রৌদ্র কুয়াশা পর্ব ১৫+১৬

#রৌদ্র_কুয়াশা

Suvhan Årag(ছদ্মনাম)

পর্ব ১৫

;;;;;

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।সবাই পাশে থাকবেন।

;;;;;

ইলা লজ্জায় গুটিশুটি হয়ে দাড়িয়ে আছে।মাহিরের বেশ ভালো লাগছে ইলার লাজুক মুখটা দেখতে।ফর্সা গাল দুটো হালকা গোলাপি হয়ে গেছে।তার মধ্যে ইতস্ততা।

-পানিজল।চলুন।

মাহিরের কথাতে ইলা মাথা তুলে একবার তাকালো মাহিরের দিকে।তারপর আবার মাথা নিচু করে দুদিকে মাথা নাড়লো।যার অর্থ সে যাবে না।

-কেন?কিসের অপেক্ষা করছেন আপনি?

-আমার পরিবার না আসা অবধি কোথাও যাব না।

-বাহ!আসলেই আপনার তারিফ করতে হয়।যে পরিবার একটা মেয়ে কে বিনা কারণে কোনো যাচাই না করে দোষ দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলো।তারপর দু টো রাত কেটে গেল।কোথায় আছে সেটা জানার প্রয়োজন মনে করলো না।না পুলিশে ডায়েরী করলো।উল্টে নিজেরাই উধাও হয়ে গেল।তার জন্য আপনি এখনো অপেক্ষা করছেন!

মাহিরের কথাতে ডুকরে কেঁদে উঠলো ইলা।কাঁদতে কাঁদতে বললো,

-কি করতাম আমি?আমার পরিবার।তারা আমাকে ভুলে যেতে পারে।আমি তো পারিনা।আমি ছাড়া কেউ নেই যে তাদের মুখে দু মুঠো ভাত তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।কেউ নেই যে দুটো টাকা দিয়ে সাহায্য করবে।অভিমান কাদের ওপর করব?বলতে পারেন।

-আপনি কাদবেন না।আপনার চোখের পানি আমার সহ্য হয় না।আরো বেশি কষ্ট দেয়।

মাহিরের এমন আবেগী কথাতে ইলা চুপ করে গেল।শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো মাহিরের দিকে।কেন ভাবে এই লোকটা তাকে নিয়ে?তার চোখের পানি ও যে সহ্য করতে পারে না?কেন?কেন?এই কেন র উওর টা জানা নেই ইলার।

-চলুন।

-কিন্তু ওরা?

-ওনারা যেখানে আছেন ভালো আছেন।এতোটাই ভালো যে তাদের হয়তো মনে ও নেই আপনার কথা।

-আপনি কি করে জানলেন?

-আমি শুধু পানিজলের দায়িত্ব নেই নি।শুধু কাছের মানুষের দায়িত্ব নেওয়া ভালোবাসার পরিচয় নয়।কাছের মানুষ টাকে যারা এই অবধি এনেছে তাদের বিন্দুমাত্র খোঁজ নেওয়াটাও জরুরি।অন্যথা সেটা স্বার্থপরতা।আপনার পরিবার আপনার সাথে যাই করুক এটা কখনো অস্বীকার করতে না আপনি পারবেন না আমি।তাদের জন্য এই অবধি আপনি এসেছেন।তাই তাদের দায়িত্ব টা আমি ফেলতে পারিনি।

-তাহলে?আপনি সব জানতেন?কেন আগে বলেন নি আমাকে?

-বলার কি খুব সুযোগ দিয়েছিলেন আপনি?

মাহিরের কথাতে ইলার মুখটা যেন চুপসে গেল।আসলেই সে মাহিরকে জানানোর সুযোগ দেয়নি।উল্টে তাকে না বলে এক প্রকার পালিয়ে চলে এসেছে।

-কি হলো উওর দিন?

-আমি দুঃখিত।

-আপনি কি এটা ঠিক করলেন?একটা বার জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না।পানিজল প্রয়োজনকে শুধু প্রয়োজন হিসেবে দেখবেন না।প্রয়োজনকে প্রিয়জন ও করা যায়।প্রয়োজনের সময় টা এই প্রিয়জন ই থাকে।

ইলা চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।মাহির দু কদম এগিয়ে গেল ইলার দিকে।ইলার একটা হাত নিজের ডান হাতের মুঠো বন্দী করলো।

-আর থাকতে হবে না।কিছু মানুষ ছিড়ে খাচ্ছে আপনাকে তাদের দৃষ্টি দিয়ে।

-জানি।কি করতাম?ঐ কুকুর গুলোর জন্যে কি একটু দাঁড়াতেও পারব না!

