#পরিত্রাণ
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ৬
ক্লাবের ভেতরে উচ্চশব্দে ওয়েস্টার্ন মিউজিক বাজছে! উঠতি বয়সী তরুন, তরুণীরা গ্রুপ বেধে কিংবা জোড়ায়, জোড়ায় গানের তালে তালে নাচানাচি করছে! মাঝবয়সীরাও আছে। তবে তাদের বেশিরভাগই গ্যাম্বলিংয়ের আসরে! আর এসব কিছু মাঝখানে একপাশের একটা টেবিলে বসে একের পর এক পেগ গলায় ঢালছে অনিক! চারপাশে কি হচ্ছে তা নিয়ে ওর কোন কৌতূহল নেই। তাঁর একমাত্র মনোযোগের বিষয় হচ্ছে গ্লাসে রাখা মদ! নেশায় ঢুলুঢুলু অবস্থা! তবুও উঠার নামগন্ধ নেই। ঝিমুতে, ঝিমুতে গ্লাসে মদ ঢালছে আর গিলছে!
আজকে আর অফিস ছুটি পর্যন্ত অপেক্ষা করে নি অনিক। ইদানীং রুমু খুব বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। অফিস ছুটির আগেই রহমানকে অফিসের নিচে পাহারায় বসিয়ে রাখে। যার ফলে ঘরে, বাইরে সবখানে অনিকের মদ্যপান প্রায়ই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু আজকে অনিক ফাঁকি দিয়েছে। রহমান পৌছানোর আগেই দুপুরে সে অফিস ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে। তারপর সোজা ক্লাব!
★
নিজের ঘরে বসে বই পড়ছে রুমু। অনিক এখনো ফেরে নি। ইউসুফ সাহেবও বাসায় নেই। তিনদিনের জন্য ঢাকার বাইরে গেছেন। সারাদিন একা একাই সময় কেটেছে রুমুর। সন্ধ্যা থেকেই অনিকের আসার অপেক্ষায় ছিলো সে। রহমানের আজকে একটু কাজ থাকায় অনিকের অফিসে যেতে দেরী করে ফেলেছে। কিন্তু গিয়েও আর লাভ কি? অনিক তো তাঁকে ফাঁকি দেবে বলে সেই দুপুরেই বেরিয়ে গেছে। অফিসে ছুটির পর অনিকের কোন খোঁজ না পেয়ে রহমানের বুঝতে বাকি রইলো না সুযোগ পেয়ে অনিক কেটে পড়েছে। ড্রাইভারকে নিয়ে ক্লাবের দিকে রওনা দিলো সে।
এদিকে রুমু চিন্তায় আছে। ঘড়িতে রাত দশটা! অনিক এখনো আসছে না কেন? রোজ তো আরো আগে ফিরে আসে। রহমানকে ফোন করবে কি না ভাবতেই টেলিফোন রিং বেজে উঠলো! আননোন নাম্বার! বিনয়ী গলায় সালাম ফিয়ে ফোন রিসিভ করলো সে।
-‘হ্যালো আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন?’
-‘ওয়ালাইকুম আসসালাম, ছোট আম্মা আমি রহমান।’
গানের উচ্চশব্দের দরুণ ওপাশের কথা ঠিকভাবে শোনা যাচ্ছে না। রহমান দুতিনবার চেঁচিয়ে বলার পর রুমু শুনতে পেলো। জবাবে সেও চেঁচিয়ে বললো,’হ্যাঁ, চাচা আমি শুনতে পাচ্ছি। আপনি বলুন।’
-‘আমি তো ক্লাবে ছোট আম্মা! অনিক বাবাজি এখানে। কিন্তু সে তো বাসায় আসবে না বলছে? এখন কি করবো?’
-‘বাসায় আসবে না? কেন? ও কোথায় চাচা?’
-‘আমার সাথে। তবে হুঁশ নাই। আবোলতাবোল বকছে!
রুমুর বুকটা ধক করে উঠলো। অনিক আবার মদ খেয়েছে? এতকরে বারণ করার পরেও? তবে কি রুমুর সকল চেষ্টা ব্যর্থ? অনিককে কি কোনভাবেই মদের নেশা থেকে ফেরানো যাবে না? হায় খোদা! তুমি কি একটুও শান্তিতে থাকতে দেবে না রুমুকে? দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শীতল কন্ঠে বললো,’ওকে একটু ফোনটা দিন তো চাচা!’
