নুর পর্ব ২২+২৩

#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shabnaj Hossain Moon]
Part-22-23
#22
মোম তোয়ালে নিয়ে মেহেরাবের মুখ মুছে দিল। মুখ ঘামে চটচটে হয়েছিল। রাগের জন্য এই শীতেও ঘেমেছে মেহেরাব।
খাবারদাবার ফেলাফেলির পর্ব শেষ হওয়ার পর মেহেরাব রিসোর্টের বেডে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
একবার শুধু বলেছিল- ক্যান্ডল প্লিজ গো। তুমি চলে যাও। ড্রাইভার তোমাকে হোস্টেলে দিয়ে আসবে। তোমার ঈদের রাতটা নষ্ট করলাম। পারলে মাফ করো।
আমার ঈদ নষ্ট হয়েছে বলে আমি তোমার ঈদ নষ্ট করতে পারিনা। আই এম সরি।
ক্যাম্প ফায়ার ব্যবস্থার সমস্ত কিছু রাখা আছে। যাও হোস্টেলে গিয়ে ক্যাম্প ফায়ার করো রুমমেইটদের সাথে। এনজয় করো ঈদের রাতটা।
রাত কতটুকু হয়েছে তা খেয়াল নেই। মোমের জন্য সবাই হোস্টেলের গার্ডেনে ওয়েট করে আছে। মোম আসলেই ক্যাম্প ফায়ার শুরু হবে। বারবিকিউ করা হবে। আরবের যাযাবরদের মতো তাবু টানিয়ে রাতটুকু কাটানো হবে শুঁকনো কাঠ দিয়ে আগুনের ঘোলা তৈরি করে। প্রচন্ড শীত। মোমের দেখা নেই।
মোম রিসোর্ট থেকে ফেরেনি।
চেয়ার থেকে উঠে জানালার পর্দা গুলো টেনে দিলো।
মেহেরাবের পাশে বসে
মুখ মুছে দিলো। হাতের কাটাছেঁড়া অংশে ড্রেসিং করে দিলো।
রাত বাড়ার সাথে সাথে রিসোর্টে বিকট বিকট আওয়াজ ভেসে আসতে লাগলো। রিসোর্টের কাছেই কোন বন থেকে জীবজন্তুর ভয়াবহ সব আওয়াজ ভেসে আসছে। প্রচন্ড হাড়কাঁপানো শীত।
মেহেরাব কাঁপছে। শীতে তার পাতলা লাল টুকটুকে ঠোঁট দুটো নড়ছে। মোম তার গায়ে কম্বল টেনে দিলো।
মেহেরাব মোমের হাত নিজের হাতের মুঠোয় ধরে বুকের কাছে রেখে ঘুমুচ্ছে।
মাঝে মধ্যে অস্ফুটে স্বরে বলছে -যেওনা, যেওনা। কাছে এসো, কাছে এসো।
ভোরের আলো ফুটেছে।
মেহেরাবের চোখ মিটিমিটি করছে।
-ঘুম ভালো হয়েছে?
-হু।
-ক্ষিধে লেগেছে?
-হু।
-কিছু খাবেন?
-না।
মেহেরাব ধীরে ধীরে বলল- তুমি এখনো যাওনি?
মোম হাতের দিকে ইশারা দিলো।
-আমার হাতের জন্য যেতে পারিনি।
-সরি সরি, এক্সট্রিমলি সরি।
মোমের হাত ছেড়ে দেওয়া হলো।
মেহেরাব নিজের গায়ে কম্বল টেনে দিয়ে আধশোয়া হয়ে চোখ বুঝে থাকলো।
মেয়েদের কত রুপ থাকতে পারে তার জানা নেই।মোম কে এই জীবনে বোঝা সম্ভব নয়।
মোম জানালার পর্দা টেনে দিলো। জানালা ভেদ করে একফালি তীব্র আলোর ছটা মেহেরাবের মুখে ছড়িয়ে পড়লে। সকালের আলো খুব মিষ্টি।
মোম বলল- গুড মর্নিং। হ্যাভ এ নাইস ডে।
মেহেরাব মাথার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলল-গুড মর্নিং।
দরজা নকের আওয়াজ হলো।
-কামিং?
-গুড ডে ম্যাম, গুড ডে স্যার।
ব্রেকফাস্ট ট্রে রেখে ওয়েটার চলে গেলো।
-ফ্রেশ হয়ে আসুন।
-হোয়াই?
-ব্রেকফাস্ট করবেন।
-করব না।
-ওআচ্ছা। আপনি তো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর কখনো খাবেন না। তাহলে বরং আমি খাব আর আপনি দেখবেন।
-আমাকে ডেকে তুললেই হতো। হাত ছেড়ে দিতাম। চলে যেতে পারতে।
-গোসল করে আসুন। আপনি ক্লান্ত।
-তুমি চাও আমি যেন রেগে লাল হয়ে ক্লান্ত হয়ে যায়ই। দেখ আমি তাই হয়েছি।
এবার খুশি?
মোম কথা বলছে না।
-গোসল কেন করতে বলছো? জুতো মেরে গরু দান,তোমাদের দেশের লোকদের মতো বললাম।
মেহেরাব শাওয়ার না করে
মহানবী (সাঃ) এর মতো গোসল করতে লাগলো।
মহানবীর সকল সুন্নত পালন অবশ্যই পালন করতে হবে ইমাম সাহেব বলেছেন। সে ধীরেধীরে চেষ্টা করছে একটা একটা সুন্নত পালন করতে।একদিন সে অবশ্যই নবীর সকল সুন্নত পালন করতে পারবে ইনশাআল্লাহ!!
