না চাইলেও তুই আমার পর্ব ২৭+২৮

#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ২৭
মিহানের বড় ফুপি মিরার সাথে একে একে সবার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। মিরা হাসিমুখে সবার সাথে কথা বলছে। মিহানের বড় ফুপি তনু উচ্চ স্বরে বলে,

—” বড় বৌমা, ছোট বৌমাকে নিয়ে একবার এদিকে আসো দেখে যাও কে এসেছে?”

বাড়ির ভিতরের দিয়ে আওয়াজ আসে,

—” আসছি মামনি।”

উঠেন পাতা খাটে মিহান আর প্রেম বসে আছে। মিরান কে মিহানের পাশে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। প্রিয়া, নীলা আর নিঝুম পাশের রাখা চেয়ারে বসে আছে। মিরাকে মিহানের ছোট ফুপি নিজের কাছে ঢেকে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করছে। ভিতরের ঘর থেকে দুইজন মেয়ে এসে তনুর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,

—” কে এসেছে মামনি?”

তনু মিহানকে দেখিয়ে বলে,

—” মিহান এসেছে সাথে ওর হবু বউকে নিয়ে এসেছে।”

প্রথম জন হাসিমুখে বলে,

—” সত্যি ভাইয়া?”

মিহান‌ বাঁকা হেসে বলে,

—” হুম।”

অন্যজন দুষ্টুমি হেসে বলে,

—” কোথায় তোমার প্রেয়সী ভাইয়া?”

মিহান মিরার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,

—” তোমাদের পিছনে, ছোট ফুপির সাথে কথা বলছে।”

মিরা উল্টোদিক ঘুরে কথা বলছিলো, তখন ওরা মিরাকে ডাক দেয়,

—” ভাবী!”

পিছন ফিরে ওদের দিকে তাকিয়ে মিরা অবাক হয়ে যায়, অবাক কন্ঠে বলে,

—” রিয়া ভাবী আর নুর ভাবী তোমরা এখানে?”

দুজনে হতভম্ব হয়ে যায় মিরা কে দেখে। দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করে। নুর আবার হয়ে বলে,

—” মিরা তুমি?”

রিয়া উত্তেজিত কন্ঠে বলে,

—” এক মিনিট, এক মিনিট তুমি তাহলে আমাদের মিহান ভাইয়ার মিরা?”

মিরা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,

—” হুম, কিন্তু তোমরা ওকে চিনো কীভাবে?”

ওদের কথা শুনে তনু এগিয়ে এসে বলে,

—” তোরা কী একে অপরকে চিনিস?”

রিয়া ওর শাশুড়ি দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলে,

—” হ্যা, মামনি আমরা মিরা কে আগে থেকে চিনি। তোমাকে বলেছিলাম না লন্ডনের থেকে আসা তিন বন্ধুর কথা?”

তনু কিছুক্ষণ চিন্তা করে ছোট করে বলে,

—” ওহ, হ্যা, মনে পড়েছে।”

রিয়া মিরার দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,

—” এই সেই মিরা মামনি। যার কথা তোমাকে বলেছিলাম।”

তনু আবার হয়ে বলে,

—” কী বলছো? এই সেই মেয়ে?”

রিয়া অন্য মনস্ক হয়ে বলে,

—” হুম।”

মিহান ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,

—” তোমরা কী বলছো, কিছুই তো বুঝতে পারছি।”

প্রিয়া ওদের সামনে এসে বলে,

—” আমি বুঝিয়ে বলছি ভাইয়া তোমাদের।”

প্রিয়া ওদের একে একে সবকিছু খুলে বলে ওদের বান্দরবানে দেখা হওয়ার কথা।

____________________________

সন্ধ্যার পর মিরা ধীর পায়ে বাড়ির ভিতরে উঠেন এসে দাঁড়ায়। ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখছে। গ্ৰামের মহিলারা কাজে ব্যাস্ত। কেউ মসলা বাটছে, কেউ ডাল বাচছে আরো নানান কাজে ব্যাস্ত সবাই। ছোট ফুপি তাদের কাজের কাজের তদারকি করছে। মিরা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মিহান মিরান কে কোলে নিয়ে কাদের সাথে যেনো কথা বলছে। মিরা ওদিকে এগিয়ে গিয়ে মিহানকে আসতে করে বলে,

—” মিরান কখন ঘুম থেকে উঠেছে?”

