রৌদ্র কুয়াশা পর্ব ১৩+১৪

#রৌদ্র_কুয়াশা

Suvhan Årag(ছদ্মনাম)

পর্ব ১৩

;;;;;

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।সবাই পাশে থাকবেন।

;;;;;

৩৪

ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো মাহির।ইলা টেবিলে খাবার গোছাচ্ছে।মাহিরকে আসতে দেখে ইলা টেবিল থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো।

– কি রেধেছেন পানিজল?

-ট্যাংরা মাছের ঝোল,কষা মুরগির মাংস আর চিংড়ি মাছ দিয়ে ধনিয়াপাতা ভর্তা।আপনি খেতে পারবেন তো?

-এটাই ঢের পানিজল।এসব খাবারের স্বাদ তো কবেই ভুলে গেছি।দিন দিন শিগগিরি দিন।খিদে যে আরো বেড়ে গেল আমার।

-বসুন।

মাহির একটা চেয়ার টেনে বসে পড়লো।ইলা মাহিরের প্লেটে খাবার বেড়ে দিল।

-আপনি ও বসুন পানিজল।

-না থাক।আপনি খেয়ে নিন।

-আপনি যদি না বসেন তাহলে আমিও খাব না।

-আপনি এতো জেদ কেন করেন বুঝিনা আমি।

-বসুন।

-বসছি।

ইলা মাহিরের থেকে এক চেয়ার পরে গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো মুখ গোমড়া করে।

-পানিজল একটা কথা কি জানেন?

-কি কথা?

-বন্যেরা বনে সুন্দর,আর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।

মাহিরের কথা শুনে ইলা খানিকটা অবাক হলো।এই কথাটার সাথে মাহির কিসের মিল করতে চাইছে ইলা একদম বুঝতে পারছে না।

-কি ভাবছেন পানিজল?

-আপনি এই কথা কেন বললেন?

-হুম কারণ তো আছে।

-কি কারণ?

-এই যে আপনার মুখের হাসি।মুখটা গোমড়া করে রেখেছেন।আর মন টাও খারাপ করে রেখেছেন।আপনি কি জানেন পানিজল,হাসি আপনার মুখে কতোটা মানায়?

মাহিরের কথা শুনে ইলা এবার আর চুপ থাকতে পারল না।খিলখিল করে হেসে উঠলো।মাহির মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ইলার দিকে।মাহিরের তাকানো দেখে হুট করে ইলার হাসি বন্ধ হয়ে গেল।ইলা কেমন যেন লজ্জা অনুভব করলো।এরকম নেশাক্ত চোখে কেউ যদি তাকিয়ে থাকে সে লজ্জা না পেয়ে কোথায় যাবে?

-থামলেন কেন পানিজল?

-খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

-ওহ।শুনুন।

-জি বলুন।

-ধন্যবাদ।

-কেন?

-অসংখ্য ধন্যবাদ।

-কিন্তু কেন?

-জানেন পানিজল সারাদিন ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফেরার পর শরবত,ঠান্ডা পানি,গরম গরম নাস্তার প্রয়োজন হয় না।প্রেয়সীর এক টুকরো হাসিই শুধু যথেষ্ট হয়।

মাহিরের কথা শুনে একটু শিউরে উঠলো ইলা।”প্রেয়সী?” মাহির তাকে প্রেয়সী বললো!মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ইলার।

-পানিজল।

-হুম।

-খাওয়া শুরু করা যাক।

-হুম।

খাওয়া শেষ করে ইলা টেবিল গুছাচ্ছে।মাহির তো পুরো চেটে পুটে এখনো খাচ্ছে।ইলা আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে মাহিরের খাওয়ার দৃশ্য।

-আরেকটু ভাত দেব।

-না আজ আর না।

-আরেকটু নিন।

-না না।অনেক খেয়ে ফেলেছি।

-রান্না কেমন হয়েছে?

