শেষটা সুন্দর পর্ব ৭

#শেষটা_সুন্দর
#সিজন_২
#পার্ট_৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

পিছনে দাঁড়িয়ে চাঁদনী সব কিছু নিঁখুতভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। নূরকে দেখেই চাঁদনীর চোখে মুখে হাসি খুশি উপচে পড়ছে। খুশিতে চাঁদনীর চোখ দিয়ে আনন্দ অশ্রু ঝড়ছে।

নূর সিগারেটে ফুঁ দিতে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে দু এক্টা কাশি ও দিচ্ছে। তবু ও সিগারেটে ফুঁ দেওয়া বন্ধ করছে না। ওর উদ্দেশ্যই যেনো নিজেকে শেষ করে দেওয়া। বেঁচে থাকার আশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে সে। ভালোবাসা এমন এক্টা জিনিস, যা হারিয়ে গেলে আপনার জীবনটা একদম ছন্নছাড়া হয়ে যাবে। তখন নিজেকে বিষের চেয়ে ও বিষাক্ত মনে হবে। না পাবেন বেঁচে থাকার আশ্বাস, না পাবেন মরে যাওয়ার সদ্বিশ্বাস। যাতাকলে পড়ে যাবেন আপনি। এই মুহূর্তে আপনার ভাগ্য যদি ভালো হয়, তাহলে হয়তো উপর ওয়ালা নিজের হাতে করে অন্য কাউকে পাঠিয়ে আপনার সেই শূণ্য জায়গা পুষিয়ে দিবে। আপনাকে বেঁচে থাকার আবার নতুন প্রয়াস দিবে। সেই মানুষটি শত অবহেলা সহ্য করে ও আপনার পাশেই থাকবে। আপনার হাত দুটো কখনো ছাড়বে না। যতক্ষণ না স্বয়ং মৃত্যু এসে ধরা দেয়। এই মুহূর্তে নূর খুব লাকি। কারণ উপর ওয়ালা হাতে করে ওর ছন্নছাড়া জীবনটাকে ছন্দে ছন্দে ভরিয়ে দেওয়ার জন্য চাঁদনীকে পাঠিয়েছে। আর চাঁদনী হলো সেই দূত যে কিনা শত সহস্র বাঁচার আশ্বাস নিয়ে নূরের জীবনে অর্ধাঙ্গিনী হয়ে এসেছে।

চাঁদনী ওর পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা আয়মন, নীড় আর হিমেলের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে এক আঙ্গুল ধরে ইশারা করে বলল, চুপ করে থাকতে আর জায়গা থেকে যেনো না নড়ে। চাঁদনীর কথায় ওরা তিনজন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

চাঁদনী খুব সাবধানে পা ফেলে নূরের পাশে গিয়ে নিঃশব্দে বসে পড়ে। নূর এখনো চাঁদনীকে খেয়াল করে নি। সে এক মনে সিগারেট টানছে আর শান্ত চোখ নিয়ে ল্যাকের নীলাভ স্রোতগুলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে প্রিয় মানুষটাকে সে ল্যাকের প্রতিটা স্রোতের মাঝে আবিষ্কার করছে। চাঁদনী এক্টু ঝুঁকে নূরের দিকে এক সাগর ভালোবাসা নিয়ে তাকিয়ে আছে। চাঁদনীর চোখে ও সাগরের স্রোত বইছে। যাকে আমরা কান্না বলে সম্বোধন করি।

