#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ১০
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।সবাই পাশে থাকবেন।
২৬
ডাইনিং টেবিলের ওপর ভাতের গামলা টা এনে রাখলো ইলা।ধোয়া উঠছে ভাত থেকে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে সদ্য রান্না করা।ভাতের মধ্যে একটু ভেজা ভেজা ভাব।তাড়াহুড়ো তে দম বসেনি হয়তো।
সামনের চেয়ারে বসে আছে মাহির।দৃষ্টি আপাতত টেবিলের দিকেই।একটা সসপেনে গরম মুগডাল,পাশে একটা প্লেটে ইলা সিদ্ধ করা আলু বের করে রেখেছে।প্লেটের কোনে একটা মাঝারি আকারের পেয়াজ গোল করে কুচি করে কাটা।তার সাথে দু তিনটা ভাজা শুকনো মরিচ।
-আপনাকে বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম পানিজল।
মাহিরের কথা শুনে ইলা মাহিরের দিকে তাকালো।
-কষ্ট নয়।একটা তৃপ্তি দিলেন।জানেন বাড়িতে মা বোনকে রেঁধে দিয়েছি।রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে রান্নাঘরে গেছি রান্না করতে।মায়ের কষ্ট হবে বলে মায়ের আগে উঠেছি।তারপর বোনের মেয়েটাকে তুলে খাইয়ে দিয়ে সবাই কে খাইয়ে নিজে খেতে বসেছি।কলেজ গেছি।দুপুর বেলা ফিরে খুব দ্রুত দু বেলার রান্না করেছি।কিন্তু কেউ কখনো এতোটা বিনয়ের সাথে আমার কাছে খেতে চায়নি।না বলেছে রান্না টা কেমন হয়েছে।
কথার মাঝেই ইলার চোখের কোনে পানি চলে আসলো।মাহির দেখে ফেলার আগেই ইলা মুছে নিল।
-আপনি কাদবেন না পানিজল।
-আমি তাড়াহুড়ো করে বেশি কিছু রাঁধতে পারিনি।অনেক রাত হয়েছে তো।তাই।
-এতেই হবে।
-মুগডাল তো বাদ দিলাম।আলু ভর্তা মুখে রুচবে তো?
-আমি মানুষ আপনিও মানুষ।আপনার যদি রুচে তবে আমাতে দোষ কোথায়?
-এটা গরীবের খাবার।
-দ্বিতীয় বার এ কথা আমার সামনে বলবেন না।
-ঝাল কেমন খান?
-মানে?
-ভর্তা করতে হবে তো।তাই বলছি।কম না বেশি?
-আপনি কেমন খান?
-প্রচন্ড বেশি।
-তবে সেই প্রচন্ড বেশিটাই দিন।
-আপনি খেতে পারবেন তো?
-শিখে নেব।খিদে পেয়েছে খুব।তাড়াতাড়ি করুন।
-জি।
ইলা আরো দুটো ভাজা শুকনো মরিচ নিল।তারপর লবন পেয়াজ দিয়ে কচলে কচলে সরিষার তেল দিয়ে ভর্তা করে ফেললো।মাহির ততক্ষণে দু জনের প্লেটে ভাত নিয়ে রেখেছে।
-নিন হয়ে গেছে।
-আপনি ও বসুন।
-জি।
ইলা মাহিরের থেকে এক চেয়ার দূরত্ব রেখে বসলো।একটা পুরুষের সামনে তার পাশে বসে এই প্রথম খাওয়া।বেশ লজ্জা লাগছে ইলার।তারপর আবার এই প্রথম সে কোনো পুরুষের জন্য রান্না করেছে।বিষয়টা কতোটা লজ্জাজনক হতে পারে সেটা ইলার চোখমুখ দেখে বুঝে যাচ্ছে মাহির।মাহিরের তিন লোকমা ভাত খাওয়ার মাঝে ইলার মুখে সেই এক লোকমা ভাত ই আটকে আছে।
-পানি জল।
-হুম।
-অনেক ভালো রেধেছেন আপনি।এতোটা তৃপ্তি করে অনেক দিন খাইনি।বলতে গেলে কেউ খাওয়ায়নি।
-ওহ।
-আপনি খাচ্ছেন না কেন?
