#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#Writer_Sarjin_Islam [ সারজীন ]
#Part:7
ঘুমে বিভোর মিরা! ঘুমের মধ্যেও ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। কিন্তু হাসি টা মুখে বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকলো না। পর্দা ফাঁক দিয়ে সকালের মিষ্টি রোদ মিরার মুখে পড়ছে। মিরা বিরক্ত হয়ে চাদর মুড়ি দিয়ে রোদ আটকানোর চেষ্টা করছে। চোখ বুজতে না বুজতেই দরজার নক করার শব্দে আবার বিরক্ত হয়ে আড়মোড়া ভেঙ্গে ঘুম ঘুম চোখে গিয়ে দরজা খুলে। দরজার সামনে নীলা দাঁড়িয়ে আছে। মিরা রাগ করে নীলাকে কিছু বলবে কিন্তু নীলার মুখের মিষ্টি হাসি দেখে মিরা সব ভুলে যায়, হাসি মুখে মিরা বলে,
—” কী হলো এতো সকাল সকাল আমার ঘুমের বারোটা বাজালে যে?”
—” মেম এখন সকল নয় এগারোটার বেশি বাজে। কখন ব্রেকফাস্ট করবেন আর কখন লাঞ্চ করবেন?”
মিরা এগারোটার কথা শুনে সব ঘুম চলে যায়। একটু আগেও মনে হচ্ছিল সবে সকল ছয়টা বাজে। কিন্তু এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাবে বুঝতেই পারিনি। তার উপর কাল অনেক রাত পর্যন্ত তিন বোন মিলে আড্ডা দিয়েছে। তাই বোধহয় ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।
মিরা করুন চোখে নীলার দিকে তাকিয়ে ছোট ছোট করে বলে,
—” সরি আপু আমি একদম খেয়াল করিনি। তাছাড়া কাল রাতে তোমাদের সাথে আড্ডা দিয়ে অনেক রাত করে ঘুমেছি তো তাই বোধহয় উঠতে দেরি হয়ে গেছে।”
নীলা হালকা হেসে বলে,
—” এতে সরি বলার কী আছে। ওতো রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে তো ঘুম থেকে উঠতে দেরি ই হবে তাই না!”
—” ঠিক আছে আপু তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
নীলা যেতে যেতে বলে যায়,
—” তাড়াতাড়ি চলে আসিস। নিঝুম আজ স্কুলে যায়নি তোর সাথে ঘুরবে বলে। দেরি করিস না।”
মিরা রুমে ঢুকতে ঢুকতে চিন্তা করে ও এখানে এসেছে পর থেকে ওর মাম্মার সাথে কথা বলেনি। মিরা যতক্ষন ফোন না করবে তিনিও ফোন করবেন না। মিরার মাম্মার এই ব্যাপার টা বেশ ভালো লাগে মিরার, মিরা ফোন না দিলে তিনিও দেয় না। হয়তো ওর মাম্মা ওর উপর এখন অভিমান করে আছে। এসব কথা চিন্তা করে মিরা আনমনে হেসে ফেলে।
মিরা ব্রেকফাস্ট করে হল রুমে এসে বসে। আগে থেকেই নীলা আর নিঝুম বসে ছিলো সেখানে। নিঝুম মিরা আর নীলার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” এখন কোথায় যাবো ঘুরতে আমরা?”
মিরা বলে,
—” বাইরে এতো রোদের মধ্যে কোথায় ঘুরতে যাওয়ার দরকার নেই। বাড়িতে বসে আড্ডা দিবো।
নিঝুম মন খারাপ করে বলে,
—” আজ ঘুরতে যাবো বলে স্কুলে পর্যন্ত যাইনি। প্লিজ আপু চলো না।”
—” সরি বোন আজ পারবো না। কিন্তু কাল তোকে নিয়ে ঘুরতে যাবো প্রমিজ।”
—” সত্যি তো?”
—” আমি কখনো মিথ্যা বলছি?”