চাঁদনীর কান্না করার মুখ্য কারণ হচ্ছে,,,,,

–“নূরের শুকিয়ে যাওয়া ভ্যাপসা মুখটা। ফর্সা মুখটা তার জৌলসতা হারিয়ে ফেলেছে। ক্লিন সেইভ করা মুখটায় খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির আবির্ভাব হয়েছে। ডান গালে কয়েকটা পিম্পল উদয় হয়েছে। লাল রঙ্গের ঠোঁট গুলো কালচে হয়ে গেছে। স্মোকিং এর দারুন ইফেক্ট পড়েছে নূরের রঙ্গিন ওষ্ঠাদ্বয়ে। নীলাভ চোখ দুটো গ্লেইস করা ভুলে যাচ্ছে। নিদারুন কষ্টের ছাপ চোখ দুটোর উজ্জ্বলতা নষ্ট করে দিয়েছে। জিম করা বডিটা খাওয়া দাওয়ার অনিয়মে কেমন জনাজীর্ণ হয়ে গেছে। নূরের এই অবস্থা দেখে চাঁদনী খুব টেনশানে পড়ে গেছে। চাঁদনীর টেনশানের কারণ হচ্ছে… নূরের ভিতরের রুহ টা আদৌ আছে কি না? নাকি সে ও উড়াল দেওয়ার ফন্দি আটছে? পারবে তো সে রুহ পাখিটাকে ধরে রাখতে? উপর ওয়ালা কি এতোটা ক্ষমতা দিয়ে তাকে পাঠিয়েছে?”

চাঁদনীর ভেতরটা নিগূঢ় ভাবে জ্বলছে। ইচ্ছে করছে সামনে বসে থাকা জনাজীর্ণ মানুষটাকে বুকের ভিতর পুড়ে নিতে। কখনো যেনো বুকের ভেতর থেকে বের না হতে পারে। তালা বন্ধী করে রাখব আমি তাকে। আমার রুহে সামিল করব তাকে। সে আমার ভিতর বেঁচে থাকবে যুগ যুগ ধরে। আমার নিশ্বাসে নিশ্বাস ফেলবে। আবার আমার নিশ্বাসেই নিশ্বাস আটকাবে। পরকালে দুজন একসাথে উপর ওয়ালার কাছে উপস্থিত হবো। মোট কথা, সে এই দুনিয়াতে ও আমার, আবার ঐ দুনিয়াতে ও আমার।”

নূরের হাতে থাকা জলন্ত সিগারেটটা শেষের দিকে চলে এসেছে। তাই সে সিগারেটের নিচের অংশটা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে যেই না আরেকটা সিগারেট মুখে পুড়ে লাইটার ধরাতে যাবে অমনি চাঁদনী এক টান দিয়ে নূরের মুখ থেকে সিগারেটটা ছিনিয়ে নিয়ে কুচি কুচি করে সমুদ্রের পানিতে ভাসিয়ে দিলো।

নূর চোখ লাল করে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে আগুনের লাভা বের হচ্ছে। মুহূর্তেই হিংস্র হয়ে উঠেছে নূর। চোখ গুলোর সাথে মুখটা ও লাল বর্ণ ধারণ করেছে। হুট করে চাঁদনী নূরের কাঁধে মাথা রেখে নূরকে দুহাত দিয়ে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দিলো।

নূর গর্জন দিয়ে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“চাঁদ….আমার মাথা কিন্তু গরম হয়ে যাচ্ছে। আমাকে ছাড়ো বলছি। কেনো আমার পিছনে লেগেছ তুমি? কেনো নিজেকে এতোটা নিচে নামাচ্ছ? তোমার কি সেলফ রেস্পেক্ট নেই? মেয়ে হিসেবে তোমার লজ্জা হওয়া উচিত, এক্টা ছেলের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার সাথে ঢলাঢলি করছ। ছিঃচাঁদ। সেইস অন ইউ!”

চাঁদনী মিনমিনিয়ে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

–“তুমি কি ভেবেছ নূর ভাইয়া? আমার সাথে কঠোর ভাবে কথা বললেই আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো? আরে…তুমি যদি পৃথিবীর নিকৃষ্ট প্রানীটার সাথে ও আমাকে তুলনা করো না, তবু ও আমি তোমাকে ছেড়ে কক্ষনো যাবো না। তোমাকে ঠিক এই ভাবেই আমার বাহুতে আবদ্ধ করে রাখব। তুমি ঠিক বলেছ নূর ভাইয়া….আমার এক্টু ও লজ্জা নেই। আসলে, লজ্জা নিয়ে অর্ধাঙ্গিনী হওয়া যায় না। তোমার সাথে লজ্জা শোভা পায় না।”

নূর চাঁদনীর কথায় পাওা না দিয়ে চাঁদনীকে এক ঝটকায় ওর থেকে সরিয়ে বসা থেকে উঠে যেই না সাঁকো পেরিয়ে বাইকের দিকে পা বাড়াল, অমনি আয়মন, নীড় আর হিমেল ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। নীড় নূরকে ঝাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,

–“পাগল হয়ে গেছিস তুই? এখান থেকে ওখানে ছুটছিস, ওখান থেকে ঐখানে ছুটছিস। এতো ছুটাছুটি করার কারণ কি বল? রোজের ভালোবাসার কাছে আমরা আপন মানুষরা এতোটাই তুচ্ছ হয়ে গেলাম? আমাদের ভালোবাসার কোনো দাম নেই তাই না? জন্ম দাএী মায়ের ভালোবাসার ও দাম নেই না?”

