#দ্বিরাগমন
#পর্ব_২১
তারানার স্বামী রাফি বাসায় এসেই তারানার গালে থাপ্পড় দিতে শুরু করলো। কোনো কথা নেই কিচ্ছু নেই, হুট করেই থাপ্পড়! তারানা অবাক হলো। কাঁদো কাঁদো গলায় রাফির হাত আটকালো। তারপর বললো,
“কী হয়েছে?”
রাফি তারানার কথা শুনে না। তারানার হাত ধরে টান দিয়ে তারানাকে নিচে নামিয়ে নিয়ে আসে। তারানা চিল্লাচিল্লি করে। বলে,
“এসব কী করছো আমি কী করেছি তোমার সাথে?”
তারানাকে নিচে ড্রইংরুমের মাঝখানে নিয়ে এসে কাজের মেয়ের সামনে দাঁড় করালো রাফি। তারপর তারানাকে কাজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে, আঙুল উঁচিয়ে বললো,
“এই মেয়েটা তোর মতো না।”
তারানা প্রতিবাদী গলায় বললো
“আমি এই ঘরের মালিক, আর সে এই ঘরের কাজের মেয়ে। সে আমার মতো হবে কেনো?”
রাফি তারানার মুখে থু ফেলে দেয়। তারপর তারানাকে বলে
“তোর মতো বেইমান না এই মেয়েটা। নিজের স্বামীকে ধোকা দেয় না এই মেয়েটা।”
তারানা রাফিকে বললো,
“অহ আচ্ছা। পনেরো বছর আগেকার কথা এখন তোলা হচ্ছে? তুমি বুঝি আমাকে বিয়ে না করল আমি তোমাকে বিয়ে করতাম?”
“তুই একটা বেইমান। তুই আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছিস”
“অহ আচ্ছা, এখন আমায় আর পুষাচ্ছে না। তাইতো?”
রাফি এসে চট করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো তারানার গালে। তারপর বললো,
“তুই কী দিয়েছিস আমাকে? বিয়ের সময় তুই বিবাহিতা ছিলি, তোর বয়সও ছিলো। কিন্তু আমি তো তোকে মেনে নিয়েছি। তাহলে তুই এখন আমার জীবন নষ্ট করছিস কেনো?”
তারানা হাসলো। হেসে হেসে বললো,
“তুমি এমনি আমাকে বিয়ে করেছো রাফি? সম্পত্তির লোভ ছিলো না?”
রাফিও হাসলো। হেসে হেসে বললো,
“সম্পত্তি না থাকলে তোর দিকে কোনো কুত্তাও নজর দিতো না।”
রাফির মুখের এই ভাষা শুনে তারানা মাটি বসে গেলো। শব্দ চাপা রেখে কান্না করতে লাগলো। নিয়তিকে দোষারোপ করলো না তারানা। শুধু এগুলোকে তার করা পাপের ফল হিসেবে নিতে লাগলো।
রাফি হাক ছেড়ে বললো,
“যদি তোর ঘরে আমার দুইটা সন্তান না থাকতো তাহলে তোকে সেই কবেই আমি ছেড়ে দিতাম।”
তারানা রাফির এই কথারও কোনো উত্তর দিলো না। তারানা জানে, বয়স হয়েছে তার আর এজন্য তার দামও কমে গিয়েছে। তারপর একবার মুখ উঠিয়ে রাফিকে জিজ্ঞেস করলো,
“আমার অপরাধ টা কী? আমাকে বলবে?”
রাফি হাসলো। হেসে হেসে বললো,
“নাটক এখনও হচ্ছে? আমি চিনি না তোকে? যেই মেয়ে তার স্বামীকে, সতীনকে তাদের নিজের বাসা থেকে তাড়িয়ে দিতে পারে, যেই বিবাহিতা মেয়ে আরেকটা ছেলের সাথে প্রেম করতে পারে, তারপর তাকে বিয়ে করতে পারে সে আর যাই হোক, নাটকে এক্সপার্ট হয়ে এইটা জানা কথা।”
তারপর রাফি কাজের মেয়ে শাবানার হাত ধরে তারানার সামনে এনে তারানাকে বললো,
“তার সাথে রাত কাটিয়েছি বলে তুই তার হাত পুড়িয়ে দিবি?”
তারানা খেয়াল করলো কাজের মেয়ে শাবানার হাতের কবজি থেকে কনুই পর্যন্ত জ্বলে গিয়েছে। শাবানা কান্না করতে করতে রাফিকে বললো,
“ভাবি আমার হাতে গরম পানি ঢেলে আমার হাত পুড়িয়ে দিয়েছে। আমার তো কোনো দোষ ছিলো না সাহেব। আমি গরীব মানুষ”
এই বলে ঢুকরে কেঁদে উঠলো শাবানা।
রাফি এসে পা দিয়ে ঠেলে তারনাকে বললো,
“আরেহ তোর থেকে তো শাবানা অনেক ভালো। তাকে টাকা দিয়ে করেছি, সে অমত করেনি আর তোকে করাও যায় না তোর নাই।”
তারানা মুখ খুললো। বললো,
“কী আবোল তাবোল বকছো তুমি? এসব কাজের মেয়ের সামনে বলতে তোমার লজ্জা করে না? চিহ!”
“লজ্জা করবে কেনো? তুই তো ডাকাত। তোরে দিয়ে কিছু হয় না। তোর জন্য সতীন আনবো বল? আমিতো তোর ভালোর জন্যই কাজের মেয়েকে নিয়ে রাত কাটাচ্ছি। সেটায় তোর সমস্যা? এই মেয়ের হাত পুড়িয়ে দিলি তুই?”
সাবানা এক শব্দে উত্তর দিলো,
“না।”
রাফি এসে তারানাকে তুলে দাঁড় করালো। তারপর বললো,
“যেভাবে এই মেয়েটার হাত পুড়িয়েছিস, আগামী এক সপ্তাহ তার সব কাজ তুই করবি।”
তারপর শাবানাকে ধরে এনে বললো,
“তুই এই সপ্তাহ কোনো কাজ করিস না। তোর কাজও সে করবে।”
এমন সময় বাচ্চারা স্কুল থেকে চলে আসলো। ড্রাইভার এসে কলিংবেল দিয়ে তারানার ছেলে মেয়েকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে গেলো। তারা এসে তারানাকে আম্মু বলে জড়িয়ে ধরলো। তারপর তারানার মেয়ে সিন্থিয়া তারানাকে বললো
“কাঁদছো কেনো আম্মু?”
তারানা জবাব দিলো না। তারানার ছেলে আদিয়ান রাফিকে বললো,
“বাবা কী হয়েছে মায়ের? মা কাঁদছে কেনো?”
রাফি জবাব না দিয়ে চলে গেলো। তারানা ছেলে মেয়েকে বললো,
“তোমরা উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে যাও। আমি কাঁদছি না। চোখে এমনিই পানি চলে এসেছে।”
সিন্থিয়া আর আদিয়ান দুই ভাইবোন উপরে চলে গেলো। শাবানা এসে তারানার চারিদিকে ঘুরঘুর করতে লাগলো। তারপর তারানাকে বললো,
“খেলা শুরু হয়েছে মাত্র। এখনও অনেক বাকি আছে।”
এদিকে সত্যের স্কুল ছুটি হয়েছে তিনটায়। চারটায় ড্রাইভার বাসায় এসে কলিংবেল চাপলো। নুপুর এসে জিজ্ঞেস করলো,
“সত্য কোথায়?”