-ভুল বললেন।ওরা কুকুর না।খারাপ মানুষদের কখনো কুকুর,শু***,শকুন ইত্যাদি প্রাণীদের নাম ধরে ডাকবেন না।এরা কখনো মানুষের মতো অমানুষিক কাজ করে না।বন্যের পশু ওরা।ওরা কখনো আসে না একটা মানুষের ক্ষতি করতে কিংবা নিজ প্রজাতির ক্ষতি করতে।ওরা পশু হতে পারে কিন্তু অমানুষ না।অমানুষদের সাথে ঐ নিরীহ প্রাণীদের তুলনা করবেন না।চলুন ।

-কিন্তু,,।

-আপনার পরিবার ভালো আছে।সময় হলে আমি তাদের কাছে আপনাকে নিয়ে যাব

দুদিন তো ছিলেন একা একটা বাড়িতে আমার সাথে।একটু তো ভরসা করুন।আমি মানুষ অমানুষ না।

মাহিরের কথা শুনে ইলা আর কথা বাড়ালো না।মাহিরের সাথে সাথে নিজে ও গিয়ে বসলো গাড়িতে।

৪১

জানালার কোল ঘেষে মেঝেতে হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে অনু।দুপুর বেলা।সূর্য টা হেলে পড়েছে এক দিকে।তীর্যক ভাবে আলো জানালা ভেদ করে ঘরের ভেতরে ঢুকেছে।আলো পড়ে জানালার গ্রিলের চৌকো নকশা গুলোর ছায়া ও মেঝেতে পড়ছে।কিছু টা ছায়া কিছু টা আলো।অনু গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।মনে হচ্ছে এটাই তার জীবন।ছায়া থেকে একটু আলোর খোঁজে ছুটে যায় সে।কিন্তু আবার ছায়ার কবলে গিয়ে পড়ে।কি এক অদ্ভুত নিয়তি তার।

দরজা খুলে খাবারের থালা নিয়ে ভেতরে ঢুকলেন ইসমাত বেগম।বিছানার দিকে তাকাতেই অনুকে পেলেন না।মেঝের দিকে চোখ যেতেই দেখেন অনু বসে আছে।কি এক মায়াবী মুখটা।কে বলবে এই মায়াবী মুখটা দেখেও নিবিড়ের একটু মায়া হয় না।এই মুখটার পেছনে এতো বাজে অতীত কষ্ট ঘেরাও করে আছে।

ধীর পায়ে ইসমাত বেগম এগিয়ে গেলেন অনুর দিকে।বিছানার ওপর খাবারের থালাটা রাখলেন।অনুর দিকে এগিয়ে গেলেন।এদিকে অনু আলো ছায়া নিয়ে গবেষণা তে এতোটাই ব্যস্ত যে ইসমাত বেগমের উপস্থিতিও সে টের পায়নি।

হুট করে চৌকো ফাঁকা গুলো ঢেকে গেল।সামনে এক বিশাল ছায়া।ছায়ার অবয়ব কোনো মহিলার।অনু মাথা তুললো।সামনে ইসমাত বেগম দাঁড়িয়ে।

-মা আপনি?

-উঠে দাড়াও।চলো খেয়ে নেবে।

ইসমাত বেগমের কথা কখনোই ফেলে না অনু।আজ ও তার ব্যতিক্রম না।উঠে দাঁড়ালো সে ।ইসমাত বেগম অনুর হাত ধরে এনে বিছানায় বসালেন।নিজেও অনুর পাশে বসে ভাত মেখে অনুর মুখে তুলে দিলেন।অনু চুপচাপ খাচ্ছে ।সেই সকাল থেকেই তার পেটে কিছু পড়েনি।

-মা তোকে একটা কথা বলি।

-কি মা?

-চলে যা এখান থেকে।

ইসমাত বেগমের কথা শুনে অনু অবাক দৃষ্টিতে তাকালো ইসমাত বেগমের দিকে।

-ওভাবে তাকাস না।নিবিড়কে আমি ফেলতে পারব না।কঠিন ওয়াদাতে আবদ্ধ আমি।ওর মা কে ওয়াদা করেছি যে আমি।কিন্তু তোকে ও এরকম লোকের কাছে ঠেলে দিতে পারব না।

-ওনার মা!মানে?আপনি কে তাহলে?

-হ্যাঁ আমি ওর মা নই।আমার একমাত্র ভাইয়ের একমাত্র ছেলে ও।নিয়তি বড় অদ্ভুত রে মা।

-মানে?

