শেষটা সুন্দর পর্ব ৮

#শেষটা_সুন্দর
#সিজন_২
#পার্ট_৮
#নিশাত_জাহান_নিশি

নীড় আর হিমেল এসে আয়মনকে টানতে টানতে ল্যাকের সামনে থেকে প্রস্থান নিয়ে পার্কের ভিতর ঢুকে পড়ল। ওদের উদ্দেশ্য পার্ক থেকে বসে বসে চাঁদনী আর নূরকে দেখা। ওরা সবাই এক সাথেই বাড়ি ফিরবে। না হয় বাড়িতে তুলকালাম বেঁধে যাবে।

চাঁদনী আবার বেহায়ার মতো নূরের পাশে পা ঝুলিয়ে বসে পড়ল। ভালোবাসায় বেহায়া হতে হয়, না হয় আপনি কিভাবে ভালোবাসার মানুষটার মন জয় করবেন? নিজেকে তুলে ধরতে হবে ঐ মানুষটার কাছে। ভালোবাসার গভীরতা বুঝাতে হবে। না হয় সে আপনাকে কিভাবে এক আকাশ ভালোবাসা ফেরত দেবে? মনটাকে বেহায়ার মতো প্রকাশ করে দেখুন না একবার, হয়তো প্রাপ্তির ঝোলা টা আকাশচুম্বী হয়ে যাবে। আকাশ ছোঁয়ার ইচ্ছে আপনার পূরণ হয়ে যাবে। আপনি যদি কাউকে ভালো রাখার জন্য বেহায়াপনাটা জাহির করেন, তবে এতে দোষের কি? বেহায়াপনাটা তখন ডিসপারেড ভালোবাসায় রূপ নিবে। ভালোবাসা প্রকাশে কখনো সীমাবদ্ধতা রাখতে নেই, না হয় দিন শেষে ঠক টা আপনার ই হবে। যাকে বলে ওয়ান সাইডেড লাভ। এক তরফা ভালোবাসায় সুখ থাকে ঠিকই তবে প্রাপ্তি থাকে না। তখন নিজেকে জাজাবর মনে হয়। কিছুটা সন্নাসি টাইপস।

নূর কাপাঁকাপিঁ করছে আর সিগারেট ফুকছে। চাঁদনী পা দুটো নাড়ছে আর টুকুর টুকুর নূরকে দেখছে। আচমকা নূর হাতের অর্ধ সিগারেটটা পানিতে ছুড়ে মেরে চাঁদনীকে ঝাপটে ধরে ছোট বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে কান্না শুরু করে। নূর কাঁদছে আর মিনমিনিয়ে বলছে,,,,,,

–“আমি রোজকে খুব মিস করছি চাঁদ। এনে দিবে আমার রোজকে? তুমি তো জানো আমি রোজকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি। তোমার চোখের সামনেই তো আমাদের ভালোবাসাটা দিন দিন বেড়ে উঠেছিলো। আমরা ঘুড়তে যেতাম, দেখা করতাম, কথা বলতাম সবই তোমার চোখের সামনে দিয়ে। ইনফেক্ট তুমি ই তো আমাদের কওো হেল্প করেছ। তুমি সবসময় আম্মুকে বুঝিয়ে শুনিয়ে লং ড্রাইভে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে। আরো অনেক কিছু করেছ আমাদের জন্য। মাঝে মাঝে তুমি ও আমাদের সাথে ঘুড়তে যেতে। রোজ তোমাকে খুব পছন্দ করত। ছোট বোনের মতো আদর করত। আজ অনেকদিন হলো আমি রোজকে দেখি না। বুকের ভিতর কেমন এক্টা চিনচিনে ব্যাথা হয়। ব্যাথাটাকে ভুলার জন্যই স্মোকিং করছি। এরপর ও ব্যাথাটা কমছে না। শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। বার বার মনে হচ্ছে শ্বাসটা হুট করে আটকে যাবে। আমি ও থমকে যাবো ঠিক রোজের মতো। আমার বাঁচার ইচ্ছা মরে গেছে চাঁদ। তাই আমি তোমাকে আমার জীবনের সাথে জড়াতে চাই নি। তোমার সাথে ইচ্ছে করে খারাপ বিহেভ করছি। যেনো তুমি আমাকে ছেড়ে অনেক অনেক দূরে চলে যাও। আমি একা থাকতে চাই চাঁদ, খুব একা থাকতে চাই। আমার অভিশপ্ত জীবনে আমি তোমাকে জড়াতে চাই না। তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও চাঁদ। প্লিজ চলে যাও।”

