#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-18-19
#18
বেলকনিতে অর্কিড গুলো ঝুলছে।আজ একটু বেশি ঝুলছে। হাওয়ার তোড় বেশি।হু হু করে হাওয়া বইছে। কনকনে ঠান্ডায় বরফ হওয়ার উপক্রম।
মেহেরাব খালি গায়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।
গতরাতে এক ফোঁটাও ঘুমুতে পারেনি সে।সারারাত জেগে এবাদত করেছে। এটাই এখন তার সম্বল। ফজরের নামাজের শেষে এক মনে আয়াতুল কুরসী পাঠ করে যাচ্ছে। নতুন শিখেছে।
আয়াতুল কুরসী-এক বিশাল নেকীর ভান্ডারঃ
হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকে না।
(নাসাঈ)
হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় থাকে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি শোয়ার আগে পড়বে আল্লাহ তার ঘর, প্রতিবেশীর ঘর এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন।
(বায়হাকি)
হজরত উবাই বিন কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই বিন কাবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার কাছে কুরআন মাজিদের কোন আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ? তিনি বলেছিলেন, (আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু আল্ হাইয়্যুল কাইয়্যুম) তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত তার বুকে রেখে বলেন, আবুল মুনযির! এই ইলমের কারণে তোমাকে ধন্যবাদ।
(মুসলিম)
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সুরা বাকারার মধ্যে এমন একটি আয়াত রয়েছে, যে আয়াতটি পুরো কোরআনের নেতাস্বরূপ। তা পড়ে ঘরে প্রবেশ করলে শয়তান বের হয়ে যায়। তা হলো ‘আয়াতুল কুরসি’।
(মুসনাদে হাকিম)
আয়তুল কুরসী কুরসি হচ্ছে এই-
اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-
অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
(সূরা আল-বাক্বারা আয়াত-২৫৫)
কেন এই আয়াতের এত ফযিলত?
১.এই আয়াতে আল্লাহ তাআলার গুণাবলী আলোচিত হয়েছে ।
২. মোট ১১টি গুণ বর্ণিত আছে যার বিশ্লেষন অনেক ।
৩.আল্লাহ তাআলার তাওহিদ বর্ণনা আছে এখানে।
৪. আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও ক্ষমতা আলোচিত হয়েছে ।
৫. সুরা ইখরাসেরও ফজিলত এই জন্য যে সেখানে আল্লাহর পরিচয় রয়েছে। (আল্লাহু আ’লামু)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুন।
সে কখনো ভাবেনি মানুষের এতো দুঃখ।
ভাবলেও অনুধাবন করেনি।
মোম কে সে কি মুক্তি দিয়ে দেবে? মোমের অধিকার রয়েছে নিজের জীবন সাজিয়ে গুছিয়ে নেওয়ার। মোমের জীবনে কোথাও মেহেরাব নেই। কোন অস্তিত্ব নেই। ভাবতেই বুকে ব্যথা শুরু হলো।
মোমের জীবনে ধমকা হাওয়ার মতো ঢুকে পড়েছে সে। ধমকা হাওয়ার তোড় কিছুক্ষণ।
মোমের জীবনে মেহেরাবও ধমকা হাওয়ার মতো কিছুক্ষণ ছিলো। এখন বিলীন হতে শুরু করেছে।
সামনে ঈদ। লাইফের প্রথম ঈদ। অথচ কেউ নেই তার পাশে। কারও সাথে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া হবেনা। ঈদ মানে খুশি, আনন্দ, উল্লাস। মুসলিমদের পবিত্র আনন্দের দিন এটি।
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করা হয়।
সেও অপেক্ষা করেছিল। মোমের সাথে জীবনের প্রথম ঈদ টি উৎযাপন করবে।
কত রকম প্ল্যান ছিলো।
দু-জনে একই রংয়ের ড্রেস পড়বে। স্পিডবোটে করে টেমস নদীতে সারাদিন ঘুরবে। অতি পছন্দের সি-ফুড খাওয়া হবে।
এখন আফসোস ছাড়া কিছু করার নেই।মেহেরাব নীরব দর্শকের মতো বরফে ঢাকা সাদা সাদা পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে রইলো।সে এখন নিরব।জীবনে এমন কিছু সময় তৈরি হয় যখন নিরবতা ছাড়া কিছু করার থাকেনা।