-বলে বোঝাতে পারব না।তাই কথাটা না হয় না বলাই থাক।

মাহির ইলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল।ইলা ও ফিরতি মুচকি হাসি দিল।মাহির চলে যেতেই ইলার মুখটা আরো খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেল।

-আপনি খুব অদ্ভুত মাহির।মুরগির মাংসে হলুদ বেশি পড়ে গিয়েছিল,যথেষ্ট ঝাঝ হয়ে গেছে সেটা।ভর্তা তেও লবণ বেশি হয়ে গিয়েছিল।সেটাও আপনি বললেন না।উল্টে হাসি মুখে খেয়ে নিলেন!

“প্রিয়,

প্রেয়সীর মন রক্ষার জন্য শুধু লিপস্টিক,ফুল,উপহার এসবের প্রয়োজন হয় না,

হাসিমুখে তার খারাপ রান্নাটা ও কিছু না বলে খেয়ে নেওয়াটা,

কটাক্ষ না করে সেও যে সারাদিন কষ্ট করে রাধে সেটা ভাবা ও প্রেয়সীর খুশির কারণ।

খুশি করা কি শুধু প্রেয়সীরই দায়িত্ব?

প্রিয় ও যে তার অরধাঙ্গিনীর অরধাঙ্গ।”

নিজের অজান্তেই মনে মনে কথা গুলো বলে গেল ইলা।কিন্তু মুখ ফুটে মাহিরকে বলা হলো না।কিভাবে বলবে?মাহির কে তার কাছে?

;;;;;

“তার দুটো চোখ থাকবে,

দুচোখ ভরা চঞ্চলতা।

তার ভেতরের হাজারো চুপকথা

যা শুনবো শুধু আমি”।

রৌদ্র কুয়াশা নয়।এটা “””””আবেদিতা””””” র অংশবিশেষ।

;;;;;

৩৫

-জান তোমার জন্য এই উপহারটি নিয়ে এসেছি আমি।

– ওহ!রিয়েলি।এক্ষুণি খুলে দেখব আমি।

-আরে দাঁড়াও দাড়াও।

-কি হয়েছে রিদ?

-বলছি আংকেল কি বাড়িতে আছেন?

-আরে না।মা কে নিয়ে বাবা সিলেটে কি কাজে গেছেন।বাড়িতে এখন শুধু সার্ভেন্টসরা আছে।আর শুধু তুমি আর আমি।

বাড়িতে কেউ নেই কথাটা শুনে রিদনের ভেতরের পশুত্বটা যেন আগুনের মতো জ্বলে উঠলো।লোভাতুর দৃষ্টিতে রিদন মাইশার শরীরের উপর থেকে নিচ অবধি চোখ বুলিয়ে নিল।

-কি দেখছো রিদ?

-ভাবছি আমার সুইটহারট কে ড্রেসটা পড়লে ঠিক কতোটা সুন্দর লাগবে।

-তার মানে তুমি ড্রেস এনেছো?

-হ্যাঁ শোনা।

-এক্ষুণি খুলে দেখছি ওয়েট।

রিদন গিয়ে মাইশার খাটের ওপর হেলান দিয়ে বসলো।মাইশা প্যাকেট টা খুলে দেখে লাল রঙের ড্রেস।ড্রেসটা অনেক বেশি ছোট আর তেমন পাতলা।

-রিদ এটা কি কিনেছো তুমি?

-ওহ সোনা।আমিই তো।পড়ে এসো এটা।

– রিদ প্লিজ।এসব থাক না।আমরা কবে বিয়ে করব এটা তো বলো।

-মাইশা তোমাকে কতোবার বলব বিয়ে করা মানে লাইফ অর্ধেক নষ্ট করা।

-তার মানে তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাইছো না?

-আরে না।দেখো বিয়ের আগে এনজয় করার মজাই আলাদা।আর আমরা তো বিয়ে করবোই।আর তুমি না আমাকে ভালোবাসো?

-বাসি তো।

-তাহলে?আমার জন্য এই সামান্য ড্রেসটা পড়তে পারবে না?