“পাইনি ম্যাডাম”
“পাইনি মানে?”
“মানে স্কুল ছুটি হওয়ার পর তাকে খুঁজাখুঁজি করেছি অনেক তবে পাইনি।”
নুপুর হুলস্থুল কাণ্ড বাধিয়ে ফেললো। ডাক দিলো,
“বাবা, মা, এদিকে আসো।”
আলতাফ চৌধুরী আর রুমানা বেগম নিচে নেমে আসলেন। নুপুরকে জিজ্ঞেস করলেন,
“কী হয়েছে?”
নুপুর বলার আগেই ড্রাইভার বলে উঠলো,
“সত্যকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি স্কুল ছুটির পর খুঁজাখুঁজি করেছি অনেক তবে পাইনি।”
নুপুর কান্না শুরু করে দিলো। আলতাফ চৌধুরী নুপুরকে ধমক দিয়ে বললেন,
“উহু! কান্না কেনো করিস? আছে কোথাও হয়তোবা ড্রাইভার দেখেছি ভালোকরে।”
ড্রাইভার বললো,
“আমি ভালো করে খোঁজ নিয়েছি স্যার। তবে পাইনি।”
“পিয়নকে জিজ্ঞেস করেছিলি?”
“হ্যাঁ স্যার।”
“কী বললো?”
“পাইনি তারপরও”
নুপুরের কান্না বেড়ে গেলো। সে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আমার মেয়ে কোথায় গিয়েছে মা?”
রুমানা বেগম নুপুরের চুলে হাতিয়ে দিতে থাকলেন। আলতাফ চৌধুরী বলে উঠলেন,
“আছে রে মা। সত্য যাবে কোথায়? হয়তো তার কোনো বান্ধবীর বাড়িতে গিয়েছে। অথবা স্কুলেই আছে এই কানা ড্রাইভার হয়তো খোঁজে দেখেনি। ”
ড্রাইভার বলতে চাইলো,
“কিন্ত…..”
আলতাফ চৌধুরী চোখের ইশারায় ড্রাইভারকে চুপ করতে বললেন। ড্রাইভার চুপ করে গেলো। আলতাফ চৌধুরী রুমানা বেগমকে বললেন,
“তুমি সামাল দেউ নুপুরকে। আমি দেখছি।”
এই বলে তিনি ড্রাইভার কে নিয়ে বাইরে চলে গেলেন। স্কুলে এসে খোঁজাখুঁজি করতে করতে তিনি খুঁজ পেলেন না সত্যের। ততোক্ষণে পাঁচটা বেজে গেছে। স্কুলের প্রিন্সিপালের বাসভবনে গিয়ে প্রিন্সিপালকে ইনফোর্ম করলেন আলতাফ চৌধুরী। প্রিন্সিপাল বললেন,
“দেখেন তার কোনো বান্ধবীর বাড়িতে গেছে হয়তোবা।”
আলতাফ চৌধুরী উত্তেজিত হয়ে গেলেন। তিনি বললেন,
“আপনাকে একটা সমাধান দিতে বলেছি। এইটা বলতে না।”
প্রিন্সিপাল বললেন,
“তাহলে দেখেন কোন ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে আছে। আজকালকার মেয়ে তো। সরাসরি বলতে চাইনি।”
আলতাফ চৌধুরী উত্তেজিত হয়ে গেলেন প্রিন্সিপালের কলার ধরে বললেন,
“মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ। হুয়াট আর ইউ সেয়িং এবাউট হার! শেইম অন ইউ। সি ইজ ইউর স্টুডেন্ট এন্ড ইউ আর দ্য প্রিন্সিপাল অফ দিস ইন্সটিটিউশন”
প্রিন্সিপাল হাসলেন। হেসে হেসে কলার থেকে আলতাফ চৌধুরীর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,
“খুঁজে দেখেন। তারপর বলবেন আমাকে।”
প্রিন্সিপাল ঢুকে গেলেন তার বাসভবনে। আলতাফ চৌধুরীর ফোনে কল এলো। নুপুর কল করেছে। প্রথমবার তিনি রিসিভ করলেন না। দ্বিতীয়বার রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে হুলস্থূল গলায় নুপুর বললো,
“বাবা নুপুর সাথে আছে তো? তাকে পেয়েছো?”
আলতাফ চৌধুরী বাক হারিয়ে ফেললেন। কী জবাব দিবেন বুঝতে পারলেন না।
ওপাশ থেকে নুপুরের হাত থেকে রুমানা বেগম মোবাইল কেড়ে নিলেন। আলতাফ চৌধুরী রুমানা বেগমকে বললেন
“নুপুরকে সামাল দেও। আমি পাইনি খুঁজে সত্যকে।”
এদিকে গাড়ির ড্রাইভার কাকে যেনো কলে বলছে,
“খাসা মাল। টাকা দশ হাজার দিবা তো খাইবা। এখনও খাওয়া চলতেছে। আমি গিয়া খাইমু একটু পরে। বুইড়ার সাথে আছি তো তাই যাইবা পারি না।
ওপাশ থেকে কী বললো সেটা বুঝা গেলো না। শুধু ড্রাইভার উত্তর দিলো,
“সমস্যা নাই সমস্যা নাই। খাইবার জিনিস, একলা না দুইজনে মিইলাই খাওয়া যায়। আপনারা দুইজন হলে পনেরো হাজার দিয়েন। হা হা হা”
ওপাশ থেকে এবারও কী জবাব এলো বুঝা গেলো না। ড্রাইভার ফোন কচলাতে থাকলো আর হাসতে থাকলো মনে মনে।এবার ড্রাইভার এক পশলা হাসলো। হেসে হেসে বললো,
“টেনের মাল। উফ! খাসা শরীর। আমার তো এখনই আইসা যায় যায় ভাব! উফফফ….”
দ্বিরাগমন
মিদহাদ আহমেদ
#পর্ব_২২
আলতাফ চৌধুরী গাড়ির ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বললেন। সারা স্কুলে সত্যকে খুঁজতে খুঁজতে যখন পেলেন না আলতাফ চৌধুরী, তখন গাড়িতে উঠেই স্ত্রীকে কল দিলেন। কল দিয়ে বললেন,
“খুঁজে দেখো না সত্য তার কোনো বান্ধবীর বাসায় গিয়েছে কী না?”
রুমানা চৌধুরী বললেন,
“আমি খোঁজ নিয়েছি। নুপুর বারবার মূর্ছা যাচ্ছে। মেয়েটা কোথায় গেলো?”
