শেষটা সুন্দর পর্ব ৬

#শেষটা_সুন্দর
#সিজন_২
#পর্ব_৬
#নিশাত_জাহান_নিশি

ভালোবাসার মানুষটার মুখে দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তির নাম শুনলে কোনো প্রেমিক বা প্রেমিকাই হয়তো নিজেকে সামলে রাখতে পারে না। তাই নাতাশা ও নিজেকে সামলে রাখতে পারছে না। ভিতরে ভিতরে জ্বলছে আর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে।

ছাদে উঠেই সাদমান নাতাশার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ল। সে দুলছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলছে,,,,,

–“চাঁদটা এখনো সম্পূর্ণভাবে উঠে নি কেনো? আমি সম্পূর্ণ চাঁদ টাকে দেখতে চাই।”

সাদমান আবার ঢুলুঢুলু চোখে অর্ধ চাঁদটাকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,,,,,

–” এই চাঁদ…. তুই এখনি সম্পূর্ণ ভাবে উঠ। না হয় তোকে আমি আকাশ থেকে ধরে এনে মাটিতে ছুড়ে মারব।”

সাদমানের গলার আওয়াজ আস্তে আস্তে বাড়ছে। নাতাশা বুঝে গেছে সাদমান এখন পাগলামী শুরু করবে। তাই সে দৌঁড়ে সাদমানের পাশে গিয়ে দাঁড়াল। সাদমান নাতাশাকে দেখে ঢুলুঢুলু কন্ঠে বলল,,,,,,,,

–“নাতাশা…. চাঁদটাকে বল না থালার মতো হতে। আমি সম্পূর্ণ চাঁদটাকে দেখতে চাই। আমার সানমুনকে দেখতে খুবববব ইচ্ছে করছে।”

নাতাশা বিষন্ন মন নিয়ে সাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“চাঁদ উঠার সময় এখনো হয় নি সাদমান। মাএ বাজে সন্ধ্যা সাতটা। সবকিছুর এক্টা নির্দিষ্ট সময় থাকে।”

সাদমান রেগে গিয়ে চোয়াল শক্ত করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“নির্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষা আমি করতে পারব না। তুই এখনি চাঁদটাকে বল সম্পূর্ণভাবে উঠতে। না হয় আমি ছাদ থেকে এক্ষণি ঝাঁপ দিবো। আমি এই অভাগা কপাল নিয়ে বাঁচতে চাই না। খুব খুব খুব অভাগা আমি। চাইলে ও তাকে হাতের কাছে পাই না। দেখতে চাইলে ও দেখতে পারি না।”

নাতাশা কিছুটা রেগে সাদমানের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“এতোই যেহেতু দেখতে মন চায়, ধরতে মন চায় তাহলে বিডি ছেড়ে আমেরিকা আসলি কেনো? দেশেই থাকতি। তোকে তো কেউ ফোর্স করে নি এখানে আসার জন্য।”

–“মনুষ্যত্ব আমাকে বাধ্য করেছে এখানে আসতে। চোখের সামনে সানমুনকে নূরের সাথে দেখতে পারব না। তাই বিয়ের দিনই সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে চলে এসেছি। আমি থাকলে ওদের অনেক প্রবলেম হতো। তাই বাধ্য হয়ে এসেছি।”

নাতাশা কিছুটা শান্ত স্বরে বলল,,,,

–“চাঁদ এখন বিবাহিত সাদমান। এরপর ও কেনো চাঁদের জন্য এতো পাগলামী করছিস?”

সাদমান নাতাশার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ছাদের ফ্লোরে ধপাস হয়ে বসে নাতাশার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে মুখে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বলল,,,,