অনিক কিছুতেই কথা বলবে না! নেশা ভালোমতোনই চেপে বসেছে! পাগলামি শুরু করে দিলো। রহমান প্রায় জোর করে ওর কানে ফোন ধরিয়ে দিলো। অনিচ্ছাসত্ত্বেও হ্যালো বললো সে। ওপাশ থেকে রুমু গম্ভীর কন্ঠে বললো,’তুমি আবার মদ খেয়েছো?’
-‘ইয়েস!’, মাথাটা খুব জোরে ঝাঁকি দিলো অনিক। রহমান দুহাতে তাকে জড়িয়ে ধরলোছ নতুবা এক্ষুনি পড়ে মাথা ফাটাতো।
-‘খাওয়া শেষ হয় নি?’, হতাশ শোনালো রুমুর কন্ঠস্বর!
-‘নো।’, এবারেও সজোরে মাথা দোলালো অনিক।
-‘শেষ করো। শেষ করে তাড়াতাড়ি বাসায় এসো।’
-‘নো।’
রুমুর ভেতরটা জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে! বহু কষ্টে মেজাজ সামলে নিলো সে। অনিক এখন নেশার ঘোরে! এইমুহূর্তে তাঁর সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করা মানে ঝামেলা বাড়ানো। হিতে বিপরীত হতে পারে। দেখা গেলো অনিক রেগে গিয়ে বাসায় আসতেই রাজি হবে না। রুমু নিজের সমস্ত রাগ, ক্ষোভ, অভিমান, ইগো একপাশে সরিয়ে যথাসম্ভব নরম গলায় বললো,’দোহাই তোমার, লক্ষ্মী না তুমি? প্লিজ বাসায় এসো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি!’
অনিক চুপ করে রইলো। রুমুর বলা কথাগুলো কি সে শুনেছে? শুনেছি কি? কোথায় কি লাগছে? একদম বুকের মাঝখানটায়? ফোন ছেড়ে দিলো সে।
রুমু নিশ্চিন্ত হতে পারলো না। অনিক কি বাসায় ফিরবে? নাকি ফিরবে না! না ফিরলে? নাহ যত যাই হোক বাসার বাইরে অনিককে কিছুতেই রাত কাটাতে দেওয়া যাবে না! অনেক কষ্টে ওর বাসায় ফেরার অভ্যেস করেছে রুমু। এর ব্যতিক্রম হওয়া যাবে না। ব্যতিব্যস্ত হয়ে রহমানকে পুনরার কল দিলো সে। ফোন রিসিভ করে রহমান খুশিখুশি গলায় বললো,’অনিক বাবাজিকে নিয়ে আমি বাসায় ফিরছি ছোট আম্মা!
★
সকাল বেলা অনিকের ঘুম ভাঙলো দেরীতে।জানালার ফাঁক দিয়েই রোদ এসে মুখে লাগতেই চোখ মেললো সে। সঙ্গে সঙ্গে উঠলো ন। আড়মোড়া ভেঙ্গে হাই তুললো। বেশ কিছুক্ষন নিরবে ঝিম মেরে, ধীরেসুস্থে বিছানা ছেড়ে উঠলো।
ফ্রেশ হতে যাবে এমন সময় খট করে ওয়াশরুমের সিটকিনি খুলার আওয়াজ হলো। মাথায় টাওয়েল প্যাচিয়ে ধোয়া জামাকাপড় হাতে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরোলো রুমু। অনিকের চোখে চোখ পড়তেই চুপচাপ পাশ কাটিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। এক এক করে ভেজা কাপড় গুলো রোদে শুকাতে দিলো। অনিক আড়চোখে সেদিকে একবার তাকিয়ে ফ্রেশ হতে ঢুকে গেলো।
বেরিয়ে এসে দেখলো ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে রুমু। তাঁর চোখমুখের অবস্থা গম্ভীর! কারণটা মনে মনে আন্দাজ করে নিলো অনিক। সেই সাথে নিজের ওপর রাগও হলো! কেন সে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না! অফিস থেকে বেরোনোর সময় ভেবছিলো দু এক পেগ গিলেই বাসায় চলে আসবে। এতে করে রুমুও টের পাবে না অশান্তিও হবে না। কিন্তু নাহ! হতভাগা মদের গ্লাস তাকে সব ভুলিয়ে দিলো! নেশা বেশিই করে ফেলেছে সে! এখন এই লৌহমানবী নিশ্চয়ই বাক্যবিস্ফোরণ জর্জরিত করে দেবে তাকে! উফ!
