তুই আমারই থাকবি পর্ব ৬+৭

পর্ব ৬+৭
#তুই_আমারই_থাকবি💜
#Esrat_Jahan💜
#Part_6

‘ভয়ে ভয়ে ব্যলকুনির দরজা খুলে দিলাম।উনি ধাক্কা দিয়ে আমায় সরিয়ে হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকলো।
!
-উনি বললেন,এই তুমি দরজা অফ করলে কেন?
!
-আমিও চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম।
!
-কী জিজ্ঞেস করছি কানে যায় না?ননাকি কানের নিচে দিব একটা?আন্সার মি…ড্যাম ইট!
!
-না মানে,আপনিই তো বলেছিলেন আপনার সামনে যাতে না যাই, তাই…
!
-ওহহ…তাই দরজা অফ করে আমার কথা পালন করছিলে?রাইট?
!
-না মানে….
!
-এই তুমি তোমার পকপক বন্ধ করো আর পানিশমেন্টের জন্য রেডি হও!বিকজ তুমি আমার কথার উল্টোটা করেছিলে…
!
-মানে?কি করলাম আমি?(অবাক হয়ে)
!
-মানে, তুমি আমার কথার অবাধ্য হয়েছ,আমি তোমায় ব্যলকুনির দরজা লাগানোর অর্ডার করিনি!সো…. পানিশমেন্ট এর জন্য রেডি হও..
!
-বুঝলাম যে,এই গুন্ডার সাথে অযথা তর্ক করে লাভ নেই,তাই আমিও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।মাথা ভীষণ ব্যাথা করছে, যা অসহ্য লাগছে কথা বলার মুড একদমই নেই আমার!
!
-গুড গার্ল।এভাবেই চুপচাপ কথা শুনবে..আসলে কি জানো তো তোমার এই পকপক পকপক করে বলা কথাগুলো শুনলে আমার প্রচণ্ড রাগ হয়!
!
-আমি উনার এসব কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলাম।বললাম,লিসেন মিস্টার, আমি কিন্ত আপনার এসব টর্চার কোনোদিনই মেনে নিবো না।নেহাত এখন বিপাকে পড়েছি,তাই। নাহলে মজা টের পেতেন।এই খুশবু কি জিনিস বুঝতেন…(রেগে)
!
-বাহ..বোবার মুখে তো কথার খই ফুটেছে।বেশ ভালো,তোমার সাহস দেখে আমি স্বামী হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে!(পিত্তি জ্বলানো হাসি দিয়ে)
!
-আমাকে অবলা ভাববেন না।টাইম হলে আমিও বুঝিয়ে দিবো আমি কি করতে পারি আর না পারি।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ মিস্টার আবরার মিয়া!(ভাব নিয়ে)
!
-হোয়াট?মিয়া?আমি মিয়া?(রেগে)
!
-অফকোর্স মিয়া।পোলাপানেরা সবাই মিয়া তাহলে আপনি ও মিয়া!(হাসি দিয়ে)
!
-আমিও দেখে নেবো তোমায়!(রেগে)
!
-দেখে নিয়েন,মিয়া কচু চিনে না আবার বড় বড় কথা!যত্তসব ভাব….দেখলেই মন চায়….
!
-কিহহহহ…….(চিৎকার করে)
!
-চিৎকার করবেন না।এতবড় গলাই করতে পারেন।কাজের বেলা শুধু গুণ্ডামি -ভণ্ডামি পারেন।কথায় আছে না,চোরের মায়ের বড় গলা!(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
!
-হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ টকিং খুশবু? আই উইল কিল ইউ!(রেগে)
!
-যে আমার সাথে যেরকম বিহেভ করবে আমিও সেরকম বিহেভই করবো!সো…..যা খুশি করুন গিয়ে!(ভাব নিলাম)
!
-শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বললেন,ওকে। দেখে নেবো।এখন পানিশমেন্ট এর জন্য চলো….নইলে..কি হাল হবে! (রেগে টানতে টানতে নিয়ে চললেন)
!
-ছাড়ুন আমায় আমি যাব না।
!
