শেষটা সুন্দর পর্ব ৫

#শেষটা_সুন্দর
#সিজন_২
#পার্ট_৫
#নিশাত_জাহান_নিশি

–“কিছু দিন পরে অভ্যাসে পরিণত হবো।”

–“তা আর এই জন্মে সম্ভব না। আমার অভ্যাস আমার পিছু ছেড়ে চলে গেছে।”

–“ওকে ব্যাপার না। আমি আপনার বদ অভ্যাস হবো। অভ্যাসের চেয়ে বদ অভ্যাস খুবই ডেয়ারিং। বদ অভ্যাস কিন্তু পিছু ছাড়ে না।”

–“আমি বদ অভ্যাসে অভ্যস্ত হবো না। বদ মানেই তো খারাপ। খারাপ সব কিছুই নিষিদ্ধ।”

–“খারাপ সব কিছুই প্রসিদ্ধ। কিছু কিছু খারাপ জিনিস নিষিদ্ধ জেনে ও আমরা কিন্তু একে প্রসিদ্ধ করে তুলি। নিষিদ্ধ জিনিসেই আমাদের আকর্ষণ বেশা থাকে। যেমন ধরুনঃ ধূমপান। ধূমপান করা স্বাস্থ্যের পক্ষে খারাপ। এর খারাপ দিকটা জেনে ও আপনারা ছেলের কিন্তু একে প্রসিদ্ধ করে তুলেছেন। ইভেন আপনিই তো এখন ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, ডেইলি এক প্যাকেট সিগরেট আপনার লাগেই লাগে। যন্ত্রনা ভুলার জন্য। আপনি যেহেতু জেনে শুনে খারাপ জিনিসটাকে প্রসিদ্ধ করে তুলেছেন, তাহলে আমি কেনো প্রসিদ্ধ হতে পারব না? আমি ও একদিন প্রসিদ্ধ হবো।”

নূর বেকুব বনে ঘুরাঘুরি করছে আর মনে মনে বলছে,,,,,

–“এই পুচকি মেয়েটা কতো জ্ঞান দিচ্ছে আমাকে। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে কানের নিচে দুটো বাজাতে। খালাতো বোন দেখে মায়া হচ্ছে। অন্য কেউ হলে এতো ক্ষনে আমার ভয়ে বাপ বাপ বলে দৌঁড় লাগাতো। আম্মুটা ও খুব শেয়ানা। জেনে শুনে এই বাঁদড়টাকে আমার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে। ওরা বুঝতেই চাইছে না চাঁদ কখনো রোজের জায়গা দখল করতে পারবে না। হাজার চেষ্টা করলে ও না। দরকার হলে আমি সন্ন্যাস হয়ে বনে বাদাড়ে ঘুরব, এরপরে ও এই জীবনে দ্বিতীয় কাউকে ভালোবাসতে পারব না। আমার ভালোবাসা এতোটা ও ঠুনকো না। রোজের স্মৃতি নিয়ে আমি বাকি জীবন কাটিয়ে দিতে পারবো। কারো সঙ্গ আমার লাগবে না।”

চাঁদনী ঢুলুঢুলু কন্ঠে বলে উঠল,,,,,

–“এই নূর ভাইয়া… তুমি কথা বলছ না কেনো? প্লিজ কথা বলো। তুমি কথা না বললে আমার চারপাশটা খুব খা খা লাগে, কেমন এক্টা অজানা ভয় হয়।”

নূর কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলল,,,,,

–“আমার খুব ঘুম পেয়েছে, তাই কথা বলতে ভালো লাগছে না। তুমি ও বকবক না করে ঘুমিয়ে পড়ো প্লিজ।”

চাঁদনী মুচকি হেসে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

–“কথা দাও আমি ঘুমিয়ে গেলে তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।”

নূর অন্য দিকে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,,,,

–“হুম কথা দিলাম।”

চাঁদনী এবার নিশ্চিন্তে নূরের বুকে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পড়ল। নূর চাঁদনী দিকে তাকিয়ে রাগে গিজগিজ করে বলল,,,,

–“ঘুমা না ঘুমা। তাড়াতাড়ি ঘুমা। তুই ঘুমালেই আমি পালাব। এসব ছেলে ভুলানো ন্যাকামি আমার একদম সহ্য হচ্ছে না। আমাকে রোজের কাছে যেতে হবে। আর এক্ষনি যেতে হবে। রোজ নিশ্চয়ই খুব রাগ করেছে। রাগ তো করার ই কথা। ওর বরাদ্দকৃত জায়গাটা যে, অন্য কেউ দখল করে আছে। ইচ্ছে তো করছে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে। কিন্তু বিবেকে বাঁধছে।”

