হঠাৎ ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব ১+২

#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি।💕
The_Unexpected_Love
#মুমুর্ষিরা শাহরীন
Part-1

ঝকঝকঝক শব্দ তুলে তুমুল গতীতে ছুটে চলেছে ট্রেন।ঢাকা থেকে ছেড়েছে এই ট্রেন।গন্তব্য চট্টগ্রাম।বাহিরে রাতের কালো আধার একদম স্তব্ধ নিস্তব্ধ।জানালা খুলা। শনশন করে বায়ু বইছে বাহিরে।সেই বায়ু মাঝে মাঝে ট্রেনের জানালা দিয়ে এসে শরীর শীতল করে দিয়ে যাচ্ছে ট্রেন যাত্রীদের।অনেকটা শীত শীত ভাব এখন। অক্টোবরের শেষ সময় তো তাই বোধ হয়।রাত হলে বুঝা যায় শীতের দাপট।

এমন নিস্তব্ধ আরামময় পরিবেশে কানে হেডফোন লাগিয়ে সিটে হেলান দিয়ে একদম চুপচাপ গম্ভীর ভাবে বসে আছে এক সুদশর্ন ছেলে। শুধু সুদর্শন?উহু…শুধু সুদর্শন না, ভয়ানক সুদর্শন।সুঠাম লম্বা দেহ,ধবধবে ফর্সা তার শরীর,টানাটানা নীলাভ দুটি চোখ।আচ্ছা ছেলেদের কি এতো সুন্দর চোখে মানায়?সৌন্দর্য তো নারীদের ভূষণ।তবে ছেলেটা এতো সুন্দর কেনো?গোলাপি ঠোঁট।কুচকুচে কালো একটু বড় বড় চুল গুলো খুব সুন্দর করে গোছানো।কিছু চুল কপালে ভ্রুর উপরে পড়ছে আর ছেলেটা একটু পর পর ভ্রু কুচকে তা হাত দিয়ে সরাচ্ছে।বলতে গেলে,যে কেউ এর প্রেমে পড়ে যাবে ২ সেকেন্ডের মধ্যেই।

ছেলেটা একবার পাশের সিটে চোখ বুলালো।তার পাশের সিট টা খালি।হয়তো পরের স্টেশনেই কেউ আসবে নিজের সিটটা দখল করতে? আবার ট্রেন মিস হয়ে গেছে বলে সিটটা দখল করতে পারলো না।বাঙালিরা তো এমনি কোনো জায়গায় বা কাজ করার ঠিক আগ মুহুর্তে তারাহুরো করে যার ফলে ঠিক সময় কোনো জায়গায় পৌছাতে পারে না ট্রেন বাস লঞ্চ সব মিস যায়।বাঙালি সময় থাকতে কিছু বুঝেনা।সময় চলে গেলে হা-হুতাশ করে।

ছেলেটার ভাবনার মাঝেই ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে থামলো একটা স্টেশনে।

মিনিট দুয়েক পর সেখান থেকে ট্রেনে উঠলো একটা মেয়ে।কাধে একটা হলুদ কালার লেডিস ব্যাগ।পড়নে একটা লং স্কার্ট, টপস আর গলায় একটা স্কাপ ঝুলানো।হাতে টিকিট নিয়ে মেয়েটা সিট খুজছে। কপালে চিন্তিত ভাজ ফেলে প্রত্যেক টা সিটের নাম্বারে চোখ বুলালো।অবশেষে নিজের সিটটা খুজে পেয়েই বড় একটা সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।

সিটের সামনে গিয়ে দেখলো তার পাশের সিটেই আরেকটা ছেলে বসা।বড় করে একটা হাসি দিলো সে।বলল,

-Excuse me.

ছেলেটা হাতে ফোন নিয়ে কি যেনো করছে।মেয়েটার কথা যেনো তার কান পর্যন্ত পৌছায় নি এমন একটা ভাব।তা দেখে মেয়েটা আবার ডাকলো ছেলেটাকে।

এবার ছেলেটা ভ্রু কুচকে তাকালো মেয়েটার দিকে।

মেয়েটা মিস্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,

-যদি কিছু মনে না করেন।তাহলে প্লিজ আপনি আমার সিটে আসবেন।আসলে আমি জানালার কাছে বসতে চাই।