-খাচ্ছি তো।আপনি ভর্তা নিয়েছেন?
-না।নেব।ডালটা দেখে বেশি লোভ লেগেছে।তাই এটাই আগে শুরু করলাম।
-ওহ।
মাহির একটু আলু ভর্তা ভাতের সাথে মেখে নিল।মুখে দিতেই আহ,,,শব্দ করে উঠলো মাহির।
-কি হয়েছে?
ইলা মাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখে মাহিরের ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে গেছে।চোখের কোন গুলো ও তাই।নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জন্মেছে।মাহির ঝালে শিসাচ্ছে।ইলা তাড়াতাড়ি উঠে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে মাহিরের সামনে দিল।মাহির সাথে সাথেই গ্লাস টা ধরে ঢকঢক করে পুরো পানিটা শেষ করে ফেললো।
-আমি বলেছিলাম আপনাকে।
মাহির হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
-আজ তো প্রথম ছিল।আসতে আসতে অভ্যাস করে নেব।
-এতো অভ্যাস করার কি আছে?আপনি যেটা পছন্দ করেন না সেটা খাবেন না।
-উহুম।পয়সার দুটো পার্ট কখনো একি হয় না।কিন্তু একটা পয়সার ই এপিট ওপিঠ হয়ে তাদের থাকতে হয়।সামঞ্জস্য করে চলাই বাঞ্ছনীয়।এতে সুখ আসে,সুখ আছে,সুখ থাকে।বিরোধ সেচ্ছাচারিতা শুধু অশান্তি আর বিচ্ছেদ ই টেনে আনে।অন্য কিছু নয়।
মাহির নিজের কথা শেষ করে খাওয়ায় মনোযোগ দিল।ইলা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে।
কি বোঝাতে চাইল মাহির?কেন এতো রহস্যময় এই মানুষটা?কেন বুঝতে পারি না সে কি চায়?সে কি আদৌ সামান্য তে সীমাবদ্ধ নাকি সবকিছুই ঝড়ের পূর্বাভাস?সে কি বিচলিত করে দেবে আমাকে?নাকি নতুন আরেক বিপদ এলো আমার জীবনে।
প্রশ্ন গুলো বড্ড জটিল।তেমন ঘোলাটে।ইলা প্রশ্নের উওর খুঁজে পাচ্ছে না।
ইলার আবার মনে হচ্ছে সেই একটি কথা,
“বিপদ আমার বর,তার সাথে আমি করি ঘর।সে যে শুধু আসে আর আসে পিছু ছাড়ে না।এতো ভালোবাসা কই রাখব আমি?”
২৭
গভীর রাত।
ইবাদতের সবচেয়ে উওম সময়।গভীর রাতের ইবাদত আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও গ্রহনীয়।গভীর রাতের অন্যতম ইবাদত তাহাজ্জুদের নামাজ।আল্লাহর দরবারে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে কেউ মন থেকে নেক কিছু চাইলে আল্লাহ কখনো তাকে ফেরান না।
নামাজের পাটিতে সিজদাহ রত অবস্থায় আছেন ইসমাত বেগম।সিজদাহ তে তিনি একদম লুটিয়ে পড়েছেন চোখের পানিতে।
নামাজ শেষ করে নামাজের পাটিতে বসে আছেন ইসমাত বেগম।
-হে আল্লাহ!আমার জীবনটা কেন এমন হলো?যাকে চাইলাম তাকে পেলাম না।যাকে পেলাম তাকে ঠিকমতো মানুষ করতে পারলাম না।
নিজের কাছে আজ বড্ড অনুতপ্ত ইসমাত বেগম।এক লড়াই শেষ করে তিনি আরেক লড়াই শুরু করেছিলেন।কিন্তু এখানেও তিনি ব্যর্থ।
-নিবিড়কে বড় করেছি ঠিকই কিন্তু মানুষ করতে পারিনি।রক্ত যে বড্ড খারাপ জিনিস।ইদরিস ভাইয়ের রক্তের ধারা ঠিক পেয়ে গেছে ও।দুঃখ হয় অনুটাকে নিয়ে।ওর কপাল টাও কি আমার মত পুড়বে?
