তুই আমারই থাকবি পর্ব ৪+৫

পর্ব ৪+৫
#তুই_আমারই_থাকবি💜
#Esrat_Jahan💜
#Part_4

‘বলেই উনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আমিও হ্যাবলার মতো ভ্যাবলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।কিছুক্ষণ পর মামানিকে নিয়ে আসলেন রুমে। মামানিকে নিয়ে এসে দাঁড় করালেন।বললেন,আম্মু!দেখ তুমি ও কী বলছে!(বাচ্চাদের মতো)
!
-কী বলছে?(ভ্রু কুঁচকে)
!
-আমিও অবাক হয়ে ওদের কথা শুনছি।
!
-আম্মু দেখ,খুশবু বলছে ও নাকি আমার ভার্জিনিটি নষ্ট করে ফেলবে!তুমিই বলো, এটা কী কোনো কথা?আর ওর এত্ত বড় সাহস,তুমি দেখলে?
!
-আমি আর মামানি ওনার কথা শুনে বেআক্কেলের মতো একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছি।মামানি মিটিমিটি হাসছে আর আমি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে আছি!!
!
-এই এত্ত বড় দামড়া এইসব কি বলে!হায়…আমিতো হার্ট-এট্যাক করমু। ছি ছি..ব্যাটার কি লজ্জা নাই?এমনিতে তো ভেবেছিলাম একটা গুন্ডা-মাফিয়া… এখন তো দেখি বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী…কার সামনে কি বলতে হয় সেই বুদ্ধিটুকুই নাই!বাট হাউ ইজ পসিবল?
!
-দেখ আবরার এটা তোমার আর খুশবুর পার্সোনাল বিষয়! সেখানে তুমি বেলাজের মতো আমাকে এসব বলছ?মামানি বললো…
!
-বাট আম্মু,তুমি তো জানো আমি নিজের ভার্জিনিটি নিয়ে কতটা হাইপার!কোনো মেয়ের সাথে কোনোদিন কিছু করিনি,তাও এই খুশবু কিসব বলছে?ধরো,ও যদি কোনোদিন আমার ভার্জিনিটি নষ্ট করে দেয়?তাহলে আমি কি করবো?বলো…..
!
-আবরার!প্লিজ স্টপ ইট….মামানি ধমকে বললেন।
!
-আমি এসব কথা শুনে শিহরিত!এই গুন্ডা নাকি এত্ত হাইপার তার ভার্জিনিটি নিয়ে!কেন রে….এসব কথা বিয়ে করার সময় মনে ছিল না?এখন আসছিস ভাব দেখাতে?যত্তসব….ন্যাকামি!
!
-আমি যাচ্ছি রুমে…আর এসব ফালতু বিষয়ে কথা অফ রাখো…..এতবড় হয়েছ, তবুও মায়ের আচল ধরে ঘুরাঘুরি বন্ধ করো।বলেই মামানি গটগটিয়ে চলে গেলেন।আর আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসি দিলেন…..
!
-এবার আপনাকে বাঁচাবে কে?
!
-এই তুমি চুপ করো!তোমার কথা কে শুনে?আমার কোনো বিষয়ে ইন্টারফেয়ার করার অধিকার তোমার নেই!আর আমি নিজের প্রটেক্ট নিজেই করতে পারি!গট ইট!
!
-তাই মায়ের আচল ধরে বসে থাকেন!আই নো…..(হেসে বললাম)
!
-ড্যাম ইট!তুমি চুপ না করলে এক থাপ্পড় মেরে চুপ করিয়ে দেবো।
!
-আচ্ছা,আর কথা বলবো না।
!
-ওকে….বলেই কাবার্ড থেকে ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় দু’পা তুলে বসে পড়লেন।পরণে সেই হাফ-প্যান্ট আর টি-শার্ট!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
-আমিও পুরো ঘরময় হাঁটতে লাগলাম।ফ্লোরে সোনালী কার্পেট বিছানো আর তাতে আমার পা সুড়সুড়ি করছে।দেয়ালে অসংখ্য ফটো ঝুলানো।সোফার একপাশে একটা বড় বার্বিডল রাখা।কিন্ত এতবড় ডল দিয়ে এই গুন্ডা কি করে?ভাববার বিষয়…..
!
-এই খুশবু? তুমি নাকি সারাদিন ফ্যাচফ্যাচ করে কাঁদো? ল্যাপটপ এর দিকে তাকিয়েই বললেন!
!
-অবাক হয়ে, উনি জানলো কিভাবে? বললাম,কে বলেছে?মোটেও না….
!
-জানি জানি!
!
-কচু জানেন!
!
-উনি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,কচু?তুমি কি বলেছ?
!
-কচু, কচু বলেছি!
!
-এই কচু জিনিসটা আবার কি?
!
-হোয়াট?আপনি কচু চিনেন না?(চিৎকার করে)
!
-একি?তুমি এত জোরে সাউন্ড করছ কেন?আমি হাই সাউন্ড একেবারেই লাইক করি না!গট ইট!ডাফার…
!
-ওকে,ওকে।বাট আপনি কচু চিনেন না?এটা কিভাবে পসিবল?
!
-না চিনতেই পারি।তাতে এত অবাক হওয়ার কি আছে?
!
-আমি একটু পানি খেয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,ওহহহ…তাইতো তাইতো।
!
-আচ্ছা,এখানে কি কচু বাগান আছে?আমাকে নিয়ে যেও থাকলে!
!
-আমি হ্যাং মেরে বললাম,অফকোর্স অফকোর্স!
!
-এই কচু জিনিসটা আমাকে ভাবাচ্ছে,এটাতে মানুষ ফাঁসি লাগে কিভাবে? আই এম ইম্পেসড!!!
!
-মানে?
!
-আমার বাংলাদেশী ফ্রেন্ডরা মাঝেমাঝে দেখা হলে ঝগড়া বাঁধিয়ে বসতো,তখন ওরা বলতো যা তুই, কচু গাছের সাথে ফাঁসি লেগে মরে যা…..
!
-ওহহহহ…….
!
-বাট তুমি এত………. ‘

