দ্বিরাগমন পর্ব ৩৫+৩৬+৩৭+৩৮+৩৯

#দ্বিরাগমন
লেখা: Midhad Ahmed
#পর্ব_৩৫

সত্যে দলিল দেখাল বাসার। আরিয়ানের মা দেখলেন। নিজের চোখকে অতঃপর নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। সত্য বলল,
“কাল রাতেই মাতাল ছেলের থেকে বাসা বাড়ি সব আমার নামে লেখিয়ে নিয়েছিলাম আমি। সব সব সব। এই ঘর, এই সংসার কিছুই আমি করবো না।”
রুমানা বেগম সত্যের মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
“মারে…”
“না না না। আমাকে মারে বলে ডাকবা না। যেই আমাকে ছোটো থেকে বড় করেছো, সেই আমাকে আজ স্বার্থের জন্য তোমার বখে যাওয়া নাতির সাথে বিয়ে দিয়েছো?”
“মারে আমার যে আর কোন উপায় ছিলো না”
“অহ আচ্ছা। সেই উপায় আমার জীবন দিয়ে বের করতে হলো?”
আরিয়ান পাশ থেকে হাত উঁচু করে তেড়ে আসলো সত্যের দিকে। হাত উপরে তুলে সত্যের গালে চড় বসাবে এমন সময় সত্য আরিয়ানের হাত ধরে ফেলে। আরিয়ানের হাত ধরে সত্য আরিয়ানকে তার মায়ের সামনে নিয়ে দাঁড় করায়। রুমানা বেগমকে সামনে এনে বলে,
“এই দেখেন আপনার রক্তের সংস্কার”
আরিয়ানের মাকে সত্য বলল,
“যে ছেলে তার মায়ের সামনে অন্য এক মেয়ের গায়ে হাত তুলতে পারে, সেই ছেলে হায়ার এডুকেটেড কি না আমি জানতে চাই না। সম্মান জিনিসটা পরিবার থেকে আসতে হয়। অন্য কোথাও থেকে না।”

তারপর সত্য নিচের ভরা ড্রইংরুম থেকে উপরের তলায় চলে আসলো। উপরের তলায় কোণার রুম থেকে আরিয়ানের মায়ের মামাতো বোন, যে কিনা গতকাল সেন্টারে নুপুরকে অপমান করছিল, সেই মহিলাকে টেনে নিচে নিয়ে আসলো। তারপর মোবাইল স্ক্রিনে একটা নিউজ বড় বড় করে পড়লো সত্য। নিউজটা ছিলো এরকম,
“ছাত্রী ধর্ষণের দায়ে পলাতক পাঁচ যুবক”
আর নিচে যে পাঁচটা ছেলের অভিযুক্ত ছবি দেওয়া সেই পাঁচটা ছেলের মধ্যে একটা সেই মহিলার ছেলে। সত্য তাকে বলল,
“এই আপনার সংস্কার? যে মা বেঁচে থাকতে সন্তান মেয়েদের সম্মান করা শিখেনা সেই মায়ের কাছ থেকে আমরা কেমন ব্যবহাস আশা করতে পারি?”

মহিলা নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না করতে লাগল। সত্য এবার আলতাফ চৌধুরীর হুইল চেয়ারের সামনে হাঁটু গেড়ে বসল। আলতাফ চৌধুরীকে বলল,

“দাদা, আমাকে তো তুমি ছোটোবেলা থেকে নাতনির মত করে বড় করেছো। আমার সাথে এমনটা করতে পারলে তুমি”

আলতাফ চৌধুরী মাটির দিকে চেয়ে রইলেন।
তারপর রুমানা বেগমকে বললেন,
“শুধু তোমার জন্য। সব তোমার জন্য হয়েছে।”
“আমার জন্য? এতো আহ্লাদ দেওয়া ঠিক না।”

তারপর রুমানা বেগল সত্যকে বললেন
“তুমি আমাদের ঘরের বউ এখন। বেয়াদবি করা যাবে না।”
“বউ?আমি? আপনাকে নিজের ভাবতাম। আর আজ সেই ভাবনাটাও আমার ভুল হলো। আপনার নিজের নাতনি হলে এমনটা করতে পারতেন?”

রুমানা বেগম জবাব দিলেন,
“নিজেও ওয়েট বুঝে কথা বলো সত্য।”
“ওয়েট? আমার? আমি এই ঘরের মালিক এখন। সব আমার। এই ঘর এই দোয়ার সব আমার নামে লেখা। আমি চাইলেই বলতে পারি, আপনারা এই বাসা থেকে বের হয়ে যেতে। তবে আমি তা বলবো না। আমার মায়ের সংস্কার তা না।”

তারপর সত্য কল করলো কাকে যেন। কল করার কিছুক্ষণ পর উকিল এলো বাসায়। সত্য বলল,
“উনি ডিভোর্স পেপার নিয়ে এসেছেন।আমি আরিয়ানকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।”
আরিয়ান বলল,
“এসব কী হচ্ছে সত্য?”
“যা হবার তাই হচ্ছে। আমি শুধু প্রমাণ করিয়ে দেখিয়েছি আমার মায়ের সংস্কার আর কথার মূল্য আছে”