ওভারকোট গায়ে দিয়ে মাথায় গোল টুপি পড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে ঘুরছে সে। নিরব দর্শক হয়েছে সে, কিছু করার নেই তার।
তার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরছে। What is love? ভালোবাসা কি তা সে জানেনা।
তুষার পাতের জন্য রাস্তাঘাট ফাঁকা। কিছু কফি স্টল খোলা। মেহেরাবের গার্ডসরা কিছুটা দূরত্ব রেখে মেহেরাবের পেছনে পেছনে হাঁটছে।মেহেরাব কে দেখেশুনে রাখার দায়িত্ব তাদের।বাবার কড়া নির্দেশ। আকাশ থেকে বরফের পাহাড় পড়লেও মেহেরাবের পাশে থাকতে হবে।মেহেরাব কফি স্টলে দাঁড়ালো। গার্ডসরা চেয়ার টেনে দিলো। মেহেরাব বসে পড়লো। তার পকেটে একটা চিঠি। চিঠিটা তার মায়ের। ফার্গো থেকে তিনি লিখেছেন। মা এখন ফার্গো তে আছেন। তবে এটা তার স্থায়ী ঠিকানা নয়। তিনি বছরে দুবার ঠিকানা বদল করেন। কখনো এ-শহর বা কখনো অন্য শহর।তিনি একজন মার্কিন গায়িকা।
মায়ের সাথে আজ কয় বছর থেকে তার দেখা হয়না সেটা মনে করতে পারলো না৷ মাঝে মাঝে মা চিঠি পাঠান। মেহেরাব কখনো সেগুলোর উওর পাঠায় না। মেহেরাবের হয়ে তার বাবা কয়েক লাইনের চিঠি পাঠায় মেহেরাবের কিছু ফটোর সাথে হঠাৎ।যোগাযোগ বলতে শুধু এইটুকু। মা ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের কখনো সামনাসামনি দেখা হয়নি।
মা নতুন শহরে যান আর একটা করে চিঠি লেখেন। সেই শহরের বৃত্তান্ত, নতুন হাসব্যান্ডের বৃত্তান্ত, এবং সবশেষে কিছু উপদেশ ছেলের জন্য। আহামরি কিছু না তবুও মায়ের চিঠি পড়তে তার ভালো লাগে।সেটা সে কাউকে বুঝতে দেয়না। মায়ের সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো তার মধ্যে কোন ভান নেই। মোমের মধ্যেও এই বিষয়টি রয়েছে। মোমও ভান করেনা। সত্যি কথা বলে অকপটে। কাউকে ভয় করেনা।কোন পরোয়া করেনা।
গরম কফির থেকে ধোঁয়া উড়ছে। ধোঁয়ার আঁচে চিঠির খাম খুলে পড়তে শুরু করলো মেহেরাব।
“মাই ডিয়ার প্রিন্স!মাই সুইটহার্ট!মাই লিটল কিং!
” আমি এখন পৃথিবীর স্বর্গে আছি। ফার্গো কি সুন্দর শহর যদি তুমি দেখতে। এসময় বরফের সিজন। পুরো ফার্গো বরফে ছেয়ে আছে। হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা। রাতে আমি আর আমার হাসব্যান্ড বরফের উপর ছোটখাটো ক্যাম্প ফায়ারের মতো করি। সারা রাত আমি গান করি। কি যে ভালো লাগে। তুমিও আমাদের সাথে জয়েন দিতে পারও। তুমি তো ভালো গিটার বাজাতে পারও তাইনা? শোন,আমার এই হাসব্যান্ড গিটার বাজাতে পারে না। অথচ বিয়ের আগে আমাকে গিটার বাজিয়ে ইমপ্রেস করেছিল।বুঝতে পাচ্ছো কত বড় ঠগের পাল্লায় পড়েছি৷ বিয়ের পর যখন জানতে পারি তখন কি বলে জানো?
বাবা আগুন, তোমার গত মাসের ফটো দেখলাম। তুমি আগের থেকেও হ্যান্ডসাম হয়েছো। একদম প্রিন্স। কারও যেন নজর না লাগে আমার ছেলের জীবনে এই প্রার্থনা করি ইশ্বরের কাছে। তুমি কি জানো তোমার বাবা আমাকে থ্রেট দিয়েছেন তাও আবার চিঠির মধ্যে। ভেবে দেখ অবস্থাটা । তোমাকে যেন নেক্সট আর কোন চিঠি না পাঠাই সেটা বলেছেন।সে আমাকে এটা বলার কে? ছেলের কাছে মা চিঠি লিখবে তাতে তোমার বাবা বাঁধা দিতে পারেনা। নেক্সট এমন করলে আমি তোমার বাবার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেব। সে আমাকে থ্রেট করার কে? সে এমন ভাবে বলেছে যেন আমি এখনো তার ওয়াইফ। হাস্যকর কান্ডকারখানা করতে তাকে নিষেধ করো ঐ ওল্ড ওয়ারউলফ কে।
আর শোন, আমার নতুন হাসবেন্ড কে মাফ করে দিয়েছি ঠগের জন্য। সে কি বলেছে সেটা শোনার পর আর রাগ থাকেনা।