–“এক বছর আগে আমি প্রথম বারের মতো নূরের বাড়িতে সানমুনকে দেখি। এর আগে কখনো সানমুন আমার চোখে পড়ে নি। সতেরো বছরের পুচকি মেয়েটা তখন দুই বেনুনি করে পুরো এলাকা ঘুড়ে বেড়াত। একদিন বিকেলের দিকে নূরের বাড়িতে গিয়েছিলাম। নূরকে না জানিয়ে হুট করে নূরের বাড়িতে উঠেছি। বাড়ির গেইটের ভিতর ঢুকেই আমার চোখ দুটো আটকে গিয়েছিলো। কিছুতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পরীটার থেকে চোখ সরাতে পারছিলাম না। সানমুন ছোট এক্টা আম গাছ থেকে ঝাপ দিয়ে আম পাড়ার চেষ্টা করছে। ঐ দিকে নূর আর আয়মন আম গাছের নিচে বসে বসে সানমুনের দুই বেনুনি ধরে টানছে। নূর ফোনে রোজের সাথে প্রেমালাপ করছে আর সানমুনের এক্টা বেনুনী ধরে টানছে। আয়মন সানমুনের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে আর সানমুনের অন্য বেনুনী ধরে টানছে। সানমুন মুখটাকে কাঁদো কাঁদো করে ঝাপ দিচ্ছে আর আয়মনের দিকে কিছুক্ষন পর পর রাগী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। সানমুনকে তখন কি পরিমান কিউট লাগছিলো আমি হয়তো বলে বুঝাতে পারব না। প্রথম দেখাতেই আমি সানমুনের প্রেমে যাই। প্রেম থেকে ভালোবাসা, ভালোবাসা থেকে…… দূরত্ব।”

সাদমান কিছুটা থেমে আবার বলল,,,

–“সানমুন যদি দশ, বারোটা সন্তানের মা ও হয়ে যায় এরপর ও আমি ঠিক এভাবেই সানমুনের জন্য পাগলামী করব। ঠিক এভাবেই ভালোবেসে যাবো।”

–“তাহলে বিয়ে করে নিতি তোর সানমুনকে! দূরত্ব বাড়ালি কেনো?”

–“বন্ধুত্বের কাছে ভালোবাসা হেড়ে গেছে। আমি চাইলেই হয়তো সানমুনকে জোর করে বিয়ে করতে পারতাম। কিন্তু নূরের এই মুহূর্তে সানমুনের খুব প্রয়োজন। শুধু মাএ সানমুনই পারবে ওর বাচ্চামো দিয়ে নূরের অতীতটাকে ধুয়ে মুছে মলিন করে দিতে। রোজকে ভালোবেসে নূর মুর্ছা গেছে, সানমুনকে ভালোবেসে না হয় মুখ তুলে শত সহস্র আশা নিয়ে সামনে তাকাবে।”

নাতাশা আর কথা না বাড়িয়ে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদমান চাঁদ দেখার আশায় ছাদের ফ্লোরে হাতে ভর দিয়ে বসে গেছে।

*
*

অন্যদিকে,,,,,,

চাঁদনী ছাদ থেকে প্রস্থান নিয়ে এক ছুটে বাড়ির বাগানে পার্ক করে রাখা আয়মনের গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে সমানে হাঁফাতে লাগল। আয়মন যেই না গাড়ি স্টার্ট করতে যাবে অমনি চাঁদনী আয়মনের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা হাঁফিয়ে বলল,,,,

–“আমি ও তোদের সাথে যাবো। প্লিজ আমাকে নিয়ে চল।”

আয়মন জানালার গ্লাসটা খুলে চাঁদনীকে হাত দিয়ে ইশারা করল গাড়িতে উঠার জন্য। আয়মনের সম্মতি পেয়ে চাঁদনী দৌঁড়ে গিয়ে ব্যাক সিটে নীড়ের পাশে বসে পড়ল। আয়মন পিছু ফিরে চাঁদনীর দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো। চাঁদনী নীড়ের বুকে মাথা রেখে শান্ত হয়ে বসে আছে। নীড় চাঁদনীর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

নীড় আয়মনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“গাড়িটা প্রথমে ভার্সিটির দিকে ঘোরাও।”

আয়মন মাথা নাড়িয়ে বলল,,,,

–“হুম ভাইয়া, তুমি ঠিক বলেছ। প্রথমে ভার্সিটি থেকে ঘুরে আসি। দেখি ভার্সিটির চিপায় চাপায় লুকিয়ে আছে কিনা।”

কথাগুলো বলেই আয়মন ভার্সিটির রাস্তায় গাড়িটা ঘুড়িয়ে নিলো।

চাঁদনী নীড়ের বুকে মাথা রেখে নীড়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“আমরা নূর ভাইয়াকে খুঁজে পাবো তো?”