-কেন?ভয় পাও আমাকে?বুঝতেই পারছি!(গা জ্বালানো হাসি দিয়ে)
!
-মোটেও না।(যদিও পাই স্বীকার করবো নাকি তোর মতো গুন্ডার কাছে?শালা কিউট হারামি।দুনিয়ার সব কিউট পোলাদের লজ্জার কারণ হলি তুই,তুই।শালা….)
!
-তাহলে চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করে প্রুফ করো!(হাসতে হাসতে)
!
-ডান, আমিও দেখাবো!বলেন কি করতে হবে?(ভাব নিয়ে)
!
-কিছুনা। ডাইনিংয়ে চলো তাহলেই হবে!(যেতে যেতে)
!
-কি জানি কি কারসাজি করেছে ডাইনিংয়ে। খুব তো চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করে নিলাম,এখন কি হবে?ধুর বাল….
!
!
!
!
!
-ডাইনিংয়ে গিয়ে আমার অজ্ঞান হবার দশা।আচ্ছা, এই গুন্ডার কি কোনো দয়ামায়া নেই।কী জীব এইটা?হায় কপাল,,,,,গুন্ডা ডাইনিংয়ে সাজানো সব খাবার আমাকে খেতে বললো।গুনে গুনে দেখলাম(পোলাও,কোরমা,খাসির রেজালা,ফ্রাইড রাইস,চিলি চিকেন,চাটনি,চিকেন ফিঙ্গার, চিকেন তেহারি,চিকেনের আরো রেসিপি যেমন,মাঞ্চুরিয়ান,চিকেন শর্মা,ক্রিসপি চিকেন, বার বি কিউ চিকেন,চিকেন বল,চিকেন ফ্রাইজি,চিকেন টিক্কা)।
!
-পুরো চিকেনের রেসিপির বন্যা বসিয়ে দিয়েছেন।আর আমি এসব দেখে সেন্সলেস হবার দশা।ঢোক গিলছি ভয়ে…..এমনিতেই মাথাব্যথা তার উপর এইসব….কপাল কাকে বলে রে…..
!
-উনি হেসে বললেন,নাও শুরু করো।
!
-আমি তো একচামচ ফ্রাইড রাইস খেলেই মরে যাবো। আর গুন্ডা বলছে সব খেতে?এটা কোনোভাবেই পসিবল না।বললাম,আপনি এসব রাঁধতে পারেন?
!
-পাগল? আমি রাঁধবো? রেস্তোরা থেকে আনিয়েছি।
!
-কখন আনালেন?দেখিনি তো?
!
-তোমায় দেখিয়ে সব করবো?(রেগেমেগে)
!
-ওহহহ….আমি আসলেই বোকা।আপনি কি আর আমায় দেখাবেন?ধুর….
!
-ডাফার মেয়ে! চালাকি কম করে কাজে লেগে পড়ো!
!
-আপনি আবার ডাফার বললেন?(রেগে)
!
-ড্যাম ইট!আবার কথা?(রেগে লাল হয়ে)
!
-আচ্ছা,আপনি এই ডাফার আর ড্যাম ইট ছাড়া আর কোনো ওয়ার্ড জানেন না?(ভাব নিয়ে)
!
-হোয়াট?কি বললে…..’
!

#Part_7

‘-মানে আপনি কী ডাফার আর ড্যাম ইট ছাড়া আর কোনো ওয়ার্ড জানেন না?এইসব না বলে তো মিষ্টি করে বলতে পারেন ওগো শুনছো,ওগো বউ,ওগো কলিজা,ফ্যাপসা,জান-প্রাণ,ওগো মন এই টাইপের রোমান্টিক ওয়ার্ড কী আপনি জানেন না?সারাদিন ড্যাম ইট,ডাফার শুনতে শুনতে আমার কলিজা আপনার উপর বিরক্ত হয়ে গেছে,আর কান গুলো পচে গিয়েছে!!
!
-বেশ হয়েছে!আমার যা ইচ্ছে আমি তাই করবো এবং বলবো! গট ইট!
!
