঁড়িয়ে পড়ল। নূরের আব্বু আর চাঁদনীর আব্বু নূরের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে সবার কার্য কলাপ দেখছে।

*
*

প্রায় দশ মিনিট পর,,,,

নীড়, আয়মন আর হিমেল কেবিনে ঢুকে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“নূরকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। এখনি নূরকে বাড়িতে শিফট করা হবে।”

নূরের আম্মু, আব্বু এই ব্যাপারটাতে ঘোর নারাজ। ওরা ভাবছে হসপিটালে থাকলে ট্রিটমেন্ট ভালো হবে। তাই উনারা আপওি জানাচ্ছেন। হুট করে চাঁদনী এসে নূরের আম্মুর হাত দুটো ধরে নূরের আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“খালামনি…প্লিজ আমাকে একবার বিশ্বাস করে দেখো। কথা দিচ্ছি তোমরা হতাশ হবে না। আমি আমার বেস্ট দিয়ে নূর ভাইয়াকে সুস্থ করব। হসপিটালে থাকলে নূর ভাইয়া বেশি পাগলামি করবে। তাই আমি রিস্ক নিতে চাইছি না।”

নূরের আম্মু উনার ডান হাতটা চাঁদনীর ডান গালে রেখে অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে বলল,,,,,

–“তোর প্রতি আমার বিশ্বাস আছে বলেই আমার নূরকে তোর হাতে তুলে দিয়েছি। তোকে দেখেই বুঝেছিলাম, শুধু তুই ই পারবি আমার ছেলের ভাঙ্গা মনটাকে জুড়ে দিতে। তাই এতো মেলো ড্রামা করে নূরকে রাজি করিয়েছি এই বিয়েতে। তুই যা চাইবি তাই হবে। নূরকে এখনি বাড়ি নিয়ে যাবো।”

সাবরিনা আবরারের সম্মতি পেয়ে চাঁদনী এক্টা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। এরপর আয়মন, নীড় আর হিমেলকে উদ্দেশ্য করে চাঁদনী বলল,,,,,

–“ভাইয়া এক্টা স্ট্রেচার এনে নূর ভাইয়াকে খুব সাবধানে স্ট্রেচারে উঠিয়ে এরপর গাড়িতে নিয়ে বসাবি। আমার বর যেনো এক্টু ও ব্যাথা না পায়।”

নীড় কিছুটা অবাক হয়ে বলল,,,,,,

–“স্ট্রেচার লাগবে কেনো? আমরা তিনজনই তো ধরাধরি করে নূরকে নিয়ে যেতে পারি।”

চাঁদনী মুখটা ফুলিয়ে নীড়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“আমার নূর এতো ধকল সহ্য করতে পারবে না। এমনিতেই আয়মন ভাইয়া আমার নূরের গলুমলু গালটায় পাঁচ আঙ্গুল বসিয়ে দিয়েছে। তোমরা আর না করো না, প্লিজ স্ট্রেচারে করে আমার নূরকে সেইফলি নিয়ে যাও।”

উপস্থিত সবাই মুচকি হেসে মৃদ্যু আওয়াজ দিয়ে বলল,,,,,

–“বর পাগলী মেয়ে।”

চাঁদনী লজ্জায় মুখটা নিচু করে ফেলল। আয়মন, নীড় আর হিমেল কেবিন থেকে বের হয়ে ওয়ার্ড বয় দের দিয়ে এক্টা স্ট্রেচার নিয়ে আবার কেবিনে ঢুকে পড়ল। ওয়ার্ড বয় রা খুব সাবধানে নূরকে তুলে স্ট্রেচারে শুইয়ে দিলো। এরপর ওরা কেবিন থেকে বের হয়ে সোজা গাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