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে তাঁর হাত দু’টো ধুয়ে নিতেন। অতঃপর সালাতের অজুর মত অজু করতেন। অতঃপর তাঁর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে নিয়ে চুলের গোড়া খিলাল করতেন। অতঃপর তাঁর উভয় হাতের তিন আঁজলা পানি মাথায় ঢালতেন। তারপর তাঁর সারা দেহের উপর পানি ঢেলে দিতেন।

(২৬২, ২৭২; মুসলিম ৩/৯, হাঃ ৩১৬, আহমাদ ২৫৭০৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৪৬)

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
মেহেরাব গোসল শেষে রুমে এসে দেখে মোম নাকাব খুলে নাশতা খাচ্ছে
অবলীলায়। নাশতা খাওয়ার দরুন স্বাভাবিক না। এমন ভাবে হামলে পড়ে খাচ্ছে যে মনে হচ্ছে কেউ খেয়ে ফেলবে। এখানে কি মেহেরাব ছাড়া কেউ রয়েছে?
-আরে বাবা ধীরে ধীরে। গলায় আটকে যাবে। তাড়াতাড়ি খেওনা।
-আমি প্রাচ্যের বাঙালি। আমাকে শিখাতে হবেনা,ধীরে খাব না তাড়াতাড়ি খাব।
-তা ঠিক।
প্রাচ্যের লোকেদের খাওয়া শিখাতে হয়না। আই এগ্রি।
মোমের খাওয়া দেখে মেহেরাবের প্রচন্ড ক্ষিধে ভাব হচ্ছে। এতোক্ষণ বোঝা যায়নি।
ক্ষিধের তাড়নায় সে উঠে দাড়াতে পাচ্ছেনা।
মেহেরাব না হয় রেগে বলেছে সে খাবে না কখনো।
তাই বলে কি আসলেই সে কখনো খাবেনা।তা কি হয়? তাকে কি সাধাসাধি করে খাওয়ানো যায়না? একবার চেষ্টাও করবেনা? সে তো নিজ থেকে খেতে পারেনা। বিষয়টি অতি লজ্জাকর!
যার জন্য সে খাবে না বলেছে সে স্বার্থপরের মতো হামলে পড়ে খাচ্ছে। চোখের সামনে ক্ষুধার্ত মানুষকে খেয়াল করছে না পর্যন্ত।
একবার কি সাধাও যায়না?
হায়রে স্বার্থপর নারী।
মোম গোশত রুটি চিবোতে চিবোতে বলল- আমি স্বার্থপর নারী। এটা নতুন কিছু না।
বাই দ্যা ওয়ে বহুদিন গোশত রুটি খাইনি।ভীষণ
টেস্টি!
-কথা না বলে খেয়ে যাও।
-জানেন এখানে তো গোশত রুটি খাওয়া হয়না। হোস্টেলে তো মরুভূমির মধ্যে পানি খুঁজে পাওয়ার মতো।
খেতে খুব ভালো হয়েছে।
– চুপ করে খেয়ে যাও।
-খেয়েই তো যাচ্ছি। ওয়াও কি টেস্ট।
-জাস্ট সেটআপ।
-আপনার রাধুনিকে একবার দেখতে চাই।
-ডোন্ট টক।
-সাথে করে নিয়ে যাব। হোস্টেলে চাকুরী দেব। আমার জন্য এমন টেস্টি গোশত-রুটি তৈরি করবে।
-জাস্ট সেটআপ ইউর মাউথ। পাঁজি মেয়ে।

-আর তিনটে রুটি আছে, এক বাটি গোশত রয়েছে। রেখে লাভ কি? কার জন্যই বা রাখব? বরং খেয়ে ফেলি।
মেহেরাবের প্রচন্ড ক্ষিধে পেয়েছে। চোখের সামনে মোম সব খেয়ে খেয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে ছিলো সকালে দু-জন গোশত-রুটি দিয়ে নাশতা করবে।এটি মুসলিমদের ঐতিহ্যবাহী খাবার।মোম খুশি হবে। হ্যাঁ মোম খুব খুশি। দুজনের খাবার একা খেতে পেড়ে
বেশি খুশি হয়েছে।
মোম রুটিতে গোশতের টুকরো নিয়ে যে-ই মুখে দিতে যাবে অমনি মেহেরাব নিজের মুখে নিয়ে নিলো।
চিবোতে চিবোতে বলল- আসলেই খুব টেস্টি।তুমি তো ঠিক বলেছো।
রান্নাটা টেস্টি নাকি তোমার হাতের ছোঁয়ায় টেস্টি হয়েছে? বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। বড়ই চিন্তার বিষয়।
আরেক টুকরো গোশত দাও তো! খুব মজা তো।
মোম একটুকরো গোশত মুখে তুলে দিলো।
-সেকি এক টুকরো বলেছি বলে একটুকরো?