পাশ থেকে আরিয়ানের মা বললেন,
“তাহলে এই বাসা সব নিজের নামে করে কী প্রমাণ করতে চাচ্ছো? তুমি লোভী না?”
“না। লোভীতো আপনারা। আপনার অযোগ্য ছেলের হাতে এই বৃদ্ধ বয়সে তারা তাদের সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন এখন তারা কোথায় যাবেন? আমি সব সম্পত্তি আবার লিখে দিচ্ছি দাদার নামে। এইটা প্রয়োজন ছিলো ভীষণ। আর শুনে রাখেন, এবার সম্পত্তির পাওয়ার অব এটর্ণি আমার নামে করা। আমি বেঁচে থাকতে এই সম্পত্তি আর কারো হতে পারবে না।”

সত্য মুহূর্তেই আরিয়ানকে ডিভোর্স দিয়ে দিল। কাবিনের সতেরো লাখ টাকার চ্যাকও দিয়ে আসলো আরিয়ানের মায়ের হাতে। সম্পত্তি আলতাফ চৌধুরীর নামে করে দিল। উপরে গিয়ে নিজের কাপড় গুছিয়ে আলতাফ চৌধুরীর পায়ে ধরে সালাম করে বলল,
“আমি চলে যাচ্ছি। দোয়া রেখো দাদা”

সত্য বেরিয়ে আসলো সেই ঘর থেকে। রেল স্টেশনে এসে চট্টগ্রামের টিকেট কাটলো সে।।আলভির নাম্বারে কল দিল। আলভি কল রিসিভ করল। সত্য কান্না করে দিল। আলভিও কান্না করে দিল সত্যের কন্ঠ শুনে। কিছুক্ষণ দুজনেই চুপ থাকার পর দুজনেই আবার বলে উঠলো,
“ভালো আছো?”
সত্য জবাব দিল,
“তোমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারি?”
“আমি ভালো থাকতে পারি?”
“জানি পারো না।আমি চট্টগ্রাম আসছি এখন”
“মানে?”
“তোমাকে বিয়ে করব আমি।”
“এবারও মিথ্যা আশা দিচ্ছো জানি। এসব করে তোমার লাভ কী হয় সত্য?”
“আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি আরিয়ানকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি। আমাকে আপন করে নিবে তুমি? আমাকে গ্রহণ করবে?”

ওপাশ থেকে কিছুক্ষণ নীরব ছিলো আলভি। তারপর কান্না কান্না কন্ঠে আলভি জবাব দিলো,
“আই লাভ ইউ সত্য”
“আমাকে ক্ষমা করে দিও আলভি। আমি আমার মায়ের অপমান হোক এইটা কখনোই চাইনি।”
“আমি বুঝতে পেরেছি। আন্টি কি সাথে আসছেন?”
“না আম্মু কোথায় চলে গেছেন। কাল রাতেই।”
“হুয়াট? কোথায়?”
“জানি না।”
“জানি না মানে?”
“আমি চট্টগ্রাম আসি, তারপর খোঁজ নিবো।”
“আচ্ছা ওকে”

সত্য ট্রেইনে উঠে বসল। জানালার ধারে সে বসা। মনে মনে চিন্তা করতে লাগল তার জীবন এমন কেন? সুখ, শান্তি এসবের জন্য সে পাগলপ্রায় তবে এগুলো তাকে ধরা দিচ্ছে না কেন? এখন কি আলভির সাথে তার বিয়ে হবে? ভালোবাসার মানুষকে কে কি সে ফিরে পাবে? আলভি কি মেনে নিবে সত্যকে? মাকে কোথায় খুঁজবে সে? মাতো বলেছিলো দুইদিন পরে কল দিবে। মোবাইল স্ক্রিনে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল সত্য।
#দ্বিরাগমন
#লেখা: Midhad Ahmed
#পর্ব_৩৬

পরেরদিন ভোরে সত্য সিলেট থেকে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গিয়ে নামল। আলভি তাকে নিতে এসেছে। ট্রেইন থেকে নামতেই দেখলো, আলভি দাঁড়িয়ে আছে। সত্য জড়িয়ে ধরলো আলভিকে। আলভিও সত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আলভির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। আশেপাশের মানুষজন তাদেরকে দেখছে। সত্য আলভিকে সামলে নিলো।আলভি একটা অটো ডাক দিলো। হালিশহরের তাদের বাড়ি। সত্য আর আলভি বসা আছে অটোতে। একজনের হাত আরেকজনের হাতের উপর। কেউ কারো সাথে কথাও বলছে না। আলভি গুনগুন করে গান গাচ্ছিলো। সত্য বলল,

“আমাকে ভুলে গিয়েছিলে তাইনা?”

আলভি সত্যের দিকে ফিরে তাকালো।বলল,

“না। কখনোই না। আমার পক্ষে তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকাটা ছিলো অসম্ভব!”

“আর আমি?”