সে বলেছে, সৃষ্টিকর্তা জোড়া হিসেবে আমাদের সম্পূর্ণভাবে সৃষ্টি করেন। তারপর পৃথিবীতে আলাদা করে পাঠান। পৃথিবীতে আমরা আলাদা হয়ে পড়ি। পৃথিবীতে আমাদের কাজ সঠিক জোড়ার মানুষটিকে চিনতে পারা।জোড়ার মানুষগুলো আশেপাশে থেকে তবুও কেউ কাউকে চিনতে পারেনা অনেক সময়। জোড়া সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি হয় তখন যখন আমরা সঠিক জোড়ার সাথে মিলিত হই।সঠিক জোড়ার সাথে মিলিত হওয়ার আগে মাঝে মধ্যে ভুল জোড়ার মানুষের দেখা পাই। তার সাথে মিলিত হয়ে সম্পূর্ণ একটি জোড়া হতে চাই। যা হবার নয়। অসম্পূর্ণ থেকে যায়।ফলে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। আমাদের উচিৎ আমাদের জন্য সৃষ্টি করা জোড়ার মানুষটির জন্য অপেক্ষা করা।জোড়া সম্পূর্ণ হওয়ার সঠিক মানুষটি কে চেনা।
ভুলভাল কারও সাথে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করা না করা।
এবার বুঝতে পাচ্ছো মাই ডিয়ার প্রিন্স?তোমার বাবা একটি ভুল জোড়ার মানুষ ছিলেন। ফলে নেমে এসেছিল চরম বিপর্যয়। সমপূর্ণ হতে পারিনি। এতোদিন অসম্পূর্ণ ছিলাম। এখন সম্পূর্ণ হয়েছি। আমার এই হাসব্যান্ড আমার জন্য তৈরি করা সঠিক জোড়ার একজন।
ভালোবাসা একটি অসম্পূর্ণ মানবিক গুন যা সবার মধ্যে থাকে সুপ্ত অবস্থায়। কেউ সেটা প্রকাশ করতে পারে তার জোড়া মিলে গেলে, কারও মানবিক গুনটা নষ্ট হয়ে যায় ভুল জোড়ার একজনের সাথে দেখা হলে।আবার কারওটা সুপ্ত অবস্থায় থাকে তার জোড়ার দেখা না পেলে।
মাই সুইটহার্ট তুমিও জোড়ার একজনকে চিনে নাও। চিনতে ভুল করো না যেন। তোমার ভালোবাসা তখনই সম্পূর্ণ হবে যখন তুমি তোমার সঠিক জোড়ার মানুষটির সাথে মিলিত হবে। যে তোমার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। তোমার জন্য যার কাছে অজস্র ভালোবাসা রয়েছে।
আমার তোমার জন্য ভয় করে।তোমাদের জোড়ার মধ্যে কেউ না আবার ভুল জোড়ার মানুষকে সঠিক জোড়ার মানুষ ভেবে বিপর্যয় নিয়ে আসে। চরম বিপর্যয়।
ইতি তোমার
মা।
মেহেরাব চিঠিটা ভাজ করে রাখলো। কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর মিটিমিটি হাসছে। তার গায়িকা মা তার সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। সবকিছু এখন তার কাছে পরিষ্কার।
হালকা হালকা তুষার ঝিরঝির বৃষ্টির মতো পড়ছে। মেহেরাব আকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
মোম ক্লাসে ঢোকার সময় হাতে কারও স্পর্শ পেলো।
মেহেরাব টুপি খুলে মোমের মাথায় পড়িয়ে দিয়ে বলল- হোয়াটসঅ্যাপ?
মোম তার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
-ওভাবে তাকিও না।
হাত ছাড়ব না।
এভাবে তাকানোর কিছু নেই।
মোম শান্ত গলায় বলল-আপনি ভুল করছেন। বারবার ভুল করছেন।
আমি আপনার ওয়াইফ কখনো হতে পারব না।
আপনি আমার কাছ থেকে কিছুই এক্সপেক্ট করতে পারবেন না৷
আমার হাত চিরদিনের জন্য ছেড়ে দিন।
-হাত ছাড়ার জন্য ধরিনি।
তুমি না হয় আমাকে চিনতে পারওনি। ভুল জোড়ার মানুষকে আমি ভেবেছো। আমি তোমাকে চিনতে পেরেছি। তুমি আর আমি একটি সম্পূর্ণ জোড়া হব আমাদের অসম্পূর্ণ ভালোবাসা কে সম্পূর্ণ করে। কারণ মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের একটি জোড়া হিসেবে সৃষ্টি করে আলাদা করে পাঠিয়েছেন। তুমি ছিলে পৃথিবীর এক প্রান্তে প্রাচ্যে আর আমি ছিলাম পৃথিবীর অন্য প্রান্তে পাশ্চাত্যে।
ভালোবাসার মানবিক গুনটি তোমার আমার মধ্যে অসম্পূর্ণভাবে সুপ্ত রয়েছে।
তোমাকে চিনতে পেরে আমার ভালোবাসা প্রকাশ হয়েছে।
তুমি আমার জোড়ার মানুষ।
তুমি আমার আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত স্ত্রী। তোমার কাছে আমার অসম্পূর্ণ ভালোবাসা রয়েছে। আই লাভ ইউ ক্যান্ডল। আমি তোমাকে ভালোবাসি।
মেহেরাব পাগলের প্রলাপ করছে! ছেলেটার কি হলো?