নীড় মুচকি হেসে বলল,,,,

–“পাবো… অবশ্যই পাবো। পালিয়ে আর যাবে কই? চাঁদের টানে ঠিক ফিরে আসবে।”

চাঁদনী কিছুটা লজ্জা পেয়ে মুখটা লুকিয়ে নিলো। আয়মন ড্রাইভ করছে আর এদিক সেদিক তাকিয়ে নূরকে খুঁজছে। হিমেল ও জানালার বাহিরে মুখ রেখে চারপাশে চোখ বুলিয়ে নূরকে খুঁজছে।

কিছু দূর যাওয়ার পর ভার্সিটির রাস্তায় লেগেছে এক বিশাল জ্যাম। পুরো রাস্তাটা স্টুডেন্টসদের দখলে। ভার্সিটির সব স্টুডেন্টসরা অন্বেষনে বসেছে। দেশ জুড়ে ধর্ষকদের পরিমাণ বেড়ে গেছে। তাই স্টুডেন্টসরা এর বিরুদ্ধে প্রটেস্ট করছে। গাড়ি নিয়ে মুভ করার জায়গা নেই। যা করতে হবে পায়ে হেঁটে করতে হবে। এই ভীড় ঠেলে ভার্সিটির ভিতরে ঢুকার কোনো চান্স নেই। আয়মন পিছনে তাকিয়ে চাঁদনী আর নীড়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“আমার মনে হয় না নূর ভার্সিটিতে আছে। অন্য কোথাও নূরকে খুঁজতে হবে। কিছুক্ষণ ওয়েট করে দেখি ভীড়টা কমে কি না।”

প্রায় দশ মিনিট পর…..

ভীড় কমার কোনো নাম ই নেই। উল্টো বেড়ে গেছে। চাঁদনী কিছুটা বিরক্ত হয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,

–“এভাবে গাড়িতে বসে থেকে সময় নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। চলো আমরা পায়ে হেঁটে নূর ভাইয়াকে খুঁজি। আমি চাই না আমাদের খাম খেয়ালির জন্য নূর ভাইয়ার কোনো ক্ষতি হয়ে যাক।”

কথা গুলো বলেই চাঁদনী গাড়ি থেকে নেমে গেলো। চাঁদনীর সাথে সাথে বাকিরা ও গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। আয়মন ওর গাড়িটা এক্টা পরিচিত গ্যারেজে পার্ক করে পায়ে হাঁটা ধরল। চাঁদনী হাঁটছে আর পিছু তাকিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,

–“আমরা বরং আশে পাশের সবগুলো পার্ক ঘুরে ঘুরে দেখি। হয়তো নূর ভাইয়াকে কোনো এক্টা পার্কে পেয়ে যেতে পারি।”

চাঁদনীর কথায় সবাই সম্মতি জানিয়ে চাঁদনীর পিছু পিছু হাঁটা ধরল।

*
*

প্রায় দুই ঘন্টা পর,,,,

দুপুর ঘনিয়ে বিকাল হয়ে গেলো। ওরা সবাই এক এক করে আশেপাশের সবকটা পার্ক চুষে ফেলেছে। কিন্তু কোথাও নূর নেই। সবাই হতাশ হয়ে রাস্তার ফুটপাতে বসে হাফাচ্ছে আর ঘামছে। একেক টার পায়ের অবস্থা ফুলে ফেঁপে ঢোল হয়ে গেছে। চাঁদনীর অবস্থা দ্বিগুন খারাপ। মাটিতে পা রাখতে পারছে না সে। চোখ দিয়ে সমানে পানি পড়ছে। আলপিনের ব্যাথাটা এখনো যায় নি। তার উপর দুই ঘন্টা যাবত টানা হাঁটাহাঁটি। ধকলের উপর ওভার ধকল। নেহাত ভালোবাসে বলে এতোটা ধৈর্য্যশীল হতে পারছে। না হয় এতক্ষনে হাল ছেড়ে নিজের দিকটা ভাবত। ভালোবাসা জিনিসটাই এরকম। কখনো এক তরফা নিজের দিকটা ভাবা যায় না। উভয় দিক ভেবে নিঁখুতভাবে ভালোবেসে যেতে হয়। অনেক ধৈর্য্যশীল হতে হয়। অনেক আত্নত্যাগী হতে হয়। অনেক ডিসপারেড ও হতে হয়। যেমনটা নূর রোজের জন্য, আর চাঁদনী নূরের জন্য।

চাঁদনীর অবস্থা দেখে আয়মন দৌঁড়ে গিয়ে সামনের টং দোকান থেকে এক বোতল ঠান্ডা পানি নিয়ে এলো। এরপর চাঁদনীর মুখের সামনে পানির বোতলটা ধরে আয়মন বলল,,,,,