নূর কথাগুলো বলছে আর ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছে। চাঁদনীর পুরো বুক ভিজে একাকার হয়ে গেছে নূরের চোখের পানি দিয়ে। চাঁদনী নূরকে টাইট করে বুকের ভিতর চেঁপে ধরে বলল,,,,,

–“আমি ঐ দিনই তোমাকে ছাড়ব, যেদিন আমার মাঝে আমার রুহ্ থাকবে না। এর আগে তোমাকে ছাড়ার কথা আমাকে একদম বলবে না। রোজ আপুকে তুমি ঠিক কতোটা ভালোবাসো সেটা আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না। ভালোবাসার মানুষটার অনুপস্থিতি ঠিক কতোটা যন্ত্রনা দায়ক সেটা ও আমি খুব ভালো করে বুঝি। রোজ আপুকে আমরা কেউ হাজার চেষ্টা করলে ও ফিরিয়ে আনতে পারব না। কারণ, রোজ আপু উপর ওয়ালার কাছে চলে গেছে। একবার ঐখানে চলে গেলে আর ফিরে আসা যায় না। একদিন সবাইকে আমাদের সষ্ট্রার কাছে যেতে হবে। হয়তো প্রত্যাশিতভাবে নয়তো অপ্রত্যাশিতভাবে। রোজ আপুর মৃত্যুটা অপ্রত্যাশিতভাবে লিখা ছিলো। তাই এই ভাবেই রোজ আপুকে মরতে হয়েছে। যার মৃত্যু যেভাবে লিখা থাকবে সে ঠিক ঐভাবেই মরবে। তোমাকে এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না নূর ভাইয়া। তোমাকে খুব স্ট্রং হতে হবে। না হয় রোজ আপু দূর থেকে তোমাকে এই রকম বিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখলে খুব রাগ করবে। তোমাকে তোমার ফ্যামিলির জন্য বাঁচতে হবে। মানুষ কখনো একা থাকতে পারে না নূর ভাইয়া। তুমি ও পারবে না। এক্টা সময় পর ঠিক হাঁফিয়ে উঠবে। তাই একা থাকার চেষ্টা ও করো না।”

নূর এখনো চাঁদনীর বুকে মাথা রেখে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে। চাঁদনী নূরের মাথায় পরম যত্নে বিলি কেটে দিচ্ছে। নূর আরাম পেয়ে কান্না থামিয়ে চাঁদনীকে আরো টাইট করে জড়িয়ে ধরল। নূরের নীরবতা দেখে চাঁদনী নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,

–“ঘুম পেয়েছে তোমার?”

নূর মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বুঝালো।

–“তাহলে আমার কোলে ঘুমাও। আমি পা মেলে দিচ্ছি।”

নূর চাঁদনীর বুক থেকে মাথা তুলে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“বাড়ি চলো। বাড়িতে গিয়ে ঘুমাবো। এখানে বেশিক্ষন থাকাটা সেইফ না।”

চাঁদনী মাথা নাঁড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে যেই না বসা থেকে উঠে দাঁড়াল অমনি চাঁদনী আহ্ করে এক চিৎকার দিয়ে আবার ধপ করে নিচে বসে পড়ল। চাঁদনীর চিৎকারে নূর কিছুটা কেঁপে উঠল। নূর চাঁদনীর পায়ের দিকে খেয়াল করে দেখল, পা দুটো লাল হয়ে অনেকটা ফুলে গেছে। নূর তাড়াতাড়ি করে ওর গাঁয়ের শার্ট টা খুলে ল্যাকের পানিতে ভালো করে শার্টটা ভিজিয়ে নিলো। এরপর পানিটা হালকা নিংড়িয়ে চাঁদনীর দুপা একএিত করে ভিজা শার্টটা দিয়ে চাঁদনীর পা দুটো আবদ্ধ করে নিলো। নূর খুব পেরেশান হয়ে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,

–“Feeling better now?” (এখন ভালো লাগছে?)