মোম হতভম্ব!!!
.
.
.
.
❤আল কুরআনের ৮১টি উপদেশবাণীর ১টি বাণীঃ
১৮। যদি ঋণীঅভাবগ্রস্তহয়তবে তাকে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দাও। [সূরা বাকারা ২:২৮০] 
.
চলবে………..❤❤❤
.
.
.
#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-19
মেহেরাব মোমকে ভালোবাসে? মোম কি ঠিক শুনছে?
-তুমি কি বুঝতে পাচ্ছো তোমার কাছে আমার অসম্পূর্ণতার পূর্ণতা রয়েছে।
-আমি সত্যি কিছু বুঝতে পাচ্ছিনা। আপনি কি বলছেন তার তাৎপর্যও বুঝতে পাচ্ছিনা। আসলে আমি কিছু বুঝতেও চাচ্ছিনা।
লিভ মাই হ্যান্ড!
মেহেরাব আরও শক্ত করে হাত ধরলো এতোক্ষণ যদিও নরম ভাবে ধরেছিল।
-তোমার আমাকে বুঝতে হবে।
এবং হবেই। আগে তোমাকে বোঝাব তারপর ছাড়ব।
তার আগে নো ছাড়াছাড়ি। ইজ ইট ক্লিয়ার?
-হায় আল্লাহ! এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম!পাগলের প্রলাপ আমি কি করে বুঝব? কোথায় তুমি?(বাংলা)
-তুমি চাইনিজদের মতো পিটপিট করে কি বলছো?
ইংরেজিতে বলো তো?
কি হলো কথা বলো?
মেহেরাব মোমের সামনে দিয়ে লেকচারার হলে ঢুকছিল।
মোমও ঢোকার জন্য যেতে চাইল।
মেহেরাব তার আগেই মোমের হাত ধরে হাঁটা শুরু করলো।
-আরে আরে কোথায় যাচ্ছেন?
এদিকে আমার ক্লাস।
-আগে আমার ক্লাস। ক্লাসটা আমার সাথে করবে।আমি তোমার একমাত্র লেকচারার আর তুমি আমার একমাত্র স্টুডেন্ট।
-আপনার ক্লাস করব না।
-ক্লাসটা কি সেটা জানার আগেই বলছো ক্লাস করবে না?
-কিসের লেকচারার আপনি। কিসের ক্লাস করব আমি। এগুলো জানতে আমি আগ্রহী নই৷
মেহেরাব মোমের দুই হাত নিজের গালে রেখে বলল- ভালোবাসার সাবজেক্টের লেকচারার আমি। তোমার আমার একমাত্র সাবজেক্ট ভালোবাসা।
ভালোবাসার ক্লাস করবে তুমি।
মোম মেহেরাবের মাথায় টোকা দিয়ে বলল-আপনি একটা পাগল। মাথায় পাগলের ভাইরাস ঢুকেছে।
ঔষধ খেয়ে ভাইরাস থেকে সুস্থ হন।
-ভাইরাস। ঠিক বলেছো। ভালোবাসার ভাইরাস ঢুকেছে।মুক্ত হতে চাইনা, সুস্থ হতে চাইনা,অসুস্থ থাকতে চাই চিরকাল। তুমি আমার ভালোবাসার ভাইরাসের মহা ঔষধ।
ফাঁকা হলে মোম কে নিয়ে গেলো মেহেরাব।
অন্ধকার হলঘর।
মোমের একটু অস্বস্তি লাগছে।
-তুমি কি ভয় পাচ্ছো?
-আপনি ভয় পাচ্ছেন বলেই আমার সাথে সেঁটে সেঁটে আছেন।
-ভালো লাগে তাই সেঁটে আছি। তুমি এতো দূরে দূরে সরে যাচ্ছো কেন?
-গা জ্বলছে তাই দূরে সরে যাচ্ছি।
মেহেরাব হাসলো। অন্ধকারে মোম অনুভব করতে পাচ্ছে। আশ্চর্য!!!
মেহেরাব সুইচবোর্ড খুঁজে পেলো। হলঘরের আলো তে চোখ ধাঁধিয়ে গেলো মোমের। হলঘরে একদম ফাঁকা। একটা চেয়ার ছিলো সেটা মেহেরাব রুমাল দিয়ে পরিষ্কার করে মোম কে বসতে দিলো।
-ভয় পেয়ো না। আমি তো আছি।
-সেটাই তো ভয়ের।
-কি বলতে চাচ্ছো?