নূর উওাল চোখ নিয়ে নীড়ের দিকে তাকিয়ে আছে। নীড়ের প্রশ্নগুলোর উওর তার জানা নেই। তাই সে চুপ হয়ে আছে। চাঁদনী এতক্ষনে নূরের পাশে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে। চাঁদনীকে দেখে নূরের রাগটা আরো তিনগুন বেড়ে গেলো। নূর এবার চোয়াল শক্ত করে চাঁদনীকে এক আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে নীড়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“Tell this girl not to chase after me like a dog.” (এই মেয়েটাকে বল কুকুরের মতো আমার পিছনে ধাওয়া না করতে।”)

নীড় আর সহ্য করতে না পেরে যেই না হাত উঠিয়ে নূরের গালে চড় মারতে নিলো অমনি চাঁদনী নীড়ের হাতটা ধরে ফেলল। চাঁদনী এবার নীড়ের হাতটা ছুড়ে মেরে চোখ লাল করে নীড়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

–“বড় ভাই বলে যখন তখন আমার স্বামীর গায়ে হাত তোলার অধিকার নেই তোমার। আমার স্বামী আমাকে যা ইচ্ছা তা বলবে। তোমরা প্লিজ এতে ইন্টারফেয়ার করতে এসো না। স্বামী আমার, আমি বুঝে নিবো।”

নূর রাগে ফুসফুস করছে। ঘাড়ের রগ গুলো ফুলে টান টান হয়ে আছে। নূর এক্টু পিছিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,,,,,

–“জাস্ট সাট আপ চাঁদ। আমার বড় ভাইয়া আমাকে মারবে, কাটবে যা ইচ্ছা তা করবে। এতে তোমার প্রবলেম কি?”

নূর এবার হাত জোর করে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

— “I am forcing my hand to you ,,,,, all of you please leave here. Let me be alone. Why are you running after me like this? I’m not a little kid, I can’t get home lost. I need a separate space. I will needs a secluded environment. Where I find myself and my rose. Again and again you come and disturb me. You are forbidding me. You’re ruining my meditation. I want to get rid of you. Please release me. ” (তোমাদের কাছে হাত জোর করে বলছি,,,,, তোমরা সবাই প্লিজ এখান থেকে চলে যাও। আমাকে এক্টু একা থাকতে দাও। কেনো আমার পিছনে এভাবে ছুটাছুটি করছ? আমি ছোট বাচ্চা না যে, পথ হারিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব না। আমার এক্টা আলাদা স্পেস দরকার। এক্টা নিরিবিলি পরিবেশ দরকার। যেখানে আমি নিজেকে আর আমার রোজকে খুঁজে পাবো। বার বার তোমরা এসে আমাকে ডিস্টার্ব করছ। আমার জিনা হারাম করে দিচ্ছ। আমার ধ্যান নষ্ট করে দিচ্ছ। আমি তোমাদের থেকে মুক্তি চাইছি। প্লিজ তোমরা আমাকে মুক্তি দাও।”)

কথা গুলো বলতে বলতে নূর মাটিতে ধপ করে বসে পড়ল। চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে নূরের। ফর্সা মুখটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। উপস্থিত সবাই থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নূরের এসব অপ্রীতিকর কথা ওরা মানতে পারছে না।

রাগে গিজগিজ করতে করতে আয়মন সামনে পড়ে থাকা এক্টা ফুলের টবে সজোরে লাথি দিয়ে রক্ত চক্ষু নিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে গড়গড় করে বলে উঠল,,,,

