তুই আমারই থাকবি পর্ব ৮+৯

পর্ব ৮+৯
#তুই_আমারই_থাকবি💜
#Esrat_Jahan💜
#Part_8
!
আমিও বেহুশের মতো বললাম,হুম,স্টার্ট করুন।
!
-তারপর উনি মেহেদীটা হাতে নিলেন,কিছুক্ষণ ওটার দিকে তাকিয়ে বললেন, বুঝতেই পারছি না,কিভাবে স্টার্ট করবো?
!
-তাহলে প্লিজ এসব রেখে দিন।আমার প্রচুর ঘুম পাচ্ছে…
!
-শাট আপ।পকপক করলে দিবো ঠাস করে চড় বসিয়ে।
!
-তাহলে মেহেদী হাতে রেখে সারারাত বসিয়ে রাখুন আমায়,আর নিজেও বসে থাকুন। আমি চুপ!
!
-একটা কাজ করি,ইউটিউবে ভিডিও দেখে নিই।
!
-নিন।(বিরক্ত হয়ে)
!
-উনি বেড থেকে নেমে মোবাইল রেখে ল্যাপটপটা নিয়ে এলেন।খুঁজে খুঁজে একটা গর্জিয়াস মেহেদীর ডিজাইন বের করলেন।ওটা নাকি উনার বেশ পছন্দ। ঠিক করলেন এটাই আমাকে দিয়ে দিবেন।
!
-আমিও বললাম,আচ্ছা আপনি কি লাইফে কখনো মেহেদী দিয়েছেন?
!
-না,প্রথমবার ট্রাই করবো।
!
-তাহলে এত গর্জিয়াস ডিজাইনটা নিচ্ছেন কেন?হালকা সিম্পল একটা নকশা নিলেই হয়।আর মেহেদী দেওয়া এত ইজি না।আর আপনার পক্ষে দেওয়া জাস্ট ইম্পসিবল।
!
-এই ইম্পসিবল কে পসিবল করবে আবরার আগুন চৌধুরী! সো তুমি চুপ থাকো।
!
-ওকে।
!
!
!
!
!
-তারপর উনি মনের সুখে ঠিকঠাক করে বসলেন।বালিশের উপর আমার হাত রেখে মেহেদীটা ধরলেন।ল্যাপটপটা আমার পাশে রেখে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছুক্ষণ ভিডিওটা দেখলেন।তারপর আমার হাতে আঁকা শুরু করলেন। প্রথমে আড়াআড়ি একটা লম্বা লাঠি আঁকলেন,তারপর ওটার উপর ছোট ছোট গোল গোল ফুল জাতীয় কিছু আঁকলেন।বুঝলাম না,এগুলো ফুল না ক্রিকেট বল!!
!
-আমি চিৎকার করে বললাম,এসব কি?আপনি ডিজাইন অনুযায়ী আঁকছেন না কেন?
!
-এইতো ডিজাইন অনুযায়ীই আঁকছি।তুমি চুপ থাকো, আমার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে আঁকবো। (আমতাআমতা করে রেগে!)
!
-আমিও রেগে চুপ হয়ে বসে রইলাম।
!
-তারপর উনি ওই বলগুলোতে ক্রস চিহ্ন জাতীয় কি যেন দিল।ওটার পাশে পাতাপাতা টাইপ কি আঁকলো।ওটার চারপাশে ঢেউখেলানো বন আঁকলেন। তারপর আঁকাআঁকি শেষ করে বললেন,ওয়াও, ভেরি নাইস।কেমন দিয়েছি বলো?(খুব উৎসাহের সাথে)
!
-আমারও উনার উৎসাহিত খুশি মুখ দেখে খুব মায়া লাগলো।যদিও রাগও হচ্ছিল প্রচুর!তাও গুন্ডার হাসিমুখ দেখে হাসিটাকে নষ্ট করার ইচ্ছে হলো না।তাই আমিও হাসিমুখে বললাম,হুম খুব সুন্দর হয়েছে।থ্যাংকস!
!
-ওকে।এখন ওটাকে কিছুক্ষণ শুকোতে হবে,তাই না?
!
-হুম।
!
-তাহলে শুকাও।শুকিয়ে গেলে ঘুমাতে পারবে।
!
-পাঁচমিনিট রাখলেই হবে।
!
-তাই?
!
-হুম।
!
-ওকে।
!
