#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ৩১
মধ্যরাতে খোলা আকাশের নিচে শীতলপাটি বিছিয়ে বসে আছে বাড়ির ছোটরা। হালকা বাতাস বইছে। আর সেই বাতাসে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে সবার। আকাশে এক ফালি চাঁদ আছে। তার আলোতে পরিবেশে আলোকিত করে তুলেছে। বড়রা বেশ কিছুক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। বাড়ির ভিতরের উঠানে শীতলপাটি বিছিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে সকলে মিলে সাথে গিটার, খাবার-দাবার কোনো কিছুর কমতি নেই আড্ডাতে। পাশে থাকা খাটে মিহান, মিরা আর রাফি বসে সবার সাথে কথা বলছে। মিহান মিরার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে আছে। সবাই মিহাদের নিয়ে মজা করছে, এতে ওর কিছু যায় আসে না। চোখ মুখ দেখে মিরা বেশ বুঝতে পারছে আজ খুব ক্লান্ত মিহান। তাই মিরা আর কিছু বলেনি ওকে। অনু ওর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
—” ভাইয়া কাল নদীর ওপারে মেলা বসেছে নিয়ে যাবে আমাদের?”
মিহান মাথা উঁচু করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
—” একথা তুই জানলি কী করে?”
অনু দাঁত কেলিয়ে বলল,
—” আশিক বলছে।”
মিহান একবার আশিকের দিকে তাকিয়ে আবার মিরার কাঁধে মাথা রেখে বলল,
—” এখানে আসতে না আসতে সব খবর নেওয়া হয়ে গেছে তাই না? তোর তো রিপোর্টার হওয়ার দরকার ছিলো ভাই।”
আশিক ভাব নিয়ে শার্টের কলার উঁচু করে বলল,
—” ভাইয়া আগে পড়াশোনা শেষ করে নেই। তারপর ঠিক করবো রিপোর্টার হবো নাকি বাবার বিজনেস সামলাবো।”
আশিকের কথায় সবাই হেসে দেয়। মিহান সবার চোখের আড়ালে মিরার হাত মুঠো করে ধরে। মিরা ঘাড় কাত করে মিহানের দিকে তাকালে সাথে সাথে চোখাচোখি হয় ওদের, মিরা তাড়াতাড়ি করে চোখ সরিয়ে নেয় মিহানের থেকে। তা দেখে মিহান প্রতিবারের ন্যায় মুচকি হাসি উপহার দেয় মিরাকে। মিথি নড়েচড়ে বসে বলল,
—” অনেক কথা হয়েছে। এখন কেউ একটা গান ধরো। অনেকক্ষণ গান গাওয়া হয়নি কারো।”
নিশান মিথির সুরে সুর দিয়ে বলল,
—” হ্যা, মিথি আপু ঠিক বলছে। রিয়া ভাবী গান গাওয়ার পর আর কেউ গান গায় নি।”
নুর কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
—” সবাই শোনো, এবার আমাদের মিরা গান গাইয়ে শোনাবে।”
নিঝুম খুশি হয়ে বলল,
—” সত্যি আপু গান গাইবে?”
মিরা আড়চোখে মিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
—” আজ আমি গাইবো না। অন্য কোনো দিন গেয়ে শোনাবো তোমাদের। আজ বরং তোমরা প্রেম আর প্রিয়ার গান শোনা। দারুন গান গায় দুজনে।”
প্রিয়া হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বলতে শুরু করল,
—” This is not fair Mira. গাইতে বললো তোকে আর তুই আমাদের দুজনকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছিস।”
মিরা প্রিয়ার কথা কানে না দিয়ে বলল,
—” একজন গাইলেই হলো। নে শুরু কর।”
প্রিয়া কিছু বলার আগে প্রেম প্রিয়াকে বলল,
—” আমি গিটার বাজাচ্ছি তুমি শুরু করো।”
মিলে হো তুম হামকো, বারি নাসিবো সে
চুরায়া হ্যায় ম্যায়নে, কিসমাত কি লাকিরো সে
মিলে হো তুম হামকো, বারি নাসিবো সে
চুরায়া হ্যায় ম্যায়নে কিসমাত কি লাকিরো সে
তেরি মুহাব্বাতসে সাসে মিলি হ্যায়
সাদা রেহনা দিলমে কারিব হোকে
মিলে হো তুম হামকো, বারি নাসিবো সে
চুরায়া হ্যায় ম্যায়নে, কিসমাত কি লাকিরো সে
মিলে হো তুম হামকো, বারি নাসিবো সে
চুরায়া হ্যায় ম্যায়নে, কিসমাত কি লাকিরো সে
তেরি চাহাতমো কিতনা তারপে হে
শাওন ভি কিতনি তুজ বীন বারসে হে
জিন্দেগী মেরি সারি জো ভি কামি থি
তেরে আজানেসে আব নেহি রাহি
সাদা হি রাহনা তুম, মেরি কারিব হো কে
চুরায়া হে মেনে, কিসমাত কি লাকিরো সে
মিলে হো তুম হামকো, বারি নাসিবো সে
চুরায়া হ্যায় ম্যায়নে, কিসমাত কি লাকিরো সে
বাহো মে তেরী আব ইয়ারা জান্নাত হ্যায়
মাংগী খুদা সে তুই বো মান্নত হে
তেরি ওয়াফাআ কা সাহারা মিলা হ্যায়
তেরী হি ওয়াজা সে আব মে জিন্দা হু
তেরি মহব্বত সে জারা আমিরের হোকে
চুরায়া হ্যায় ম্যায়নে, কিসমাত কি লাকিরো সে
মিলে হো তুম হামকো, বারি নাসিবো সে
চুরায়া হ্যায় ম্যায়নে, কিসমাত কি লাকিরো সে!