ছেলেটা কোনো কথা না বলে সিট থেকে উঠতেছে।হেডফোন ফোন নিজের পকেটে ডুকাচ্ছে।মেয়েটা তখন উপরে নিজের ব্যাগ রাখছিলো।ব্যাগ রাখার পর মাথা নিচু করতেই ছেলেটাও উঠে দাড়ালো সিটে আসার জন্য তখনি মেয়েটার মাথার সাথে বারি লাগলো।

মেয়েটা মাথায় হাত দিয়ে বলল,

-বাপ..রে বাপ,আপনার মাথা দেখি ব্যাপক শক্ত।

ছেলেটা আস্তে করে বলল,

-স্যরি

মেয়েটা কিছু না বলে আরেকবার ছেলেটার মাথায় বারি দিলো আর বলল,

-না না স্যরি কেনো বলছেন দোষ তো আমারও।

ছেলেটা অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে।তাই দেখে মেয়েটা একটা হাসি দিয়ে বলল,

-আসলে একবার বারি খেলে শিং হয়।আপনার সাথে একবার বারি লেগেছে আমার মাথায় যদি শিং গজায় তাই তো আমি আবার বারি দিলাম।

ছেলেটা মেয়েটার উদ্ভট কথা শুনে ভ্রু কুটি করে সিটে গিয়ে বসলো।

মেয়েটাও বসে হাতের হ্যান্ড ব্যাগ থেকে ফোন বের করলো আর চকলেট বের করলো।তারপর টেনে বলল,

-ওওও……..আপনাকে তো আমার নাম বলা হয় নি তাই না?

তারপর হাত বাড়িয়ে দিয়ে একা একাই বলল,

-হাই, আমার নাম প্রীতি। এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।আর আপনি?

ছেলেটা একবার ভ্রু কুচকে প্রীতির দিকে আবার ওর হাতের দিকে তাকাচ্ছে।তারপর সিটে হেলান দিয়ে হাত না মিলিয়েই গম্ভীর গলায় বলল,

-আমি নীলাভ।একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি।

প্রীতি নিজের হাত গুটিয়ে নিলো।একবার ভালো করে নীলাভের দিকে তাকালো।আর ভাবলো,

-ছেলেটা দেখতে জোস কিন্তু এটিটিউড ব্যাপক।

প্রীতি একটা চকলেট এর প্যাকেট ছিড়ে খেতে লাগলো।অর্ধেক খাওয়ার পর ওর মনে হলো পাশে কেউ আছে।তাকে দেওয়া উচিত।প্রীতি নীলাভ এর দিকে চকলেট টা এগিয়ে দিয়ে বলল,

-চকলেট খাবেন?আসলে আমি কাউকে না দিয়ে কিছু খাই না।

নীলাভ তাকিয়ে দেখলো চকলেট টা অর্ধেক খাওয়া শেষ।
মেয়েটার ঠোঁটের কোণায় আর থুতনিতে চকলেট লেগে আছে।নীলাভের চোখ সেই ঠোঁটের দিকে গেলো।এতোক্ষন মেয়েটার দিকে তাকায় ই নি সে ভালো করে।

মেয়েটা নিঃসন্দেহে অসম্ভব সুন্দরী।ফর্সা গোল গোল চেহারা,লাল ঠোট,টানা টানা চোখ তাতে বড় বড় পাপড়ী,গাঢ় বাদামি তার চোখের মনির রং, ইয়া বড় লম্বা চুল,যেগুলো উচুতে ঝুটি করে রেখেছে।শুকনাই বলা চলে মেয়েটাকে।সামনের দু একটা চুল উড়ে উড়ে মুখে আসছে আর সেগুলা প্রীতি চোখ উল্টে ফু দিয়ে সরাচ্ছে।মায়াতে ভরা মেয়েটার মুখ।

নীলাভ তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলো প্রীতির থেকে।তারপর মাথা নাড়িয়ে বলল,

-আমি চকলেট খাই না।

প্রীতি ভ্রু কুচকে বলল,

-আপনি কি খুব কথা কম বলেন?

নীলাভ কিছু বলল না।প্রীতি আবার বলল,

-আচ্ছা আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

নীলাভ উপর থেকে ব্যাগের চেন খুলে লেপটপ নিতে নিতে বলল,

-বান্দরবান যাচ্ছি।

প্রীতি আনন্দে উৎফুল্ল হওয়ার মতো করে একটু জোরে বলল,

-ওয়াও……..আপনিও বান্দরবান যাচ্ছেন।আমিও তো সেখানেই যাচ্ছি। যাক গে একটা মানুষ তো পাওয়া গেলো।উফফ.. শান্তি শান্তি।

নীলাভ লেপটপের স্কিনে দৃষ্টি রেখেই বলল,

-আপনার মুখে চকলেট লেগে আছে।

প্রীতি চোখ ঘুরিয়ে, নিচে নামিয়ে আবার উল্টে দেখতে লাগলো কোথায় চকলেট টা লেগেছে?কিন্তু নিজের চেহারায় চকলেট লাগছে সেটা কি আর নিজে দেখতে পারবে?

