হঠাৎ ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব ৩+৪

#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি 💕
The_Unexpected_love
#মুমুর্ষিরা শাহরীন
Part-3

প্রীতি সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলো ও নীলাভের বুকে।
নীলাভ ও ওকে দু হাত দিয়ে ঘুমের মধ্যেই জড়িয়ে ধরে আছে।আর ওর মাথার উপর নিজের মাথা ঠেকে ঘুমাচ্ছে।প্রীতি কিছুক্ষণ নীলাভের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো।তারপর কি মনে করে ছিটকে দূরে সরে গেলো।প্রীতির এমন ছিটকে দূরে সরে যাওয়ায় নীলাভ জেগে গেলো।

চোখ কচলাতে কচলাতে বলল,
-আমরা কি এসে পড়েছি?

প্রীতি মাথা নিচু করে আছে।নীলাভের কথার সে উত্তর দিলো না।
নীলাভ আবার জিজ্ঞেস করলো তাও কোনো রেসপন্স না পেয়ে এবার চোখ থেকে হাত নামিয়ে ভ্রু কুচকে চেয়ে দেখলো প্রীতি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

হালকা ভাবে একটু প্রীতিকে টাচ করলো।সাথে সাথে প্রীতি চমকে তাকালো।আসলে ওর চোখের সামনে এতোক্ষন ধরে শুধু নীলাভের সেই ঘুমন্ত মুখটাই ভেসে উঠছিলো।

নীলাভ আবার জিজ্ঞেস করলো,

-এনিথিং রং উইথ ইউ?

প্রীতি শুধু মাথা নাড়ালো তাও মুখ দিয়ে কিছু বলল না।জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো।

কি সুন্দর দৃশ্য! মাঝে মাঝে বড় বড় সবুজ গাছ দেখা যায় আবার দেখা যায় পুকুর আবার ব্রিজ এর উপর দিয়ে ট্রেন টা যায়। খালি খেত দেখা যায় আবার ভাঙা ঘর। একটার পর একটা আসে।প্রীতির পুরো মনোযোগ এখন সেদিকেই।

এদিকে নীলাভ চরম বিরক্ত প্রীতির প্রতি।

এই মেয়েটা হুটহাট এতো কথা বলে যে তা নীলাভের পক্ষে একটু বেশি।আবার রেগে যায় আবার ঝগড়া করে আবার হঠাৎ করেই একদম চুপ হয়ে যায়।ক্ষনে ক্ষনে রং পাল্টায় এ মেয়ে।একই ভাবে চললে কি হয়?

প্রীতি জানালায় দু হাত রাখলো। তার উপর মাথা রেখে বলল,

-আমি ক্ষনে ক্ষনে রং পাল্টাই না।আমার মুড সুয়িং করে এখন আমি কি করবো?আপনার মতো হয়ে থাকবো গম্ভীর চুপচাপ একঘেয়ামি লোক একটা?

নীলাভ রেগে তাকালো।কিন্তু প্রীতির কোনো ভাবাবেগ নেই।নীলাভ আবার ভ্রু কুচকে বলল,

-তুমি কি মনের কথা পড়তে পারো না কি?

প্রীতি -না মানুষের মুখের এক্সপ্রেশন দেখে বলে দিতে পারি সে কি ভাবছে। যেমন আপনার বিরক্তিকর ভ্রু কুচকে চাহনি দেখেই বুঝে গেছিলাম যে আপনি এটাই ভাবছেন।

নীলাভ আর কিছু বলল না।চুপচাপ ট্রেন থেকে নামার অপেক্ষা করতে লাগলো।কারন এর পরের স্টেশনেই ওরা চট্টগ্রাম পৌছে যাবে। সেখান থেকে বাস ধরে বান্দরবান।

নীলাভ-চলো উঠো ব্যাগ পত্র গোছাও আর একটু পর ই তো ট্রেন থামবে।

প্রীতি মুখ উঠিয়ে বলল,

-একটু পরই থামবে?

নীলাভ-হমম

প্রীতি আর কিছু না বলে একদম নিরব হয়ে গেলো।

নীলাভ প্রীতির এই নিরবতা দেখে কিছুক্ষণ ভ্রু কুচকে চেয়ে রইল।

কিছুক্ষণ পর প্রীতি বলল,

-জানেন, আপনি খুব ভালো মানুষ। এই অল্প কিছুক্ষণের জন্য পরিচিত হয়েই খুব ভালো লাগছে।কিন্তু দেখুন আমাদের দু জনের পথ একদম আলাদা একটু পর আপনি এক দেশে আর আমি অন্য দেশে।কখনো আবার দেখা হবে কি না তাও বলতে পারবো না।