আলতাফ চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস নিলেন। তারপর রুমানা বেগমকে বললেন,
“কল রাখছি। আমি পুলিশকে ইনফোর্ম করছি এখন।”
আলতাফ চৌধুরীর মুখে পুলিশকে ইনফোর্ম করার কথা শুনে গাড়ির ড্রাইভার লুকিং গ্লাস দিয়ে তাকিয়ে আলতাফ চৌধুরীকে বললো,
“স্যার আমরা আরও খুঁজে দেখি না কেনো?”
“আর কই খুঁজবা?”
“বাস স্টেশন, রেল স্টেশন এগুলোতে।”
আলতাফ চৌধুরী রেগে গেলেন। রাগ মাথায় বললেন,
“তোর মুখটা বন্ধ রাখ এখন। মাথা গরম এমনিই আর মাথা খারাপ করিস না তুই।”
গাড়ির ড্রাইভার চুপ করে গেলো। আলতাফ চৌধুরী ফোনে কাকে যেনো কল দিলেন। গাড়ির ড্রাইভার শুনলো আলতাফ চৌধুরী কাকে যেনো বলছেন,
“আমার নাতনিকে আজকের মধ্যেই খুঁজে দিতে হবে। নির্বাচনের সময় আমার হেল্পের বদলে আমি কী চাই আপনি বলেছিলেন না? আমি তখন হাসিমুখে বলেছিলাম সময় আসলে চেয়ে নিবো। এখন সময় এসেছে। আপনাকে যে করেই হোক আমার নাতনিকে খুঁজে দিতে হবে। আমি পুলিশকে ইনফোর্ম করবো না। আপনাকে ইনফোর্ম করে রাখলাম আপনিই ইনফোর্ম করেন পুলিশকে।”
ফোনের অপাশ থেকে কী জবাব এলো শুনা গেলো না। ফোন রেখে আলতাফ চৌধুরী গাড়ির ড্রাইভারকে বললেন,
“কোতোয়ালি থানায় গাড়ি নিয়ে যা। এমপি সাহেব সেখানে চলে যেতে বলেছেন।”
ড্রাইভার কেমন জানি হম্বিতম্বি খেয়ে গেলো। সে কল্পনাই করতে পারেনি ঘটনা এতোদূর চলে যাবে। ভয়ে ভয়ে ড্রাইভার তার কারের গতি কেমন জানি কমিয়ে নিলো। পেছন থেকে একটা এম্বুলেন্স ডেকেই চলছে, ড্রাইভার সাইড দিচ্ছে না। আলতাফ চৌধুরী ধমক দিয়ে বললেন,
“সমস্যা কী তোর? পেছনে এম্বুলেন্স দেখছিস না?”
আলতাফ চৌধুরীর কথায় যেনো ড্রাইভার বোধজ্ঞান ফিরে পেলো। মিনমিন করে বললো,
“সরি স্যার”
আলতাফ চৌধুরী বললেন,
” তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে চল”
আলতাফ চৌধুরী বাসায় কল দিলেন। স্ত্রী রুমানাকে বললেন, কল নুপুরের হাতে ধরিয়ে দিতে। নুপুর কল ধরে কান্না করতে করতে বললো,
“বাবা আমার মেয়ে কোথায়? আমি তাকে ছাড়া বাঁচবো না। এক মুহূর্তও বাঁচবো না আমি।”
আলতাফ চৌধুরী বললেন,
“আছে”
“কোথায় সে? আমাকে কল ধরিয়ে দাও বাবা। আমি কথা বলবো।”
“খুঁজে পাইনিরে মা। এমপির সাথে কথা হয়েছে। উনি বলেছেন চিন্তা না করতে।”
নুপুর কান্না করে দিলো। রুমানা কল নিলেন। তারপর বললেন,
“সত্যকে পেয়েছো?”
আলতাফ চৌধুরী বললেন,
“পেয়ে যাবো। চিন্তা করো না। আমি সত্যকে সাথে নিয়েই বাসায় ফিরবো বলে দিও নুপুরকে।”
এই বলে আলতাফ চৌধুরী কল রাখলেন।
এদিকে তারানার স্বামী তারানার উপর নির্যাতন করেই যাচ্ছে। দুপুরে শাবানা খাবার টেবিলে খাবার গুছিয়ে দিলে, রাফি খাবারগুলো সব ফ্লোরে ফেলে দেয়। তারানা জোর গলায় জিজ্ঞেস করে,
“এইটা কী করলা?”
রাফি এসে তারানার গলায় চাপ দিয়ে ধরে। তারপর বলে,
“গলা নিচে। আর এমজ স্বরে আমার সাথে কথা বলবি না।”
তারানা চুপ করে যায়। শাবানাকে ডাক দিয়ে বলে,
” এগুলো পরিস্কার করে নে।”
রাফি শাবানাকে আসতে নিষেধ করে। তারপর একগাল হাসে। হেসে হেসে বলে,
“জিজ্ঞেস করবি না কেনো এগুলো ফেলে দিলাম মাটিতে?”
তারানা নিশ্চুপ। রাফি বললো,
“খাবার তুই টেবিলে আনবি। আগামী এক সপ্তাহের সব কাজ তোর। শাবানার না। আর এখন এগুলো তুই পরিস্কার করবি। যাহ”
তারানা নিশ্চুপে রাফির কথা শুনলো। চিল্লাচিল্লি করলো না। ছেলেমেয়ে ঘুমাচ্ছে। যদি এসব শুনে আর নিচে এসে দেখে, তাহলে তাদের সামনে তাকে অসম্মানিত হতে হবে। ছেলে মেয়েরা তারানাকে কান্না করতে দেখলে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করবে। যার জবাব সে দিতে পারবে না। শাবানা তারানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো একটা। তারানা দেখেও না দেখার বাহানা করলো। রাফি শাবানাকে ডেকে বললো,
“আমার সিগারেটের স্ট্রে টা এনে দে তো।”
শাবানা সিগারেটের স্ট্রে নিয়ে এনে দিলো রাফিকে।
আলতাফ চৌধুরী কোতোয়ালি থানায় যেতেই সেই থানার ওসি তড়িঘড়ি করে আলতাফ চৌধুরী বললো,
“এমপি সাহেবের কল পেয়েছি। আমরা এখনই বেরিয়ে যাচ্ছি। আপনি যাস্ট এখানে অজ্ঞাত হিসেবে একটা মামলা করেন তাহলে আমাদের ইনভেস্টিগেশন করতে সুবিধা হবে।”
আলতাফ চৌধুরী বললেন,
“আমি কিচ্ছু জানি না আমার সত্যকে আমি ফেরত পেতে চাই”
“ডোন্ট ওয়ারি। আমরা আছি।”
ওসি থানা থেকে বেরিয়ে পড়লো।
ওদিকে বাইরে দাঁড়ানো ড্রাইভার হুট করে ভেতরে এসে আলতাফ চৌধুরীকে কান্না করতে করতে বললো,
“স্যার আমার মা অসুস্থ আমাকে বাড়িতে যেতে হবে খবর আসছে এখন”
“কিন্তু…”
“ও স্যার আমারে যেতে হবে এখনই।”
আলতাফ চৌধুরী আর না করলেন না। পকেট থেকে হাজার টাকার দুইটা নোট বের করে ড্রাইভারের হাতে দিয়ে বললেন,
“চাবিটা রেখে যা”
এদিকে বাসা থেকে রুমানা বেগম কল দিয়েই যাচ্ছেন আলতাফ চৌধুরীকে। কল রিসিভ করে উনি বললেন,
“চিন্তা করো না পুলিশ খোঁজ নিচ্ছে এখন”
ড্রাইভার মিথ্যা বলে বাইরে বেরিয়ে আসে।এমন সময় সেই লোকের কল আসে। লোকটা জিজ্ঞেস করে,
“আছে তো? কয়টায় আইমু?”