চাঁদনী ডক্টরস রুমে গিয়ে নূরের সব ঔষুধপএ বুঝে নিয়ে নিচে গাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটল। আয়মনের গাড়ির ব্যাক সিটে নূরকে উঠানো হয়েছে। চাঁদনী ব্যাক সিটে নূরের পাশে বসে নূরকে আস্তে করে ওর কোলে শুইয়ে দিলো। এরপর নূরের মাথায় বিলি কাটতে লাগল। আয়মন আর হিমেল ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ল।

বাকিরা সবাই নীড় আর সোহানীর গাড়িতে উঠে পড়ল। প্রথমে আয়মন ওর গাড়িটা হসপিটালের গেইটের দিকে ঘুড়িয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে মোড় নিলো। এরপর এক এক করে দুটো গাড়িই আয়মনের গাড়ির পিছনে ছুটল।

*
*

প্রায় আধা ঘন্টা পর,,,,

তিনটা গাড়িই এসে পৌঁছে গেলো নূরদের তিন তলা বিশিষ্ট বিশাল বাড়িটার সামনে। আয়মন, হিমেল আর নীড় গাড়ি থেকে নেমে নূরকে ধরাধরি করে গাড়ি থেকে নামিয়ে বাড়ির ভিতর হাঁটা ধরল। চাঁদনী ওদের পিছু পিছু দৌঁড়ে আসছে। চাঁদনীকে ফলো করে বাকিরা ও হাঁটছে। নূরকে সিঁড়ি বেয়ে দুই তলায় উঠানো হয়েছে। এরপর নূরের রুমের বিছানায় লম্বা করে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে।

সবাই এক এক করে নূরের রুমে ঢুকে পড়ল। নূর এখনো সেন্সলেস অবস্থায় পড়ে আছে। চাঁদনী সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,

–“তোমরা এবার নিজেদের রুমে গিয়ে রেস্ট নাও। অনেক ধকল গেছে তোমাদের উপর। যদি কোনো দরকার লাগে আমি তোমাদের ডেকে নিবো।”

নূরের আম্মু নূরের মাথার কাছে দাঁড়িয়ে নুরের কপালে এক্টা চুমো খেয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। একে একে সবাই রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আয়মন আর নীড় চাঁদনীর মাথায় হাত বুলিয়ে এক্টা মুচকি হাসি দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

চাঁদনী রুমের দরজা লাগিয়ে নূরের মাথার কাছে বসলো। এরপর ডেস্কের উপর থেকে পানির জগটা নিয়ে নূরের চোখে মুখে পানি ছিটাতে লাগল। টানা পাঁচ মিনিট পানি ছিটানোর পর নূরের সেন্স আসে। নূর পিটপিট করে চোখ খুলে সামনের দিকে তাকাল। চাঁদনী নূরের মাথার পাশে বসে আছে তাই সে এখনো চাঁদনীকে খেয়াল করে নি।

চাঁদনী চুপটি করে বসে আছে। নূর যেনো চাঁদনীকে দেখতে না পায়। জানালা দিয়ে আসা সূর্যের তীর্যক রশ্মিটা নূরের চোখে এসে পড়ছে। নূরের নীলাভ চোখ দুটো সূর্যের আলোয় আরো বেশি গ্লেইস করছে। চাঁদনী এক দৃষ্টিতে নূরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। নূর চোখ দুটো শান্ত করে সূর্যের আলোর দিকে তাকিয়ে আছে।

হুট করে নূর কারো ছায়া ওর বুকে আবিষ্কার করল। ছায়াটা থম মেরে বসে আছে। নড়াচড়া করছে না। ছায়াটা খুব সেজে গুজে শাড়ি পড়ে আছে। নূর যেই না ছায়াটা ফলো করে ওর মাথার পাশে তাকাল অমনি নূরের নীলাভ চোখ দুটো অশান্ত হয়ে উঠল।

নূর দাঁত কিড়মিড় করে যেই না শোয়া থেকে উঠতে লাগল অমনি চাঁদনী নূরকে ঝাপটে ধরে নূরের বুকে শুয়ে পড়ল। চাঁদনী ওর সর্বশক্তি দিয়ে চোখ বন্ধ করে নূরকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরেছে। নূর ছুটাছুটি করছে আর বলছে,,,,,