মোম আরেক টুকরো মেহেরাবের মুখে তুলে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।
দরজায় নক করে বলল-সাহেবের জন্য নতুন করে সেইম ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসো।
ব্রেকফাস্ট বলতে লাঞ্চ ডিনার সবকিছুই একেবারে করছে মেহেরাব। মোম একের পর এক সার্ভ করে দিচ্ছে।
মোমের সৎমা গোশতের হরেকরকম রান্না করেন দেশের বাড়িতে। তারমধ্যে একটা মোম ভুনা। ছোট মায়ের নিজের রেসিপির নিজের দেওয়া নাম। একটা বড় পাত্রে অর্ধেক গোশত আর অর্ধেক পানি দিয়ে শুধু কাঁচামরিচ বাটার সাথে জিরাগুঁড়া দিয়ে
গোশত কয়েকদিন ধরে সিদ্ধ করতে হয়৷ শেষে সরিষাবাটা দিয়ে রান্না করলে তৈলাক্ত সোনালী একটা ভাব সৃষ্টি হয়। মুখে দিলেই মোমের মতো গলে যায়। মোমের ছোটমা তাই নাম দিয়েছিল মোম ভুনা। মেহেরাব মুখে গোশত পুরতে যাবে তক্ষুনি
মোম মেহেরাবের হাত ধরে বলল- আমি প্রাচ্যের নারী।
আমার সাথে খাবার নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না।
আমরা প্রাচ্যের মানুষেরা সাধাসাধি করে সময় নষ্ট না করে নিজে খেতে খুব পছন্দ করি। কয়েকজনের খাবার একাই সাভার করতে জানি। সাবধান।
মেহেরাব মাথা নাড়ালো।
-নিন এবার মুখে দিন।
মেহেরাব গোশত মুখে দিলো।
-কি হলো চিবোচ্ছেন না কেন? গিলে ফেলবেন নাকি? চিবোতে থাকুন।
মেহেরাব গোশত চিবোচ্ছে। হজম হলেই হয়।
.
রিসোর্টের বেলকনিতে মোম দাড়িয়ে আছে। বেলকনিতে অসংখ্য নাম না জানা ফুলের টব।
ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে চারপাশ। বেগুনি রঙের ফুল গুলোর নাম জানতে পারলে ভালো হতো। দেখতে খুব অদ্ভুত। পাতার মতো। কড়া মিষ্টি গন্ধ।
মেয়েদের জীবন অনেকটা ফুলের মতো। ফুল যেমন মিষ্টি সৌরভ ছড়ায় হাওয়ায় ঠিক তেমনি মেয়েরাও ভালোবাসার সৌরভ ছড়ায় পুরুষের জীবনে। ফুলের অস্তিত্ব সৌরভে। মেয়েদের অস্তিত্ব ভালোবাসায়। সৌরভ না থাকলে যেমন ফুলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়, ভালোবাসা ছাড়া তেমনি মেয়েদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়।
মোমের চোখ দুটো নদীর স্বচ্ছ পানির দিকে ধাবিত। জীবন নদীর স্বচ্ছ পানি হলে ভালো হতো। জীবনে ক্লেশ, যাতনার,বিষন্নতার জায়গা থাকতো না।
মেহেরাব মোমের পাশে এসে দাঁড়ালো।
রিসোর্টের ভেতর থেকে মোম কে সে দেখছিল।
-তুমি কি আমাকে কখনো ভালোবাসবে না?
-আপনি কি এই কথাটা ছাড়া আর কিছু জানেন না?
-এটা আমার প্রশ্নের উত্তর না।
-আমার প্রশ্নেরও উওর না এটা।
-প্রশ্নটা আমি আগে করেছি।
কি হলো বলো?
-উওর আপনার ভালো লাগবে না।
-তবুও শুনব। বলো?
মোম অন্যদিকে ঘুরে তাকালো।
মেহেরাব মোমের হাত ধরে বলল- উওর দাও।
সত্যটা বলো?
– সব সময় সত্যটা বলতে নেই। কিছু সত্য মানুষের ধ্বংসের কারণ হয়। সত্যটা তখন সত্য থাকেনা।
-তবুও আমি শুনব। ধ্বংস হলে হব। স্ত্রীর ভালোবাসা না পেয়ে স্বামী ধ্বংস হয়েছে লোকে জানবে।
-না।
-ওআচ্ছা।
মেহেরাব স্বাভাবিক ভাবে বলল ওআচ্ছা। এরপর হাত দুটো পকেটে রেখে বেলকনির এমাথা ওমাথা হাঁটাহাঁটি করলো।
মোম জানে মেহেরাব কে সে আবারও রাগিয়ে দিয়েছে।
মেহেরাব নিজের চুল গুলো আঙুল দিয়ে টানতে টানতে মোমের দিকে এগিয়ে গেলো।
-কি করলে আমাকে ভালোবাসবে? একটু বলবে?
আমার ভালোবাসা কে কি করলে বিশ্বাস করবে একটু বলো?