ড্রাউভার বললো,
“আরেহ বাদ্দেন আমি মরি এখানে।”
তারপর ড্রাইভার যেখানে সত্যকে কিডনাপ করে নিয়ে রেখেছিলো, সেখানের একজনকে কল দেয়। কল উঠিয়ে একজন বলে,
“ওখনও খাইনাই ভাই আপনের অপেক্ষায় আছি।”
ড্রাইভার একটা গালি দিলো জোরে। তারপর বললো,
“এখনই পালিয়ে যা আর মেয়েটার গায়ে হাত দিস না। পুলিশ জানাজানি হইছে, এমপির হেন্ডেলে কেইস টা। যদি ধরা খাই তাইলে জীবন শেষ।”
তারপর ড্রাইভার থানা থেকে বেরিয়ে রাস্তা ধরলো।
এদিকে আলতাফ চৌধুরী বাসায় ফিরে আসলেন। নুপুর কান্না করছে তো জ্ঞান হারাচ্ছে। রুমানা বেগম ডাক্তার কল করে আনিয়েছেন বাসায়। ডাক্তার বলে দিয়েছে নুপুরের এমন অবস্থা চলতে থাকলে রাতেই স্যালাইন পুশ করা লাগবে। নুপুর বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। বললো,
“আমার মেয়ে ছাড়া আর কেউ নাই বাবা। আমার মেয়েটার কী হলো?”
আলতাফ চৌধুরী শক্ত গলায় বললেন,
“কাল সকালের আগেই সত্যকে ফিরে পাবি রে মা। ভরসা রাখ।”
রাত বারোটা নাগাদ কোতোয়ালি থানার এস আই কল করে জানালো তারা সত্যকে উদ্ধার করতে পেরেছে। বাসায় নিয়ে আসছে।
খবরটা শুনেই রুমানা বেগম তার হাত গলা থেকে সোনার চেইন খুলে নিলেন। খুলে নিয়ে চেইনটা আলতাফ চৌধুরীর হাতে ধরিয়ে দিলেন। আলতাফ চৌধুরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“এইটা আমার হাতে দিচ্ছো কেনো?”
“আমি মানত করেছি আমার নাতনিকে ফিরে পেলে আমার ওই চেইন বিক্রি করে সব টাকা দিয়ে এতিম বাচ্চাদের খাওয়াবো।”
রুমানা বেগমের এই কথা শুনে নুপুর তাকে জড়িয়ে ধরলো। কিছুক্ষণের মাথায় পুলিশ সত্যকে নিয়ে বাসায় ফিরলো। সত্য ঠিকঠাক আছে।
পুলিশকে আলতাফ চৌধুরী জিজ্ঞেস করার আগেই পুলিশের এসআই বললো,
“আমরা স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ চ্যাক করে দেখেছি আপনাদের ড্রাইভার সত্যকে নিয়ে রিকশায় করে যাচ্ছে। তখনই আমরা বুঝে ফেলি এইটা কিডন্যাপ কেইস এন্ড মেয়েটার সাথে যা তা হয়ে যেতে পারে। তারপর আমাদের বন্দর পুলিশ ফাড়ি, বাস স্টেশন, রেল স্টেশনে আপনাদের ড্রাইভারকে ধরার জন্য তার ছবি পাঠিয়ে দেই। আর এইটা এমপির বলা মামলা, তাই হেন্ডেল করায় তৎপর ছিলাম। আর এদিকে রিকশা ড্রাইভারের মুখ ক্যামেরায় স্পষ্ট দেখা যায়। রাত নয়টায় হওয়ায় পাশের গ্যারেজে খোঁজ নিতেই জানলাম ড্রাইভার আম্বরখানা গ্যারেজের রিকশা চালায়। সেখানে গিয়ে ড্রাইভারকে বলতেই সে বললো, সেই যাত্রীদের নিয়ে সে বনকলাপাড়া গিয়েছিলো। সেখানে আমাদের টিম যায়, তারপর সেখানকার সিসিটিভি দেখার আগেই আপনাদের ড্রাইভার ধরা পড়ে। সে একুরেট প্লেইসের সন্ধান দেয়। এখন ড্রাইভার আমাদের পুলিশ ফাড়িতে আছে। কালকেই জেলে প্রেরণ করবো।”
নুপুর কান্না করে সত্যকে জড়িয়ে ধরে। আলতাফ চৌধুরী একটা দীর্ঘশ্বাস নেন। পুলিশের এস আই যাবার সময় পেছনে ফিরে আলতাফ চৌধুরীকে বললো,
“এমপি স্যারকে একটু বলে দিবেন কাইন্ডলি যে এস আই নিখিলেশ এই কেইসটা হ্যান্ডেল করেছেন এবং ইনফোর্ম করার চার ঘন্টার মাথায় উদ্ধার করে দিয়েছেন।”
আলতাফ চৌধুরী বললেন,
“আচ্ছা।”
পুলিশ বললো,
“এইটা কালকের নিউজ করাই? ব্রিফিং করি?”
নুপুর উপরের সিঁড়ি থেকে বললো,
” না না। ”
আলতাফ চৌধুরী নুপুরের উৎকণ্ঠা বুঝলেন। তিনি পুলিশকে বললেন,
“না এসবের দরকার নেই।”
“জি আচ্ছা। আসসালামুয়ালাইকুম”
“ওয়ালাইকুম আস সালাম।”
কেটে গেলো আরও সাতটা বছর। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে সত্য এমবিবিএস পাশ করে এসেছে। আলতাফ চৌধুরী এখন প্যারালাইজড! রুমানা বেগম এখন আর আগের মতো শরীরে জোর পান না। নুপুরের শরীরেও রোগ বাসা বেধেছে। গেলো মাসে তার শরীরে ডায়াবেটিকস ধরা পড়েছে। এছাড়া হার্টেও সমস্যা আছে নুপুরের। চুলের পাক এখন আর লুকিয়ে রাখা যায় না। পাকগুলো দৃশ্যমান। নুপুর আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে দেখলে পেছন থেকে সত্য এসে নুপুরকে জড়িয়ে ধরে। নুপুর আয়নায় দেখে, ঠিক তার অবিকল হয়েছে সত্য। সত্যকে দেখতে নুপুরের জমজ মনে হয়। পার্থক্য শুধু এই, নুপুরের গালে টোল পড়ে না। আর সত্যের গালে গভীর টোল পড়ে। সত্য নুপুরকে ধরে খাটে বসায়। তারপর সে মাটিতে বসে নুপুরকে বলে,
“তোমার জীবনে অনেক কষ্ট না মা?”
