এক জীবনে অনেক জীবন পর্ব ৯

#এক_জীবনে_অনেক_জীবন(৯)
********************************

তাবাসসুম ফ্যামিলি নিয়ে ছেলের কাছে যাচ্ছেন বেশ কিছুদিনের জন্য তাই দুই বোনের পরিবারকে দাওয়াত দিয়েছেন । রোজা এসেছে স্বামী আর শ্বশুর-শাশুড়িকে সাথে নিয়ে । অনেকদিন পর বাড়িটা লোকজনে একেবারে গমগম করছে । এই উপলক্ষ্যে তাঁরা তিনবোন অনেকদিন পর একত্রিত হয়েছেন । বড়বোন ইয়াসমিন তাঁর মেয়ে জাফরিনকে নিয়ে কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে আছেন । মেয়ে কেন সরকারি কোথাও চান্স পেল না এই নিয়ে তাঁর আক্ষেপের শেষ নেই । দুই বোনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন –

এইসব আর ভালো লাগে না বুঝলি । সংসার মানেই এখন টাকার খেলা । এইটার কোনো মানে হয় ! আমরা লেখাপড়া করলাম দশ টাকা, বিশ টাকা বেতনে । আব্বা আম্মার কপালে কোনোদিন দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েনি আমাদের জন্য । আব্বার চাকরির অল্প বেতনের টাকায় আম্মা কতো সুন্দর করে আমাদের সংসারটা চালিয়ে নিয়েছেন আর এখন দেখছিস অবস্থাটা ? বাচ্চাকাচ্চা পড়াতে না-কি দশ-বিশ লাখ টাকা লাগে !

তাবাসসুম বললেন –

কী করবো আপা বলো , যখন যেমন তখন তেমন । আমার তো রোজা আর শাফিন দু’জনেই সরকারিতে চান্স পেয়ে যাওয়াতে আমি তখন খরচটা বুঝিনি ।

হুম তোর তো ভাগ্য ভালো, বাচ্চারা লেখাপড়া শেষ করে বেরিয়ে গেল আর তুই টেরই পেলি না ।

কোথায় টের পেলাম না ? জারা’র বেলায় এসে না হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি । কায়সারের এতো টাকা বেতন, আমার দোকান থেকেও বেশ কিছু আসে মাসে তবুও যেন হিমশিম খেয়ে যাই মাঝে মাঝে । আয় যতো বাড়ে, খরচও সেই অনুপাতে বাড়তেই থাকে আপা ।

মেয়েটাকে এতো করে বললাম ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটু ভালো করে পড় কিন্তু কিসের কী ? সারদিন ফেসবুক, ইউটিউব এইসব নিয়েই পড়ে থেকেছে । এখন যত জ্বালা হয়েছে আমার ।

আহা আপা এমন করছো কেন ? সবাই কী আর সরকারিতে চান্স পায় আর সরকারিতে চান্স পেলেও পছন্দমতো জায়গায়, পছন্দমতো সাবজেক্টে সবাই কী পড়তে পারে বলো ? তুমি এতো টেনশন করছো কেন তা-ই তো আমি বুঝতে পারছি না । তোমার আর খরচ কী ? তাসকিনের লেখাপড়া শেষ, ভালো চাকরি পেয়েছে ছেলেটা । তোমার হাতে টাকা তুলে দিচ্ছে, এটা কতো আনন্দের বিষয় আপা । জাফরিন কেন চান্স পেল না সেটা নিয়ে এখন হিসাব কষে লাভ নেই । এখন ওকে চেষ্টা করতে বলো যেন ভালো কোনো সাবজেক্টে ভর্তি হতে পারে ।

হুম বললি একটা কথা, ছেলের টাকা ! ছেলের টাকা আর কয়দিন আছে ভাগ্যে কে জানে ? বিয়ে করে বউ আনলেই ছেলের টাকা তখন আর চোখেও দেখবো না ।

এভাবে কেন ভাবছো বলো তো আপা ? সবসময় নেগেটিভ কিছু কী তোমার মাথায় ঘুরতেই থাকে ?

