#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ২৯
ঘুমে আচ্ছন্ন মিরা। ভোররাতে বাড়ি ফিরেছে দুজনে। কালকে রাতটা মিরার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় রাত হয়ে থাকবে। অসম্ভব ভালো একটা সময় পার করেছে মিহানের সাথে। ঘুমের মধ্যে মিরা অনুভব করতে পারছে কেউ মিরার মুখে চুমুতে দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে। পিটপিটিয়ে চোখ খুলে তাকায় মিরা। মিরান মিরার মাথার কাছে বসে ওর মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে। মিরা মিষ্টি হেসে দিয়ে বলল,
—” গুড মর্নিং সোনা।”
মিরান একগাল হেসে বলল,
—” দুদ মর্নিং মাম্মা।”
মিরা মিরানকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
—” কখন উঠেছ ঘুম থেকে?”
মিরান মিরার বুকে মাথা রেখে বলল,
—” কিতুক্ষন আগে।”
মিরা মিরানের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
—” ব্রেকফাস্ট করেছো?”
মিরান মিরার বুকে মাথা রেখে মিরার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
—” হুম, করথি। দাদু কলিয়ে দিয়েছে।”
মিরা মিরানের কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে বলল,
—” এই তো গুড বয় আমার।”
মিরান মিরার কথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে দেয়। মিরা এক দৃষ্টিতে তা উপভোগ করছে। এরমধ্যে অনু রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
—” এই যে প্রিন্স, আপনি এখনো এখানে কী করছেন? ওদিকে আপনা দাদা ভাই আপনার জন্য ওয়েট করছে। সে খেয়াল আছে আপনার?”
মিরা মিরানকে বুকে নিয়ে শোয়া থেকে উঠতে উঠতে বলল,
—” কী হয়েছে অনু? তোমার প্রিন্স কি করেছে?”
অনু বিছানার একপাশে বসে বলল,
—” পাপা এলাকাটা একটু ঘুরতে বের হবে, তাই প্রিন্স কে জিজ্ঞেস করছিলো সেই সাথে যাবে কী না? সেও রাজি হয়ে যাবার জন্য। বের হবার সময় পাপাকে দাঁড় করিয়ে বলে, ‘দাদা ভাই তুমি একটু উয়েট করু, আমি একটু মাম্মাকে আদল কলে আথি।’ এই বলে এক দৌড়ে তোমার রুমে।”
মিরা সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায় মিরানের দিকে। মিরান মাথায় হাত দিয়ে হতবাক ভঙ্গিতে বলল,
—” এই দা, একদম ভুলে গেথিলাম। মাম্মা আমি একতু দাদা ভায়ুর থাথে ঘুরতে দাই।”
মিরা মিরানের গালে শব্দ করে চুমু দিয়ে বলল,
—” আচ্ছা, একদম গুড বয় হয়ে থাকবে কেমন?”
মিরান দৌড়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,
—” আতথা মাম্মা।”
মিরা মিরানের যাবার দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে দেয়। মিরা দরজা থেকে চোখ সরিয়ে অনুর দিকে তাকায়। অনু কেমন করে যেন মিরার দিকে তাকিয়ে আছে। মিরা বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল,
—” কিছু বলবে অনু?”
অনু গলা পরিষ্কার করে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
—” হুম, তা কাল রাতে কোথায় গিয়েছিলে ভাইয়ের সাথে ভাবী?”
মিরা ভ্রু কুঁচকায় অনুর প্রশ্নে। মিরা কিছু না বললে, অনু আবার বলল,
—” কী হলো ভাবী বলো?”
মিরা বেশ বুঝতে পারছে অনু এখন ওর সাথে মজা করবে। মিরা অনুর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে বলল,
—” আশেপাশেই ছিলাম! কেনো?”
অনু সন্দেহের চোখে তাকিয়ে বলল,
—” আমার কিন্তু তা মনে হচ্ছে না। আশেপাশে ঘোরার জন্য ভাইয়া কখনো তোমাকে নিয়ে ওতো রাতে বের হতো না।”
মিরা সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে অনুর দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে বলল,
—” শুরু হয়ে গেলো গোয়েন্দাগিরি।”
মিরা হাসার চেষ্টা করে বলল,
—” ছাড়ো তো এসব কথা। আমি ফ্রেশ হবো। তুমি যাবে আমার সাথে কল তলায়?”