সবাই একসাথে হাততালি দিয়ে উঠলো। গান টা শোনার সময় মিহান মিরার হাতে আপন মনে আঁকিবুকি করছিলো আর মিরা তা উপলব্ধি করছিলো। প্রিয়ার একপাশে প্রেম আর অন্যপাশে অনু বসেছিলো। অনু প্রিয়ার গলা জড়িয়ে বলল,
—” আপু তোমার গলাটা কি মিষ্টি গো। প্রেম ভাইয়ার গলাটাও মিষ্টি। তবে তোমার গলাটা আমার বেশি ভালো লাগে।”
অনুর কথায় সবাই হেসে দেয়। ইরা ওদের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বলল,
—” আমার কিন্তু তোমাদের দুজনের গলায়ই ভীষণ ভালো লেগেছে। তার উপর আমার ফেভারিট গানটা গাইছে। তার জন্য তোমাদের অনেক অনেক অনেক গুলো থ্যাংকস।”
—” শয়তানের দল তোরা এখনও ঘুমাতে যাসনি। রাত একটার বেশি বাজতে চললো। এখনো তোদের কিসের আড্ডা?”
কারো কণ্ঠস্বর শুনে সবাই পাশ ফিরে তাকায়। মিহানের বড় ফুপি চোখ গরম করে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাফি ওর মামনির চোখ গরম করা দেখে তাড়াতাড়ি করে বলল,
—” এই তো মামনি যাচ্ছি আমরা। তুমি তোমার রুমে যাও।”
মিহানের বড় ফুপি রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল,
—” আমি পানি নিয়ে এসে যদি, এখানে তোদের কাউকে দেখি তাহলে দেখিস আমি কী করি।”
রাফি তার মামনির কথা শুনে, শুকনো ঢোক গিলে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,
—” এখন সবাই যে যার রুমে ঘুমাতে যাও। কালকে আবার আড্ডা দেওয়া যাবে। এখানে থাকালে মামনি একটা পিঠের ছালও আস্থা রাখবে না।”
মিহান কাঁধ থেকে মাথা উঠিয়ে বলল,
—” তুই ফুপিকে এত ভয় পাস কেনো ভাই?”
রাফি বুক ফুলিয়ে বলল,
—” কে বলল ভয় আমি? আমি মামনিকে ভালোবাসি তাই এমন করি।”
মিহান কপাল ভাঁজ করে বলল,
—” তাই নাকি? ঠিক আছে আমি ফুপিকে ডাকছি। ফুপি….!