অবসম্ভাবী ঘূর্ণিঝড় ঠেকাতে পূর্বপ্রস্তুতিস্বরূপ রুমুর দিকে তাকিয়ে বোকার মত হাসলো সে। পরিস্থিতে স্বাভাবিক করতে চাইলো! কিন্তু রুমু ফিরেও তাকালো না। মুখ ঘুরিয়ে নিলো! মাতালের সঙ্গে কোন কথা নেই তাঁর! নিজের মত রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো!
অনিক প্রথমে অবাক হলেও মনে মনে খুশি হলো। লৌহমানবী চুপ? হোয়াট আ সারপ্রাইজ?
যাক রাগের বাহানায় আপাতত কিছুদিন রুমু দূরে সরে থাকলেই হলো! আর কিছু না হোক শান্তিতে অন্তত ড্রিংক্স করা যাবে। ফ্রেশ হয়ে অফিসের জন্য তৈরী হয়ে একেবারে নিচে নামলো সে। রুমু টেবিলেই বসে ছিলো। কোন কথা বললো না। অনিকও আগ বাড়িয়ে কোন কথা জিজ্ঞেস করলো না। কি দরকার সেধে সেধে ঝামেলা বাড়ানোর। চুপচাপ আছে! শান্তি বিরাজ করছে। মুখ খোলা মানেই অনিকের শান্তি নষ্ট! চুপচাপ নাশতা করে বেরিয়ে পড়লো সে। রুমু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে টেবিল থেকে উঠে গেলো।
★
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে সেদিন রাতে কিন্তু অনিক ড্রিংক করলো না। মন চাইলো না! বন্ধুদের শত জোরাজুরি সত্ত্বেও বাসায় ফিরে এলো সে। রুমে ঢুকে দেখলো বিছানায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে রুমু। অনিক অবাক হলো। এই সময় তো রুমু কখনো শুয়ে থাকে না! শরীর খারাপ নাকি তাঁর। কাছে গিয়ে কপালে হাত দিয়ে জ্বর আছে কি না চেক করলো। সঙ্গে সঙ্গেই কাথার ভেতর থেকে দুষ্টু বেড়ালের মত উঁকি দিলো রুমু। চোখ খুলে নিরস হাসলো। শরীর ঠান্ডাই আছে, আশ্বস্ত হলো অনিক!
রুমু বাড়িয়ে অনিকের ডানহাতখানা টেনে কাথার নিচে ঢুকিয়ে নিলো। আলতো করে নিজের গালে ছুঁইয়ে বললো,’একটু বসো না আমার পাশে?’ বাধ্য হয়ে অনিক বসে পড়লো। হঠাৎ করেই রুমুর এমন অদ্ভুত আচরণ তাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে!
মন বলছে এই দুষ্ট রূপিণী ছলানাময়ী নিশ্চয়ই তাঁকে ফাঁসানোর জন্য নতুন কোন প্ল্যান করেছে। নতুবা সকালে রাগ এখন আবার আবেগ! কাহিনী তো কিছু একটা আছেই। নিজেকে নিজেই সাবধান করে বললো,’সাবধান অনিক! সি ইজ ভের্যি ডেঞ্জারাস!’
‘কি হয়েছে’ কথাটা জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না তাঁর। জিজ্ঞেস করতে ভয় করছে! রুমুর বিশ্বাস নেই। উত্তরে শোনা যাবে ক্ষতিটা অনিকেরই হয়েছে! তারচেয়ে জিজ্ঞেস না করাই ভালো। চুপচাপ বসে রইলো সে।
কিন্তু রুমু তাঁর আশঙ্কাকে পুরোপুরি সত্যি প্রমান করে দিয়ে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বললো,’আমি একটা ভুল করে ফেলেছি। তুমি প্লিজ রাগ করবে না বলো?’
ধড়াস করে লাফিয়ে উঠলো অনিকের বুকের ভেতরটা! রুমু কি ভুল করেছে? জবাবে একটা কথাই মাথায় এলো,’বেতনের টাকা!’ ওহ নো! নতুবা এই মেয়ে এতসহজে নরম হওয়ার কথা না। গতকালই বেতন পেয়ে শান্তি মত একটু ড্রিংক করেছিলো অনিক। এখন যদি সত্যি সত্যিই রুমু টাকাটা হাতিয়ে নেয় তাবে সারা মাস ধার করে চলতে হবে তাঁকে। ইউসুফ চৌধুরীর টাকায় সে ভুলেও হাত দেবে না। কিন্তু রুমু কি সত্যিই অঘটনটা ঘটিয়েছে?
