রৌদ্র কুয়াশা পর্ব ১১+১২

#রৌদ্র_কুয়াশা
Suvhan Årag(ছদ্মনাম)
পর্ব ১১

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।সবাই পাশে থাকবেন।

মাহির দরজাটা বাইরে থেকে চেপে দিয়ে চলে গেল।ইলা এখনো নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।তবে কি মাহিরকে সে ভুল ভেবেছিল? ইশ!একটা মানুষ কে নিয়ে কতো বাজে চিন্তা করে ফেলেছিল সে।ভাবতেই লজ্জা লাগছে ইলার।

-কিন্তু উনি কেন আমাকে আনলেন?আর উনি জানলেন কি করে যে আমি নদীর ঘাটে ছিলাম।বুঝি না।বড্ড অদ্ভুত লোকটা।

ইলা দরজা টা ভেতর থেকে লক করে বাতি নিভিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।সারাদিন আজ যথেষ্ট খাটুনি গেছে তার।শুয়ে পড়তেই চোখটা যেন সাথে সাথে লেগে গেল।তলিয়ে গেল ইলা ঘুমের দেশে।

২৯

-স্যার যা হয়েছে হয় তো ভালোই হয়েছে।

-হ্যাঁ নীল।আল্লাহ যা কিছু করেন ভালোর জন্য করেন।

-সেটাই।স্যার মাইশা ম্যামের কি খবর জানেন কিছু?

-উহুম।জানিনা।জানার প্রয়োজন মনে করিনা।আর কাকে ম্যাম বলছো তুমি?

-কেন স্যার?

-তুমি কি ভুলে যাচ্ছো নীল আমি একটা ধ্বংসস্তুপ কে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে চাইছি।

-না স্যার ভুলিনি।

-তাহলে?কেন ঐ নাম নেও বারবার?

-সরি স্যার।

-আর ও তোমার ম্যাডাম নয়।ইলাকে ম্যাডাম বলতে শেখো।

-স্যার ইলা ম্যাম কি রাজি হয়েছে?

-এখনো হয়নি।আশা করি না হওয়ার কিছু থাকবে না।

-উনি যেন মন থেকে আপনাকে মেনে নেন।এটাই মনে প্রাণে চাই আমি।

-বড্ড ক্লান্ত আমি নীল।জীবন যুদ্ধে আর কতো লড়ব বলো।আচ্ছা ভালো থেকো।আল্লাহ বাঁচালে সকালে অফিসে দেখা হচ্ছে ইনশাহআল্লাহ।

-জি স্যার।শুভ রাত্রি।

-শুভ রাত্রি।

নীলের সাথে কথা শেষ করে বাতি নিভিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো মাহির।ফোন হাতে নিল।ফোনের স্ক্রিনে এখনো মাইশা আর মাহিরের কাপল ছবিটা আছে।

-হুহ।কথায় আছে,চকচক করলে সোনা হয়না।আসলেই তাই।সোনার ও খাদ থাকে।

ফোনের স্ক্রিনে নতুন একটা ছবি দিল মাহির।ইলার ছবি।ফোনে থাকা মাইশার সকল ছবি ডিলিট করে দিল মাহির।

-যাকে মন থেকে মুছে দিয়েছি তাকে ফোনে রেখে কি লাভ?আমি তো মিথ্যা ছিলাম না।মেনেই তো নিয়েছিলাম।তবুও কেন আমাকেই এতো বড় কিছুর সম্মুখীন হতে হল!

৩০

দরজার ঠকঠক শব্দে ঘুম ভেঙে গেল ইলার।এতো সকালে কে হতে পারে?ভাবতেই উঠে বসে চোখ কচলাতে লাগল ইলা।চারপাশে তাকিয়েই মনে পড়লো ইলার সে এখন বাড়িতে না অন্য কোথাও আছে।

জানালার পর্দা ভেদ করে আলো ঘরে ঢুকেছে।দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়েই চমকে গেল ইলা।

-নয়টা বেজে গেছে!এতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম আমি!

