একজীবনে শুধু তুমি পর্ব ২

#একজীবনে_শুধু_তুমি
,
২য় পর্ব
,
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
,
কালো রঙের একটা কার সামনে এসে দাড়ালো।
,
হর্ণ দিয়ে আমাকে বিরক্ত করতে লাগলো।
বাইরে থেকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
তাই ঝাড়ি দেওয়ার জন্য গাড়ির সামনে গিয়ে ভিতর তাকাতেই দেখলাম নেহাল ড্রাইভিং সিটে।
,
চোখ দিয়ে ইশারা করে আমাকে গাড়ির পাসে আসতে বলল।
কিন্তু আমি জানি যে সে এখন আমালে লিফ্ট দিতে চাইবে। কিন্তু আমার না আছে তার প্রতি কোনো অধিকার আর না আছে আমার প্রতি তার কোনো অধিকার।
,
তাই তার ছায়ার আশেপাশেও আমি থাকতে চাইনা। কিন্তু নেহাল এসব কি শুরু করেছে।
,
আমাকে দরজার পাশে না আসতে দেখে নেহাল নিজেই গাড়িয়ে একটু এগিয়ে এনে আমার পাশে দাড় করালো।
,
গাড়িতে উঠে বসো রাত্রি।
তারপর নিজে ভিতর থেকেই বাম পাশের দরজাটা খুলে দিলো।
,
আমি অন্য গাড়িতে চলে যেতে পারব। প্লিজ আপনি আমাকে ডিস্টার্ব করেন না।
আমার জীবনটা নিয়ে তো খুব খেলেছেন। এখন একটু শান্তিতে থাকতে দেন।
,
সামান্য লিফ্টই তো দিতে চেয়েছি। তার জন্য এতো রিয়াক্ট করছো কেন?
,
আপনাকে আমি সহ্য করতে পারিনা মিস্টার নেহাল।
আমাকে আমার মত থাকতে দেন। সিনক্রিয়েট করেন না দয়া করে।

