দায়িত্ব পর্ব ৮

#দায়িত্ব
#পর্ব_৮
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই

শায়েরিরা যেতে যেতে রাস্তায় গাড়ি দাড় করিয়ে আইসক্রিম ফোসকা চকোলেট সব খেয়েছে… ঝাল মিক্সড একটা ফোসকা জোর করে শায়েরি শ্রেয়ানকে খাইয়ে দেই… ব্যসসস তাতেই শ্রেয়ানের অবস্থা নাজেহাল… একদম লাল হয়ে গেছে শ্রেয়ান..এমনিতেই শ্রেয়ান ঝাল একটু কম খাই তার মধ্যে শায়েরি দুষ্টুমি করে শ্রেয়ানের ফোসকা তে একটু বেশিই ঝাল দিয়েছিল….
আশে পাশে পানি ছিল না বিদায় শায়েরি বুদ্ধি খাটিয়ে শ্রেয়ানকে আইসক্রিম খাইয়ে দেই… না অবশেষে শ্রেয়ান শায়েরির হাত থেকে পুরো আইসক্রীমটা নিয়ে নিজেই খেতে শুরু করে….


শায়েরিরা বাড়িতে আসতেই সবার হইচই পরে গিয়েছে বাড়িতে মেয়ে এবং তার জামাই এসেছে…. শ্রেয়ান শশুড় বাড়ির কাউকে তেমন চিনে না বললেই হয়.. আর শায়েরির আত্মীয়স্বজনরা ওদের সাথে বিন্দু কে দেখে কিছুটা কানাগুসা করছে…. সবাই কে ক্লিয়ার করার জন্য শায়েরি শ্রেয়ান আর বিন্দুর পরিচয় করিয়ে দেই…. শায়েরি গর্বের সাথে বিন্দুকে নিজের মেয়ের পরিচয় দেই… কিন্তু শায়েরির ফুপি তিনি বলে উঠলেন…
” ছিহ ছিহ শায়েরি এটা তুই কি করেছিস… বিয়ে করেছিস তাও আবার ছয় বছরের একটা মেয়ের বাবাকে…. নিজের পায়ে তো নিজেই কুরাল মারলি… কি কম ছিল তোর আর তোর বাবার… তুই চাইলে আরো ভালো….

শায়েরি…
” ব্যসসস ফুপি.. অনেক ভেবেছো আমার জন্য… আর না হয় নাই ভাবলে…. আমার বা আমার বাবার হয়তো কিছু কম ছিলনা…কিন্তু এই বাচ্চা মেয়েটার কম ছিল মায়ের আদর স্নেহ আর ভালোবাসা… আর সেটা ফুলফিল করে ওর মা হয়ে উঠার দায়িত্ব আমার…ওর জন্যই শুধু আমার এ বিয়েটা করা… আর ওর মা হয়ে ওঠাটাই আমার একমাত্র এবং একমাত্র লক্ষ…
” আমি কিন্তু তোর ভালোর জন্যই বলেছিলাম..
” তোমাদের এই ভালো চাওয়াতেই আমার সব থেকে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে… আর এসব কোনো কথা আমি শুনতে চাইনা কারোর থেকে….

বলেই বিন্দু কে নিয়ে রুমে চলে গেলো শায়েরি…. শ্রেয়ান ড্রয়িং এ বসে সবার সাথে গল্প করছে.. শায়েরি রুমে এসে বিন্দু কে চেন্জ করিয়ে দিয়ে নিজেও চেন্জ করে নিলো…. দুজনে ফ্রেস হয়ে ড্রয়িং এ গিয়ে বসলো… শায়েরি তো শ্রেয়ানকে দেখে অবাক… কারন ড্রেস চেন্জ ফ্রেস না হয়েই খাওয়া শুরু করেছে…শ্রেয়ান এর সামনে দু প্লেটে চিকেন পকোরা আর নুডলস রাখা আছে…শায়েরি শ্রেয়ান এর পাশে বসে চিকেন পকোরার প্লেট নিজের হাতে নিয়ে নুডলস এর প্লেটটা বিন্দুর হাতে ধরিয়ে দিলো..আর খাওয়া শুরু করে দিলো… শায়েরির মা এসে….
” এই এসেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছিস.. ছেলেটা তোদের জন্য বসে আসে…
” মানে…?
” মানে তোদের জন্য বসে আছে… কেবলই আমি তোদের ডাকতে যাবো…
” ওহহহ আমি ভেবেছি উনি খাওয়া শুরু করে শেষ ও করে ফেলেছেন…আর আপনি ফ্রেস না হয়েই খেতে বসে পরেছেন…?

বেচারা শ্রেয়ান
” না আসলে মা বললো ড্রয়িং এর বেসিন থেকে ফ্রেস হতে…তাই আমি ফ্রেস হয়েই এখানে বসেছি…
” তাহলে ড্রেস…?
” আমি তো কোর্টটা খুলে রেখেছি… এখন তো নরমাল ড্রেসেই আছি… মানে শার্ট উইথ প্যান্ট….।
“ওওওও… আচ্ছা ঠিক আছে…তাহলে খাওয়া শুরু করেন…
” করবো…??
” হ্যাঁ… মনে হয় পারমিশন চাচ্ছেন…?
“ওই রকম’ই…. যে ভাবে……

শায়েরির মা..
“আচ্ছা বাবা… তুমি খাও ওর কথা গায়ে মেখো না তো…

শায়েরি…
” হুমমম খান..খান..,।



শায়েরির রুমে ল্যাপটপে ওয়াইফাই কানেক্ট করে বিন্দুকে টম এন্ড জেরি প্লে করে দিয়ে..রুমটা সুন্দর করে সাজাচ্ছে….
বিন্দু টম এন্ড জেরি দেখছে আর হাসছে…

শ্রেয়ান রুমে এসে…
” মা মেয়ের আমার কথা মনেই পরেনা না…?

