#লেডি_ডন
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৫
–আলিফ সাহেব ভরপুর ছেলে নিয়ে এসেছে।সে বাকিদের অর্ডার করে আকাশকে মারার জন্য।কিন্তু সে পিছনে ফিরে দেখতে পায় তার পিছনে কেউ নাই!সব কয়টা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটির উপরে পড়ে আছে!আর বিশাল একটা হায়েনার দল আলিফ সাহেবের দিকে আক্রমণাত্বক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে!
এটা দেখে তার পায়ের নিচ থেকে যেনো মাটি সরে গেলো!
–এই যে মিস্টার আলিফ,মারবি না আমায়?
খুব তো বড় বড় কথা বলছিলি,যে আমায় মারবি,তোর অনেক পাওয়ার।দেখি এবার দেখা দেখি তোর পাওয়ার!আমিও দেখতে চাই তুই কত বড় খেলোয়ার।
–কে,কে,কে,তুমি?
–আমি তোর বাপ!তুই না আমার মারতে হাজার খানিক ছেলেপেলে নিয়ে এসেছিস?আর তুই না এই শহরের নাম করা নেতা?তো এবার মেরে দেখা!
আকাশের কথা শুনে আলিফ সাহেবের বুক ধরধর করে কাঁপতে শুরু করে!তার উপরে হায়েনা গুলা আলিফ সাহেবের দিকে রক্তচোষার মতন তাকিয়ে আছে!আকাশ একবার বলা মাত্রই আলিফ সাহেবকে যেনো হায়েনা গুলো টুকরো টুকরো করে ফেলবে।
–প্লিজ আমার ভুল হয়ে গেছে!আমায় তুমি ক্ষমা করে দাও!
–তোর কোনো ক্ষমা নাই।ধর নে পিস্তল,পিস্তলটা আলিফ সাহেবের দিকে ছুরে মারলাম।এটা দিয়ে আমায় গুলি করে মেরে ফেল।না হয় তুই আজ এখান থেকে জীবিত যাইতে পারবি না।সম্মান দিতে চেয়েছিলাম অনেক বার,কিন্তু তুই সেটা ঠুকরে দিয়েছিস।এবার তোকে আমার হাতে থেকে কে বাঁচাবে?
মায়া আকাশের দিকে অসহায় ভাবে তাকিয়ে আছে!
চোখের ভাষায় মায়া তার বাবাকে ক্ষমা করে দিতে বলছে!
–এই ছেলে প্লিজ আমার বাবাকে ক্ষমা করে দাও।উনাকে কিছু করিও না।
–কেনো,এখন কেনো?অনেক তো বড় বড় কথা বলেছিলি,যে আমি ছোটলোক,আমায় মেরে কোমায় পাঠিয়ে দিবি,কিন্তু এখন সেসব থার্ডক্লাস মার্কা ধামকি কোথায় গেলো?
–প্লিজ,আমাদের ভুল হয়ে গেছে!এবারের মতন মাফ করে দাও।তুমি কে সেটা আমরা না জেনেই তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করেছি।প্লিজ আকাশ আমাদের মাফ করে দাও!
–মেয়েটার কথা শুনে কেমন যেনো নিজের ভিতরে এক ধরনের খারাপ লাগা কাজ করতে লাগলো!
আচ্ছা যাও ছেড়ে দিলাম তোমার বাবাকে।নেক্সট টাইম পাওয়ারের অপব্যবহার করতে বারন করিও।আর তুমি নিজেও একটু কম করিও পাওয়ারের অপব্যবহার।
–না,আর কোনোদিন পাওয়ারের অপব্যবহার করবো না আমি!
–ওকেহ আমি চললাম।
–বাবা তুমি কে?তোমার পরিচয় টা তো বলে যাও?
–বেশি কিছু বলবো না আমার সম্পর্কে,তবে এটুকু ধরে রাখেন,আমি কোমায় চলে যাওয়া এক হায়েনা।যেদিন আমি নিজের রূপে চলে আসবো,সেদিন না অনেক মানুষের চোখের ঘুম হারাম হয়ে যাবে।সো এবার চললাম।
আকাশ এসব বলে চলে গেলো।হায়েনা গুলোও নিজের মতন চলে গেছে।কিন্তু আলিফ সাহেব এখনো থরথর কাঁপছে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে!