–“”Hmm, we’re dogs. Everyone here is a mad dog. That’s why I’m chasing you so hard. I’m desperate to take you home. And that’s our fault.” (হুম আমরা কুকুর। এখানে উপস্থিত সবাই আমরা পাগলা কুকুর। এই জন্যই তো তোর পিছনে এতো ঘুর ঘুর করছি। তোকে সেইফলি বাড়ি নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আছি। আর এটাই হলো আমাদের দোষ।”)

আয়মন এবার চাঁদনীর হাত ধরে টেনে নিয়ে নূরের সামনে দাঁড়াল। নূর মাথাটা নিচু করে বসে আছে।

আয়মন চাঁদনীর শাড়িটা পা থেকে এক্টু উপরে তুলে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“দেখ…. আমার বোনের পা দুটোর অবস্থা। কেমন লাল হয়ে পা দুটো ফুলে গেছে। অনেক ক্ষন পাগলের মতো ছুটাছুটির কারণে এমন হয়েছে। সাথে আবার আলপিনের বিষাক্ত ঘাই ও আছে। আমার বোনের আজ এই অবস্থা শুধু মাএ তোর কারণে। প্রথমত, তোকে বাঁচানোর জন্য। দ্বিতীয়ত, তোকে খোঁজার জন্য। দুটো কারণেই তুই সমানভাবে দায়ী।”

আয়মন আরো কিছু বলতে যাবে এর আগেই নূর বসা থেকে উঠে চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,

—“Did I tell your sister to eat Alpin’s wound to save me? Did I tell you to make my legs red and swollen to find me? So, why did your sister do all this? Where’s my fault here?” (আমি কি তোর বোনকে বলেছিলাম, আমাকে বাঁচানোর জন্য আলপিনের ঘাই খেতে? আমি কি বলেছিলাম আমাকে খোঁজার জন্য পা দুটো লাল করে ফুলিতে ফেলতে? তাহলে, তোর বোন কেনো এসব করল? এখানে আমার দোষটা কোথায়?)

আয়মন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মুহূর্তেই চোখ মুখ লাল করে নূরের বুকে ডান হাত দিয়ে আস্তে করে এক্টা ধাক্কা দিয়ে বলল,,,,,

— “It’s useless to explain to you. Because, you’re not in yourself now. You may have forgotten that the chad is not just my sister. Chad is your sister + married wife.” (তোকে বুঝানোটাই বেকার। কারণ, তুই এখন নিজের মধ্যে নেই। তুই হয়তো ভুলে গেছিস চাঁদ শুধু আমার বোন না। চাঁদ তোর বোন + বিয়ে করা বউ।)

আয়মন রাগটাকে কন্ট্রোল করে নূরের দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—“I’m taking my sister. Did you want to be released from us? I gave her your release. Feel Rose in a secluded place and pretend to be drunk. We’re gone.” (নিয়ে যাচ্ছি আমি আমার বোনকে। তুই মুক্তি চেয়েছিলি তো আমাদের থেকে? ওকে দিলাম তোকে মুক্তি। নিরিবিলি জায়গায় রোজকে অনুভব কর আর নেশা ভান কর। গেলাম আমরা)

কথাগুলো বলে আয়মন যেই না চাঁদনীর হাত ধরে সামনে এগুতে লাগল অমনি চাঁদনী আয়মনের থেকে ওর হাতটা ছুটিয়ে নূরের পাশে দাঁড়িয়ে অপরাধীর মতো মুখ করে বলল,,,,,

–“ভাইয়া, তোরা সবাই চলে যা। আমি নূর ভাইয়ার সাথে থাকব। আমি ও যদি তোদের সাথে চলে যাই তাহলে নূর ভাইয়া খুব একা হয়ে যাবে। আমি নূর ভাইয়াকে একা ছাড়তে চাই না।”

নূর সাপের মতো ফুসফুসিয়ে বলে উঠল,,,,

— “Will you be left alone when I die?” (মরে গেলে নিশ্চয়ই একা ছাড়বে?)