“জানি না”

“আমার পক্ষেও এই জীবনটা রাখা ছিলো অর্থহীন”

আলভি তার হাত দিয়ে সত্যের মুখ বন্ধ করল।বলল,

“এসব কথা মুখে আনাও পাপ”

“তাহলে তুমি যে সুইসাইড করতে বসেছিলে?”

আলভি অবাক হলো। জিজ্ঞেস করল

“তুমি জানলে কীভাবে?”

“আমি সব জানি। মা কথা বলছিলেন আন্টির সাথে। আমি শুনেছি। তবে বুঝতে দেইনি যে আমি জানি। এইটা জেনেছি শেষে, তুমি সুস্থ আছো।”

“আমি মরতে যাচ্ছি জেনেও একটাবার আসলে না তুমি?”

“মরোনি তো। আমার জন্য তোমাকে অন্তত বাঁচতে হবে”

এই বলেই সত্য তার ইষৎ কালো চুল গেলিয়ে দিলো আলভির বুকের উপর। আলভি তার বাম হাত দিয়ে সত্যের ডান হাত ধরে আছে। এক বুক অভিমান ভালোবাসা আর ভরসা নিয়ে দুজন দুজনের হাত শক্ত করে ধরে বসল। সত্যের চোখ বেয়ে নেমে আসা জল আলভির হাতে টপকে পড়লো। আলভির কাছে সত্যের চোখের এই জলটাকে স্বর্গীয় সুখের অনুভব মনে হচ্ছিলো।

সত্যকে নিয়ে হালিশহরে পৌছলো আলভি। সত্য ঢুকতেই দেখলো বাসার সামনে প্রকাণ্ড এক ফুল বাগান। চারদিকে খাঁচা বন্দি পশু পাখি। আলভি আগে এগুলোর ছবি তুলে দিতো সত্যকে। খাঁচা বন্দি ময়ূর আছে, রাজহাঁস আছে, বিদেশি কুকুর আছে। এসব সালমান শখ করে পালে। সালমান বাগানেই ছিল। আলভি সত্যকে নিয়ে গেইটে ঢুকতেই সালমান এসে জড়িয়ে ধরল সত্যকে। কান্না করতে করতে বলল,

“মারে এই বাবাকে ক্ষমা করে দে। ক্ষমা করে দে রে মা। ক্ষমা করে দে।”

সত্য জবাব দিল না। শুধু অনুভব করল সালমানে চোখের জল তার পিঠে এসে পড়ছে। বুকটা কেমন জানি চেৎ করে উঠলো সত্যের। সালমান সত্যকে বলল,

“আমাকে ডাক না বাবা বলে।”

এমন সময় সুলতানা চলে আসল। সত্যকে জড়িয়ে ধরলে সুলতানা। সত্যও জড়িয়ে ধরলো সুলতানাকে। সুলতানা সত্যকে বলল

“তোর বাবাকে একবার বাবা বলে ডাক না মা”

সত্য আর নিজেকে সংবরণ করতে পারল না। সালমানকে বাবা বলে জড়িয়ে ধরল। আলভির চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। সুলতানাও কান্না করে দিল। এই এক মুহূর্তে যেন গোটা পৃথিবী সুন্দর হতে চলেছে তাদের জন্য। সত্য তার বাবাকে ফিরে পেয়েছে। সত্য তার ভালোবাসাকে ফিরে পেয়েছে।

এদিকে নুপুর সত্যের বাসর রাতেই সিলেট ছেড়ে ঢাকা চলে আসল। রাতের নিউজে স্টেশনে বসে শুনতে পেল, আদাতল তারানাকে খুনের দায়ে ফাসির আদেশ দিয়েছে। আগামী সপ্তাহেই ফাসি কার্যকর করে। আসামী পক্ষের কেউ এখনও আমিল দায়ের করেনি। আপিল দায়ের করলে সাজা কম হতে পারে।
নুপুর ঢাকা গিয়েই কারাগারে যোগাযোগ করল। একদিনের চেষ্টায় দেখা করল তারানার সাথে। দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর আজ তারানা আর নুপুর মুখোমুখি। তারানা জড়িয়ে ধরতে পারল না নুপুরকে। দু-চোখ দিয়ে দুজনকে দেখতে লাগলো দুই সতীন। তারানা কান্না করে দিলো। নুপুরকে শেষ বারের জন্য কান্না করতে করতে বলল,

“নুপুর আমার দুইটা ছেলেমেয়ে আছে। তাদের কী হবে?”

নুপুর তারানাকে শান্তনা দিলো। বলল,

“আমি আছি। খুন কি তুমি করেছো আপা?”

তারানা কান্না করতে করতে জবাব দিল

“হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ। আমি খুন করেছি রাফিকে। আমিই। আমাকে আরেকটা সুযোগ দিবে নুপুর?”