-তোমার জন্য সব পারব।একটু ওয়েট করো শুধু।

-ওকে।

মাইশা ড্রেসটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।এদিকে রিদ ফোনে বসে অশ্লীল ভিডিও দেখাতে ব্যস্ত।ভিডিও গুলো আর কারোর না মাইশা আর রিদের।

৩৬

-হ্যাঁ নীল বলো।

-স্যার, আপনাকে যেই ফাইলগুলো দিয়েছিলাম ও গুলো চেক করেছিলেন?

-হ্যাঁ।কাল এসে নিয়ে যেও।

-স্যার আপনাকে দেখে না অনেক দিন পর খুব ভালো লাগল আমার।

-কেন?

-এই যে অনেক দিন পর মনে হলো একটু মন থেকে মন খুলে হাসতে দেখেছিলাম আজ অফিসে।

-নীল একটা কথা কি জানো?মনের ব্যাধি বড় খারাপ ব্যাধি।মন ভালো না থাকলে শরীর ও ভালো লাগে না।মন ভালো করার ওষুধ যে পেয়ে গেছি নীল।

-আল্লাহ এবার যেন আপনাকে খুব সুখি করেন স্যার।এই দোয়া করি।

-ফি আমানিল্লাহ।

-স্যার আপনাকে একটা ছবিও পাঠিয়েছিলাম।দেখেছিলেন?

-হ্যাঁ।কিন্তু ঐ ছবি তুমি কোথায় পেলে?

-স্যার উনি না রিদন।মাইশা ম্যামের বয়ফ্রেন্ড।

-হুম।সাথে উড বি ও।

-কিন্তু স্যার ওনার সাথে যেই মেয়েটার ছবি আছে না কাপল পিক ঐ মেয়েটা নাকি ওনার উড বি।

-জানিনা এতো।ছেলেটা ভালো না এটুকু বলতে পারি।নীল একটা কথা কি জানো,”যে তোমাকে সত্যি সত্যি মন থেকে ভালোবাসবে ,সে কখনো অবৈধ সম্পর্ক তোমার সাথে গড়তে চাইবে না।যদি চায় তো জেনে রাখো এ সম্পর্ক দৈহিক চাহিদা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।আর যদি কখনো এটা বিয়ের রূপ নেয় তবুও সেটা বেশিদিন টিকে না।যার শুরু মোহ তে,ঐ মোহ শেষ হলে সব শেষ হয়ে যায়।”

-ঠিক বলেছেন স্যার।রিদনের মতো ছেলেরা প্লে বয়।এরা শুধু খেলে।

-সেটাই।তোমাকে যেটা বলেছিলাম করেছো?

-জি স্যার।আজ রাতেই কাজ হবে।কাল সকালে দেখবেন একদম ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাবে।

-গুড।আচ্ছা নীল রাখি।আল্লাহ হাফেজ।

-আল্লাহ হাফেজ স্যার।

মাহির ফোন কেটে দিল।ড্রেসিং টেবিলে চোখ যেতেই মাহির পেছনে ঘুরলো।আয়নায় স্পষ্ট ইলার প্রতিচ্ছবি।ইলা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।

-পানিজল কিছু বলবেন?

-হ্যাঁ।আপনার কথা শেষ হয়েছে?

-হুম।

-আচ্ছা আপনি কেন আমাকে আশ্রয় দিলেন?

-কেন?

-এই পৃথিবীতে সবকিছু আদান-প্রদানে সীমাবদ্ধ।সব কিছুতেই বিনিময়।আপনি আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন এর বিনিময়ে ও তো আপনার নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য আছে।

-শুধু এটুকুই জানতে চান?

-হুম।

-সব বিনিময় খারাপে নয় কিছু বিনিময় ভালো তে ও হয়।

-মানে?