চাঁদনী নূরের শার্ট আকঁড়ে ধরে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। নূর ভালো করে চাঁদনীকে পর্যবেক্ষন করছে। চাঁদনী আদৌ ঘুমিয়েছে কিনা সেটা বুঝার চেষ্টা করছে। নূর যখনই বুঝতে পেরেছে চাঁদনী সত্যি সত্যিই ঘুমিয়ে পড়েছে তখনই সে চাঁদনীকে ওর বুক থেকে নামিয়ে খুব সাবধানে খাটের উপর শুইয়ে দিলো। চাঁদনীকে শুইয়ে দিয়ে নূর যেই না খাট থেকে নামতে যাবে অমনি নূরের কোথাও এক্টা টান টান লাগছে। মনে হচ্ছে শার্টটা কোন কিছুর সাথে আটকে আছে। নূর পিছু ফিরে দেখল, চাঁদনী ওর শাড়ির আচলের সাথে নূরের শার্টের এক্টা কোণা বেঁধে রেখেছে। নূর ধপ করে আবার খাটের উপর বসে স্লোলি স্লোলি চাঁদনীর শাড়ির আঁচল থেকে ওর শার্টের গিট্টুটা ছুটানোর চেষ্টা করছে। চাঁদনী ঘুমে কাত হয়ে আছে। দিন দুনিয়ার খবর নেই। গতকাল সারা রাত নির্ঘুম ছিলো সে। তাই ঘুমে নেতিয়ে পড়েছে।

চাঁদনীর চুল গুলো পাখার কৃএিম বাতাসে পুরো মুখে লেপ্টে আছে। কেশ যুগল চাঁদনীর চাঁদ মুখটাকে আড়াল করে রেখেছে। নূর এতো দিকে না তাকিয়ে নিজের কাজটা মনযোগের সাথে করছে। নূর চাঁদনীর থেকে খুব শীঘ্রই ছাড়া পেতে চাইছে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর অনেক খাটা খাটনির ফলে নূর সফল হয়েছে চাঁদনীর শাড়ির আঁচল থেকে ওর শার্টের জোড়াটা খুলতে। গিট্টটা খুব টাইট করে দিয়েছিলো চাঁদনী। চাঁদনীর কান্ড দেখে নূর হতবাক। নূর চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে,, ,,,

–“কি সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা। আমার অজান্তে এতো নিঁখুতভাবে আমাকে আটকানোর চেষ্টা করেছে। একে আর কোনো ভাবেই পুচকি বলা যাবে না। তবে ধুর্ত বললে মন্দ হয় না। আমাকে এখনি এখান থেকে পালাতে হবে। আমি খুব একা থাকতে চাই। আমার নিজস্ব এক্টা স্পেস প্রয়োজন। যেখানে আমি রোজকে অনুভব করতে পারব।”

কথা গুলো বলেই নূর দুর্বল শরীর নিয়ে এক ছুটে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রুম থেকে বের হয়েই নূর নিচের দিকে উঁকি মেরে দেখল বাড়ির সবাই ড্রইং রুমে জট পাকিয়ে বসে আছে। আয়মন, নীড় আর হিমেল ও আছে। নূর বুঝে গেছে এখন কোনো রকমেই ড্রইং রুম দিয়ে বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না। ওরা সবাই আমাকে আটকে দিবে। আমি বরং ব্যালকনি দিয়ে পালাই।

যেই ভাবা সেই কাজ। নূর রুমে ঢুকে চাঁদনীর দিকে একবার তাকিয়ে ব্যালকনির দিকে চলে গেলো। নূর খোলা ব্যালকনি দিয়ে খুব সাবধানে নিজের উপর কন্ট্রোল রেখে পাইপ বেয়ে নিচে নামতে থাকে। এক্টা পর্যায়ে এসে সে ক্লান্ত হয়ে যায় তবু ও সে রুখে নি। দেয়ালের ঘর্ষণে হাতের কিছু কিছু জায়গা ছিলে রক্তাক্ত হয়ে গেছে। আর এক্টু নিচে নামতেই নূর সফল হয়েছে বাড়ির বাইরে বের হতে।