“কী সুযোগ? ”

“বাসার দলিল বানিয়ে আনো। আমি সব তোর নামে লিখে দিব। সব সব সব। এই সম্পত্তি এই অধিকার কিছুই আমার নেই।”

“না। সব তোমার। তোমাকে ফিরে যেতে হবে আপা”

“না রে বোন। তুই জেদ ধরিস না। দলিল বানিয়ে নিয়ে আয়”

পরেরদিন নুপুর দলিল বানিয়ে নিয়ে আসল। তারানা আবার সব বাসা সম্পত্তি লিখে দিল নুপুরের নামে। নুপুর তার ভাইয়ের বাসায় গেল না। তাদের বাসায় চলে গেল। তারানার দুই ছেলেমেয়েকে দেখে রাখতে হবে। নুপুর আপিল ও করল। যেভাবেই হোক তারানার সাজা কমিয়ে আনতে হবে।

এদিকে চট্টগ্রামের হালিশহরে সেই রাতে কাজি এনে, তিন লক্ষ টাকা কাবিন করে সত্য আর আলভির বিয়ে দিয়ে দেয় সুলতানা আর সালমান। দুজনের প্রেম ভালোবাসা, বিয়ের মর্জাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
#দ্বিরাগমন
#পর্ব_৩৭

সপ্তাহ খানেক চেষ্টার পর তারানার সাজা মৃত্যুদন্ড থেকে কমিয়ে দশ বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ডে নিয়ে এসেছে নুপুর। সিন্থিয়া আর আদিয়ান সারাদিন মুখ ভার করে থাকে। নুপুর তাদের আগলে রাখার চেষ্টা করে। তারা যখন মা মা বলে খোঁজে তখন নুপুর বলেক্স

“আমিই তোদের মা। এই দেখ।”

আদিয়ান আর সিন্থিয়া বুঝতে শিখেছে। নিজেদের দায়বদ্ধতা জানতে শিখেছে। নুপুরের কেন জানিনা মনে হল, তাদের কাছ থেকে সম্পর্কের এই বেড়াজাল লুকিয়ে রাখা ঠিক হবে না। সেদিন সন্ধ্যায় নুপুর সিন্থিয়া আর আদিয়ানের সামনে, তারানা, সুলতানা, সালমান, আলভি আর সত্যের ঘটনা খুলে বলল। সিন্থিয়া ক্লাস নাইনে পড়ে। সে কী বুঝেছে কী বুঝেনি সেটা আন্দাজ কর‍তে পারল না নুপুর। তবে আদিয়ান ইন্টার লেভেলে পড়ছে। ঠাস করে সে বলে বসল,
“তাহলে তুমি কে? তুমি তো আমাদের কেউ না”
“আমি তোদের মা”
“না। মা তুমি না। তুমি এখানে কেন?”
“মা তার বাচ্চাদের কাছে থাকবে না তো কোথায় থাকবে বাবা?”
“আমাকে বাবা বলো না। আর তুমি আমাদের মা না। তুমি এখান থেকে চলে যাও”
“এভাবে বলে না বাবা।”
“সম্পত্তির লোভে এসেছো? তাইনা? এসব তোমার চাই এখন?”
“আদিয়ান এসব কী বলছো তুমি?”
“যা সত্য তাই বলছি।”
“এগুলো বলো না বাবা”
“বলব বলব বলব। ”

আদিয়ানের কথায় নুপুরের মাথায় রক্ত চেপে গেল। আদিয়ান আবার বলল,

“তুমি এখানে সম্পত্তি নিতে এসেছো। আমি সব বুঝি। চলে যাও এখান থেকে।”

নুপুর ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল আদিয়ানের গালে। আদিয়ান উঠে দাঁড়ালে। চেয়ার মাটিতে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলল
“আমার মা আজ পর্যন্ত আমার গায়ে হাত তুলেনি। আর তুমি সম্পত্তির লোভে এসে আমার সাথে এসব করছো?”

হুরহুর করে আদিয়ান সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। নুপুরের চোখ বেয়ে কান্না চলে আসল। এতোটুকুন ছেলেকে এসব বলা তার ঠিক হয়নি। কত আর বড় আদিয়ান? মাত্র ইন্টারে পড়ে! এভাবে চড় দেয়া তার উচিত হয়নি। আদিয়ান ছাদে চলে গেল। নুপুর পেছন পেছন গেল। ছাদে গিয়ে দেখল আদিয়ান সিগারেট ধরিয়ে খাচ্ছে। নুপুর অবাক হল। পাশে থেকে সিন্থিয়া বলল,
“ভাইয়া এসব রোজ রোজ খায়। বন্ধুদের সাথে ছাদে বসে খায় এসব”

নুপুর অবাক হল। পেছন পেছন ছাদে গেল। আদিয়ান আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। আদিয়ানের মাথায় হাত রাখলো নুপুর। পেছন ফিরে তাকালে সে। হাতটা সরিয়ে দিল। নুপুর জড়িয়ে ধরলো তাকে। বলল,

“মাকে এভাবে দূরে ফেলে দিবি?”
“কে মা?”
“আমি মা।”
“না তুমি আমার মা না।”

“আমিই তোর মা!