-কি বোঝাতে চান বোঝান।
-তুমি মন দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করবে ঠিক আছে?
-ইয়েস স্যার।
-শোন সৃষ্টিকর্তা তোমাকে আমাকে একটি জোড়া হিসেবে সৃষ্টি করেছে। তারপর আমাদের আলাদা করে পাঠিয়েছেন পৃথিবীতে। মেহেরাব পুরো বিষয়টি কে বিশ্লেষণ করে হল ঘরের দেয়াল কে ব্ল্যাকবোর্ড বানিয়ে লিখে মোম কে বোঝাচ্ছে।
-বুঝতে পাচ্ছো কি বলছি?
হ্যাঁ না কিছু বলতে হবে না। মাথা নাড়ালেই হবে। পেপারে নোট করতে পারও গুরুত্বপূর্ণ কথা গুলো।
মোম মাথা নাড়ালো কিছু না বোঝেই। কিসব মেহেরাব বলছে তার বিন্দু মাত্রও মোম বোঝেনি কারণ সে বোঝার চেষ্টা করছে না।পেপারে সে সামনের এক্সামের একটা সমীকরণ দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। আর মাঝে মাঝে মাথা নাড়াচ্ছে। মেহেরাবের ক্লাসের চার ঘন্টা চললো।
-বুঝতে পাচ্ছো তো?
-একদম।
-পেপারে নোট করেছো?
-করেছি তো।
মেহেরাব হতভম্ব!!
পেপার জুড়ে জটিল সমীকরণ দাঁড় করানো।
মেহেরাব আহত দৃষ্টিতে মোমের দিকে তাকালো।
-এভাবে তাকানোর কিছু নেই।
আমার মাথায় নেক্সট এক্সামের সমীকরণ ঢুকে আছে। সমীকরণ ভাইরাস।
এক্সাম ছাড়া ভাইরাস বের করার কোন ঔষধ নেই।
-ইউ…….। মেহেরাব হাতের কলমটা মোমের গায়ে ছূরে মারলো।
মোমের দিকে তার দৃষ্টি তীক্ষ্ণ!!! দৃষ্টির ভাষা পরিষ্কার! রোজা রেখেছি, তোমাকে দিয়ে ইফতার করব। তুমি আজ আমার ইফতারি। এখন বলো তুমি কেমন ইফতারি হবে? কাঁচা না ভাজা? নাকি লবন সেদ্ধ?
-আমার কেমন যেন লাগছে।
-কেমন লাগছে সুইটহার্ট?
-আমার ঘুরছে।আমি পড়ে গেলাম ফ্লোরে।আল্লাহ…….।
মোম ফ্লোরে পড়ে আছে। মোমের জ্ঞান হারানোর ফোবিয়া রয়েছে। মেহেরাব মোমকে স্পর্শ করলো।
মোম জাস্ট অসম্ভব!!
মোমের জ্ঞান ফেরেনি। মোমের ক্লাসমেটদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে।
মেহেরাব কত করে বোঝাতে গেলো আর মোম সমীকরণ দাঁড় করাচ্ছিল। মেহেরাব কিছু কঠিন কথা বলবে বলে ঠিক করে রেখেছিল। তার আগেই মোম জ্ঞান হারালো।
মোম টা এমন কেন?
মোমের জ্ঞান ফেরার জন্য মেহেরাব অপেক্ষা করে আছে।
হোস্টেলের লেডি টিচার মোমের কানে ফোন রেখে ইশারা করলো কথা বলতে।
মেহেরাবের নরম গলা শোনা গেলো ফোনের ওপাশে।
-সুইটহার্ট!মাই ডিয়ার! কেমন ফিল করছো?
কথা বলো?
রোজা রাখতে কি কষ্ট হচ্ছে?
আচ্ছা তুমি দীনদার নারী। এমন কোন হাদিস আছে কি যেখানে স্ত্রীর হয়ে স্বামী রোজা রাখবে? তোমার জানা থাকলে আমাকে একটু বলো?
-ফোন রাখব।
-তুমি কি সত্যি বুঝতে পাচ্ছো না আমাদের ভালোবাসার থিওরী?
-না।
-একটু চেষ্টা করলে বুঝতে।
-বুঝতে চেষ্টা করার প্রশ্নই আসে না।
-বাট হোয়াই?
-বিকোজ আমি বুঝতে চাইনা।
ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না।
মেহেরাব দীর্ঘনিশ্বাস ফেললো।
-আচ্ছা তুমি বাংলাদেশের কোথায় থাক?
তোমাদের বাড়িতে কে কে রয়েছে? ফ্যামিলি মেম্বার কতজন?