-হ্যাঁ।আমি যেদিন স্বামীর বাড়ি ছেড়ে নিজের ভাইয়ের কাছে আশ্রয় নেই তখন ও জানতাম না আমার ভাই আরেকটা অমানুষ।ভাবির ওপর কড়া অত্যাচার করত ও।আমার মনে হলো আমি যেন মাহিরের বাবাকে ছেড়ে আরেক আলফাজ কে দেখছি।এর মধ্যে ভাবি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে গেল।ভাইয়ের অত্যাচার তবু কমলো না।হুট করে একদিন ভাই আরেকটা বিয়ে করে আনে।আর ভাবীকে বাপের বাড়ি চলে যেতে বলে।ভাবি অনেক কষ্ট পেয়েছিল সেদিন।আমি ও মেনে নিতে পারিনি। আমার বাবা মা মারা গেছিল আরো আগেই।ভাই ছিল একমাত্র ভরসা।ভাইয়ের এই কাজের পর আমি আর দেরী করিনি।ভাবীর সাথে চলে যাই তার বাপের বাড়ি।ভাবীর বাবা গরীব মানুষ হলেও কখনো আমার থাকি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নি।আমি যেন আরেকটা বাবা পেয়েছিলাম ।নিবিড়ের জন্মের সময় ভাবীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।ভাবী বার বার আমার হাত ধরে সেদিন ওয়াদা করিয়ে নিয়েছিল আমি যেন তার সন্তানকে না ফেলি।আর ভাবী যদি মারা যায় তবে যেন কখনো এটা না বলি নিবিড়ের বাবা কে।কারণ ভাবী চাননি নিবিড় বড় হয়ে জানুক তার বাবা একটা অমানুষ।আমাকে বলেছিলেন কখনো যেন নিজের সন্তান থেকে ওকে অন্য কিছূ না ভাবি।ছোট্ট নিবিড়কে যেন আমি আমার মতো মানুষ করি।সেদিন ভাবী মারা যান।একে ভাবীর ওয়াদা তারপর মাহিরের শোক।নিবিড়কে টেনে নেই বুকে।মাহিরের সাথে মিল করে ওর নাম রাখি নিবিড়।ভাবীর বাবা ও আমাকে ভাবীর মৃত্যুর পর নিজের মেয়ের মতো রেখেছিলেন।আমাকে ছুড়ে ফেলে দেননি।উনি মারা যাওয়ার সময় এমনকি ওনার সব কিছু আমার নামে করে যান।যাতে নিবিড়কে নিয়ে বাঁচতে পারি আমি।নিবিড় এটা জানে যে মাহির ওর ভাই।মাহির নামে কেউ আছে।কিন্ত ও মাহিরকে কখনো দেখেও নি।আমি চেয়েছিলাম ওকে নিজের মতো মানুষ করতে।কিন্ত ঐ যে রক্ত বলে একটা কথা আছে।আমি ব্যর্থ হয়ে গেলাম।এখন ওকে ফেলতে ও পারি না।

-নিবিড় জানে এসব?

-ও তখন খুব ছোট।দশ বছর বয়স হবে।একবার বলেছিলাম এ কথা।পুরো বাড়ি ভাংচুর করেছিল।অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।আমাকে দেখলেই এটা ওটা ছুড়ে মারত।ডাক্তার বলেছিল একটা ট্রমার মধ্যে চলে গেছে ও।ও ছোট থেকেই আমি বলতে পাগল।তাই এটা মেনে নিতে পারেনি।ওর ব্রেনে খুব চাপ সৃষ্টি করে এটা।পরে আমি বলি সব মিথ্যা আমি তোর মা।ও সুস্থ হচ্ছিল না।তাই ডাক্তারের কথা শুনে এই মিথ্যা টা বলতে হয়।সেই থেকে আর কখনো এসব বলিনি ওর সামনে।আর ওর ও তেমন মনে নেই।ট্রমা থেকে বেরোনোর পর আস্তে আস্তে প্রায় ভুলেই গেছে।

-এতো বড় সত্যি!

-হুম।

-আচ্ছা পরে নিবিড়ের বাবা আর কোনো খোঁজ নেননি?

-নাহ।থাকলে তো নেবে।এমন মহিলাকে বিয়ে করেছিল একদম রক্ত শুষে খেয়েছিল।দু বছরেই ব্যবসাতে লস দেনা।সব শেষে পথে নেমে গেছিল একদম।চিন্তায় চিন্তায় স্ট্রোক করে মারা যান।আরো কি হয়েছিল জানিস?এই দুঃসময়ে ঐ মহিলা ভাইজানকে রেখে তালাক নিয়ে চলে গেছিল।বড্ড লোভী ছিল ঐ মহিলা।

-আপনি কিভাবে জানলেন এতো কিছু?