রুমুর কাঁদোকাঁদো মুখের দিকে চেয়ে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো সে,’কি করেছো তুমি?’
-‘তুমি তো জানোই আমাদের হানিমুনে যাওয়া হয় নি?’
পুরোটা শোনার ধৈর্য রাখতে পারলো না অনিক। পাল্টা প্রশ্ন করলো,’হ্যাঁ তো?’
-‘টাকাগুলো খরচ হয়ে গেছে!’ অত্যাধিক দুঃখি দুঃখি একটা ভাব করে জবাব দিলো রুমু। অনিক ভালো করেই জানে সে মোটেও দুঃখিত নয়। দুঃখ পাবার ভান করছে। একশো একটা প্যাঁচ এই মেয়ের মাথায়! রুমু কিন্তু আগের মতই মিনমিন করে বললো,’আমি হানিমুন স্যুট বুক দিয়ে দিয়েছি। আগামী পরশু আমরা সুইজারল্যান্ড যাবো। তোমার বেতনের টাকায় পুরোপুরি হয় নি অবশ্য,বিয়েতে আমি উপহার হিসেবে আমি যেই টাকাগুলো পেয়েছিলাম সেগুলো সহ মিলিয়ে অ্যারেঞ্জ করেছি। তুমি রাগ করো নি তো?’
অত্যাধিক শোকে অনিক পাথর! এইমুহূর্তে তাঁর কি করা উচিৎ? সে কি রুমুর খুব জোরে একটা ধমক দেবে নাকি তুলে আছাড় মারবে? বুঝতে পারছিলো না। মুখটা প্রায় কাঁদোকাঁদো হয়ে গেলো। আক্ষেপের সুরে বললো,’কেন করছো আমার সাথে এমন?..কেন? আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি রুমু? আমার টাকাগুলো এভাবে…!’ পুরো কথাটা শেষ করতে পারলো না সে। তার আগেই প্রায় কেঁদে ফেলার দশা!
রুমু কাথার নিচ থেকে মুখ টিপে হাসলো। বেশ হয়েছে! বেতন পেয়ে খুব মদ খাওয়ার শখ হয়েছিলো না? এবার খাও! রুমুও দেখবে কতদিন সহ্য হয় তোমার! তোমাকে ধরাশায়ী করার জন্য এর চেয়ে ভালো টেকনিক আর হতেই পারে না। মদের বদলে মধুই হবে তোমার উপযুক্ত শিক্ষা! মধু!..মধুচন্দ্রিমা! ইশ কি লজ্জা! কাথার ভেতর মুখ লুকিয়ে নিলো রুমু।
.
.#পরিত্রাণ
অরিত্রিকা আহানা
পর্বঃ৭
খুব তোড়জোড় করে সুইজারল্যান্ডে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রুমু। যদিও অনিকের মুড অফ! তার এতগুলো টাকা..! রুমুর এটা মোটেই উচিৎ হয় নি। কিন্তু কি আর করা! খরচ যখন হয়েই গেছে তখন তো আর কিছু করার নেই। রুমুর পীড়াপীড়িতে বাধ্য হয়ে অফিস থেকে ছুটি নেওয়ার জন্য বেরিয়ে গেলো সে।
বাসার সমস্ত কাজ গুছিয়ে সন্ধ্যার দিতে ব্যাগ গোছাতে রুমে ঢুকলো রুমু। আলমারি থেকে জামাকাপড় বের করে এক এক করে ব্যাগে ঢুকাচ্ছিলো, হঠাৎ টুং করে মেসেজ টোন বেজে উঠলো। গা করলো না। ফের বেজে উঠলো, পরপর তিনবার বাজলো! ব্যাগ গোছাতে গোছানোর ফাঁকে ফাঁকেই মেসেজ অপশন চেক করলো রুমু। আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে। কৌতূহল বশত ভেতরে ঢুকলো সে। স্ক্রিন টাচ করতেই দুজন চুম্বনরত নরনারীর ছবি দেখা গেলো। বিরক্ত হলো রুমু! ছবিটা ডিলিট করতে গিয় ভালো করে আরো একবার দেখলো। এবার সবকিছু ক্লিয়ার। ছবির একজন রুমুর অচেনা হলেও অপরজনকে চিনতে তার অসুবিধে হলো না। অনিক!..ভোঁ ভোঁ ঘুরতে শুরু করলো রুমুর চারপাশটা। হাতে পায়ে কাঁপুনি শুরু হলো। সমস্ত পৃথিবী মিথ্যে মনে হলো। এ কি দৃশ্য দেখছে সে। হায়, খোদা! অনিক কি তবে? ছবিটাকে আরো ভালো করে দেখলো। নাহ কোন ভুল হয় নি। অনিকই! ফোন হাতে নিয়ে পাথরের মত বসে রইলো রুমু। এইমুহূর্তে তাঁর কি করা উচিৎ?