-আমি ঘুমুব।
-ওআচ্ছা! তুমি দূর্বল। রেস্ট নাও সুইটহার্ট । আমার কাজ আছে। তোমার জন্য ইফতারি রেডি করতে হবে। সন্ধ্যায় গাড়ি পাঠিয়ে দেব। রেস্টুরেন্টে বুকিং করেছি। একসাথে ইফতার করব। শুধু তুমি আমি।
খট করে আওয়াজ হলো লাইন কেটে যাওয়ার।
মেহেরাব ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো।
কাশফিয়া বলল-এভাবে তাকানোর কিছু নেই। তুমি দারুণ ভাবে ফেঁসেছো।
বের হওয়া সোজা না।
কিং ফায়ার সহজ চিজ নয়।
বাই দ্যা ওয়ে হোস্টেল টিচার আমাদের হোস্টেল গেইটের সামনে হঠাৎ ডেকে নিয়ে যায়।
সেখানে দেখি তুমি আগুনের গাড়ির পেছনের সিটে শুয়ে আছো আগুনের কোলে মাথা রেখে। আগুন তোমার মাথায় হাত বুলাচ্ছিল।
আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমার কি হয়েছে।
আগুন বলেছে- সুইটহার্ট ক্লাস করতে করতে সেন্সলেস।ভাগ্যিস আমি ছিলাম। তাই তো গাড়ি করে হোস্টেলে নিয়ে এলাম! বেচারী ক্যান্ডল।
-আচ্ছা বলো তো আগুন বারবার কিসের ক্লাসের কথা বলছিল?
কোন সাবজেক্ট? সেন্স লেস হলে যে?
মোম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল- ভালোবাসার সাবজেক্টের ক্লাস।
মোম শাওয়ার নিচ্ছে এই ঠান্ডায়। অসহ্য লাগছে সবকিছু। এক জীবনে কত ঝামেলার মুখোমুখি হবে সে? আল্লাহ তায়ালা একমাত্র অবগত! আল্লাহ তায়ালা ভরসা।
মেহেরাব নামাজ পড়ে মসজিদে বসে আছে। সে একটা জিনিস বুঝেছে। নামাজ কোন মূল্যেই ছাড়া যাবে না এক ওয়াক্ত। কেননা,
নামাজ গুনাহকে মুছে দেয়ঃ
হযরত আবু উসমান (রাদিঃ) বর্ণনা করেন! আমি একবার সালমান ফারসী (রাদিঃ) এর সাথে একটি গাছে নিচে দাড়িয়ে ছিলাম!
.
সালমান ফারসী (রাদিঃ) গাছের শুকনো একটি ডালকে ধরে সেটিকে নাড়াতে লাগলেন এমনকি সেই ডালের সবগুলো পাতা ঝড়ে পরলো!!
.
তিনি আমাকে লক্ষ্যে করে বললেন—হে আবু উসমান তুমি আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছো না-যে আমি এই কাজটি কেন করছি!
.
তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনি এটা কেন করলেন।
.
তিনি জবাব দিলেন -আমি একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একটি গাছের নিকট অবস্থান করছিলাম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাছের শুকনো একটি ডালকে ধরে এভাবে নাড়াতে থাকলেন! আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম আস্তুে আস্তে সেই ডালের সবগুলো পাতা ঝরে পরলো।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম — আমাকে লক্ষ্যে করে বললেন- হে সালমান তুমি আমাকে জিজ্ঞেস কর আমি এই কাজটি কেন করছি।
.
আমি জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ এমনটা কেন করলেন?
.
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জবাব দিলেন—কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি সুন্দর ভাবে অযু করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিক মত আদায় করে তাহলে তার শরীর থেকে তার গুনাহ এমনি ঝড়ে পরে যেমনি ভাবে শুকনো পাতা গুলো ঝরে পরলো! এমনকি তার শরীরে কোন গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না।
.
তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোরআনের একটি আয়াত পাঠ করলেন—দিনের দুই প্রান্তে ও রাতের ভাগে নামাজ আদায় কর। নিশ্চয় ভাল কাজ গুনাহকে দূরীভূত করেদেয়। ইহা উপদেশ গ্রহনকারীদের জন্য মহা উপদেশ।
.
[সূরা হুদঃ১১৪]
.
আল্লাহ্ সুবহানা ওয়াতা আলা — আমাকে ও আমাদের সকলকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সহিত আদায় করার তাওফিক দান করুক, আমিন।
যথারীতি সন্ধ্যায় মোম অজু করে ইফতার সাজিয়ে বসে আছে দস্তরখানা বিছিয়ে।
কিছুক্ষণ বাকি আজানের।
বাহিরে হট্টগোল শোনা গেলো।মোমের ফোন বাজছে। মেহেরাবের কল।
নির্ঘাত গাড়ি পাঠিয়েছে।
জানালা ভেদ করে গাড়ির হর্ণ ভেসে আসছে।
মোম না গেলে হোস্টেলের শান্তি বিনষ্ট হবে।
মোম কল রিসিভ করলো।
-গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে।
তিন মিনিটে বোরখা-হিজাব-মোজা পড়ে নিচে এসো। কুইক!