অনু বিছানা থেকে উঠে বলল,
—” আচ্ছা, যাবো আমি তোমার সাথে। সব মেয়েরা বোধহয় এতক্ষণে গোসল করে ফেলেছে। আমিও তোমার সাথে গোসলটা সেরে নিই। না হলে পরে আর সময় পাবো না।”
মিরা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বলল,
—” বেশ তো তাহলে চলো। আচ্ছা অনু আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দেবে?”
অনু কৌতুহলী হয়ে বলল,
—” কি প্রশ্ন ভাবী?”
মিরা জানালা থেকে চোখ সরিয়ে, অনুর দিকে তাকিয়ে বলল,
—” এই বাড়িটা তো বড় ফুপির শ্বশুর বাড়ি তাই না? তাহলে বড় ফুপা এই বাড়ি ভেঙ্গে আধুনিক বাড়ি কেনো বানালো না? বড় ফুপার তো কোনো কিছুতে অভাব নেই। তাহলে?”
অনু হেসে মিরার গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
—” তুমি তো কিছু জানোনা তাই একথা বলছো। আসলে হয়েছে কী, বড় ফুপির দাদি শ্বশুড়ি মারা যাবার আগেই বলে গেছিলো তার শ্বশুরবাড়িতে যেনো কখনো অত্যাধুনিক এর ছোঁয়া না পরে। তাই ফুপাও তার মায়ের মতের বিরুদ্ধে যায়নি।”
মিরা হাসিমুখে বলল,
—” এবার বুঝলাম। আচ্ছা, আমরা আগে ফ্রেশ হয়ে নেই। মিলাদ তো বোধহয় বারোটার পরে শুরু হবে।”
—” হ্যা, পাপাও তাই বলছে। যাইহোক চলো এখন।”
________________________
মিহান কাজে ব্যস্ত। সকাল থেকে একবার মিরার সাথে দেখা করার সময় পাইনি। অবশ্য মিরানকে কোলে নিয়ে দুই তিনবার বাড়ির ভিতরে ঘুরে এসেছে, তাও দেখা পায়নি। মিহানের কাঁধে দায়িত্ব পড়েছে খাবারের দিকটা সামলানোর। মিহান সবকিছু গুছিয়ে রেখে, এই দিকটা আশিক কে দেখতে বলে মিহান গোসল করে রেডি হতে চলে যায়। এদিকে মিহানের মম, মিহানের পায়জামা-পাঞ্জাবি মিরাকে দিয়ে ওর রুমে পাঠিয়ে দেয়। মিরা ধীর পায়ে মিহানের রুমের সামনে দাঁড়ায়। ভিতরে যাবে কী যাবে না, তা ভাবতে ভাবতে মিহান ভিতর থেকে চিৎকার করে বলল,
—” মম আমার পায়জামা-পাঞ্জাবি কোথায়? দেরি হয়ে যাচ্ছে রেডি হতে হবে আমায়। মম কোথায় তুমি?”
মিরা জোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে রুমে ঢুকলো, তাকিয়ে দেখে মিহান টাউজার পড়ে কাঁদে তোয়ালে ঝুলিয়ে উল্টোদিক ফিরে আছে। মিরা মিহানের উপর থেকে চোখ সরিয়ে বলল,
—” এই যে, এই তোমার পায়জামা-পাঞ্জাবি। রেখে গেলাম তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।”
কারো কণ্ঠস্বর শুনে মিহান পিছন ফিরে তাকায়। চোখ থমকে যায় মিরার উপরে। সারাদিনের ক্লান্তি এক নিমেষে দূর হয়ে যায়। অসম্ভব সুন্দর লাগছে মিরাকে। লাল সাদা রংয়ের চুরিদার পড়েছে। মিহান শুকনো গলায় ঢোক গিলে, চোখ বন্ধ করে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে এসে মিরার দিকে। মিরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই মিহান দরজা বন্ধ করে দেয়। মিহানের এমন কাজে মিরা চমকে মিরার দিকে তাকায়। মিহানের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। মিরা জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলল,
—” কী হলো দরজা বন্ধ করলে কেনো?”
