তোলপাড়
ইসরাত জাহান তানজিলা
পর্ব-১৬
_____________
সকাল বেলা নিম্মির ঘুম ভাঙ্গে বড় চাচি হোসনে আরার ডাকে। ঘুম ভাঙ্গার পরও হোসনে আরার ডাকে সাড়া না দিয়ে বেজায় বিরক্তি নিয়ে চোখ বুঁজে আছে।সারা রাত ভালো ঘুম হয়নি। মাথা ভার হয়ে আছে,চোখ দুটো জ্বলছে। হোসনে আরার ক্রমগত উঁচু গলার ডাকে আর চোখ বুঁজে থাকার জোঁ না পেয়ে নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে ঘুম জড়ানো গলায় বলল, “কাকি আম্মা কী হয়েছে?সকাল সকাল চিল্লাচিল্লি শুরু করেছেন কেন?”
– “কোথায় সকাল দেখিস তুই? এগারো’টা বেজে গেছে। একটু পর জামাই বাবু ফোন দিয়ে শুভ দুপুর জানাবে।”
এত বেলা হয়েছে শুনে বিস্ময়ে নিম্মির চোখের ঘুম কর্পূরের ন্যায় উড়ে গেল।তড়াক করে উঠে বসে বালিশের এপাশ-ওপাশ হাত দিয়ে মোবাইল হাতায়। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে বলে, “ও মাই গড।”
হোসনে আরা বেগম হেসে বলে, “সারা রাত কী জামাইয়ের সাথে কথা বলেছিস না-কি?”
না চাইতেও নিম্মির মুখে লাজরঞ্জিত বর্ণ ফুটে ওঠে। উপেক্ষাপূর্ণ গলায় বলল, “আরে ধুর!অরূর জন্য ঘুমাতে পারি নি।”
– “আমার যখন বিয়ে হয়েছিল তখন তো মোবাইল ছিলো না।তোর চাচায় কথা বলার জন্য পাগল হয়ে যেত।দিনের ভিতর যে কত চিঠি পাঠাতো।”
কথা’টা বলে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ার অবস্থা হয়েছে হোসনে আরা বেগমের।একটু পর হাসি মিইয়ে গেল। তাড়া দিয়ে বলল, “ওঠ,ওঠ তাড়াতাড়ি বিছানা ছাড়। কাজ আছে।”
নিজের বিয়ের নিজের কাজ করতে হবে। মনে মনে বোধ হয় দুঃখ পেলো নিম্মি।হোসনে আরা বেগম খুব জরুরি গলায় তাড়া দিয়ে চলে যায়। অরূণী এখনো ঘুমাচ্ছে। নিম্মি অরূণীর দিকে বিরক্তকর দৃষ্টি ছুঁড়ে দিলো।রাতে হঠাৎ করে ভুতে পেয়েছিলো না-কি কে জানে?এই কাঠফাঁটা গরমে এখনো কাঁথা গায়ে শুয়ে আছে অরূণী।নিম্মি অরূণীর গায়ের কাঁথা’টা সরিয়ে দেওয়ার সময় দেখলো শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।নিম্মি চমকে গিয়ে অরূণীর গায়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ডাকল, “অরূ,অরূ।”
নিম্মি থেমে অরূণীর মাথায় হাত দিয়ে দেখলো আবার, “ইস! ভীষণ জ্বর।”
নিম্মির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে অরূণীর।ঘুম ভাঙ্গার পর আবিষ্কার করে গায়ে প্রচণ্ড জ্বর ওঁর।জ্বরে কাঁপাকাঁপি অবস্থা। মুখ’টা পাণ্ডু বর্ণ হয়ে আছে। ঘুম ভাঙ্গার পর নতুন করে রুদ্রের কথা মনে পড়তেই প্রচণ্ডভাবে বুকের ভিতর তোলপাড় শুরু হয়। কালকে রাতের ঘটনার রেশ ধরেই যে জ্বর এসেছে নিম্মি সেটা বুঝতে পারছে। কিন্তু রাতে হঠাৎ কী হয়েছিল?
– “রাতে কী হয়েছে বল এবার।জ্বর এসে গেছে। কী আশ্চর্য ব্যাপার! বিয়ে সাদির ভিতর জ্বর। আনন্দ করবি কীভাবে?”