-পানিজল জানেন আমার জীবন টা একদম কুয়াশা ঢাকা সকালের মতো।কিছু ঝাপসা তো কিছু পরিষ্কার।কিছু পরিষ্কার তো কিছু একদম ই দেখা যায় না।আমি অপেক্ষাতে আছি পানিজল কবে এই কুয়াশা টা কাটবে আমার জীবন থেকে।এক ফালি রোদ উঠবে কুয়াশা ভেদ করে।

-এর সাথে আমাকে আনার কি সম্পর্ক?

-কাল সব জানবেন।এখন গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমান।

“A BEAUTY SLEEP NEEDS FOR A BEAUTIFUL FACE,BEAUTIFUL MORNING ,BEAUTIFUL JOURNEY.”

মাহির মুচকি হেসে ইলাকে ইশারায় চলে যেতে বললো।ইলা আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে গেল।

চলবে———-
#রৌদ্র_কুয়াশা

Suvhan Årag(ছদ্মনাম)

পর্ব ১৪

;;;;;

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।সবাই পাশে থাকবেন।

;;;;;

৩৭

সকাল সকাল চেঁচিয়ে পুরো বাড়ি মাথায় তুলেছে নিবিড়।ইসমাত বেগম ও অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন নিবিড়ের কাজে।

অনু শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে রান্নাঘরে রান্না করছিল।হুট করে নিবিড় এসেই অনুর চুলের মুঠি ধরে বসলো।

-আহ লাগছে।ছাড়ুন।

-কি ছাড়ব হ্যাঁ?খা,,, মা,,,,।সেই কোন সকাল থেকে নাস্তা চেয়েছি।নবাবের বেটি এখনো নাস্তা দিসনি আমাকে।আটটা বাজতে চললো।

-ছাড়ুন।রান্না করতে ও তো সময় লাগবে নাকি।

-তোকে দেখাচ্ছি মজা।বিয়ে করেছি কি বেলা আটটার সময় ও নাস্তা না পাওয়ার জন্য।তোকে কি এজন্য গান্ডে পিন্ডে গিলাচ্ছি।

কথা বলতে বলতেই নিবিড় ঠাস করে অনুর গালে চড় বসিয়ে দিল।অনুকে আরো কয়েক ধাপ মারতে মারতে ফ্লোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল।

-কুত্তার বাচ্চা।স্বামীকে ঠিকমতো দেখভাল করার মুরুদ নেই মেয়ে হয়েছিস তুই হ্যাঁ!

অনু কাঁদতে কাঁদতে ব্যথায় ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে।নিবিড় তেড়ে গিয়ে অনুর পেটে সজোরে লাথি দিল।ব্যথায় আরো জোরে চেঁচিয়ে উঠলো অনু।

-ও আল্লাহ গো।

-মুখে মুখে তর্ক করিস আবার!রান্না করতে সময় লাগে না।

-কি করব আমি তাহলে?রাত বেরাতে আপনার দেহের চাহিদা মেটাতে মেটাতে ক্লান্ত হয়ে যাই।জানোয়ারের মতো ছিড়ে খান আমাকে।কখনো কি জিজ্ঞেস করেছেন আমার শরীর ঠিক আছে কি না?ব্যথায় বিছানা থেকে উঠতে পারি না সকালে।আমিও তো মানুষ নাকি।

-বেশ করেছি।লাখ টাকা দেনমোহর দিয়ে কি তোর রূপ দেখার জন্য বিয়ে করেছি!স্বামীকে সন্তুষ্ট করতে পারিস না আবার বড় বড় কথা বলিস।তোকে তো আজকে,,,,,।

নিবিড় চুলার ওপর তরকারির কড়াই দেখতে পেয়ে কড়াই এর ভেতর থেকে গরম খুন্তি হাতে নিলো।অনুর দিকে তেড়ে যেতেই কোথ থেকে মুড়ো ঝাটা এসে পড়লো নিবিড়ের গায়ে।সাথে সাথে নিবিড়ের হাত থেকে খুন্তি টা পড়ে গেল।

-শয়তান কোথাকার।তুই আমার ছেলে ভাবতে ঘেন্না হচ্ছে আমার।

নিবিড় সামনে তাকাতেই দেখে ইসমাত বেগম অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন নিবিড়ের দিকে।নিবিড় কে পাত্তা না দিয়ে ইসমাত বেগম অনুকে টেনে দাঁড় করালেন।

-ওঠ মা।ওঠ।

-আম্মাজান আপনি!