আল্লাহর তায়ালার শপথ নিয়ে বলছি আমি সেটাই করব।
ভালোবাসা কি আমি জানি না। তবুও আমি তোমাকে ভালোবাসি।ভালোবাসার অর্থ আমার জানা নেই তবুও আমি তোমাকে ভালোবাসি।
যেদিন থেকে আমার বুকে তোমার জন্য ভালোবাসার জন্ম নিয়েছে সেদিন থেকে আমি ঘুমুতে পারিনা।
সারাক্ষণ তোমার সাথে থাকতে ইচ্ছে করে। এক মুহূর্তও আমি তোমাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারিনা।
-আপনি কেন আমাকে ভালোবাসতে গেলেন? ভালোবাসা শুধু কষ্ট আর কষ্ট।
মেহেরাব হাঁটু গেঁড়ে বসে মোমের দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে মোমের চোখের দিকে তাকালো।
-ভালোবাসার উপর কারও নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। যদি থাকতো তবে পৃথিবীতে ভালোবাসার জন্য এতো কষ্ট থাকতো না।
ভালোবাসার জন্য যুদ্ধবিগ্রহ হতো না।
আমি তোমাকে ভালোবাসি। কেন ভালোবাসলাম সেটা জানিনা।
-আপনি দয়া করে উঠুন। শান্ত হোন।
-না। শান্ত হবো না। তোমার ভালোবাসা না পাওয়া পর্যন্ত আমি শান্ত হবো না।
যেদিন থেকে জেনেছি আমি যাকে ভালোবাসি সে অন্য কাউকে আগেই ভালোবেসে বসে আছে সেদিনের পর থেকে আমি এক মুহুর্তও শান্তি পাচ্ছিনা।
আমার জন্য জমানো ভালোবাসা অন্যকেউ ধোঁকা দিয়ে নিয়ে নিয়েছে সেটা আমি সহ্য করতে পারিনা। আমার শিরা-উপশিরা রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। আমার মস্তিষ্ক চূর্ণবিচূর্ণ হতে শুরু করেছে।
শান্তিতে নিঃস্বাস নিতে পারিনা আমি যখন ভাবি তোমার হৃদয়ে অন্যকেউ ছিলো।
তোমার মনে কোথাও আমি নেই সেটা ভাবতে পারিনা। খুব কষ্ট হয় যখন মনে পড়ে তুমি আমাকে ভালোবাসো না।
আমাকে ঘুমোতে দেয়না আমার কষ্ট গুলো।
কি করলে তুমি আমাকে ভালোবাসবে একটু। বলো আমাকে? আমি নদীতে ঝাপ দেব? হিমালয় থেকে লাফ দেব? নাকি আইফেল টাওয়ার থেকে লাফিয়ে নিজের জীবন দেব?
মেহেরাবের নীল মনির চোখ গুলো ধপধপ হয়ে জ্বলছে চোখের পানির আগুনে।
ফর্সা মুখটা আবারও লাল টকটকে হয়েছে।
মোমের চোখ থেকেও পানি পড়ছে।
মোমও হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লো মেহেরাবের সামনে।
মোম মেহেরাবের চোখে পানি আঙুলের ডগায় নিয়ে বলল- পবিত্র এই চোখের পানির যোগ্য আমি নই।
আমি আপনার যোগ্য নই।আমার মধ্যে কিছুই অবশিষ্ট নেই যা দিয়ে আপনার কদর করব।
আমি অত্যন্ত একরোখা, গোঁড়ামী ধরনের নারীতে পরিণত হয়েছি। নিজেকে এতো কঠোর ভাবে আমি লক্ষ্য করিনি৷ কখন এতোটা কঠোর হলাম আমি বুঝিনি। আপনি নিজেই একবার ভেবে দেখুন, আপনার এতো ভালোবাসা পৃথিবীর কোন নারী উপেক্ষা করতে পারবেনা। আপনার ভালোবাসা অনুভব না করে থাকতে পারবে না। সেখানে আমার মতো একজন তুচ্ছ নারী আপনাকে দেখছে না পর্যন্ত। সারাক্ষণ অবজ্ঞার উপর অবজ্ঞা করেই যাচ্ছে। আমার জন্য আপনি মুসলিম হয়েছেন, ইসলামধর্ম গ্রহণ করেছেন, মহান আল্লাহ তায়ালা কে চিনতে পেরেছেন। এটা আমার পরম পাওয়া ছিলো কিন্তু তাতে আমার কোন যায় আসছে না।এটা অন্য কারও ক্ষেত্রে ঘটলে সে আপনাকে ভালোবাসার মোড়কে ঢেকে রাখতো। এবার আপনি নিজেই বলুন আমি আপনার কতটা অযোগ্য? আমি জীবন সাজাতে নয় ধ্বংস করতে জানি। আপনার নতুন জীবন আমার জন্যই ধ্বংস হতে শুরু করেছে অনুভব করছি।
আমি কাউকে সুখী করতে পারব না।কাউকে সুখী করবার জন্য যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তার একটাও নেই আমার মধ্যে। আমি কাউকে ভালোবাসতে পারব না কারণ আমার ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছি , আমার ভালোবাসার মৃত্যু হয়েছে। আমার মৃত্যু হয়েছে অনেক আগেই। আমি জীবন্ত লাশের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছি।
মৃত মানুষ আর যাইহোক কাউকে ভালোবাসতে পারেনা। যে মৃত তার মনে আর যাইহোক ভালোবাসার সৃষ্টি হয়না।আমার থেকে যত দূরে থাকবেন ততই সুখে থাকবেন। শান্তিতে থাকবেন। আমি একটা ঝড়। ঝড়ের মতো আপনার জীবনে এসেছিলাম আবার ঝড়ের মতো আপনার জীবন থেকে চলে যাব। আমি থাকলে আমার অশান্তির আগুনে জ্বলে পুড়ে যাবেন। আমি একটা অশান্তি।
আপনি কেন আমার জন্য পাগলামি করছেন? নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন?