#Part_5
!
‘বাট তুমি এত হাইপার হচ্ছো কেন?আমি তো জাস্ট কচু’র বিষয়ে জানতে চেয়েছি।
!
-ওহহ!আমাদের বাসার ওখানে অনেক কচু বাগান আছে,বাসায় গেলে দেখিয়ে আনবো আপনাকে!
!
-ভ্রু কুঁচকে, ওকে!তুমি আমার গার্ড!
!
-পাগল! আমি কোন দুঃখে আপনার গার্ড হবো? আপনার পাপের ভাগীদার হতে?
!
-মানে?আমি কী এমন পাপ করেছি যে,আমায় পাপী বলছ?(রেগে)
!
-ওহহ…আপনি আবার ভুলেও যান?আপনি জানেন না আপনি আমার সাথে কি করেছেন?জোর করে তুলে এনে বিয়ে করেছেন,আরো কত কি কি করেছেন!আমার আব্বু-আম্মু পর্যন্ত জানে না আমি কোথায়?
!
-জানে, তোমার আম্মু-আব্বু জানে দু’দিন ধরে তুমি তোমার বান্ধবীর বাসায় আছে। সো চিন্তার কোনো কারণই নেই…..সো নেক্সট টাইম আমায় পাপী বলবা না।গট ইট!ড্যাম গার্ল!
!
-অবাক হলাম,এটা নিশ্চয় ব্যাটার নতুন কোনো কারসাজি! ব্যাটা বহুত হারামি আছে।মনে মনে একাত্তরটা গালি দিলাম…..
!
-এই খুশবু!আমার পা গুলো টিপে দাও তো,অনেক পেইন হচ্ছে!(চোখমুখ কুঁচকে)
!
-হোয়াট?আমি কেন আপনার পা টিপবো? আপনি এত ছুতো ধরেন!বাহ বাহ।আমি পারবো না আপনার পা টিপতে।তার উপর পরে আছেন সর্ট প্যান্ট। আমিতো জীবনেও ধরবো না….
!
-তুমি যদি আমার পা না টিপে দাও তাহলে এমন কামড় দিবো যে, এই আবরারের নাম সাত জন্মেও ভুলবে না।আর এই দুঃখে তুমি কচু গাছের সাথে ফাঁস লেগে মরবে…..
!
-আপনি অলওয়েজ আমাকে খাটানোর ধান্ধায় থাকবেন নাকি?যত্তসব….বলেই একরাশ বিরক্তি নিয়ে পা টিপতে গেলাম।
!
-ওনার পা টিপছি আর কপাল চাপড়াচ্ছি।কি এমন দোষ করেছিলাম যে,এমন গুন্ডা জামাই কপালে পড়লো, যে আমায় অত্যাচার করে মেরেই ফেলবে?আমিতো ছোট থেকেই চেয়েছিলাম যে,একটা সৌদি আরবের প্রবাসী বাঙালীকে বিয়ে করমু।ব্যাটা জুব্বা পড়ে, হাতে সোনালী ঘড়ি পড়ে আর মাথায় ইয়া বড় পাগড়ী পড়বে আর হাতে সারাদিন তাসবীহ থাকবে। আর কিছুক্ষণ পরপর বলবে ‘মারহাবা, মারহাবা ‘।

আর এসব চেয়েছিলাম বলেই কপালে পড়লো এই ডেঞ্জেরাস,স্টাইলিশ, গুন্ডা,মডেল বয় এই ইংল্যান্ড ফেরত আবরার আগুন চৌধুরী! নামেই আমাকে ঝলসে দিবে মনে হয়!ব্যাটা নাকি কচু চিনে নাহ!