ইলার ভাবনার মাঝেই আবার দরজায় ঠকঠক শব্দ।গায়ের কাপড় ঠিক করে উঠে গেল ইলা।গিয়ে দরজা খুললো।বাইরে মাহির দাঁড়ানো।

-শুভ সকাল পানিজল।

-আসলে কাল প্রচন্ড ঘুম পেয়েছিল।আমার দেরী হয়ে গেছে উঠতে।

-সমস্যা নেই।এখন হাত মুখ ধুয়ে ওজু করে নিন।

-এখন তো নামাজের ওয়াক্ত নেই।তাহলে?

-আপনি তো নামাজ পড়তে পারেন না।আপনার জন্য একজন টিচার ঠিক করেছি।উনি সব শিখিয়ে দেবেন আপনাকে।উনি বাইরে বসার ঘরে অপেক্ষা করছেন।আপনার হাত মুখ ধোয়া হয়ে গেলে ওনাকে ডাকবেন।

-আচ্ছা।

-কাল থেকে উনি এই সময়ে পড়াতে আসবেন আপনাকে।আর শুনুন।

-জি।

-ইশতিয়াক সকালের খাবার টেবিলে রেখে দিয়েছে।খেয়ে নিবেন।আর ও কিছু বাজার করতে গেছে।হয়তো ফিরতে দেরী হবে।ও আসলে বাজার টা নিয়ে দরজা লাগিয়ে বসবেন।

-ঠিকাছে। আপনি কোথাও যাচ্ছেন?

-হ্যাঁ।অফিস আছে আমার।

-ওহ।

-কোনো দরকার হলে ইশতিয়াক কে বলে দেবেন।সোফার কাছে একটা ডায়েরী আছে।ওখানে ওর নাম্বার লেখা আছে।

-আচ্ছা।

-আসি।ভালো থাকবেন।নিজের খেয়াল রাখবেন।আমি আজ দুপুরে আসব না।রাতে আসব।

-ঠিকাছে।

-আল্লাহ হাফেজ।

-আল্লাহ হাফেজ।

ইলার থেকে বিদায় নিয়ে মাহির অফিসের জন্য রওনা হলো।আর ইলা দ্রুত ওয়াশরুমে গেল হাত মুখ ধুতে।

৩১

-দুদিন হয়ে গেছে।রাগ করে ফোন ও তুলছে না।আর স্যার তো ছুটি দিলেন না।বল কি করব আমি?

-কি করবি মানে?তালাক দিয়ে দে।ভাত ছিটালে মাছির অভাব হবে না।

-এসব কি বলছিস তুই নিবিড়?

-কি বলছি মানে?মেয়ে মানুষ।অতো ত্যাড়ামি কিসের হ্যাঁ।একবার খালি বল তোকে তালাক দিয়ে দেব।দেখিস শুর শুর করে চলে আসবে।

-এটা কোনো কথা না নিবিড়।পুরুষ হয়েছি বলে কি তালাকের গরম দেখাব?ও আমার বউ।রাগ করতেই পারে।ঝগড়া ঝাটি হতেই পারে।তাই বলে সামান্য নিয়ে কেন বড় কিছু করতে যাব।

-হুহ।তোদের মতো ব্যাটা গুলোর কাজ ই এই।তোরা কোনো পুরুষের জাত না।কাপুরুষ সব।আরে বউ থাকবে পায়ের নিচে।পায়ের নিচে কেন জুতোর নিচে।উঠতে বললে উঠবে বসতে বললে বসবে।লাখ টাকা দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করেছি কি ঘরে সাজিয়ে রাখার জন্য!

কথার মধ্য খাবার মুখে দিল নিবিড়।চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে গেছে তার নাহিদের কথা শুনে।নাহিদ নিবিড়ের শুধু কলিগ না কাছের বন্ধু ও।দুদিন হয়েছে নাহিদের স্ত্রী ঝগড়া করে বাপের বাড়ি গিয়ে পড়ে আছে।নিবিড়ের থেকে একটু পরামর্শ নিতে চাইছিল নাহিদ।কিন্তু কে জানতো নিবিড়ের এরকম কথা শুনতে হবে তাকে।

-শোন নিবিড়।একটা কথা কান খুলে শুনে রাখ।বউ হলেও সে একটা মেয়ে।তোর মা ও একটা মেয়ে।তোর মাকে যদি তোর বাবা এভাবে কথা শোনাতো তুই পারতি ছেলে হয়ে এটা দেখতে!