মিহান মিরার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে,

—” তুমি ঘুমিয়ে যাবার কিছুক্ষণ পরেই উঠে গেছে।”

মিরা চোখ ছোট ছোট করে বলে,

—” তাহলে তুই ঘুমাসনি ভীতুরাম?”

মিরান এক মনে চকলেট খেয়ে যাচ্ছে। মিহান মিরানের চুল ঠিক করতে করতে বলে,

—” আরে না, আমি তো ঘুমিয়েছি। মিরান এতক্ষন আশিক আর নিশানের কাছে ছিলো।”

মিরা আশেপাশে তাকিয়ে বলে,

—” ওহ, এতো লোকজন কেনো বাড়িতে? আর বাড়ির ভিতরের উঠনে কী হচ্ছে ওখানে?”

মিহান মিরার দিকে তাকিয়ে আছে, মনে হয় ঘুম থেকে উঠে সোজা এখানে এসেছে। চুলগুলো কেমন এলোমেলো হয়ে আছে। কিন্তু মুখের ল্যাবলের বিন্দু মাত্র কমতি নেই। মিহান মিরার কথায় উত্তর না দিলে, মিরা মিহানকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,

—” কী হলো, কথা বলছিস না কেনো?”

মিরার ধাক্কায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বলে,

—” হ্যা, হ্যা, বলো কী বলছিলে?”

মিরা কপাল ভাঁজ করে বলে,

—” বলছি, এতো লোকজন কেনো বাড়িতে? আর বাড়ির ভিতরের উঠনে কী হচ্ছে ওখানে?”

মিহান উঠানের দিকে একবার তাকিয়ে বলে,

—” ওহ, কাল তো মিলাদ তারই আয়োজন করা হচ্ছে।”

মিরা ছোট করে বলে,

—” কতক্ষন কাজ করবে তারা?”

মিহান নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,

—” এখানে যারা যারা আছে তারা আজ সারারাত কাজ করবে।”

মিরা মিরানের দিকে তাকিয়ে বলে,

—” ওহ, মিরান কে কী আমার কাছে দিয়ে যাবি, না কী তুই নিয়ে যাবি?”

মিহান মিরানের গালে চুমু দিয়ে বলে,

—” না ও থাক আমার কাছে, তুমি বরং গিয়ে মেয়েদের সাথে গল্প করো। মিথিরা বাগানের দিকে আছে, তুমি ওদের কাছে যাও।”

মিরা তাকিয়ে দেখে মেয়েরা ফুল গাছের ঐদিকে চেয়ার পেতে বসে গল্প করছে। মিরা মিহানের দিকে তাকিয়ে বলে,

—” মিরানের কোনো সমস্যা হলে আমার কাছে দিয়ে যাস। আমি ঐদিকে আছি।”

মিহান হেসে বলে,

—” আরে চিন্তা করো না আমি আছি তো। তুমি যাও।”

মিরা আর কিছু না বলে মেয়েদের এদিকে চলে আসে। মিরা চেয়ারে বসলে রিয়া মিরাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,

—” হাম তেরে বিন আব রেহে নাহী সাকতে
তেরে বিনা কেওয়া জুদ মেরা
তুজছে জুদা কার হোযায়েঙ্গে তো
খুদছেহি হোযায়েঙ্গে জুদা
কিউকি তুম হি হো আব তুম হি হো
জিন্দেগী আব তুম হি হোওওও
চ্যানভী মেরা দাড়দিভী
মেরি আশিক আব তুম হি হো।”

রিয়া গান শুনে সবাই মুখ টিপে হাসে। মিরা কিছু বুঝতে না পেরে বলে,

—” ভালোই তো গাইছিলে থামালে কেনো?”