–“চাঁদ, তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছ। আমার একদম ভালো লাগছে না। তুমি আমার বুকে মাথা রাখলে কেনো? আমার এই বুকের মালিক শুধুমাএ রোজ। প্লিজ তুমি আমার উপর থেকে উঠো। না হয় তোমায় ছিটকে ফেলে দিবো। মাথা ফেটে রক্ত গড়ালে এর দায় ভার কিন্তু আমি নিবো না।”

চাঁদনী নূরকে আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরে নূরের বুকে মাথা রেখে মিনমিন করে বলল,,,,,

–“আমি তোমার বুকের ভাড়াটিয়া বুঝেছ? যদি কখনো রোজ আপুর মতো ভাগ্যবতী হই তাহলে আমি ও একদিন তোমার বুকের মালিক হবো। আর শুনো… তুমি যদি আমাকে মেরে ও ফেলো এরপর ও আমি তোমাকে ছাড়ব না। মৃত্যুর পর ভূত হয়ে তোমার বুকে মাথা রেখে চোখ দুটো বন্ধ করে তোমার সাথে মিশে যাবো।”

–“আমার বুকের মালিক হওয়ার যোগ্যতা তোমার কখনই হবে না। দিবা স্বপ্ন দেখছ তুমি। না হয় মরিচীকার পিছনে ঘুরছ। তুমি শুধু শুধু নিজের সুন্দর লাইফটাকে নষ্ট করছ। আমি তোমাকে আবারো বলছি চাঁদ, প্লিজ তুমি আমার অন্ধকার জীবন থেকে সরে যাও। তুমি শুধু আমার থেকে হতাশা পাবে, আশার কোনো আলো পাবে না। ভালোবাসা ছাড়া বাঁচা যায় না চাঁদ। আমার মধ্যে তোমার জন্য কোনো ভালোবাসা নেই। কি দরকার ভালোবাসার কাঙ্গাল হয়ে নিজের লাইফটাকে হেল করার?”

চাঁদনী নূরের বুক থেকে মাথা তুলে শান্ত চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

–“আমি তো বাঁচতেই চাইছি নূর ভাইয়া। তোমার ভালোবাসা নিয়েই আমি বাঁচব। প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিবো। বুক ভরা আশা নিয়ে তোমার সাথে জীবনের বাকিটা পথ নির্দ্বিধায় পাড় করে দেব। কে বলেছে আমি ভালোবাসার কাঙ্গাল? আমি ভালোবাসার স্বপ্নচারিনী। স্বপ্নে তোমার ভালোবাসা ফিল করব। একদিন দেখব, তুমি স্বপ্ন থেকে বাস্তবে আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছ।”

চাঁদনী একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে আবার বলল,,,,,,

–“অন্ধকারের এক্টা বিশেষত্ব কি জানো? একমাএ অন্ধকার ই আলোর সঠিক মর্ম বুঝে। যেমন ধরো: জোনাকী পোকা। রাতের নিস্তব্ধ অন্ধকারে এক দল জোনাকী পোকার আগমনে নিকষ অন্ধকারটা আলোর দিশা পায়। অন্ধকারটা তখন মৃদ্যু আলোয় ফুটে উঠে। তুমি এক্টু দূর থেকে গভীরভাবে এই দৃশ্যটা উপলব্ধি করলে দেখতে পাবে…. অন্ধকারটা কেমন হেঁসে হেঁসে উঠছে। মনে হবে জোনাকী পোকার আগমনে সে আলোর ঝলক খুঁজে পেয়েছে। অন্ধকারটা তখন খুব করে আলোর মাধ্যমটাকে ধরে রাখতে চাইবে। কিন্তু এক্টা নির্দিষ্ট সময় পর জোনাকী পোকা গুলো হুট করে উবে যাবে। তখন অন্ধকারটা আবার তার বিশেষত্ব হারাবে। মনমরা হয়ে যাবে। তখন তুমি ঐ অন্ধকারটাকে দেখলে ভয় পাবে। গাঁ শিউরে উঠবে।”