-চুপ।আমার বাবা নেই জানিস না।আর আমার আম্মাজান কে কেন টানছিস তুই?

-দেখলি এতেই তোর গায়ে লেগে গেল।শোন বিয়ে করে খুব দেন মোহরের গরম দেখাচ্ছিস।আগে ঐ টাকা টা শোধ করতো।তোর স্ত্রী কে জন্ম দিয়ে তাকে আদর ভালোবাসা দিয়ে তার মা বাবা যে এই অবধি বড় করে তোর হাতে তুলে দিয়েছে সেটার মূল্য দিতে পারবি তুই!দেনমোহর দিয়ে বিয়ে করেছি।বাহ কি সুন্দর কথা।বউ যেন রেডিমেড পন্য যে টাকা দিয়ে কেনা যায়।বিয়ে একটা পবিত্র বন্ধন।আর তোর স্ত্রী তোর অরধাঙ্গিনী।কথাটা জানিস তো।তার যেমন তোকে প্রয়োজন,তোর ও ঠিক তাকে প্রয়োজন।নিজের স্ত্রী কে এতো ছোট করে দেখিস না।স্ত্রী কেন কোন মেয়েকেই ছোট করে দেখিস না।আর কি বললি কাপুরুষ!কাপুরুষ তো তারা যারা মেয়েদের সম্মান দিতে জানে না।নিজের স্ত্রী কে সম্মান দিতে জানে না।জুতোর নিচে স্ত্রী কে রাখি,খুব বুক ফুলিয়ে বললি কথাটা।এটাকে গর্ব বলে না।গর্ব বলে সেটাকে, যে আমার স্ত্রী কে আমার বুকে রাখি,কারোর কাছে ছোট হতে দেই না।

নাহিদের কথায় খেপে উঠলো নিবিড়।উঠে দাড়িয়ে রেখে খাবারের প্লেট টা ছুড়ে ফেললো।

-জ্ঞান দিচ্ছিস আমাকে !

-জ্ঞান তো মানুষ কে দেওয়া হয়।আর আমি তো একটা অমানুষ জানোয়ারকে শেখাচ্ছি।

– কি বললি তুই?

-ঠিক বলেছি।রাগ তো আমিও করি।আমি ও তো কতো কারণে আমার বউকে কথা শোনাই।কই ও তো চাইলে তালাক দিতে পারে।কোর্টে গিয়ে ডিভোর্সের আপিল করতে পারে।কিন্তু কই করে না তো।আর দোষ তো আমার।প্রতিটি স্ত্রী চায় তার স্বামীর সাথে একান্ত সময় কাটাতে।আমি অফিস করি এর ওর সাথে কথা বলি।আর সাইমা ও তো সারাদিন একা বাড়িতে থাকে।ওর ও তো কারোর সাথে কথা বলার দরকার।আমি অফিস করে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ি।কিন্তু ঐ বেচারী ও তো সারাদিন ঘরের কাজ করে।তাহলে।ওর ও তো ক্লান্তি আছে।কিন্তু ও তো কখনো বিন্দু মাত্র ক্লান্ত হয় না।হাসি মুখে সব মেনে নেয়।ওর জন্মদিন টা আমি ভুলে গেছি।সারাদিন সময় দেইনি একটু ও।রাগ হওয়া স্বাভাবিক।ওর ও তো মন আছে।

-হুহ।খুব বয়ান দিচ্ছিস।রাখ বউকে মাথায় করে।পরে বুঝবি।জুতো কখনো মাথায় ওঠে না।

-তোর কথা শুনে বুঝলাম ভাবীকে কতো ভালো রাখিস তুই।অনু মেয়েটা চুপ করে সহ্য করছে।এখনো সময় আছে মানুষ হ।মেয়েদের সম্মান দিতে শেখ।একদিন দেখবি এই অনু মেয়েটাকে ই তোর সবচেয়ে বেশি দরকার হবে।সময় আছে মানুষ হ।জুতো জুতো করিস না।মাথার মুকুট বানিয়ে রাখতে শেষ।দেখবি সবচেয়ে সুখী হবি।

