সুখপাখির খোঁজে পর্ব শেষ

#সুখপাখির_খোঁজে 💔
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_৯(শেষ)
.
ইয়াসিন নিজ হাতে নাদিরাকে ড. ইরামকে দিয়ে দিলো। তার অনেক কষ্ট হচ্ছে, মনে হচ্ছে বুকটা বেজায় ভারী হয়ে আছে। নাদিরা হালকা হেসে তাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলো ড. ইরামের সাথে।

ঘাম দিয়ে ইয়াসিনের ঘুম ভেঙে গেলো। সে হাঁপাচ্ছে। তাহলে কি সে স্বপ্নে দেখেছে, এতো রিয়েলিস্টিক! কিন্তু সে নরতে পারছে না। বুকটা ভারী লাগছে। চোখ ভালো করে খুলে দেখে তার বুকের উপর তার বউ আরাম করে ঘুমিয়ে আছে। আস্তে আস্তে কালকে রাতের সব কথাই তার মনে পড়লো।

.
নাদিরা ড. ইরামের সাথে কথা বলে রুমে এসে দেখে ইয়াসিন বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে। ভ্রু কুঁচকানো, বাচ্চাদের মতো ঠোঁট ফুলিয়ে রেখেছে। নাদিরা ঝুকে দেখার চেষ্টা করলো। হঠাৎ করে ইয়াসিন মাথা তুলে তার দিকে তাকালো, নাদিরা দাঁড়িয়ে গেলো সোজা হয়ে। ইয়াসিন অভিমানী কন্ঠ,

-“জানি তো তোমার অনেক কষ্ট হইছে! তুমি কিভাবে সহ্য করছো? আমার একদম সহ্য হচ্ছে না।”

নাদিরা ভ্রু কুঁচকে ফেলল। নাদিরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কি সব বলছে ইয়াসিন? নাদিরা ভ্রু কুঁচকে বলল,

-“কি বলছেন এগুলো? আপনি ঠিক আছেন?”

ইয়াসিন দাঁড়িয়ে গিয়ে বেশ জোরেই বলল,

-“না ঠিক নেই! আমি ঠিক নেই৷ আমি খুব বাজে ভাবে জেলাস ফিল করছি তোমাকে নিয়ে! মানতে পারছি না তোমাকে ওই পাগলের ডাক্তারের সাথে!”

নাদিরা ইয়াসিনের জেলাসিতে এক ড্রাম কেরোসিন ঢেলে বলল,

-“ছিঃ! ওমন হ্যান্ডসাম একজন ডক্টরকে আপনি পাগলের ডাক্তার কিভাবে বলেন? আর আপনি জানেন না উনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে, তাহলে এমন জেলাসির মানে কি? ”

ইয়াসিন যেন ফুসে উঠলো। নাদিরার একদম কাছে গিয়ে বলল,

-“তোমার সামনে এমন একজন হ্যান্ডসাম পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে, কই জীবনে তো একটু প্রশংসা করলে না। এখন ওই পাগলের ডাক্তার হ্যান্ডসাম হয়ে গেলো? ”

নাদিরা একটু পিছে গিয়ে ইয়াসিনের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

-“আপনি হ্যান্ডসাম?”

ইয়াসিন ভ্রু কুঁচকে বলল,

-“কেন দেখোনি আগে?”

নাদিরা তাচ্ছিল্য করে বলল,

-“দেখতে দিয়েছেন কখনো?”

ইয়াসিন ধীরে এক পা এগিয়ে বলল,

-“তাহলে এখন দেখো!”

ইয়াসিনকে কাছে আসতে দেখে নাদিরা এক পা পিছিয়ে বলল,

-” দরকার নেই! আমি ইরামকেই দেখে নেবো! আর তো মাত্র কয়টা দিন!”

ইয়াসিন নাদিরার বাহু ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে এলো।

-” আমি তোমাকে যেতে দিবো না। কেউ নিতে পারবে না তোমাকে আমার থেকে! কেউ না!”