নূরের কথাটা চাঁদনী ঠিক হজম করতে পারল না। চাঁদনী ঝাপটে নূরকে জড়িয়ে ধরে হেচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,,,

— “Never say these things again. May God take me before you. I can’t accept your absence while I’m alive. Maybe I’ll become dumb or I’ll be the moon in the distant sky.” (এসব কথা আর কক্ষনো মুখ দিয়ে উচ্চারণ করবে না। তোমার আগে আল্লাহ্ যেনো আমাকে নিয়ে নেয়। আমি বেঁচে থাকতে তোমার অনুপস্থিতি মানতে পারব না। হয়তো বোবা হয়ে যাবো নয়তো দূর আকাশের চাঁদ হয়ে যাবো।)

আয়মন নূরের থেকে চাঁদনীকে সরিয়ে চোখ লাল করে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“তোর লজ্জা হয় না…না? এভাবে অপমানিত হওয়ার পর ও এই সেলফিস ছেলেটার পাশে থাকতে চাইছিস। যে কিনা শুধু ওর নিজের দিকটাই ভাবছে। তোর দিকটা ভাবার মন মানসিকতা নেই ওর। কথা না বাড়িয়ে তুই আমার সাথে চলে আয় চাঁদ।”

চাঁদনী আয়মনের দিকে টলমল চোখে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“নূর ভাইয়ার জায়গায় তুই থাকলে হয়তো আরো বেশি বেশি পাগলামী করতি। তিন তিনটে বছরের ভালোবাসা, এক্টা লড়ির নিচে চাপা পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। নূর ভাইয়া ওর চোখের সামনে রোজ আপুর পিষে যাওয়া নিথর দেহটা পড়ে থাকতে দেখেছে। এর চেয়ে যন্ত্রণা দায়ক আর কি হতে পারে??? ছেলেরা স্ট্রং দেখে হয়তো নূর ভাইয়া এখনো মুক্তভাবে শ্বাস নিতে পারছে। আমি হলে এতক্ষনে নিজেকে শেষ করে দিতাম। নূর ভাইয়ার পাগলামীটা স্বাভাবিক। আমি নিজের চোখে দেখেছি ওদের তিলে তিলে গড়ে উঠা ভালোবাসাটা। নূর ভাইয়া আর রোজ আপুর ভালোবাসা দেখে প্রতিটা মুহূর্তে আল্লাহ্ র কাছে প্রে করতাম, আল্লাহ্ যেনো নূর ভাইয়াকে সারাজীবনের জন্য আমার করে দেয়। কারণ, নূর ভাইয়া খুব নিখুঁতভাবে ভালোবাসতে পারে। দেখ, আল্লাহ্ ঠিকই আমার কথা রেখেছে। তবে আমি নূর ভাইয়াকে এরকম বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পেতে চাই নি।”

চাঁদনী নিজেকে কিছুটা শান্ত করে আবার বলে উঠল,,,,,,

–“এই সময় নূর ভাইয়ার পাগলামীটা বুঝার জন্য খুব স্ট্রং এক্টা মানুষ দরকার। আমি নিজেকে আপাতত সেই স্ট্রং মানুষটা মনে করছি। আমি নূর ভাইয়ার হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরতে চাই। হাজার অপমানিত হলে ও আমি পিছু হটব না। কারণ, আমার ভালোবাসা এতোটা ঠুনকো না।”

চাঁদনী ঘন ঘন কয়েকটা শ্বাস ফেলে আয়মনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“ভাইয়া তোরা চলে যা। আমি নূরকে ভাইয়াকে নিয়ে খুব শীঘ্রই বাড়ি ফিরব।”

আয়মন চোখে জল নিয়ে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে আছে। নূর অনেক আগেই ওদের মাঝখান থেকে প্রস্থান নিয়ে ল্যাকের পানিতে পা ঝুলিয়ে আবার আগের মতো সিগারেটে ফুঁ দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রাগে নূরের পুরো শরীর কাঁপা কাঁপি করছে। সিগারেট টা পর্যন্ত ঠিকভাবে ধরতে পারছে না। এতক্ষন চাঁদনীর বলা কোনো কথাই নূরের কানে যায় নি।

নীড় আর হিমেল এসে আয়মনকে টানতে টানতে ল্যাকের সামনে থেকে প্রস্থান নিয়ে পার্কের ভিতর ঢুকে পড়ল। ওদের উদ্দেশ্য পার্ক থেকে বসে বসে চাঁদনী আর নূরকে দেখা। ওরা সবাই এক সাথেই বাড়ি ফিরবে। না হয় বাড়িতে তুলকালাম বেঁধে যাবে।

#চলবে,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here