মিরার কথায় সবাই জোরে হেসে দেয়। মিরা ভ্রু কুঁচকে ওদের দিকে তাকায় ওদের হাসির কারণ জানার জন্য। প্রিয়া হাসি থামিয়ে বলে,

—” গাঁধী তোকে খেপানোর জন্য তো গানটা গাইছিলো রিয়া ভাবী?”

মিরা অবাক কন্ঠে বলে,

—” আমাকে খেপানোর কী এমন আছে? যে তার জন্য গান গাইতে হবে?”

নীলা মুখ টিপে হেসে বলে,

—” তাই তো। কিন্তু তুই এতক্ষন মিহান ভাইয়ার সাথে কী নিয়ে কথা বলছিলি?”

—” আরে আমি তো……….

মিরা এইটুকু বলে থেকে যায়, এবার মিরা বুঝতে পারে ওরা কী নিয়ে খেপানোর কথা বলছে। মিরাকে আজ বাগে পেয়েছে, এত সহজে ছাড়বে বলে মনে হয় না।

নুর ভ্রু নাচিয়ে বলে,

—” কী হলো বড় ভাবী বলো, কী কথা বলছিলে আমাদের ভাইয়ার সাথে এতক্ষন?”

মিরা স্বাভাবিক হয়ে বলে,

—” তেমন কিছু না, অনুষ্ঠান বিষয়ে কথা বলছিলাম।”

রিয়া সন্দেহের চোখে বলে,

—” অনুষ্ঠানের বিষয়ে না কী অন্য কিছু হুম?”

মিরা হালকা হেসে বলে,

—” তোমরা তোমাদের ভাইয়া কাছ থেকে যেনে নিও তাহলেই তো হয়ে গেলো।”

ইরা মন খারাপ করে বলে,

—” ভাবী তুমি তো খুব চালাক। আমাদের কথার পেচে আমাদেরকে ফেলে দিলে।”

অনু ভাব নিয়ে বলে,

—” দেখতে হবে না ভাবী টা কার?”

মিথি অনু কে ভেংচি কেটে বলে,

—” শুধু তোর ভাবী না এটা আমাদেরও ভাবী। বুঝলি হিংসুটে মেয়ে?”

অনুও ভেংচি কেটে বলে,

—” হুর।”

মিরা ওদের কান্ড দেখে হেসে ফেলে।
#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ২৮
ঘড়ির কাটায় রাত ১১ টা ছুই ছুই। মিহান মিরাকে বাইকে নিয়ে ছুটে চলেছে অজানা গন্তব্যের দিকে। গ্রামের রাস্তা, রাত আটটার পরেই মধ্যরাত। বাতাসের মিরার অবাধ্য চুলগুলো বিনা অনুমতিতে উঠছে। আকাশে চাঁদ আছে তাও অন্ধকারে আশেপাশে ভালো দেখা যাচ্ছে না। বাইকের আলো ওদের পথ দেখাচ্ছে। মিরা মিহানকে অনেক বার জিজ্ঞাসা করেছে ওরা কোথায় যাচ্ছে? মিহান বারংবার রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে, ” দেখি কোথায় যেতে পারি!” মিরা আর কিছু জিজ্ঞেস না করে মিহানের কাঁধে হাত রেখে সময়টা উপভোগ করছে। কিছুক্ষণ আগের কথা ভেবে মনের ভিতরে অদ্ভুত শিহরণ জাগে মিরার। মেয়েরা আড্ডা দিচ্ছিলো, হঠাৎ করে মিথি আর রিয়া মুখ ফসকে কিছু কথা বলে ফেলে। মিহানের কথা উঠলে মিথি মৃদু গলায় বলে,