—” না।”
নিঝুম না বলে নীলার দিকে তাকায়। নীলা নিজ মনে কী জেনো ভেবে যাচ্ছে। নিঝুম চোখের ইশারায় মিরা তা দেখায়। মিরা নীলাকে দেখে বুঝতে বেশি সময় লাগে না নীলা কিছু একটা নিয়ে চিন্তা করছে। নীলার এদিকে কোনো খেয়াল ই নেই। মিরা নিঝুম কে আসতে করে বলে,
—” তেমন কিছু না। কিছু একটা নিয়ে ভাবছে হয়তো। তুই যা তো আমার রুম থেকে ফোন টা নিয়ে আয়।”
—” আচ্ছা।”
নিঝুম চলে গেলে মিরা নীলাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,
—” অভ্র ইডিয়েটকে নিয়ে এত ভাবার কী আছে?”
অভ্রর নাম শুনে চমকে উঠে নীলা, এক নজর আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নেয়, কেউ শুনে ফেললো কী না দেখার জন্য। মিরা নীলার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বলে,
—” না কেউ দেখছে, না কেউ শুনছে। এতো উতলা হওয়ার কিছু নেই। এরকম মন খারাপ করে থাকলে সবাই বুঝে যাবে।”
—” কী করবো আমার খুব চিন্তা হয়, যদি আমাদের দুই ফ্যামিলির মানুষ আমাদের সম্পর্ক টা মেনে না নেয়। তাহলে কী হবে?”
—” এতো চিন্তা করছো কেনো? আমি আছি তো।”
নীলা কিছু বলার আগে নিঝুম মিরার ফোন নিয়ে চলে আসে। মিরা নীলাকে চোখে ইশারায় শান্ত থাকতে বলে।
__________________________________________
মিহান বাড়িতে এসে ঘন্টা দুয়েক হবে। ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। অনু কলেজ থেকে এসে শুনছে মিহান এসে গেছে। অনু ফ্রেশ হয়ে গুটি গুটি পায়ে মিহানের রুমে হাজির হয়। রুমে ভালো করে চোখ বুলিয়ে দেখে ট্রলি টা ওয়্যার্দ্রবের কাছে রাখা। অনু আসতে আসতে গিয়ে ফ্লোরে বসে ট্রলি খুলতে শুরু করে। একপাশে মিহানের জামাকাপড় অন্য পাশে অনেকগুলো প্যাকেট রাখা। অনু প্যাকেট খুলে দেখে দুইটা গাউন আর এক বক্স চকলেট রাখা। অনুর খুশি দেখে। মিহান চোখ বন্ধ অবস্থায় বলে,
—” কী রে কুত্তি তুই আমার রুমে কী করছিস?”
হঠাৎ করে মিহানের কথা শুনে অনু চমকে গিয়ে ওর হাতের প্যাকেটগুলো পরে যায়। নিজের বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
—” ঐ কুত্তা তুই আমাকে ভয় দেখালি কেনো? আর একটু হলেই তো হার্ট বিট বন্ধ হয়ে যেতো।”
—” তুই আমার রুমে চোরের মত কী করছিস?”
—” চোরের মত কী করছিস মনে? তুই ঘুমিয়ে ছিলি তাই আসতে আসতে ট্রলি খুলছিলাম। এখানে চোরের মত কী হলো?”
—” কিছু না।”
অনু ফ্লোর থেকে উঠে মিহানের সামনে দিয়ে গাউন দেখিয়ে হাসি মুখে বলে,
—” ভাইয়া আমার না খুব পছন্দ হয়েছে এই দুটো!”
