দায়িত্ব পর্ব ৭

#দায়িত্ব
#পর্ব_৭
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই

শ্রেয়ানের এমন পাগলামোতে শায়েরি মুচকি হেসে কাজে মন দেয়…পুরো রুমটা সুন্দর করে গুছিয়ে শায়েরি শাশুড়ির সাথে গল্প করতে বসে পড়ে… শায়েরির ছোট বেলার গল্প… ছোট বেলায় শায়েরি বেশ দুষ্ট ছিল… কিন্তু বড় হয়ে শায়েরি বেশ শান্ত আর খুবব মিষ্টি হয়েছে… সব কিছুই সফ্টলি হ্যান্ডেল করে…

শায়েরি দুপুরের রান্নায় কোনো রকম হেল্প করতে পারেনা… কারন তখন বিন্দু কে নিতে যাই… শায়েরি বিন্দুকে নিজের সর্বোচ্চ সময়টা দিতে চাই… বিন্দুর মনে যেনো শায়েরির প্রতি কোনো অভিযোগ না জমে সেই চেষ্টায়’ই আছে শায়েরি….

বিন্দুর মনের ভাবনা গুলো আস্তে আস্তে বদলে যাওয়ার সময়ই আশে পাশের সবার নেগেটিভ কমেন্টে সব গুলিয়ে যায়… চার পাশ থেকে শুধু নেগেটিভ কমেন্টস গুলোই আসে..সৎ মা নাকি কখনো নিজের মা হতে পারেনা… তাদের ভালোবাসায় নাকি পিওরিটি থাকেনা..যে ভালোবাসাটা তারা দেখায় সেটা নাকি শুধুই লোক দেখানো… সৎ মায়েরা নাকি আস্তে আস্তে বাবার ভালো বাসাটাও কেড়ে নেই… কিন্তু যতো টুকু সময় বিন্দু শায়েরির সাথে থাকে ততোক্ষন যেনো ও শায়েরির মাঝেই বিভোর থাকে… শায়েরিকে মেনে নিতে শুরু করে… ছোট মস্তিষ্কে ভালো খারাপ আইডেন্টিটি করার মতো এবিলিটি বোধহয় নেই…. তাই তো বিন্দু মাঝে মাঝে শায়েরির সাথে এমন মিস বিহেভ করে…



আজকেও শায়েরি বিন্দুকে আনতে গিয়েছিল… শায়েরি আজ বিন্দুকে গোসল করিয়ে দিয়েছে… বিন্দু শায়েরির হাত ধরে টেনে বাথটাবে ফেলে দেই তারপর দুজন মিলে মজা করে গোসল করে… গোসল শেষে শায়েরি বিন্দুকে চুল মুছিয়ে দেয়ার সময় শ্রেয়ানের ফোন আসে… শায়েরি ফোন রিসিভ করে বিন্দুর কাছে দেই.. বিন্দু ফোন নিয়ে….
” পাপা আমরা অনেক মজা করেছি… তুমি জয়েন করতে পারলেনা মিস করলে…
” তাই… আমি তো অল টাইম তোমাদের মিস করি…
“জানো আজ আমরা অনেক মজা করে বাথটাবে গোসল করেছি…
” আমরা মানে..? কে কে..?
” আমরা মানে আমরা.. বুঝেছো..?

যদিও শ্রেয়ান জানেই বিন্দু কার কথা বলছে.. তবুও এটা দেখার জন্য যে বিন্দু শায়েরিকে কি বলে সম্বোধন করে… কিন্তু বিন্দু কিছুই বললো না… শ্রেয়ান ছোট করে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে…
” হুমম বুঝেছি মাই প্রিসেন্স… ভালো করে চুল শুকিয়ে নাও না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে…

শ্রেয়ানের এই কথা শুনে শায়েরি বিন্দুর হাত থেকে ফোন নিয়ে…
” এই যে হ্যালো.. আমি খুব ভালো করেই জানি আমার মেয়ের খেয়াল রাখতে.. আপনাকে এতো মাথা ঘামাতে হবেনা… আপনি আপনার কাজ করেন ওকে….
” এটাও তো আমার কাজই বলো…? বউ বাচ্চার খেয়াল তো আমাকেই রাখতে হবে… তো ম্যাডাম আপনার চুল টা কি আপনি ভালো শুকিয়ে নিয়েছেন…?
” টাওয়াল পেচিয়ে রাখছি… এখানে কি আর হেয়ার ড্রায়ার আছে..? যে চুল শুকিয়ে নিবো…?
“Excuse me..? সব আছে দেখো কাবার্ড এর ভিতর বা পাশে সেকেন্ড ড্রয়ারে…
” সব…?
” হুমম যে গুলো দরকার আরকি…
” আচ্ছা রাখি বাই… বিন্দুকে খাইয়ে দিবো…
” আমি খাবো না..?
” হুমম আপনিও খেয়ে নিয়েন…
” আর তুমি..?
“আমিও খাবো.. আমার মেয়েটাকে আগে খাইয়ে দিয়ে নেই তারপর….
” আই মিস ইউ…!