নুপুর হেসে হেসে জবাব দেয়,
“ধুর বোকা। কীসের কষ্ট?”
সত্য বলে,
“আমার সত্যকে গোপন করছো কেনো? আমি জানি সিলেটের এই ঘর, এই দোয়ার এই সম্পত্তি এই নানা এই নানি কেউ আমার আপন নয়।”
নুপুর রেগে গেলো। রাগের গলায় সত্যকে বললো,
“আমার বাবা মা তোর আপন নয়? এই কথা তুই কীভাবে বলতে পারলি?”
সত্য নুপুরকে জড়িয়ে ধরলো। কান্না করে বললো,
“দাদা-দাদি ছাড়া আর তুমি ছাড়া সত্য মূল্যহীন। তবে সত্যের জীবনেরও তো একটা অস্তিত্ব আছে। তাইনা? এই সত্যকে আর কত লুকাবে তুমি?”
এমন সময় নিচ থেকে হাক পাড়লেন আলতাফ চৌধুরী। রুমানা বেগম বললেন,
“কী হয়েছে?”
“আরেহ নিচে আসো নিচে আসো।”
সত্য মাকে বললো,
“নানার আবার কী হলো?”
নুপুর চোখের চশমা ঠিক করতে করতে বললো,
“আয় নিচে। দেখি বাবার মাথায় নতুন কী ভূত চাপলো!”
সত্য, নুপুর আর রুমানা নিচে নামলো। আলতাফ চৌধুরী হুইল চেয়ারে বসা অবস্থায় থেকে টিভির দিকে আঙুল তাক করে বললেন,
“এই মেয়েটার কলাম পড়তাম পত্রিকায়। এই দেখো, আজকে সে শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক লাভ করেছে।”
রুমানা বেগম আড় চোখে আলতাফ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“তাতে তোমার কী? এমন ভাবে ডাকলে যেনো জা জানি কী হয়েছে!”
টিভির দিকে তাকালো নুপুর। উপস্থাপক ঘোষণা দিলো,
“বাংলাদেশ সরকারের অর্থবছরের শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদক লাভ করেছেন চট্টগ্রামের “সুলতানা আক্তার”। উনাকে মঞ্চে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে উত্তরীয়, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননাপত্র ও মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছ থেকে চ্যাক গ্রহণ করার জন্য বিনিত অনুরোধ করা হলো।”
মঞ্চে সুলতানা আক্তার উঠলেন। নুপুর তা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। নুপুর মাটিতে বসে পড়লো। সত্য বললো,
“আরেহ উনি তো আলভির মা। আলভি বলেছিলো আন্টি এবারের একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।”
#দ্বিধাগমন
#পর্বঃ২৩
সত্য তার মায়ের এমন মাটিতে বসে যাওয়া দেখে অবাক হলো। রুমানা বেগম মেয়ের সামনে গিয়ে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে বললেন,
“কী হয়েছে তোর?”
নুপুর নিজেকে সামলে নেয়। তারপর আমতা আমতা করে বলে,
“মাথা ঘুরে গিয়েছিলো মা। কিছু হয়নি আমার।”
সত্য দাতে দাত চেপে মাকে বললো,
“আরও খাও মিষ্টি! চায়ে চিনি খাও বেশ করে। বলেছিলাম না এসব খাওয়া তোমার বন্ধ!”
আলতাফ চৌধুরী পাশ থেকে বললেন,
“আরেহ কার মেয়ে দেখতে হবে না? বাপের মেয়ে তো বাপের মতো মিষ্টি খাবেই।”
“হয়েছে হয়েছে। তোমার আর এখন মায়ের হয়ে সাফাই দিতে হবে না।”
“আরেহ ডাক্তার! বিয়ে দিয়ে দিবো তাহলে। জামাইর সাথে ডাক্তারি করিস, আমার মেয়ের সাথে করিস না বলে দিলাম!”
“এএএ! বুড়া প্রেমিক আমার। তোমার সাথে প্রেম করবো চলো”
নুপুর তখন জোরে চিৎকার করে উঠলো। জোর গলায় বললো,
“এখন এসব কথা বন্ধ করো।”
রুমানা বেগম, আলতাফ চৌধুরী আর সত্য, নুপুরের এই অদ্ভুত আচরণে অবাক হলেন। সত্য আলতাফ চৌধুরীর দিকে তাকি ইশারা আর ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে,
“মায়ের কী হয়েছে?”
আলতাফ চৌধুরী দাতে দাত আর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নাতনিকে বলেন,
“খোদার লীলা! তোর মায়ের মাথা গেলো!”
মুখে কী যেনো বিরবির করতে করতে নুপুর উপরে উঠে গেলো। ড্রইংরুমে সত্য, আর তার দাদা দাদি দাঁড়িয়ে আছেন। টিভিতে দেখাচ্ছে, সুলতানা আক্তার একুশে পদক গ্রহণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। উপরের তলায় গিয়ে সিঁড়ির কপাটেই দাঁড়িয়ে গেলো নুপুর। চোখ গেলো টিভির দিকে। সুলতানা বলে উঠলো,
“আসসালামুয়ালাইকুম”
টিভিতে সুলতানার গলা শুনে নুপুর উপর থেকে তার চশমার গ্লাস শাড়ির আচল দিয়ে মুছলো। টিভির দিকে তাকালো সে। কতদিন পর সুলতানা আপার গলা শুনছে নুপুর! কত সহজেই দিন চলে যায়! পঁচিশ বছর আগে সেই চিঠি লিখে রাতের আঁধারে সত্যকে নিয়ে সিলেট এসেছিলো নুপুর। আজ আবার পুরানো স্মৃতিগুলা যেনো উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠলো তার মনে।
টিভির সামনে সুলতানা আপা বক্তব্য দিচ্ছে! নুপুরের সুলতানা আপা। নুপুরের বড় সতীন!
সুলতানা বলা শুরু করলো,
“আমার এই অর্জন আমার শিক্ষার্থীদের জন্য। আমার এই মহাবিদ্যালয় আমাকে যে সম্মান দিয়েছে সেই সম্মানের প্রধান অর্জন আমার শিক্ষার্থীদের। আজকের এই সুলতানা আক্তার পর্যন্ত আমার হাঁটার পথটা সহজ ছিলো না। এই মানুষটা, ওই যে মঞ্চের সামনের দ্বিতীয় সাড়ির ডান পাশে, ওই যে লাল পাঞ্জাবি ওয়ালা লোকটা, গোঁফ ওয়ালা, সেই লোকটা আমার ছায়ার মতো ছিলো আমার জীবনে।”
ক্যামেরা তখন মঞ্চের সামনের দিকে তাক করালো। ক্যামেরা গিয়ে ফোকাস করলো সালমানের উপর! আজ দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর সালমানকে দেখছে নুপুর। চোখ থেকে জল গড়িয়ে নিচে পড়লো।ল নুপুরের। মঞ্চে সুলতানা বলা শুরু করলো,
“ওই মানুষটা আমার স্বামী। আমার মাথার তাজ। আমার জীবনের এক বিশাল অংশ। আর আরেকজন মানুষ আছে, যাকে আমি পঁচিশ বছর আগেই হারিয়ে ফেলেছি, আমার বোন!”
