Unexpected_lover
part_02
#Rimy_Islam
বাইরে একটা গাড়ি এসে থামলো। আমার বুক ধুকধুক করছে। ওই মানুষ চলে এলো নাতো? কি বলবো আমি? যাকে দেখিনি, বুঝিনি, চিনি না, ওই মানুষের সামনে মিথ্যা বলবো কিভাবে? আর তিনি যদি বলেন এ মেয়ে মিথ্যা বলছে,তাহলে কি হবে? কেন এত জট পাকিয়ে ফেললাম সব?
আমার ভীতু চোখের দৃষ্টি পুরো ঘরজুড়ে বিচরণ করছে। মুখ লুকোনোর জায়গাও নেই। একটা মানুষ দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। লজ্জায় মুখ তুলতে পারছি না। তবুও খুব বুঝতে পারছি ওই চোখ জোড়া এক দৃষ্টি আমাকেই দেখছে। ভীষণ রাগান্বিত হয়ে হয়তো। মনে মনে আন্দাজ করে নিলাম। এতক্ষণ পাশে বসে নীরবে সয়ে যাওয়া মহিলা এবার কথা বলে উঠলেন,
” বাবা অনিব! একবার এদিকে আই তো! কি কাণ্ড ঘটিয়েছিস বল তো? এরকম কেউ করে, আমরা জানলে বিয়েতে অমত করতাম? ”
অনিব নামক এক আগন্তুক, যিনি তথাকথিত আমার বানোয়াট বর। ধীর পদে এগিয়ে আসছেন। পদধ্বনি বেশ জোরালো কিন্তু শিথিল।
তিনি আমার সামনের সোফায় পুরো মুখোমুখি বসলেন। এখনো তার নজর আমাতে সীমিত। মনে অনেক জোর নিয়ে মুখ তুলে তাকালাম।
এক ছাব্বিশ বা তদূর্ধ্ব বয়সী ছেলে আমার সামনে বসে রয়েছে। লম্বা- চওড়া বিশালদেহী, গোরা মুখ। পোশাকে কোনো আভিজাত্যের ছোঁয়া নেই। সাদামাটা একটা কালো টিশার্ট, ব্লু জিন্স পরনে। চুলগুলো পরিপাটি করে বিন্যস্ত।
অনিবের মা রুনা বেগম আবার বললেন,
” কতদিন ধরে মেয়েকে এ বাড়িতে এনেছিস? ”
এক গাঢ়, ভরাট,পুরুষালি কণ্ঠে বলে উঠে,
” সেটা তো জানি না। জানতেই এলাম।”
” কি বলিস বাবা? একটু জট খুলে বল তো কি হয়েছে? ”
অনিব কায়সার চৌধুরী বললেন,
” তোমরা একটু অন্য ঘরে যাও। আমি ওর সাথে কথা বলবো।”
আমি এবার সত্যিই শেষ। কি কথা বলবেন উনি আমার সাথে? যদি অপমান করেন, সয়ে নিবো। কারণ দোষ তো আমি করেছি। কিন্তু সবার সামনে ঘাড় ধরে বের করে দিলে কি করবো? হাজারো ভীত প্রশ্ন মনের আড়ালে উঁকি দিচ্ছে। সবাই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। তিনি এক পায়ের উপর অন্য পা তুলে বেশ আয়েসি ভঙ্গিতে বসলেন। তারপর বললেন,
” আপনি আমার বউ? ”
আমি’ না ‘ কথাটা এত আস্তে বলি যে উনার কানে ধাক্কা লাগে না। তাই আবারো বললেন,
” কথা বলতে পারেন না? বোবা বউ হলে তো আমাকে ইশারায় কথা বলার ট্রেনিং নিতে হবে।”
আমি নিজের কণ্ঠ ধ্বনি হালকা চওড়া করে বলি,
” আমি আপনার বউ হলে আপনি তা ভালো করেই জানতেন। আমি মিথ্যা বলেছি।”
তাঁর কাঠ কাঠ প্রশ্ন ,
” কেনো?”
” কারণ আমার একটা আশ্রয়ের স্থান প্রয়োজন।”
” থাকার জায়গা লাগলে সরাসরি বলতেন! নিজেকে আমার বউ পরিচয় দিয়েছেন। জানেন কতটা ঝামেলায় ফেলেছেন আমায়? কি কৈফিয়ত দেবো সবাইকে,বিশেষ করে মাকে?”
আমি কান্না ভেজা গলায় বললাম,
” মাফ করবেন। আমি সব ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেছি।”
অনিব বললেন,
” কেন এসব বলতে গেলেন? নিশ্চয়ই বাড়ি থেকে পালিয়েছেন? কেন পালিয়েছেন ওসব জেনে আমার কাজ নেই আর আপনি বোধহয় বলতেও ইচ্ছুক না। তাহলে সোজা কথায় আসি, যতদিন ইচ্ছে এখানে থাকুন।কেউ কিছু বলবে না। বিনিময়ে আমার একটা কাজ করে দিবেন।”
আমি নিঃশ্বাস আটকে বললাম,
” কি কাজ?”
” আপনি মিথ্যা বউয়ের নাটক করেছেন। এবার সত্যি বিয়ে করবেন আমাকে। আপনি কে, কোথা থেকে এসছেন, কেনো এসছেন কিছু জানতে চাই না। এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করুন নিজেকে। আশা করি এইটুকু সময় নিজেকে তৈরি করার জন্য যথেষ্ট। ”
আমি বন্ধ দোম ছেড়ে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে বলি,
” আপনি কি চাইছেন বলুন তো! একটা মেয়ের অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে চাইছেন। ওই মার্জিত মুখচ্ছবির পেছনে একটা ভয়ানক মুখ থাকতে পারে, দেখে বোঝাই যায় না। সোজা হিসেব, আমি পারবো না।”
অনিব সহজ গলায় বললেন,
” কি পারবেন না?”
