এখানে কোন বৃষ্টি নেই পর্ব ৩

গল্পঃ এখানে কোনো বৃষ্টি নেই
পর্ব ০৩
অামি যেনে পুরো অভিতেই অাটকে গেছিলাম। অভির কথার ইমপেক্ট অামার উপর পড়লো প্রবলভাবে। অামি ছেলের মত দেখতে??? কি ভয়াবহ ব্যাপার!
এরপর ভাবলাম রেগে অার দূরে থাকা নয়।এই যে অামি রেগে এত কষ্ট পাই, সে তো জানেই না। এবার সামনে গিয়ে প্রদর্শনী হবে। রাগ প্রদর্শনী! এবার অামি বাসায় ও শার্ট-প্যান্ট পড়তে শুরু করলাম। অভির কাপড়ের সাথে মিল করে। হাতখোঁপা করে মাথায় হ্যাট!
খাবার টেবিলে
অান্টি একদিন অামাকে দেখে বললেন,
——–পরী তুমি কি কোনো ক্যারেক্টার ফলো করছো??অাই মিন এনি ফ্লো??
কেমন অদ্ভুত সেজে থাকছো! অামি তো মাঝে মাঝে তোমাকে গুলিয়ে ফেলি।
অামি জবাব না দিয়ে মুচকি হাসলাম।
অভি কথা বললো,
———-ও’অঞ্জনকে ফলো করছে। তুমি দেখছো না মা, ইদানীং তো অঞ্জনও এমন কটকটে কালার পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অাই থিংক দে অার টুইন।
অান্টি হেসে ফেললেন। অভি নিজেও খুব শব্দ করে হাসলো। রাগের কল্পনায়, সে সময় অামি একশবার অভির মাথায় প্লেট ভাঙলাম।
ঠান্ডা গলায় বললাম,
———অামি কাউকে ফলো করছি না অান্টি। অামি দেখতে ছেলেদের মত তো, তাই। এডমিশন টেস্টের পর চুলটাও ছেঁটে ফেলবো। নাম বদলে রাখবো “পরা”!
অভি এবার অারো জোরে হাসলো,
———অাই হ্যাভ এ ট্রিমার পরী! ইফ ইও ওয়ান্ট, অাই ক্যান হেল্প ইউ।
অামার চোখ ছলছল করে এলো।অান্টি সেটা বুঝতে পারলেন বোধহয়।
অভিকে ধমকালেন,
———-বিহেইভ ইওর সেলফ্ অভি। মাইন্ড ইওর অওন অ্যাফেয়ার্স! এন্ড সে সরি টু হার!
অভি নিমেষেই মুখ ভোঁতা করে বললো,
——–সরি পরী। ডোন্ট বি সো ডিসহার্টেন্ড। অাই ওয়াজ কিডিং।
অভি যে ইচ্ছে করেই ক্ষেপাচ্ছে অামাকে বুঝতে পারতাম।
কিন্তু অামার বুকের ভেতরটা যেনো পাগল পাগল হয়েছিলো অভির কাছে যাবার জন্য। কথা বলার জন্য। সেই সুযোগ কই??
সে অামার রাগ বুঝে না।
কষ্ট বুঝে না।
অনুভূতি বুঝে না।
তাঁকে কি করে বলি??
একদিন সাহস করে, অামার সবচেয়ে প্রিয় জামাটা পড়ে, চোখে সুন্দর করে কাজল দিয়ে, অভির ঘরে গেলাম।
দেখেই বললো,
——–কিছু লাগবে পরী??
অামি মাথা নাড়লাম।
———তাহলে???
———অামি অাপনাকে একটা কথা বলতে চাই।
অভি মিষ্টি করে হাসলো।
———ঘরে এসে বলার মত কথা! বাহ্! বলে ফেলো।
অামি মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। কিভাবে বলবো বুঝতে পারছিলাম না।
———–তুমি কি একটু বসবে পরী?? কেমন কাঁপছো…. হ্যাভ সাম ওয়াটার।
অামি তখন কোনোমতে বললাম,
———-অাপনি বলেছিলেন অামাকে ঢাকার কেনাকাটা শিখিয়ে দেবেন…..