!
!
!
!
-তারপর পাঁচমিনিট ওয়েট করে শুকিয়ে মেহেদীটা তুলে ফেললাম।হাসিও পাচ্ছিল গুন্ডার কাণ্ডকারখানা দেখে।আমি ফ্রেশ হয়ে রুমে আসলাম।উনি বললেন,দেখাও দেখি!
!
-নিন দেখুন।বলে হাতটা দেখালাম।
!
-উনি বললেন,খুব না হলেও মোটামুটি হয়েছে।আমি বলেই পেরেছি,আর তুমি মেয়ে হয়েও মেহেদী দিতে পারো না!ডিসগাস্টিং…
!
-মেয়ে হলেই মেহেদী দেওয়া জানতে হবে?আজব!(রেগে)
!
-পকপক বন্ধ করো।
!
-আচ্ছা,আপনি এসব কেন করছেন?এই ভালো তো এই খারাপ!আবার কখনো কেয়ারিং এর ডিব্বা সাজেন?এত এত রুপের মানে কী?
!
-আরে তুমি আমার ফুপির মেয়ে। যখন ওরা এসে জিজ্ঞেস করবে, তখন আমি বলবো যে,তোমার মেয়েকে আমি কত কেয়ার করি,পিচ্চিটাকে দেখে রাখি,নিজে বসে থেকে খাওয়াই।আরো কত কী?…..
!
-ওহহ….এত এত ধান্ধা…….আমি কী ভাবছিলাম!
!
-এখন ঘুমুতে যাও।চলো….
!
-ওকে।
!
!
!
!
!
-আমি গিয়ে আগের জায়গায় শুয়ে পড়লাম।আর গুন্ডা আবরার সাহেব সোফায় রাখা বিশাল বার্বিডলটাকে নিয়ে এলেন।ওটাকে পাশে রেখে জড়িয়ে ধরে শুলেন।
!
-আমি অবাক হয়ে বললাম,একী?
!
-কী?(ভ্রু কুঁচকে)
!
-আপনি ডলটাকে নিয়ে এসেছেন কেন?
!
-জড়িয়ে ধরে ঘুমুব বলে!
!
-আপনি বাচ্চা নাকি?আজব!
!
-আমি ওকে পাশে নিয়ে ঘুমুলে তোমার মতো ডাফারের কী প্রবলেম?
!
-ডল তো মেয়েদের জিনিস। আর আপনি ছেলে হতে এসব মেয়েলী কাজ করছেন?আমার বেশ ডাউট হচ্ছে!
!
-এখানে ডাউটের কী আছে?(রেগে)
!
-আপনি এত গুন্ডাগীরি করেন।আর বাসায় মামানির আঁচল ধরে বসে থাকেন।আর এসবের আড়ালে দুনিয়ার যত্তসব মেয়েলী কাজ করছেন,এসব অস্বাভাবিক ব্যাপার দেখে আমার মনে হচ্ছে আপনার মাথায় প্রবলেম আছে।বিরাট ছিট আছে!
!
-মানে?তুমি বলতে চাইছো, আই এম মেইড?(রেগে চিৎকার করে)
!
-না না।আপনি যা ইচ্ছে করুন।প্লিজ… আমি কিছু বলিনি,আর আপনি খুব ভালো। আমিও না,,,, নিজেই পাগল…… ধুর…..কী যে করি না?গুড নাইট…স্লিপ টাইট! ঘুমিয়ে পড়ুন…..বাই!
!
-উনি তখনো রাগে কাঁপছেন। আমি আর কিছু না বলে আবারো কম্বলের ভেতর ঢুকে পড়লাম।যাক বাবা…বেঁচে আছি।ঘুমিয়ে পড়ি,নইলে গুন্ডা আমার ইন্তেকাল ডেকে আনবে!
!
-সকালবেলা……… ‘

#Part_9

‘সকালবেলা ‘
!
-ঘুম ভাঙ্গলো হাসাহাসি,চেঁচামেচিতে।বুঝলাম না কারা হাসছে,আর বাসায় তো আমি আর ওই গুন্ডা, কাজের লোক ছাড়া কেউ নেই!তাহলে?ধুর…..এত সকালে এই ভোর ছ’টা বাজে কেউ এভাবে হাসাহাসি করে?বিয়ে বাড়ি নাকি?
!