—” জানো ভাবী, ভাইয়া না তোমাকে ভিশন ভালোবাসে। এখনকার যুগে এমন ভালো সবাই বাসতে পারে না। তুমি ভীষণ লাকি যে এমন একজন মানুষ পেয়েছ।”

রিয়া মৃদু হেসে বলল,

—” তুমি একদিন না কী খেলার ছলে ভাইয়াকে বলেছিলে, তুমি বড় হয়ে ডাক্তারকে বিয়ে করবে। ভাইয়া সেটা মনে রেখেছে। ভাইয়া সব সময় বলতো, ভাইয়া বড় হয়ে তার পাপার মত একজন বড় বিজনেস ম্যান হবে। কিন্তু ভাইয়া নিজের ইচ্ছে পূরণ না করে তোমার ইচ্ছে কে প্রাধান্য দিয়েছে। তোমার ইচ্ছেতে সে ডাক্তার হয়েছে। এসব কথা আমি শ্বাশুড়ি মানে মামনির কাছে শুনেছি।”

মিরা বিস্ময় গলায় বলল,

—” কী বলছো এগুলো তোমরা? শুধু আমার জন্য মিহান ডাক্তারি পড়েছে?”

ইরা জোর গলায় বলল,

—” হ্যা, ভাবী শুধু তোমার জন্য।”

মিরা বিস্ময় চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। মিরা এখন কী বলা উচিত তাও জানা নেই।

মিরা ভাবনার ইতি ঘটে মিহানের কথা। মিহান ধীর গলায় বলল,

—” কী হলো নামো, এসে পড়েছি তো!”

মিহানের কথা শুনে মিরা বাইক থেকে নেমে আশে পাশে চোখ বুলায়। চাঁদের আলোতে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে সবকিছু। মিরা মিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

—” এই জায়গাটা কোথায়?”

মিহান বাইক থেকে নামতে নামতে বলল,

—” নদীর পাড়।”

মিরা বিস্ময় গলায় বলল,

—” নদীর পাড়?”

মিহান মিরার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,

—” হ্যা, তো কী হয়েছে?”

মিরা আমতা আমতা করে বলল,

—” না, মানে এত রাতে নদীর পাড়ে? তাই আর কি।”

মিহান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

—” মনে আছে ওই দিনের কথা?”

মিরা কপাল ভাঁজ করে বলল,

—” কোন দিন?”

মিহান মিরার কপাল ভাঁজ করা দেখে মৃদু হেসে বলল,

—” ভার্সিটি থেকে তোমার একটা গ্রামে নিয়ে গেছিলাম নৌকোয় ঘুরবো বলে, কিন্তু ঐ দিন প্রকৃতি আমাদের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। তাই আজ ঐদিনের অপূর্ণ ইচ্ছেটা আজ পূরণ করব।”

মিহানের কথা শুনে মিরা চোখ বড় বড় করে বলল,

—” কী? তাই বলে এত রাতে? কখনো না। বাড়ি চল।”

মিহান পকেটে হাত দিয়ে মিরার দিকে একটু ঝুঁকে বলল,

—” উহু, এখন আমি তোমার কোন কথা শুনছি না। চল ঘাটে নৌকা বাঁধা আছে।”

মিরা শুকনো ঢোক গিলে বলল,

—” কিন্তু….

আর বলতে না দিয়ে, মিহান মিরার হাত ধরে সামনের দিকে হাটা শুরু করে বলল,

—” কোনো কিন্তু, পারান্তু নেই। চলো আমার সাথে!”