” আপনাকে বিয়ে করতে।”
এবার তিনি দৃঢ় রেগে বললেন,
” মিথ্যা বউ হয়েই তো ছিলেন আর থাকতেনও হয়তো অনেকদিন। সেখানে আমি প্রথাসিদ্ধ স্ত্রীর পরিচয় দিতে চাইছি। কি অন্যায় করেছি?”
” এটাই তো আমার প্রশ্ন, কেনো? আমি আপনার বা আপনি আমার কে? কেন হঠাৎ এক অজানা মেয়েকে এক দেখায় বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন?”
অনিব বললেন,
” আগামী সপ্তাহে আমাদের বিয়ে। এত জবাবদিহিতার প্রয়োজন অনিবের নেই। বড় বড় কোম্পানি, অফিসের কর্মচারী, ক্লায়েন্ট সামলে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে এসেছি? মেয়েরা এত অহেতুক প্রশ্ন করেন যে পুরো বাড়ি তখন ভেঙে ফেললেও শান্তি হবে না মনে হয়। ”
অনিব কায়সার চৌধুরী হনহন করে হেঁটে চলে গেলেন। গাড়ি পার্কিং এরিয়া থেকে বেরিয়ে সোজা মেইন গেট দিয়ে বেরিয়ে গেল। আমি দেখলাম আর ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। একেই বলে অদৃষ্টের পরিহাস। ভাগ্য আমাকে পরিহাস করে চলে গেল।
.
.
.
.
.
.
পুরো বাড়িতে বিয়ে বিয়ে আমেজ। অনিবের পৈতৃক বাড়িতে বিয়ের সমস্ত আয়োজন করা হবে। আমাকে এর মাঝে ওই বাড়িতে থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। একটামাত্র ছেলে হয়েও মা-বোনকে রেখে আলাদা থাকার দরকার পড়ে কেন জানা নেই। ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। কারণ এখানে আমি এবং আমার ইচ্ছে, দুটোই নগন্য। আমার হবু শাশুড়ী খুব সানন্দে বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নতুন করে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে এবার কোনো কমতি রাখতে চান না। মিতি,দিতি চুম্বকের ন্যায় আমার সাথে সর্বদা লেগে থাকে।
সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার, এ পরিবারের কেউ আমার বাড়ি,মা- বাবা সম্পর্কে কিছুই জানতে চায়নি। তবে আমার জন্য খুব সুখকর নয়। পুরো জালে ফেঁসে গেছি।
.
.
.
শপিংমলে বসে আছি। এ নিয়ে চারবার ট্রায়াল রুমে গিয়ে লেহেঙ্গা ট্রাই করেছি। কারো পছন্দ হয় না। মিতি,দিতি গম্ভীর হয়ে বলছে, ‘ চলবে না ভাবি’। অমনি ফট করে মাও মেয়েদের সাঁই দিয়ে বসছেন। আমি বেচারি নাজেহাল অবস্থা। এত ভারী বস্তু গায়ে জড়ানো,খোলা যে এক অসাধ্য সাধনের মতো বিষয়,তা বোঝাই কাকে!
হঠাৎ শপিংমলে ঢুকলেন অনিব। আজ আর সাধারণ বেশে নয়। একদম সাহেবি বাবুটি সেজে চলে এসেছেন। সাদা শার্ট, ছাই রঙা প্যান্ট। সাথে ছাই রঙা কোট।পুরো অফিসিয়াল ফর্মে উনি হাজির। আমি হা হয়ে দেখছি। সত্যিই কালকের ছেলেটা আজকের সাথে মিলে না। এত হ্যান্ডসাম বর পেলে যে কেউ খুশিতে খুশিতে বিয়ে করে ফেলবে। কিন্তু আমি পারছি না। অচেনা সেই মানুষটা যদি কখনো আমায় খোঁজে! জানতে পারে আমি বিবাহিত! তখন তো আর ফিরতে পারবো না।
আমার ধ্যানভঙ্গ হলো উনার ডাকে।
” দেখি ছাড়ো তো এইটা। ওই গোলাপিটা ট্রাই করে এসো। এতক্ষণ লাগে একটা ড্রেস সিলেক্ট করতে? তোমার এই চক্করে মা আমাকে অফিস থেকে টেনে এনেছে জানো তুমি? হাতে সময় কম, জলদি কাজ সারো। গো… ফাস্ট!”
এতগুলো লাইন বলে গেল লোকটা। আমি নির্বিকার হয়ে গোলাপি ল্যাহেঙ্গা পরে এলাম। একবার ফিরেও তাকালো আমার দিকে। না দেখেই বললো,
” মা এইটাই পারফেক্ট। আমি এখন চলি তাহলে?”
রুনা বেগম ধমকের সরে বললেন,
” তুই কেমন বাবা বল তো? নতুন বিয়ে করেছিস না জানিয়ে। এখন পারিবারিকভাবে এত সুন্দর করে বিয়ের আয়োজন করছি,এতেও সাথে থাকবি না? এ কেমন কথা? আমরা আসছি, তুই বর্ষা মাকে নিয়ে বাড়ি যা। আমাদের আরো অনেক কেনা বাকি পড়ে আছে।”
আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম অনিবের দিকে। অনিব দাঁতে দাঁত পিষে রাজ্যের বিরক্ত নিয়ে বললেন,
” চলো। এখানেও দেরি করো না। নইলে রেখেই চলে যাবো।”
চলবে…………