এমনই হবে রে এমনই হবে । আজকাল তো সব এমন ঘটনা ই ঘটতে দেখছি চোখের সামনে ।

আচ্ছা ঘটলে ঘটুক । তোমার ওসব নিয়ে টেনশনের দরকার নেই । তোমার তো আর তাসকিনের টাকার ওপর নির্ভর করে চলতে হবে না, তাই না ? তোমাদের যা আছে তা দিয়েই জাফরিনের পড়ার খরচ দিব্যি চলে যাবে । টাকাপয়সা আছে তো খরচ করার জন্যেই । তুমি আবার কিপ্টেমি করে ওকে যা-তা একটা কোনো ভার্সিটিতে ভর্তি করে দিও না আপা ।

ইয়াসমিন ছোটবোন নিলুফারের দিকে তাকিয়ে বললেন –

তুইই ভালো আছিস রে সবার চেয়ে । তোর ছেলেমেয়ে তোর কষ্টটা বুঝতে পারে । সানজিদা কী সুন্দর ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে গেল ।

হুম আপা , আল্লাহর রহমত বলো । আমি কী এদের পড়াতে পরতাম এতো টাকাপয়সা দিয়ে ?

সাদাতের চাকরি কেমন চলছে ? বেতন কেমন ?

আছে আপা মোটামুটি । মাত্রই তো শুরু করলো, ধীরে ধীরে ভালো হবে ।

তাবাসসুম বললেন –

সাদাতের কাজের প্রতি আগ্রহ আছে । কায়সার সেদিন বলছিল ওর কথা । যে কোনো বিষয় সহজে ধরে ফেলতে পারে । কাজ করতে থাকুক এখানে , দেখো আপা ও ধীরে ধীরে অনেক সামনে এগিয়ে যাবে ।

দোয়া করিস তোরা ।

বোনদের কথার মধ্যে রোজার শাশুড়ি রুমে এসে ঢুকলেন । সবাই একটু আয়েশি ভঙ্গিতে শুয়ে-বসে গল্প করছিল । রোজার শাশুড়ি রুমে আসাতে সবাই নড়েচড়ে বসলেন । তাবাসসুম বললেন –

আসেন আপা বসেন ।

রোজার শাশুড়ি সোফায় বসতে বসতে বললেন –

আপনাদের কতো মজা, সব বোন এক জায়গাতেই থাকেন । কী সুন্দর একত্রে বসে আড্ডা দিচ্ছেন আর আমাদের অবস্থা দেখেন, চার ভাইবোন আমরা অথচ আমি একা আছি দেশে । বাকিরা তিনজন তিন দেশে ।

আমাদেরও কোথায় সবসময় দেখা হয় আপা ? আজ বোধহয় ছয় মাসেরও বেশি হবে তিন বোন একসাথে হলাম । এটা ওটা ঝামেলা লেগেই থাকে ।

তারপরেও তো ইচ্ছে করলেই একজন আরেকজনের কাছে ছুটে আসতে পারেন কিন্তু আমাদের তো সেই উপায় নেই । মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয়, মন খারাপ হয় ভিষণ ।

সেটা তো আছেই আপা । এই যে শাফিন আমাদের থেকে দূরে আছে, এই দূরে যাওয়া তো তার ভালোর জন্যই কিন্তু আমার যেন দিনগুলো আর কাটতে চায় না । শুধু দিন গুনছি কবে ছেলে ফিরে আসবে । এমনও তো হতে পারে, পড়া শেষ হলে ওর আরো ভালো কোথাও ঢোকার সুযোগ হয়ে গেল । তখন তো আমিই বলবো যে, দেশে আসতে হবে না, ওখানেই থাকো । এভাবেই প্রিয় মানুষেরা দূরে চলে যায় আপা ।

এখন তো আপনার খুশির দিন আসছে, ছেলের কাছে যাচ্ছেন ।

হুম খুশি তো লাগছেই, কখন যে ওর কাছে পৌঁছাবো সেই অপেক্ষাতেই আছি ।

আচ্ছা আপা জারার লেখাপড়া শেষ হতে আর কতোদিন বাকি ?

আর এক বছরের মতো বাকি আছে ওর । আমরা তো চাচ্ছি ও শাফিনের ওখানে চলে যাক কিন্তু মেয়ে তো যেতে চায় না ।

বিয়ে দেবেন না-কি এরমধ্যে ? ইচ্ছা আছে ?

একটু থতমত খেয়ে গেলেন তাবাসসুম । বললেন –

কার জারা’র ?