সন্ধ্যা সাতটা…

বিন্দু টিউশন পড়ছে… আর শায়েরি ইউটিউভিং করছে… ফ্রুট জুস এর সব রেসিপি দেখছে…. উদ্দেশ্যটা হলো বিন্দুর জন্য ফ্রুট জুস বানাবে… শাশুড়ির কাছ থেকে শুনেছে বিন্দু নাকি একদম কোনো ফ্রুটস খেতে চাইনা.. সেই জন্য আরকি এই টেকনিক অবলম্বন করা….

শ্রেয়ান অফিস থেকে এসে সোজা বিন্দুর স্টাডি রুমে উুকি দিয়ে এসেছে… কারন কালকের মতো কোনো ঝামেলা যেনো না হয় তাই…
শ্রেয়ান রুমে এসে দেখে শায়েরি খুব মনোযোগ দিয়ে ফোনে কিছু একটা দেখছে… ইয়ার ফোন কানে গুজা থাকায় শ্রেয়ান বুঝতে পারলো না আসলে শায়েরি করছেটা কি…?

শ্রেয়ান সেন্টার টেবিলের উপর অফিসের ব্যাগটা রেখে ফ্রেস হতে চলে গেলো… ফ্রেস হয়ে এসেও শায়েরিকে পূনরায় সেই অবস্থাতেই পেল.. না এবার শ্রেয়ান গিয়ে শায়েরির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো… এবং…
” কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছো হুমমম…? ১০ঘন্টা পর বর অফিস থেকে আসলো সেদিকে পাত্তায় নেই…
” ওফফফফ… কাজ করছিলাম তো.. দিলেন তো বারোটা বাজিয়ে…
” বারোটা কখন বাজালাম..কেবল তো ৭ টা ২৫ বাজে…
” কখন আসছেন…?
” এইসতো এসে ফ্রেস হয়ে আসলাম… আচ্ছা আজব তো তুমি..? তোমার সামনে দিয়ে ওয়াস রুমে গেলাম টের ও পেলেনা… তোমাকে দিয়ে তো কোনো ভরসা নেই.. তোমার সামনে দিয়ে পুরো বাড়ি লুট করে নিয়ে যাবে আর তুমি টের ও পাবেনা….
” ওরে আল্লাহ গো… এই টুকু একটা বিষয় এর জন্য এতো এতো বকবক… আমি তো ফোনে একটা কাজ করছিলাম… জানেন না কোনো কাজ করলে সেটা মনোযোগ দিয়ে করতে হয়..আর আমি সেটাই করছিলাম…
” তা কি করছিলে শুনি…?
” ফ্রুটস জুস বানানো শিখছিলাম… যেনো সব থেকে ইয়াম্মি আর টেস্টি হয়…
” তুমি যেমন বানিয়ে দিবে আমি তেমন ই খাবো… সেটাই আমার কাছে ইয়াম্মি আর সব থেকে বেশি টেস্টি মনে হবে…
” ওওওও হ্যালো..আপনার জন্য মানে…?
” তাহলে কার জন্য..?
” আমার মেয়ের জন্য… আম্মু বললো বিন্দু নাকি একদম ফ্রুটস খাইনা…
” ওহহহ… আমি কি খাই না খাই সেটা বলেনি..?
” আমি শুনলে তো বলবে…
” হ্যাঁ সব ভালোবাসা তো মেয়ের প্রতিই… যার জন্য এতো সুন্দর একটা মেয়ে পেলো তাকে ভালোবাসবে তো দূরের কথা… তার দিকে তো নজরই নেই…
” এই আপনি নিজের মেয়েকেও হিংসে করেন… কি হিংসুটেরে বাবা….