—” তুই এগুলো নিয়েছিস কেনো? এগুলো আমার কলিজার টুকরো বোনের জন্য।”
মিহানের কথা শুনে অনু হেসে বলে,
—” যাইহোক আপনার বোনের এগুলো পছন্দ হয়েছে। এগুলো আমি আপনার বোনের রুমে রেখে আসি। আর আপনি নিচে যান আপনার কলিজার টুকরো বোন আপনার সাথে খাবে।”
মিহান উঠে বসে বলে,
—” আমার বোন আমার জন্য এখনো না খেয়ে বসে আছে আর তুই এখন বলছিস? যা এইগুলো রেখে নিচে আয়।”
অনু যেতে যেতে বলে,
—” ড্রামা বাজ একটা।”
অনুর কথা শুনে মিহান হেসে দেয়। অনু জানে মিহান ইচ্ছে করে ওকে রাগানোর জন্য এসব বলে। আগে অনু না বুঝে কান্না করতো, মিহান ওর জন্য কিছু না এনে অন্য কোন বোনের জন্য আনতো এসব ভেবে। পরে মম অনুকে বুঝিয়ে বলে, মিহান ইচ্ছে করে ওকে রাগানোর জন্য এসব বলে। আর এখনতো অনুও মিহানের সাথে শুরু হয়ে যায়। অনুও বেশ লাগে ওর ভাইকে জব্দ করতে। এসব ভাবতে ভাবতে অনু সব জিনিস নিয়ে নিজের রুমের দিকে যায়।
__________________________________________
সন্ধ্যার পর দাদার সাথে কথা বলে মিরা বেরিয়ে যায় ওর নানাবাড়ির উদ্দেশে। অনেক হয়েছে মান অভিমান। মিরা এর শেষ দেখতে চায়। চায় ওর মাম্মার মুখে হাঁসি ফোটাতে। অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিরা, ওকেই কিছু একটা করতে হবে। না হলে এই দুই পরিবারের দূরত্ব ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকবে। আনমনে এসব ভাবতে ভাবতে পৌঁছে যায় “আহামেদ নিবাস”।
মিরা গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়, পিছনে ডেনি দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির নকশা দেখে মনে হচ্ছে অনেক আগের দিনের বাড়ি, দেওয়ালের রং টা বোধহয় নতুনে করা হয়েছে। বাড়ির বাগানে বেশ ফুলের উপস্থিত আছে বলা যায়। বাগানে লাইটের আলোয় বেশ ভালো ভাবে সবকিছু দেখে যাচ্ছে। সেদিন চোখ সরিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করে মিরা। ডোর বেল বাজলে কিছুক্ষণ পর পনের বা ষোল বছর বয়সী একটা মেয়ে দরজা খুলে দিয়ে বলে,
—” কাকে চাই?”
মিরা ভালো করে মেয়েটা কে দেখছে, প্রথম কথা বলার ভঙ্গি শুনে মিরা বুঝতে পারে, মেয়েটা চঞ্চল প্রকৃতির। হয়তো দুই মামার মধ্যে কারো মেয়ে হবে। নিজের ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে বলে,
—” মুনির আহামেদ আছে?”
—” দাদা হল রুমে সবার সাথে বসে কথা বলছে আসুন আপনি আমার সাথে।”
মিরা মেয়েটার পিছন পিছন যায়। হল রুমে এলে, একজন মহিলা সোফা থেকে উঠে এসে বলে,
—” কে এসেছে মিশু?”
—” জানি না বড় মামনি বললো দাদার সাথে কথা আছে।”
—” অহহহহ।”
মিরা সবার দিকে এক নজর তাকায়। মিরা ওর নানা, নানু, বড় মামা, ছোট মামা, আর বড় মামিকে চিনে, মিরা মাম্মা ছবিতে ওদেরকে দেখিয়েছিলো মিরাকে। মিশুর সাথে যিনি কথা বলছেন তিনি মিরার বড় মামী। দেখেই বুঝা যায় চেহারার বয়সের ছাপ পড়েছে। চোখ যায় দেওয়ালের দিকে ওখানে মিরার মাম্মার বেশ কয়েকটা ছবি আছে তার বাবা, মা আর ভাইদের সাথে।
বাড়ির সবাই মিরাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখছে। মিরার জিন্স, গেঞ্জি তার উপর শার্ট পরা, সানগ্লাস শার্টের সাথে বাজানো আছে। মিরা নানা এগিয়ে এসে বলে,
—” আমি মুনির আহামেদ। কী কথা আছে তোমার আমার সাথে?”
—” আপনার মেয়ে নিতু, তার সম্পর্কে কিছু কথা ছিলো।”
মিরা মাম্মা নাম শুনে সবাই চমকে উঠে। মিরার নানা গম্ভীর হয়ে বলে,
—” আমার এই নামে কোনো মেয়ে নেই। এখন আসতে পারো।”
মিরা ওর নানার কথা শুনে মনে মনে বলে,
—” না এভাবে হবে না। ধামাকা কিছু করতে হবে।”
মিরা ওর নানার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” ওকে না শুনলে নাই। কী আর করার আপনার মেয়ে আরো অত্যাচার সহ্য করবে।”
মিরার নানা অবাক হয়ে বলে,
—” কী বললে?”
—” আপনি যেনে কী করবেন, আপনার তো এই নামে কোনো মেয়ে নেই।
মিরার কথা শুনে ওর নানা মুখ কালো হয়ে যায়। মিরার নানু এগিয়ে এসে উত্তেজিত হয়ে বলে,
—” হ্যা নিতু আমাদের মেয়ে কী হয়েছে ওর?”