গাড়ির দরজা খুলে গেলো।
-কামিং সুইটহার্ট!
মোম জানতো গাড়ি নিয়ে মেহেরাব আসবে স্বয়ং।
মেহেরাব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে মোমের দিকে। ভালোবাসার দৃষ্টিতে।
মোমও এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে মেহেরাবের দিকে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে। দু-জনের মধ্যে নিরবতা। কেউ পলক ফেলছে না। যেন তাকিয়ে থাকার প্রতিযোগিতা।
নিমিষেই গাড়ি বিলাসবহুল রেস্তোরাঁর সামনে ব্রেক করলো।
মেহেরাব দরজা খুলে প্রিন্সের স্টাইলে হাত বাড়িয়ে বলল- মাই সুইহার্ট! মাই প্রিন্সেস! মাই ডিয়ার ওয়াইফ কাম উইথ মি! গিভ মি ইউর হ্যান্ড?
মোম চুপচাপ করে নেমে সোজা রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়লো মেহেরাবের আগে।
পুরো রেস্তোরাঁ ফাঁকা। মাঝখানে একটা বিশাল টেবিলে সাজানো হয়েছে। টেবিল ভর্তি খাবার।
সকল আইটেম মশলাযুক্ত!
মেহেরাব একটা চেয়ার টেনে মোমকে বসালো।
নিজেও একটা চেয়ার মোমের কাছাকাছি এনে রাখলো বাট বসলো না।
সাদা একটা রুমাল সে গলায় বাবুর্চির টাইয়ের মতো পড়েছে। মাথায় বাবুর্চির টুপিও এরমধ্যে পড়ে নিলো।
-নেকাবের পিন খুলে ফেলো। আমি নিজের লোক ছাড়া কেউ নেই এখানে। সিসিটিভি ক্যামেরা অফ।
খাবার গুলো দেখে কিছু বুঝতে পাচ্ছো?
তুমি প্রাচ্যের মেয়ে। প্রাচ্যের সবাই মশলা-লবন যুক্ত খাবার খেতে পছন্দ করে।
সকল খাবার তোমাদের প্রাচ্যের রুচি অনুযায়ী তৈরি করা।
মোম কোন কথা বলছে না।
মেহেরাব মোমের সামনে বিশাল একটা প্লেট এনে রাখলো। প্লেটে সে সকল আইটেমের একটু একটু এনে সাজাচ্ছে আর বর্ণনা দিচ্ছে।
মোমের সন্দেহ ঠিক। মেহেরাব ভার্সিটি থেকে সোজা রেস্তোরাঁয় এসেছে। এবং সারাদিন রেস্তোরাঁর বাবুর্চিখানায় ছিলো নিজে দাড়িয়ে সকল রান্না তদারকি করেছে, যেন মোম কে বর্ণনা দিতে পারে।
মেহেরাব ঘড়ি দেখে বলল- আজান দেবে।
নিয়ত পড়ও। দোয়া করো। কিছু চাওয়ার থাকলে চেয়ে নাও। এখুনি আল্লাহ তায়ালা দোয়া ডিরেক্ট কবুল করবে।
দেখা যাবে ইফতাররের শেষ হতেই তুমি যা চেয়েছো তা আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে টুপ করে ফেলে দিয়েছে। যাকে বলে আসমান থেকে রহমতের বৃষ্টি।
আজান দিচ্ছে! মেহেরাব মোমের নেকাবের পিন অকপটে খুলে মুখে খেজুর গুজে দিলো। কতটা সাহস মেহেরাবের!