-ভাবীর প্রতিবেশী এক ভাই ছিল।উনি ঢাকাতে ভাইয়ের অফিসের পাশে কোথায় চাকরি করত।যেহেতু ভাবীর স্বামী ছিল এই জন্য খবরাখবর উনিই বলতেন।

-ওহ।

-হুম।চলে যা মা।অমানুষের সাথে থাকিস না।পরে কিছু হয়ে গেলে নিজেই ভুগবি।এই দেখ না মাহির হওয়ার আগেই যদি ওর বাবাকে ছেড়ে আসতাম এতো কষ্ট হতো না।ভেবেছিলাম শুধরে যাবে।কিন্তু লোকটা শুধরায় নি।এখন মাঝখানে পড়ে আমি কষ্ট পাচ্ছি।আর না জানি আমার কলিজাটা কেমন আছে।

-কোথায় যাব মা?বাপের বাড়ি!যেখানে ঝাটা লাথি খেয়েছি আজীবন।

-আল্লাহ কে ডাক মা।দেখিস ঠিক উপায় পাবি।এরকম জালিমের থেকে চলে যা।নিজে বাচ আগে।

ইসমাত বেগম অনুর মাথায় হাত বুলিয়ে খালি থালা নিয়ে চলে গেলেন।অনু চুপচাপ বসে আছে।

তবে কি এবার তাকে ডানা মেলতে হবে?কিন্তু কোথায় যাবে সে?

৪২

গাড়ি এসে পার্লারের সামনে থামলো।গাড়ির ব্রেকে ইলা সামনে থেকে ঝুঁকে পেছনে ধাক্কা খাবে তার আগে মাহির পেছনে হাত দিয়ে ইলার মাথা ঠেকিয়ে দিল।

-সাবধানে।সিট বেল্ট লাগাননি কেন পানিজল?

-খেয়াল ছিল না।

-আমার ও খেয়াল ছিল না।দেখা উচিত ছিল।আপনার লাগেনি তো?

-লাগতে কি দিয়েছেন?

ইলার কথায় মাহির অবাক চোখে ইলার দিকে তাকালো।

ইলা মুচকি হেসে বললো,

-আগের থেকেই হাত দিয়ে ঠেকিয়েছেন।

-হুম।

-এখানে কেন এসেছি আমরা?

মাহির ইলার হাতে সিটের পেছন থেকে এনে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিল।

-কি এটা?

-পরিপূর্ণ বৈধ প্রস্তুতি।

-মানে?

-প্রশ্ন করবেন না।ভেতরে যান।ওখানে সব বলা আছে।ওরা যা করতে চাইবে করতে দেবেন।এখন কোনো প্রশ্ন করবেন না।

-কিন্তু,,।

-উহুম।যান।দেরী হয়ে যাচ্ছে তো।

মাহিরের কথা মতো ইলা বেরিয়ে চলে গেল।পার্লারের ভিতরে ঢুকলো প্যাকেট টা নিয়ে।

৪৩

-ম্যাম আপনি এবার যেতে পারেন।সব কিছু কমপ্লিট।

-আপনি ভুল করছেন না তো?

-না ম্যাম।আমাদের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সাজানো হয়েছে আপনাকে।আপনি বরং স্যারের সাথে কথা বলে নেবেন।

পার্লারের মেয়েটির কথা তবুও বিশ্বাস করতে পারছে না ইলা।আয়নার দিকে তাকিয়ে আবার নিজেকে দেখছে।লাল বেনারসি মাথায় ঘোমটা গা ভর্তি গহনা।পুরো বউসাজ।মাহির কি করতে চাইছে?ইলা ভেবে পারছেনা ।

চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো ইলা।ভারী গহনা শাড়িতে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তার।তবুও ধীরে ধীরে পা বাড়ালো বাইরের দিকে।

গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল মাহির।হঠাৎ করে সামনে তাকাতেই চোখ আটকে গেল তার।এটা কি সত্যি নাকি স্বপ্ন!যেই প্রহরের অপেক্ষা তে এতো বছর সে ছিল তবে কি সেই প্রহর আসতে চলেছে!

ইলা মাহিরের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো।

-এগুলো কি করতে চাইছেন আপনি?আমাকে এভাবে কেন সাজালো?