অভি অামার কথা শুনে কিছুক্ষণ অবাক তাঁকিয়ে থেকে বললো,
———অাচ্ছা, অাজ তাহলে কি কিনতে যাচ্ছো??? জামা না জুতো??
অামি সেখানে অার একমুহূর্ত দাঁড়ালাম না। চলে এলাম। কেনো বলতে পারলাম না? পছন্দ করার ব্যাপারটা কেমন করে বলতে হয়???সামনের মানুষটার তখন কেমন লাগে?? অামার বুকের কাঁপুনিটা কি সে বুঝে ফেলবে??
অামি নিজের সমস্ত সত্তা দিয়ে অভিকে অনুভব করতে থাকলাম সবসময়। ছাদে গেলেই অভির কাপড় ছুঁয়ে ছুঁয়ে হাটা।
অভি না থাকলে, তাঁর ঘরে শুয়ে-বসে থাকা। অভির ড্রয়ার ঘাটাঘাটি করে, এটা-ওটা এদিক সেদিক করে রাখা।
অভির প্লেটে ভাত খাওয়া, খেতে বসলে যেনো অমনোযোগী অামি, এমন করে অভির পানির গ্লাসের বাকীটা খেয়ে নেয়া। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করেই অভির গাঁ ঘেঁষে ধাক্কা খাওয়া। অভি তখন চোখ কপালে তুলে বলতো,
———অামার তো মনে হয়, তোমার গায়ের ব্যালেন্স ঠিক নেই। তারপর অাপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে বলতো, সবজিনিসই তো ব্যালেন্সড অাছে,,তাহলে প্রবলেমটা কোথায়?? কোনটা সামলাতে পারছো না??অভির কথায় তখন অামার রাগ হতো না, লজ্জা হতো।মনে মনে বলতাম,
———মূল “মনটার”ই তো ব্যালেন্স ঠিক নেই। সেটা কি অাপনি দেখতে পান না??
এরমাঝে অঞ্জন ভাই মাঝে মাঝে এসে অামায় ডেকে পাঠাতেন। ড্রয়িংরুমে বসিয়েই পড়া বুঝিয়ে দিতেন। কোর্সটা তো অামার পড়াই ছিলো, কিন্তু তিনি অামাকে চমৎকার কিছু টৃক শিখিয়ে দিলেন কিভাবে সহজে অারো ভালো করা যায়!
অামাকে পড়িয়ে তিনি অভির সাথে ছাঁদে প্রায়ই বেডমিন্টন খেলতেন। একদিন উনার পিছু পিছু ছাঁদে অামিও গেলাম,
অভি অামাকে অাবার সেই মাথায় টোকা মারলো।
———তুমিও খেলবে নাকি পরী??? ওস্তাদের সাথে ছাত্রী ও খেলবে….
———না, না…. অামি দেখতে এলাম। এমনিই…..
অামি রেলিং এ উঠে বসলাম।
অভি অঞ্জনের সাথে খেলতে খেলতেই বললো,
———-অঞ্জন, বল তো কেউ যদি তোর পারসোনাল ডায়েরি দেখে দেখে সেটা নিজের ডায়েরিতে লিখে রাখে… এই ধর একদম পারসোনাল। তুই কি খাস, কোথায় ঘুরছিস, এসব কথাবার্তা… তাঁকে তুই কি বলবি??? বোকা না মাথা খারাপ?
——–অবশ্যই মাথা খারাপ বলবো। অন্যের ডায়েরি লিখার কি অাছে??? কেনোরে…?? এমন হয়েছে নাকি???
অভি খেলা থামিয়ে ফ্লাওয়ার নেবার অজুহাতে অামার খুব কাছে এসে বললো,
———-তুমি যে একটা মাথা খারাপ অঞ্জনকে বলে দিই?? তাঁর ও তো জানা উচিত একটা চূড়ান্ত মাথা খারাপ মেয়েকে সে খুব কাছে বসে পড়াচ্ছে! কখন কোন বিপদ হয়???