আদিয়ান ও কান্নায় ভেঙ্গে গেলো। জড়িয়ে ধরলো নুপুরকে। সিন্থিয়াও কাছে আসলো। নুপুর দুই হাতে দুই ছেলেমেয়েকে জড়িয়ে ধরলো। মনে মনে চিন্ত করলো, আল্লাহ তার এক মেয়েকে নিয়েছেন আর দুইটা ছেলেমেয়ে দিয়েছেন। সত্যের কথা মাথায় আসতেই নুপুর চুপসে গেল।সত্য সিলেটে কেমন আছে? ভালো আছে তো?

নিচে নেমে এসে নুপুর ল্যান্ড লাইনের নাম্বার থেকে সত্যের মোবাইলে কল দিল। কল রিসিভ করল সুলতানা। নুপুর কাদো কাদো গলায় জিজ্ঞেস করল,

“মারে কেমন আছিস?”
“সত্য আমাদের সাথে আছে।”
বলল, সুলতানা।
নুপুর সুলতানার গলা শুনে ভড়কে গেলো। সুলতানা বলল,
“সত্য আর আলভির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সত্য এখানে চলে এসেছে। ভালোবাসার কাছে পৃথিবীর সব বাধা নত হয়।”

সত্য এসে মোবাইল হাতে নিল। নুপুর বলল
“এইটা কী করলি রে মা? আমার মান সম্মান সব শেষ করে দিলি?”
“মান? সম্মান? আমি রাখিনি?”
“না”
“তোমার সম্মানের জন্য আমি বিয়েতে রাজি হয়েছি। তোমার জন্যই আমি বিয়ে করেছি। আর তোমাকে সম্মানিত করতেই আমার জীবন সপে দিয়েছি তাদের হাতে”
“তাহলে এখন?”
“সেই সম্মান রেখেই আমি আরিয়ানকে ডিভোর্স দিয়েছি। তুমি কোথায় আছো মা?”
“ঢাকায়”
“ঢাকায়? কোথায়?”
“সুলতানা আপার কাছে মোবাইল দে”

সত্য সুলতানার কাছে কল দিল। সুলতানা মোবাইল ধরলে ওপাশ থেকে নুপুর সব কাহিনী খুলে বলল। এইটাও বললো, তারানার দশ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। তারপর নুপুর বলল
“বাসায় আসবা না? এখন তো বাসায় আসার সময় হয়েছে আপা।”
“বাসায়? কোথায়? সেখানে আমাদের কোন অধিকার নেই কোন জায়গা নেই। আমরা সেখানে যাবো না”
“একা বাসা, খা খা করে আপা। কেউ নেই এখানে। আমার সত্যকে দেখতে কেমন জানি করছে। ”
“সত্য আমার ছেলের বউ। সে এখানেই থাকবে”
“কিন্তু…”
“কোন কিন্তু না।”

এই বলে সুলতানা কল রেখে দিল। নুপুরের ঠিকানায় ডাক পিয়ন একটা চিঠি নিয়ে এলো। উকিল নোটিশ সহ এডভোকেট এসেছেন। কালকে আদাতলে যেতে হবে। শাস্তি কমানো যেতে পারে তারানার।
নুপুর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ”

এদিকে নুপুরের বয়স্ক অসুস্থ মা মারা গিয়েছেন। সেই খবর নুপুর জানতে পারেনি।
এদিকে সুলতানার মোবাইলে একটা কল এলো। বিদেশি নাম্বার। সুলতানা কল ধরতেই ওপাশ থেকে এক ভদ্রলোক বলে উঠলেন,
“আমার ছেলে কোথায়?”
“কার?”
“আমার। সে ডাক্তার হয়েছে শুনলাম”
“ডাক্তার?”
“হ্যাঁ। তাকে আমি নিয়ে যেতে চাই।”
“অদ্ভুত? কে আপনি? কোথা থেকে বলছেন? আর কাকে নিয়ে যেতে চান?”
“আমি কানাডা থেকে বলছি। আমার ছেলেকে আমি নিয়ে যেতে চাই।”
“হুয়াট ডু ইউ মিন? কে আপনি?”
ওপাশ থেকে ভদ্রলোক ভরাট গলায় বলে উঠলেন,

“আমার ছেলে কোথায়? সে ডাক্তার হয়েছে শুনলাম। এতোদিন কত টাকা লেগেছে তাকে মানুষ করতে? বলুন আমি সব দিয়ে দিচ্ছি। নেক্সট সপ্তাহে আমি বাংলাদেশ আসছি। আমার ছেলেকে আমি কানাডা নিয়ে আসবো। আমার প্রপার্টি সহ সব দেখাশোনার দায়িত্ব এখন আমার ছেলের। তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবো। আপনার কত টাকার দরকার? এক কোটি? দুই কোটি? তিন কোটি? কত টাকা দরকার? বলেন আমাকে। কত? ব্ল্যাঙ্ক চ্যাক দিয়ে দিবো। হবে? বলুন…”
#দ্বিরাগমন
#লেখা: Midhad Ahmed
#পর্ব_৩৮