-পানিজল,যেটা অনেকদিন আগে হওয়ার ছিল সেটা আজ হবে।চলুন।প্রশ্ন করবেন না।সব উওর আমি দিব।

ইলা আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাহির গাড়ির দরজা খুলে দিল।ইলাকে ভিতরে বসতে ইশারা করলো।ইলা আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ ভেতরে গিয়ে বসলো।

৪৪

-ছেড়ে দেও বাবারা।আমি বুড়ো মানুষ।তোমার বাবার বয়সী।

মজিদ বুড়ো হাত জড়ো করে আছে।হাউমাউ করে কাঁদছে।কান্না দেখে সামনে থাকা দশ বারো জন ছেলে সবাই জোরে জোরে হেসে উঠলো।

-ও তাই বুঝি।এ তো বাপ বাপ করছিস।তাহলে মেয়ে গুলো কে কি নিজের মেয়ে বলে মনে হয় না!তোর তো নাতনি ও আছে জানতাম।ব্যাটা শয়তান।

ছেলেটা জোরে মজিদ বুড়োর বুকের খাচাতে লাথি দিল।পুরো এতো জন ছেলের সামনে উলঙ্গ হয়ে বসে আছে মজিদ বুড়ো।বসে আছে বললে ভুল হবে।তাকে উলঙ্গ করা হয়েছে।সারা শরীরে মারের দাগ।ছিলে গেছে অনেক জায়গা।লেবু গাছের ডাল কেটেও তাকে পেটানো হয়েছে।কাটা গুলো শরীরে গেঁথে গেছে অনেক জায়গায় ।

-ভাই এই যে নেন।শেষ ডোজ টা দেন।

-না না।

একটা ছেলে হাতে শুকনো মরিচের গুড়ার প্যাকেট আর লবণ এনে সামনের ছেলেটার হাতে দিল।

-নে বুড়ো।আজ তোর গায়ে হলুদ হবে।

-না ভাই।হলুদ না।লঙ্কা লবন হবে।

সবাই অট্টহাসিতে ফেটে উঠলো।হাতে মরিচ আর লবন নিয়ে বুড়ো কাটা জায়গায় মাখিয়ে দিতে লাগলো।হাত পা বাধা অবস্থায় বুড়ো চিৎকার করছে যন্ত্রণা তে।

-দেখ।আর কখনো কোনো মেয়ের গায়ে হাত দিবি?খারাপ কথা বলবি?

-ছেড়ে দেও।আর জীবনে এই কাজ করব না।

-এরপর যদি দেখি দিনের বেলা পাবলিকের সামনে একদম ওটা কেটে দেব।

৪৫

সোফার ওপর চুপচাপ বসে আছে ইলা।সামনে একজন হুজুর আর ইশতিয়াক আর একটা লোক আছে।সেটা নীল।ইলা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে হুইল চেয়ারে বসা বয়স্ক মহিলা টিকে।আদিবা বেগম এসেই ইলার গালে মুখে চুমু খেয়ে হাতে গয়নার বাক্স ধরিয়ে দিয়েছেন।

তবে ইলা এতক্ষণে এটা বুঝে গেছে মাহির কি করতে চাইছে।

-হুজুর আপনি শুরু করুন।

-দাঁড়ান মাহির।

ইলার ডাক শুনে ইলার পাশে গিয়ে বসলো মাহির।

-কি হয়েছে পানিজল?

-কি করছেন আপনি?

-প্রস্তাব তো আপনাকে দিয়েছি লাম।আমি কি খারাপ কাজ করছি?

-আমি একজন গরীব মেয়ে।আরো বার ড্যান্সার।

-ছিলেন।কিন্তু আজ থেকে হবেন মিসেস মাহির আশহাব ।কোনো কথা বলবেন না পানিজল।আপনার আপনার পরিবারের দায়িত্ব নিয়েছি।আর আপনি শুধু আমার দায়িত্ব নিতে পারবেন না!

ইলা অবাক চোখে মাহিরের দিকে তাকালো।মাহিরের দু চোখ ভরা আবদার।

৪৬

-হ্যা নীল বলো।

-স্যার কাজ শেষ।

-গুড।এর কম লোকদের এভাবেই শাস্তি দিতে হয়।এই মজিদের জন্য কাল থেকে হয়তো দুটো মেয়ে অন্তত শান্তিতে চলাফেরা করতে পারবে। মুখ বুজে সহ্য করতে হবে না।

-হ্যা স্যার।বেটার ডোজ এখনো চলছে।

-সারা রাত চালাও।আমার পানিজলের সুখের সময় টা যেন ঐ শয়তান না কষ্ট পায়।

-ওকে স্যার। Best of luck for your new life.