★
একসাথে তিনটে ঘুমের ওষুধ খেয়েছে রুমু। কিন্তু ঘুম আসছে না। বুকের ভেতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। অনিক কেন এমন করলো, কেন তাকে ভালোবাসলো না কেন সে রুমুকে এভাবে কষ্ট দিলো?
বিছানা ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে ত্রস্ত পায়ে ছাদের সিঁড়ির বেয়ে উঠতে শুরু করলো সে। পা দুটো টলছে। মাথা ঘুরছে। ছাদের মাঝখানে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো। প্রচন্ড ঘোর কাজ করছে ওর ভেতর। খুব মরতে ইচ্ছে করছে! বেঁচে থেকে কি লাভ? কার জন্য বাঁচবে? অনিকের কাছে রুমুর ভালোবাসার কোন মূল্য নেই। তাঁর হৃদয়টকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে অনিক। কেন রুমুর জীবনটা এমন হলো! কেন অনিক রুমুকে বুঝলো না।
অন্ধকারে এদিক ওদিক ঘুরে ছাদের কার্নিশ ঘুরে বের করার চেষ্টা করলো। লাফ দিয়ে মরে যাবে সে! রুমু ভেবেছিলো অনিক আর যাই হোক চরিত্রহীন নয়। কিন্তু রুমুর ধারণা ভুল। অনিক চরিত্রহীন, মাতাল, লম্পট! কিন্তু আফসোস! এই কথাগুলো বলার মত কেউ নেই রুমুর। বাবা মাও তাঁকে পর করে দিয়েছে! কাকে নিজের দুঃখের কথা বলবে রুমু?
তাই রুমু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, মরবে সে। এমন স্বামীর ঘর করার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো। সবার শিক্ষা হোক! বিড়বিড় করে বললো,’হোল ওয়ার্ল্ড ইজ ফেইক। ইভেন লাভ ইজ ফেইক। অল অফ ইউ আর হিপোক্রেট!’
রেলিং এর কাছ ঘেষে দাঁড়ালো সে। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ঘুমের নেশা হঠাৎ করেই উবে গেলো। কেন মরতে যাচ্ছে সে? কার জন্য যে তাকে ভালোবাসে না তাঁর জন্য? রেলিং এর পাশে হেলান দিয়ে বসে দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেললো সে। রুমু মরবে না! কক্ষনো না! তৎক্ষণাৎ উঠে দাঁড়ালো সে, মাথা ঘুরতে শুরু করলো। ওষুধের কাজ শুরু হয়ে গেছে বোধহয়। ঢুলে পড়ে যাচ্ছিলো, দুটো শক্ত হাত তাঁর কোমর চেপে ধরে আটকালো। টেনে মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে। রুমুর মাথা ঝিমঝিম করছে। চোখ পিটপিট করে সামনের মানুষটার দিকে চেয়ে রইলো সে। অনিক!
-‘কি করছিলে তুমি? এতবার ডাকলাম জবাব দিচ্ছিলে না কেন?’, উদ্বিগ্নমুখে প্রশ্ন করলো অনিক। তার কথাগুলো ঠিকমত কানে গেলো না রুমুর। অস্পষ্ট শোনালো সবকিছু। ধীরে ধীরে জবাব দিলো সে,’শুনতে পাই নি!’
-‘কি হয়েছে? এই অবস্থা কেন তোমার? কি খেয়েছো তুমি?
-‘কিচ্ছু খাই নি।’
-‘তাহলে এতরাতে একা দাঁড়িয়ে কি করছিলে?’
-‘মরতে এসেছি।’
অনিক অবাক হয়ে রুমুর মুখের দিকে চেয়ে রইলো। রুমুকে সে শক্ত করে ধরে রাখা সত্ত্বেও রুমুর মাথাটা এদিক ওদিক দুলছে। চাঁদের আলো ওর ধবধবে ফর্সা শরীরে এসে পড়েছে। অনিকের মনে হচ্ছে জ্যোৎস্না রাতে ইন্দ্রপুরীর কোন অপ্সরী দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে।
-‘মরতে এসেছিলে? কেন?’
