টানা ২০মিনিট যাবত আমার ঠোঁটের উপর নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে রাত। এদিকে আমি যে ব্যথায় মরে যাচ্ছি তা দেখার তার কাছে কোনো সময় নেয়। আমার হাত, পা এমন ভাবে ধরে আছে যে আমি নাড়াচড়া পর্যন্ত করতে পারছি না। আর সেখানে তাকে সরানোর তো কোনো প্রশ্নই আসে। আস্তে আস্তে তার অত্যাচার ভালোবাসার পরশে রুপান্তিত হচ্ছে। পরম আবেশে শুষে নিচ্ছে আমার ঠোট।
আস্তে আস্তে হাত বাধন হালকা হয়ে আসছে। যখনি বাধন হালকা হয়ে গেছে আমি জুড়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম তাকে। ধাক্কাটা একটু জুড়েই ছিল বিদায় টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গিয়ে ব্যথা পায়। এদিকে আমি জুড়ে জুড়ে শ্বাস নিচ্ছি। দম যেন বন্ধ হয়ে গেছিল। অক্সিজেনের যেন বিরাট সংকট দেখা দিচ্ছিল। এখন অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।
এদিকে হাপাতে হাপাতে অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে রাত। যেন আমি বিশাল বড় কোনো অন্যায় করে ফেলেছি। যা খুবই গুরুতর অন্যায়।
আমি তারা। তারা মাহমুদ। এইবার অনার্স ১ম বর্ষের ছাএী। আমি ********বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। বাবা মায়ের একমাএ সন্তান। বাবা ব্যবসায়ী। মা সমাজকর্মী। দিনের বেশীর ভাগ সময়ই তারা বাইরে থাকে নানা রকম কাজে। তাই ছোট থেকেই আমি কাজের লোকের হাতেই বড় হয়েছি। মা বাবা কখনো কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখি নি। শুধু আমাকে একটু সময়ই দিতে পারে নি। যা আমার সব থেকে বেশি দরকার ছিল।
এতক্ষণ যে আমার সাথে অসভ্যতামী করছিল সে রাত। রাত আহমেদ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স এর ছাএ এবং ভিপি। সেও তার বাবা মায়ের একমাএ সন্তান। বাবা নামকরা ব্যবসায়ী। দেশের টপ বিজন্যাসম্যানদের একজন। মা গৃহিণী।
কলেজের ভিপি বলে সে নিজেকে দেশের প্রেসিডেন্ট মনে করে। এমন একটা এটিটিউড নিয়ে চলে যেন তার কথাই সব। তার আগে বা পরে কোনো কথা বলা যাবে না। সে তা কিছুতেই মানবে না।
এবার আসি আসল ঘটনায়-
পূর্বের করা কাজের জন্য আজকের এই বেইজ্জতি। রাত আর আমার অনেকটা সাপেনেউলে সম্পর্ক। হয়ত ভাবছেন আমি মাএ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডুকলামি না এখনি কি করে সাপেনেউলে সম্পর্ক হলো? তা স্তে আস্তে জানবেন।
কিছুক্ষণ আগে আমি ক্লাস থেকে বের হয়ে হাটা দিয়েছিলাম বাসার উদ্দেশ্যে। আমাদের নিজেস্ব গাড়ি থাকলেও আমি গাড়ি খুব একটা ব্যবহার করি না। তাই বারান্দা দিয়ে হাটছিলাম। নতুন তাই খুব একটা বন্ধু হয় নি। একজন হয়েছে। সে আজকে আসি নি। তাই একাই যাচ্ছিলাম। তখনি কেউ মুখ চেপে ধরে পেছন থেকে কোলে তুলে একটা ফাকা ক্লাসে নিয়ে আসে। এমন ঘটনায় ভিষণ ভয় পেয়ে যাই। বারবার ছুটাছুটি করতে থাকি। কিন্তু কথায় আছে না ছেলেদের সাথে মেয়েরা পেরব উঠে না। হাতের স্পর্শ পেয়েই বুঝতে পেরেছি যে এইটা কোনো ছেলের হাত।
আমিকে নামিয়ে দিয়ে শক্ত করে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে আমার ঠোঁটে ঠোট বসিয়ে দেয়। ঘটনা এতই তাড়াতাড়ি ঘটেছে যে আম শুধু মানুষটার চেহারাই দেখতে পেয়েছি। কিছু ব্লার সুযোগ পাই নি। পরের টুকু তো আপনারা জানেনই।
এবার আসি আমার আর রাতের সম্পর্ক এর উৎপত্তিতে,
রাতের বাবা আর আমার বাবা এককালে বন্ধু ছিল। হ্যা ছিল এখন আর নেই। এখন তারা শএু। আসলে ব্যবসার শুরুতে তারা ভালো বন্ধু থাকলেও আস্তে আস্তে তাদের বন্ধুত্বের অবনতি ঘটে। কেন তা আমি জানি না। ছোট থাকতে রাত প্রায়ই আমাদের বাসায় আসতো আমরা খেলতাম। কিন্তু আস্তে আস্তে তা বন্ধ হয়ে যায়। তাই প্রায় অনেক বছর তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। তাই প্রথম দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখে আমি চিনতে পারি না। তাছাড়া তখন ছোট ছিলাম এখন অনেকটাই বড় হয়ে গেছি।
সেদিন ছিল ভার্সিটির প্রথম দিন। ঘুম থেকে উঠে খেয়েদেয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম কলেজের উদ্দেশ্যে। যেহেতু গাড়ি আমি নেই না তাই রিকশা দিয়েই গিয়েছিলাম।আগের দিন সব কাজিন ভাই বোনদের আড্ডা ছিল। সেখানে সবাই বলছিল ভার্সিটিতে নাকি র্যাগিং হয়। তাই অনেকটা ভয়েই আছি। আমি একদম ভিতুও নই আবার অনেক সাহসীও নই। হ্যা তবে অতিরিক্ত অন্যায় আমার সহ্য হয় না।
রিকশা থেকে নেমে গেটে ডুকেই চারপাশ দেখতে লাগলাম। সবকিছুই অনেক সুন্দর কিন্তু মেয়েদের ড্রেস আপ গুলো একটু বেশিই আধুনিক। তবে সবাই না। কিন্তু বেশিরভাগই। আমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে হাটা দিলাম ক্লাসের উদ্দেশ্যে। একদিকে দেখলাম অনেক ছেলেমেয়ে জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হয়ত ওখানেই র্যাগ হচ্ছে। আমি শুধু আস্তে আস্তে কেটে পড়ার চিন্তায় আছি। এসব র্যাগ ট্যাগের সামনে পড়তে চাই না।
কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ছেলেদের মধ্যেও কেউ একজন দেখে ফেলল।
একজন- এই যে মিস। কোথায় যাচ্ছো? এইদিকে শুনো।
আমি গুটিগুটি পায়ে সেখানে গেলাম।
একজন- তা তোমাকে তো আগে দেখি নি। ফ্রেসার না?