অামি অাস্তেকরে রেলিং থেকে নেমে চলে এলাম। অনেকদিন পর অাবার অভির উপর রাগ হলো। অভিমান অার মুখ থুথু করা গালি নিয়ে অামি অাবার কান্নাকাটি শুরু করলাম।
রাগে
মাথায় উল্টোপাল্টা বুদ্ধি খেললো, রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে, অভির ঘরে গেলাম অামি, অভি পড়ছে তখন! নিঃশব্দে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে অাছি। অভি পেছন ঘুরে না তাঁকিয়েই বললো,,
——–এখান থেকে যাও পরী!
অামি কাঠ কাঠ হওয়া গলায় বললাম,
———যাবো না অামি।
———কথা শুনবে না অামার?
———-না।
———কেনো শুনবে না??
———অাপনিও তো অামার কথা শুনেন না!
———কোন কথাটা শুনিনি????
অামি কিছু বলতে পারলাম না।
অভি বসা থেকে উঠে এসে অামার সামনে দাঁড়ালো।
———বলো তোমার কোন কথাটা শুনিনি??
অামি বোকার মত হুট করে
অভিকে জড়িয়ে ধরলাম;
অভি সাথে সাথে ও” মাই গড” বলে চিৎকার দিয়ে উঠলো।
অামি ভয় পেয়ে ছেড়ে দিলাম।
———-এত রাতে অামায় জড়িয়ে ধরতে এসেছো??? তোমার তো মাথাটা দেখছি, সত্যি সত্যিই গেছে!
———অামার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। অামার মাথা খারাপ হয়ে গেছে বলতে বলতে
অামি কেঁদে ফেললাম!
অভি অামার হাত ধরে টেনে নিচে অামার ঘরে নিয়ে এলো।৷ বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,
———তোমার কি হয়েছে পরী??
অামি এবারও কিছু বলতে পারলাম না। অভি নিশ্চুপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।
———ইউনিভার্সিটিতে অামার একটা মেয়ে বন্ধু অাছে,
সিঁথি নাম। সাইকোলজিতে পড়ছে।
কারো কোনো মেন্টাল সমস্যা হলে সে খুব সুন্দর অার সহজভাবে সেটা সলভ করে দেয়। তুমি কি তাঁর সাথে পরিচিত হতে চাও, পরী???
অামি মাথা নাড়লাম।
——— অঞ্জনকে বলো, সে তো তোমার সাথে অনেক পরিচিত।
———অামি কাউকে কিছু বলবো না। কাউকে না।
———ঠিক অাছে। অামাকেও বলতে চাও না??
অামি জবাব দিলাম না।
অভি অামার মাথায় টোকা মেরে বললো,
———যেদিন তুমি তোমার সমস্যাটা পরিষ্কার বুঝতে পারবে। এবং গুছিয়ে অামাকে বলতে পারবে সেদিনই অামি তোমার সমস্যার সমাধান করবো। ফ্রম নাউ উই অার কমপ্লিটলি ডিসকানেকটেড। কোনোভাবেই অামরা কথা বলবো না।
নিদার প্রফেশনালি নর পারসোনালি…..
তারপর দরজার কাছ থেকে ফিরে এসে অামার শার্টের কলার ঝাঁকি দিয়ে ঠিক করে সেকেন্ড বোতামটা লাগিয়ে দিতে দিতে বললো,
———পরী, তুমি যে শার্টের এই বোতামটা সবসময় খুলে রাখো, সেটা অামার খুবই অপছন্দ। রাগে অামার গা কিরকির করে দেখলে! গলায় লকেট পড়লেই সেটা কোথায় বসে অাছে, সেটা তো ঢাকাবাসীকে দেখিয়ে বেড়াতে হয় না। নিজের লকেট নিজেই দেখো….
অভি চলে গেলো! অামি শক্ত হয়ে বিছানায় বসে রইলাম। অাসলেই তো অামার সমস্যাটা কি??
অামি এমন কেনো করছি???
(চলবে)
লেখিকা: তৃধা আনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here