কেন নিজের জীবন ধ্বংস করছেন?
আপনি সুন্দর ভাবে সাজাতে পারেন আপনার জীবন। তা না করে আমার মতো একজনের জন্য নিজের জীবন তুচ্ছ করে তুলছেন কেন?
মেহেরাব একটা কথাও বলেনি শুধুই চোখের পানি ফেলেছে। পৃথিবীর নিয়ম কি নিষ্ঠুর।
.
.

.
❤আল কুরআনের ৮১টি উপদেশবাণীর ১টি বাণীঃ
২২। সমস্ত নবির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো। [সূরা বাকারা ২:২৮৫] 
.
চলবে……..💔💔💔
.
.
.
#নূর💔
Writer-Moon Hossain
[Shannaj Hossain Moon]
Part-23
মেহেরাবের খুতবা শুনতে ভালো লাগে। মেহেরাব চেষ্টা করে খুতবার বিষয়বস্তু মন দিয়ে অনুভব করতে।
খুতবা সম্পর্কিত হাদিসও রয়েছে।
মহানবী (সাঃ) এর খুতবা শোনার জন্য গাছগাছালিও আর্তনাদ করতো।
রাসূল (সা:)- এর বিচ্ছেদ সহ্য করতে না পেরে খেজুর ডালের আর্তনাদ………………

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত:- তিনি বলেন:-

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন শুক্রবারে খুতবা দিতেন তখন তিনি একটি খেজুর বৃক্ষের ডালের সাথে হেলান দিতেন,
এমতাবস্থায় একজন আনসারী মহিলা অথবা পুরুষ বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সা:) ! আপনার জন্য একটি মিম্বার বানিয়ে দিব ?
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদের ইচ্ছে হলে দিতে পার।
অতঃপর তারা একটি কাঠের মিম্বার বানিয়ে দিলেন। শুক্রবার এল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন মিম্বারে বসলেন, তখন খেজুর বৃক্ষের ঐ ডালটি তথা যে ডালে রাসূল (সা:) হেলান দিয়ে খুতবা দিতেন ঐ ডালটি উষ্ট্রির ন্যায়,
কোন বর্ণনায় এসেছে, হরিণের বাচ্চার ন্যায়,
কোন বর্ণনায় এসেছে, শিশুর মত চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।
আবার কোন বর্ণনায় এসেছে, সে এমনভাবে চিৎকার করতে শুরু করল মনে হচ্ছে সে যেন ছিঁড়ে খন্ড-বিখন্ড হয়ে যাবে।
প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিম্বার হতে নেমে এসে ওটাকে জড়িয়ে ধরলেন। কিন্তু ডালটি শিশুর মত আরো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল, একসময় সে ছোট্টশিশুর মত কাঁদতে কাঁদতে শান্ত হয়ে গেল।
সে খুতবার সময় যিকির শুনতে পেত ॥

সহিহ বুখারী, হাদিস নং:- ৩৫৮৩, ৩৫৮৪, ৩৫৮৫,

লাইব্রেরিটা ফাঁকা।
মোম লাইব্রেরি থেকে যেসব বই কালেকশন করেছে তা মিলিয়ে নিচ্ছে।
যম স্যার কে দেখা যাচ্ছে। এগিয়ে আসছে মোমের দিকে।
স্যার কে আজ পর্যন্ত সেভাবে খেয়াল করেনি মোম। তবুও কার সাথে যেন স্যারের মিল রয়েছে। মোম ঠিক মেলাতে পাচ্ছেনা কার সাথে মিলেছে।
ওভারকোট টা খুলে হাতে রাখলো, মাথার টুপি মাফলার টেবিলের উপর রাখলো। সানগ্লাস টা বুকপকেটে রাখলো।
শুদ্ধ বাংলায় বলল- আসসালামু আলাইকুম। তারপর বলো কেমন আছো?
মোমের বিস্ময়ের সীমা রইলো না। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
সে কি সপ্ন দেখছে। ঘুম ভাঙলেই যা কেটে যাবে।
আসলাম স্যার বলল- বসো। শান্ত হও। রিলাক্স।
মোম তবুও দাড়িয়ে রইলো।
বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো আসলাম স্যারের দিকে।
-তুমি অনেক বড় হয়েছো। একজন দায়িত্বশীল স্টুডেন্ট তুমি। দেশ ছেড়ে এতো দূরে এসেছো ক্যারিয়ার গড়তে। তোমার এলেম রয়েছে। দেখে ভালো লাগলো।
মোম চট করে বিস্ময় কাটিয়ে বই গুলো গুছাতে লাগলো।
-তুমি আমাকে চিনতে পারও নি তাইনা?
মোম একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।
-আমারও বয়স হয়েছে। চেহারায় পুরুষালি ভাব এসেছে। ওভারকোট, মাফলার, টুপি, চোখের সানগ্লাস পড়া আমাকে আমি নিজেই চিনতে পারিনা। তুমি তো আমাকে খেয়াল করোনি। করলেও হয়ত চিনতে পারতে না। তুমি আমাকে সব সময় দেখেছো পাজামা- পাঞ্জাবিতে। বাংলায় কথা বলতে শুনেছো।
এখানকার মতো ইংরেজিতে কথা বলাতে কন্ঠস্বরটাও চিনতে পারোনি।
যম স্যার নামে স্টুডেন্টদের কাছে আমি পরিচিত। আমার নামটাও তুমি জানতে না।
-আমাকে কেন এসব বলছেন?