মিরা বাঁকা হেসে বলল,
—” তোমাকে মন ভরে দেখবো জানপাখি তাই। জানো আজ তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। নিজেকে খুব কষ্টে কন্ট্রোল করে রেখেছি।”
মিহানের কথা শুনে মিরা শুকনো গলায় দুই তিনটা ঢোক গিলে বলল,
—” দেখি সরো, আমাকে যেতে দাও। বাড়ি ভর্তি মেহমান কখন কে দেখে ফেলবে তার ঠিক নেই।”
মিহান মিরার কথা উত্তর না দিয়ে মিরার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
—” হাম তুম এক কামরে মে বন্ধ হো, আওর চাবি খো যায়ে।”
মিরা কাঁপা কাঁপা পায়ে একটু একটু করে পিছিয়ে যাচ্ছে। কাঠের বেড়ায় দিয়ে পিঠ ঠেকে মিরার। মিরা মিহানের দিকে তাকায়, তার ঠোঁটে সেই বাঁকা হাসি বিদ্যমান। মিহান মিরার দিকে একটু ঝুঁকলে ওর চোখ ফু দিলে, মিরা সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়।
#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ৩০
বেলা প্রায় দুটোর বেশি বাজে। আত্মীয়-স্বজনের পূর্ণ বাড়ির কোনায় কোনায়। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। কেউ অনেকদিন পর নিজের কাছের বান্ধবীকে পেয়ে কথার ঝুড়ি খুলে বসেছে। আবার কেউ কেউ পানের ডালা সাজিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। ইরা মিরাকে সাথে নিয়ে বাড়ির পেছনে পুকুর ঘাটে বসে আছে, সাথে প্রিয়া আর ইরার কাজিন নিশিও আছে। মিরা বাড়ির বড় উঠান দিয়ে আসার সময় খেয়াল করেছে, বাড়ির ছেলেরা অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত। কারো দম ফেলার ফুরসত নেই। মিহানের বড় ফুপা আর ওর পাপা সবকিছু তদারকি করছে, সাথে অবশ্য মিরানও আছে, দাদা ভাইয়ের হাত ধরে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে সবকিছু দেখছে। মিরা পুকুরপাড়ের সিঁড়িতে বসে তাদের সাথে গল্প করছে। সবার কথার মাঝে প্রিয়ার আড়চোখে মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
—” ইরা জানো আজ আমি মিহান জিজুকে দেখে পুরো ফিদা হয়ে গেছি। উফ কী লাগছে সাদা পাঞ্জাবিতে। চোখ ফেরানো দায় হয়ে পড়েছিলো।”
ইরা একগাল হেসে বলল,
—” আপু তুমি তো শুধু ফিদা হয়েছে। আমার যত মেয়ে বন্ধুবান্ধব, কাজিন আছে সবার ক্রাশ মিহান ভাইয়া। মিহান ভাইয়ার অ্যাটিটিউড ই সবার থেকে আলাদা। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলবে। কারো মনে দুঃখ দিয়ে কখনো কথা বলে না। তাই তো আমার মিহান ভাইয়া সবার থেকে বেস্ট।”
নিশি মিরার দিকে তাকিয়ে মন খারাপের অভিনয় করে বলল,
—” মিহান ভাইয়া যদি তোমাকে পাগলের মত ভাল না বাসতো? তাহলে আমি একটা চান্স নিতাম। হাজার হোক আমার প্রথম ক্রাশ বলে কথা।”
নিশির কথায় সবাই হেসে দেয়। মিরা ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
—” তুমি জানো নিশি? তুমি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে। মুহুর্তের মধ্যে মানুষের মন ভালো করে দিতে পারো। দেখো তোমার কাছের মানুষটা সবার থেকে সেরা হবে।”
নিশি আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
—” কিন্তু কোথায় সে? তার জন্য আর কত কাল আমাকে সিঙ্গেল থাকতে হবে?”
নিশির কথা শুনে সবাই খিলখিলিয়ে হেসে দেয়। নিশি মেয়েটা বড্ড মজার মানুষ। সবাইকে নিয়ে হাসি খুশিতে মেতে থাকে সবসময়।
—” তোমরা এখানে কী করছো?”