২৮
ঘরের জানালার কাছে দাড়িয়ে আছে ইলা।এতো বড় ঘরে আগে কখনো থাকে নি সে।স্বচ্ছ গ্লাসের জানালা দিয়ে বাইরের সবকিছু দেখা যাচ্ছে।ল্যাম্পপোস্টের আলোতে একটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করছে সেটাও দেখা যাচ্ছে।কিন্তু গ্লাসের ভেতর দিয়ে শব্দ আসছে না।
-পানি জল।
ইলা যেন এবার কেঁপে উঠলো।খাওয়া শেষ করে সে উপরে চলে এসেছিল।মাহির তাকে আর কিছু করতে দেয়নি।এমনকি থালা বাসন গুলো ও মাহির নিজ হাতে পরিষ্কার করেছে।
মাহিরের এক কথা,”যে কাজ দু হাতে করলে কষ্ট হয়,সে কাজে আরো দুটো হাত লাগলে কষ্ট টা মালুম হয় না।উল্টে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়”।
এই কথা বলেই মাহির ইলাকে পাঠিয়ে দিয়েছিল উপরে।ইলার মনে তো ভয় থেকেই গিয়েছিল তৃষ্ণা যখন সে মেটাবে তবে এটা যে তার হিংস্রতার আগের পরিচয়।সে শুধু পরিবেশ টাকে ও শান্ত করে ছিল এই আরকি।
কাঁপা কাঁপা শরীরে ইলা পেছনে ঘুরলো।মাহিরের হাতে দুটো কফির মগ।ধোয়া উঠছে।ইলার দিকে তাকিয়ে মাহির মুচকি হাসি দিল।
-এদিকে আসুন পানি জল।
মাহিরের কথা শুনে ইলাও গুটি গুটি পায়ে মাহিরের দিকে এগিয়ে গেল।মাহির ইলার দিকে একটা কফির কাপ বাড়িয়ে দিতে ইলাও সেটা হাতে নিল।
-আমার ঘুমাবার আগে কফি খাওয়ার অভ্যাস।তাই আপনার জন্য ও নিয়ে এলাম।
-ধন্যবাদ।পানি জল ডাকটা বন্ধ করতে পারবেন?
-কেন?
-ভালো লাগে না।শুনতে কেমন লাগে।
-না লাগলে কিছু করার নেই।আমি এটাই ডাকব।যেটিতে আমি নিজের ভালোবাসা খুঁজে পাই সেটাই ডাকব আমি।
-ওহ।
-কফি শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ুন।
ঘুমানোর কথা শুনে ইলা অবাক চোখে মাহিরের দিকে তাকালো।তবে কি মাহির আজ তার সাথে কিছু করবে না?নাকি আজকের জন্য সে ছাড় পেল।
মাহির মুচকি হেসে উল্টো দিকে ঘুরে দরজার দিকে চলে গেল।
-“তৃষ্ণা কি শুধু খোরাকেই সীমাবদ্ধ?
তৃষ্ণা কি অন্য কিছু তে আবদ্ধ হতে পারে না?
চোখে দেখা আর ধারণা দুটোই এক নয়।
পর্দার এপারের দৃশ্য সবাই দেখে,পর্দার ওপারে ও কিন্তু কিছু থাকে পানিজল।”
মাহিরের কথা শুনে ইলা বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।ভয়ার্ত দৃষ্টিতে মাহিরের দিকে তাকালো।
-শুভ রাত্রি।
“””পাঠক “আবেদিতা” আসছে।আমি আপনাদের সাপোর্ট পাব তো?”””””
চলবে————–
নাইস নেক্সট না বলে আজ একটু অন্য কিছু কমেন্টস করবেন।