অরূণী গায়ের কাঁথা ফেলে খাটে হেলান দিয়ে বসে বলল, “জ্বর তো আনন্দেই এসেছে।”
– “পাগলের মত যা তা বলিস না তো অরূ। ফকির ধরে ঝাড় ফোঁকর দে। পেতনি ভর করেছে তোর ওপর।”
নিম্মির কথায় তেমন উদ্বেগ পরিলক্ষিত হলো না অরূণীর মাঝে। অদ্ভুত এক স্বরে বলল, “রুদ্র আকন তোমার দেবর এটা জানার পর থেকে আমার মনের মাঝে কী যে তোলপাড় চলছে সে কেউ জানে না।”
– “রুদ্র তোর পরিচিত?”
অরূণী দীর্ঘ সময় নিয়ে সব বলতে লাগলো নিম্মিকে।বলতে বলতে কখনো হাসতে হাসতে বিছানায় হেলে পড়ছে। কখনো বা হাসি চাপিয়ে বলে যাচ্ছে। সব শুনে বিস্ময়ে হতবাক নিম্মি।কয়েক মিনিট যাবৎ চুপ করে থেকে ভারি গলায় বলল, “ছিঃ অরূ! এসব কী?মাথা ঠিক আছে তোর? তুই কেন একটা ছেলের জন্য এমন করবি?”
অরূণী নিম্মির কথা গ্রাহ্য করলো না।নিম্মি ফের ঠোঁট উল্টে বলল, “তোর কী কোনো দিক থেকে কমতি আছে না-কি?এতসব কাণ্ড করলি একটা ছেলের জন্য!”
প্রচণ্ড আশ্চর্যান্বিত আর চমকিত গলা নিম্মির।অরূণী গায়ে মাখলো না এসব। এলোমেলো রোমাঞ্চকর অনুভূতিতে মাখামাখি অরূণীর মন। ব্যাপার’টা যত ভাবে ততই অনুভূতি গুলো গাঢ় হয়।
নিম্মিকে অনেকক্ষণ আগে ডেকে গেছে হোসনে আরা। নিম্মির দেখা না পেয়ে আবার এসেছে ডাকতে। নিম্মির মাথায় তখন অরূণীর অদ্ভুত কাণ্ড গুলো বিস্ময় হয়ে বিচরণ করছে। বলল, “আসছি,আসছি দুই মিনিট।ফ্রেশ হবো।”
হোসনে আরা বেগম যেতেই অরূণী বলল, “আপা, বিষয়’টা কিন্তু আর কারো কাছে বলি নি। সায়মা,শুভ্রা কারো কাছে না। সূর্য দাদা কিংবা আব্বা-আম্মা জানলে যে কী হবে তা তো তুমি জানো! আর রুদ্রের কাছে বলবে না।আমি চমকে দিবো তাঁরে।”
নিম্মি কোনো প্রত্যুত্তর করলো না।অরূণী আবার বলল, “রুদ্রের সাথে অনেক দিন ধরে কথা বলতে পারছি না। ফোন নম্বর’টা একটু দেও।”
নিম্মি গম্ভীর গলায় বলল, “ফোন নম্বর নেই আমার কাছে।তোর দুলাভাই ফোন দিয়েছিলো তাঁর ফোন থেকে তখন রুদ্রের কাছে দিয়েছে।আর অরূ শোন,এমন একটা ছেলের কী ভালোবাসার মানুষ নেই? শুধু শুধু পাগলামি করিস নে।”
– “শুধু শুধু পাগলামি বলছো কেন?তুমি একটু ভাইয়ার থেকে ফোন নম্বর’টা এনে দেও না।”
– “আমি রুদ্রের ফোন নম্বর চাইবো ব্যাপার’টা কেমন দেখায় না?”