নীলাভ তা দেখে মনে মনে হেসে বলল,

-এই মেয়ে না কি সেকেন্ড ইয়ার পরে?পুরাই বাচ্চা টাইপের।

প্রীতি ঠোঁট উল্টে বলল,

-কই চকলেট দেখতে পারছি না তো?আপনি একটু মুছে দেন(হাতের টিস্যু টা এগিয়ে দিয়ে বলল)

নীলাভ -আমি?
প্রীতি -হ্যা আপনি।
নীলাভ -পারবো না।
প্রীতি -এমন ভাবে কেউ কারোর মুখের উপর না করে?মায়া দয়া নাই?প্লিজ একটু মুছে দেন।সামান্য চকলেট ই তো মুছতে বলছি।

নীলাভ অনেক ইতস্তত বোধ করে টিস্যু টা ধরলো।তারপর কাপা কাপা হাতে অনেক দ্বিধা নিয়ে চকলেট টা মুছে দিলো। তারপর কিছুক্ষণ টিস্যু টা প্রীতির ঠোঁটে ধরেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো।প্রীতি একটু নড়ে চরে উঠতেই নীলাভ ছিটকে দূরে সরে এলো।নিজের উপর ই ওর রাগ উঠছে।

-ছি ছি ছি।এটা কি করছিলাম আমি?চিনি না জানি না একটা মেয়ের দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলাম?সেম অন ইউ নীলাভ সেম অন ইউ।

প্রীতি একটা মুচকি হেসে বলল,

-ধন্যবাদ।

নীলাভ প্রীতির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।আর ভাবছে এ মেয়েটা এতো হাসে কেনো আমি তো সারাবছরেও এতো হাসি না।প্রত্যেক কথায় এ মেয়ে হাসে।নীলাভ প্রশ্ন করেই ফেলল,

-তুমি কি সবসময় এমন ভাবে হাসো?

পরক্ষণেই নীলাভ আবার বলল,

-স্যরি,আপনি।আপনি কি সবসময় এমন ভাবে হাসেন?

প্রীতি আবার একটা হাসি দিয়ে বলল,

-হাসলে মন ভালো থাকে।এই বয়সেই তো হাসবো কোনো প্যারা নাই।কিছু নাই।শুধু মুক্ত পাখির মতো ঘুরবো।আর প্রকৃতি দেখে হাসবো।

নীলাভ কিছু বলল না দেখে প্রীতি আবার বলল,
-শুনুন,

নীলাভ-হমম বলুন

প্রীতি -তুমি তেই ডাকুন।তুমি টাই ভালো।

নীলাভ -না।

প্রীতি -আরে আপনি এমন কেন?

নীলাভ -কেমন?ভালোই তো আছি।

প্রীতি -তুমি ই ডাকবেন।কারন আপনি আমার চেয়ে অনেক বড়।আর বড়দের মুখে আমার আপনি ডাক শুনতে ভালো লাগে না।

নীলাভ এটা নিয়ে আর কথা বাড়ালো না।কথা কম বলা মানুষদের সাথে কথা বলার এই একটা সুবিধা ওরা অযথা কখনো তর্কে যায় না।আজাইরা কথা বলে না।আরো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে।তাই নীলাভ ও বলে উঠলো,

-ওকে।তুমি কি অনেক ঘুরাফেরা পছন্দ করো?

প্রীতি -হমম।

নীলাভ -বান্দরবান কেনো যাচ্ছো।ঘুরতে?

প্রীতি -হু….