বিন্দু
” হুমমম.. তোমার তো খুব মনে পরে..? তাই তো এখানে আসার পর থেকে সবার সাথে গল্পই করে চলেছিলে…
” ওরে আমার মা টা বুঝি আমার সাথে রাগ করেছে….।

শায়েরি বিন্দুকে উদ্দেশ্য করে..
” আমরা কারোর উপর রাগ করিনি… এতোক্ষন যাদের সাথে গল্প করছিল… তাদের সাথেই গল্প করোক গিয়ে…

শ্রেয়ান
” ওহহহ এই ব্যপার মা মেয়ে দুজনেই কি হিংসুটে…
” এই একদম বাজে কথা বলবেন না… যান এ রুম থেকে… আপনার শালী আদি ঘর ওয়ালিদের কাছে যান… আজ রাতটা নাহয় তাদের সাথেই থাকেন..
” সাধে কি আর হিংসুটে বলি.. সেই কথাগুলো এতো সিরিয়াস নেয়ার কি আছে হুমম…? ওরা তো অনেক ছোট্ট তাই মজা করেছি আরকি…
” ওরা ছোট্ট মানে…আপনি কি বলতে চাইছেন আমি অনেক বড়…? আর আপনি জানেন ওরা কতো পাকনা..।
” ওকে ওকে আর এমন মজা করবো না..
“হুমম মনে যেনো থাকে….


রাতের খাবার খেয়ে সবার সাথে কিছুক্ষন গল্প করে… রুমে চলে আসে শায়েরি শ্রেয়ান এবং বিন্দু… এবং তিনজন মিলে নিজেদের মধ্যে আলাদা করে সময় কাটানোর জন্য লুডু নিয়ে বসে পরলো…ওই বাড়িতে তিনজন মিলে খুব একটা সময় কাটানোর সুযোগ হয়ে উঠেনা… স্পেশালি শ্রেয়ানের অফিস আর বিন্দুর পড়াশোনা….
শায়েরি আর বিন্দু দুজন জুট বেধে বার বার শ্রেয়ান এর গুটি কেটে দিয়েছে… আর ফাইনালি শ্রেয়ান কে হারিয়েছে… ফাস্ট হয়েছে বিন্দু আর সেকেন্ড শায়েরি.. শ্রেয়ান এর পজিশন লাড্ডু…

শায়েরি আর বিন্দুর আবদার যেহেতু ওরা জিতেছে সেহেতু ওরা দুজন যা বলবে শ্রেয়ানকে তাই করতে হবে… আর বাধ্য ছেলের মতো শ্রেয়ান তা মাথা পেতে নিয়েছে… শায়েরি বিন্দুকে নিয়ে বেডে গিয়ে শুয়ে পরলো… আর শ্রেয়ান বসে বসে ভাবছেই… সত্যিই কতোটা ভাগ্যবান হলে শায়েরির মতো মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে পাওয়া যায়… যেখানে শায়েরি খুব সহজে নরমাল লাইফ লিড করতে পারতো.. সেখানে নিজে থেকে কমপ্লিকেটেট লাইফ বেছে নিয়েছে… বিন্দুর মা হওয়ার জন্য প্রতি নিয়ত লড়াই করে চলতে হচ্ছে… সবার কাছে প্রমান অবদিও করতে হয় বিন্দুর মা হয়ে উঠার জন্য… ইভেন বিন্দু কাছে তো এখনো মায়ের জায়গাটা ও পায়নি… কবে বিন্দু নিজে থেকে শায়েরিকে মা বলে মেনে নিবে.. মা বলে ডাকবে.. এটা শুধু শায়েরির প্রতিক্ষা নয় শ্রেয়ানেরো..
শ্রেয়ানকে বসে থাকতে দেখে শায়েরি..
” কি হলো ঘুমাবেন না…?
” না ভাবছি সারা রাত মা আর মেয়েকে দেখেই কাটাবো…
” কাটান না..বারন করছে কে..?
” হুমম বারন করার তো কেউ নেই…
“ওকে গুড নাইট…



না সত্যিই শ্রেয়ান ঘুমাতে আসছেনা… সেখানেই ঠাই বসে আছে… শায়েরি ফিসফিসিয়ে বিন্দুকে বলে তার পাপাকে ডাকতে….
” পাপা হয়েছে তোমাদের ড্রামা…? তাহলে তাড়াতাড়ি আসো লাইট অফ না হলে আমার ঘুম আসবেনা…
” এই তোর আবার এই অভ্যাস কবে থেকে শুরু হলো…?
” আজকে থেকেই…
” হুমম আসছি শুধু তুই বললি বলেই.. না হলে আজ ঘুমাতাম’ই না…

শ্রেয়ান গিয়ে বিন্দুর বা পাশে শুয়ে পরলো.. আর ডান পাশে তো শায়েরিই… বিন্দু শায়েরি আর শ্রেয়ান এর দু হাত একসাথে করে নিজের বুকের উপর রেখ…
” এত্তো গুলা কিউট কিউট গুড নাইট… তাড়াতাড়ি ঘুমাও দুজনেই….।

শায়েরি আর শ্রেয়ান বালিশ থেকে নিজেদের মাথা একটু উচু করে দুজন দুজনের দিকে তাকালো… সেটা পরিস্কার’ই দেখা গেলো ডিপ লাইটের আলোতে….

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here