চাঁদনী চোখে এক গাধা জল নিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“জোনাকী পোকার মতো আমি ও তোমার অন্ধকার জীবনে অনেক অনেক আলো নিয়ে আসব। আমার উপস্থিতিতে তুমি হাসবে, আলোর দিশা খুঁজে পাবে। আমার অনুপস্থিতিতে তুমি কাঁদবে, মন খারাপ করবে, গাঁ শিউরে উঠবে।”

নূর খুব মনযোগ দিয়ে চাঁদনীর কথা গুলো শুনছিলো, কিন্তু কথা গুলো বিশ্বাস করতে পারছিলো না। এক্টু বেশিই বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে। নূরের মতে….

–“অন্ধকারের বিশেষত্ব কখনো আলোতে হয় না। অন্ধকারের বিশেষত্ব ফুটে উঠে ঘোর অমাবস্যায়। পুরো পৃথিবী অন্ধকার করে ঘোর অমবস্যা নেমে আসে। সেখানে আলোর ছিটি ফুটা ও বেমানান। নূর এই মুহূর্তে নিজেকে ঘোর অমাবস্যার সাথে তুলনা করছে। চাঁদনীর দেওয়া লজিকে সে বিশ্বাসী নয়।”

নূর আবার ধস্তাধস্তি শুরু করেছে। চাঁদনীকে খুব বিরক্ত লাগছে ওর। চাঁদনী ও নাছোড়বান্দা। নূরের বুকে ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে। কিছুতেই ছাড়বে না সে নূরকে। চাঁদনী মিনমিন করে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“প্লিজ নূর ভাইয়া, এতো ছুটাছুটি করো না। আমার পায়ে খুব ব্যাথা। সাথে ক্লান্ত ও লাগছে। ঘুম পরীরা ভিড় জমাচ্ছে আমার চোখে। তুমি ও ঘুমাও আর আমাকে ঘুমাতে দাও।”

চাঁদনীর ক্লান্তি মাখা কথা গুলো নূর নিজেকে হুট করে দমিয়ে দিলো। নূরের মনটা আচমকা কৌতুহলী হয়ে উঠল। চাঁদনী পায়ে ব্যাথা পাচ্ছে কেনো তা জানার জন্য। নূর শান্ত কন্ঠে চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“পায়ে কি হয়েছে তোমার?”

চাঁদনী নূরের শার্ট আঁকড়ে ধরে ঢুলুঢুলু কন্ঠে বলল,,,,

–“পায়ে আলপিন ঢুকে গেছে। আলপিনটা খুব মোটা ছিলো।”

নূর কিছুটা চিন্তিত কন্ঠে বলল,,,,

–“তুমি কি খালি পায়ে হেঁটেছিলে?”

–“হুম।”

–“বেশি কেয়ারলেস হলে এই রকম ই হবে।”

–“হুম। তুমি এই কেয়ারলেস মেয়েটার ই বর।”

বর কথাটা শুনে নূরের চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। এরপর ও নূর ওর রাগটাকে কন্ট্রোল করে শান্ত স্বরে বলল,,,,

–“খালি পায়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলে কেনো?”

–“তোমার জন্য।”

–“আমার জন্য মানে?”

–“তোমার না জানলে ও চলবে।”

–“বলতে প্রবলেম কি?”

–“আমি চাই না তুমি এতো সহজে আমার প্রেমে পড়ে যাও।”

নূর কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলল,,,,

–“এই ছাড়ো তো আমায়। খুব বিরক্ত লাগছে তোমায়।”

–“কিছু দিন পরে অভ্যাসে পরিণত হবো।”

#চলবে,,,,,,,!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here