দুজনে এসে পা থামায় নদীর পাড়ে। মিহান মিরার হাতটা শক্ত করে ধরে আছে। নদীর পাড়ে এসে মিহানের চোখের দিকে তাকায়, মিহান চোখের ইশারায় সামনে তাকাতে বলে। মিরা ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে থাকিয়ে হতভম্ব হয়ে যায়। নদীতে ভাটার কারণে নৌকা চড়ে বাঁধা আছে। নৌকার মধ্যে অসংখ্য প্রদীপ জ্বলছে। বাতাসে প্রদীপ গুলো নিভু নিভু হয়ে জ্বলছে। মাঝি বৈঠা হাতে দাঁড়িয়ে আছে ওদের দিকে তাকিয়ে। মিহান দুহাত আলতো করে ধরে বলল,

—” কি পছন্দ হয়েছে?”

মিরা একগাল হেসে বলল,

—” খুব! খুব! খুব পছন্দ হয়েছে।”

এইটুকু বলে আবার নৌকার দিকে তাকায় মিরা। মিহান মিরার মুখে হাসি দেখে নিজেও হালকা হেসে হাঁটু গেড়ে বসে প্যান্ট ফোল্ড করতে শুরু করে। মিহান জুতা হাতে নিয়ে মিরাকে বলল,

—” জানপাখি জুতো টা তোমার হাতে নিবে প্লিজ?”

মিরা চোখ ছোট ছোট করে বলল,

—” জুতো হাতে নিয়ে কী করবো আমি?”

মিহান মৃদু গলায় বলল,

—” আগে নেও তো তারপর বলছি।”

মিরা মাথা নেড়ে বলল,

—” ঠিক আছে দেয়।”

মিরা মিহানের জুতো হাতে নিলে আচমকা মিহান মিরাকে কোলে তুলে নেয়। মিরা সাথে আচমকা এমন হওয়া মিরা ভয় পেয়ে এক হাত মিহানের ঘাড়ে রেখে চেঁচিয়ে বলল,

—” এই! এই! কী করছিস তুই? আমাকে কোলে নিলি কেনো? নামা কোল থেকে আমায়?”

মিহান মিরাকে একটু উঁচু করে কপালে সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলল,

—” ইশ! চুপ করো থাকো, না হলে কিন্তু ফেলে দিবো কাঁদার মধ্যে।”

মিহানের কথা শুনে মিরা চোখ বড় বড় করে নিচে‌ তাকায়, মিহান কাঁদার মধ্যে দিয়ে মিরাকে কোলে নিয়ে আসতে আসতে হেঁটে নৌকার দিকে যাচ্ছে। মিরা কাঁদা দেখে শুকনো ঢোক গিলে চুপ হয়ে যায়। মিহান মিরার এমন অবস্থা দেখে বাঁকা হেসে। চাঁদের আলোতে তা মিরার চোখ এড়ায় না। কিছু বলতে গিয়েও বলতে না, যদি কাঁদায় ফেলে দেয়? তার থেকে চুপ থাকাই ভালো মনে করে মিরা।

__________________________

মায়া মানে মিহানের মম তিনি তার হাসবেন্ডকে খুঁজে চলেছেন অনেকক্ষণ ধরে। খুঁজতে খুঁজতে বাড়ির বড় উঠানে চলে আসে। চারদিক তাকিয়ে দেখে বাগানের লিচু গাছের নিচে বসে তার বয়সি কিছু লোকের সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছি। মায়া ব্যস্ত ‌পায়ে ওদের দিকে এগিয়ে যায়। মায়াকে দেখে আকাশ উঠে এসে মায়ার দিকে এগিয়ে এসে বলল,

—” কি হলো মায়া তুমি এখন এখানে? কিছু হয়েছে?”

মায়া চোখ গরম করে বলল,

—” হওয়ার কী বাকি রেখেছো শুনি? রাত কত হলো সেদিকে খেয়াল আছে?”

আকাশ ভীতু গলায় বলল,

—” কি হলো মায়াবতী তুমি রেগে আছো কেনো?”