কারো গুরু গম্ভীর কণ্ঠে সবাই পিছন ফিরে তাকায়। মিহান দাঁড়িয়ে আছি পিছনে। মিহানের অবস্থা দেখে সবাই হাসিতে ফেটে পরলো। মিহানের পাঞ্জাবিতে তরকারির ঝোল লেগে অবস্থা পুরো খারাপ। মিহান দাঁতে দাঁত চেপে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,
—” এখানে হাসার কী আছে? ভাগ এখান থেকে সব কয়টা।”
মিহানের কথায় সবাই বস থেকে উঠে দাঁড়ায়। সবাই মুখে হাত দিয়ে হাসি থামানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু মিরা সে গগন ফাটিয়ে হাসে যাচ্ছে। নিশি আসতে করে প্রিয়া আর ইরার কানে কানে বলল,
—” আপু চলো এখন থেকে আমরা মানে মানে কেটে পরি। ভাইয়ার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে খুব রেগে আছে। ভাবী ভাইয়াকে সামলে নিবে। চলো আমরা যাই।”
নিশির কথামতো সবাই আসতে করে কেটে পড়ে। মিরা হাসি থামিয়ে মিহানের দিকে তাকিয়ে দেখে মিহান ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মিরা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলল,
—” কী হলো এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?”
মিহান পা ফেলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,
—” না কিছু না। এখানে কী করছো তুমি?”
মিরা মাথা উঁচু করে মিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
—” বাড়ির মধ্যে থাকতে ভালো লাগছিল না, তাই আমরা চারজন এখানে বসে কথা বলছিলাম। কিন্তু তোমার এই অবস্থা হলো কী করে?”
মিহান নিজের পাঞ্জাবির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
—” একটা ইডিয়েট এই অবস্থা করেছে।”
মিরা চোখ ছোট ছোট করে বলল,
—” মানে? কী বলছো তুমি?”
মিহান গায়ে থাকা পাঞ্জাবি টা খুলতে খুলতে বলল,
—” জানিনা লোকটা কে? বোধহয় বাবুর্চিদের কোন লোক হবে। এইসব মিলাদে তো বাড়ির ছেলেরাই সবাইকে খাবার পরিবেশন করে। আমি সবাইকে ভাত দিয়ে আসার সময় ওই লোকটার সাথে আমার ধাক্কা লাগে, ব্যাস গরুর মাংসের সমস্ত ঝোল আমার পাঞ্জাবিতে।”
মিরা কপাল ভাঁজ করে মিহানকে বলল,
—” এখানে এত রাগার কী আছে?”
মিহান পুকুরের পানি দিয়ে হাত-মুখ ধুতে ধুতে বলল,
—” রাগ করবো না তো কী করবো? পাঞ্জাবীটা তুমি আমাকে পড়িয়ে দিয়েছিলে নিজের হাতে। পাঞ্জাবীটা আমার কাছে খুবই স্পেশাল। আর এই পাঞ্জাবীটা সাথে এসব হতে হলো।”
মিরা মিহানের পাঞ্জাবি পরিয়ে দেওয়ার কথা শুনে তখনকার কথা মনে পড়ে যায়।
মিহান মিরার চোখ ফু দিলে মিরা সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়। বেশকিছু পর মিরা চোখ খুলে দেখে মিহান মিরার দিকে ঝুঁকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। মিরা মিহানের চোখের দিকে তাকালে এক অদ্ভুত অনুভুতির শিকার হচ্ছে। তাকিয়ে থাকতে না পেরে চোখ নামিয়ে নেয় মিরা। বেশ কিছুক্ষণ নিঃশব্দে কাটিয়ে দেয় দুজন। মিরা নিচের দিকে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলল,
—” হয়েছে দেখা আমি এখন যাই।”
মিরা মিহানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে যেতে চাইলে, মিহান মিরার হাত ধরে নিজের কাছে নিয়ে ঘোরলাগা কন্ঠে বলল,
—” অপরাধ করেছো তুমি। খুব বড় অপরাধ। তোমার নেশায় আমাকে আসক্ত করেছো। তাই এমনি এমনি তো আর যেতে দিতে পারিনা।”
মিরা মিহানের পায়জামা-পাঞ্জাবি বিছানার উপর রেখে অবাক হয়ে বলল,
—” কিসের অপরাধ? কিসের নেশা? কিসের আসক্ত? এখন ছাড়ো তো আমায়।”
মিহান মিরাকে আরো শক্ত করে ধরে বলল,
—” ছাড়বো তো! তার আগে শাস্তি টা দিয়ে নেই।”
মিরা চোখ বড় বড় করে বলল,
—” শাস্তি? কীসের শাস্তি?”
