#সুখপাখির_খোঁজে 💔
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_৩
.
ডক্টর ইরামের কেবিনে বসে আছে লাবনি আর নাদিরা। নাদিরার দৃষ্টি নিচের দিকে। কোলের উপরে হাত দুটো বারবার কচলে যাচ্ছে সে। লাবনি অসহায় ভাবে ডক্টর ইরামের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ডক্টর ইরাম এক দৃষ্টিতে নাদিরার দিকে। মেয়েটা আগের তুলনায় আরো বেশি শুকিয়ে গেছে। বেশ কিছুক্ষন পর্যবেক্ষনের পর ডক্টর ইরাম সোজা হয়ে বসলেন। তারপর সামনে দুজনকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“ঔষধ ঠিকই কাজ করছে। কিন্তু মনে হয় না উনার নিজের বাঁচার ইচ্ছে আছে! আমি আপনাদের আগেও বলেছি উনার কোন মরণব্যাধি হয় নি, উনার হয়েছে মনের রোগ। আপনাদের থেকে যতটা জানতে পারলাম তাতে মনে হচ্ছে উনার ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত উনি কোন সুখময় সময়ের দেখা পাননি। মনের ভিতর কষ্ট চেপে রেখেছেন। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে তো উনি মরণব্যাধি হওয়াতে খুব বেশি সময় লাগাবেন না!”
নাদিরা ডক্টরের কথা শুনে ভাবলেশহীনভাবে বসে আছে। লাবনি অসহায়ভাবে বলল,
-“বুঝতে পারছি ডক্টর! কিন্তু এর কি কোন উপায় নেই? ও তো কিছুদিন ধরে খুব বেশিই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ”
ডক্টর ইরাম মুখ থমথমে করে বলল,
-“মিস নাদিরা!”
নাদিরা নিরবতা ভেঙে হুট করে বলল,
-“মিসেস! মিসেস নাদিরা!”
ডক্টর ইরাম অবাক চোখে তাকালেন নাদিরার দিকে। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার। কারনটা তার অজানা! আবার হয়তো জানা। একটা ঢোক গিলে ডক্টর ইরাম বলতে শুরু করলেন,
-“তো মিসেস নাদিরা! আপনি ঠিকভাবে খাওয়া দাওয়া করছেন না। যার ফলাফল আপনার প্রেশার লো। আর কিছু সমস্যা হচ্ছে কি না তার জন্য আমার কিছু টেস্ট করাতে হবে। আমি টেস্ট গুলো লিখে দিচ্ছি।”
ডক্টরের সাথে কথা শেষ করে বেরিয়ে এলো দুজনে। লাবনি কেবিন থেকে বেরিয়ে বলল,
-“চল আগে টেস্টগুলো করিয়ে নিই!”
নাদিরা লাবনির হাত চেপে ধরলো। হালকা হেসে বলল,
-“আজ না। অন্য একদিন!”
লাবনি ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“অন্য একদিন মানে? আজকেই টেস্ট করাবো চল!”
নাদিরা লাবনিকে আবার বাধা দিয়ে বলল,
-“কেন বুঝতে চাইছিস না? আজ আমার কাছে কোন টাকা নেই।”
লাবনি ফুঁসে উঠে বলল,
-“আমাকে কি কিছু মনে হয় তোর?”
নাদিরা উত্তরে বলল,
-“সেটা বললে হয় না লাবু! আমি তো তোর টাকাতেই ডক্টর দেখিয়েছি। আর ঋনী করিস না আমায়। সব সম্পত্তি মামাদের দখলে! চাইলেও কিছু করতে পারবো না। এখন আমার ব্যবস্থা আমাকেই করতে হবে।”
লাবনি বিরক্তির সুরে বলল,
-“আমার টাকা না হয় নিবি না আমি পর বলে! তা তোর হাসবেন্ডের তো কম টাকা নেই! সে তোর খরচ নেয় না?”
নাদিরা তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
-“যেই মানুষটাই আমার নয়, যার প্রতি আমার কোন অধিকার নেই, তার টাকার প্রতি কিভাবে অধিকার জমাই?”
লাবনি ভ্রু কুঁচকে বলল,
-“তাই বলে……..”
লাবনিকে কথার মাঝখানে থামিয়ে নাদিরা বলল,
-“এখন চল! এখানে আর ভালো লাগছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে।”
লাবনি ক্ষুণ্ণ মনে নাদিরাকে নিয়ে হসপিটাল থেকে বের হলো।
.