আমি মাথা উপর নিচ করে হ্যা বললাম।
একজন- তা এখানে যে সিনিয়রা আছে তা দেখতে পাও নি?
আমি আবার মাথা নাড়ালাম।
একজন- তা দেখে চলে যাচ্ছো কেন? ভদ্রতা শেখনি? সালাম নিয়ে যাও লাইনে দাঁড়াও।
আমি সালাম দিয়ে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালাম।
এক এক করে সবার সাথে র্যাগ করা হচ্ছে। কাউকে নাচতে বলছে, কাউকে গাইতে বলছে, আবার কাউকে তাদের হয়ে কাজ করে দিতেও বলছে। ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারছে না। কারণ এদের লিডার হচ্ছে ভিপি সাহেব স্বয়ং নিজে।
আমার দুজন সামনে তখন একটা মেয়ে ছিল। তখন ছিল তার র্যাগের পালা। মেয়েটিকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটি অনেক ভয় পেয়ে আছে। আর সিনিয়রা মেয়েটির মুখ দেখে হাসা হাসি করছে। কারণ তারাও বুঝতে পারছে মেয়েটি অনেক ভীতু।
সিনিয়রদের মধ্যে একজন হুট করেই বলে উঠে মেঘ মেয়েটাকে আমি র্যাগ দিব।
মেঘ- তাই। আচ্ছা ঠিক আছে। তুই দে। এতো করে চাইছিস যখন। তোরও তো একটা হক আছে আকাশ।
আকাশ- হুম। এই যে ফুলটুসি এদিকে আসো।
মেয়েটি ভয়ে ভয়ে গেল।
আকাশ- তোমার নাম?
মেয়েটি- তন্নিমা জান্নাত।(ভয়ে)
আকাশ- আরে ভয় পাচ্ছো কেন? আমি কি তোমাকে খেয়ে ফেলেছি নাকি? কিন্তু তুমি যদি চাও। তো খেতেই পারি।(বলেই ঠোট কামড়ে শয়তানি হাসি দেয়।)
তন্নিমা ভয়ে কেঁদে ই দিয়েছে।
আকাশ- আরে বাবু কান্না করো না। আমি তোমাকে কঠিন কোনো র্যাগ দিব না। সবচেয়ে সহজ র্যাগটাই আমি তোমাকে দিব। আর তোমার র্যাগ হলো তুমি পুরো ভার্সিটির সামনে আমাকে লিপ কিস করবে।
আকাশের কথা শুনে যখন সব স্টুডেন্ট ফ্রিতে রোমান্টিক মুভি দেখতে পাবার আশায় আমাদের ঘিরে জড়ো হয়ে গেল। তন্নিমা তো ভয়ে এবার জুড়েই কেঁদে দিল।
আকাশ- আহা কাঁদো কেন? কাজটা করো আর চলে যাও।(বলেই তন্নিমার চোখের পানি মুছে দিতে মুখে হাত দেয়।)
এতে তন্নিমা ভয়ে আরো পিছিয়ে যায়।
আকাশ- তা বাবু তুমি কি নিজে দিবে নাকি আমার জোর করে নিতে হবে? অবশ্য আমার নিজে নিতে কোনো প্রবলেম নাই। আমি আরো আনন্দের সংগে তা নিব। সো ওয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট বেবি?(শয়তানি হেসে)
তন্নিমা কথা কি বলবে? সে শুধু ফুঁপিয়েই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
আকাশ- ওহ বেবি। বুঝেছি। আমাকেই নিতে হবে। ওকে নো প্রবলেম। (বলেই তন্নিমার দিকে এগুতে থাকে)
আকাশ এগুতে এগুতে তন্নিমার মুখের কাছে চলে যায়। আকাশ দুই হাত দিয়ে তন্নিমার গাল ধরে টেনে উপরে তুলে। তন্নিমা কান্না করতে করতে বারবার কেপে উঠছে।
তন্নিমা- ননা না প্লিক আমাকে ছেড়ে দিন বলছে।
উৎসুক জনতার কেউ এগিয়ে আসছে না তন্নিমাকে সাহায্য করতে। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে। আকাশ এগুচ্ছে তন্নিমার ঠোটের দিকে।
যেই আকাশ তন্নিমার ঠোঁটে ঠোট বসাবে তখনি ঠাসস ঠাসসস
চলবে?
#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#সূচনা_পর্ব