নিবিড়ের কথা শুনে পাশ ফিরে তাকালেন ইসমাত বেগম।

-হ্যাঁ আমি।নির্ঘাত বই পড়ছিলাম না হলে তুই আজকে অনুর গায়ে হাত তুলতে পারতিস না।

-আম্মাজান আপনি বলুন স্বামীর সেবা না করলে স্ত্রী কি জান্নাতে যাবে?

-খবরদার!তোর মতো জানোয়ার গুলো ধর্ম টেনে কথা বলতে আসবি না।আর স্ত্রী কে অত্যাচার করলে স্বামী জান্নাত যাবে এটা কোথায় লেখা আছে বল?বিয়ে করেছো বলে কি মাথায় উঠে গেছো?আল্লাহ তোমার জন্য সাত খুন মাফ করে দিয়েছেন?কি জানো তুমি?কিছুই জানো না।

মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবু তুমি যা অপছন্দ করছ আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৯)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন মহিলার ওপর রুষ্ট হবে না, কেননা যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার ওপর সে সন্তুষ্ট হতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৪৬৯)

অন্য হাদিসে রয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১১৬২)

হাদিস শরিফে স্ত্রীদের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরবে, তাকেও পরাবে। চেহারায় কখনো প্রহার করবে না, অসদাচরণ করবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২১৪২, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৮৫০১)

মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে দীর্ঘ বয়ানের একপর্যায়ে বলেছিলেন, ‘অতএব, তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করো, কেননা তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত ও প্রতিশ্রুতির সঙ্গে গ্রহণ করেছ এবং তোমরা আল্লাহর হুকুমেই তাদের লজ্জাস্থানকে হালাল হিসেবে পেয়েছ…।’

(সহিহ মুসলিম : হাদিস ১২১৮)

ইসমাত বেগম এবার থামলেন।নিবিড়ের দিকে তাকালেন।নিবিড় দাঁত কিড়মিড় করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।ইসমাত বেগমের সামনে চুপ থাকলেও মনে মনে সে অনুকে কিভাবে জখম করার ফন্দি আটকে সেটা সেই ভালো জানে।

কথায় আছে না,”কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না।”

-এই শেষবার নিবিড়।এরপর অনুর প্রতি আর একটা খারাপ ব্যবহার করো তুমি তোমার কি হাল করব আমি কল্পনাও করতে পারবে না।আর জেনে রেখো স্বামী হয়ে অধিকার ফলানোর আগে দু বার ভাববে।আজ অনুর প্রতি যে অন্যায় তুমি করছো এর শাস্তি তুমি নিশ্চয়ই পাবে।মহান আল্লাহ কাউঁকে ছাড় দেন না।তার কাছে তার সকল বান্দাই সমান।যাও এখান থেকে।আজ না তুমি সকালের খাবার পাবে না দুপুরের টিফিন।

-আম্মাজান!

-যাও বলছি।

অনুর দিকে গরম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেল নিবিড়।অনু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

-কাদিস না মা।

-আমি কি করব মা?বাপের বাড়িতেও ঝাটা লাথি খেয়েছি।ভেবেছিলাম স্বামীর কাছে সুখ পাব।এখানে ও সেই একি।

-মেয়েদের জীবনটা কোনো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কম নয় রে মা।জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি লড়াই করে যেতে হয় রে মা।

ইসমাত বেগমকে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে কেঁদে দিল অনু।সহ্যের যে একটা সীমা থাকে।

৩৮

-নীল পেয়েছো?