-Thanks নীল।

ফোন কেটে দিল মাহির।বেলকনি থেকে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলো।বিছানার দিকে তাকাতেই মুখে হাসি ফুটলো মাহিরের।

গুটিশুটি মেরে বউ সাজে ইলা বসে আছে।

চলবে‌———–
#রৌদ্র_কুয়াশা

Suvhan Årag(ছদ্মনাম)

পর্ব ১৬

;;;;;

প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,ইনশাহআল্লাহ অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে আমার প্রথম উপন্যাস “আবেদিতা”।সবাই পাশে থাকবেন।

;;;;;

মাহির ধীর পায়ে ইলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।এটা দেখে ইলার গলা যেন আরো শুকিয়ে যাচ্ছে।শাড়ি খামচে ধরে বসে আছে ইলা।তবে কি এটাই চেয়েছিল মাহির?হয়তো তার ভালো মানুষির আড়ালে এই পশুত্বটা লুকিয়ে ছিল।সে বিয়ে নামক বৈধ বন্ধনে আবদ্ধ করতে চেয়েছিল ইলাকে ঠিকই।কিন্ত তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভোগ!মাহির ও কি আর পাঁচটা দেহলোভী পুরুষের মতো মানুষ রূপী জানোয়ার।ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে ইলার।

-পানি জল।

মাহিরের কথাতে ইলা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো।সামনে তাকালো ইলা।লাল রঙের শেরোয়ানি পরিহিত অবস্থায় মাহির দাঁড়ানো।মাহিরের ধবধবে চামড়ার ওপর যেন লাল রঙ একদম উপচে পড়েছে।ইলার চোখ মাহিরের ডান হাতের দিকে।এমনিতেই লাল রঙের শেরোয়ানির হাতা আবার হাতে কালো রঙের চেইনের ঘড়ি।এক কথায় মাহিরের হাতের প্রেমে যেন ইলা পড়ে গেছে।

-পানিজল কি দেখছেন?

-হুম।

ইলা এবার মাথাটা আরো উঁচু করে মাহিরের পা থেকে মাথা অবধি দেখে নিল।পুরুষ মানুষ অথচ তবুও গালে টোল পড়া।মুখে মুচকি হাসি।খাড়া খাড়া চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ছে।মুখে খোঁচা খোঁচা চাপ দাড়ি।এই মানুষ টা এ তো সুন্দর কেন?আগে তো খেয়াল করিনি।নাকি আজকে আমার মতিভ্রম হয়েছে।আবার চোখে কি একটু বেশিই ভালো লাগছে তাকে?ইলা মনে মনে ভেবে যাচ্ছে।কিন্তু উওর পাচ্ছেনা না।

-পানিজল।কি ভাবছেন?সেই কখন থেকে ডেকে চলেছি।আপনি কোন ধ্যানে মগ্ন আছেন?

মাহিরের দিকে আরেক নজর তাকিয়ে ইলা আরো গুটিশুটি হয়ে বসলো।মাহির বেশ বুঝতে পেরেছে ইলা হয়তো ভয় পাচ্ছে।কিন্তু কিসের ভয়?সেটা মাহির বুঝতে পারছে না।মাহির গিয়ে ইলার পাশে বসলো।মাহির পাশে বসতেই ইলা একদম লাফ মেরে খাটের কোনায় গিয়ে বসলো।মাহির বেশ অবাক হলো ইলার এমন কাজে।

-কি হয়েছে পানিজল?

-আপনি এজন্য আমাকে বিয়ে করেছেন তাই না?

-কোন জন্য?

-আমি বুঝতে পেরেছি।

-আপনি কি বুঝেছেন সেটা আপনি ভালো জানেন।এখন উঠুন।এসে ওজু করে নিন।

-কেন?

-দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করব।আমি কিন্ত রেডি আছি।জায়নামাজ বিছিয়ে দিচ্ছি।তাড়াতাড়ি আসুন।

-কিন্তু।

-কিন্তু কি?

-এই ভারী শাড়িতে কিভাবে?