-তোমাকে বলব নাতো কাকে বলব? তুমি তো আমার সব। আমার একমাত্র আপনজন।
-পুরোনো কথা বলবেন না।
-পুরোনো কেন বলছো? এগুলো তো তোমার আমার কথা।
মোম বই গুলো গুছিয়ে হাঁটা শুরু করলো।
আসলাম পথ আঁটকে মোমের সামনে দাঁড়ালো।
দুই হাত জোর করে বলল- আমি ক্ষমার অযোগ্য। তবুও আমাকে ক্ষমা করো। ভুল করেছি। অন্যায় করেছি। আমি অনুতপ্ত।
-সামনে থেকে সরে দাঁড়ান।
-না। আগে বলো মাফ করেছো।
-প্লিজ লিভ।
-আগে বলো আমাকে ক্ষমা করেছো। আমার উপর রাগ করে থেকো না প্লিজ।
-আমি কারও উপর রাগ করিনি স্যার।
আমার ক্লাস রয়েছে। আমি যাব।
-আমি পরিস্থিতির স্বীকার।
শোন, আমি……
মোম হনহন করে চলে গেলো লাইব্রেরি থেকে।
রাতে মোম সোফায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে।
কি হচ্ছে সব।
অতীত কেন ফিরে এসেছে? আবার কোন আগুনে জ্বলার বাকি?
মোম এক মনে শুধু আল্লাহ তায়ালা কে ডাকতে থাকে।
মহান আল্লাহ তায়ালা এ কোন পরীক্ষা নিচ্ছো তুমি? সকল পরিক্ষায় ফলাফলের যন্ত্রণা আমাকেই ভোগ করতে হয় কেন?
পড়াতে কিছুতেই মন বসাতে পাচ্ছে না মোম।
মোম কে আবার কোন পরিক্ষায় ফেলছে উপরওয়ালা।
খুব খুব একা লাগছে মোমের। অজানা আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে আছে মোমের মন।
অচেনা এই শহরে সে একদম একা!!!
টুংটাং ম্যাসেজিংয়ের আওয়াজ হলো।
“তোমাকে আজকাল দেখিনা। তোমার কি শরীর খারাপ?
হলেও তো বলবে না।
একবার কি বেলকনিতে আসবে?
একটু দেখব দূর থেকে।
অবশ্য এতো দূর থেকে তোমাকে দেখা যায়না। তবুও তুমি আমার জন্য দাঁড়াবে। কথাটা ভাবতেই আমার মনের মধ্যে একটা শান্তি চলে এসেছে। মন থেকে তোমাকে দেখব।
ম্যাসেজ টা সিন করে মোম ওড়না টা মাথায় দিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।
বড্ড মাথা ব্যথা করছে মোমের। চোখে মুখে পানি দিলো সে।
মেহেরাবের পাগলামিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবেনা। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে যাক বরং।
ঘুমের মধ্যে মোম একটা সপ্ন দেখলো।
ফুলের বাগানে বিশাল একটা বিছানা। ফুলের বিছানা।
সেখানে শুয়ে আছে মোম।
মোমের ঘাড়ে কেউ নিঃশ্বাস ফেলছে। মোমের মনে দীর্ঘ শান্তি বিরাজমান। প্রশান্তিতে মোমের চোখ বন্ধ হয়ে আছে।
মোম চোখ মেলে তাকালো। অস্পষ্ট মুখটা স্পষ্ট হতে চলেছে। মুখটা দেখার আগেই মোমের ঘুম ভেঙে গেলো। ঘুমের আড়মোড়া ভেঙে মোম উঠে বসলো। বিশাল কামরাটা অন্ধকারে ছেঁয়ে আছে। জানালার পর্দা ভেদ করে ঝোড়ো হাওয়া আসছে। হাওয়ার তোড়ে পর্দা গুলো পটপট করে উড়ছে হালকা আওয়াজে।
বেলকনির ফুলের গন্ধ টা কামরাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। ফুলের নামটা মোম মনে করতে পারলো না। মেহেরাব দিয়েছিল। হোস্টেল টিচার মেহেরাবের দেওয়া কিছু ফুলের টব বেলকনিতে সাজিয়ে দিয়েছে। কাশফিয়া টব গুলো তে পানি দেয়। দেখতে দেখতে কলি থেকে ফুল ফুটে উঠেছে।
সেগুলোই এখন সৌরভ ছড়াচ্ছে চারপাশে।
তীব্র মিষ্টি গন্ধে মন মাতালা হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
মোম বেলকনিতে দাঁড়ালো। কেন যেন মনে হচ্ছে মেহেরাব যায়নি। সে বেলকুনির নিচে দাড়িয়ে আছে গাড়ি নিয়ে।
অন্ধকারে মেহেরাব কে চিনতপ মোমের কষ্ট হলো না।
এতো উঁচু থেকেও মেহেরাবের অবয় টা সে চিনতে পারলো।
কামরায় বসে মোম একটা চিন্তায় করছে। কে সে? সপ্নের লোকটি কে?