নাহিদ আর নিবিড়ের সাথে কথা বাড়ালো না।উঠে চলে গেল।নিবিড় রাগি চোখে নাহিদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

চলবে———–
#রৌদ্র_কুয়াশা

Suvhan Årag(ছদ্মনাম)

পর্ব ১২

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।সবাই পাশে থাকবেন।

৩২

-ও তাহলে তোমার সাথে নষ্টামি করে বেরিয়েছে ইলা দিনের পর দিন।

ইলাদের বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে মাহির।অফিস থেকে সোজাসুজি সে এখানে এসেছে।ঘামে ভেজা আছে সাদা রঙের শার্ট টা।মাহিরের সামনে বসে আছেন শায়লা বেগম।

-আপনি ভুল করছেন।

-এই ছেলে তুমি দুদিনের ছেলে কি ভুল ঠিক শেখাচ্ছো আমাকে?

-আপনাকে কোন ঠিক ভুল শেখাতে আসিনি আমি।আপনাকে একটা কথা বলার ছিল সেজন্য ই এসেছি।

-কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো। ইলার ব্যাপারে কথা বলতেও ঘেন্না লাগে আমার।

-আচ্ছা ইলা বাইরে নাচ করে টাকা রোজগার করতো।কিন্তু কেন করতো?

-কেন করতো মানে!ও নাচ করতে যেত নাকি নষ্টামি করে বেড়াতো তোমার থেকে ভালো জানি আমি।নষ্টা মেয়ে।না জানি আর কয়টা পুরুষের সাথে,,,,,ছি ছি।

কথার মধ্যেই নাক সিটকালেন শায়লা বেগম।মাহির স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শায়লা বেগমের দিকে।বার বার মাহিরের সামনে ভেসে উঠছে ইলার মুখটা।এতো কিছু করেও মন পেল না ইলা।ইলার কষ্ট টা অনুভব হতেই মাহিরের বুকটা যেন ভার হয়ে উঠলো।

-কি ভাগ্য আমার।ইলার মতো একটা বেশ্যাকে জন্ম দিয়েছি ভাবতেই মনে হয় গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাই।এই দৃশ্য টাও আল্লাহ আমাকে দেখালো।

-খবরদার ইলার নামে একটাও বাজে কথা বলবেন না আপনি।

মাহির রক্তচক্ষু নিয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাতে উঠে দাঁড়ালো।রাগে ফুঁসতে ফুসতে বললো,

-আপনার লজ্জা করছে না।নিজের মেয়ে কে বেশ্যা বলছেন তাও একটা বাইরের লোকের সামনে।

মাহিরের কথাতে একদম ফুঁসে উঠলেন শায়লা বেগম।এক প্রকার তেড়ে আসলেন মাহিরের দিকে।ডান হাতের শাহাদাত আঙুল উঁচিয়ে মাহিরের দিকে তাক করলেন।

-এই ছেলে তুমি কি বললে?আমাকে লজ্জা শেখাচ্ছো!নিজের লজ্জা শরম নেই।বেশ করেছি বলেছি।বেশ্যাকে বেশ্যা বলব না তো কি বলবো।নিজে ও তো আমার মেয়ের সাথে ঐ সব নোংরা কাজ করে বেরিয়েছো।এজন্য ই তো এখন এতো দরদ উতলে উঠছে তোমার তাই না!

শায়লা বেগমের ব্যবহারে মাহির এতটুকু বুঝতে সক্ষম হলো,শায়লা বেগম কতটা নিচু মানসিকতার মহিলা।মাহির তো আরো অবাক হচ্ছে এটা ভেবে ইলার মতো একটা মেয়ে কিভাবে শায়লা বেগমের সন্তান হয়।ইলা মানেই যেন মাহিরের কাছে একটা নিঃস্বার্থতা,আর সেই ইলাকে কি না তার নিজের মা এরকম কথা বলছে!

-এই ছেলে বেরোও এখান থেকে।

-আপনার সাথে না আমি দু কথা বাড়াতে চাইছি,না আপনি এমন করবেন জানলে দু কথা বলতে আসতাম।আমি এসেছি দরকারে।

-কিসের দরকার তোমার?

