সুখপাখির খোঁজে পর্ব ৮

#সুখপাখির_খোঁজে 💔
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_৮
.
ইয়াসিন হতভম্ব হয়ে বসে আছে। মূলত সে এক অজানা ভয়ে তটস্থ। ইয়াসিন এবার মাথা ঘুরিয়ে নাদিরার দিকে তাকালো। আর নাদিরার দৃষ্টি এখনো ড. ইরামের দিকে। তারপর কিছু একটা ভেবে বলল,

-“আমি রাজি!”

ইয়াসিন বিস্ফোরিত চোখে নাদিরার দিকে তাকালো। নাদিরা মাথা নিচু করে বসে আছে। ড. ইরামের ঠোঁটে হাসি, এক দৃষ্টিতে নাদিরার দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে ইয়াসিন তার দিকে তাকাতেই দেখে সে নাদিরার দিকে তাকানো। ইয়াসিন নাকমুখ শক্ত করে উঠে দাঁড়িয়ে নাদিরাকে কভার করলো। যাতে কোনভাবেই নাদিরাকে ড. ইরাম না দেখতে পারে। ইয়াসিনের এমন ব্যর্থ চেষ্টা দেখে খুব কষ্টে ড. ইরাম তার হাসি থামালো। ইয়াসিনের দিকে পূর্ণ নজর দিয়ে হাত দুটো পকেটে পুরে নিয়ে বলল,

-” আমাকেই আমার হবু স্ত্রীকে দেখতে দিচ্ছেন না? ভেরি স্ট্রেঞ্জ! ”

ইয়াসিন কঠিন গলায় বলল,

-“ও আমার বিয়ে করা বউ! আর কিসের হবু স্ত্রী? আমি ডিভোর্সই দিবো না।”

নাদিরা তেতে গিয়ে বলল,

-“কেন দেবেন না ডিভোর্স? আপনার তো উপমা আছে! ওকে নিয়ে সংসার পাতেন যান! আমি তো ড. ইরামকেই বিয়ে করবো।”

ইয়াসিন করুন চোখে তাকালো। সে মানতে পারছে না। কিন্তু নাদিরার এমন কঠিন কথাও সে শুনতে পারছে না। আসলেই তো মেয়েটা অনেক কষ্ট পেয়েছে তার জন্য, তাহলে কি তার নাদিরার জীবন থেকে সরে যাওয়া উচিত? হয়তো! সে শুধু শুধুই অধিকার খাটাচ্ছে। হঠাৎ করেই ইয়াসিন নাদিরাকে বলল,

-“তুমি আসলেই সুখের প্রাপ্য! তুমিই যখন চাও ড. ইরামকে বিয়ে করতে আমি মানা করবো না। আমি আর তোমার পথের কাঁটা হতে চাই না। পারলে আমাকে ক্ষমা করো।”

কথাটা বলে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করেনি ইয়াসিন। ছুটে বেরিয়ে গেছে হাসপাতাল থেকে। গন্তব্য তার জানা নেই।

নাদিরা মন খারাপ করে বসে আছে সাদা বিছানায়। লাবনি এসে তার পাশে বসে। নাদিরাকে দেখে লাবনি একটা শ্বাস ছেড়ে বলে,

-“দেখ! এমন মন খারাপ করে থাকিস না। তোর ভালোর জন্যই এমন করছি! সারাজীবন তুই তোর সুখপাখির খোঁজ করে এসেছিস। আজ আর যখন তার দেখা পেয়েই যাচ্ছিস তাহলে এতো মন খারাপের কি আছে? ড. ইরাম অনেক ভালো লোক! তোকে আসলেই ভালোবাসে।”

নাদিরা কিছু বলল না, চুপ করে রইলো। তারপর মিনমিন গলায় বলল,

-“লোকটাকে যে বড্ড ভালোবাসি! আমার কি করার?”

লাবনি হালকা হেসে বলল,

-“কিন্তু সারাজীবন সুখের জন্য যে তোর এই সেক্রিফাইস টা করতেই হবে!”

নাদিরা ছলছল চোখে লাবনির দিকে তাকায়।

.
আজ দুদিন হলো নাদিরাকে বাসায় আনা হয়েছে। সবাই নাদিরা আর ড. ইরামের বিয়ের কথা জানে। পরিবারের সবাই ইয়াসিনের সব সত্য শুনে বেশ কষ্ট পেয়েছে। এতোদিন তাদের চোখের সামনে মেয়েটা এতো কষ্টে ছিলো অথচ তারা বুঝতেই পারে নি। এর জন্য সবাইই ইয়াসিনকে দোষী করে। ইয়াসিন নাদিরার অনেক খেয়াল রাখে। নাদিরা এখন মোটামুটি সুস্থ। প্রতিদিন নিয়ম করে নাদিরার সাথে একবার দেখা করে যায় ড. ইরাম। তখন ইয়াসিনের মুখটা দেখার মতো হয়।