রাফি এক দৌড়ে ওর রুমে। রাফির অবস্থা দেখে সবাই হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে। একে একে সবাই যে যার রুমে যাওয়ার জন্য উঠে পড়েছে। একে একে সবাই চলে যাচ্ছে নিজের রুমে। মিরা একনজরে মিহানের দিকে তাকিয়ে উঠে পা বাড়ায় নিজের রুমে যাওয়ার জন্য। বেশি কিছু দূর যাওয়ার আগেই হাতটান পরে মিরার। মিরা পিছনে তাকিয়ে দেখে মিহান ওর হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বুঝে ওঠার আগে মিহান মিরার কপালে আসতে করে ঠোঁট ছুঁইয়ে হনহনিয়ে চলে যায়। মিরার হাত আপনা আপনি কপালে চলে যায় আবার চোখে তাকিয়ে দেখে মিহান চলে যাওয়া।
___________________
পশ্চিমাকাশে সূর্য হেলে পড়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্যাস্ত হবে। সূর্যের রঙের আবির যেনো পুরো আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে। খোলা আকাশে তাকালে দেখা যায় পাখিরা ব্যস্ত তাদের নীড়ে ফিরতে। সূর্য তার শেষ বিকেলের উত্তাপে সবাইকে উত্তাপিত করে তুলছে। মিহানরা মেলায় এসেছে ঘন্টা দুয়েকের বেশি সময় হতে চললো। মিহান মিরানকে কোলে নিয়ে মিরাকে সবকিছু ঘুরিয়ে দেখাচ্ছি। মিরান ছোট ছোট হাতে কিছু দেখিয়ে মিরাদের বলল,
—” পাপা, পাপা ওতা তী? ওটা এমন কলে ঘুততে কেনু?”
মিহান মিরানের হাতে দেখানো জিনিসটার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
—” ওটা নাগরদোলা বাবা।”
মিরা নাগরদোলার দিকে তাকিয়ে বলল,
—” ভীতুরাম আমি নাগরদোলায় উঠবো। দেখো সবাই কত ইনজয় করছে।”
মিহান এক পলক নাগরদোলার দিকে তাকায়। চোখ সরিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
—” দেখো জানপাখি নাগরদোলা কিভাবে ঘুরাচ্ছে। আমরা যদি এখন মিরান কে নিয়ে নাগরদোলায় উঠি তাহলে তো মিরান ভয় পেয়ে যাবে। আর তোমাকে তো আমি একা নাগরদোলায় উঠতেই দেবো না।”
মিরা মিহানের কথা বুঝতে পেরে মন খারাপ করে বলল,
—” ঠিক আছে উঠবো না আমি নাগরদোলায়। এখন চলো অন্য কোথাও ঘুরি।”
মিহান মিরার দিকে তাকিয়ে ধীর গলায় বলল,
—” মন খারাপ করো না জানপাখি। আমি প্রমিস করছি তোমাকে পরেরবার নাগরদোলায় উঠাবো। তুমি মন খারাপ করে বসে থাকলে তোমার ছেলেও মন খারাপ করে বসে থাকবে। তাই এখন আর মন খারাপ করে থাকো না প্লিজ।”
মিহানের কথা শুনে মিরা ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,
—” ঠিক আছে, মন খারাপ করবো না। এখন চলো অন্য দিকে যাওয়া যাক। সন্ধ্যা নামলে আর ভালো করে কিছু ঘুরে দেখতে পারবো না।”
মিহান মিরার হাত ধরে বলল,
—” চলো, তোমাদের মা ছেলেকে আমি হাওয়াই মিঠাই খাওয়াবো।”
মিরা চোখ ছোট ছোট করে বলল,
—” হাওয়াই মিঠাই কী?”
মিহান মেকি হাসি বলল,
—” আগে চলো তো তারপর বলছি। এখন আর কোনো প্রশ্ন করবেনা। গেলেই দেখতে পাবে।”
মিরা ভেংচি কেটে বিড়বিড় করে বলল,
—” খারুস কোথাকার।”
#না_চাইলেও_তুই_আমার_02
#লেখিকা_সারজীন_ইসলাম
#পর্বঃ ৩২
অনেকগুলো হাওয়াই মিঠাই কিনেছে মিহান। মিরা আর মিরান যা যা পছন্দ করেছে সবকিছু কিনেছে মিহান। মিরা অবশ্য নিজের জন্য কোনো কিছু কেনাকাটা করেনি। শুধু কিছু খেলনা পছন্দ করেছে মিরানের জন্য। মিহান মিরাকে নিয়ে মেলার শেষ প্রান্তের দিকে গেলো। ওখানে কিছু শাড়ি চুড়ির দোকান বসেছে। মিরা খেয়াল করছে এই দিকটায় ভিড়ও একটু কম। মিরান কে মিরার কোলে দিয়ে মিহান শাড়িগুলো উল্টেপাল্টে দেখতে ব্যস্ত। বেশ কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করার পর কিছু শাড়ি একপাশে রেখে ঐ গুলোকে প্যাক করে দিতে বলে দোকানদারকে। মিহান মিরাকে একটা কালো জামদানি দেখিয়ে বলল,
—” এটা তোমার জন্য। আর এই শাড়িগুলো এই এলাকার লোকাল তাঁতিদের তৈরি। বাকি শাড়িগুলো মম, চাচি, বাড়ির মেয়েদের আর ফুপিদের জন্য। দেখো তো পছন্দ হয়েছে কী না শাড়িটা?”