নীলাভ চুপ করে প্রীতির কথা শুনছিলো।প্রীতির কথার উত্তরে সে কিছুই বলে নি।

,
,

ট্রেন থেমে গেছে।ট্রেন থেকে দুজন নামলো।নীলাভ হেল্প করলো প্রীতি কে নামতে।এরপর নীলাভ বলল,

-ভালো থেকো।সত্যি আমাদের দুজনের পথ আলাদা।কিন্তু সত্যি বলতে তুমি একটা ম্যাজিক্যাল গার্ল। তুমি একমাত্র মেয়ে যার সাথে আমি এতো তাড়াতাড়ি মিশে গেছি।

প্রীতি তার উত্তরে কিছু না বলে একটা আহত দৃষ্টি দিয়ে তাকালো।
নীলাভ সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো-কেনো এমন হচ্ছে আমার?বুকটা ধুকপুক কেনো করছে?এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে?কেমন একটা শূন্যতা অনুভব হচ্ছে? কেনো?

আর কিছু না ভেবে, না বলে নীলাভ ব্যাগ টা কাধে ঝুলিয়ে উল্টো ঘুরে একটা জোরে নিশ্বাস নিয়ে যেতে লাগলো।

প্রীতিও উল্টো ঘুরলো।চলে যেতে লাগলো দুজন দু দিকে।

৫-৬ কদম হেটেই নীলাভ কেনো যেনো হঠাৎ পিছন দিকে তাকালো।তাকিয়ে প্রীতিকে দেখলো না।ঘাড় ঘুরিয়ে ভালো মতো করে দেখতে লাগলো,

-না.. নেই।এতো তাড়াতাড়ি মেয়েটা কোথায় চলে গেলো?

নীলাভ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কিছু ভাবলো।

এরপর হঠাৎ করেই নীলাভ আর কিছু না ভেবেই পুরো স্টেশন খুজতে লাগলো।তার খুব ভয় করছে বুকটা ধরফর করছে।এমন ভয় সে লাস্ট কবে পেয়েছিলো তা ভুলে গেছে।হঠাৎ কেনো এই অচেনা অজানা মেয়েটার প্রতি তার এতো টান অনুভব হচ্ছে?এই চিন্তা তার মাথায় নেই।তার মাথায় এখন একটা কথায় ঘুরছে কোথায় গেলো মেয়েটা?

খুজতে লাগলো কোথাও নেই।নীলাভের ফর্সা মুখ ঘেমে লাল হয়ে গেছে।কানের চিপের পাশে বেয়ে পড়ছে সেই ঘামের পানি।মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো পিছনের দিকে টেনে ধরে ব্যস্ত চিন্তিত চোখে আশেপাশে তাকাতে লাগলো।সাথে সাথে চোখ গেলো রেললাইনে।

নীলাভ ভয়ে আতংক হয়ে বড় বড় দৃষ্টি দিয়ে তাকালো।

হঠাৎ ই একটা ট্রেন এর সাইরেন্ট বাজার শব্দ কানে এলো ওর।
নীলাভের যেনো এবার ভয় বেড়ে গেলো।এতোটা ভয়…. এতোটা ভয় যার জন্য তার মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। সে এটাই বলতেই পারছে না যে,সর প্রীতি ট্রেন আসছে।

ট্রেন এগিয়ে আসছে। আর একটু দূরে লোকজন জড়ো হয়ে গেছে আর বলছে,

-মেয়েটা কি পাগল? এই মেয়ে সরো।তুমি কি শুনতে পারছো না ট্রেন আসছে?

নীলাভ আর কিছু না ভেবে ঝাপিয়ে পড়ে প্রীতি কে নিয়ে উল্টে রেললাইনের ওপারে চলে গেলো।সাথে সাথে ট্রেন টা ওদের ক্রস করে চলে গেলো।

নীলাভ প্রীতিকে নিয়ে দাড়ালো।অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে প্রীতির দিকে তাকিয়ে আছে।

প্রীতি ও ভয় পেয়ে গেছিলো অনেক।আত্মা টা উড়ে গিয়েছিলো ওর।

প্রীতি কিছু বলার আগেই নীলাভ ঠাস করে ওকে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো।

প্রীতি গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে,

– কি এমন করেছি আমি?যার জন্য লোকটা আমায় মারলো? যেখানে আমার বাবা মা ভাই ও কোনোদিনও আমার গায়ে হাত তুলে নি।

প্রীতির গাল বেয়ে টপ করে দু ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।সাথে সাথে নীলাভ চেচিয়ে বলল,

-একদম কাদবা না একদম না।মন কোথায় থাকে তোমার?আজ আমি না আসলে কি হতো তোমার কোনো ধারণা আছে?কি করছিলে তুমি এই রেললাইনের মাঝখানে বসে?মরার শখ জাগছে?তাহলে আসো। আসো… আমি তোমায় নিয়ে দাড় করায় দেই। আর একটু পরই আবার ট্রেন আসবে তখন মরো আমি আর বাচাবো না।

প্রীতি কিছু না বলে নিঃশব্দে কেদে চলেছে। বুকের ভিতর কি যেনো জড়িয়ে ধরলো।

নীলাভের চোখ সেদিকে গেলো।সে দেখলো প্রীতি একটা বিড়ালের ছানা বুকে জড়িয়ে নিয়ে ধরে আছে আর ঠোঁট উল্টে ফুফিয়ে কাদছে।নীলাভ মুহুর্তে জেনো আবার থমকে গেলো।এতো সুন্দর ও কি কারো কান্না হয়?