নূর হাঁফাতে হাঁফাতে বাড়ির বাগানে পার্ক করা বাইকটায় বসে পড়ল। ভাগ্যিস বাইকটাতে চাবি ঝুলানো ছিলো। না হয় আরেক বিপওি ঘটব। নূর আর দেরি না করে বাইক নিয়ে কাবির সিং এর মতো ছুটল অজানায়। নূরের সিল্কি চুল গুলো বাতাসে উড়ছে। ব্ল্যাক শার্টটা ও হাওয়ায় উড়ছে। শার্টের প্রথম দুটো বাটন খোলা। তাই শার্টটা বেশি উড়াউড়ি করছে। নীলাভ চোখ দুটো মুক্ত হওয়ায় গাঁ ভাসানোর খুশিতে দ্বিগুন গ্লেইস করছে।

*
*

অন্যদিকে,,,,

ড্রইং রুমে নূরের পরিবার, চাঁদনীর পরিবার, জায়মার পরিবার গোল মিটিং এ বসেছে। আজ মিটিং এর বিষয় হচ্ছে চাঁদনীর বউ ভাত। উনাদের সাথে আয়মন, হিমেল আর লাবিবা ও আছে। সাদমান আর নাতাশা দেশে থাকলে হয়তো ওরা ও এই মিটিং যোগ দিতো। আয়মন হলো চাঁদনীর আপন ফুফাতো ভাই। একদিক থেকে নূর আয়মনের বেস্ট ফ্রেন্ড আর চাঁদনীর দিকে থেকে আয়মন নূরের ফুফাতো ভাই। হিমেল হলো নূর আর আয়মনের বেস্ট ফ্রেন্ড। ফ্যামিলি মেস্বারের মতোই। নূর, আয়মন, সাদমান, নাতাশা, হিমেল ওরা পাঁচজনই বেস্ট ফ্রেন্ড। ক্লাস ফাইভ থেকে ওরা একই স্কুল, একই কলেজ, একই ভার্সিটিতে আছে। নূরের বিয়ের দিনই সাদমান আর নাতাশা ফটোগ্রাফীর এক্টা কোর্স নিয়ে ইংল্যান্ড গিয়েছে। অবশ্য সাদমানের ইংল্যান্ডে যাওয়ার আরো এক্টা কারণ ছিলো। সেটা আমরা পরে জানব। লাবিবা আর জায়মা চাঁদনীর বেস্ট ফ্রেন্ড। জায়মা শুধু চাঁদনীর বেস্ট ফ্রেন্ড না আপন খালাতো বোন ও।

হুট করে নূরের আব্বু হাবিব আবরার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“আমি চাইছি দুই দিন পরেই বউ ভাতের অনুষ্ঠানটা সেরে ফেলতে। ওরা দুজনই আপাতত অসুস্থ। তাই দুই দিন সময় নিলাম। বিয়েটা ও যেহেতু ঘরোয়াভাবে হয়েছে, বউ ভাতটা ও ঘরোয়া ভাবেই হবে। এতো তোড়জোড়ের দরকার নেই। নূরের মন মর্জি ভালো হলে পরে না হয় সব অনুষ্ঠান ধুমধাম ভাবে পালন করা হবে।”

নূরের আব্বুর কথায় সবাই একমত হয়ে গেলো। দুই দিন পরই ঘরোয়াভাবে বউ ভাতের অনুষ্ঠান হবে। এসব কথা বার্তার মাঝেই নীড় আড়চোখে সোফায় বসে থাকা সোহানীর দিকে তাকাচ্ছে। সোহানী ও মাঝে মাঝে নীড়ের দিকে তাকাচ্ছে। তাই কিছুক্ষন পর পর ওদের চোখাচোখি হয়ে যাচ্ছে। লাবীবা সেই কখন থেকে আয়মনের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। অথচ আয়মনের কোনো হেলদুল নেই। আয়মন অন্য দিকে ফিরে হিমেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। লাবীবা আয়মনকে খুব ভালোবাসে কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারছে না। বলবে কি করে, আয়মন তো লাবীবাকে পাওাই দেয় না। আয়মনের খামখেয়ালী দেখে লাবীবা আয়মনকে এক্টা মুচকি দিয়ে জায়মার সাথে আলাপে লেগে গেলো।

*
*

প্রায় এক ঘন্টা পর,,,,,,

চাঁদনী ঘুম থেকে উঠে চোখ পিটপিট করে বালিশ থেকে মাথাটা তুলে এদিক সেদিক তাকিয়ে নূরকে খুঁজছে। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে ও চাঁদনী নূরকে দেখতে পেলো না। চাঁদনী এবার ধপ করে খাট থেকে উঠে চোখে হাজারো ভয় আর আতঙ্ক নিয়ে হন্ন হয়ে ওয়াশরুম আর ব্যালকনিতে নূরকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু কোথাও নূর নেই। চাঁদনী হাঁপাতে হাঁপাতে বুকে হাত দিয়ে মিনমিন করে বলল,,,,,