-‘তোমাকে বলবো না।’
অভিমানে মুখ লুকিয়ে নিলো রুমু। অনিক ওকে টেনে রেলিং এর পাশ থেকে সরিয়ে আনলো। নরম গলায় বললো,’কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন? কিসের দুঃখ তোমার?’
রুমু ফ্যালফ্যাল করে তাঁর দিকে চেয়ে থেকে শেষে কেঁদে ফেললো। দুহাতে অনিকের গলা জড়িয়ে ধরে ডুঁকরে উঠে বললো,’কেন তুমি আমাকে ভালোবাসলে না? কেন? আমি কি দোষ করেছি?’
অনিক আর সময় নষ্ট করলো না। পাঁজকোলা করে রুমুকে তুলে নিয়ে তরতর করে ছাদের সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করলো। নিচে নামতেই রহমান দৌড়ে এলো। চিন্তিতমুখে জিজ্ঞেস করলো,’কি হয়েছে?’
-‘ঘুমের ওষুধ খেয়েছে বোধহয়। চাচীকে একটু আসতে বলেন।’
ভয়ে ফ্যকাশে হয়ে গেলো রহমান মুখ। দৌঁড়ে গিয়ে সফুরাকে খবর দিলো সে।
রুমুকে খাটে শুইয়ে দিয়েছে অনিক। চোখ খুলে রাখতে পারছে না সে। ওষুদের প্রভাবে প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। অনিক তাঁকে শুইয়ে দিয়ে সফুরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,’দুধ ছাড়া, কড়া লিকার করে একমগ চা নিয়ে আসেন তো চাচী। এক্ষুনি!’ সফুরা চা আনতে বেরিয়ে গেলো। রুমু অবস্থা তখনো ঢুলুঢুলু। অনিক পাশে বসতেই চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বললো,’তুমি আমার সামনে থেকে সরে যাও, নইলে আমি গলায় ফাঁস দেবো !’
অনিক বিস্মিত হতভম্ভ! রুমুর হয়েছে টা কি? যাইহোক আপাতত ওকে সজাগ রাখতে হবে। অনিক আলতো ঝাঁকি দিয়ে বললো,’কি হয়েছে তোমার? ঘুমের ওষুধ কয়টা খেয়েছো?
রুমু জবাব দিলো না। অনিক আবারো ঝাঁকি দিলো। পরপর বেশ কয়েকবার ঝাঁকালো। ধমক দিয়ে বললো,’খবরদার,একদম চোখ বন্ধ করবে না তুমি! এই চোখ খোলো, খোলো বলছি। কে বলেছে তোমাকে ঘুমের ওষুধ খেতে? কয়টা খেয়েছো?’
-‘তিনটা!’, রুমুর ধীরে ধীরে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
অনিক আবারো পাঁজাকোলা করে ওকে তুলে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। ঝরনার নিচে দাড় করিয়ে দিয়ে বললো,’বমি করার চেষ্টা করো। গলায় হাত ঢুকাও!’
-‘না।’
-‘নাহলে কিন্তু আমি আবার মদ খাবো?’
এবার কাজ হলো! কিন্তু এই অবস্থায়ও অনিকের বারোটা বাজাতে ভুললো না রুমু। গলায় হাত ঢুকিয়ে অনিকের গায়ের ওপরেই বমি করতে শুরু করে দিলো সে। অনিক চোখ পাকিয়ে বললো,’বড্ড বেশি জ্বালাচ্ছো তুমি? একদম জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেবো।’
-‘ছোটলোক!’
-‘আবার?’
-‘বলবো, একশোবার বলবো। তুমি একটা ছোটলোক।ছোটলোক, ছোটলোক, ছোটলোক!’
-‘কি করেছি আমি?’
রুমু দুপাশে মাথা দুলিয়ে বললো,’বলবো না।’ তারপর অনিককে সজোরে ধাক্কা মেরে বললো,’ছাড়ো আমাকে, ছাড়ো বলছি। একদম আমাকে ধরবে না ?’
-‘তুমি অসুস্থ, ছেড়ে দিলে পড়ে যাবে।’
-‘পড়লে পড়বো। তোমার তাতে কি?…ছাড়ো আমাকে।’
তারপর দুপদাপ অনিকের বুকে কিল বসিয়ে দিলো সে। ধাক্কা সামলাতে অনিক তাঁর দুহাত নিজের মুঠোয় চেপে ধরে বললো,’বেশি বাড়াবাড়ি করলে একদম বালতিতে চুবিয়ে মেরে ফেলবো।’
-‘মারো। দেখি তোমার কত ক্ষমতা!’