মায়া রাগ দেখিয়ে বলল,

—” এই খবরদার আমাকে মায়াবতী বলে রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করবে না।”

আকাশ শুকনো গলায় ঢোক গিলে বলল,

—” কী হয়েছে এত রেগে আছো কেনো?”

মায়া জোরে শ্বাস নিয়ে বলল,

—” কটা বাজে?”

আকাশ ঘড়ি দেখে ভয় ভয় মায়ার দিকে তাকায়। মায়া চোখ ছোট ছোট করে কপাল‌ ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ বোকার মত হাসার চেষ্টা করে বলল,

—” ইয়ে মানে ১১:৪৫।”

মায়া কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

—” এখনো তুমি এখানে কি করছো? বেশি রাত জাগলে তোমার না শরীর খারাপ করে?”

আকাশ ভীতু গলায় বলল,

—” সরি মায়াবতী একদম ভুলে গেছিলাম। আমি এখনি শুতে যাচ্ছি। তুমি আর রেগে থেকো না।”

মায়া শান্ত গলায় বলল,

—” ঠিক আছে রাগ করবো না। তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো। এদিকের কাজ শেষ করে আমি আসছি।”

আকাশ মৃদু হেসে বলল,

—” আচ্ছা, তাড়াতাড়ি এসো।”

মায়া চিন্তিত হয়ে বলল,

—” এই শোনো, মিরান কিন্তু আমাদের রুমে ঘুমিয়ে আছে। মিহান মিরাকে নিয়ে কোথায় যেনো গিয়েছে। মিহান যাবার সময় মিরানকে আমার কাছে দিয়ে গেছে। মাত্র দেখ এলাম মিরান গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তুমি গিয়ে আবারও কে জাগিয়ে দিও না। তাহলে কিন্তু কান্না করবে মিরার জন্য।”

আকাশ হাসি মুখে বলল,

—” তাহলে তো বেশ হবে। আজ দাদা নাতি একসাথে ঘুমাবো।”

মায়া মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,

—” যাও রুমে ও একা আছে।”

মায়া এটুকু বলে হাঁটা শুরু করে বাড়ির দিকে। আকাশ মায়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে-মনে আওড়াতে শুরু করে,

—” বিয়ের এত বছর পরেও ভালোবাসার কমতি নেই তার মনে। হাজার ব্যস্ততার মাঝেও আমি তার কাছে সবার প্রথমে। অদ্ভুত ভালোবাসা আমাদের।”

__________________________

মাঝি নিজ‌ ছন্দে নৌকা বাইছে। ঢেউয়ের কারণে নৌকা বারবার দুলছে। মিরা ভয়ে মিহানের হাত শক্ত করে ধরে আছে। নৌকার জ্বালানোর প্রদীপগুলো কিছু বাতাসে নিভে গেছে, আর এখনো কিছু প্রদীপ নিভু নিভু করে জ্বলছে। প্রদীপের আলোতে মিহানের কাছে মিরা কে মোহনীয় লাগছে। বাতাসের চুলগুলো বারবার উড়ে এসে মিরার মুখে পড়ছে। চাঁদের আলো নদীতে পড়ায় নদীর সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। দূর থেকে কোনো মাঝির গান ভেসে আসছে ওদের কানে। মিহান মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,

—” কেমন লাগছে অনুভূতিটা?”

মিরা মৃদু হেসে বলল,

—” বলে বুঝাতে পারব না। তোর সাথে যদি নৌকা ভ্রমনের না বেরোতাম তাহলে অনেক কিছু মিস হয়ে যেতো রে।”

মিহান হালকা হেসে বলল,

—” তখন তো আসতে চাইছিলে না। যাইহোক এখন মুহূর্তটা উপভোগ করো।”

মিরা আর কিছু না বলে নদীর ঢেউ গুলো উপভোগ করতে থাকে। মাঝি নৌকা বাইতে বাইতে মিহান কে বলল,

—” তা বাবা আপনার লগের মাইডা আপনার কী লাগে?”