–বাবা তুমি টেনশন করো না।আজকের অপমানের প্রতিশোধ আমি নিবই।সে যে হবে হোক,তবে এটা মাথায় রাখিও,যে তোমার মেয়েও অনেক নাম কামিয়েছে।তোমার মেয়ে এমনি এমনি লেডি ডন হয়নি।
তোমার মেয়ের ও আলাদা একটা শক্তিশালী ফোর্স আছে।এমন হায়েনা তোমার মেয়ের টিমেও আছে।
শুধু সময়ের অপেক্ষা করো,আমি আমার পুরো টিমকে নিয়ে সব কয়টাকে শেষ করবো।
–মা রে,এসব করতে যাস না,আজ যা দেখলাম,তার পরে মনে হয়না তুই তোর পুরো ড্রাগন টিমকে দিয়েও ওর কিছু করতে পারবি।
–বাবা,তুমি ভালো করেই জানো আমার রাগ সম্পর্কে!সে আমায় আর তোমায় অপমান করে গেছে!তার রক্ত না চুষে আমি শান্ত হবো না।
–হয়েছে এখন বাড়ি চল।পরের টা পরে দেখা যাবে।
তারপর তিনারা বাড়ি চলে যায়।
এদিকে পুরো কলেজ যেনো আকাশের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে!কারোর মাথায় এই ঢুকছে না,যে কে এই ছেলে!আর কি তার পরিচয়!যেই ছেলে এই শহরের নাম করা নেতা আলিফ সাহেবের চোখের ঘুম হারাম করে ফেলতে পারে,সবার মাথা যেনো হ্যাং করে আছে!
–এই প্রান্ত চল বাসায়।
–দোস্ত তোকে দেখে আমার সত্যিই ভয় করছে!
কে তুই প্লিজ বলবি?আর তোর এতো পাওয়ার যে তুই আলিফ সাহেবকেও পর্যন্ত ছাড়লি না!প্লিজ বল না কে তুই?
–প্রান্ত,এখনো সময় আসেনি আমার পরিচয় জানার।আমি বললাম তো সময় আসলে তুই নিজেই জেনে যাবি।
–আচ্ছা তা ঠিক আছে,কিন্তু তোর ঐ দানব গুলা আমাদের কিছু করবে না তো আবার?
–তুই কি পাগল নাকি?ওরা তোদের কেন কিছু করতে যাবে?
–নাহ,এমনি বললাম।
–দেখ আমি কখনো খারাপকে সাপোর্ট করি না।সব সময় ভালোর সাপোর্টেই থাকি,সো টেনশন মুক্ত থাক।
তবে যে আমার সাথে আঙ্গুল বাকা করবে,তাকে আমি কবর থেকে তুলে মারবো।সে মরে গেলেও তার লাশকে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করবো।
–ভাইরে ভাই,তুই কোন লেভেলের মাল সেটা আমার অনেকটা বুঝে এসে গেছে!আসলেই মানুষের উপরটা দেখে কখনো বিবেচনা করা যায় না,যে মানুষটা কেমন।
–হুর তোর লেখচার অনেক হয়েছে,এবার ঘরে চল।
তারপর দুজনে ঘরে চলে আসলাম।ঘরে এসে খেয়ে দেয়ে রেস্ট করে বিকালের দিকে প্রান্তকে নিয়ে হাটতে বের হয়েছি।প্রান্ত এমন ভাবে রাস্তার মধ্যে বুক ফুলিয়ে হাটছে,যেনো মনে হয় সে কোনো বড় মাপের কর্মকর্তা।
প্রান্ত কি ব্যাপার,আজ খুব জোশে মনে হচ্ছে?
পিন্টু কিন্তু এখনো তোর উপরে ক্ষেপা।সে যদি তোকে এই অবস্থায় রাস্তার মধ্যে পায়,তাহলে তো তোর বারোটা বাজিয়ে দিবে।
–আরেহ ধুর বেটা,ওসব পিন্টু টিন্টু খাওয়ার সময় নাই আমার এখন।ওসবকে আমি এখন গুনিও না।তখনি
পিন্টু হুট করে কোথা থেকে জানি চলে আসে!
–ঐ যে দেখ পিন্টু,এবার তোকে কিমা বানাবে।
–দোস্ত প্লিজ তুই আমাকে বাঁচা!
–কিরে তোর বীরত্ব এখন কোথায় গেলো?
তুই না বলে কাউকে গুনিস না!
–আরেহ বেটা,সেটা তো তুই সাথে আছিস তাই বলেছি।কিন্তু এখন দেখ তার সাথে কত ছেলেপেলে।সে যদি সত্যিই এসে আমাকে কিমা বানিয়ে দেয়!
–হা,হা,হা,আরেহ পাগলা টেনশন করিস না।আমি আছি তোর সাথে।পিন্টু এসে আমার সাথে দেখা করে।
–ভাই কেমন আছেন?
আপনার শরীর ঠিক আছে তো?
–হা আমি ঠিক আছি।
কিন্তু হটাৎ আমার কাছে কি কারনে?
না প্রান্ততে মারতে এসেছো?
–আরেহ না ভাই কি যে বলেন আপনি!
আমি এসেছি আপনার সাথে দেখা করতে।আর তাছাড়া প্রান্তর গায়ে কোনোদিন ও আমি হাত দিব না।আমার ও জানের ভয় আছে ভাই!আমি এতো সহজে দুনিয়া ছাড়তে চাই না।
–হা তো বলো কেনো দেখা করতে এসেছো?