নাদিরা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

-“ইরাম তো আমাকে নিয়েই যাবে এখান থেকে, তখন আপনি আপনার উপমা ছুপমাকে নিয়ে থাকিয়েন।”

ইয়াসিন রাগী মুখটা নিমিষেই কাঁদোকাঁদো হয়ে গেলো। সে হাটু ভেঙে নাদিরার সামনে বসে গেলো। নাদিরার কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,

-“এবারের মতো ক্ষমা করে দাও না। আমি সত্যি অনুতপ্ত! আর পারছি না। যত ভাবি তুমি আমাকে ছেড়ে ওই ডাক্তারের কাছে চলে যাবে আমার বুকটা ধুক করে, আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা, প্লিজ নাদিরা! অনেক ভালোবাসি, অনেক, অনেক, প্লিজ যেও না!”

বলতে বলতে ইয়াসিন কান্না করে দিলো৷ বাচ্চাদের মতো কান্না করছে সে। নাদিরা পড়লো বিপদে। এতো বড় বাচ্চাকে সে কি করে থামাবে? কেউ শুনলে তো খারাপ বলবে। ইয়াসিন উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

-“তুমি যদি আমাকে ছেড়ে যাও আমি কিন্তু সুইসাইড করবো!”

ব্যস! নাদিরা রেগে ইয়াসিনের গালে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। ইয়াসিন থাপ্পড় খেয়ে চুপ হয়ে গেছে। চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। একটা টু শব্দও করে নি সে। এদিকে নাদিরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল মিনিটখানেক এর মতো। তারপর মুচকি হেসে গিয়ে বাতি বন্ধ করে দিলো। আস্তে করে বিছানায় উঠে এক পাশে শুয়ে পড়লো। ইয়াসিন তাকে পাশে শুতে দেখে ওপাশ ফিরে গেলো। নাদিরা দেখে চোখ বড় করে ফেলল। সে আস্তে আস্তে ইয়াসিনের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তারপর ইয়াসিনের উপর দিকে ঝুকে দেখে ইয়াসিন চোখ বন্ধ করে আছে। সে বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে ইয়াসিন রাগ এর চেয়ে বেশি লজ্জা পাচ্ছে। নাদিরা হালকা হেসে বলল,

-“এমা! এ তো দেখি ঘুমিয়ে গেছে, তাহলে আমি কার সাথে কথা বলবো? আমার তো ঘুম আসছে না। আচ্ছা যাই ইরামকে ফোন করে আসতে বলি! সে কখনোই আমাকে একা ফেলে ঘুমাবে না!”

কথাটা বলে নাদিরা উঠতে পারলো না এর আগেই ইয়াসিন তার হাত ধরে বিছানায় ফেলে তার উপর ঝুকে গেলো। নাদিরা হঠাৎ ঘটা ঘটনায় অবাক হয়ে গেছে। ইয়াসিন দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

-” বলো এই এক মাসে আমি কত বার তোমাকে সরি বলছি? আমি তো আমার ভুল মানছিই, তা সুধরানোর একটা সুযোগ তো আমার প্রাপ্য, তাই নয় কি?”

নাদিরা হা করে ইয়াসিনের দিকে তাকিয়ে আছে। আসলেই কি সে ইয়াসিনের সাথে বেশি করে ফেলল৷ পরক্ষনে মনে মনে বলল,

-“কিসের বেশি? যা করেছে একদম ঠিক করেছে! হুহ! এতোদিন সে জ্বলেছে, এখন ইয়াসিনের পালা!”

হঠাৎ খেয়াল করলো ইয়াসিন তার দিকে অন্যরকম দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। হঠাৎ নাদিরার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো ইয়াসিনের অস্থিরতা দেখে! ইয়াসিন তার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে! নাদিরা চোখ বন্ধ করে নেয়। তার ঠোঁট কাঁপছে। ইয়াসিনের হঠাৎ খেয়াল হলো সে কি করছে! হুট করে নাদিরার উপর থেকে সরে উঠে বসলো। ইয়াসিনকে সরে যেতে দেখে নাদিরা চোখ খুলে দেখে ইয়াসিন উঠে চলে যেতে নেয়৷ নাদিরা ইয়াসিনের হাত ধরে ফেলে। ইয়াসিন অবাক চোখে তার দিকে তাকায়! নাদিরা নিচের দিকে তাকিয়েই বলে,

-“এভাবে মাঝরাস্তায় ছেড়ে চলে যাবে?”