নুপুর অবাক হলো। সুলতানা আপা যদি এখন টিভির সামনে নুপুরের নাম বলে দেয়, তাহলে সামনে বসে থাকা সত্য, বাবা আর মা নুপুরের নাম শুনে যাবে সুলতানা আপার মুখে। তারপর তাদের সন্দেহের তীর নুপুরের দিকে চলে আসবে। যেই পরিচয় নুপুর সত্যের সামনে কখনোই নিয়ে আসতে চায় না”
ঠিক তখনই কারেন্ট চলে গেলো। নুপুর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এক কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছিলো নুপুর।
নুপুরের মনে তার পুরোনো দিনের কথা মনে হতে লাগলো। সবথেকে ভালো লাগছে এই ভেবে যে সালমান পরিবর্তন হয়েছে। সুলতানা আপা জীবনে অনেক বড় হয়েছে। অনেক সম্মান পাচ্ছে সে। সালমানকে আগে যেমন লম্বা দীর্ঘকায় দেখাতো, এখন আর তেমন দেখায়নি। ভুড়ি হয়েছে নতুন। চোখে চশমা। সুলতানা আপার পরনে সাদা শাড়ি। গলায় মুতির মালা। আর চোখে চশমা। সুলতানা আপার চুলগুলো ছিলো ধবধবে সাদা। কালোর লেশমাত্র নেই। কথাবলায় কী সুন্দর ঝরঝরে এখনও সুলতানা আপা!
নুপুর ভাবলো, তারানা কোথায় আছে, শাশুড়ি কোথায় আছেন, আর সেই ছোট্ট মুনা, সেই বা কোথায় আছে?
যখন নুপুর সত্যকে নিয়ে সিলেট চলে এসেছিলো, তখন চিঠিতে লিখে দিয়ে এসেছিলো,যত টাকাই লাগুক সুলতানা আপা আর তারানা আপা যেনো মুনার চিকিৎসা করায়। অবশ্য নুপুরের এই বিশ্বাস আছে। নিশ্চয়ই তারানা আপা আর সুলতানা আপা মিলে মুনার চিকিৎসা করিয়েছে। মুনার বিয়েও হয়েছে হয়তোবা!
শাশুড়িও হয়তোবা ভালো আছেন। সবার ভালো থাকার ভাবনাই নুপুরকে মত্ত করে রাখলো।
নুপুরের মা আর সেই ক্লাস টেনের ভাইটাও হয়তোবা অনেক বড় হয়েছে। ভাইটার সংসার হয়ে যাবে এই পঁচিশ বছরে। তার ছেলেমেয়েও হয়েছে হয়তোবা। মা আর ভাই সন্তান বউ নিয়ে ভালোই আছে মনে হয়।
হুট করে পেছন থেকে সত্য এসে জড়িয়ে ধরলো নুপুরকে। তারপর বললো,
“কী করো এখানে?”
নুপুর চশমা মুছতে মুছতে জবাব দিলো,
“কিছুনা”
“কিছুনা মানে?”
“আরেহ কিচ্ছু না।”
“এই মিস এঞ্জেল! কান্না করছো কেনো হ্যা?”
“কান্না কই করলাম?”
“বুঝি বুঝি। মেয়ে তো আর ছোট না। ডাক্তার হয়েছি এসব ভালো বুঝি।”
“হ্যাঁ সে দেখছিই। বুঝার ব জানিস না আবার আমাকে জ্ঞান দেয়া হচ্ছে।”
“হ্যাঁ তাই দিচ্ছি। কান্না করছো কেনো মা?”
জবাব দিলো না নুপুর। তারপর অকপটে সত্যকে জিজ্ঞেস করলো,
“এই ওই যে মেয়েটা আজ একুশে পদক পেলো,..”
“হ্যাঁ হ্যাঁ।”
“তার ছেলে তোর বন্ধু নাকি?”
“হ্যাঁ মা। আলভি। আমার খুব ভালো বন্ধু সে। আমাদের গ্রুপের ইভেন সে সেকেন্ড হয়েছে গোটা মেডিকেলে!”
“ও কি সুলতানার নিজের ছেলে?”
“অদ্ভুত! মা তোমার জ্বর হয়েছে?”
এই বলে সত্য মায়ের মাথায় হাত দিলো। তারপর বললো,
“না তো। জ্বর নাই। তাহলে কী হয়েছে তোমার?”
“কিছুনা”
“তাহলে এইট কেনো জিজ্ঞেস করছো যে ফারাবি তাদের নিজের সন্তান কী না!”
“এমনিই।”
“অহ আচ্ছা। ভূত নেমেছে বুঝি?”
নুপুর সত্যের গালে ধরে চিমটি কাটলো। তারপর হেসে হেসে জিজ্ঞেস করলো,
“তারা কোথায় থাকে রে সত্য?”
“চট্টগ্রামে। তার বাবার আইসক্রিম বিজনেস আছে সেখানে।আর আন্টিতো দেখলাই। রকজ মানুষ। একুশে পদক পেলো!”
নুপুর উত্তর দিলো
“অহ আচ্ছাহ”
নুপুর আরেকটা চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে গেলো। সুলতানা আপার সন্তান আলভি কীভাবে? আর তারা চট্টগ্রাম ই বা থাকে কেনো? তারানা কোথায়?
এসব চিন্তা করে তো আবার মাথা থেকে ঝাড়িয়ে দেয় সে। তারপর নিজের রুমে এসে বিছানায় গা হেলিয়ে দেয় নুপুর।
রাতে আলভির সাথে সত্যের আলাপ হয় কলে। আলভি গুডনাইট জানায় সত্যকে। সত্য বলে,
“আমাকে ভুলবা না তো কখনো?”
“কেনো ভুলবো?”
“তুমি তো মেডিকেল টপার। তোমার আম্মু একুশে পদক ওয়ালা। তোমার বাবা বিজনেসম্যান। আমার তো এসব কিছুই নেই।”
আলভি সত্যের কথা শুনে হাসলো। হেসে হেসে জবাব দিলো,
“লাভ ইউ সুইটহার্ট! এন্ড ইটস ট্রুথ অলসো। সো, ডোন্ট ওয়ারি। ইউ আর মাই লাইফ।”
“লাভ ইউ আলভি।”
“লাভ ইউ সত্য। আমার স্বপ্ন আমার ফিউচার ওয়াইফ। আমার বাচ্চার মা!”
“হয়েছে হয়েছে আর ন্যাকামো করতে হবে না। আমার ঘুম পেয়েছে।”
“আচ্ছা ঘুমাউ।”
“হ্যাঁ যাচ্ছি। তুমিও যাও। আর অনলাইনে থেকো না কেমন?”