—” তেমন কিছু না তার হাজবেন্ড তার উপর অত্যাচার করে।”
এরমধ্যে নিতুর বড় ভাই মানে মিরার বড় মামা তেতে উঠে বলে,
—” ঐ নিলয়ের এতো বড় সাহস আমার বোনের উপর অত্যাচার করে। ওকে আমি দেখে নেবো।”
মিরার ছোট মামা বলে,
—” ভাইয়া আমরা কখনো আপুর চোখে পানি আসতে দেইনি, ঐ নিলয়ের বাচ্চাকে আমি ছাড়বো না।”
মিরা এদের ক্ষেপে যাওয়া দেখে মনে মনে বলে,
—” এতক্ষন চিনতেই পারছিলো না তাদের বাড়ির মেয়েকে। আর এখন বোনের জন্য আমার মাসুম পাপা টাকে না কি ছাড়বে না। হা হা হা!
চলবে….
#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ৮
মিরা অনেকক্ষণ ধরে ওর মামাদের হম্বিতম্বি শুনছে। মিরা বেশ বুঝতে পারছে ওর মাম্মা এখানে সবার চোখের মণি। মিরার এইটুকু কথা শুনে সবাই কেমন উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। মিরার নানু তো কেমন উতলা হয়ে পড়েছে। মিরার বড় মামী সবাইকে থামিয়ে বলে,
—” তোমরা আগে থেকে এতকিছু না ভেবে আগে ওর কথা ভালো করে শোনো।”
মিরার নানা বলে,
—” এই মেয়ে তুমি কী এসব সত্যি বলছো? তুমি যদি সত্যি বলে থাকো তাহলে যে যে আমার মেয়েকে কষ্ট দিয়েছে তাদের আমি শেষ করে দেবো।”
মিরা বাঁকা হেসে বলে,
—” আমার কাছে প্রমাণ আছে চাইলে দেখতে পারেন?”
মিরা ছোট মামা কপাল ভাঁজ করে বলে,
—” কী প্রমাণ?”
—” বলছি।”
মিরা ডেনির দিকে তাকিয়ে বলে,
—” গাড়ি থেকে ল্যাপটপ নিয়ে এসো ডেনি ভাইয়া।”
ডেনি ঘাড় নাড়িয়ে চলে যায়। মিরা মনে মনে হেসে চলেছে ওর পাপা কে এইভাবে ফাঁসিয়ে দেয়ার জন্য। দুই মামা কত কী বলছে ওর পাপা কে। মিরা চিন্তা করছে ওর পাপা যদি এখানে থাকতো তাহলে তার রিএকশন কেমন হতো? ভাবলেই হাসি পায় মিরার!
ডেনি ল্যাপটপ নিয়ে এসে মিরাকে বলে,
—” মেম নিয়ে এসেছি!”
—” তুমি গিয়ে সোফায় বসে দেখো ল্যাপটপে অনেকগুলো ফাইল একসাথে আছে, কিছু ফাইল লক করা আছে আর কিছু ফাইল আনলক করা আছে। আনলক ফাইলের মধ্যে Medicine to make the mind good নামে একটা ভিডিও আছে সেটা ওপেন করো।”
—” ওকে মেম।”
ডেনি মিরার কথা মত কাজ শুরু করে দেয়। মিরা সবার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” ভিডিও টা দেখুন তাহলে সবকিছুই ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”
মিরার কথা মত সবার দৃষ্টি পড়ে ল্যাপটপের দিকে।ডেনি ভিডিও প্লে করে দিয়ে ওখান থেকে সরে যায়, আর বাড়ির সবাই গিয়ে সোফায় বসে। ভিডিওর প্রথমেই বেশ বড় বড় করে ভেসে ওঠে Medicine to make the mind good লেখাটি। ভিডিও টা দেখতে শুরু করে সবাই।
আবছা অন্ধকার বারান্দায় চেয়ারে একটা মেয়ে বসে আছে, একটু এগিয়ে মেয়েটার হাতে দেখতে পায় মিরার নানা, নানুর দুই মামার, আর বড় মামীর এদের ছবির একটা ফ্রেম। পাশের বারান্দার হালকা আলো ছবির ফ্রেমে পড়েছে, মেয়েটি ফ্রেমে হাত বুলাছে, আর চোখের পানি পড়ছে ফ্রেমে। হঠাৎ করে কেউ একজন এসে মেয়েটির চোখে কাপড় বেঁধে দেয়, মেয়েটি কাপড়ের উপর হাত দিয়ে পিছন ঘুরে। পিছন ঘুরতেই দেখে মেয়েটি নিতু, মিরার মাম্মা। হঠাৎ করে তিনি কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
—” নিলয় কোথায় তুমি? আমার চোখ বাঁধলে কেনো? প্লিজ সামনে এসো। কী হলো?”