শুক্রবার। স্কুল বন্ধ। সুলতানা বেগম বাসায় আছেন। সালমান ও বাসায়। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। সুলতানা উঠে দরজা খুললো। দরজার ওপাশে লম্বা মতোন একজন লোক দাঁড়ানো। ক্লিন সেইভ করা। ইন করে ফর্মাল ড্রেসাপ। পায়ে বাদামি রঙের জুতা। চোখে চশমা। সুলতানা এক মুহূর্তে সেই ছাব্বিশ বছর আগের দেখা চিরচেনা মুখটাকে চিনে ফেলল। সুলতানা কিছু বলার আগেই সালমান ভেতর থেকে উকি দিয়ে জিজ্ঞেস করল,

“কে এসেছে সুলতানা?”
সুলতানা জবাব দেয়ার আগেই দরজার বাইরে থাকা ভদ্রলোক হেসে উঠলো। তারপর বলল,

“ভাইজান আমি আমি। মুনার জামাই”

সালমান ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলো। আজ ঠিক ছাব্বিশ বছর পর, ঠিক সেই আগেকার মানুষের অবয়ব যেন তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে বয়সের ছাপ নেই। বয়স যেন তার ত্রিশেই আটকে আছে। সালমানকে সে হেসে হেসে বলল,

“ভাইজান ছেলেকে নিতে এলাম”
“ছেলে? কীসের ছেলে?”
“আমার ছেলে।”
“তোমার ছেলে?”
“উহু ভাইজান। রাগ করেন কেনো? আমার ছেলেকে আমি নিতে আসছি।”
“এতোদিন কোথায় ছিলো?”
“উহু! নিতে এসেছি বললাম তো”

সালমান হাসলো। হেসে হেসে বলল,
“যখন আমার বোন অসুস্থ ছিলো তখন কোথায় ছিলেন আপনি? কোথায় ছিলো ছেলে? খোঁজ নাই খবর নাই আর আজকে হুট করে?”

“কত টাকা খরচ করেছেন? বলেন? আমি দিয়ে দিবো!”
“টাকা?”
“টাকার কাছে দুনিয়া অন্ধ। আমার প্রোপার্টি আমার ছেলে দেখবে এখন”
“টাকা দিয়ে প্রোপার্টি দেখার লোক কিনে নেন”
“ভাইজান সাবধান! আপনাকে সম্মান দিয়ে বলছি কথা এখনও।”
“সম্মান? আচ্ছা তুমি সম্মান দিও না। দরকার নাই”
“আমার ছেলে চাই”

ভেতর থেকে এসব চিল্লাচিল্লি শুনে আলভি বের হয়ে আসলো। ভদ্রলোকটা আলভির কাছে এসে বলল
“এইতো আমার ছেলে এসে গেছে। এইতো”

আলভি অবাক চোখে তাকালো সালমানের দিকে। তারপর বলল,
“বাবা উনি কী বলছেন? কে উনি?”
“আমি তোর বাবা। তুই আমার ছেলে”
“না”
“হ্যাঁ রে বাবা। হ্যাঁ।”
“কে আপনি? আর এখানে কী করছেন?”
“তোকে নিতে এসেছি বাবা।”

সুলতানা বলল,

“আলভি এই তোর বাবা। যে তোকে জন্মের পর কখনো দেখেনি, আর আজ তোকে নিতে এসেছে। এই সেই লোক যে কিনা তোর মায়ের অসুস্থতার খবর শোনে তোর মাকে ছেড়ে দিয়েছিলো। এই লোকটাই তোর বাবা”

আলভি চিৎকার করে উঠলো। সত্য রুম থেকে বেরিয়ে আসল। আলভি বলল,
“আমার বাবা বলতে একজইন। মা বলতেও একজনই। আমি এছাড়া আর কিছু জানি না”

আলভির বাবা আলভির মুখে ধরে বললেন,
“বাবা, আমি তোর বাবা রে”

আলভি নিজেকে সরিয়ে নিল। তারপর বলল,

“না। আপনি আমার কেউ না। যে মানুষটা আমাকে আমার জন্মের পর থেকে খোঁজ নেয়নি, নেই মানুষটার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক সেটা ভাবতেও ঘেন্না হচ্ছে।”
“সাবধান”
“কী? কী করবেন আপনি?টাকার গরম দেখাবেন? তাইনা?”
“টাকা দিয়ে কিনে নিব”
“বাহ! এই আপনার শিক্ষা।আমি সেই শিক্ষায় বড় হইনি। আমার বাবা মা টাকার কাছে নত না”
“টাকা হলে সব হয়।”
“আপনি এই মুহূর্তে আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে যান। এই মুহূর্তে”

লোকটা হাসলো। হেসে হেসে বলল,
“তোমার বাসা? নাকি অন্যের বাসায় আশ্রিত?”

সত্য এবার মুখ খুললো। আলভিকে পেছনে সরিয়ে বলল,
“আপনি এখান থেকে চলে যান। এই মুহূর্তে চলে যান বলছি। এই মুহূর্তে”
“অহ আচ্ছা। তুমি তাহলে সেই নুপুরের অবৈধ মেয়ে?”