-আপনাদের নামে ইলা নতুন একটা ফ্লাট কিনেছিল।তার চাবি দিতে এসেছি।আর এই যে ব্যাংকের চেক।প্রতি মাসে আপনার একাউন্টে টাকা জমা হবে সে টাকা দিয়ে আপনি খরচ চালিয়ে নিতে পারবেন।

-এগুলো সব ইলা করেছে!

-হ্যাঁ ইলা করেছে।আর এটা দশ লাখ টাকার চেক।এটা রাখুন।আর একাউন্টের টাকাটা প্রতি মাসে পেয়ে যাবেন।

মাহির শায়লা বেগমের দিকে চেকটা আর চাবিটা এগিয়ে দিল।শায়লা বেগম একবার মাহিরের মুখের দিকে তাকাচ্ছেন একবার হাতের দিকে।

-ইলা এতো টাকা কোথ থেকে পেলো!

-সেটা আপনার না জানলেও চলবে।

আজ সকালে ও তিনি এই চিন্তায় করছিলেন।কিভাবে সংসার চালাবেন তিনি?ইলার কথা শুধু মাত্র এই কারণেই হয়তো মনে পড়েছিল তার।এই চাওয়াটার জন্যই ইলার ফেরার আশায় তার মনে একটা ক্ষীণ আশা জেগে উঠেছিল।

-নিন।

শায়লা বেগম আর দেরী না করে মাহিরের হাত থেকে চেক আর চাবিটা নিয়ে নিলেন।শায়লা বেগমের কান্ড দেখে মাহির একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিল।

-এবার আমার দরকার টা আমাকে দিন।

-কি দরকার?

-আগামীকাল দুপুর দুটোয় ইলাকে নিজের করে নিতে চলেছি আমি।ওকে বিয়ে করতে যাচ্ছি।ইলার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া তো করতে পারব না।আর আপনি ইলার অভিভাবক এখন।সেজন্য আপনার কাছে এলাম।আপনার কাছে না এলেও কিছু আটকে থাকতো না।আপনার একটা স্বাক্ষর প্রয়োজন আমার।

ইলার বিয়ের কথা শুনে বেশ অবাক হলেন শায়লা বেগম।

-ও।তলে তলে ইলা নিজের তলপি তলপা(জিনিসপত্র,স্বার্থ সিদ্ধি।আমাদের এলাকায় এই ভাষাটা ব্যবহার করা হয় প্রায়ই। এজন্য দিয়েছি) ভালোই গুছিয়ে নিয়েছে দেখছি।

-গোছায় নি।গোছালে মাঝরাতে ও নদীর ঘাটে কুকুরের শিকার হওয়ার জন্য পড়ে থাকতে হতো না।যাই হোক এই কাগজে একটা সাইন করে দিন।

-কেন?

-না হলে চেক আর চাবি দুটোই হারাবেন।

শায়লা বেগম বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন মাহিরের কথা তে।মাহিরের হাত থেকে ছো মেরে কাগজ কলম নিয়ে নিলেন।সোফায় বসে দ্রুত সাইন করে দিলেন।

-এই যে কাগজ।

-ধন্যবাদ।

-তুমি সত্যি ইলাকে বিয়ে করছো?

-সত্যি না মিথ্যা জেনে কি করবেন?

-মানে টা কি।ইলা আমার মেয়ে।

-তাই তো একবার ও তখন থেকে এটা জিজ্ঞাসা করলেন না ইলা কেমন আছে।

মাহিরের কথা শুনে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে শায়লা বেগমের।

-আসি।আরেকটা কথা।

-কি বলবে আবার?

-ইলা কে বেশ্যা বলছেন।অথচ সেই বেশ্যার জমানো টাকা সব কিছু হাত পেতে নিয়ে নিলেন।

-এই ছেলে শোনো অনেক বাড়াবাড়ি করছো তুমি।নিয়েছি বেশ করেছি।কষ্ট করে পেটে রেখে জন্ম দিয়ে মানুষ করে এই অবধি এনেছি ও যা করেছে এটা তো সামান্য।ও পারবে কখনো আমার ঋন শোধ করতে?