নিতু একের পর এসব বলে যাচ্ছে, আচমকা নিলয় এসে নিতু কে কোলে তুলে নেয়। নিতু ঘাবড়ে গিয়ে নিলয়ের শার্ট খামচে ধরে বলে,
—” তুমি আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো এত রাতে?”
নিলয় ফিসফিসিয়ে বলে,
—” অত্যাচার করতে!”
নিতু কে বাগানে দাঁড় করিয়ে রেখে নিলয় কোথায় যেনো উরে গেছে, নিতু বিরক্ত হয়ে চোখের বাঁধন খুলে ফেলে। চোখ থেকে কাপড় সরালে অনেক আলোর রশ্মি এসে পড়ে চোখে মুখে। নিতু আসতে আসতে করে সামনে তাকায়, নিতুর মনের মত করে বাগান টা সাজানো, ভালো করে খুঁতিয়ে খুঁতিয়ে দেখছে সব কিছু। নিতুর মনে প্রশ্ন জাগে এতো আয়োজন কে করেছে? নিলয়? কিন্তু সে কোথায়? নিতু চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলয়কে খুঁজছে। একটু এগিয়ে গিয়ে যায় নিতু সামনের দিকে, কিন্তু নিলয়কে খুঁজে না পেয়ে পিছনে ফিরে নিতু হতবাক হয়ে যায়। নিলয় হাঁটু গেড়ে বসে আছে হাতে কয়েকটা ডালিয়া ফুল, যা নিতুর পছন্দের। নিতু অবাক চোখে নিলয়ের দিকে তাকায়, নিলয় মিষ্টি হেসে বলতে শুরু করে,
—” Happy Birthday Nitu. আমি জানি তুমি আজো তোমার পরিবারের জন্য কষ্ট পাচ্ছো শুধু মাত্র আমার জন্য। তুমি আমার ভালোবাসার জন্য নিজের আপনজনদের ছেড়েছো। তোমার প্রতি জন্মদিনে দিন তাদের কথা ভেবে কান্না করো। আমার জন্য তুমি এতো কষ্ট সহ্য করছো তাই তোমাকে যতই সরি বলি কম হবে। আমি কখনো পারবো কী না জানি না তবে দেখো একদিন না একদিন তোমার পরিবার আমাদেরকে মেনে নিবেন। I Love You Nitu. I love you so much.
নিতু কান্না চোখে হেসে, চোখের পানি মুছে নিলয়ের হাত দিয়ে ফুলগুলো নেয়। নিলয় উঠে দাঁড়ালে, নিতু নিলয়কে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে বিরবির করে বলে,
—” I Love You Too Neloy.
ভিডিও টা শেষ হলে আবার বড় বড় করে ভেসে ওঠে Medicine to make the mind good লেখাটি।
মিরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে ওর নানুর, বড় মামী আর ছোট মামীর চোখে পানি, নানা, বড় মামা আর ছোট মামার চোখ লাল হয়ে আছে, যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। বাড়ির অন্যরা মন খারাপ করে আছে।
মিরা বাঁকা হেসে ওর নানার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” মুনির আহামেদ আপনি কিছুক্ষণ আগে বলছিলেন, আপনার মেয়েকে যে বা যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের আপনি শেষ করে দিবেন! কাকে কাকে শেষ করবেন আপনি? সে তালিকার প্রথমে তো আপনি নিজে পড়েন।”
মিরা এইটুকু বলে দম নেয়। মিরার নানু চোখ মুছে তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললো,
—” তোমার জেদের কারনে আমার একমাত্র মেয়ে কষ্ট পাচ্ছে। ভালোবেসে কোনো অন্যায় করেনি নিতু তাই না?”