আসলাম স্যার লেকচার দিচ্ছে। মোম স্বাভাবিক ভাবে লেকচার শুনছে।
আসলাম স্যারও ঠিক প্রফেসরের মতোই লেকচার দিচ্ছে। আলাদা ভাবে মোম কে দেখছে না।
লেকচার শেষ হতেই মোম বের হতে যাবে এমন সময় আসলাম স্যার সামনে এসে দাঁড়ালো।
-পুরো লেকচারে একবারও আমার দিকে তাকাওনি কেন?
কি হলো বলো?
– আমি কেন আপনার দিকে তাকাতে যাব?
-আগে তো স্কুলের ক্লাসের সময় আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে।
-আগে আরও অনেক কিছু করতাম। যেটা এখন করিনা।
-এতোদিনের অভ্যাস। ভাবলাম অভ্যাসটা যায়নি।
– ছোট বেলায় নানান অভ্যাস থাকে। বড় হলে সেগুলো চলে যায়। আমি বড় হয়েছি। ছোট নেই যে ছোট বেলার অভ্যাস বজায় রাখব।
– হ্যাঁ বড় হয়েছো।
দেখতে পাচ্ছি।কাটাকাটা কথা বলতেও শিখেছো।
আসলাম একবার চোখ বুলিয়ে নিলো মোম কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত।
মোমের মনে হতে লাগলো কি হচ্ছে কি? অতীত কেন বর্তমানে?

একটা লাল রংয়ের গাড়ি এসে দাঁড়ালো মোমের সামনে।
দরজা খুলে মেহেরাব বলল- নতুন কিনেছি। বাবা গিফট হিসেবে পাঠিয়েছে।
ভাবলাম তোমাকে দেখিয়ে আনি।
মোম অস্ফুটে কন্ঠে বলল- চমৎকার।
মেহেরাব মাথা চুলকাচ্ছে।
-কিছু বলবেন?
-না মানে।
-তাহলে আমি কি যেতে পারি?
-তুমি কি আমার সাথে একটু গাড়িতে ঘুরবে?
-লং ড্রাইভ?
-মানে লং ড্রাইভে নয়, সর্ট ড্রাইভ।
প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ।
মেহেরাবের চেহেরা দেখে মনে হচ্ছে মোম না বললে এখনি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদবে।
গাড়ি হালকা স্পীডে চলছে।
মেহেরাব কখনো হালকা স্পীডে ড্রাইভ করে না। ফুল স্পীডে ড্রাইভ না করলে তার ভালো লাগেনা। এটা তার হভি।
মোম পাশে আছে বলেই এরকম নিরামিষ স্পীড।
তাছাড়া অন্য একটি কারও আছে বটে।
যত ধীর স্পীড হবে তত বেশি টাইম স্পেন্ড করা যাবে মোমের সাথে।
-এভাবে হাসছেন কেন?
-না না এমনি! হা! হা!হা!।
-আবার হাসি?
-আর হাসবো না। এই নাও মুখে টেপ দিলাম।
মেহেরাব আঙুল দিয়ে টেপ লাগানোর ইশারা করলো।
-এখন গাড়িতে উঠেছো এরপর আমার হৃদয়ে মনে উঠে বসবে।
-কিছু বলবেন?
-না মানে আজকে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। বিউটিফুল।
-আমি তো রোজ রোজ ঢিলেঢালা একরকম বোরখা পড়ে থাকি।
মেহেরাব গাড়ি থামিয়ে বলল -মনের চোখ দিয়ে আমি তোমাকে কল্পনা করি।
একেক দিন একেক রকম ভাবে তোমাকে দেখি। কখনো সাদা গ্রাউনে এঞ্জেলের রুপে দেখি, কখনো দেখি প্রাচ্যের শাড়িতে। আবার কখন বা….।
মেহেরাব মোমের দিকে তাকিয়ে হাসলো।
-বলুন?
-না থাক।
-কেন তুমি রাগ করবে।
মেহেরাব কি মিন করতে চেয়েছে? মোম তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে মেহেরাবের দিকে।
মেহেরাব মোমের কাছে এসে হাত ধরে বলল- ঘোমটা দিয়ে প্রাচ্যের মেয়েদের মতো ফুলের বিছানায় বসে আছো আমার জন্য লাজুক মুখে।
মোম এক ঝটকায় মেহেরাবের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিলো।
ধাক্কা দিয়েও শান্তি পেলো না মোম। ভ্যানিটি ব্যাগ দিয়ে আঘাতও করতেও লাগলো।
মেহেরাব হাসতে হাসতে অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম।
আইসক্রিম পার্লারে মোম কে আইসক্রিম সার্ভ করে দিচ্ছে মেহেরাব।
মোম একের পর এক খেয়ে যাচ্ছে।
মেহেরাব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোমের দিকে।
মোম বড় বড় চোখ দিয়ে ইশারা করলো।
-কি দেখছেন?
আইসক্রিম খাওয়া বুঝি আগে দেখেন নি।
-আমাকে কি একটু সাধবে না?