-হ্যাঁ স্যার।ম্যাম তো ওনার বাড়িতে এসেছেন।এখন দেখছি আশেপাশের লোকজনদের কাছে খোঁজ নিচ্ছেন।

-হুম।তা তো নেবেই।নিলেই বা কি।আর পাবে না।

-স্যার ওনারা কি ফ্লাটে শিফট হয়ে গেছেন?

-হুম।

-ওনারা একবার ও ইলা ম্যামের খোঁজ নিলেন না!

-নীল, স্বার্থ আর অর্থ যেখানে আকাঙ্ক্ষার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছে যায়,সম্পর্ক গুলো তখন মাটিতে গড়াগড়ি খায়।সেগুলোকে দেখার কেউ থাকে না।

-আসলেই স্যার।স্যার আপনি আসবেন না?

-গাড়িতেই আছি।জ্যামে আটকে গেছি।আর দশ মিনিট লাগবে।

-আচ্ছা স্যার তাড়াতাড়ি আসুন।

-ইলা কি খুব কাঁদছে নীল?

-হ্যাঁ স্যার।ম্যাম তো বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে কাঁদছে।আশে পাশের বাড়ি গুলোতে গিয়ে ও খোঁজ করছে।

-কেঁদে নিক যত ইচ্ছে।এরপর আর কাদার সুযোগ পেতে দেব না।

-স্যার মজিদের ব্যবস্থা কি করব?

-উহুম।আজ রাতে করবে।আমার পানিজল যখন তার নতুন জীবন শুরু করবে,সুখের সাগরে পাড়ি দেবে তখন ঐরকম শয়তান লোকটাকে জীবনের মতো বুঝিয়ে দেবে মেয়েদের অসম্মান করার ফল।

-ওকে স্যার।

-আল্লাহ হাফেজ।

-আল্লাহ হাফেজ।

নীলের সাথে কথা শেষ করে ফোন কেটে দিল নীল।

-ড্রাইভার চাচা,আর কতক্ষণ?

-এই তো বাবা জ্যাম ছাড়িয়ে গেছে।

-এবার একদম ঝড়ের বেগে গাড়িটা চালাও।আমার যে মূল্যবান কাজ আছে।

-ঠিকাছে তুমি শুধু বসে থাকো।এই দশ মিনিট লাগাব।

ড্রাইভারের সাথে কথা বলে হাতের মুঠোর ভেতর থাকা চিঠিটাতে ঠোট ছোয়ালো মাহির।চিঠিটা আরেকবার খুললো সে,

“মাহির বাবু,

প্রিয় কি অপ্রিয় কিছুই নন আপনি আমার।তাই সম্বোধন টা আর করা হলো না।দুদিন আপনার বাড়ি তে আশ্রয় দিয়েছেন তার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে ছোট করব না।এটুকুই বলব,পুরুষজাতি নিয়ে এখন থেকে আরেকবার ভাববো।

সবাই ভক্ষক না রক্ষক ও আছে।ভালো থাকবেন।আপনার পানিজল ডাকটা একদম ভালো লাগে না আমার।খুব পচা শোনায়।তবুও ডাকটাকে মিস করব।কেন করব জানিনা।আজ সকাল টাতে শেষ বারের মতো আপনার জন্য রান্না করলাম।আমি জানি খারাপ হলেও আপনি কখনোই বলবেন না এটা খারাপ।আমি ভেবে অবাক হই আপনি এমন কেন?আপনি কি জানেন কতোটা রহস্যময়ী আপনি?