মিরার বড় মামা ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে,
—” বাবা তুমি বলার পরে আমি আর আমার বোনের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখিনি। আর পারছিনা বাবা এবারতো জেদ ছাড়ো।”
মিরার নানা অভিমান করে বলে,
—” আমি শুধু জেদ ধরে আছি, ও জেদ ধরে নেই। ও পরতো না একবার ফোন করে আমাকে বাবা বলে ডাকতে? কিন্তু না ও জেদ ধরে আছে।”
মিরার নানার কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে যায়। তিনিও ঠিক কথাই বলেছেন। নিতুও তো পারতো ওর বাবার সাথে কথা বলতে কিন্তু না তা বলেনি। শুধু দূরত্ব বাড়িয়ে গেছে।
হঠাৎ করে মিরার ছোট মামী সন্দেহের চোখে মিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” তুমি এতকিছু জানলে কী করে? নাম কী তোমার? তোমার সাথে নিতু আপু কী সম্পর্ক? আর এসব তুমি করছোই বা কেনো?”
মিরা ছোট মামীর কথা শুনে সবাই মিরার দিকে তাকায়। সত্যি তো এসব কথা তো আগে কেউ ভাবেনি। মিরা হালকা হেসে বলতে শুরু করে,
—” আমি মিরা, মিরা খান। নিলয় খান আর নিতু খানের একমাত্র মেয়ে মিরা খান।”
মিরা পরিচয় শুনে সবাই চমকে উঠে, নিতুর যে একটা মেয়ে তাই তো তারা জানতো না। মিরা নানা নানু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের চোখে মুখে খুশির উল্লাস। মিরা বড় মামী কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
—” তুমি আমাদের নিতুর মেয়ে?”
—” হুম।”
মিরার বড় মামা তার মায়ের হাত ধরে বলে,
—” মা দেখো আমার ছোট বোন মা হয়েছে, অথচ আমারাই জানি না ওর যে এমন মিষ্টি একটা মেয়ে আছে।”
মিরার নানু ব্যস্ত পায়ে মিরার সামনে এসে দাঁড়ায়, মিরার গালে হাত দিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে তার নাতনি দেখতে কেমন হয়েছে। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারে না গালা ধরে আসছে, আচমকা জড়িয়ে নেন তিনি মিরাকে।
মিরার নানা মিরার চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার আদরের মেয়ে মা হয়েছে আর সেই জানতো না। অদ্ভুত তাই না? কতকিছু বলতে ইচ্ছে করছে মিরাকে তার। মিরা ওর নানুকে ছাড়িয়ে নিয়ে নানার দিকে তাকিয়ে বলে,
—” দেখলে তো তোমার মেয়ে ভালো আছে তার ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে। তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসে পাপা মাম্মা কে। কিন্তু তারপরও মাম্মা কে প্রায়শই আমি আর পাপা দেখি তোমাদের ছবি নিয়ে কান্না করে। এখনতো নিজের জেদ ছেড়ে নিজের মেয়েকে কাছে টেনে নেও।”
মিরার নানা অভিমান করে বলে,
—” আমি কেনো আগে কথা বলবো, ও আগে কথা বলতে পারে না?”
মিরা চোখগুলো ছোট ছোট করে বলে,
—” কেনো যে পাপা এই ডাকাত বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করতে গেছিলো খোদাই জানে?”
মিরার কথা শুনে সবাই হা হয়ে যায়। মিরা নানু আর দুই মামী চোখে পানি নিয়েও মিরার কথা শুনে মুখ টিপে হাসে। মিরার নানা গম্ভীর হয়ে বলে,
—” এখানে হাসার কী হলো?”
মিশু হাসতে হাসতে বলে,
—” আপু তোমাকে কে বললো আমাদের বাড়ি ডাকাত বাড়ি?”
মিরা মুখ বাঁকা করে বলে,
—” কেউ বলেনি আমি নাম দিয়েছি। এ বাড়ির মানুষগুলো এমন ভাব করে যেনো এখনি কোনো ডাকাতি করবে তার প্রস্তুতি নিচ্ছে।”
মিরার কথা শুনে নানু আর মিশু হা হা করে হেসে দেয়। মিরার নানা শুকনো কাশি দিলে ওরা হাসি থামিয়ে দেয়।
চলবে….
[ বিঃদ্রঃ দুই এক পর্বের মধ্যে মিহানের সাথে মিরার দেখা হবে। কেমন লাগলো জানাবেন। হ্যাপি রিডিং। ধন্যবাদ।💙💙💙]