জ্বি জারা’র কথাই বলছি ।

এখনো তো এমন কিছু ভাবিনি আপা । পড়ালেখাটা শেষ করুক আগে আর ওর আচার-আচরণ তো এখনো বাচ্চাদের মতোই রয়ে গেছে । বিয়ের কথা শুনলেই কান্নাকাটি করে । আচ্ছা হঠাৎ বিয়ের কথা কেন জিজ্ঞেস করলেন আপা ?

আমার ছোট ননদ আছে না, ঐ যে রাজিয়া, আপনাদের এখানে এসেছিল তো আমার সাথে । মনে আছে আপনার ?

জ্বি মনে আছে ওনার কথা ।

হ্যাঁ ওর ছেলের জন্যই মেয়ে খুঁজছে । ছেলেটা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল থেকে পাশ করেছে । ঢাকাতেই চাকরি হয়ে গেছে । আপনার মেয়ে দু’টো তো মাশাআল্লাহ অনেক নম্র ভদ্র । রোজাকে দেখে রাজিয়ার আরো বেশি ইচ্ছা জারাকে ছেলের বউ করার । কিছু মনে কোরেন না আপা, আমি সরাসরি বলে ফেললাম কথাটা ।

না না মনে করবো কেন? মেয়ে বড় হলে তো বিয়ের প্রস্তাব আসেই । আরো দু’একজন প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন ।

যদি বিয়ের চিন্তা করেন তাহলে আমার কথাটা একবার ভেবে দেখবেন আপা । ছেলে খুব ভালো , সেটা নিয়ে কোনো টেনশন নেই । আপনারা ছেলের সাথে কথা বললেই বুঝতে পারবেন ।

ঠিক আছে আপা । এরকম কিছু চিন্তা করলে আমি আপনাকেই আগে জানাবো ।

জ্বি আপা ঠিক আছে । বিয়ের কথা বললেই তো আর বিয়ে হয়ে যায় না । ভাগ্য বলেও তো একটা ব্যাপার আছে ।

জ্বি তা তো অবশ্যই ।

ইয়াসমিন এতক্ষণ চুপ করে কথা শুনছিলেন । হঠাৎ যেন কিছু একটা মনে পড়ে গেল তাঁর । বললেন –

আচ্ছা তাবাসসুম তুই যে বলেছিলি জারা’র কী যেন একটা ঝামেলা………

রোজার শাশুড়ি আর নিলুফার দুজনেই তাকালেন তাবাসসুমের দিকে উত্তর শোনার জন্য ।

তাবাসসুম বুঝলেন বোন কোনদিকে ইঙ্গিত করছেন । বড় আপাটার বুদ্ধিশুদ্ধি এই জীবনে আর হবে না । তিনি তাড়াতাড়ি কথা ঘুরিয়ে বললেন –

আপা ঐটা তো ওর সেমিস্টারের সমস্যা ছিল । ওর ক্রেডিট নিয়ে কী সব যেন…… বাদ দাও, ওটা তো তখনই মিটে গেছে ।

বোনের তাকানো দেখে ইয়াসমিন বুঝলেন ভুল সময়ে ভুল কথা তুলেছেন তিনি । তাই তাড়াতাড়ি উনিও নিজেকে সামলে নিলেন ।

বিয়ের প্রসঙ্গ পাল্টে অন্য কথায় চলে গেলেন তাবাসসুম ।

শেষ পর্যন্ত জারাকে নিষেধ করার পরেও জারা তার বাবা-মা’র সাথে বেড়াতে চলে যাওয়ায় আদিত্য একটু রাগ করেছিল জারা’র ওপর । যাওয়ার আগের দুদিন জারা অনেকবার ফোন করেছে কিন্তু সে জারা’র ফোন রিসিভ করেনি । তবে ম্যাসেঞ্জারে ছোট ছোট করে বিরহের কোটেশন বাক্য সেন্ড করেছে জারাকে । সে বেশ বুঝতে পারছিল যে জারাও খুব উতলা হয়ে আছে কথা বলার জন্য । সে তো এটাই চাইছিল, শেষ পর্যন্ত জারা যেন যাওয়াটা বন্ধ করে দেয় । তার কেবলই মনে হচ্ছে বাইরে গেলেই জারা’র বাবা-মা ওর বিয়ে দিয়ে দেবে । জারাকে সে আর পাবে না । অনেকভাবে চেষ্টার পরেও যখন জারা চলে গেল, আদিত্য মন খারাপ থেকেই হোক অথবা বিষাদ , কথা বলা একদম কমিয়ে দিলো সবার সাথে । কোনো কাজ করতেই ভালো লাগে না তার । অবশ্য জারা পৌঁছানোর পর বারবার করে সরি বলার পর তার মনটা একটু হালকা হয়েছে ।

.
.