-না। আসলে জানেন তো,আপনি না বেশ বিরক্তিকর একটা লোক।আর আপনি এই দুইটা ওয়ার্ড ছাড়া আর কিছু জানেন না তাই অন্যকিছু বলতে পারেন না।কি,আমি ঠিক বলছি তো?
!
-আমি কিন্তু বেশ রেগে যাচ্ছি।তুমি কিন্ত এখনো চ্যালেঞ্জ অনুযায়ী কাজ করছো না।আমি কী ভেবে নিবো যে,তুমি হার মেনে নিয়েছ?
!
-না না,আমি খাচ্ছি তো।তবে আমারও একটা শর্ত আছে!
!
-কী শর্ত?(ভ্রু কুঁচকে)
!
-এই যে,আপনি ড্যাম ইট, ডাফার এই শব্দ গুলো আর বলতে পারবেন না।(ভাব নিয়ে)
!
-মানে?
!
-বুঝতে পারছেন না?ওহহ আপনার মাথায় তো ঘিলু নেই।যে কচু চিনে না তার আবার ঘিলু থাকে নাকি?
!
-কি বলতে চাইছো তুমি?(রেগে)
!
-বলতে চাইছি, আপনি এই চ্যালেঞ্জটা একসেপ্ট করতে ভয় পাচ্ছেন!
!
-উনি এবার রেগে বললেন,ওকে।আমি রাজি,চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করলাম।কে জিতে দেখা যাবে!(রেগে)
!
-ডান।তাহলে খেতে বসি!আপনি ও বসুন।(ভয়ে ঢোক গিলছি,এত খাবার কেমনে খাবো?তাই ভাব ধরলাম)
!
-না আমি খাবো না।
!
-কেন কেন?আপনি এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো আমার পেট ব্যাথা করবে!প্লিজ বসুন!
!
-হোয়াট?আমি তাকিয়ে থাকলে তোমার পেট ব্যাথা করবে কেন?(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
!
-ওহহ….আপনার প্রশ্নের আন্সার দিতে দিতে আমি ইন্তেকাল করবো!তার থেকে ভালো খেয়ে নিই,আপনি ও বসুন!বলেই খেতে শুরু করলাম….
!
-উনিও উল্টো দিকের চেয়ারে বসে পড়লেন।দুজনে মিলেই খাচ্ছি।কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি,গুন্ডাটা কি সত্যিই আমায় সব খাওয়াবে?কিন্তু ব্যাটা কিছু বলছে না কেন?কি কারসাজি আঁটছে মনে মনে খোদাই জানে!!
!
-রিলেক্স রিলেক্স,এত হাইপার না হয়ে যতটুকু খেতে পারো ততটুকুই খাও।নাহলে তো প্রেশার কমে সেন্সলেস হয়ে পড়ে থাকবে!!(খেতে খেতে)
!
-আমি তো একথা শুনে আনন্দে চেয়ার ছেড়ে লাফ দিতে উঠলাম।একমিনিট একমিনিট… এই গুন্ডা কিভাবে জানলো না খেলে প্রেশার কমে সেন্সলেস হয়ে যাই?ভাববার বিষয়!!
!
-এতকিছু না ভেবে দুমিনিটে খাবার শেষ করো।নইলে সত্যিই সব খাবার তোমার পেটে যাবে।
!
-উনার একথা শুনে আমি গপাগপ খাওয়া শুরু করলাম।এত কিছুর মাঝে শুধু একটু ফ্রাইড রাইস আর চিকেন ফ্রাইজিটা খেলাম।আর একবাটি চাটনি আমি একাই শেষ করলাম। এই গুন্ডা খালি চিকেন তেহারী খেলো।কত সাধলাম চাটনি খেতে কিন্তু এই গুন্ডা নাকি এসব চাটনি খায় না।যত্তসব ন্যাকামি……
!
!
!
!
!
-রাতেরবেলা ঘুমুতে গিয়ে ঘটলো বিপত্তি। ব্যাটা কিছুতেই আমাকে নিচে থাকতে দিবে না।সোফায়ও থাকতে দিবে না।বেডে ঘুমাতে হবে নইলে সারারাত বেডের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে স্রেফ জানিয়ে দিলো।আমিও বেআক্কেলের মতো গুন্ডার কাণ্ডকারখানা দেখছি।
!