,
আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম। কিছু লোকজন দাড়িয়ে দেখছে আমাদের কনভারসেশন।
হয়তো বা চিল্লিয়ে কথা বলার কারণে এদিকে তাকিয়ে আছে।
,
সিনক্রিয়েট তুমি করছো। (নেহাল বললো)
,
আমি না আপনি করছেন মিস্টার নেহাল।
আরেকটা কথা আমি আপনার জন্য এখন অচেনা কেও।
দয়া করে তুমি শব্দটা ইউজ করবেন না।
,
সরি মিসেস রাত্রি। আসলে
আমি দেখলাম আপনি অনেকখন ধরে এখানে দাড়িয়ে আছেন।
তাই আপনাকে সাহায্য করতে এসেছিলাম। প্লিজ আপনি চলুন।
,
আমি আর কথা বাড়ালাম না। রাস্তা ধরে হাটতে লাগলাম আর নেহালও পাশেপাশে গাড়ি চালিয়ে বারবার অনুনয় করতে লাগলো।
,
শেষমেষ না পেরে আমি গাড়িতে উঠলাম।
,
থ্যাংক ইউ।
,
হয়তো থ্যাংক ইউ কথাটা আমার বলা উচিত ছিলো কিন্তু আমি যদি কথাটা বলি নেহাল আবার কথা শুরু করার একটা সুত্র পেয়েযাবে।
তাই কোনো এন্সার দিলাম না। চুপচাপ সিট বেল্ট বেধে নিলাম।
,
জানেন মিস রাত্রি।
কিছু কিছু অভিনয়ের ভিতত শুধু মিথ্যা না, খুব বড় বড় সত্যও লুকিয়ে থাকে। কিন্তু হয়তো একটা দিন আসবে যেদিন সত্যটা জানার পরেও হয়তো সেই তাকে ফিরে পাওয়া যায়না।
,
নেহালের সম্পুর্ন কথাটাই যেন অভিমানে ভরা। কিন্তু এই অভিমানটা কার জন্য! আমার জন্য তো না। কারণ সেদিন সেই সম্পর্কটা শেষ করে ছিলো, আমি না। সঙ্গে এটাও বলেছিলো, “আর কখনো যোগাযোগ করো না”।
ওর ভালোবাসায় এতোটাই অন্ধ হয়েগেছিলাম যে ওর সুখ ভেবে হাসি মুখে ওর কথাটা মেনে নিয়েছিলাম।
কিন্তু এর ভিতর কিসের অভিনয় আছে সেটা আমি বুঝতে পারছিনা। সব কিছু তো সত্যি সত্যিই শেষ হয়েছিলো। যদি অভিনয় হতো তাহলে কয়দিন পর তো বলতে পারতো যে মজা করেছিলাম। এমনকি আজও বলতে পারতো মজা করে ছিলাম। কিন্তু না। সেতো বউ নিয়ে সুখেই আছে। দঃখের সাগরে শুধু আমাকেই ফেলে দিলে নেহাল।
,
মিস রাত্রি মনে যেটা ভাবা হয় সেটা সত্যি নাও হতে পারে।
,
আমি কি ভেবেছি সেটা আপনি কিভাবে জানলেন। আর হ্যা আমি কিছু ভাবিনি।
,
কিন্তু আপনার চোখ তো বলছে আপনি কিছু ভাবছিলেন।
,
সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম।
আমার চোখের ভাষাও তো তুমি পড়ে ফেললে , ঠিক যেমন টা আগেও পড়ে ফেলতে? (মনে মনে)
কথা কাটানোর জন্য অন্য কথা বললাম।
,
আপনার স্ত্রী কেমন আছে?
,
খুব ভালো আছে?
,
বেবি কয়টা?
,
একটা।
,
ওহ।
,
তুমি পেরেছো নেহাল আমাকে ভুলতে। আমি পারলাম না কেন বলতে পারো? (মনে মনে)
,
,
,
আমার দেওয়া ঠিকানা মোতাবেক গাড়িটা থামলো। গাড়ি থেকে নেমে। বাসার ভিতর যেতে নিলে।
,
আপনাকে হেল্প করলাম। এককাপ চা খেতেও তো বলতে পারেন।
,
মিস্টার নেহালের বাসায় চায়ের অভাব আছে কি, যে আমি বাসায় চা খেতে চাইছেন? আর হ্যা হেল্পটা আপনি যেচে করেছেন আমি চাইনি।
,
আচ্ছা, চা খেতে দিতে হবেনা। শুধু একট কথা বলছি শোনেন।
আগামিকালকে আপনার ছুটি।
কিন্তু আগামী পরসু দিন থেকে আপনি চাকরিতে জয়েন করছেন।
,
ওই হ্যালো আমি চাকরিটা করছিনা যেভাবে হুকুম দারি করছেন যেন আপনি আমার বস।
বায়।
,
মেইন গেইট আটকে দিলাম। গাড়ির শব্দ শুনে মনে হলো নেহাল চলে গেছে। কলিং বেইল চাপ দিতেই মা দরজা খুলে দিলো।
,
কিরে মা চাকরিটার কি খবর?
,
আজকেই ইন্টারভিউ দিলাম কিভাবে বলবো কি খবর।
,
মা আমার কপালে হাত দিয়ে,
তোর চেহারাটা এমন লাগছে কেন?
,
আমি নেহালের কথা লুকালাম,
ও কিছুনা মা। খুব গরম পড়েছে তাই হয়তো একটু অন্যরকম লাগছে।
,
কতবার বলেছি চাকরি ইন্টারভিউ দিস না।
চাকরি করতে হবেনা। কিন্তু কে শুনে কার কথা। আমাদের যা সেভিংস আছে। তোর তিন নাতিনাতনি অবধী চলে যাবে। আর হ্যা নিজের গাড়ি নিয়ে যাস নি কেন?
,
কিন্তু আমি মধ্যবিত্ত লাইফ চলতে চাই মা। দেখতে চাই এই লাইফে কত কষ্ট। নিজের ভালোবাসাকে কে ভুলে থাকা যায় কিনা। ( কান্না করে ফেললাম)।
,
মা আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলো,
যে মানুষটা তোর জীবন থেকে চলে গেছে তার জন্য আর কত কষ্ট পাবি।
আয় মা তোর জন্য আমি গাজরের হালুয়া বানিয়েছি। নিজ হাতে তোকে খাইয়ে দেব চল।
,
বাচ্চা মেয়ের মত মায়ের কলে মাথা দিয়ে আছি আর মা চামচে করে আমার গালে হালুয়া তুলে দিচ্ছে।
,
,
রাতে ঘরে শুয়ে আছি,
কোনো কিছু পড়ার শব্দে ঘুম ভাঙলো।
এই রাতে মা কি ঘর থেকে বের হয়েছে! কিন্তু মা তো রাতে ঘর থেকে বের হয়না। ওয়াসরুম তো সব ঘরেই এটাচ্ড। তাই চেক করার জন্য ভাবলাম একবার নিচে যাই। ড্রয়িং রুমেই শব্দটা হয়েছে।
,
দরজা খুলতেই মুখের উপর রুমাল পড়লো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমি জ্ঞান হারালাম।
,
যখন জ্ঞান ফিরলো নিজেকে চেয়ারে বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করলাম।

,
,
চলবে

,
বিঃদ্রঃ গল্প প্রতিদিন দেব ইনশাআল্লাহ। আপনি নেক্সট বললেও দেব না বললেও দেব।
,
বানান ভুল ইগনোর করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here