আওলাদ হোসেন কয়দিন ধরে লক্ষ্য করছেন রফিক তাঁকে দেখলেই পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায় । তিনি যখনই চিন্তা করেন ছেলের সাথে চাকরি নিয়ে কথা বলবেন তখনই সে গায়েব । হয় ছাদে গেছে, নয়তো বথরুমে আবার পালানোর মতো সময় না থাকলে ঘুমের ভান করে পড়ে থাকে বিছানায় । রাতে খেতে বসলেও রফিককে পান না । আগে আগে খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ে সে অথচ অনেক রাতেও রফিকের রুমে আলো জ্বলতে দেখেন তিনি । ছেলেটার ওপর দিনদিন রাগ বাড়ছেই তাঁর । এর ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি খুব টেনশনে থাকেন সবসময় । এভাবে শুয়ে-বসে থাকলে ওর জীবনটা চলবে কী করে ?

আজ যখন বাজার করে বাসায় এসে ঢুকলেন, রফিকই দরজা খুলে দিলো । বাজারের ব্যাগটা রান্নাঘরে রেখে হাতমুখ ধুতে এসে দেখলেন রফিক খেতে বসেছে । দুপুর বারোটায় তার সকালের নাস্তা খাওয়ার সময় হয়েছে ! তিনি জিজ্ঞেস করলেন –

তোর মা কোথায় ?

মা তো নিচে গেল । ভাড়াটের বাসায় গেছে মনে হয় ।

তুই এখন ঘুম থেকে উঠলি ?

রফিক কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেতে লাগলো ।

তোর মা যে বারবার করে বললো অফিসটায় যেয়ে স্যারের সাথে দেখা করার জন্য, দেখা করতে যাবি না তুই ? সমস্যা কী তোর ?

কোনো সমস্যা নেই আব্বা ।

তাহলে যাচ্ছিস না কেন ?

সে কোনো কথা না বলে রুটি ছিঁড়ে মুখে পুরছে ।

কী হলো কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোকে । উত্তর দে ।

আমি চাকরি করবো না ।

চাকরি করবি না ? যেন মনে হচ্ছে তুই গেলেই চাকরিটা তোর হয়ে যাবে । আরে একটা চাকরি পাওয়া এই দেশে কতো কষ্টের সেটা তুই বুঝিস ? চাকরি করবি না তো কী করবি ? তোর বাপের রাজার ভান্ডার আছে যে বসে বসে খাবি ?

ছেলেকে তেমনই নিরুত্তর থাকতে দেখে আওলাদ হোসেনের রাগ হলো ভিষণ কিন্তু রাগটাকে তিনি প্রকাশ করলেন না । ভালোভাবে কথা বলে কোনোভাবে যদি চাকরিটায় ঢোকানো যায় সেই চেষ্টায় তিনি বললেন –

তুই অফিসটায় যা । আমি আজকে স্যারের সাথে কথা বলে সময় চেয়ে নেবো । বারবার এমন সুযোগ আসে না । তুই তোর বন্ধুদেরই দেখ না, কেউ এভাবে বসে আছে তোর মতো ? সবাই যার যার মতো করে সামনে এগোনোর চেষ্টা করে যাচ্ছে । তুই তোর মা’র কাছে না-কি বলেছিস ব্যবসা করবি । ব্যবসা করার মতো অবস্থা কী আমাদের আছে না ব্যবসা আমরা বুঝি বল তো বাবা ?

ঘরে ঢুকে স্বামী আর ছেলেকে কথা শুনে সুফিয়া বললেন –

বাজার এনেছো ?

হুম । কোথায় গিয়েছিলে তুমি ?

নিচতলায় গিয়েছিলাম । তুমি কী রাস্তার ধারের রুমটা খালি করে দিতে বলেছো ওদের ?