ইয়াসিন আজকে অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ছুটি নিয়ে বেরিয়েছে। উদ্দেশ্য উপমার সাথে দেখা করতে যাবে। রাস্তায় যাওয়ার সময় সে নাদিরাকে দেখলো সাথে লাবনিকেও। বিয়েতে লাবনি উপস্থিত ছিল বিধেয় তাকে চিনতে খুব একটা কষ্ট হয় নি। কিন্তু বুঝতে পারলো না তারা হসপিটাল থেকে কেন বেরিয়েছে! তাদের কাছে যাবে তার আগেই দুজনে একটা রিকশায় উঠে গেলো। ইয়াসিনের সন্দেহ হলো। হাত ঘড়িটায় চোখ বুলিয়ে চলল অন্য রাস্তায়। বাসায় গিয়ে জানা যাবে আসলে কি হয়েছে। কিন্তু বিষয়টা যে নাদিরাকে ঘিরে তা বেশ ভালোমতোই বুঝতে পারছে ইয়াসিন।
.
রিকশায় নাদিরা লাবনিকে বলল,
-“লাবু! আমার কাজ দরকার। পেপার থেকে আর ইন্টারনেট থেকে কিছু কাজের বিজ্ঞাপন পেয়েছি। একটু যাবি আমার সাথে?”
লাবনি কিছু বলবে তার আগেই নাদিরা বলল,
-“শুধু হ্যাঁ বা না!”
ব্যর্থ হয়ে লাবনি হ্যাঁ বলল। নাদিরার আত্মসম্মানবোধ প্রখর। লাবনি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে যে ইয়াসিনের থেকে নাদিরা কোন প্রকার ফাইনেন্সিয়াল হেল্প নেয় নি। আর না ভবিষ্যতে নেওয়ার ইচ্ছে তার আছে! রিকশা থামলো একটা ফাইভ স্টার হোটেলের সামনে! নাদিরা ফোনে একবার চোখ বুলিয়ে দেখলো ঠিকানা ঠিক আছে নাকি! হ্যাঁ এটাই ঠিকানা!!
দুজনে এগিয়ে গেলো। ভিতরে গিয়ে নাদিরা আর লাবনি রিসেপশনের দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো কাজের বিষয়ে, হঠাৎ নাদিরার চোখ পড়লো ১০ নম্বর টেবিলে, বেশ কিছুক্ষন পর্যবেক্ষণ করলো। হঠাৎই তার প্রচন্ড খারাপ লাগছে। মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকু পাচ্ছে না। কোনমতে লাবনির হাত চেপে ধরলো সে। চোখ থেকে পানি বেয়ে পড়ছে। কোনমতে বললি,
-“লাবু চল এখান থেকে! ভালো লাগছে না।”
লাবনি বুঝতে পারলো না আসলে কি হয়েছে। এই তো ভালো ছিল মেয়েটা। আসল ঘটনা বুজতে পারলো সামনে তাকিয়ে। কোন মেয়েই সহ্য করতে পারবে না তার স্বামী অন্য একটা মেয়ের হাত ধরে থাকবে! এতোটা কাছাকাছি থাকবে, খাইয়ে দিবে! লাবনি ইয়াসিনদের কাছে যেতে নিলে নাদিরা তার হাত ধরে ফেলে। উপমা নাদিরাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। উপমাকে ভ্রু কুঁচকাতে দেখে ইয়াসিন পিছন ফিরে নাদিরাকে দেখে! সে বেশ চমকে যায়। চেয়ার ছেড়ে উঠতে নিবে তার আগেই নাদিরা লাবনির হাত ধরে বাইরে চলে যায়। ইয়াসিন তাকিয়ে থাকে তাদের যাওয়ার পানে।
নাদিরার হাত পা কাঁপছে। খুব কষ্টে বাসায় এসে হাতের ব্যাগ রেখেই ওয়াশরুমে গিয়ে বমি করতে থাকে। মনে মনে ভাবতে থাকে আর কত কষ্ট তাকে সইতে হবে? এর কি লাঘব কখনোই ঘটবে না? হ্যাঁ ঘটবে। কষ্টও দূর হবে তার জীবনে সুখপাখিটারও খোঁজ মিলবে, কিন্তু তা দেখার জন্য হয়তো সে থাকবে না!
,
,
,
চলবে………………❣️