–“রুমে তো কোথায় নূর ভাইয়া নেই। নিচে গিয়ে একবার খুঁজে আসি। হয়তো আয়মন ভাইয়া আর হিমেল ভাইয়ার সাথে আছে।”

কথা গুলো বলেই চাঁদনী রুম থেকে দ্রুত পায়ে প্রস্থান নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ড্রইং রুমে চলে এলো। পুরো রুমটায় চাঁদনী চোখ বুলিয়ে দেখল, বাড়ির সবাই ড্রইং রুমে গোল হয়ে আছে। সবার মুখটা শুকিয়ে আছে। উনাদের মাঝে নূর কোথাও নেই। চাঁদনী এবার সবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে বলল,,,,,

–“তোমরা কেউ নূর ভাইয়াকে দেখেছ?”

চাঁদনীর কথা শুনে সবাই বসা থেকে উঠে গেলো। আয়মন চিন্তিত কন্ঠে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,

–“নূর তো তোর সাথেই রুমে ছিলো।”

চাঁদনী শুকনো ঢোক গিলে বলল,,,,,

–“নূর ভাইয়া এখন রুমে নেই। ছাদে গিয়ে একবার খুঁজে আসি।”

কথাটা বলেই চাঁদনী ছুটল ছাদের উদ্দেশ্যে। চাঁদনীর পিছনে বাড়ির সবাই ছুটল। ছাদের দরজা পাড় হয়ে চাঁদনী পুরো ছাদটা জোকের মতো চুষে ফেলল। কিন্তু কোথাও নূরের দেখা মিলল না।

চাঁদনী এবার মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে হাটু ভাঁজ করে ছাদের ফ্লোরে বসে কান্নাসিক্ত চোখে বলে উঠল,,,,,

–“নূর ভাইয়ায়ায়ায়ায়া তুমি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিলে, আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না। তুমি তোমার কথা রাখো নি নূর ভাইয়া। আমাকে ঘুম পাড়িয়ে তুমি চলে গেছো। আজ শুধু মাএ আমার খামখেয়ালির জন্য আমি তোমাকে হারিয়ে ফেললাম।”

চাঁদনী এবার ডান হাত দিয়ে ওর কপালে চাপড় মারতে মারতে বলল,,,,

–” কেনো আমি ক্লান্ত হতে গেলাম। কেনো এভাবে মরার মতো ঘুমিয়ে পড়লাম। এখন আমি নূর ভাইয়াকে কোথাও খুঁজব।”

বাড়ির সবাই চাঁদনীর পাশে বসে চাঁদনীকে শান্তনা দিচ্ছে। সবাই খুব চিন্তিত নূরকে নিয়ে। আয়মন কপাল ভাঁজ করে কপালে হাত দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে মিনমিন করে বলল,,,,,

–“নূর বাড়ি থেকে বের হলো কিভাবে? আমরা সবাই তো ড্রইং রুমেই ছিলাম। নূর বের হলে তো আমরা নিশ্চয়ই ওকে দেখতে পেতাম। তার মানে নূর ব্যালকনি দিয়ে পাইপ বেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। ইসসসস…. এই অসুস্থ শরীর নিয়ে নূর এই রিস্কটা কেনো নিলো?”

আয়মন এবার কপাল থেকে হাতটা সরিয়ে কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল,,,,,

–“নূর…… তুই আরেকবার প্রমাণ করে দিলি আমার বোনকে তোর পছন্দ না। তুই ওর থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে চাস। এই জন্যই বিয়ের পরের দিন সুসাইড করতে চেয়েছিলি আর আজ সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলি। তাহলে কি আমরা ভুল করেছি তোর সাথে চাঁদের বিয়ে দিয়ে? আমরা কি তাহলে চাঁদের জীবনটা নষ্ট করে ফেললাম?”