হ্যাঁ ।

কেন, রুম খালি করিয়ে কী করবে তুমি ? এক রুম আবার কার কাছে ভাড়া দেবে ?

কারো কাছে ভাড়া দেবো না ।

তাহলে ?

ওটা ভেঙে দোকান করবো ।

দোকান, কিসের দোকান ?

আমি তো আর এখন কোথাও চাকরি পাবো না সুফিয়া । ঘরেই তো বসে থাকি সবসময় । শুধু শুধু বসে না থেকে কিছু একটা শুরু করি । সংসারে খরচ তো আর কমে না, দিন দিন বাড়ছেই ।

দোকান দিতে টাকা কোথায় পাবে বলো তো ?

সঞ্চয়পত্রগুলো বিক্রি করে দেবো ।

ঐ কয় টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে কী হবে ?

যতটুকু হবে ততটুকু দিয়েই শুরু করি । একটা না একটা ব্যবস্হা হবেই ।

রফিক জিজ্ঞেস করলো –

কিসের দোকান দেবেন আব্বা ?

মুদির দোকান করবো ।

মুদির দোকান ! আব্বা আপনি এখন ডিম আর আলু বেচবেন বসে বসে ?

দোকান দিয়ে বসলে তো বিক্রি করতেই হবে ।

কী দরকার আব্বা এইসব ছোটখাটো কাজ করার ?

ছোটখাটো কাজ ? আমার বাড়িতে আমি দোকান দিয়ে কাজ শুরু করবো এতে ছোট-বড়র কথা আসছে কেন ? সংসারটা কী করে চলছে কোনো খোঁজ রাখিস তুই ? তিনবেলা যে টেবিলে সময়মতো খাবার পাচ্ছিস কয়দিন পরে এটাও বন্ধ হয়ে যাবে যদি এই অল্প টাকা বাড়িভাড়ার পাশাপাশি অন্য কিছু শুরু না করি । খরচ প্রতিদিন বাড়ছেই ।

অন্য কিছু করা যায় না আব্বা ?

অন্য কিছু মানে ?

না মানে এই যে আপনি এখন দোকানদারি করবেন, এলাকার লোকজন তো আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করবে ।

লোকজনের হাসাহাসিতে আমার কী যায় আসে আর লোকজন হাসাহাসি করবেই বা কেন ? আমি তো চুরিচামারি করতে যাচ্ছি না ।

তারপরেও আব্বা জিনিসটা কেমন দেখায় ।

বেশি কথা বলিস না, সারাদিন চোখের সামনে মোবাইল ধরে স্বপ্ন দেখা বাদ দে । স্যারের সাথে কথা বলে রাখছি । স্যার সময় দিলে কাগজপত্র নিয়ে যেয়ে দেখা করবি ।

আব্বার ওপর ভিষণ রাগ হচ্ছে রফিকের । বুড়ো বয়সে যত সব ভীমরতিতে পেয়ে বসছে আব্বাকে । কী দরকার এরকম টং মার্কা দোকান দিয়ে লোক হাসানোর ?

আওলাদ হোসেন ওনার বসকে তখনই ফোন করে কথা বললেন । কথা বলা শেষ করে ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন –

স্যার এই শেষবারের মতো সময় দিলেন আমাকে । আজকে একটু রাগ হয়েই কথা বললেন । তা তো বলবেনই । আরো দুইবার তোর জন্য বলে রাখলাম অথচ একবারও গেলি না । পরশু সকালে যেতে বলেছে । মনে থাকে যেন এবার । আচ্ছা আমিও যাবো তোর সাথে । তোর ওপর ভরসা করে লাভ নেই ।

রফিকের কোনো ইচ্ছে নেই আব্বার বসের সাথে যেয়ে দেখা করার । একবার ইচ্ছে করলো আব্বার কাছে সঞ্চয়পত্রের টাকাগুলো চেয়ে নেয় । তানভির একটা ব্যবসার কথা বলছিল । ঐ টাকাগুলো পেলে অন্তত শুরু করতে পারতো । আব্বার মেজাজ এখন যা গরম হয়ে আছে, কথাটা তুলতে সাহস হলো না তার । সময় করে মা’কে ধরে টাকাটার কথা বলতে হবে । বসে বসে আলু পেঁয়াজ বেচার চেয়ে ঢের ভালো তানভিরের সাথে ব্যবসা শুরু করা । ………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here