“ওকে আমার ব্বাপ! যাই আমিও। তুমিও যাও।”
“টাটা। গুডনাইট।
“গুডনাইট”
পরেরদিন সকালে সবাই খাবার টেবিলে বসে নাস্তা করছেন। আলতাফ চৌধুরী খবরের কাগজ পড়ছেন আর মুখ দিয়ে বিরবির করে বলছেন। একটা নিউজ পড়ে আলতাফ চৌধুরী রুমানাকে ডেকে বললেন,
“দেখেছো রাফি নামের একজন খুন হয়েছে ঢাকা গুলশানে “নুরমহল কটেজ” এ।
নুপুর থ বনে গেলো। নুরমহল কটেজ! গুলশান!
তার ফেলে আসা বাড়ি? সেই বাড়িটা, যেই বাড়িটা সত্যের বাবার?
আলতাফ চৌধুরী স্ত্রী রুমানাকে বললেন,
“সেই বাড়ির মালিকের স্ত্রী মানে রাফির স্ত্রী তারানা বাদী হয়ে মামলা করতে না বলে দিয়েছে। আর কোর্টে নাকি এই মামলার রায় সে চায় না এইটাও জবানবন্দি দিয়েছে। কী যুগ এলো! স্ত্রী তার স্বামীর মৃত্যুর তদন্ত করতে নারাজ!
রুমানা বেগম বললেন,
“তাতে তোমার সমস্যা কী? বুড়া মানুষ এতো না ভাবলেও চলবে।”
এদিকে নুপুরের হাতে থাকা চায়ের কাপ মাটিতে পড়ে গেলো!
লেখা: Midhad Ahmed
#দ্বিরাগমন
#পর্ব_২৪
তার মাথায় কোনো কাজ করছে না। শাহবাগের নূরমহল কটেজ! রাফি কে? তারানার স্বামী রাফি মানে? আর রাফির খুন হয়েছে?
নুপুর রান্নাঘর থেকে তড়িঘড়ি করে ড্রইংরুমে গেলো। হুইলচেয়ারে বসা আলতাফ চৌধুরীর হাত থেকে পত্রিকাটা নিজের হাতে নিলো। রুমানা বেগম পাশ থেকে বললেন,
“এই হয়েছে যা! এখন বাপের সাথে মেয়ে এসে যুক্ত হয়েছে।”
আলতাফ চৌধুরী হুহু করে হাসলেন। বললেন
“কার মেয়ে দেখতে হবে না!”
নুপুর ধীর পায়ে পত্রিকা নিয়ে সিঁড়িতে উঠলো। হেঁটে হেঁটে তার রুমে চলে গেল। রুমানা আলতাফ চৌধুরীকে বললো,
“হয়েছে যা! তার আবার কী হলো এখন? পত্রিকাতো কখনো পড়ে না সে!”
“কী জানি।।অদ্ভুত মেয়ে এইটা। কখন কী হয় কী করে কিছুই বুঝা যায় না।”
“হ্যাঁ।”
রুমানা বিছানায় বসে পত্রিকার নিউজটার হেডলাইন পড়লো। হেডলাইনটা ছিলো এমন,
” নূরমহলে স্বামীর রহস্যজনক মৃত্যু
বাদী হয়ে স্ত্রীর মামলা দায়ের করতে অনীহা ”
নুপুর হেডলাইন শেষে ভেতরে ঢুকলো। নূরমহলের ছবি দেওয়া সামনে। এই সেই ফুলের বাগান, পানির হাউজ, দোলনা সব সব সব দেখা যাচ্ছে। আগে শুধু বাসার রঙ কমলা কালারের ছিলো। এখন ক্রিম কালারের। এই পার্থক্য।
নুপুর পত্রিকার শিরোনাম কাটিয়ে ভেতরে ঢুকলো।
নিউজটা ছিলো এরকম-
ঢাকায় শাহবাগের নূরমহল নামক আলিশান বাসায় ব্যবসায়ী রাফি আহমেদের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে গত শুক্রবারে। পুলিশকে প্রথমে এই বিষয়ে ইনফোর্ম করেন রাফি আহমেদের স্ত্রী তারানা। তারপর ঘটনাস্থলে পুলিশের একটা টিম পরিদর্শন করলে সেখানে গিয়ে দেখতে পায়, রাফি আহমেদ খাটের উপর শুয়া অবস্থায় এবং তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তাৎক্ষণিক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হলে ডাক্তার জানায়, ঘন্টাখানেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। পরে ময়না তদন্ত করতে চাইলে মৃত রাফি আহমেদের স্ত্রী তারানা নিষেধ করেন ও নানান ভাবে ঘটনাটা ধামাচাপা দিতে শুরু করেন। এই বিষয়ে একজন আইনজীবী সরাসরি কেইসটা এখানে ক্লোজ করে দেয়ার জন্য যোগাযোগ করেন এবং এর বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকার ও অফার দেন। এখানেই পুলিশের খটকা লাগে ও শেষে নূরমহমের ব্যবসায়ী রাফি আহমেদের লাশ পুলিশের জেম্মায় নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ময়না তদন্তের করে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে খাবারে বিষক্রিয়ায় রাফি আহমেদেরে মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ এই তথ্য পেয়ে রাফি আগমদের স্ত্রী তারানাকে এই বিষয়ে ইনোফোর্ম করে বাদি হয়ে মামলা করতে বলেন। তারানা তখন কান্নাকাটি করে বলেন, যা হয়েছে তা হয়েছে। তিনি মামলা করতে চান না। এদিকে পুলিশের সন্দেহের তীর তারানার দিকে ধাবিত হলে তারানা কথার বাক ঘুরিয়ে নেন। শেষে বলেন, বাসার কাজের মেয়েটা গত দুইদিন আগে বাসা থেকে পালিয়ে গিয়েছে স্বর্ণ-টাকা চুরি করে। পুলিশ এই হটকারি কথায় তারানাকে কাজের মেয়ের চুরি করে পালানোর ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে কী না জিজ্ঞেস করলে তারানা জানান, তিনি মামলা করেন নি। শেষে পুলিশ কাজের মেয়েটার নাম জিজ্ঞেস করল তিনি জানান ভুলে গিয়েছেন। পুলিশ জেরাও করতে থাকে তারানাকে। শেষে বলেন, নাম মনে পড়েছে। কাজের মেয়েটার নাম ছিলো শাবানা তবে দেশের বাড়ি কোথায় সেইটা তিনি জানেন না।
এদিকে রমনা থাকার ওসি টিভি বঙ্গকে জানিয়েছেন এই কেইসের ব্যাপারে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছে কিন্তু মৃত ব্যক্তির স্ত্রী তারানা কোনো মামলা দায়ের করেন নি। এখন এইটা হত্যা সেই বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত তবে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পুলিশ কোনো সুরাহা খুঁজে পায়নি। মৃত রাফি আহমেদ আর তারানার ছেলেমেয়ে দুইটা। বড় ছেলে আদিয়ান এবার ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে পড়ছে। আর ছোট মেয়ে সিন্থিয়া ক্লাস নাইনে পড়ে।
স্টাফ রিপোর্টার
দৈনিক সংহার বাংলা
ঢাকা, বাংলাদেশ।
নিউজটা পুরোপুরি পড়ে নুপুর ঘেমে একাকার হয়ে গেলো।সবচাইতে বেশি অবাক হলো শেষে তারানা আর রাফির দুই ছেলেমেয়ে আদিয়ান আর সিন্থিয়ার কথা শুনে। তাহলে কি তারানা নতুন আরেকটা বিয়ে করেছে? তার ফেলে আসা নূরমহলে কি আর আগের সেই সুখ নেই? সেখানে তাহলে শাশুড়ি, মুনা, সুলতানা আপা আর সালমান থাকে না?