চাঁদনী এখনো চিৎকার করে ছোটো বাচ্চাদের মতো কান্না করছে। নূরের আম্মু ও চাঁদনীর পাশে বসে বসে কান্না করছে। নীড় আর হিমেল এসব সহ্য করতে না পেরে আয়মনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। নীড় আয়মনের কাঁধে হাত রেখে বলল,,,,,

–“এখন আমাদের ভেঙ্গে পড়লে চলবে না আয়মন। চলো আমরা গাড়ি নিয়ে বের হই। খুঁজে দেখি পাগলটা কোথায় আছে।”

আয়মন শান্ত চোখে নীড়ের দিকে ফিরে বলল,,,,

–“যে নিজ থেকে হারিয়ে যায়, তাকে কখনো খুঁজে পাওয়া যায় না নীড় ভাইয়া। কিছুটা মরুভূমিতে মরীচিকা খোঁজার মতো।”

হিমেল মনমরা হয়ে আয়মনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“এখন আমাদের মরীচিকা ই খুঁজতে হবে। এছাড়া আর কোনো পথ নেই। দেখছিস না, চাঁদ ভাবী কতোটা ভেঙ্গে পড়েছে। চোখের সামনে এসব দেখতে পারছি না। খুঁজে বের করে নূরকে এক্টা চরম শাস্তি দিতে হবে। ইদানিং বড্ড ডিসপারেড হয়ে গেছে সে।”

আয়মন আর কথা না বাড়িয়ে চাঁদনীর পাশে গিয়ে বসল। চাঁদনী আয়মনকে দেখে আয়মনকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে হেচকি তুলে বলল,,,,

–“ভাইয়া…. আমি আমার শাড়ির আঁচলে নূর ভাইয়াকে বেঁধে রেখে ও শেষ পর্যন্ত ওকে আটকে রাখতে পারলাম না। নূর ভাইয়া ঠিকই আমার শাড়ির আঁচল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আমার থেকে দূরে সরে গেছে। তুই এখনি আমার নূরকে এনে দিবি। না হয় আমি নিজেই নিজেকে শেষ করে ফেলব।”

আয়মনের চোখের কোণে পানি জমে গেছে। আয়মন নিজেকে কিছুটা শান্ত করে চাঁদনীর কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,,

–“এনে দেবো তোর নূরকে। তুই একদম কান্না কাটি করবি না। শান্ত মেয়ের মতো চুপ চাপ বসে থাকবি। আমি, হিমেল আর নীড় ভাইয়া নূরকে নিয়েই বাড়ি ফিরব।”

আয়মন কথা গুলো বলেই চাঁদনীকে ছেড়ে ছাদ থেকে দ্রুত পায়ে প্রস্থান নিলো। পিছু পিছু নীড় আর হিমেল ও ছুটল। ওরা তিনজনই বাড়ির বাগানে পার্ক করা গাড়িটায় বসে পড়ল।

হুট করে চাঁদনী বসা থেকে উঠে চোখের জল গুলো মুছে চাঁদনীর আশে পাশে বসে থাকা সবাইকে ডিঙ্গিয়ে এক ছুটে ছাঁদ থেকে প্রস্থান নিলো।

*
*

অন্যদিকে,,,,,,

আমেরিকায় সন্ধ্যা সাতটা,,,,,

সাদমান হেলেদুলে সিঁড়ি বেয়ে পাঁচতলা বিশিষ্ট বড় এক্টা প্যালেসের ছাদের উপর উঠছে। নাতাশা ওকে ঝাপটে ধরে খুব সাবধানে পা ফেলে এক্টা এক্টা সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠাচ্ছে। সাদমান হেলেদুলে অস্পষ্ট ভাবে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

–“আমি এখনি সানমুনকে দেখব। দুই দিন হলো আমার সানমুনকে দেখি না। নাতাশা, তুই আমাকে তাড়াতাড়ি সানমুনের কাছে নিয়ে চল। আমার বুকের বাঁ পাশটায় প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে। খুবব ভালোবাসি আমি সানমুনকে।”

নাতাশা এসব শুনছে আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে। সাদমান ওভার ড্রাঙ্ক হয়ে আছে। নেশায় আসক্ত হয়ে আছে সে। নাতাশা হাজার চেষ্টা করে ও সাদমানের হাত থেকে ড্রিংকস এর বোতলটা সরাতে পারে নি। গড়গড় করে পুরো বোতল ড্রিংকস সাবার করে দিয়েছে সাদমান। এখন আবার নাতাশার কাছে বায়না ধরেছে ছাদের উপর উঠে দূর আকাশের চাঁদ দেখবে। এই চাঁদ টাই নাকি ওর সানমুন।

ভালোবাসার মানুষটার মুখে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির নাম শুনলে কোনো প্রেমিক বা প্রেমিকাই হয়তো নিজেকে সামলে রাখতে পারে না। তাই নাতাশা ও নিজেকে সামলে রাখতে পারছে না। ভিতরে ভিতরে জ্বলছে আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here