মেহেরাব নিজের মুখে কোন রকম একটা খেজুর গুজে দিয়ে একের পর এক আইটেম দাড়িয়ে দাড়িয়ে মোমের প্লেটে এনে সাজাচ্ছে। টেবিলের সাইজ মারাত্মক। এক মাথা থেকে আরেক মাথায় যেতে সময় লাগছে।
-এটা একটু টেস্ট করো। এটা হচ্ছে শাহী কোরমা। দুধ মালাই দিয়ে তৈরি। তোমরা শাহী বলতে তোমাদের দেশের রাজা-বাদশাদের পদবি বুঝো। হাউ ফানি।
মেহেরাব হাসলো মিটিমিটি।
এটা একটু টেস্ট করো। শাহী বীফ কোরমা।প্রচন্ড ঝাল।
তোমার ভালো লাগবে। তবে সাবধান। খাওয়া ঝাল খাওয়া শেষে মিষ্টি ডেজার্ট খাবে। তাহলে ঝাল কভার করতে পারবে।
ওটা একটু টেস্ট করো তো। ভেড়ার গোশত বিরিয়ানি! বেশি করে বাদাম দেওয়া। অল্প মিষ্টি।
ঝাল বিরিয়ানিও রয়েছে। শাহী খাসি বিরিয়ানি। বেশি করে কিসমিস দেওয়া।
টেস্ট ভালো লাগবে তোমার আশাকরি।
মেহেরাব এতোটা উৎসাহ দেখাচ্ছে তা না দেখলে কেউ বুঝবে না। টেবিলের এই মাথা থেকে ঐ মাথা পর্যন্ত দৌড়াদৌড়ি করছে। নতুন নতুন আইটেমের প্লেট নিয়ে আসছে।
মেহেরাব কে থামাতে হবে। মোমের জন্য কেউ এতোটা ব্যস্ত হোক, কিছু করুক সেটা মোম চায় না৷ অনেক সহ্য করেছে মোম। মেহেরাবের মতো লোক ২য় দেখেনি সে।
কেন বোঝে না তার মনে বিন্দু মাত্র দয়া করুনাও নেই মেহেরাবের জন্য ভালোবাসা তো দূরে থাক। মোমের একটাই মন। সে মন চুরমার হয়ে গুড়িয়ে শেষ হয়েছে। মনের কোন অস্বস্তিত্ব অবশিষ্ট নেই তার বুকে।
সে মেহেরাব কে পছন্দ পর্যন্ত করেনা। ভালোবাসা তো পরের ব্যাপার।
মেহেরাব বলল- হা করো।
তোমার ফেবারিট দেশী মোরগের আইটেম!
হা করো সুইটহার্ট!
মেহেরাবের হাত ধরে ফেললো মোম।
-শান্ত হন।
-তুমি খাও তারপর।
-আপনি কেন এমন করছেন?
-তুমি বোঝ না?
বোঝার মতো এজ তোমার হয়েছে সুইটহার্ট!
-একটা সম্পর্ক দুই দিক দিয়ে হয়। তবেই সেটা পূর্ণ হয়।
-জানি। তাই তো পূর্ণ করার চেষ্টা করছি।
-আমি আমার সম্পর্কে কতটুকু জানেন? জানলেও হজম করতে পারবেন?
-হজম করেছি। অনেক ভেবেচিন্তে ডিসিশন নিয়েছি।
-মানে?
-তুমি আমাকে ভেবে ভুল মানুষের হাতে পড়েছিলে।
ওটা একটা ভুল। প্রকৃতির খেলা। তুমি শুধু আমার জন্য জন্ম নিয়েছো। আমার অবর্তমানে ভুল জীবনে চলে গিয়েছো।
ওটা মিথ্যে অতীত। বর্তমান সত্যিটদ আমি।
-জেনেশুনে আমাকে…..
-বাকিটা হলো ভালোবেসেছি।
তোমার দেশে তোমার ফ্যামিলির কাছ থেকে তোমাকে চেয়ে নেব। বিয়েটা সম্পূর্ণ করব আমাদের ভালোবাসা দিয়ে। সত্যিকারের ভালোবাসা তোমার ফ্যামিলি ফেলতে পারবেনা। আল্লাহ তায়ালা আমাকে এই বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে।
-শেকড় যদি ঠিক না থাকে তবে গাছে পানি দিয়ে কি হবে?
-মানে?
-আমি আপনাকে ভালোবাসি না। কখনো বাসবো না। বাসতে পারব না। দ্যাটস ফাইনাল। কখনো পরিবর্তন হবে না।
-আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। সত্যি ভালোবাসি। বিশ্বাস করো?
-বিশ্বাস করেছি। আপনার ভালোবাসার বিশ্বাস থেকে বলছি। আমাকে ভালোবেসে থাকলে ভুলে যান।
পেপারে সাইন দিন। মুক্তি দিন।
বিকোজ আমি আপনাকে ভালোবাসি না। কান খুলে শুনে রাখুন। আই ডোন্ট লাভ ইউ।
মেহেরাবের হাত থেকে খাবারের প্লেটটা পড়ে গেলো।
মোম তাকে একটুও ভালোবাসে না। অকপটে বলে যাচ্ছে। কেউ যেন মেহেরাবের বুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করছে বারংবার।
মেহেরাব ফ্লোরে বসে পড়ল। ফ্লোর থেকে ভাঙা কাঁচের প্লেট তুলতে লাগল।
মোম একটু একটু করে সকল আইটেম টেস্ট করছে। বিরিয়ানি টেস্ট করে বলল-ওয়াও দারুণ টেস্ট! দেশ থেকে আসার পর থেকে মশলা-লবনযুক্ত ঝাল খাবার তেমন খাইনি। আজ কেন যেন খেতে ভালো লাগছে।ওয়েদার টাও মনোমুগ্ধকর। বাই দ্যা ওয়ে থ্যাংকস !
.
❤আল কুরআনের ৮১টি উপদেশবাণীর ১টি বাণীঃ
 ১৯। ঋণের বিষয় লিখে রাখো। [সূরা বাকারা ২:২৮২]
.
চলবে…….💔💔💔