সত্য পেছন থেকে এসে নুপুরকে বললো,
“কী হয়েছে তোমার? এতো মনমরা কেনো?”
নুপুর জবাব দিলো না। নুপুরের হাত থেকে পত্রিকা কেড়ে নিয়ে সত্য আবার বললো,
“পত্রিকায় কী হয়েছে?”
“কিছু না”
“না কিছু একটা হয়েছে।”
“আরেহ বললাম তো কিছু না।”
সত্য হাঁটুগেড়ে মাটিতে বসলো। মায়ের মুখ হাত দিয়ে বললো,
“কী হয়েছে মা?”
নুপুর মুচকি হাসি এনে বললো,
“বোকা মেয়ে! কী আবার হবে?”
“তুমি তো এমন ভাবে পত্রিকা পড়ো না। তোমাকে কখনো পত্রিকা পড়তে দেখিনি আমি।”
“দেখোস নাই তাই আমি পত্রিকা পড়তে পারবো না?”
“না এমন কথা না। কিন্তু…”
“কিন্তু বাদ দে। খেয়েছিস?”
“হ্যাঁ খেয়েছি। তোমার শরীর ঠিকঠাক তো?”
“হ্যাঁ রে। আমি আর মন্দ থাকি কখনো? যার এতো ভালো একটা ডাক্তার মেয়ে আছে তার মন্দ থাকতে নেই”
সত্য মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“লাভ ইউ আম্মু।”
নুপুর সত্যের চুলে হাত দিয়ে বুলিয়ে দিলো। অগোচরে অবচেতন মন নিয়ে ভাবলো, নূরমহলে তার ফেলে আসা সংসারের কোন কিছুই ঠিক নেই। আজ পঁচিশ বছর পর সেই সংসারের প্রতিটা কথা, ব্যক্তি যেনো তার চোখের সামনে ভেসে ভেসে উঠছে। চিন্তন মনে যেনো চৈতন্যের আবহ সঞ্চার হচ্ছে। সেখানে কোনোকিছুই আর আগের মতো নেই।”
তারপর হুট করে সত্য নুপুরকে বলে বসলো,
“মা একটা সত্য কথা বলি?”
নুপুর হাসলো। হেসে হেসে জবাব দিলো
“সত্য তো সত্য কথাই বলবে। তাতে সমস্যা কী?”
সত্য বললো,
“আমি আলভিকে ভালোবাসি। ওইযে, গতকালকে সুলতানা আক্তার নামের একজন একুশে পদক পেয়েছেন, তাঁর ছেলে আলভি। আমরা একই সাথে পড়েছি। সেও ডাক্তার!”
নুপুর ঝাপটি মেরে সত্যকে সামনে থেকে সরিয়ে নিলো। নিজে পেছনে চলে আসলো। মুখ থেকে বিরবির করে বললো,
“এটা অসম্ভব! এটা কখনোই হতে পারে না। সুলতানা আপার ছেলে আলভি! এটা অসম্ভব ”
সত্য মায়ের কথার কোনো আগামাথা বুঝে উঠলো পারলো না। নুপুর রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। সত্য মায়ের পেছন পেছন গেলো। নুপুরকে সত্য ডেকেই চলছে,
“মা কী হয়েছে তোমার? মা, মা…”
“না এইটা হতে পারে না। এই সম্পর্ক! কীভাবে কী? আলভি কে?”
সত্য পেছন থেকে জবাব দিলো,
“ওইতে সুলতানা আন্টির ছেলে।”
” না না। না না না কীভাবে সম্ভব। সম্ভব না। না না। এটা না। হতে পারে না। না না পারে না।”
“কী পারে না মা? কী হয়েছে তোমার?”
নুপুর আদতে সত্যের কথার উত্তর দিচ্ছিলো না। বিড়বিড় করছিল মনে মনে। আবারও বিড়বিড় করতে লাগলো নুপুর।
” না না। এই সম্পর্ক সম্ভব না। সম্ভব না। সম্ভব না!”
নুপুর দাঁড়ানো অবস্থায় মাটিতে ঢলে পড়লো। সত্য কিছু বুঝে উঠার আগেই সিঁড়ির রেলিংয়ে নুপুরের মা ফেসে মুচড়ে গেলো। সত্য খেয়াল করলো, নুপুরের মুখের বাম দিকের চোয়াল বেকে গেছে। সত্য বুঝে গেছে, নুপুরের স্ট্রোক হয়েছে। সত্য জোরে ডাক দিলো,
” দাদা, দাদি আসো। এদিকে আসো”
আলতাফ চৌধুরী ড্রইংরুমে বসা ছিলেন হুইলচেয়ারে। তিনি নিচ থেকে উপরে তাকাতেই দেখলেন নুপুর মাটিতে পড়ে আছে। তিনি উপরে উঠতে পারলেন না। হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলেন। জোরে জোরে বলতে লাগলেন,
“ও নুপুর! তোর কী হয়েছে? ও মা! নুপুর…”
তারপর আবার হাক দিলেন,
“ড্রাইভার, ড্রাইভার…”
সিকিউরিটি গার্ড আসলো তখন। এসে বললো,
“স্যার ড্রাইভার নেই।”
“ড্রাইভার নেই! আল্লাহ। আমাকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দে আমি ড্রাইভ করবো। গাড়ি বের করে আন”
“কিন্তু…”
“গাড়ি আন।আমার মেয়ের অবস্থা ভালো নেই।”
রুমানা বেগম আর সত্য মিলে নুপুরকে নিচে নামিয়ে আনলো। নুপুরের জ্ঞান আছে, শরীর অবস। মুখে বলেই যাচ্ছে,
“অন্ না… না সম্অওব নন্-না…”
সত্য বললো,
“দাদা আমি ড্রাইভ করে নিয়ে যাচ্ছি। তোমাকে যেতে হবে না। দাদি তুমি আসো আমার সাথে।”
এদিকে অবচেতন মনে স্ট্রোক করা নুপুর ভেবেই চলছে,
যদি আলভি সুলতানা আপার ছেলে হয়, তাহলে সালমান আলভির পিতা। এই বিয়ে, এই ভালোবাসা কীভাবে সম্ভব? এই সম্পর্ক চিন্তা করাও পাপ!
এদিকে সত্যের যেই সত্যটা এতোদিন সে লুকিয়ে আসছিলো, সেই সত্যটা আবার এতো বছর পর কেনো তার সামনে আসছে? কেনো?
অথচ নুপুর জানতো, সুলতানা কখনো মা হতে পারবে না ডাক্তার এমনটাই বলে দিয়েছিলো! আলভি তাহলে কার সন্তান?
লেখা: Midhad Ahmed
(চলবে)
চলবে,,,,,,,
(চলবে)
লেখা: Midhad Ahmed
(চলবে)