-মায়ের ঋন কখনো শোধ হয় না।কিন্তু নিজের মেয়েকে চরিত্র হীন বলে বাড়ি ছাড়া করলেন অথচ তার টাকাই দিব্যি হাত পেতে নিচ্ছেন আবার ও বলছেন সে চরিত্র হীন।ব্যাপার টা বেশ অদ্ভুত না!

শায়লা বেগম রক্তাচক্ষু নিয়ে মাহিরের দিকে তাকালেন।

-বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে।এরপর যদি আর একটা কথা বলেছো না তাহলে এলাকার মানুষ ডেকে আচ্ছা মতো নাক কেটে দেব তোমার।

-দরকার নেই।আর এলাকার মানুষের ভয় আমাকে দেখাতে আসবেন না।আপনি জানেন না আমি কে?

-কেন কে তুমি?

-আপাতত এটা জেনে রাখুন ইলার হবু স্বামী।আর বাকিটা আপনাকে জানানোর কোন ইচ্ছে নেই আমার।আল্লাহ্ হাফেজ।

মাহির বেরিয়ে গেল।শায়লা বেগম কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলেন।

-নাহ যা হয়েছে ভালো হয়েছে।মিলাটাকে আলিশাকে নিয়ে তো আমার ই বাঁচতে হবে।ছি ছি ছি।নিজের বোনের বরের সাথে ছি ছি।দরকার নেই ইলার মুখ দেখার।জাহান্নামে যাক ও।

“ধরণী তুমি টাকার ক্ষেত,

নিষ্ঠুরতা,স্বার্থপরতায় জর্জরিত,

তুমি টাকার নেশায় নিমজ্জিত হয়ে গেছো,

লোভে অন্ধ হয়ে গেছো,

ভুলে গেছো প্রিয়জন,

ভুলে গেছো প্রতিদান,

তুমি অর্থের নেশায় মাতাল হয়েছো,

হয়েছো বদ্ধ উন্মাদ,

আমি কি ফিরে পাব সেই শুভদিন,

সেই গুটি কয়েক আগের বছর,

হয়তো গুটি কয়েক যুগ আগে,

টাকা অর্থ যেখানে সীমিত,

ভালো বাসা,বিশ্বাস,আবেগ বিস্তৃত,

আমি অপেক্ষায় সেই দিনের।

মানব কি মানব হবে আদৌ!

নাকি এভাবেই কেটে যাবে প্রহর,

আর তারা হয়ে যাবে টাকার চাকর,

অর্থ তাদের ওপর রাজত্ব করবে।”

৩৩

রিমোট হাতে নিয়ে ড্রয়িং রুমে বসে আছে ইলা।অনেকক্ষণ আগেই টেলিভিশন অফ করে দিয়েছে সে।

এখনো পাথর হয়ে বসে আছে সে।

“পূত্র বধূকে ধরষন করলো শ্বশুর”

হেডলাইন টা যেন এখনো ইলার চোখের সামনে ভাসছে।আচ্ছা বৌমা কি মেয়ে না?একবার ও কি বুক কাপে না এদের।নিজে কি পারতো নিজের মেয়েকে ধরষন করতে।

ইলার বুক কেপে উঠছে বারবার।সে তো এখন মাহিরের সাথে আছে।কাল মাহির তাকে কিছু করেনি।কিন্তু আজ যে করবে না তার কি গ্যারান্টি আছে?নাকি তার নিরাপত্তার গ্যারান্টি থাকতো যখন সে নদীর ঘাটে বসে ছিল।কে নিশ্চয়তা দিত যে পরের দিন খবরের কাগজে তার ছবি সহ কোনো হেডলাইন বের হবে না।

ইলার মাথায় একটা প্রশ্ন ই ঘুরছে,

“Where I am safe?”

প্রশ্নের উওর টাও ইলা ভেবে যাচ্ছে।

“Where I am safe?”

Suvhan Årag

I am not safe in my family,

There is a chance to be raped by relatives,

I am not safe in my school,college yet

There is a chance to be raped by boys whom I rejected,

I am not safe in bus,in auto rickshaw, in my way,

There is a chance to be raped,

My family don’t allow me to go out of home,

They say after marriage I can go anywhere with my husband.