মিহান মাঝের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে হাসি এনে বলল,

—” চাচা আমি আপনার ছেলের বয়সী আমাকে তুই অথবা তুমি করে বলতে পারেন। আপনি বলার দরকার নেই।”

মাঝি হাসিমুখে বলল,

—” আইচ্ছা বাজান, তয় কইলা না যে মাইডা কেডা?”

মিহান মৃদু গলায় বলল,

—” হবু বউ আমার। কিছুদিন পর আমাদের বিয়ে।”

মিহান আর মাঝি কথা বলতে শুরু করে, মিরা সবকিছু শুনলেও সে কিছু বলে না, কারন মিরা এখন প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ব্যস্ত। বেশ কিছুক্ষণ পর মিহান ব্যস্ত গলায় বলল,

—” এই যা, একদম ভুলে গেছি।”

মিরা কপালে ভাঁজের রেখা ফুটিয়ে তুলে বলল,

—” কী ভুলে গেছিস?”

মিহান পাশে থাকা প্যাকটা খুলতে খুলতে বলল,

—” আশিক আর নিশান আমাদের জন্য আইসক্রিম, চকলেট, কোলড্রিংস, চিপস এইসবের ব্যবস্থা করে রেখেছিলো। এতক্ষনে বোধহয় আইসক্রিম গলে গেছে।”

মিরা মিহানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

—” তাহলে আর কী? গলে যাওয়া আইসক্রিমই খাতে হবে।”

মিহান মিরার দিকে কিছু প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

—” এই নাও শুরু করো।”

মিরা প্যাকেটগুলো নিতে নিতে বলল,

—” হুম।”

মিহান কিছু প্যাকেট মাঝের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

—” চাচা এগুলো আপনার।”

মাঝির ইতস্তত বোধ করে বলল,

—” বাজান আমার লাগবু না।”

মিহান জোর করে দিয়ে বলল,

—” আর নিন তো চাচা।”

মাঝি আর কিছু না বলে প্যাকেটগুলো নেয়। মিহান একটা কোল ড্রিংস খেতে শুরু করে। হঠাৎ করে মিরা আইসক্রিম খেতে খেতে বলল,

—” ভীতুরাম আমি না একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি!”

মিহানের মুখে থাকা কোলড্রিংস টা খেয়ে বলল,

—” কী সিদ্ধান্ত?”

মিরা এক নজর মিহানের দিকে তাকায়, সে কোলড্রিংস খেতে ব্যস্ত। মিরা ছোট নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,

—” আমি আর তোকে তুই করে বলব না। এখন থেকে তুমি করে বলবো।”

মিহানের মুখে থাকা কোল্ড্রিংসের বিষম খেয়ে, মুখে থেকে কোল্ড্রিংস পড়ে যায়। কাশতে কাশতে যায় যায় অবস্থা মিহানের। মিরা এগিয়ে এসে মিহানের পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

—” কি হলো এমন করছিস কেনো?”

মিহান কিছুক্ষণের মধ্যে নিজেকে সামলে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,

—” কী বলে, তুমি একটু আগে?”

মিরা স্বাভাবিক গলায় বলল,

—” কেনো শুনতে পাসনি? বলেছি এখন থেকে তোকে তুমি করে বলবো।”

মিহান হাসার চেষ্টা করে বলল,

—” কেনো, তুই তো ঠিক আছে। আবার তুমি বলার কী দরকার আছে?”

মিরা মুখ বাঁকা করে বলল,

—” নিজের বরকে কেউ তুই করে বলে না। তাহলে আমি কেনো বলবো?”

মিহান মিরার কথা শুনে অবাকের পর অবাক হয়ে যাচ্ছে।

চলবে….💙

কেমন লাগলো জানাবেন প্লিজ। ধন্যবাদ। 💙💙💙
চলবে….💙

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here