নীলাভ-ফ্যামিলি মেম্বার কই তোমার তাইলে?মানে ভাই বোন বাবা কেউ আসে নি।

প্রীতি মাথা নাড়ালো তারপর সারা ট্রেনে একবার চোখ বুলিয়ে নীলাভ কে কাছে ডাকলো।নীলাভ ভ্রু কুচকে ফেলল। তাই প্রীতি ওর কাছে এগিয়ে গেলো একটু।প্রীতি ফিসফিস করে বলল,

-বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছি।

প্রীতির এই ফিসফিস শব্দ নীলাভের কানে ফসফস শুনা যাচ্ছিলো।কানে বাতাস লাগছিলো।সারা গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। ছিটকে দূরে সরে গিয়ে নীলাভ আবার প্রশ্ন করলো,

-বয়ফ্রেন্ড আনলেই তো পারতে।

প্রীতি মুখ বাকিয়ে বলল,

-বয়ফ্রেন্ড থাকলে তো।জানেন,

আবার ফিসফিস করে বলল,

-৭টা প্রেম করেছি একটাও স্টে করে নি।সবার একটাই অবজেকশন ছিলো আমি না কি প্রচুর বকবক করে মাথা খাই সবার।এই বলে কেউ টিকে নি।বলুন তো কেমন ডা লাগে?

অসহায় মুখ করে বলল।

প্রীতির এমন কথা আর অসহায় মুখ দেখে নীলাভ একটু জোরেই হেসে দিলো।প্রীতি এই এতোক্ষণে নীলাভের মুখে হাসি দেখলো।আহা…কত সুন্দর সেই হাসি শুধু দেখতেই মন চায়।প্রীতির এমন চাহনি দেখে নীলাভের হাসি আস্তে আস্তে থেমে গেলো।
কি হচ্ছে নিজের সাথে কিছু বুঝতে পারছে না।হঠাৎ করে ২ মিনিটে নিজেকে এমন অগোছালো কেনো লাগছে ওর কাছে?যেই ছেলে মাসে একবার তো দূরে থাক বছরেও মনে হয় এমন ভাবে হাসে না।সেই ছেলে আজ……কিভাবে সম্ভব?

নীলাভ নিজের উপর নিজেই কনফিউজড।সেই সাথে চরম বিরক্ত সে।সেই সাথে বিরক্ত হচ্ছে মেয়েটার প্রতি।বলা চলে নীলাভ নিজ থেকেই কখনো বেশি কথা বা হাসতে চায় না গম্ভীর ভাবে সবসময় থাকে।

প্রীতি এখনো তাকিয়ে আছে নীলাভের দিকে।তারপর আনমনেই বলে উঠলো,

-আপনার নামের সাথে আপনার হাসি আর চোখের খুব মিল।নাম ও নীলাভ চোখ ও নীলাভ।হাসিটাও মনোমুগ্ধকর।

প্রীতির এমন কথা শুনে নীলাভ একটু বিরক্তিকর চাহনি ফেলে কেশে বলল,

-ঠিকই বলেছে।

প্রীতি এবার ঘোর থেকে ফিরলো।এতোক্ষন কি কি বলেছে ভেবেই খুব অপমানিত বোধ হতে লাগলো।সেই সাথে অবাক, যেই মেয়ের পিছনে হাজার টা ছেলে ঘুরে অথচ মেয়ে পাত্তা দেয় না আর আজ সে অন্য একটা ছেলের সাথে ভালো করে পরিচয় হবার আগেই বলে দিলো তার হাসিটা খুব সুন্দর।কিভাবে সম্ভব হাও??

তারপর নীলাভের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সিটে হেলান দিয়ে বসে গাল ফুলিয়ে বলল,

-কি বলছিলেন?

নীলাভ -বললাম যে ঠিকই তো বলেছে তোমার বয়ফ্রেন্ডরা। আসলেই তুমি প্রচুর কথা বলো।২ মিনিটে আমার মাথা খেয়ে ফেলেছো।

তৎক্ষনাৎ প্রীতি তেতে উঠে আক্রমণ সুরে তেজি গলায় বলে উঠলো,

-ওই মিয়া আপনি কি বললেন?আমি আপনার মাথা খেয়ে শেষ করে ফেলেছি?কথা কি আমি একলা একলা আর কবার পাইতাম?এক হাতে কি কখনো তালি বাজে?প্রথমে এমন ভাব দেখাইলেন যে কথা কবার জানেন না।কিন্তু এখন তো ঠিক ই ফডরফডর করতেই আছেন।

নীলাভ বিস্মিত অবাক বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে প্রীতির দিকে।আর ভাবছে,কি হলো এটা?কি এমন বলল ও যার জন্য মেয়েটা এভাবে রিয়েক্ট করছে।এইতো এক্ষুনি ভালো ছিলো।আসলেই নারীরা বহুরূপী।তারপর ও আবুলের মতো বলল,

-এগুলা কোন দেশের ভাষা?