–“পানিটা প্রথমে খেয়ে নে। এরপর চোখে, মুখে ছিটিয়ে পা দুটো পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখ। আরাম লাগবে।”

চাঁদনী মুখটা ফুলিয়ে আয়মনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

–“নূর ভাইয়াকে খুঁজে না পাওয়া অব্দি আমি কিচ্ছু মুখে দিবো না। এক ফোঁটা পানি ও না। তুমি আমার সামনে থেকে পানির বোতলটা নিয়ে যাও।”

আয়মন ধমকের সুরে চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,

–“চাঁদ…বেশি বাড়াবাড়ি করছিস তুই? এই… তুই যে এতো নূর নূর করছিস, নূর কি তুই তুই করছে? নূর শুধু রোজ রোজ করছে। আমার মাথাটা গরম না করে পানিটা খেয়ে নে বলছি।”

চাঁদনী মন খারাপ করে হাঁটুর উপর মাথা রেখে বোবা কান্না জুড়ে দিলো। আয়মন রাগে ওর সামনের চুল গুলো টানতে টানতে পানির বোতলটা রাস্তার মাঝখানে ছুড়ে ফেলে দিলো। চাঁদনী কিছুটা ভয় পেয়ে মাথা তুলে আয়মনের দিকে তাকাল। আয়মন চোয়াল শক্ত করে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদনী ভয়ে এক্টা শুকনো ঢোক গিলে অসহায়ের মতো মুখ করে আয়মনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“একদিন নূর ভাইয়া ও সারাক্ষন চাঁদ চাঁদ করবে, দেখে নিস। অনেক ভালোবাসবে নূর ভাইয়া আমাকে। তখন তুই আর আমার উপর এতো রাগ দেখাতে পারবি না। আমাকে ধমকাতে ও পারবি না। নূর ভাইয়া তোকে খুব বকবে।”

চাঁদনীর কথা গুলো শুনে আয়মনের চোখে জল ভরে এলো। আয়মন এক ছুটে চাঁদনীর পাশে বসে চাঁদনীকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমো খেয়ে বলল,,,,

–“যদি কখনো ঐ দিনটা আসে, তাহলে তোর আয়মন ভাইয়ার মতো খুশি এই পৃথিবীতে আর কেউ হবে না। আমি ঐ দিনটার জন্য অপেক্ষা করব।”

চাঁদনী কাঁদতে কাঁদতে আয়মনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“নূর ভাইয়াকে এখনো খুঁজে পেলাম না। কোথায় আছে, কি অবস্থায় আছে কিছুই জানি না। আমার বড্ড টেনশান হচ্ছে। নূর ভাইয়া ফের খারাপ কিছু করে বসে নি তো? আমার খুব ভয় লাগছে ভাইয়া। আমার বার বার মনে হচ্ছে, নূর ভাইয়া নির্জন কোনো জায়গায় আছে। যেখানে থাকলে রোজ আপুকে নূর ভাইয়া খুব কাছ থেকে ফিল করতে পারবে।”

কথা গুলো বলেই চাঁদনী আয়মনের বুক থেকে মাথা তুলে চোখের জল গুলো মুছে খিলখিল করে হেসে বলল,,,,,,

–“ভাইয়া… আমি বুঝে গেছি নূর ভাইয়া কোথায় আছে। আমি সিউর নূর ভাইয়া ঐখানেই আছে। প্লিজ তোরা আমার সাথে চল।”

কথা গুলো বলেই চাঁদনী ফুটপাত ধরে দৌঁড়াতে লাগল। নিমিষেই সে পায়ের ব্যাথা ভুলে গেছে। চাঁদনীর পিছনে হন্ন হয়ে নীড়, আয়মন আর হিমেল ও দৌঁড়াতে লাগল। চাঁদনী দৌঁড়াচ্ছে আর মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলছে,,,,

–“আমি জানি নূর ভাইয়া, তুমি এখন রোজ আপুর পছন্দের জায়গাটাতেই আছো। মধুমতি ল্যাকের উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছো তুমি। একদিন আমি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে নিয়েছিলাম, তুমি আর রোজ আপু ল্যাকের উপর পা ঝুলিয়ে বসে ছিলে। রোজ আপু একদিন নিজের মুখে আমায় বলেছিলো, রোজ আপুর এই ল্যাকটা খুব পছন্দ। তোমরা প্রায় এখানে এসে সময় কাটাও।”

দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে চাঁদনী হঠাৎ থেমে গেলো। পায়ের ব্যাথাটা এবার আঁতে গিয়ে লেগেছে। সামনে আর কদম রাখা সম্ভব হচ্ছে না। চাঁদনী কোমড়ে হাত দিয়ে মাথাটা নিচু করে সমানে হাফাচ্ছে আর কাঁদছে। নীড় আর আয়মন দৌঁড়ে এসে চাঁদনীকে ধরে ফেলল।

হিমেল রাস্তায় এক্টা খালি রিকশা দেখে চট জলদি রিকশাটা থামিয়ে দিলো। আয়মন হুট করে চাঁদনীকে কোলে তুলে রিকশায় বসিয়ে দিলো। এরপর পাশের সিটে আয়মন নিজে বসে পড়ল। নীড় আর হিমেল পিছনে আরেকটা খালি রিকশা পেয়ে রিকশাটাতে বসে পড়ল।

চাঁদনী কাঁপা কাঁপা কন্ঠে রিকশা ওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“ম..ধু..ম..তি ল্যাকে চলুন।”

রিকশা ওয়ালা এবার গাড়ি ছেড়ে দিলো। আয়মন চাঁদনীকে আষ্টেপিষ্টে ধরে রেখেছে। চাঁদনীর কষ্ট গুলো আয়মনের একদম সহ্য হচ্ছে না। এই মুহূর্তে আয়মনের ইচ্ছে করছে নূরকে মেরে ফেলতে। কি লাভ শেষে তো নিজের বোনকেই হারাতে হবে। আয়মন কপাল চাপড়াচ্ছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,

–“সবই কপাল। কারো উপর রাগ ও দেখাতে পারছি না। বোনের পক্ষ হয়ে বোন জামাইকে মারতে গেলো উল্টো বোনই রণচন্ডী রূপ ধারণ করবে।”

চাঁদনী কৌতুহলী দৃষ্টিতে আয়মনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“কিছু বলছিস।”

–“না না, কিছু না। তুই কান্না থামিয়ে শান্ত হয়ে বস।”

চাঁদনী আর কথা না বাড়িয়ে অধীর আগ্রহে বসে আছে, কখন ওরা মধুমতি ল্যাকের সামনে পৌঁছাবে।”

প্রায় দশ মিনিট পর,,,,,

রিকশা এসে পৌঁছে গেছে মধুমতি ল্যাকের সামনে। চাঁদনী তড়িঘড়ি করে রিকশা থেকে নেমে পড়ল। আয়মন রিকশা থেকে নেমে রিকশা ওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে যেই না সামনের দিকে তাকাল অমনি সে এপাশ ওপাশ ঘুরে চাঁদনীকে খুঁজতে লাগল। চাঁদনী এতক্ষনে ল্যাকের ভিতর ঢুকে গেছে। আয়মন ছুটল ল্যাকের ভিতর। আয়মনের পিছু পিছু নীড় আর হিমেল ও ছুটল।

মধুমতি ল্যাকটা নতুন হয়েছে। তাই এই ল্যাকটাতে মানুষের আনাগোনা খুব কম। নীরবতায় ছেঁয়ে আছে পুরো ল্যাকটা। চারপাশে বিভিন্ন ধরনের বড় বড় গাছ গাছালি লাগানো। চতুর্দিকে সুগন্ধী ফুলের বেষ্টনী। ফুলের ঘ্রানে পুরো ল্যাকটা ম ম করছে। পার্ক পেরুলে সামনেই বিশাল বড় হালকা নীল পানির সমুদ্রের স্রোতের মতো থৈ থৈ করা ল্যাকটা দেখা যায়।

চাঁদনী দৌঁড়ে ল্যাকটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ল্যাকটার সামনে বাঁশ দিয়ে সাঁকো পাতা আছে। সাঁকোটার পাশেই নূরের বাইকটা পার্ক করা।

সাঁকোর উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে নূর। নূরের পাশেই তিনটে সিগারেটের প্যাকেট পড়ে আছে। সিগারেটের নিচের অংশ গুলো নূরের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অলরেডি এক্টা জলন্ত সিগারেটে ফুঁক দিচ্ছে নূর।

পিছনে দাঁড়িয়ে চাঁদনী সব কিছু নিঁখুতভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। নূরকে দেখেই চাঁদনীর চোখে মুখে হাসি খুশি উপচে পড়ছে। খুশিতে চাঁদনীর চোখ দিয়ে আনন্দ অশ্রু ঝড়ছে।

#চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here