মিহান বাঁকা হেসে বলল,
—” তোমার নেশায় আমাকে আসক্ত করার শাস্তি।”
মিরা মিহানের কথা না বুঝে বলল,
—” আমি কখন তোমাকে নেশা করালাম? মিথ্যে বলছো কেনো?”
মিহান মিরার কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলল,
—” আমি ওই নেশার কথা বলিনি জানপাখি। আমি বলেছি তোমার নেশা। তোমার ভালোবাসার নেশা।”
মিরা এতোক্ষণে বুঝতে পারলাম মিহান কি বলছেন। মিরা মিহানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল,
—” আমি তো তোমার আমার নেশায় পড়তে বলিনি। তাহলে পড়ছো কেনো?”
মিহান নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলল,
—” আমি অতসব জানি না। শাস্তি তোমায় পেতে হবে।নাহলে আজ রুম থেকে বের হবার কথা ভুলে যাও।”
মিরা মিহানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়। তাতে মিহানের কোনো হেলদোল নেই। মিরার এখন ইচ্ছে করছে মিহানকে এক ঘুষিতে নাক ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু আফসোস তা করতে পারবে না। মিরা মিহানের দিকে না তাকিয়ে বলল,
—” কী করতে হবে?”
মিহান ঠোঁটের কোনে হাসি এনে বলল,
—” বেশি কিছু না শুধু পাঞ্জাবীটা পড়িয়ে দিলেই হবে।”
মিহানের কথায় মিরা চোখ বড় বড় করে মিহানের দিকে তাকায়। কিন্তু সে নিজের কোমরে দুই হাত রেখে অ্যাটিটিউড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিরা ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
—” আমি এসব করতে পারবো না। অন্য কিছু করতে হলে বলতে পারো।”
মিহান বাঁকা হেসে বলল,
—” ঠিক আছে ওটা যখন করতে পারবে না তখন অন্য কিছু দিয়েছি তোমায়। উমমম…. কী দেওয়া যায়? কী দেওয়া যায়? হুম পেয়েছি। তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু দিবে।”
মিহানের কথা শুনে মিরার কাশি শুরু হয়ে যায়। মিহান মিরার অবস্থা দেখে বাঁকা হেসে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
—” কী হলো এমন করছ কেনো জানপাখি?”
মিরা মিহানের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলল,
—” তুমি ইচ্ছে করে আমার সাথে এমন করছ তাইনা?”
মিহান মৃদু হেসে বলল,
—” কই না তো!”
মিরা বেশ বুঝতে পারছে মিহান ইচ্ছে করে ওর সাথে এমন করছে। কিছু করারও নেই এখন ওর। এগিয়ে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে পাঞ্জাবীটা তুলে নেয়। মিহান একগাল হেসে মিরার সামনে হাজির হয়। মিরা শুকনো গলায় দুই তিনটা ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা হাতে মিহানকে পাঞ্জাবি পড়িয়ে দিতে শুরু করে।
মিরা চমকে গিয়ে নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। মিহান ওর মুখে পানির ছিটা দিয়েছে। মিরা বিরক্ত হয়ে বলল,
—” কী হলো? গায়ে পানি দিচ্ছে কেনো?
মিহান নীচের ঠোট কামড়ে বলল,
—” কোন ভাবনায় মশগুল থাকো এতো? কখন থেকে ডাকছি তোমায়?”
মিরা আমতা আমতা করে বলল,
—” কিছু না। তুমি কী বলবে?”
মিহান সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলল,
—” বলছি এখানে থাকার দরকার নেই। বাড়ির ভিতরে যাও।”
মিরা মিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
—” তুমি এখন আবার কোথায় যাবে? চেঞ্জ করবে না?”
মিহান মৃদু হেসে বলল,
—” এখন আর চেঞ্জ করবো না। গায়ে তো গেঞ্জি আছেই। সমস্যা হবে না। তুমি বাড়ির ভিতরে যাও। আর পাঞ্জাবীটা এখানে ভিজানো থাক পরে মমকে বলে দেখি কী করা যায় এটার।”
এই বলে মিহান বড় বড় পা ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। মিরা মিহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবে, ” মানুষ তার ছোটখাটো সব বিষয় খেয়াল রাখে। ওর জন্য কোনটা ভালো তার মিরার থেকেও মিহান ভালো জানে।”
চলবে…💙
চলবে….💙