চাঁদনী নাক মুখ কুচকে দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল,,,,,

–“জ্বলছে খুব।”

নূর শার্ট টা পাঁ থেকে খুলে চাঁদনীকে টেনে হাঁটুতে বসিয়ে পা দুটো ল্যাকের পানিতে ঝুলিয়ে দিলো। চার চারটে পা এক সাথে ল্যাকের পানিতে দোল খাচ্ছে। নূর চাঁদনীর কোমড়টা খুব টাইট করে ধরে রেখেছে। যেনো হাত ফসকে পড়ে না যায়। চাঁদনী শুধু নূরকে দেখে যাচ্ছে। নূরের প্রতিটা শ্বাস নিশ্বাস চাঁদনী গুনছে। চাঁদনীর অদ্ভুত চাহনী দেখে নূর চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“পা দুটো ভালো করে পানিতে ভিজিয়ে রাখো। দেখবে কিছুক্ষন পর ফোলা জায়গাটা হালকা কমে গেছে। খুব আরাম পাবে তখন।”

চাঁদনী আনমনা হয়ে নূরের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি গুলোকে ওর নরম হাত দিয়ে স্পর্শ করছে আর টানছে। নূর এক্টু ও বিরক্তি প্রকাশ করছে না। সে ব্যস্ত চাঁদনীর পা নিয়ে। কিভাবে পায়ের ফোলাটা কমবে। হুট করে চাঁদনী মিনমিনিয়ে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

–“নূর ভাইয়া, তোমাকে দাড়ি রাখলে খুব সুন্দর লাগবে। প্লিজ ক্লিন সেইভ করো না।”

নূর নাক মুখ কুচকে বলল,,,,,

–“এ্যা,,,, ইদানিং আয়নায় নিজেকে দেখলে নিজেই ভয় পাই। তাছাড়া, রোজ দাড়ি রাখা পছন্দ করে না। স্যরি চাঁদ, আমি তোমার রিকুয়েস্ট টা রাখতে পারব না।”

–“এতোদিন হয়ে গেলো, তাহলে সেইভ করছ না কেনো?”

নূর এক্টা মলিন হাসি দিয়ে বলল,,,,,,,

–“নিজের দিকে খেয়াল রাখার সময় পাচ্ছি কই? দেখছ না, আমার জীবনটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে! যেদিন মন মর্জি ঠিক হবে ঐদিন সেইভ করব।”

চাঁদনী আর কথা না বাড়িয়ে নূরের দাঁড়ি গুলোতে হাত বুলাচ্ছে আর খিলখিল করে হাঁসছে। চাঁদনীর হাসির কারণ নূর সঠিক বুঝতে পারছে না। নূর চাঁদনীর দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“Why r u laughing?” (তুমি হাসছ কেনো?)

চাঁদনী নূরের দাঁড়ি গুলোতে একই ভাবে হাত বুলিয়ে হেসে হেসে বলছে,,,,,,,,

–“Feeling comfortable too. I know how it tickles.(আরাম লাগছে খুব। কেমন জানি সুরসুরি লাগছে।)

নূর এবার হু হা করে হেসে দিলো। চাঁদনী চোখে এক রাশ স্নিগ্ধতা নিয়ে নূরকে দেখছে। নূর হাসতে হাসতে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“So far I have understood. That’s why you said keep the beard. You’re very fond of playing with my beard. Rose was right, you’re really naughty.” (এতক্ষনে বুঝতে পেরেছি। তুমি এই জন্যই বলছিলে দাঁড়ি রাখতে। আমার দাঁড়ি নিয়ে তোমার খেলার খুব শখ। রোজ ঠিকই বলত, তুমি আসলেই এক্টা দুষ্টু।)

নূর হাসি থামিয়ে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“অনেক হয়েছে এবার বাড়ি চলো। তোমার পায়ের ট্রিটমেন্ট দরকার।”

চাঁদনী আনমনে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“হাসিটা থামালে কেনো? ভালোই তো লাগছিলো। অনেক দিন পর তোমার হাসিটা দেখার সৌভাগ্য হলো।”

হুট করে নূর সাংঘাতিক মোড নিয়ে বলল,,,,,,

–“প্লিজ চাঁদ। আমি এখন ভালো লাগা বা হাসি, ঠাট্টার মোডে নেই। উঠে এসো, আমরা বাড়ি যাবো। শাওয়ার নিতে হবে। আ’ম সো টায়ার্ড।”

চাঁদনী নূরের দিকে তাকিয়ে বএিশ দাঁত বের করে বলল,,,,,

–“আমি ও খুব টায়ার্ড। চলো আমরা ল্যাকের পানিতে গোসল করে নেই।”