নিম্মি ব্রাশে টুথপেস্ট লাগিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো।জ্বরে অরূণীর শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে। অরূণীর সেজো মামা ডাক্তার।মেপে দেখলো ১০৪ ডিগ্রি জ্বর। এত জ্বর নিয়ে কী চটপট কথা বলছে অরূণী! সাহেদ আহমেদ আর সেলিনা আহমেদ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লো। সূর্য ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে আসলো।অরূণীর মাথায় এখন শুধু রুদ্র,জ্বর এসেছে সেটা যেন উপলব্ধি করার ফুসরৎ পাচ্ছে না। বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে আত্মহারা অরূণী।জ্বর তো সামান্য ব্যাপার।অরূণীর এরূপ পাগলামি’তে নিম্মির চোখ কপালে।
__________
দুপুরে ওষুধ খাওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে জ্বর কমে আসলো ।অরূণীর এত অনুরোধের মুখে পড়ে নিম্মি তানভীরের কাছ থেকে রুদ্রের নম্বর আনলো। অরূণী ফোন নম্বর পেয়ে উপচে পড়া খুশি নিয়ে বলল, “আপা তোমার বিয়ে’টা যে আমার কত বড় উপকার করলো। আমি তোমাদের স্পেশাল গিফট দিবো।”
– “তোর স্পেশাল গিফট লাগবে না।যা তুই।আমি ফোনে কথা বলবো।”
অরূণী রুম থেকে বের হয়ে গেলে নিম্মি পিছন অরূণী’কে ডেকে বলল, “অযথা পাগলামি করিস না অরূ।”
অরূণী ফোনে কথা বলার উদ্দেশ্যে ততক্ষণে বাসার লাইব্রেরী রুমে চলে গেল। বাসা ভর্তি মানুষ। শুধু এই রুমে কেউ নেই। পুরানো আমলের লাইব্রেরী।অপ্রয়োজনীয় কাগজ পত্রে ঠাসা।রুমের দরজা’টা খুলতেই ভ্যাপসা একটা গন্ধ আসলো। অরূণী ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে দেখলো সাপ-বিচ্ছু আবার বাসা বেঁধেছে কি-না। অরূণী নতুন একটা সিম দিয়ে কল করলো।অরূণীর নম্বর দেখলে রুদ্র ফোন নাও তুলতে পারে। কয়েক বার রিং হলো কিন্তু ওপাশ থেকে ফোন তুললো না। অরূণী প্রায় আধা ঘন্টার মত দাঁড়িয়ে আছে ভ্যাপসা গরম পূর্ণ আর অন্ধকার রুমে। এই রুমের লাইট’টাও নষ্ট।এক ঘন্টা পর কল ব্যাক করলো রুদ্র। অরূণী ফোন রিসিভ করতেই রুদ্র বলে ওঠল, “আরে কাজে ব্যস্ত আমি।কী বলবি বল।”
কাকে ভেবে কী বলল রুদ্র?অরূণী কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল, “হ্যালো।”
রুদ্র চমকালো।ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে ফোন নম্বর’টা ভালো করে দেখে বলল, “কে?”
অরূণীর বুকের মাঝে দুরুদুরু!বলল, “আমি অরূণী।”
রুদ্র খানিকক্ষণ পর বিস্ময় নিয়ে বলল, “অরূণী!”
এইটুকু বলে থেমে ব্যস্ত গলায় বলল, “ফোন নম্বর কোথায় পেয়েছো তুমি?”
রুদ্র সাহেদ আহমেদ’কেও ফোন করে নি।তাহলে অরূণী কোথায় পেলো ফোন নম্বর?অরূণী এই প্রশ্ন’টা উপেক্ষা করে গিয়ে তীব্র অভিমান নিয়ে বলল, “আপনি এমন কেন? একবারও ফোন দিলেন না। আমায় মিস করেন নি?”
রুদ্রের চারপাশে হৈচৈ।কে যেন ডাকলো রুদ্র’কে।রুদ্র কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে গেল।অরূণী চুপ করে রইলো। কিছুক্ষণ পর রুদ্র ফোন’টা রেখে দিলো।অরূণীর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।একটা মানুষ এমন নিরাবেগ কীভাবে হতে পারে?অরূণীর এই মুহূর্তে মনে হলো ও বৃথা চেষ্টা করছে।
অরূণী লাইব্রেরী রুম থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ কী হলো ঠিক বুঝতে পারলো না। কেউ ওঁর হাত টেনে ধরেছে। অরূণী ভীষণ চমকে পিছনে ফিরে তাকায়। আবছা আলোতে বুঝতে পারলো এটা সিফাজ। অরূণী চাপা গলায় বলল, “সিফাজ ভাই হাত ধরেছেন কেন?”