সুলতানা পেছন থেকে আলভির বাবাকে ঘুরিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিল। তারপর বলল,
“আর একটা বাজে কথা যদি মুখ থেকে বের হয় তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না”

লোকটার চোখেমুখে আগুনের ফুলকি দেখা দিলো। লোকটা বাসা থেকে বের হয়ে গেলো। যাওয়ার সময় গড়গড় করতে কর‍তে বলে গেল,

“এর একটা বিহিত আমি দেখে নিবো বলে দিলাম”

এরপর কেটে গেলো চার চারটা বছর। তারানার সাজাও কমানো হয়নি। নুপুরের মাও মারা গেলেন এর ভেতরে। আদিয়ান গত মাসে স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা চলে যায়। চট্টগ্রাম মেডিকেলে একসাথে কর্মরত আছে সত্য আর আলভি। সিন্থিয়া এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে। সিন্থিয়ার জীবনে একজন স্বপ্নের পুরুষ এলো। সিন্থিয়া আসিফকে ভালোবাসে। দুজনে দুজনকে মনে প্রাণে পেতে চায়। অথচ সিন্থিয়া জানে না, আসিফ তাকে ভালোবাসে শুধুমাত্র স্বার্থের জন্য। সিন্থিয়ার সম্পত্তির জন্য। কোন এক ঘোর অমানিশা বাসা বাধতে চলেছে সবার জীবনে।
#দ্বিরাগমন
#লেখা: Midhad Ahmed
#_৩৯

“ভালোবাসো?”
“হ্যাঁ।”
“বিয়ের কথা বলতে পারবা মায়ের কাছে?”
“উনি তো তোমার নিজের মা না”
“না। আমার নিজের মা। এবং কোন অংশেই আমার মায়ের থেকে কম না”
“এখনই কি বিয়ে করা লাগবে?”
“হ্যাঁ। এখনই। বাসায় জানাবো আমি। তুমিও তোমার বাসায় জানাবা”

আসিফ সিন্থিয়ার কথায় চিন্তিত হয়ে পড়লো। সিন্থিয়া আসিফকে জিজ্ঞেস করলো,
“কী হলো? চুপ কেন?”
“আসলে এখন…”
“কী এখন?”
“দেখো আমি কি স্টাব্লিশড? আমার কি বিয়ের যোগ্যতা হয়েছে তুমি বলো?”
“যোগ্যতা? বিয়ে? আমার শরীর মন সব বিচরণ করে এখন যখন বিয়ের কথা বলছি তখন বলছো বিয়ের যোগ্যতা হয়েছে কি?”

আসিফ কথার উত্তর দিলো না। সিন্থিয়া আবার আসিফকে বলল,
“কী হলো? কথার উত্তর দিচ্ছো না যে!”
আসিফ বলল,
“আরও একটা বছর ওয়েট করতে হবে।”

সিন্থিয়ার চোখ বেয়ে অশ্রু পড়লো। সিন্থিয়া জড়িয়ে ধরলো আসিফকে। আসিফকে বলল,
“আমার সাথে তো মিথ্যা আশার খেল খেলছো না তুমি। তাইনা?”

আসিফও জড়িয়ে ধরলো সিন্থিয়াকে। আসিফের হাত পেছন দিয়ে সিন্থিয়ার লম্বা কালো চুল পর্যন্ত চলে গেল। আসিফ বলল,
“আমি তোমাকে মিথ্যা আশা দেইনি সিন্থিয়া। আই রিয়েলি লাভ ইউ আর এখনকার সিচুয়েশনটা একটু চিন্তা করো। আমাকে সময় দাও কিছুদিন?”

সিন্থিয়া আসিফের কথার কোন জবাব দিল না। আসিফ সিন্থিয়ায় মুখে দুই হাত দিয়ে ধরে সিন্থিয়াকে বলল,

“আমার চোখের দিকে তাকাও। এই চোখ কি ভালোবাসার প্রমাণ দেয় না?”
“জানি না”
“না জানতে হবে। আমি কি তোমাকে ভালোবাসি না?”
“জানি না”
“এইটাও জানতে হবে। আমার ভালোবাসা তো মিথ্যে নয়”
“তাই যেন হয়”

এমন সময় আসিফের মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। পকেট থেকে মোবাইল বের করতেই আসিফ ভড়কে গেলো। নুসরাত কল করেছে। আসিফ কল উঠিয়ে বলল,
“আসছি আসছি।”

সিন্থিয়া জিজ্ঞেস করলো,
“কে কল দিয়েছে?”
“বোন কল করেছে। বাসায় আজকে মেহমান আসবে। মামারা আসবেন। তাই বাজার করতে হবে আমাকে । আমি যাই?”
“আজকে বলেই আসলাম বেশ খানিকক্ষণ একসাথে থাকবো। তারপরও…”
“প্লিজ সুইটহার্ট! ভুল বুঝো না”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
“ওকে জান। যাই আমি”
“আমাকে নিয়ে যাও। তুমিতো বাসায় যাবা। বাইকে করে ছেড়ে দিও আমাকে। কেমন?”