–“এ্যা।”

–“এ্যা না হ্যাঁ। চলো চলো।”

কথাটা বলে চাঁদনী যেই না নূরের কোল থেকে ল্যাকে ঝাপ দিতে যাবে অমনি নূর চাঁদনীকে হেচকা টান দিয়ে দুজনেই সাঁকোর উপর চিৎ হয়ে পড়ে গেলো। চাঁদনীর গায়ের উপর নূর লেপ্টে আছে। নূর চোখ লাল চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“Are you crazy chad? Do you know the depth of lactar? If you jump, you will drown right now. I couldn’t save you if I wanted to. Because I don’t know how to swim.” (তুমি কি পাগল হয়ে গেছ চাঁদ? তুমি জানো ল্যাকটার গভীরতা কতটুকু? ঝাপ দিলে তো এখনি ডুবে মরতে। আমি চাইলে ও তোমাকে বাঁচাতে পারতাম না। কারণ, আমি নিজে ও সাঁতার জানি না।)

চাঁদনী কিছুটা উদাসীন হয়ে নূরকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“আমি মরে গেলে তো তুমি বেঁচেই যেতে। তোমাকে আর কেউ জ্বালাতন করত না। অকারণে কেউ হেনস্তা করত না।”

হুট করে নূর চাঁদনীর উপর থেকে উঠে সোজা দাঁড়িয়ে পড়ল। অন্য দিকে তাকিয়ে নূর চাঁদনীকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

–“উঠে পড়ো। সন্ধ্যা হতে চলেছে। আর বেশিক্ষন এখানে থাকা যাবে না।”

চাঁদনী আর কথা না বাড়িয়ে শুয়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। নূর হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলো। চাঁদনী এক পা দু পা করে ধীরে ধীরে হাঁটছে। নূর পিছনে তাকিয়ে দেখল চাঁদনী চোখ মুখ কুচকে সামনের দিকে কদম বাড়াচ্ছে। চাঁদনীকে দেখে বুঝা যাচ্ছে, চাঁদনীর হাঁটতে খুব কষ্ট হচ্ছে।

নূর আচমকা দৌঁড়ে এসে চাঁদনীকে কোলে তুলে নিলো। চাঁদনী চরম শকে মুখটা হা করে নূরের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে চাঁদনী কারেন্টের ঝটকা খেয়েছে। চাঁদনীর ফেসিয়াল এক্সপ্রেশান দেখে নূর চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

–“আমি বৈদ্যুতিক কোনো তার না, যে আমার ছোঁয়ায় তোমার শক লেগেছে। মুখটা বন্ধ করে আমার গলায় হাত দুটো ঝুলিয়ে দাও। কখন তোমাকে নিয়ে ঠাস করে নিচে পড়ে যাই, নিশ্চিত নেই। শরীরে জোর পাচ্ছি না। আর….. তুমি যে পরিমান মুটি তোমাকে কোলে নিয়ে হাঁটা টা খুব কষ্টকর ব্যাপার। একজন মার্সেল ওয়ালা পালোয়ান ই তোমাকে কোলে নিয়ে ঘুড়তে পারবে। আমার পক্ষে মনে হয় না সম্ভব হবে।”

চাঁদনী নাকটা ফুলিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“আমি মুটি নাকি তুমি রোগা? ছাই পাশ খেয়ে তো শরীরটাকে দুর্বল করে ফেলেছ। এই কয়েকদিন ধরে তো হেলদি খাবার মুখেই দিচ্ছ না। শরীরে জোর পাবে কোত্থেকে শুনি? নিজের দোষ না দিয়ে এসেছে আমার দোষ দিতে। আমাকে কোল থেকে নামাও বলছি। আমি আর এক সেকেন্ড ও তোমার কোলে থাকব না। নামাও, নামাও, নামাও।”

চাঁদনী কথা গুলো বলছে আর ছোটাছুটি করে নূরের কোল থেকে ছাড়া পেতে চাইছে। নূর চাঁদনীকে কোলে করে সামনে হাঁটছে আর বলছে,,,,

–“এই তুমি কি শ্লোগান দিচ্ছ?” যেভাবে নামাও, নামাও, নামাও বলছ! আশেপাশের লোক জন যদি দেখে তুমি এভাবে ধস্তাধস্তি করছ, তাহলে আমাকে র‍্যাপার বলে সোজা জেলে পুড়ে দিবে।”