প্রীতি মুখ ঘুরিয়ে বলল,

-জানেন টা কি আপনি?শুধু ঝগড়া করতেই জানেন।

নীলাভ ওর বিস্ফোরিত চোখ দুটো আরো বড় বড় করে তাকালো।যেন চোখের কোটর থেকে নীল মনি জোড়া বেরিয়ে আসবে নিজে নিজেই বিরবির করে বলছে,

-সিরিয়াসলি আমি ঝগড়া করছি?আমিও ঝগড়া করতে পারি?

ভেবেই চোখ দুটো আরো বড় বড় করে তাকালো।

প্রীতি মুখ তেরি করে বলল,

-এমন গরুর মতো তাকায় আছেন কেনো?ভয় পাই না কি আপনাকে?

নীলাভ সিটে হেলান দিয়ে কানে হেড ফোন লাগাতে লাগাতে বলল,

-মানুষ এতো বাজে ঝগরুটে হয় কিভাবে?নারী তুমি আসলেই ক্ষনে ক্ষনে রুপ বদলাও।
#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি 💕
The_unexpected_Love
#মুমুর্ষিরা শাহরীন
Part:2

নীলাভের কথা শুনে প্রীতি কিছু বলতে গিয়েও বলল না রাগে ফুসতে ফুসতে চুপচাপ গাল ফুলিয়ে সিটে বসে থাকলো।

নীলাভের কেনো জানি কিছু ভালো লাগছে না।গম্ভীর নীলাভের আজ হঠাৎ করেই প্রাণ চঞ্চল হতে ইচ্ছে করছে বড্ড চঞ্চল হতে ইচ্ছে করছে।আর তার সাথে প্রীতিকেও এভাবে মুখ গোমড়া করে বসে থাকতে দেখে ভালো লাগছে না।তাই খোচা মেরে বেশ আয়েশ করে বলল,

-মেয়েদের চিনা বড় দায়।নারী তুমি অনন্য।এই তুমি রুপ নেও অসীম মমতাময়ীর।এই তুমি রুপ নেও দাজ্জাল বুড়ির।এই ভালো তো এই খারাপ। হুটহাট একটা অপরিচিত মানুষের সাথে দেখা হয়েই কথার বন্যা বইয়ে দিয়ে তার মাথা চিবিয়ে খাও আবার একটু উনিশ থেকে বিশ হলেই তুমি দাজ্জাল ঝগরুটের রুপ নিয়ে ঝগড়ার সাগর বইয়ে দেও।

প্রীতি নীলাভের দিকে ঘুরে ভ্রু কুচকে বলল,

-চুপচাপ মানুষেরা যে মিনমিনে শয়তান হয় আজ তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম।লজ্জা করে না একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে এভাবে ঝগড়া করতে?

নীলাভ সাথে সাথে উত্তর দিলো,
-তোমার লজ্জা করে না?
উত্তর দিয়ে নিজেই চুপ করে বসে আছে।

প্রীতি আর কিছু বলার ভাষা খুজে না পেয়ে ভাবলেশহীন ভাবে সোজা হয়ে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো আর ভাবতে লাগলো,

-লোকটা কে কতো ইনোসেন্ট ভাবছিলাম।আর লোকটা দেখো কেমন?প্রথমে তো পার্ট নিয়ে থাকলো কথাই বলবে না।আর এখন?আসলেই মানুষ চেনা বড় দায়।

নীলাভ নিজের কথাতে চুপ করে বসে আছে আর ভাবছে,

-আমি কি এক্সচেঞ্জ হয়ে গেছি না কি?হঠাৎ করে আমি এমন হলাম কেন?জ্বীনে ধরলো না কি আমারে?এমন ঝগড়া করতাছি কেনো?মানে আমি ঝগড়া করতাছি নীলাভ চৌধুরি?।How can it possible? আমি কি অসুস্থ?

নিজের কপাল চেক করে ভাবলো,

-নাহ..ঠিক ই তো আছি।তাহলে এমন অদ্ভুত আচরণ কেনো করতাছি?মেয়েদের থেকে ৩০ হাত দূরে থাকি আর আজকে কিনা মেয়ের সাথেই ঝগড়া করতাছি?

ভেবেই ও একবার বড় বড় চোখ করে প্রীতির দিকে তাকালো।প্রীতি সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো।রাগে ফুসতে ফুসতে একটার পর একটা চকলেট মুখে পুড়তে লাগলো।নীলাভ আড়চোখে সব দেখছে।

কিছুক্ষণ পর,,,,,,,,,,,,

প্রীতি -ওই…….(একটু টেনে)

নীলাভ ভ্রু কুচকে রাগী ভাবে তাকালো প্রীতির দিকে।

প্রীতি বুকে থু থু দিয়ে বলল,

-এমনে তাকান কেন?ঝগড়া করবোনা,একটা হেল্প চাইবো।
বলেই দাত কেলিয়ে দিলো।

নীলাভ -at first,আমাকে আর কখনো এমন ভাবে ডাকবা না বুঝছো?