পরেরদিন সকালে… প্রতিদিনের মতো আজ ও শায়েরি বিন্দুকে খাইয়ে রেডি করে দিয়েছে.. ইভেন শ্রেয়ান এর অফিসের প্রয়োজনীয় সব জিনিস ও গুছিয়ে দিয়েছে…. শ্রেয়ান বিন্দুকে নিজের পাশে বসিয়ে…
” আচ্ছা মামুনি আমরা তিনজন মিলে কোথাও বেড়াতে গেলে কেমন হয়…?
” হুমম খুব মজা হবে… পাপা প্লেস টা কিন্তু আমি ঠিক করবো…
” প্লেস তো ঠিক করাই আছে.. তোমার নতুন নানু বাড়ি…
” ওহহহ… তাহলে তোমরাই যাও আমি যাবো না…
“কেনো??
” না আমি ওই বাড়িতে যাবোনা…
বলেই বিন্দু দৌড়ে নিচে চলে গেলো

বিন্দু না বলাতে শায়েরির মন খারাপ হয়ে গেলো… বিন্দু না গেলে তো শায়েরির ও যাওয়া হবেনা…।
শ্রেয়ান শায়েরির হাত ধরে…
” তুমি সব প্যাক করে রেখো কেমন… আমি লাঞ্চ এর সময় চলে আসবো… আর বিকেলে আমরা রওনা হবো….
” কিন্তু কি করে..? বিন্দু তো বললো…
” বিন্দুকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার… আর আজকে বিন্দুকে নিতে যেতে হবেনা… ড্রাইভার গিয়ে নিয়ে আসবে… আমি বিন্দুকে বলে দিবো কেমন..?
” হুমমম… সাবধানে যাবেন…!
” হ্যাঁ লক্ষীটি আমার…



বিন্দু কোচিং থেকে ফিরেই শায়েরিকে বলে দিয়েছে যাতে ওর জামা কাপড় গুলোও প্যাক করা হয়… শায়েরি খুশিতে বিন্দুকে জড়িয়ে ধরে কিস করেছে… আর তাতেই বিন্দু খিলখিল করে হেসে দিয়ে
” তুমি তো এখনো বাচ্চাদের মতো বিহভ করো… মনে হয় পিচ্চিটা…
” তাই…?
” হুমমম…
” ওলে আমার মা টা… মায়ের কাছে মেয়েকে তো পিচ্চি লাগবেই…


,
,
শায়েরি বিন্দুকে ওফ হোয়াইট কালারে ফ্রক পরিয়ে দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে…বিন্দুকে দেখতে একদম পরীর মতো লাগছে.. আর শায়েরি নিজেও একটা চুরিদার পরেছে লেমন কালারের.. শায়েরিকেও দেখতে খুবব মিস্টি লাগছে… কিন্তু এই গেট আপে শায়েরিকে মোটেও পছন্দ করলো না শ্রেয়ান.. শ্রেয়ান একবার বিন্দু আর একবার শায়েরির দিকে তাকিয়ে..
” এটা কি পরেছো..? মা মেয়ে প্রায় সেইম ড্রেস… দেখে কি মনে হচ্ছে এই মেয়ের মা তুমি ..? লোকে দেখেতে তো…. থাক আর নাই বললাম…
“তো কি করলে বা কি পরলে মা মেয়ে লাগবে…
” উমমম দাড়াও এক মিনিট…

শ্রেয়ান কাবার্ড এর ভিতর থেকে ওফ হোয়াইট আর হালকা মিস্টি কালার মিশ্রিত একটা শাড়ি বেড় করে…
” এই শাড়িটা পরে নাও… একদম পারফেক্ট মা মেয়ের জুটি মনে হবে… কালারটাও প্রায় সেইম…
” এখন শাড়ি…??
ওকে বিন্দুর মা হওয়ার জন্য শাড়ি পড়াটা কোনো ব্যাপারই না… শুধু সামলানোটা একটু ট্রাফ…
” কোনো ব্যাপার না আমি আছি কি করতে… মা আর মেয়েকে সামলানোই তো আমার একমাত্র কাজ…।

শায়েরি প্রায় ৩০ মিনিট পর শাড়ি পরে বেড় হলো… আর শ্রেয়ান তো শায়েরিকে দেখে স্টাচু হয়ে গেছে… শায়েরিকে চুরিদার এর থেকে শাড়িতে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে… শায়েরির দিকে তাকিয়ে শ্রেয়ান..
” একদম পরির মতো লাগছে…

শায়েরি শ্রেয়ান এর হাতে চিমটি কাটতেই শ্রেয়ান নিজের জগতে ফিরে আসে… পাশে তাকিয়ে বিন্দুকে দেখে মিস্টি হাসি দিয়ে…
” না মানে তুমি হচ্ছো পরির মা…।
” হুমম এই বার ঠিক আছে…

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here