-শেষকালে উপায় না পেয়ে বেডে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম।কিন্তু দুজনের মাঝে দশহাত ডিসটেন্স থাকতে হবে বলে জানিয়ে দিলাম আমি।
!
-দুজনেই শুয়ে পড়েছি।আমি ব্লাঙ্কেটের ভেতর শুয়ে আছি।এই গুন্ডা এসির পাওয়ার দশ ডিগ্রি করে রেখেছে।এতই ঠান্ডা যে আমি ওটার নিচেও কাঁপছি।আর ব্যাটা এমনিই ঘুমানোর আয়োজন করেছে।
!
!
!
-হঠাৎ করেই এই গুন্ডা আমায় ঘুম থেকে টেনে তুললো।আমি একলাফে বেডের উপর বসে ভয়ে ভয়ে বললাম,ভূত ভূত।কে আছো বাঁচাও।ইয়া মাবুদ, ইয়া খোদা তুমি তোমার এই অবলা বান্দীকে রক্ষা করো।বলে চেঁচাচ্ছি রীতিমতো।
!
-আর এই গুন্ডা এক ধমক দিয়ে আমায় চুপ করিয়ে দিলো। বললো,এই ইডিয়ট চুপ করো। আমার কান ফাটিয়ে দিচ্ছো….
!
-ইয়া আল্লাহ!আপনি?আমি ভেবেছি কে জানি!(ভয় পেয়ে)
!
-রিলাক্স! যা হবার হয়ে গেছে।ওঠো এখন!
!
-এক্ষুণি ঘুমালাম,আর এক্ষুণি উঠে যাবো? এ আবার কেমন কথা?(অবাক হয়ে)
!
-তুমি উঠো বলছি!(রেগে)
!
-ধুর….জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেল।আর বাঁচুম না বেশিদিন! অকালেই মৃত্যু অবধারিত!
!
-এই তুমি আবার পকপক করছো?(রেগে)
!
-না না।
!
-শোন তুমি এখন আমার ওয়াইফ , তাই না?
!
-এসব আজাইরা কথা বলতে ঘুম ভাঙালেন আমার?যত্তসব…
!
-উনি পাত্তা না দিয়ে বললেন,নতুন বিয়ে হলে নাকি হাতে মেহেদী থাকে?আম্মু বলেছিল আমায়….
!
-আসতাগফিরুল্লাহ…এইটাও মামানি বলে দিয়েছে।আচ্ছা,আপনি কি কিছুই জানেন না?ও মাই গড…
!
-রিডিকিউলাস…
!
-এসবই জানেন!
!
-ননস্টপ কথাবার্তা বন্ধ করো।তুমি এখন মেহেদী দিবে!
!
-আর ইউ মেড?এই মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে আমি হাতে মেহেদী পড়বো?
!
-উনি রেগে বললেন,অফকোর্স। দেখো, আমাকে রাগিও না!(চিৎকার করে)
!
-ওকে,বাট আমি তো মেহেদী দিতে পারি না!(ভয়ে ভয়ে)
!
-পারো না?ওহহ..তা পারবে কি করে?খালি ননস্টপ পাগলের মতো কথাবার্তা!
!
-তাই নাকি?তাহলে আপনি পারেন?আপনি দিয়ে দিন!
!
-আমি?ওকে,তাহলে আমিই দিয়ে দিই।বলেই ড্রয়ার থেকে একটা কোণ মেহেদী নিয়ে আসলো।আমার হাতটা নিয়ে বললো,তাহলে স্টার্ট করি!
!
-আমিও বললাম,করুন!আমার হাতটার তেরোটা বাজিয়ে দিন।
!
-তোমার ধারণা আমি দিতে পারবো না?ডিসগাস্টিং….
!
-কি আর বলবো,,বলুন?কপাল……..
!
-তাহলে জাস্ট দেখে যাও,আমি কী করে মেহেদী দিয়ে দিই তোমাকে!(খুব উৎসাহ নিয়ে বললেন)
!
-আমিও বেহুশের মতো বললাম,……………’

চলবে……..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here