প্রীতি ভ্রু দুটো উচু করে তাকালো। তারপর আবার মাথা নাড়ালো।

নীলাভ -বলো কি চাই?

প্রীতি-চকলেট।

নীলাভ অবাক চোখে একবার প্রীতির মুখের দিকে তাকিয়ে আবার নিচে তাকালো।দেখলো দুনিয়ার চকলেটের খালি কাগজ পড়ে আছে। তা দেখে বলল,

-এতোগুলা চকলেট না খাইলেন?

প্রীতি মুখ গোমড়া করে বলল,

-আমার রাগ উঠলে আমি চকলেট খাই।তখন রাগ উঠছিলো তাই গাপুস গুপুস করে চকলেট খাইছি।

নীলাভ ভ্রু নাচিয়ে বলল,

-তো এখন কি রাগ কমে গেছে?

প্রীতি দাত কেলিয়ে হেসে বলল,

-আমার রাগ উঠতেই বেশি টাইম লাগে না কমতেও টাইম লাগে না।

নীলাভ -বাহঃ ভালোই।এর পরের স্টেশনে ট্রেন থামলে কিনে দিবোনি।

প্রীতি -সাথে পানিও। আমি প্রচুর পানি খাই।আর নিন টাকা।

নীলাভ-আমাকে দেখে কি ফকির মনে হয়?মিনিমাম দেড় লক্ষ টাকার উপরে আমার বেতন আর এই চকলেটের জন্য তুমি আমায় টাকা দিতাছো?

প্রীতি আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বলল,

-ওও…লাগবে না।থুঙ্কু থুঙ্কু… যাক বাবা..আমার টাকা গুলো বেচে গেলো।পরে খেতে পারবোনে।বাসা থেকে তো বেশি টাকাও আনি নি।

,
,

কিছুক্ষণ পর ট্রেন একটা স্টেশনে থামলো,,,,

নীলাভ নেমে গেলো।পানি কিছু চকলেট চিপস কিনলো।নিজের জন্য একটা পেপসি নিলো শুধু।এই নিয়ে যেই ট্রেনে উঠতে যাবে ওমনি কিছু চিতকার চেচামেচির আওয়াজ শুনতে পেলো।

নীলাভ দৌড়ে ট্রেনে উঠে দেখলো কিছু ছেলে এসে প্রীতিকে হ্যারাজ করছে।এই ছেলেগুলো পিছনের দিকে বসে ছিলো।বখাটে ছেলেগুলো।ছেলেগুলো প্রীতির চুল ধরে টানছে আবার হাত ধরার চেষ্টা করছে।স্কাপ টাচ করতে চাইছে।

যেই একটা ছেলে প্রীতির স্কাপ ধরে টান দিতে যাবে ওমনি নীলাভ এগিয়ে যেতে ধরলো।

কিন্তু নীলাভ এগিয়ে যাওয়ার আগেই ছেলেটার চিতকার শুনে চমকে ফিরে তাকালো।

তাকিয়ে দেখে থ খেয়ে গেলো।

প্রীতি ছেলেটার সিরিয়াস জায়গায় লাত্থি মেরে দিয়েছে।নীলাভ বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে।এই কিছুক্ষনের মধ্যে মেয়েটার কতো রুপ সে দেখে ফেলেছে।

তারপর একটা ছেলে প্রীতির ঘাড় ধরে বলল,

-ওই হারামজাদি তুই আমার বন্ধুরে মারলি কেন?আজ তোর ইজ্জত মাইরে ছাড়মুই ছাড়মু।

যেই ছেলেটা এগুতে যাবে ওমনি প্রীতি আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে চোখ খিচে বন্ধ করলো।সাথে সাথে ধুম করে একটা শব্দ হলো।প্রীতি একচোখ খুলে সামনে নীলাভ কে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দু চোখ ই খুলল।