চাঁদনী এবার আশে পাশে চোখ বুলিয়ে দেখল, অনেক জনই ওদের দিকে কেমন কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চাঁদনী এবার স্লোগান বন্ধ করে নূরের কাঁধে ওর দুই হাত ঝুলিয়ে দিলো। নূর সামনের দিকে তাকিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। চাঁদনী নূরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নূরের নীলাভ চোখ দুটো সবসময় চাঁদনীকে টানে। ইচ্ছে করে চোখ দুটো খুলে মার্বেল খেলতে। কিন্তু তা তো অসম্ভব। অসম্ভব জিনিস গুলোকেই আমরা বেশি করে চাই। ভালো লাগার তো লিমিট থাকে না। তাই হুটহাট করে অসম্ভব জিনিস গুলোই ভালো লেগে যায়।

পার্কে বসে বসে নীড়, আয়মন আর হিমেল বাদাম চিবুচ্ছে। চাঁদনী আর নূরের কেমেস্ট্রি এতক্ষন ওরা চোখ ভরে দেখেছে। এখন পেট পূজোতে লেগে গেছে। নূর যেই না চাঁদনীকে কোলে করে পার্কের ভিতর ঢুকল অমনি তিন সেনাবাহিনী এসে ওদের চারপাশে গোল গোল হয়ে ঘুরতে লাগল। তিনজনই এক ভ্রু উঁচু করে ওদের চারপাশে ঘুড়ছে। চাঁদনী নূরের কোলে থেকেই আয়মনের হাত থেকে বাদামের ঠোঙ্গাটা কেড়ে নিয়ে বাদাম চিবুতে লাগল। নূর বিরক্তি নিয়ে তিন সেনাবাহিনীর দিকে তাকিয়ে আছে। আয়মন চোখ লাল করে চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদনী আয়মনের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে আর বাদাম গুলোকে পেটের মধ্যে সেট করে নিচ্ছে।

নীরবতা কাটিয়ে নূর ওদের তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,

–“আজব, এইভাবে পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? এখানে কি কোনো কমেডি সিন চলছে?”

–“কমেডি সিন না, রোমান্টিক সিন হচ্ছে। মিস করলে ক্ষতি টা আমাদের ই হবে। বিয়ের পর কিভাবে বউকে কোলে নিতে হবে তোর থেকে শিখে নিচ্ছি। (হিমেল)

হিমেলের কথা শুনে আয়মন আর নীড় হাসতে হাসতে কাহিল হয়ে যাচ্ছে। নূর দাঁত কিড়মিড় করছে আর চাঁদনীর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। চাঁদনী বাদাম খাওয়া বন্ধ করে শুকনো ঢোক গিলে চোখ পিটপিট করে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্তে চাঁদনীকে দেখে মনে হচ্ছে, সে ভাঁজা মাছটা ও উল্টে খেতে জানে না।

চাঁদনী এবার মিনমিন করে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“আমার কি দোষ? আমার দিকে এভাবে রাক্ষসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো কেনো? আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে না থেকে ওদের কানের নিচে দুটো বাজিয়ে এসো। তখন দেখবে ওরা হাসি ভুলে কাঁদছে।”

হুট করে নূর চাঁদনীকে কোল থেকে নামিয়ে ঘাসের উার বসিয়ে দিলো। নূর ও চাঁদনীর পাশে ধপ করে বসে পড়ল। তিন সেনাবাহিনী বেকুব হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। নূর আগ পাছ না ভেবে আচমকা চাঁদনীর হাত থেকে বাদামের ঠোঙ্গাটা ছিনিয়ে বাদাম চিবুতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। চাঁদনী চোখ বড় বড় করে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে। নূর চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে মোড নিয়ে বলল,,,,,

–“একা একাই সব বাদাম সাভার করে নিচ্ছিলে, তাই তোমার দিকে ঐভাবে তাকিয়েছি। বড়দের খাওয়ার পর সামান্য কিছু অবশিষ্ট থাকলে ছোটদের তা খুশি খুশি মুখ করে খেতে হয়। আমি খাওয়ার পর যদি কিছু অবশিষ্ট থাকে তখন তুমি খাবে। বুঝেছ?”