.
রাত বারোটা বেজে ছাপ্পান্ন মিনিট! ইয়াসিন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের পানে চেয়ে আছে। একবার ভিতরে চোখ বুলালো। নাদিরা বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। সে এখনো বেশ দুর্বল। ইয়াসিনের হঠাৎ বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগলো! মনে হলো বিছানায় থাকা মেয়েটা তার থেকে দূরে চলে যাবে। কি করে থাকবে সে? কিন্তু সে তো নাদিরার সাথে অন্যায় করেছে, তাকে তো শাস্তি পেতেই হবে! ইয়াসিনের চোখের কোনে জল জমে গেছে। এখন তার ভয়ানক এক ইচ্ছা জাগলো। নিকোটিনের বিষাক্ত ধোয়া নিজের মধ্যে নেওয়ার মতো এক কাজ করতে ইচ্ছে হচ্ছে তার। কিছুই ভালো লাগছে না।

.
ঘুমের মধ্যে নাদিরা টের পেলো তার উপর ভারী কিছু ঝুঁকে আছে। চোখ খুলে তার উপর ইয়াসিনকে ঝুঁকে থাকতে দেখে সে বেশ চমকে উঠলো। ইয়াসিন তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে গিয়ে বলল,

-“ভয় পাইলা কেন? আমি তো বালিশ নিতে ঝুঁকেছিলাম! ”

নাদিরা হাঁপাচ্ছে। সে মোটেও ভয় পায় নি। বরং চমকে গিয়েছিল। কিন্তু ইয়াসিনের এমন করুন মুখ দেখে তার ইচ্ছে হলো ইয়াসিনের গাল দুটো টেনে লাল করে দিতে। কিন্তু নাহ! এই কাজ করা যাবে না। নাদিরা বিছানায় শুতে শুতে বলল,

-“বিছানার ওই পাশে শুয়ে পড়ুন! অযথা ঝামেলা করবেন না প্লিজ!”

ইয়াসিন আরেকদফা অবাক হলো। নাদিরা কখনোই তার সাথে এমন ভাবে কথা বলে নি। সে বালিশ নিয়ে চলে যেতে নিলেই বেশ ঝাঁঝালো গলায় নাদিরা বলে,

-“আপনাকে বললাম না চুপচাপ এখানে শুয়ে পড়ুন! যদি দেখেছি সোফায় শুয়েছেন তো খবর আছে।”

ইয়াসিন অবাকের শীর্ষে পৌছে গেছে। কিন্তু আপাতত সে চুপ করে ভদ্র বাচ্চার মতো নাদিরার পাশে শুয়ে পড়লো। এমন ভাবে শুয়েছে যেন একবিন্দু স্পর্শ ও নাদিরার গায়ে না লাগে। ইয়াসিনকে এমন ভাবে শুতে দেখে নাদিরা মৃদু হাসলো।

.
দেখতে দেখতে প্রায় মাসখানেক পেরিয়ে গেছে। নাদিরাও বেশ বদলে গেছে। এখন সে ইয়াসিনকে বেশ ইগনোর করে চলে যা ইয়াসিনকে মুহূর্তে মুহূর্তে পোড়ায়। আজ সারাদিন বৃষ্টি ছিলো। কাক ভেজা হয়ে বাড়ি ফিরেছে ইয়াসিন। রুমে গিয়ে দেখে নাদিরা একটা বই পড়ছে। ইয়াসিন তোয়ালে আর ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। নাদিরা মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছে। বেশ কিছুক্ষন পর ইয়াসিন তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হয়ে ড্রেসিংটেবিল এর সামনে দাঁড়ায়। নাদিরার চোখ আচমকা বই থেকে সরে আয়নার সামনে দাঁড়ানো পুরুষটির দিকে যায়। পিছন দিক ফিরে থাকায় নাদিরা স্পষ্ট ইয়াসিনের ফর্সা পিঠে বিন্দু বিন্দু জলের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। তার খুব ইচ্ছে হচ্ছে সেই জলের ফোঁটাগুলো হাতের সাথে মিশিয়ে নিতে! হঠাৎ চোখাচোখি হয়ে গেলো তার ইয়াসিনের সাথে। সাথে সাথে চোখ সরিয়ে বইয়ে রাখলো। ইয়াসিন তা দেখে ঠোঁট বাঁকা করে হাসলো। সাথে গুনগুন করে নাদিরাকে শুনিয়ে গান ধরলো,

“এত কাছে দুজনে
প্রেম ভরা যৌবনে
হঠাত ভুলে ভুল না হয়ে যায়

মায়াবি রাত মাতাল নেশাতে
আজ মনে মন চায় যে মেশাতে
দীপ নিভিয়ে ঝড় যে বয়ে যায়

আঁখিতে যে জলে কামনার বহ্নি
অঙ্গ যে চায় সঙ্গ যে তন্নি
মনের কথা মনেই রয়ে……”

ইয়াসিন তার গান শেষ করার আগেই দেখে খাটে নাদিরার ফোনে ড. ইরাম নামটা দেখে তার প্রচুর রাগ লাগলো। এদিকে নাদিরা ইয়াসিনের গান শুনে লজ্জায় শেষ। ফোনের আওয়াজে সেদিকে তাকাতেই দেখে ড. ইরামের ফোন। একবার ইয়াসিনের দিকে তাকিয়ে লজ্জা মুখ করে ফোনটা তুলে বারান্দায় চলে গেলো। আর এদিকে ইয়াসিন হাত মুঠো করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

-“শালা আমার সংসার জীবন শেষ করেই ছাড়বে! কি একটা মোমেন্টে ফোন দিলো? হুড়!”

,
,
,
চলবে…………..❣️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here