-ওটাই করতে হবে আপনাকে।হাত মুখ ধুয়ে মুখের মেকাপ গুলো তুলে ফেলুন।শাড়ি বদলাতে পারবেন না ।তাড়াতাড়ি আসুন।

ইলা মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে খাট থেকে ওয়াশরুমের দিকে গেল।

-সব কিছু ঠিকই থাকতো।আরো কয়েক বছর আগেই তুমি এমন সাজে আমাদের সামনে থাকতে।মাঝখান থেকে এমন ঝড় বয়ে গেল।কেন বয়ে গেল আমিও জানিনা।এটুকু জানি এবার নিজের জন্য বাঁচতে হবে আমাকে।নিজের জীবন অন্যের কাছে তুলে দিয়েছি।অনেক খেলেছে তারা।আর নয়।এখন থেকে মাহির আশহাবের প্রতি শুধু তার ইলা পাখি তার পানিজলের অধিকার থাকবে।

একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মাহিরের ভেতর থেকে।

৪৭

-আমার বাবা একজন খুনি।দিনের পর দিন সে অত্যাচার করেছে আমার মাকে।আমি নিজের চোখে দেখেছি।আমার দাদী একটা মেয়ে হয়েও কখনো তার প্রতিবাদ করেনি। আমার দুজন ফুফু ছিল।তারা অবধি আমার মায়ের গায়ে হাত তুলেছে।অবশেষে সেই দিন ঘনিয়ে আসে।আমার তখন দশ বছর বয়স।বাবা ঐদিন খুব মারে আমার মাকে।মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে।সেদিনের পর আর আমার মা আমাকে কাছে ডাকেনি। কোলে তুলে খাবার খাইয়ে দেইনি।মামারা পুলিশে মামলা করেছিল।টাকার কাছে সব ধামাচাপা পড়ে যায়।বিচার হয়নি।পরে বাবা আরেক বিয়ে করে আনে।আমার মামা আমাকে তার বাড়ি তে নিয়ে যায়।সেই থেকে নিজের ছেলের মতো মানুষ করে।মামী মারা গিয়েছিল আর পাঁচ বছর আগে।এক বছর হলো মামা ও নেই।মামাতো বোনের সাথে যা যোগাযোগ।ওর বিয়ে হয়ে গেছে।মাঝে মাঝে আসে আমার খোঁজ নিতে। একাই থাকি আমি।সেই থেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমি।আইনের পথে থাকব।আমার সামনে একটা মেয়ে কেও অবিচার পেতে দেব না।

কথা গুলো বলে ধোয়া ওঠা কফির কাপ মুখে দিয়ে নিজের গলাটা ভিজিয়ে নিলেন ইন্সপেক্টর আরিয়ান।আরিয়ানের বিপরীত পাশে বসে থাকা সাংবাদিক তাকিয়ে আছেন অবাক চোখে।

-এজন্য আপনি এতো সাহসী?সত্যের জন্য ভয় পান না।

-হ্যাঁ তাই।সত্যের পথে লড়লে জীবনে ঝুঁকি আসবে,লাঞ্ছনা আসবে কিন্তু দিন শেষে এই পার আর ওপারে জয় সেই সত্যবাদীর ই হবে।

-এভাবেই কি একা থাকবেন?

-মানে?

জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আরিয়ান সাংবাদিকের দিকে তাকালো।

-মানে বলছি একা তো জীবন চলে না।

-কে বলে চলে না?চলছে তো।দিব্যি চলছে।

-প্রেম করেন নাকি?

-উহুম।ওসব ভালো লাগে না।

-কেন?

-মনের মতো কাউকে পাইনি।

-আপনার মতো এতো হ্যান্ডসাম একজন পুরুষ মনের মতো কাউকে পায়নি!অসম্ভব!

-সম্ভব।

-কেমন মেয়ে খুঁজছেন?

-বিধ্বস্ত।

-মানে?

-সে কলঙ্কিত হবে।

-মানে?এটা কেমন চাওয়া!

-পবিত্রতা তো সবাই খুজে।কিন্তু যে মেয়েটার জীবনটাই কলঙ্কময় তার ও তো অধিকার আছে কাউকে নিয়ে বাঁচার,ভালোবাসা পাওয়ার।এমন কাউকেই চাই আমি।সে যদি ধর্ষিত ও হয় তবুও তাকে মেনে নেব আমি।

-Are you serious!

-অবশ্যই।ধর্ষিত কখনো একটা মেয়ে হয় না।ধর্ষিত হয় একটা সমাজ,সেই সমাজ ব্যবস্থা।যারা ঐ ধর্ষক নামক কুলাঙ্গারদের মানুষ করতে পারেনি।

-তবে কি এভাবে জনে জনে দায়িত্ব নেবেন সবার?

-উহুম।একজনের নেব।মন একজনকে ই দেওয়া যায় আমার মতে।

-প্রতিদিন তো অনেক কেস ই পান।তাদের থেকে কাউকে বেছে নিন।

-উহুম।

-কেন?