এই বলে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু সিফাজের মুষ্টি থেকে হাত ছাড়াতে পারলো না। সিফাজ অরূণীর কাছাকাছি এগিয়ে এসে বলল, “অরূ তুই বুঝিস না আমি তোকে ভালবাসি?”
অরূণী রাগ,জিদ সংবরণ করে বলল, “আপনি আমার বড় ভাই।আপনি কী চান আমি আপনার গালে চড়-থাপ্পড় দিই?নাকি সূর্যদা কে ডাকবো?”
রাগে অরূণী থরথর করে কাঁপছে। চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। সিফাজ নির্লিপ্ত গলায় বলল, “আচ্ছা তুই আমায় কেন ভালোবাসতে চাচ্ছিস না সেটা বলবি? দুইটা কারণ বল?”
অরূণী চিৎকার করে ওঠে।সিফাজ ওঁর হাত ছেড়ে দেয়। লাইব্রেরী রুমে পাশের সিঁড়ি দিয়ে কেউ দপদপ শব্দ করে নিচ তলা থেকে ওপর তলায় আসছে। সিফাজ দ্রুত চলে যায় সেখান থেকে।অরূণী শুধু বলল, “এর পর থেকে কখনো যদি এমন কিছু করেন তাহলে আব্বা-আম্মা, সূর্যদা সবাইকে বলবো।”
সিফাজের ওপর রাগে অরূণীর মেজাজ বিগড়ে গেল। নিচে নামতেই সাময়া,শুভ্রা,সুস্মিতা ওঁরা আসলো।ছাদে যাবে,আড্ডা দিবে। অরূণী বিরক্ত ভরা গলায় বলল, “আমার মেজাজ’টা বেজায় খারাপ। তোরা যা।”
সায়মা জিজ্ঞেস করে, “কী হয়েছে তোর?”
অরূণী বলে, “সিফাজ ভাইকে আমি আমার বড় ভাইয়ের মত জানি।আর আমার প্রতি তাঁর এই প্রেমাবেগ দেখলে ঘৃণায় গা গুলিয়ে যায়।মনে চায় এক দলা থুথু ছুঁড়ে মারি।”
অরূণী গিয়ে বাসার নিচে গাছের তলায় পাতা বেঞ্চে বসে থাকে।বাড়ি সাজানো-গোছানের কাজ চলছে। কিছুক্ষণ পর সিফাজকে ও দেখা গেল অরূণীর আশেপাশে। অরূণী আর রুদ্র’কে ফোন দিলো না।গায়ে হলুদে তো দেখাই হচ্ছে। অরূণীর ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি। অরূণী’কে দেখে কেমন প্রতিক্রিয়া হবে রুদ্রর?এসব ভাবতে ভাবতে অরূণী দিশেহারা হয়ে পড়ে।এত দিশেহারা ভাব নিয়ে আজও হয়ত ঘুম হবে না।
__________
অরূণী আর ফোন দেয় নি রুদ্র’কে।আজ মেহেদি সন্ধ্যা। রুদ্রের সাথে আজই দেখা হচ্ছে! সেলিনা আহমেদ কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল, “অরূণী তোর যেতে হবে না বরের বাসায়।নাকে-মুখের কী অবস্থা তুই দেখেছিস?”
অরূণী ব্যঙ্গ সুরে বলে, “না কয়েকদিন যাবৎ আয়না দেখি না।”
সেলিনা আহমেদের কথায় সূর্য রেগে গেল।বলল, “আম্মা আপনার কথা শুনলে মাঝে মাঝে রাগ হয় খুব।অরূণী কেন যাবে না?”
– “দেখিস না ওর মুখের দাগ এখনো ভালো হয় নি?”
– “তো হয়েছে কী?”
সেলিনা আহমেদ আর কথা বলার সুযোগ পেলো না। সূর্য অরূণীর দিকে তাকিয়ে বলল, “অরূণী তোর কিছু লাগবে?আমি বের হবো। লাগলে বল।”
অরূণী মাথা ঝাঁকিয়ে না বলে।সন্ধ্যার পর হাতে মেহেদি লাগিয়ে রুমে এসে রুদ্রের কাছে ফোন দেয়।ফোন তুলে রুদ্র বলল, “তুমি আমার ফোন নম্বর কোথায় পেয়েছো? স্যারের কাছে বলবো তুমি আমায় ফোন দেও?তোমার সব কাণ্ডের কথা বলবো?”