ভালো থাকবেন।দেখাশোনা আলাপটা না হয় এখানেই শেষ হোক।”

ইতি

ইলা

চিঠিটা পড়ে আরেকবার তাতে চুমু খেল মাহির।আজ সকালে মাহির ঘুম থেকে ওঠার আগেই ইলা চিঠিটা ডাইনিং টেবিলে রেখে চলে গেছে।

-পানিজল,আপনি ভুল বললেন।শেষ না এটা শুরু।দেখাশোনা আলাপন টা আপনি তে ছিল,এবার দেহ মনের আলাপন দুটোই তুমিতে যাবে।শুরু হবে আমাদের নিত্য সংসার।

মাহিরের ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।

৩৯

-স্যার আমরা পেয়ে গেছি।

-এক্ষুনি আমার সামনে নিয়ে আসো ঐ জানোয়ার টাকে।

-ওকে স্যার।

ফোন কেটে দিলেন ইনসপেক্টেল আরিয়ান।এর মধ্যে ই কনসেটবল এসে তাকে ডাক দিলেন।

কারাগারের মধ্যে চেয়ারে বাধা অবস্থায় বসে আছে তিনজন লোক।পাশ থেকে দুজন পুলিশ বেঢপ মারছে তিনজনকে।তিনজন আর কেউ না নারী পাচার কারী।গত দু বছর ধরে অনেক ছোট্ট মেয়ে শিশু নারীদের এরা অন্য জায়গায় পাচার করেছে।

আরিয়ান দরজা খুলে কারাগারের ভেতর ঢুকলো।তাকে দেখে বাকি দুজন পুলিশ সরে দাড়ালো।তিনজন এর সামনে গিয়ে তিনজনের মুখে থুথু ছিটালো আরিয়ান।

-জানোয়ার।তোরা কি ভুলে যাস তোরাও কোনো মেয়ের পেট থেকে জন্মগ্রহণ করেছিলি।লজ্জা করে না ফুলের মতো মেয়েদের পাচার করিস।লজ্জা করে না।মেয়েদের অত্যাচার করিস।সম্মান দিতে জানিস না।তোদের আজ এমন সাজা দেব আমি রাস্তার কুকুর ও তোদের দেখে থু ফেলবে।

ডান পাশে দাঁড়ানো পুলিশের হাত থেকে মোটা লাঠিটা নিল আরিয়ান।সর্বশক্তি দিয়ে মারতে লাগল ঐ তিনজন লোককে।

৪০

-আপনি এটা কিভাবে করতে পারলেন পানিজল?আপনি কথা দিয়েছিলেন আমার তৃষ্ণা মেটাবেন।কিন্তু এভাবে ফাকি দিলেন আমাকে!ইটস নট ফেয়ার পানিজল।

মাহিরের কথাতে চোখ হাঁটু থেকে মাথা উঠিয়ে তাকালো ইলা।বাড়ি তে এসেই কাউকে পায়নি সে।মা বোন ভাগ্নী কাউকে না।তাকে না জানিয়ে তারা চলে গেছে কোথায়।দোরগোড়ায় হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে চোখের পানি ফেলছিল ইলা।

-আপনি!

-চলুন আমার সাথে।

-কোথাও যাব না আমি।

-আপনি না চাইলেও আপনাকে যেতে হবে পানিজল।কোথায় থাকবেন ভেবেছেন?মাথা গোঁজার ঠাই এর জন্য হলেও যে আপনার আমার কাছে আসতে হবে।

মাহিরের কথাতে উঠে দাঁড়ালো ইলা।নিজেকে আর সামলাতে না পেরে মাহিরের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো ইলা।ডুকরে কেঁদে উঠলো।মাহির ও আলতো করে ইলাকে জড়িয়ে নিল।এক হাত দিয়ে ইলার মাথায় হাত বুলাতে লাগল।ইলা কেঁদেই চলেছে।

-আমার বুকে তোমার হাসি মুখে মুখ গোঁজার কথা পানিজল।চোখের পানিতে নয়।আর চোখের পানিতে যদি আমার শার্ট ভেজাতেই চাও তবে সে পানির ফোটা গুলোকেও আমার জন্য হতে হবে।

মাহিরের কথাতে ইলা মাথা তুলে তাকালো।তাড়াতাড়ি মাহির কে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালো।লজ্জাতে পড়ে গেল ইলা।কষ্টে নিজের হুশ ও হারিয়েছে সে।না হলে কি আর এভাবে জড়িয়ে ধরে মাহির কে!

চলবে————-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here