এইসব কান্ড-কীর্তি দেখতে থাকলে শেষ বয়সে হার্ট-এট্যাক নয়তো ব্রেন স্ট্রোক করে আমি ইন্তিকাল করমু।হায়…আমার বাচ্চাকাচ্চা সব এতিম হয়ে যাবে…আমি কাকে আর আদর করমু?…..ধুর…বলেই দিলাম এক ঘুসি….
!
-আহ….আমার পা!বেড থেকে উঠে(চিৎকার করে)হোয়াট খুশবু? ডাফার গার্ল!তুমি বেশি লায়েক হয়ে গেছ?দু’টো সুইট কথা বলতেই এত মাথায় চড়ে গেছ?সেদিনের থাপ্পড়ের পানিশমেন্ট এত সহজেই ভুলে গেলা?তোমার এত বড় সাহস যে,আমার পায়ে ঘুসি মেরেছ?তুমি জানো, এতে আমার পায়ের টিস্যু গুলো কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে?কোনো ধারণা আছে তোমার?ড্যাম ইট…. বলেই আমার গালে থাপ্পড় মেরে দিলো….আর আছাড় মেরে গ্লাসটা ভেঙে ফেললো!!(রেগে চিৎকার করে)
!
-আমি ভয়ে বাক্যহারা হয়ে গেলাম।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, কখন যে কাঁদতে শুরু করেছি বুঝতেই পারিনি।এটা আবার একটা রোগ আমার,কেউ অতিরিক্ত বকাঝকা করলেই এমন হয় আমার।মাথাটা ভো ভো করছে।বেশি কান্না করলেই মাইগ্রেনের ব্যাথাটা বেড়ে যায়…..
!
-কী এখন চুপ করে আছো কেন?আন্সার মি….ডাফার!(রেগে)
!
-আসলে আমি বুঝতে পারিনি।অন্যমনস্ক ছিলাম তো তাই…আমি দুঃখিত। কান্না চেপে চোখ মুছে বললাম।মুখ দিয়ে কান্না বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে, বাট অনেক কষ্ট করে আটকে রাখছি..এটাও আরেক রোগ আমার!
!
-তোমাকে এর জন্য অনেক ভুগতে হবে…..পানিশমেন্ট হিসেবে আজ তোমার লাঞ্চ,ডিনার সব বন্ধ!আর আম্মুও কোথায় বেরিয়েছে আজ ফিরবে না!সো আমার কথা মতোই সব চলবে……(রেগে)
!
-আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। এত কান্না আসছে যে বলার বাইরে।মাথাটা ভো ভো করে ঘুরছে আর প্রচণ্ড ক্ষিধেও পেয়েছে।সকালে মামানির সাথে ব্রেকফাস্ট করেছিলাম…..মাথা ঘুরলে বা ব্যাথা, টেনশন হলে আমার প্রচণ্ড ক্ষিধে পায় আর সাথে সাথে কিছু না খেলে সেন্সলেস হয়ে যাই!কিন্তু উনাকে বলবো কিভাবে? আমি মরে গেলেও উনার খাবার খাবো না। এটা নিজের কাছেই নিজের প্রমিজ!যতই হো, আত্নসম্মান তো আর খোয়াতে পারিনা এই গুন্ডার কাছে….(মনেমনে)
!
-যাও,চুপচাপ বসে থাকো! (রেগে)
!
-কিছু বললাম না।
!
-যাও এখান থেকে,আমার সামনে আসবে না।তাহলে এমন শাস্তি দিবো যে……(রেগে)
!
-উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি দৌড়ে ব্যালকুনিতে চলে গেলাম।ব্যালকুনির দরজা লাগিয়ে বসে পড়লাম একটা চেয়ারে।
বেশ উজ্জ্বল রোদ উঠেছে।চারদিকে কোনো কোলাহল নেই।বেশ নীরব এলাকা।বাগানে মালীচাচা কাজ করছে।মস্তবড় টাকটা রোদে চকচক করছে।মৃদুমন্দ হাওয়া ছুঁয়ে যাচ্ছে সবকিছু। আর আমার এখন কান্না পাচ্ছে।ভীষণ ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে…..
এখন যদি আনিকা আমার পাশে থাকতো তাহলে বলতো,দেখেছিস আমাদের সুগন্ধি আপা কাঁদবে রে!সবাই এই অস্থির মোমেন্টটা ভিডিও করে নাও…..
!
-আর আমি কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে বলতাম,ফাজলামি পাইছোস?
!
-না, বান্ধুপি।তোমাকে হাসাইবার চেষ্টা করিতেছি!
!
-তুই হাস না, ভাল করে হাস,,,,,আমার দুঃখে কাঁদবি তা না।তুই ফাউল মজা করতাছিস..
!
-তারপর আনিকা কান্নাকাটির ভান করে আমাকে হাসাবার অবিরাম চেষ্টা করতো।আমাকে কখনো কাঁদতে দেখলে সবার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিতো.. আর আমার মন ভালো হয়ে যেত….বেচারি..আনিকা,, খুব কিউট একটা মেয়ে…সবসময় আমার পাশে থাকে!কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন!
!
-হঠাৎ ব্যালকুনির দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করলো মিস্টার আবরার। চিৎকার করে গলা ফাটিয়ে ফেলছে……’

চলবে….

(গল্পটা কেমন লাগলো, জানাবেন।যাদের ভালো না লাগে তারা বিরত থাকুন।ভালো লাগলে নেক্সট পার্ট
দেবো।সময় কম থাকায় পার্ট ছোট হয়ে যায়।)

হ্যাপি রিডিং💜💜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here