–ভাই আমি প্রান্তর কাছে মাফ চাইতো এসেছি।
প্রান্ত আমার ভুল হয়ে গেছি।আমি যদি জানতাম তুমি সাথে করে কোনো এক চিতাবাঘ কে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছো,তাহলে কোনোদিন ও তোমায় মারতে আসতাম না।
–হ্যাঁ এখন কেনো?খুব তো দাপট দেখিয়েছিলেন,এখন কই গেলো ঐসব দাপট?
–ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে!আমায় মাফ করে দাও!
–হ্যাঁ মনে রাখিয়েন কিন্তু!এরপর যদি আমার সাথে লাগতে আসেন,তাহলে কিন্তু আকাশ আপনাদের কাউকে ছাড়বে না!
–না ভাই,মরে যাবো তাও ওসব কথা ভাববো না।
আর আকাশ ভাই,আমি প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলেছি আপনি কে!না হয় তো আজ আমি কবরের তলে থাকতাম!ভাই ধন্যবাদ আমায় মাফ করে দেওয়ার জন্য।
–হয়েছে,হয়েছে থাক আর ওসব লাগবে না।শুধু একটাই কথা বলি পাওয়ারে অপব্যবহার করো না কোনো সময়।
–না ভাই আর কোনোদিন ও করবো না।আর ভাই আপনার কোনো সমস্যা হলে আমায় জানাবেন প্লিজ।আপনার জন্য আমার জান ও দিতে রাজি আমি!
–থাক তা আর লাগবে না।তবে যেটা বলেছি,সেটা পালন করিও।এবার চললাম আমি।
প্রান্তকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।দিনটা প্রান্তর বাসার সবার সাথে হাসি খুশিতেই কাটলো।
পরেরদিন সকাল বেলা কলেজে যাওয়ার জন্য প্রান্তর সাথে বের হয়েছি।কলেজের গেইট দিয়ে ঢুকবো,তখনি দেখি কলেজের সিনিয়র ভাইয়া আমায় মাথা নুইয়ে সালাম দিচ্ছে!কি হলো রে প্রান্তর ওদের?
যারা কলেজে দাদা গিড়ি করতো,তারা আজ আমায় সালাম দিচ্ছে?
–তুই কে,আর তোর পাওয়ার কতটুকু সেটা সবাই জেনে গেছে!
–বাহ,পাওয়ার এর এত মূল্য দুনিয়ায়?যে একটু পাওয়ার দেখালেই দুনিয়া তার হাতের মুঠোয়!
–হা রে,এটাই তো দুনিয়ার নিয়ম।
–আচ্ছা চল কলেজের ভিতরে চল।
কলেজের ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে কম হলেও একশো জন সালাম দিয়েছে!কি হচ্ছে টা কি!সবাই এমন কেনো শুরু করলো!আমি তো সম্মান চাইনি।আমি নরমাল ভাবে থাকতে চেয়েছিলাম!কিন্তু সবাই যা শুরু করেছে,কি আর বলবো।
আকাশ তখনো জানে না যে শুধু সম্মান না,এই কলেজের সবার মুখে মুখে তার নাম ছড়িয়ে গেছে!
সবাই এটা মানতে শুরু করে দিয়েছে,যে এই কলেজে কোনো এক চিতাবাঘ হস্তক্ষেপ করেছে!কোনো এক ভয়ংকর বাঘ এই কলেজের সবার সাথে চলাফেরা করছে!
আকাশ ক্লাস রুমে ঢুকতেই সবাই আকাশ মাহমুদ বলে চেঁচিয়ে উঠলো!
–আরেহ বাপরে,কি হলো টা কি!
সবাই আমাকে অবাক করিয়ে দিয়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো।সবাই আমার সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে!পুরো কলেজ যেনো আকাশ মাহমুদ নামে রোল পড়ে গেছে!মেয়ে নাই ছেলে নাই,আমাকে চিনে না এই কলেজে এমন একটা মানুষ ও বাকি নাই!
সবার কাছে যেনো আমার নাম পৌঁছে গেছে।আমিও সবার সাথে মিশে গেলাম।
একটু পর স্যার এসে ক্লাস করাতে শুরু করলো।
আমি বসে বসে স্যারের লেকচার শুনছি,তখনি মায়া ক্লাসে আসে।সে স্যারের অনুমতি না নিয়েই ক্লাসে ঢুকে পড়ে।সবাই তো অবাক!তবে আমি কোনো অবাক হইনি।কারন বড় লোকের দুলালিরা একটু পাওয়ার দেখাবে এটাই স্বাভাবিক!তবে সে তার পরবর্তী কাজে আমায় ও অবাক করিয়ে দেওয়া থেকে বাকি রাখলো না!সে ক্লাস রুমে ঢুকে যা করলো,তাতে তো আমার না শুধু,পুরো ক্লাসের সবার এই হুঁশ উড়ে গেলো!
চলবে…?
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।