ইয়াসিন অবাকের শীর্ষে! এই প্রথম নাদিরা তাকে তুমি করে বলেছে। নাদিরা ইয়াসিনের চোখের দিকে তাকায়। ইয়াসিনকে এভাবে দেখে সে বসা অবস্থায় উঠে ইয়াসিনকে জড়িয়ে ধরে। ইয়াসিনের গালে একটা চুমু দিয়ে বলে,

-“কি আদর দিবে না ড. ইরামের কাছে যাবো?”

ইয়াসিন আর নাদিরার পরের কথা শোনার অপেক্ষা রাখে না৷ যেই ভয়ংকর কথা বলেছে তার পর সে কিছুতেই নাদিরাকে ছাড়তে পারবে না।
❤️
নাদিরাকে তার বুকের উপর ঘুমাতে দেখে হালকা হাসলো। এই মেয়েটাকে সে আগে ঠিক মতো খেয়ালই করে নি, নয়তো কি আর কাঁচের পিছনে ছুটতো, তার নিজ ঘরে হীরে রেখে! ইয়াসিন মনে মনে ঠিক করে নেয় যে আর কোন কষ্টই সে নাদিরাকে পেতে দিবে না। নাদিরার প্রাপ্য সকল সুখ দেওয়ার চেষ্টা করবে। নাদিরার সুখপাখিটার খোঁজ ইয়াসিনই এনে দিবে।।

নাদিরা ঘুম থেকে সজাগ হয়ে নিজেকে আজ নতুন জায়গায় আবিষ্কার করলো, সাথে সাথেই তার মধ্যে ভর করলো এক রাশ লজ্জা! নাদিরাকে লজ্জা পেতে দেখে ইয়াসিনও হেসে দিলো।

.
আজ সকালটা ইয়াসিন আর নাদিরার জন্য এক শুভ সূচনার সকাল। শুক্রবার বিধায় ইয়াসিন আজ বাসায়! নাদিরার যেন আজ সারাদিনই লজ্জা পেতে পেতে কাটবে। কারণ একটু পরপর এসে ইয়াসিন তাকে এটা সেটা বলে লজ্জা দিচ্ছে। কথার মাঝে নাদিরা ইয়াসিনকে বলল,

-“আজ ডক্টর ইরাম আসবে বাসায়, তৈরি থেকো। ”
ইয়াসিন চমকে গিয়ে বলল,

-“কেন বাসায় কেন আসবে? এই বিয়ে হবে না! তোমার আমার মধ্যে তো সব ঠিকই হয়ে গেছে, তো উনি কেন আমাদের বাসায় আসবে? আমি মানবো না!”

নাদিরা ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকে ইয়াসিনের গলা জড়িয়ে বলল,

-“হায় রে জেলাসি! এতো কিউট কেন তুমি? আর ডক্টর ইরাম আমাকে বিয়ে করতে না আমার ঔষধ পালটে দিতে আসবে, তাই একেবারে ওনাকে দাওয়াত দিয়ে দিয়েছি। লাবনি আর রিশাদ ভাইয়াও আসবে।”

নাদিরা আবার ফিসফিস করে ইয়াসিনের কানে বলল,

-“বাই দা ওয়ে! লাবনি ইস প্রেগন্যান্ট, দেড় মাস!”

ইয়াসিন খুশি হয়েছে। সে নাদিরাকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,

-“আমরাও আমাদের জনকে খুব দ্রুতই নিয়ে আসবো আমাদের কাছে! আমাদের ছোট্ট সুখপাখি! যাকে দেখলেই আমাদের সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে!”

নাদিরা লজ্জা পেয়ে হুম বলে।

——————সমাপ্ত ——————-

(শেষ হলো সুখপাখির খোঁজে গল্পটার ছোট পথচলা। এটা একটা ছোট গল্প ছিলো। আশা করি সবার ভালো লেগেছে। আজ অন্ততপক্ষে কিছু মন্তব্য আশা করবো আপনাদের থেকে!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here