তর্ক করে লাভ নেই! রুমুর কাছে জবাব রেডিই থাকে! অনিক হতাশ হয়ে রুমুকে শান্ত করার চেষ্টা ছেড়ে দিলো। রুমুর হাত চেপে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো সে। রুমুর বমিতে তাঁর পুরো গা মাখামাখি। গন্ধ বেরোচ্ছে! রুমুকে সরিয়ে নিজে ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে নাক সিঁটকে বললো,’আমি নাকি বদ্ধ মাতাল, অভদ্র! অমানুষ, ছোটলোক! এখন আমার গায়ে বমি করলো কে? আমি কবে কার গায়ে বমি করেছি?’ অনিকের খোঁটা শুনে রুমু আড়চোখে একবার চেয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। রাগে গজগজ করে বললো,’কে বলেছে আমার কাছে আসতে? আমি বলেছি? কেন এসেছো? নির্লজ্জ!’
বাইরে থেকে সফুরার গলার আওয়াজ পেয়ে অনিক বেরিয়ে এলো। চা নিয়ে এসেছে সে। অনিক বেরিয়েচায়ের মগটা সফুরার হাত থেকে নিয়ে তাঁকে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিলো রুমুর জামাকাপড় চেইঞ্জ করে দেওয়ার জন্য। তারপর নিজেও চেইঞ্জ করে নিলো।
রুমুর জামাকাপড় চেইঞ্জ করে দিয়ে সফুরা বেরিয়ে গেলে তাঁর আশে চেয়ার টেনে বসলো অনিক। হঠাৎ করেই রুমুর এমন অদ্ভুত আচরণ তাঁকে বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। রুমু তো এমন করার মত মেয়ে না। কি হয়েছে ওর? অনিক জানে, রুমু তাঁর প্রতি দুর্বল। কিন্তু এটা কি শুধুই দুর্বলা নাকি অন্যকিছু? রুমু কি তাঁকে ভালোবাসে? কিন্তু ছাদে যখন অনিক রুমুর হাত ধরেছিল তখন রুমুর চোখে স্পষ্ট ঘৃণা দেখতে পেয়েছিলো সে। তা নিয়ে অবশ্য অনিকের মাথাব্যথা নেই। রুমু তাকে আগেও ঘৃণা করতো। এখন যদি আবার নতুন করে করে তাতেও কোন সমস্যা নেই। কিন্তু রুমু আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলো কেন?
চায়ের মগটা রুমুর দিকে বাড়িয়ে দিতেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো রুমু। অনিক ধমক দিলো। একপ্রকার জোর করেই চা খাওয়ালো। তারপর ধীরেসুস্থে তাঁকে পর্যবেক্ষণ করে সন্দিগ্ধ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,’কি হয়েছে তোমার? এমন করছো কেন?’
-‘সেটা জেনে তুমি কি করবে? তুমি যাও তোমার প্রেমিকার কাছে!’
-‘কি?’, খানিকটা জোরেই চেঁচিয়ে উঠলো অনিক।তার চোখে সীমাহীন বিস্ময়! রুমু পাত্তা দিলো না। বললো,’তোমার গার্লফ্রেন্ডের কাছে যেতে বলেছি।’
অনিক হাসলো। বললো,’কে বলেছে তোমাকে এসব? পাগল নাকি তুমি? তোমাকেই সামলাতে জান বেরিয়ে যাচ্ছে নতুন করে আবার গার্লফ্রেন্ড?’
রুমু মুখ ভেংচি দিয়ে বললো,’ঢং!’
এবার অনিককে হতাশ দেখালো। বিরক্ত গলায় বললো,’হেঁয়ালি না করে কি হয়েছে বলবে? আমি টেনশনে আছি।’
-‘জেনে খুশি হলাম।’
-‘কি?’
-‘এই যে তুমি আমাকে নিয়ে টেনশন করো!’
-‘প্লিজ হেয়ালি বন্ধ করো। বলো কি হয়েছে?’
-‘হেঁয়ালি আমি করছি না তুমি করছো?’
রুমুর খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে। একে তো তাঁকে ঠকিয়েছে, তারওপর নাটক করে যাচ্ছে। দাঁতেদাঁত চেপে বললো,’আমি সব জানি। দয়া করে, তোমার এসব নাটক আমাকে দেখাতে এসো না।’
-‘তুমি দয়া করো প্লিজ। কি হয়েছে, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’
মিথ্যেবাদীর চেহারায় একধরনের ভয়ের লক্ষন দেখা যায়। রুমু বেশ খেয়াল করে দেখলো এই চেহারায় সেই ভয়ের বিন্দুমাত্র ছাপ নেই!…কেন?… এ তো বিভ্রান্ত, বিস্ময়াবিষ্ট চেহারা। মন টা খারাপ হয়ে গেলো তাঁর! অনিক এখনো তাঁকে ঠকাচ্ছে? করুণ গলায় বললো,’যে মেয়েটিকে তুমি চুমু খেয়েছিলে সে কি আমার চাইতেও সুন্দরি?’