নীড়, আয়মন আর হিমেল ধপাস করে ঘাসের উপর বসে পড়ল। নূরের এমন পরিবর্তন দেখে ওরা খুশিতে পাথর হয়ে গেছে। চাঁদনী মুখ ফুলিয়ে নূরের হাত থেকে বাদামের ঠোঙ্গাটা ছিনিয়ে নিয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

–“ছোটরা খেয়ে অবশিষ্ট থাকলে এরপর বড়দের খেতে হয়। আমি খাওয়ার পর কিছু অবশিষ্ট থাকলে তোমরা বড়রা মিলে ভাগ বাটোয়ারা করে খেয়ে নিও কেমন?”

নূর আবার হেচকা টান দিয়ে চাঁদনীর হাত থেকে বাদামের প্যাকেটটা ছিনিয়ে দিলো। দুজনেই বাদামের প্যাকেটটা নিয়ে ছিনিমিনি শুরু করছে। ঐদিকে, উপস্থিত তিন সেনাবাহিনীর ঘাড় লক হয়ে যাচ্ছে ওদের ছিনিমিনি দেখে।

ছিনিমিনির এক পর্যায়ে এসে ঠোঙ্গা থেকে বাদাম উবে গিয়ে পড়ে রইল শুধু ঠোঙ্গাটা। ওরা তবু ও এই ঠোঙ্গা নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে। নূর কিছুটা হয়রান হয়ে কাড়াকাড়ি বন্ধ করে পা দুটো মেলে বসে পড়ল। চাঁদনী বাদাম গুলো ঘাসের উপর থেকে তুলছে আর খোঁসা ছাড়িয়ে মুখে পুড়ছে। চাঁদনীর এমন বাচ্চামো দেখে আয়মন, নীড় আর হিমেল হাসতে হাসতে ঘাসের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে।

চাঁদনী কিছুক্ষন পর পর ওদের দিকে চোখ লাল করে তাকাচ্ছে আর বাদাম খুঁজে খুঁজে শাড়ির আঁচলে জমাচ্ছে। প্রায় অনেক গুলো বাদাম চাঁদনী ওর শাড়ির আঁচলে জড় করেছে। বাদামের খোঁসা গুলো ছাড়িয়ে চাঁদনী নূরের পাশে বসে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,

–“মুখটা হা করো।”

নূর কৌতুহলী দৃষ্টিতে চাঁদনীর দিকে তাকাল। চাঁদনী এক গাল হেসে নূরকে আবার ইশারা করে বলল, মুখটা হা করতে। নূর ও লক্ষি ছেলের মতো মুখটা হা করল। চাঁদনী এবার পর পর চারটে বাদাম নূরের মুখে পুড়ে দিলো। নূর চিবুচ্ছে আর চাঁদনীর দিকে তাকিয়ে মলিন হাসছে।

নূর মজা পেয়ে মুখটা আবার হা করল। চাঁদনী শয়তানি হাসি দিয়ে নূরের মুখের কাছে দুটো বাদাম ধরে হুট করে হাতটা ঘুড়িয়ে বাদাম গুলো ওর নিজের মুখে পুড়ে নিলো। নূর এখনো চোখ বন্ধ করে হা করে আছে। চাঁদনী খিলখিল করে হেসে নূরের মুখে বাদামের খোসা পুড়ে দিলো। উপস্থিত সবাই চাঁদনীর মতো অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ল।

নূর চোখ খুলে চোখ দুটো বড় বড় করে ওয়াক ওয়াক করে বাদামের খোসাটা মুখ থেকে বের করে সবার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাল। ভয়ে সবার মুখটা চুপসে গেলো। আয়মন মুখটা ছোট করে ডান হাত দিয়ে চাঁদনীকে ইশারা করে দেখিয়ে দিলো।

নূর আয়মনের থেকে চোখ ফিরিয়ে চাঁদনীর তাকাল। চাঁদনী হাসতে হাসতে যেই না বসা থেকে উঠে দৌঁড় লাগাতে যাবে অমনি নূর চাঁদনীর শাড়ির আঁচলটা এক হাত দিয়ে মুঠ করে ধরে ফেলল।

#চলবে,,,,,,,,,,,,

(গল্পের পাঠকরা গল্পের নায়িকার চেয়ে নিজেরাই বেশি কষ্ট পাচ্ছিল। তাই পরিস্থিতি অনুকূলে আনার চেষ্টা করলাম। পাঠকরা এবার গল্পের নায়িকার মতো খিলখিল করে হাসুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here