-না। আমি কাউকে সাধিনা।
-স্বার্থপর মেয়ে।
-ঠিক বলেছেন।
মোমের ঠোঁটে ভ্যানিলা আইস্ক্রিম লেগে রয়েছে । লেগে থাকা আইসক্রিমের উপর মেহেরাবের খুব ঈর্ষা হলো।
মোমের দিকে তাকানোর একটা ঘোর সৃষ্টি হয়েছে মেহেরাবের।
মোমের ঠোঁটের পাশে আইসক্রিম লেগে থাকা জায়গায় হঠাৎই মেহেরাব ঠোঁট বসিয়ে দিলো।
মোমের হাত থেকে আইসক্রিমের ভারটা পড়ে গেলো। কাঁচ ভাঙার বিকট আওয়াজ হলো। আইসক্রিম পার্লারের ফ্লোরটা মাখামাখি হয়ে গেলো।
মেহেরাব চুপচাপ মোমকে জড়িয়ে ধরে আছে চুমু খাওয়ার পর।
মোম মনে হচ্ছে জমে যাচ্ছে আইসক্রিমের মতো। সপ্নে ফুলের বিছানায় পাশে শুয়ে থাকা মুখটা অস্পষ্ট থেকে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
ইউনিভার্সিটি তে হঠাৎ আসলামের সামনে পড়ে গেলো মোম। এপর্যন্ত যতবার সে আসলামের সামনে পড়েছে ততবার স্বাভাবিক ভাবে পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছে। এবারও তাই করেছে।
-কিছু কথা বলব।
তুমি আমার উপর রাগ করো না প্লিজ। আমি তুমি পরিস্থিতির স্বীকার।
মাফ করে দাও আল্লাহর দোহাই।
-দেখুন আমাকে কেন এসব বলছেন সেটা আমি বুঝতে পাচ্ছি না।
লিভ মি স্যার।
-মোম, আমার প্রিয়তমা। শুধু কিছু কথা বলব। জানি কথা গুলো শোনার পর আমাকে আর দূরে যেতে দেবে না। আমার কাছে চলে আসবে। কথা গুলো শোনার আগেই
মোম ততক্ষণে ক্লাসে ঢুকে পড়েছে।
আসলাম নানা ভাবে মোমের সামনে উপস্থিত হয়। মোম তাকে দেখেও স্বাভাবিক থাকে।
সেদিন রাস্তায় দেখা হওয়ার পর আসলাম জোর গলায় বলল-তুমি আমাকে ইগনোর করছো তাহলে?
কথা বলো? ইগনোর করছো তুমি আমাকে? বিশ্বাস হচ্ছে না।
-আরও অনেক কিছুই আমরা বিশ্বাস করতে পারিনা। কিন্তু শেষে বিশ্বাস করতে হয়।
-তুমি আমাকে ইগনোর করতে পারো না।
-কোন অধিকারে?
-আমি তোমার….
-কি বলুন? আপনি আমার স্বামী? তাইতো?
-হ্যাঁ।
-ছিলেন। সেটা অতীত।
আজকে আপনি আমার প্রফেসর। এটাই বর্তমান।
বাবার কাছে ফিরে যাওয়া আমার ভবিষ্যত।
-মোম আমি ফিরে এসেছি।
আমাকে ক্ষমা করে।
আল্লাহর দোহাই আমি ঘুমুতে পারিনা।
তোমার কান্নারত মুখটি ভেসে উঠে।
মোম হোস্টেলের দিকে হাঁটা শুরু করলো।
আসলাম রাস্তায় ধপ করে বসে পড়ে পড়লো।

মোম আজকাল গাঢ় ঘুমে শায়িত থাকে।
ঘুমের মধ্যে সেকল কিছু ভুলে থাকা যায়। যত ক্লেশ রয়েছে জীবনে সকল কিছু থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আসলাম স্যারের ক্লাস শেষ হতেই মোম চটপট বের হয়ে গেলো।
আসলাম স্যার বলল- একটা কথা বলব শুধু। প্লিজ একটা সুযোগ দাও প্রিয়তমা।
মোম হনহনিয়ে বের হয়ে এলো। পেছন থেকে আসলাম ডাকছে।
কিছু দূর যেতেই মেহেরাব কে দেখা গেলো।
পকেটে হাত দিয়ে হাসিহাসি মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছে।
এক হাত পকেটে, আরেক হাত দিয়ে ইশারা করে ডাকছে।
মোম কি করবে? সামনে যাবে নাকি পেছনে?
সামনে মেহেরাব, পেছনে আসলাম। দু’জনেই তাকে ডাকছে।
আজ যদি দু’জন মুখোমুখি হয় তবে কেয়ামত ঘটবে।
দুজনের স্বভাব সম্পর্কে মোম অবগত।
দু’জনেই মোমের দিকে এগিয়ে আসছে।
মোমের কিছু মনে পড়লো না। সে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে ইউনিভার্সিটি চত্বরে পড়ে গেলো।
মুখে পানির ঝাপটা অনুভব হলো। মোম নিজেকে হোস্টেলে আবিষ্কার করলো।
মোম জোরে জোরে নিঃস্বাস নিচ্ছে।
কি হতে পারে?
দু’জন কি মুখোমুখি হয়েছে?
দু’জনের মধ্যে কে বেঁচে আছে।
মোমের খুব ভয় হতে শুরু করলো।
কি হয়েছে তা জানতে ভয় করছে মোমের।
নিশ্চয়ই খারাপ কিছু হয়েছে।
দুজনের মধ্যে একজন টিকে থাকবে এটাই মেহেরাব আর আসলামের বৈশিষ্ট্য।

.
.
❤আল কুরআনের ৮১টি উপদেশবাণীর ১টি বাণীঃ ২৩। সাধ্যের বাইরে কারো উপর বোঝা চাপিয়ে দিও না। [সূরা বাকারা ২:২৮৬]
.
চলবে……💔💔💔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here