-তাকিয়ে দেখি উনি ওনার জান বার্বিডলটাকে কোলে নিয়ে ঘুমুচ্ছেন।বার্বিটার নাকি একটা নাম আছে…..নাম ক্যারল!যত্তসব ন্যাকামি! হাসাহাসির শব্দে আমার ভাবনার ছেদ ঘটলো! আমি উনাকে ডাক দিলাম,ব্যাটা উঠলো তো না ই………আমাকে এক ধমক দিলো।আমিও নাছোড়বান্দা!!!
!
-রেগে গ্লাসের পানি দিলাম ছিটিয়ে, ব্যাটা উঠলো লাফিয়ে!
!
-রেগে বললো,ড্যাম ইট।খুশবু? তুমি কিন্তু বেশ বাড়াবাড়ি করছো!আমার ফেইসে পানি দিলে কেন?হুয়াই?
!
-আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,তাহলে কী করতাম? এতক্ষণ ধরে ডাকছি, উঠছেন না কেন?
!
-আমার ইচ্ছে,উঠবো না।কী করবে তুমি?ফাউল মেয়ে একটা,যদি এতটুকু শান্তি দেয়….যত আজাইরা কাজ……এতটুকু বলেই থেমে গেলেন।ভ্রু কুঁচকে আমায় জিজ্ঞেস করলেন,হাসার শব্দ আসছে?কে এসেছে নিচে?
!
-কে না,বলুন কারা?অনেকজনের হাসির শব্দ আসছে,শুনছেন না?
!
-উনি আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে দরজা খুলে নিচে চলে গেলেন।আমিও পিছু পিছু গেলাম।গিয়ে দেখি উনাদের ডুপ্লেক্স বাড়ির নিচতলার সোফায় আমার আম্মু-আব্বু,ভাইয়া,আপু,আনিকা,আমাদের বাসার কাজের মেয়ে মারিয়া, আর সাথে বসে আছে মামা, মামানি আর আবরার ভাইয়ার দাদীমা আর আরহাম ভাইয়া। সবাই এতই হাসাহাসি করছে যেন কোনো আনন্দ-উৎসবে যোগ দিয়েছে আর সেখানে কে কার চেয়ে বেশী হাসতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় নেমেছে।যত্তসব…..মামা,আর আরহাম ভাইয়া কোথা থেকে আসলো??ওনারা তো অফিসের কাজে বাইরে ছিলেন!
!
-কিন্ত আমি?আমি এখন লুকাবো কই?ইয়া খোদা আমায় আকাশে তুলে নাও।সবাই জানে আমি নাকি আনিকার বাসায়,কিন্ত আনিকা নিজেই যখন এখানে তখন আমি কী করবো?
!
-এসব দেখে আবরার গুন্ডা আমার দিকে তাকিয়ে বলে বাহ!সকাল সকাল শ্বশুরবাড়ির মানুষ এসে হাজির!গ্রেট! এবার দেখো পুচকি মেয়ে তোমার কী হাল করি….
!
-কী করবেন আ,,আ,,,পনি?(ভয়ে ভয়ে)
!
-দেখতে থাকো! (পিত্তি জ্বালানো হাসি দিয়ে)
!
-গুন্ডা আমায় জোর করে নিচে সবার সামনে নিয়ে গেলেন।বললেন,হাই ফুপিমণি,হ্যালো ফুপ্পা! হাউ আর ইউ?
!
-আব্বু আর আম্মু হাসতে হাসতে বললেন,ভালো আছি,জামাই বাবাজী!!
!
-ওদের এই কথা শুনে আমার চোখ গোল গোল হয়ে গেলো! মানে কী?ওরা সব জানে?জানলেও কেউ আমায় কিছু বলছে না কেন?আর সবাই এত্ত খুশি কেন? আম্মু আবার উনাকে পাশে বসিয়ে জামাই আদর করছে,আর ব্যাটাও আমার দিকে ফিরে হাসছে।
!
-আব্বু বলল,তো মামণি,তোমার তো বিয়ে হয়ে গেল!কেমন লাগছে?
!
-আল্লাহু আমার মাথায় বাজ ফেলো। কি শুনছি?আব্বু আমায় হাসিমুখে এসব বলছে?আমায় বকাঝকা না করেই!অবশ্য ছোট বলে আব্বুই আমায় সবার চেয়ে বেশী ভালোবাসে, আব্বুর সাথেই বেশী ফ্রি আমি।তাও বিয়ের মতো সিরিয়াস বিষয়ে আব্বু আমায় কিছু বললো না?ভাববার বিষয়…..