– “বলার হলে তো সেদিনই বলতেন।আর যাই হোক আপনি মানুষ’টা বেশ ভালো। ট্রেনে আপনায় দেখে আমার যে কী হয়েছিলো বোঝাতে পারবো না। এমন এক পরিস্থিতিতে দেখা হয়েছে!”
– “সেদিন বলে নি বলে এখন বলতে পারবো না?আমি সুযোগ দিয়েছি তোমায়।”
অরূণী হেসে বলল, “আমি তো সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছি।”
– “ট্রেনে বসে এই চটপট কথা কোথায় গিয়েছিলো?আর সাহেদ আহমেদের মত ভদ্রলোকের মেয়ে তুমি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না”
– “কেন আপনি কী আমার চটপট কথা শুনতে চেয়েছিলেন?আমার আব্বা ভদ্র আমি কি অভদ্র?”
অরূণী কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে আবার বলল, “আপনায় দেখলে আদর আসে বুঝলেন। ইচ্ছে হয় আপনার গালে একটা চুমু খাই।”
রুদ্র ধমকে ওঠে।বলে, “আমি কল রেকর্ড করছি।স্যারের কাছে পাঠাবো।”
– “পাঠান।এখন বলেন আমাদের প্রেম কবে হবে?”
– “আরেক বার সামনে পেলে সত্যি চড় দিবো। ইঁচড়ে পাকা মেয়ে।”
অরূণী অবাক হয়ে বলল, “চড় দিবেন? সত্যি?আচ্ছা অপেক্ষায় আমি।”
রুদ্র ফোন কেটে দিলো।অরূণী বরাবরের মত হতাশ।এবার রুদ্রের বাসায় যাবে।এই ভেবে হতাশা সব দূর হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর অরূণীর বড় মামা সবাইকে তাড়া দিতে লাগলো।যারা যারা বরের বাসায় যাবে তাঁদের দ্রুত রেডি হতে বলল। অরূণীর মন জুড়ে তখন অন্য রকম অনুভুতি। আত্মহারা, আত্মহারা ভাব।
ঘন্টা দেড়েক পর সবাই রওয়ানা হয়ে গাড়িতে বসলো।অরূণীর হৃদয়ে তোলপাড়। হাত-পা কাঁপছে অতি আনন্দে।আবার যেন জ্বর আসবে। গাড়িতে ওঠার আগে নিম্মি অরূণীর কানে কানে বলল, “উল্টাপাল্টা কিছু করিস না।”
অরূণী উত্তরে হাসলো শুধু।এত খুশি বোধ হয় অরূণী আর কখনো হয় নি।গাড়ি চলতে শুরু করলো। অরূণীর হৃৎস্পন্দন বাড়তে লাগলো।অরূণী দুনিয়াদারি ভুলে বিমগ্ন হয়ে রইল।সবাই গাড়িতে বসে আনন্দ করছে।অরূণীর সেদিকে খেয়াল নেই,কোনো কিছুতে খেয়াল নেই। গাড়ি থামানোর পর সবাই নেমে গেল। অরূণী ঠাঁয় বসে।গাড়ি থামিয়েছে যে ওঁর হুঁশ নেই। শুভ্রা চেঁচিয়ে বলল, “অরূ আপা নামবে না তুমি?কি হয়েছে তোমার?”
অরূণীর চুপ থাকা নিয়ে সবাই কমবেশি প্রশ্ন করলো।অরূণী গাড়ি থেকে নেমে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলো। তীক্ষ্ণ এক অনুভূতি অরূণীর শরীর মন অবশ করে রেখেছে যেন। অরূণী শুধু রুদ্র’কে খুঁজছে। কিছুক্ষণ পর দেখলো মেরুন রঙের একটা পাঞ্জাবি পড়া রুদ্র। অরূণী টুপ করে উঠে গেল সবার মাঝখান থেকে। সবার দৃষ্টিগোচর করে গিয়ে পিছন থেকে রুদ্রের পাঞ্জাবির কলার ধরে টান দিলো।
(চলবে)