নীলাভ ছেলেটাকে উল্টে ফেলে দিয়েছে।
ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে এতোক্ষণে। চলছে আপনগতিতে।এরপর আরো দু টো ছেলে এগিয়ে এলো। সাথে সাথে নীলাভ ওদের ঘুসি মেরে দিলো। ট্রেনের স্টিলের সাথে মাথা বাড়ি দিতে থাকলো।পেট বরাবর ঘুসি লাত্থি যা পারে দিচ্ছে।

আর প্রীতি দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাত তালি দিচ্ছে।একটা একটা করে নীলাভ মেরে নিচে ফালাচ্ছে আর প্রীতি একটা একটা করে ছিটি বাজাচ্ছে।ব্যাপারটা ও বেশ ইঞ্জয় করছে।মনে হচ্ছে ও সিনেমার হিরোকে দেখছে।

নীলাভ মারামারি শেষ করার আগেই ছেলেগুলো পা ধরে ক্ষমা চাইলো।নীলাভ ছেলেগুলোর কলার ধরে দাড় করিয়ে বলল,

-ভবিষ্যতে এমন করার আগে ১০ বার ভাব্বি বুঝছিস?আজ তুই অন্য একটা মেয়ের সাথে বাজে ভাবে টিচ করছিস কে বলতে পারে হয়তো তোর মা বউ বোনের সাথেও সেই এক ই ভাবে অন্য কেউ টিচ করছে।

তারপর ছেলেগুলোদের ছেড়ে দিলো।

প্রীতি হাত তালি দিতে দিতে নীলাভের কাছে এসে বলল,

-Too good too good…

নীলাভ শার্ট ঝেড়ে সিটে বসতে লাগলো।এতোক্ষনে ট্রেনের সব যাত্রী ওদের দিকে তাকিয়ে ছিলো মারামারি দেখছিলো।এমনকি এখনো তাকিয়েই আছে।তাই প্রীতি একবার সিটে বসেও আবার সিটের উপর হাটু ভাজ করে উল্টো দিকে ফিরে দাড়িয়ে সব যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলল,

-শো শেষ। এবার যে যার নিজের সিটে বসুন আর না হলে ঘুমান। রাত তো অনেক হলো।

সাথে সাথে সবাই নিজেদের সিটে সুন্দর করে আগের ন্যায় বসে থাকলো।

নীলাভ একটু হেসে বলল,

-তুমি এতো দুষ্ট কেন?

প্রীতি -এমনি বাদ দেন।আমার কথা আগে শুনেন।

নীলাভ-বলেন।

প্রীতি-জানেন আপনার না এ্যাকশান মুভিতে অডিশন দেওয়া দরকার।ডেফিনেটলি আপনি ভালো একটা মুভিতে কাজ পাবেন।ওয়াও..যা মারলেন..ডিসুম.. ডিসুম…

নীলাভ-খুব মুভি দেখো না?

প্রীতি -হমম..সব দেখি না বাট এ্যাকশন মুভি একটাও ছাড়ি না।

নীলাভ প্রীতির দিকে তাকিয়ে বলল,

-জানো তুমি খুব ভালো এবং মিসুক।২ মিনিটেই সবার সাথে মিশে যাও।আমি মনে হয় তোমার সাথেই এতো তাড়াতাড়ি মিশেছি।তোমার সাথেই এতো কথা বলছি তোমার সাথেই এতো হাসছি।লাস্ট কবে হাসছিলাম মনেই নাই।তোমার মনটা অনেক ভালো।

প্রীতি -হইছে হইছে আর পাম দেয়া লাগবে না।একটু আগে ঝগড়া করছেন ভুলি নাই এখনো আমি😒

নীলাভ হেসে দিলো প্রীতির কথায়।প্রীতি আবার বলল,

-আচ্ছা আপনি কথা কম কেন বলেন?

নীলাভ -জন্ম থেকেই এমন আমি।বেশি কথা বলতে ভালো লাগে না ।আর ব্যস্ত মানুষ তো কথা বলার টাইম কই আর কার সাথেই বা বলবো?

প্রীতি -কেনো বাবা মা ভাই বোন বন্ধু বান্ধব?

নীলাভ লেপটপ বের করে স্টার্ট করতে করতে বলল,

-সকাল ৭ঃ৩০ টায় উঠে ফ্রেস হয়ে খেয়ে দেয়ে অফিসে চলে যাই ৯ টার মধ্যে ১০ থেকে অফিস।আসি রাত ১০ টায় রাতে খাওয়ার সময় যেটুকু একটু মার সাথে কথা হয়।বাবা বিজি থাকে নিজের বিসনেস নিয়ে।আর নিজের কোনো ভাই বোন ও নেই।বন্ধু বান্ধব সব নিজেদের কাজে বিজি কেউ অফিসের তো কেউ বা ঘর সংসারের।

প্রীতি -বিয়ে করে নিলেই তো পারেন?