মিরা মিহানের হাতে থাকা শাড়িটার দিকে এক নজর তাকিয়ে, পরে মিহানের দিকে তাকিয়ে বলল,
—” পছন্দ হবে না কেনো? বেশ সুন্দর তো শাড়ি টা।”
মিহান মিরার কথায় হালকা হেসে দেয়। দোকানদার একে একে এসব শাড়ি প্যাক করে দেয়। দুই হাত ভর্তি প্যাকেট নিয়ে মিহান মিরাকে নিয়ে চুড়ির দোকানে যায়। মিরা মিহানকে দেখে যাচ্ছে, মেলায় এসেছে পর থেকে যা পছন্দ হচ্ছে তাই কিনছে। মিরা মিহানের দিকে তাকিয়ে আসতে করে বলল,
—” আবার এখানে নিয়ে এলে কেনো? অনেক তো কেনাকাটা হলো চলো এবার ফিরে যাই। হয়তো ওরা সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”
মিহান মিরার কথা কানে না দিয়ে বলল,
—” দেখতো এখান থেকে কোন চুড়িগুলো তোমার পছন্দ হয় কী না!”
মিরা মিহানের কথা শুনে বিরক্ত হয়। কিছু না বলে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। মিহান একনজর তাকিয়ে আবার চুড়ি দেখায় মন দেয়। মিরা আশপাশটা দেখছে, মেলায় ঘুরতে আসা মেয়েগুলো বাড়ি ফেরার পথ ধরেছে। গ্রামের মেলা বসলে গ্ৰামের মেয়েরা তাদের বান্ধবীদের সাথে মেলায় ঘুরতে চলে আসে। দূরে খাবার দোকানে দেখা যায় কিছু মেয়ে হাসাহাসি করতে করতে কিছু খাচ্ছে। কেউ আবার বাবা-মার সাথে ঘুরতে এসেছে। বাচ্চারা মেলায় এসেছে কেউ বাবার হাত ধরে, আবার কেউ এসেছে দাদার হাত ধরে। তাদের হাতে আবার রকমারি খাবার, খেলনা। আবার কেউ এসেছে তার প্রিয় মানুষটার সাথে। মিরা মিরানকে কোলে নিয়ে এই সব দেখছিলো তখন ঘোর কাটে মিহানের কথায়।
—” চলো এবার যাওয়া যাক। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। গিয়ে দেখি ওরা কোথায় আছে।”
মিরা মিহানের কথা শুনে মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,
—” চলো এবার যাওয়া যাক। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি এতক্ষণ ধরে কি বলছিলাম? তখন তো কেউ আমার কথা কানেই দেয়নি। এখন বলছো কেনো দেরি হয়ে যাচ্ছে। হুর।”
মিহান মিরার কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে মুচকি হেসে দেয়। মিরান ওর পাপার দিকে তাকিয়ে বলল,
—” পাপা মাম্মা এভাবে তথা বলথে কেনু?”
মিহান ঠোঁট চেপে হেসে বলল,
—” তোমার মাম্মা তো তোমার মত বেবি তাই এভাবে কথা বলছে।”
মিরা মিহানের কথা শুনে ওর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
—” মিরান কোলে বলে আজ বেঁচে গেলে।”
মিরার কথা শুনে মিহান চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকায়। মিরান মিরার ছোট ছোট হাত মিরার গালে দিয়ে বলল,
—” মাম্মা তুমি আমাল মতু বেবি?”
মিরা মিরানের গালে চুমু দিয়ে বলল,
—” হ্যা, বাবা তুমি যেমন আমার বেবি তেমনি আমি আমার মাম্মার বেবি।”
মিরা মিহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
—” এখন কী জানবে না কী এখনো হা করে তাকিয়ে থাকবেন?”