-আমি চাই সে আসবে একদম অন্যরকম ভাবে।সে আসবে কুয়াশা হয়ে হুট করে ঠিক যেমন শীতের আভাস দেয় কুয়াশা।আমি তার রোদ হতে চাই।ঝাপসা টাকে পরিষ্কার করতে চাই।তাকে আলোর চাদরে মুড়ে নিতে চাই।আমি হব তার কুয়াশার রৌদ্র।

সাংবাদিক অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন আরিয়ানের দিকে ।তার কথাগুলো তিনি ঠিক হজম করতে পারছেন না।আরিয়ান সাংবাদিকের এমন দৃষ্টি দেখে মুচকি হাসলো।

-রাত হয়েছে।আমাকে আবার নিজের রান্না নিজের করতে হয়।আসি।

আরিয়ান বিল দিয়ে চলে গেল।সাংবাদিক এখনো বিস্মিত হয়ে চেয়ে আছেন আরিয়ানের পথের দিকে।সত্যি কি আজ ও এমন পুরুষ আছে?তিনি ভাবতেই পারছেন না।

৪৮

নামাজ শেষ করে খাটের ওপর গিয়ে বসলো ইলা।মাহির এসে ইলার পাশে বসলো।ইলার কাছে ঘেষে গেল আরো।এটা দেখে ইলার অবস্থা আরো খারাপ।

-পানিজল।আপনি ভয় পাচ্ছেন কেন?

-কককই?

মাহির মুচকি হেসে পকেট থেকে একটা বক্স বের করলো।তার ভেতর থেকে একটা আংটি বের করো।সিম্পিল ডিজাইনের।উপরে ছোট্ট করে লাভ শেপের ডায়মন্ড বসানো।ইলা চুপচাপ দেখছে মাহিরের কান্ড।মাহির ইলার একটা হাত ধরলো।সেটার রিং ফিংগারে আংটি টা পরিয়ে দিয়ে হাতের উল্টোপিঠে চুমু খেল।ইলা যেন আরো কেঁপে উঠলো মাহিরের ঠোঁটের স্পর্শে।

-পানিজল।আপনি এতো অপরূপ কেন?সাজ ছাড়া আপনি আরো বেশি সুন্দর।মনে হচ্ছে চাঁদ যেন আমার অন্ধকার ঘরে উঁকি দিচ্ছে।

মাহিরের কথাতে ইলা এবার বেশ লজ্জা পেয়ে গেল।চোখ নামিয়ে নিল।মাহির ইলার কপালে চুমু দিল।

-পানিজল,আজ থেকে যতদিন বেচে থাকব আপনার সবকিছু আমার।আপনার কষ্ট গুলো ও আমার।পানিজল আমাকে একটা জিনিস দেবেন।

-কি?

-আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেবেন।মা চলে যাওয়ার পর কেউ কখনো হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় না।দেবেন?আপনার কোলে মাথা রেখে ঘুমোতে চাই।

ইলা মাহিরের এমন আবদারে কি উওর দেবে বুঝতে পারছে না।এক টু আগে সে মাহির কে নিয়ে কি ভেবেছিল আর এখন কি দেখছে!ইলা পা দুটো একটু ছড়িয়ে বসলো।মাহির মুচকি হেসে ইলার কোলে মাথা রাখলো।

-আরেকটা জিনিস চাই আমার।

-আবার কি?

-তুমি বলার অধিকার।আপনি বলতে কেমন লাগে।

-আপনার যা ইচ্ছে হয় বলবেন।

-পানিজল শোনো।

মাহিরের মুখে শেষ কথাটা শুনে ইলার ভিতর যেন ঝড় বয়ে গেল।কাপাকাপা কন্ঠে ইলা বললো,

-বলুন।

-পানিজল তোমাকে ভালোবাসি আমি।খুব ভালোবাসি।

বলেই মাহির চোখ বুজে শুয়ে পড়লো ইলার কোলে।ইলার হাত ধরে মাথায় হাত বুলাতে ইশারা করলো।ইলা যেন বরফ হয়ে যাচ্ছে মাহিরের এমন আচরণে।ইলা ধীরে ধীরে মাহিরের চুলের ভেতর হাত ঢুকিয়ে হাত বুলাতে লাগল।

চুলগুলোকে মনে হচ্ছে একটা সমুদ্র।আর ইলার আঙুল গুলো এখানে সাতার কাটছে।ইলার বেল ভালো লাগছে মাহিরের মাথায় হাত বুলাতে ।
।””

চলবে———-ন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here