নীলাভ-আরে বিয়ে করলে ২ মাস যাবো না বউ আমার যাবো গা।

প্রীতি হেসে দিয়ে বলল,
-কেন?

নীলাভ-আরে আমি ১ মাসে কমপক্ষে ৪-৫ বার ১-২ দিনের জন্য ঘুরতে যাই।বৃহস্পতিবার অফিস করে যাই শনিবার অফিসের আগেই ফিরি বা মিস দেই।এখন তো পূজার ছুটি চলে তাই ঘুরতে যাচ্ছি। বান্দরবান যদিও আরো চার বার গেছি।কিন্তু ওখানে যত যাই ততই যাইতে মন চায়।
তো এমনে কইরে বউ থাকবো না কি?

প্রীতি ঠোঁট প্রসারিত করে কিছুক্ষণ হাসলো।

নীলাভ থমকে গেলো সে হাসিতে।
এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো না,এই মুখেতে হাসিটাই মানায় আর অন্য কিচ্ছু মানাবে না কিচ্ছু না। কান্না তো একদম ই যায় না এই বাদামী চোখ জোড়াতে।একদম মিলবে না।হাসিটাই সুন্দর। অসম্ভব সুন্দর। ভয়ংকর সুন্দর। নীলাভ ও মুচকি হাসলো।

রাত বাড়ছে।

প্রীতি নীলাভের সাথে বিভিন্ন গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে গেলো।ট্রেনের ঝাকি খেয়ে ওর মাথাটা গড়িয়ে নীলাভের কাধে পড়লো।
নীলাভ একবার সরিয়ে দিলো আবার পড়লো।আবার সরিয়ে দিলো আবার পড়লো।এবার আর সরিয়ে দিলো না।মাথাটাকে ভালো করে রেখে দিলো।

প্রীতির মাথায় হাত চলে গেলো অজান্তেই।

নীলাভের মনে হলো ওর হার্টবিট হঠাৎ করে খুব দ্রুত বিট করছে।বুকের ধুকপুক শব্দ ওর কানে এসে লাগছে।ও একবার প্রীতির মুখের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ভাবলো,

-এই মেয়েটার জন্যেই কি এমন হচ্ছে?

আচ্ছা এই মেয়েটার সাথে এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে মিশে গেলাম আমি?অজানা অপরিচিত ইনফেক্ট বলতে গেলে আমরা তো এখনো পরিচিতই না।তাহলে এই মেয়েটার সাথে এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে মিশে গেলাম?যেখানে আমার কোনো জায়গায় খাপ খাওয়াতে লাগে ১৫ দিনের মতো।যাদু আছে না কি এর মাঝে?আছে নিশ্চয়ই আছে। ওর মনটাই যাদু।যে কাউকে খুশি করতে পারবে ও ওর কথা দ্বারা।

ভেবেই মুচকি হেসে প্রীতির মুখের সামনে চুল গুলা সরিয়ে দিলো।তারপর আবার ভাবলো,

-কিন্তু এতোটাও কি ক্লোজ হওয়া যায়?এতোটা ক্লোজ হওয়া কি ঠিক?অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়।বিপদের সংকেত।

হঠাৎ প্রীতিকে দেখতে দেখতেই যেনো নীলাভ মস্ত বড় এক জিনিস আবিষ্কার করেছে এমন ভাবে বিরবির করে বলল,

-আরে এর দেখি ঠোঁটের নিচে হালকা কালো কালারের তিল আছে।ঠোঁটের নিচে তো আমার ও আছে শুধু আমার টা আরেকটু নিচে।

নীলাভের দেখার মাঝেই প্রীতি একটু নড়ে উঠলো। মুখ টাকে একটু নড়ালো।সাথে সাথে নীলাভ দেখলো প্রীতির গালে অনেক বড় গর্ত হয়ে যায়।নিজের মনে বিরবির করে বলল,

-মেয়েটা অনেক কিউট। টোল দিয়ে আরো সুন্দর লাগে।

পরক্ষনেই নিজেকে নিজেই বেহায়া উপাধি দিলো সে।ভাবলো,

-ছিঃকি ভাবছি এসব?

দেখতে দেখতে নীলাভ ও ঘুমিয়ে গেলো।প্রীতির মাথার সাথে ঠেস দিয়ে।

চলবে🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here