মিহান মিরার কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে বলল,
—” হ্যা, হ্যা চলো।”
__________________
সন্ধ্যার পর মেয়েরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাচ্ছে। আর ছেলেরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখছে। মিহান মিরানকে নিয়ে পাশের দোকানে গেছে চকলেট কিনে দিতে। প্রিয়া তখন থেকে মিরাকে খুঁচিয়ে যাচ্ছে, “মেলা থেকে কোথায় হারিয়ে গেছিলো ওরা? মিহান কিছু কী বলেছে? মেলা থেকে কী কিনেছে?” মিরা বিরক্ত হয়ে বলল,
—” তুই খেতে দিবি আমায়? তখন থেকে প্রশ্ন করে আমার কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিস। আরেকটা কথা বললে দেখিস আমি তোর কী করি?”
প্রিয়া মুখ কাচুমাচু করে বলল,
—” হ্যা এখন তো তুই এসব বলবই।”
মিরা প্রিয়ার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে হেসে দিয়ে বলল,
—” হয়েছে আর অভিনয় করতে হবে না। মিহান আমাকে আর মিরানকে মেলায় ঘুরিয়ে সবকিছু দেখিয়েছে। মিরানের জন্য খেলনা কিনেছে। আমার আর মমদের জন্য কিছু শাড়ি কিনেছে।”
প্রিয়া অবাক হয়ে বলল,
—” এই মেলায় শাড়ির দোকান কোথায় পেলি? আমরাও তো অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করেছি কিন্তু একটা শাড়ির দোকান চোখে পড়লো না।”
মিরা ওর দিকে এক নজর তাকিয়ে মুখে থাকা ফুসকা টা খেয়ে বলল,
—” মেলার শেষ দিকে কয়েকটা দোকান ছিলো শাড়ির আর চুড়ির। মিহান সেখানে নিয়ে গেছিলো আমায়।”
প্রিয়া মন খারাপ করে বলল,
—” ধুর! আগে জানলে প্রেমটা কে নিয়ে তোকে সঙ্গে যেতাম।”
মিরা দাঁত কেলিয়ে বলল,
—” ব্যাড ল্যাক।”
প্রিয়া তেতে উঠে বলল,
—” তুই হাসিস না। তোর হাসি দেখলে আমার গা জ্বালা করছে।”
মিরা হেসে দিয়ে বলল,
—” হয়েছে আর রাগ করতে হবে না। তোর জিজু তোর জন্য শাড়ি কিনে রেখেছে।”
মিরার কথা শুনে প্রিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
—” সত্যি? সে কথা আগে বললেই পারতিস শুধু শুধু তোকে কতগুলো কথা শোনালো।”
মিরা মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,
—” হয়েছে ড্রামা কুইন আর ড্রামা করতে হবে না।”
ওদের কথা মাঝে মিহান আর রাফি চলে আসে। রাফি ওদের পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
—” কী হলো? কী নিয়ে ঝগড়া করছো তোমরা?”
মিরা হাসি মুখে বলল,
—” না ভাইয়া তেমন কিছু না। আমরা সবসময় ছোটখাটো বিষয় নিয়েও ঝগড়া করি। এটা নতুন কিছু না।”
মিহান রাফির দিকে তাকিয়ে বলল,
—” শুনলাম আশিক আর নিশান নাকি এখন বাড়ি ফিরবে না। ওদের কি কাজ আছে কাজ সেরে পরে বাড়ি ফিরবে। এক কাজ কর বড় গাড়ি দুটো নিয়ে তোরা চলে যা। ছোট গাড়িটা থাক এখানে। আমি, মিরা আর মিরান পরে আসবো।”
রাফি চিন্তিত হয়ে বলল,
—” সে কী! এখন আবার এখানে কি করবি ভাইয়া? মেলা তো কিছুক্ষণ পরেই শেষ হয়ে যাবে। আর মামি কিছু জিজ্ঞেস করলে আমি কি বলবো?”
মিহান নিজের ভ্রু চুলকাতে চুলকাতে বলল,
—” এত কথা জেনে তুমি কাজ নেই। মম কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলবি যে, ভাইয়া আমাদের পাঠিয়ে দিয়ে ভাবীকে নিয়ে কোথায় যেনো গেছে।”
রাফি মিহানের কথায় সায় দিয়ে বলল,
—” ঠিক আছে তাহলে আমরা বেরিয়ে পড়ছি। তোমরা সাবধানে এসো।”
মিহান মাথা নেড়ে রাফির কথায় সম্মতি জানায়। রাফি চলে গেলে মিরা মিহানকে দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
—” এখন আবার কোথায় যাবো?”
মিহান মিরার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,
—” বিয়ে করতে!”
চলবে…💙
চলবে…💙