অনিক চোখবড় বড় করে ফেললো। বললো,’আমি চুমু খেয়েছি? কোথাকার মেয়েকে?’
আর সহ্য করতে পারলো না রুমু! প্রচন্ড অনিচ্ছাসত্ত্বেও ছবিটা বের করে তাচ্ছিল্য ভরে অনিকের সামনে ধরলো সে। অনিক ভ্রু কুঁচকে ফেললো। রুমু হাত থেকে ফোনটা নিয়ে জুম করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। মিনিট খানেক বাদে পুরো ঘটনাটা ক্লিয়ার হলো তাঁর কাছে। মনে মনে রুমুর ওপর বিরক্ত হলো। সামান্য একটা চুমুর জন্য কেউ আত্মহত্যা করতে যায়? এদিকে রুমু হাতেনাতে ধরতে পেরেছে ভেবে মনে মনে শান্তি পেলো। এবার অনিক কি বলবে? এতক্ষন তো খুব নাটক করছিলো! উত্তরের অপেক্ষায় অনিকের মুখের দিকে চেয়ে রইলো সে। ওকে অবাক করে দিয়ে অনিক বললো,’আমি খেয়াল করি নি।’
রাগে রুমুর পিত্তি জলে গেলো! পাবলিক প্লেসে দাঁড়িয়ে প্রেমিক প্রেমিকার মত চুমু খেয়েছে আর এখন বলছে সে খেয়াল করেনি। পাগলেও বিশ্বাস করবে না এই কথা। তবুও রুমু প্রশ্ন করলো,’তাহলে চুমু খেয়েছিলে কি করে?’
-‘ইট ওয়াজ আ ফ্র্যাংক কিস। মেয়েটা আমার সাথে ফ্র্যাংক করছিলো। ইউরোপে অহরহ এসব ঘটে! আমার সাথেও হয়েছিলো। আমি কিছু বোঝার আগেই মেয়েটা হুট করে আমাকে চুমু খেয়ে নেয়। ঘৃণায় আমার বমি আসছিলো কিন্তু কিচ্ছু করার ছিলো না!’
-‘আমাকে বলো নি কেন?’
-‘কারণ ঘটনাটা তিনবছর আগের। ভার্সিটি পড়া কালীন সামার ভেকেশনে দেশের বাইরে ঘুরতে গিয়েছিলাম। তখনকার ঘটনা। তুমি এই ছবি পেলে কার কাছ থেকে?’
-‘আননোন নাম্বার থেকে কেউ একজন আমাকে পাঠিয়েছে।’
অনিককে চিন্তিত দেখালো। কপালে কুঞ্চন দেখা দিলো তাঁর! আননোন নাম্বার থেকে কে পাঠিয়েছে? কেন পাঠিয়েছে?রুমুর কাছেই বা কেন পাঠিয়েছে? তাও এতদিন পর?
রুমু অধীর আগ্রহে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থেমে বললো,’তারমানে তুমি নিজে ইচ্ছেতে ঐ মেয়েটাকে চুমু খাও নি?’
অনিক মুচকি হাসলো। বললো,’আমি তোমাকে যতটা স্ট্রং ভেবেছিলাম তুমি মোটেও ততটা স্ট্রং নও, রুমু চুমু। তুমি খুব বোকা!’
রুমু ছোট বাচ্চাদের মত প্রতিবাদের সুরে বললো,’বলো না প্লিজ!’
অনিক আলতো করে ওকে কাছে টেনে নিয়ে বললো,’না আমি ইচ্ছে করে ঐ মেয়েটাকে চুমু খাই নি।আই হেইট গার্লস!’
রুমু একফোঁটাও নড়লো না। বরঞ্চ অনিকের বুকের ভেতর আরেকটু জেঁকে বসে বললো,’আই অলসো।’ অল্পের জন্য জান চলে যাচ্ছিলো বেচারির! তাঁর কথা শুনে অনিক হো! হো! করে হেসে ফেললো। ইশ! কি আদুরে !
.
.
.
চলবে
.
চলবে