!
-আপু বলল,বড় বোনটাকে রেখে তুই বিয়ে করে ফেললি?পারিস ও তুই!
!
-আনিকা বলল,সুগন্ধ ছড়াতে ছড়াতে একেবারে আমার ক্রাশটাকে বিয়ে করে ফেললি? আমি কী তোর কেউই না,একবার বললিও না,ঠাস করে বিয়ে করে ফেললি?এই অবলা বান্ধবীটার দিকটা দেখলি না?তুই বিয়ে করে বর নিয়া ঘুরবি আর আমি এই দুঃখে ডিপ্রেশনে চলে যাবো! (আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললো)
!
-স্টপ আনিকা! আমি কিছুই জানতাম না।হঠাৎ করেই….
!
-ও… এখন তো বলবিই কিছু জানিস না।থাক আর এক্সপ্লেইন করতে হবে না।দেখি ধর…..চশমাটা, তোর দুঃখে চোখে পানি চলে আসছে রে…… চশমাটা ধর চোখের জল মুছে নিই।সারাজীবন একলাই থাকুম,একটা বয়ফ্রেন্ড জুটাতে পারলাম না,,,,(কান্নার ভাব ধরে)
!
-আহ আস্তে,,চুপ কর।
!
-আরহাম ভাইয়া বললেন,তো খুশবু! আমার ছোট ভাইয়ের বউ হয়ে গেলা।আমি তাহলে কী ডাকবো? দুঃখ দুঃখ….এখনো একটা গার্লফ্রেন্ড নাই!
!
-আমিও বলে উঠলাম,কী বলেন,এত সুন্দর চকলেট বয়ের চেহারা নিয়া বলছেন গার্লফ্রেন্ড নাই?বিলিভ হয় না!(হাসতে হাসতে)
!
-এবার মামু হু হা করে হেসে উঠলেন।বললেন,খুশবু মামণি ঠিক কথা বলেছ,আমার বড় ছেলে দেখতে এত সুন্দর তাও গার্লফ্রেন্ড নাই।
!
-আমি বললাম,আচ্ছা মামু, মামানি তো বলল,তোমরা দুইজন বিজনেসের কাজে বাইরে গিয়েছ,তো?
!
-তো যখন শুনেছি, তুমি আমার আবরারের ওয়াইফ তক্ষুনি টিকেট কেটে চলে এসেছি।সারপ্রাইজ! আর এই সারপ্রাইজ তোমার মামানি দিয়েছে।
!
-মামানিকে বলল,কাল তোদের বাসায় গিয়েছিলাম।সবকিছু ঠিকঠাক করে আজ ভোরবেলাইই সবাইকে নিয়ে চলে এসেছি,তোকে দেখার জন্য সবাই চলে এসেছে।পরে সব ডিটেইলস তোকে বলবো মা!
!
-আমি ওদের কথা শুনে অবাক হলাম।লজ্জায় নীল হচ্ছি।সবাই যেন খুব খুশি।সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলছে,আর গুন্ডা আবরার ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন।তা দেখে আমার পাশে দাঁড়ানো আনিকা কানে কানে বলল,তোর জামাইটা কী সুন্দর রে!ফার্স্টে ভার্সিটিতে দেইখাই ক্রাশ খাইছিলাম,লাভ এট ফার্স্ট সাইট!আর দু’দিনের মাঝেই ক্রাশ তোকে বিয়ে করে আমার দুলাভাই হয়ে গেল?হায় কপাল……..
!
-আমি হেসে বললাম, আমার আনু বেপি জীবনে প্রথম ছ্যাকা খাইলো!এককাজ কর…তুই ওই সাদাফ ভাইয়ের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যা।উনিও দেখতে সুন্দর, বড়লোক। তোকে গাড়ি করে প্রতিদিন ভার্সিটি দিয়ে যাবে,নিয়ে যাবে। বেচারা কতদিন ধরে তোর পিছে ঘুরছে……
!
-তুই চুপ কর।ফাউল পোলার কথা একদম বলবি না।
(রেগে)
!
-জানি জানি…..
!
-একটু সময় পরে আবরার ভাইয়া মানে আমার বর মশাই বললো,……….’
!

চলবে…….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here