তথমথ খেয়ে গেলো আসিফ । আমতা আমতা করে বলল,
“ইয়ে মানে!”
“কী?”
“না মানে”
“না মানে কী?”
“আমি বাসায় যাবো না। এখন একটু টেইলার্সে যাবো। বোনের কাপড় নিয়ে আসতে। তারপর যাবো বাসায়।”
“সমস্যা কী তাতে? আমাকেও নিয়ে চলো। তারপর বাসায় ড্রপ করে দিও। আমিতো ফ্রি আছি আজকে।।সমস্যা নাই”
“না না। টেইলার্স টা আমাদের রিলেটিভ একজনের। ওনি তোমাকে দেখলে কী না কী মনে করে বসেন…”
“অদ্ভুত! আমি টেইলার্সে ঢুকবো নাকি? আমিতো বাইরেই থাকবো। তাইনা?”
“না। তারপরও…”
“আচ্ছা হয়েছে হয়েছে। আমাকে নিয়ে যেতে হবে না। সাবধানে যেও। কেমন?”

আসিফের মোবাইল আবার বেজে উঠলো। সিন্থিয়াকে বলল আসিফ,
“আচ্ছা আমি গেলাম। খেয়াল রেখো সুইটহার্ট।”

সিন্থিয়া আসিফের দিকে তাকিয়ে রইলো। আসিফ মোবাইলের কল রিসিভড করতে করতে হেলমেট মাথায় দিয়ে বাইকে উঠলো। সিন্থিয়া একটা রিকশা ডেকে বাসায় চলে গেলো।

এদিকে আসিফ নুসরাতের কলকে নিজের বোনের কল বলে মিথ্যা বলেছে সিন্থিয়াকে। নুসরাতের কল পিক করে আসিফ বললো,

“সরি সরি সরি। আমি আসতেছি এক্ষুণি”
মোবাইলের ওপাশ থেকে নুসরাত বললো,
“সরি? শুধু সরি? আমি কতক্ষণ ধরে তোমার জন্য ওয়েট করছি আর তুমি বলছো সরি?”
“আচ্ছা জান আমি আসছি। পাঁচ মিনিট দাঁড়াও।”

অন্যদিকে সিন্থিয়া মনে মনে স্বপ্ন বুনছে আসিফকে নিয়ে সংসার করার। আর আসিফ বাইকে বসে বসে মনে মনে হাসছে এই ভেবে যে, সিন্থিয়া কতই না বোকা। আসলে আসিফ ভালোবাসে নুসরাতকে। সিন্থিয়াকে ভালোবাসে টাকার জন্য। ন
নুসরাতের সাথে ক্যাফেতে দেখা হলে নুসরাতও আসিফকে বলে,
“আর কতদিন এভাবে থাকবো? আমরা কি বিয়ে করব না?”
আসিফ এবারও অভয় দেয়,
“করবো করবো। কিছুদিন ওয়েট করো, করবো।”

নুসরাত আসিফকে জড়িয়ে ধরে। আসিফও জড়িয়ে ধরে নুসরাতকে। আসিফ বলে,
“ভালোবাসি খুব। আর কিছুদিন ওয়েট করো।”

আজ বিয়ের চার বছর হয়ে গেলেও সত্য তার মায়ের কাছে ফিরে যায়নি। নুপুর আর সত্যের রোজরোজ কলে কথা হলেও, একটা চাপা কষ্টে নিজেকে আঁকড়ে রেখেছে নুপুর। নুপুর সালমানকে ক্ষমা করতে পারেনি। শুধুমাত্র মেয়ে জামাই এজন্যই আলভিকে মেনে নিয়েছে নুপুর। ঢাকায় সত্য আর আলভিকে আসতে বললে, সত্য আসতে মানা করে দেয়। সত্য এখনও সালমানকে নিজের বাবা বলে মেনে নিতে পারে না। একটা অভিমান আর চাপা কষ্ট, তাকে ভর করে রাখে সবসময়। সালমান অনেক চেষ্টা করেছে নুপুরের অভিমান ভাঙ্গার। নুপুরের সাথে কথা বলার। সুলতানাও চেষ্টা করেছে। তবে কোন লাভ হয়নি। নুপুরের কষ্টের সাগর এতে আরও ফুসকে উঠে। গত শীতে সত্য আর আলভি সিলেট গিয়েছিলো। রুমানা বেগম নিজে চট্টগ্রাম এসে দাওয়াত করেছিলেন তাদের। আলতাফ চৌধুরী আর রুমানা বেগম এখন একা হয়ে গিয়েছেন। রুমানা বেগম নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন। সত্যও এসব মনে ধরে রাখেনি আর। তারা দুজন মিলে সত্যকে ঠিক আগের মতো আগলে নিয়েছে। তবুও আরেকটা ধ্রুব সত্য কথা, নুপুর আজও ক্ষমা করতে পারেনি সালমানকে। আজও না!”

(চলবে)
(চলবে)
লেখা: #মিদহাদ_আহমদ

(চলবে)
(চলবে)
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here