At last I got married,

I feel now I am free,I am safe as I am married,

No man will rape me as I am not vergin,

But I was raped in front of my husband’s eyes.

I am getting old,

I am 65 years,

But I am not safe.

They raped me.

I used to wear burqa,hijab,

No body can see my face,

I covered my whole body,

But they raped me.

I used to wear short dress,

Then they also raped me.

I am 11 months old,

So what

I am not safe.

They raped me.

I don’t even know the difference between he and she.

Can you tell me ,”Where I am safe?”

ইলার চোখের কোনে পানি চলে এসেছে।চিৎকার করে তার কাঁদতে ইচ্ছে করছে।

-কেউ কি বলতে পারবে আমি কোথায় সুরিক্ষত থাকব?

কলিংবেলের শব্দে ধ্যান ভাঙলো ইলার।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত দশটা বাজে।হয়তো মাহির এসেছে।চোখের পানি মুছে নিল ইলা।

উঠে দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো।মাহিরের মুখে মুচকি হাসির রেখা বিদ্যমান।ইলা না চাইতেও মুখে একটা প্লাস্টিক হাসির রেখা টেনে মাহিরের দিকে তাকালো।

-আমি কি ভেতরে আসতে পারি পানিজল?

-আমি বলার কে।আপনার বাড়ি আপনি আসবেন।

-কে বলেছে আপনি আমার কে?বরং এটা বলুন আমি আপনার কে?আপনি তো আমার পানিজল আমার দিনশেষের তৃষ্ণা মেটানোর এক বিন্দু জল,এক গাছ ছায়া।এবার বলুন আমি আপনার কে?

মাহিরের প্রশ্নের কোন উওর দিল না ইলা।মাহিরের পাশ কেটে দরজা আটকে দিল।

-ভেতরে আসুন।

-আপনার কি হয়েছে পানি জল?মুখটা এমন করে আছেন কেন?

-একটা সত্যি কথা বলবেন।

-কি?

-কেন এনেছেন আমাকে?কেন আশ্রয় দিলেন?আপনি কি ভোগ করতে এনেছেন আমাকে?

-এসব কি বলছো তুমি ইলা!

-না বলার কিছু নেই।রাস্তা ঘাট স্কুল কলেজ সব জায়গায় শুধু একটা শব্দ।ধরষন।টিভি খুললে প্রতিদিন কোনো না নিউজ আছে।আর আমি তো একা মেয়ে এ বাড়িতে।আপনি ও নিশ্চয়ই এমনি এমনি আনেন নি আমাকে?

-আপনি কি আপনার মায়ের কাছে খুব নিরাপদ ছিলেন পানিজল?

-মানে?মায়ের কথা কেন আসছে।

-আমাদের সমাজে একটা কঠিন রীতি আছে।কি জানেন তো?একজন মেয়ে বিপদে পড়লে ধর্ষিত হলে আর পাঁচটা মেয়ে তার পাশে দাঁড়ানোর বদলে তাকে নাক সিটকে দুটো কালো তকমা লাগিয়ে চলে যায়।শুধু মেয়ে কেন ছেলেরা ও এমন করে।

-আপনার কথা বুঝলাম না আমি।

-শুধু একটা কথা বুঝে রাখুন।সবাই পশু নয়।জন্তু জানোয়ারের মাঝে এখন ও কিছু মানুষ বেঁচে আছে।না হলে যে পৃথিবী রসাতলে চলে যাবে।আর সবাই ভক্ষক না রক্ষক ও আছে।

মাহির নিজের মতো কথা বলে উপরে চলে গেল।ইলা মাহিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

– কি চায় এই মানুষটা বুঝিনা।আমাকেই বা কেন আশ্রয় দিলেন তিনি।না আর না।কাল ই চলে যাব।মা যদি ঠাই না দেয় যেদিকে চোখ যায় চলে যাব।কিন্তু মা কি একবার ও খোঁজ করেছে আমার?

“গল্প পড়ে একটু কমেন্টস না করলেও লাইক তো দিতে পারেন।না হলে মনে হয় গল্প পছন্দ হয় না আপনাদের।অনুপ্রেরণা পাই না।”

চলবে————-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here