নীলাভ উল্টে ঘুরে শুধু বলল,

-চোখের পানি মুছো।এই গাড় বাদামি চোখে পানি মানায় না।

প্রীতি নাক টেনে টেনে বলল,

-আপনি আমায় মারলেন কেনো?

সাথে সাথে নীলাভ আবার চোখ লাল করে তাকিয়ে বলল,

-বেশ করেছি।আবার এমন ভুল কাজ করলে আবার মারবো।যাক গে,হাতের এই বিড়াল ছানা কোথায় পেলে? একটু আগেও তো ছিলো না এখন কোথা থেকে এলো?আর রেললাইনে কেনো গেছো?ছেকা খাইছো যে মরতে গেছো? (অনেকটা দাতে দাত চেপে বলল)

প্রীতি একটু হেসে আবার মুখ ঘোমড়া করে ফেলল। বলল,

-এতো গুলা প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটার উত্তর আগে দিবো?

নীলাভের মুহুর্তেই মনে হলো,

-এ মেয়ে পাগল তা না হলে কেউ সেকেন্ডে কান্না আবার সেকেন্ডের মধ্যেই হাসিতে আবার মুখ ঘোমড়াতে কি করে কনভার্ট হতে পারে?জলদি এই মেয়ের চিকিৎসা করা দরকার।

প্রীতি বিড়াল ছানাটার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,

-আমি তো রেললাইনে মরতে যাই নি।এই নিষ্পাপ মাসুম বাচ্চাকে বাচাতে গেছিলাম।

নীলাভ প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো।

প্রীতি একটা বড় হাসি দিয়ে বলল,

-বোকা,এখনো বুঝে নাই।আমি যখন চলে আসতাছিলাম তখন দেখি এই ছোট্ট কিউট বিড়ালছানাটা রেললাইনের উপর বসে আছে চুপচাপ। ভাবলাম,সেও বুঝি আমার মতো বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে।কিন্তু পরেই আবার দেখলাম রেললাইন!যেকোনো সময় ট্রেন এসে পড়বে। তাই যেই বিড়ালছানাটাকে বাচাতে গেলাম ওমনি একটা ট্রেন আসলো আর আপনি হিরোদের মতো আমাকে আবার বাচালেন।

নীলাভের রাগে মাথার চুল টেনে ছিড়তে ইচ্ছে করছে।

মনে হচ্ছে ও নিজেই পাগল হয়ে গেছে।মানুষ বলে না ‘ভালো ফল যদি পচা ফলের সাথে রাখে তাহলে সেটাও আস্তে আস্তে পচন ধরে।’ ঠিক তেমনি হয়েছে নীলাভের অবস্থা। এক পাগলের সাথে থাকতে থাকতে ও নিজেও এখন পাগল হয়ে যাচ্ছে।কেমন মানুষ এই মেয়েটা? নিজের জীবন মরনের কথা চিন্তা না করে এই বিড়ালছানাকে বাচাতে গেছে।

নীলাভ প্রীতির দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছিলো।তারপর বলল,

-তোমাকে ইমিডিয়েটলি পাবনায় ভর্তি করতে হবে।তা না হলে তোমার আশেপাশে যারা থাকবে তুমি সবাইকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে।

এই বলে ব্যাগ টা কাধে ঝুলিয়ে উল্টো ঘুরে চলে যেতে লাগলো।

প্রীতি এখনো ঠায় বোকার মতো নীলাভের দিকে চেয়ে আছে।একটু পর নীলাভ আবার ফিরে এসে প্রীতির হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,

-তোমার উপর আমার একটু ও বিশ্বাস নাই।হুটহাট দেখবো যে আমি চলে যাওয়ার দুই মিনিটের মধ্যেই তুমি গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মারা গেছো।

প্রীতি এখনো হা করে চেয়ে আছে।কি হচ্ছে কিচ্ছু বুঝলো না সব ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো।আর বুঝার চেষ্টাও করলো না।নীলাভের কাজে মনোযোগ দিলো এখন।

নীলাভ গিয়ে একটা বাসের সামনে দাড় করিয়ে বলল,

-টিকিট কাটা আছে?

প্রীতি মাথা নাড়ালো যার অর্থ না।

নীলাভ হালকা চেচিয়ে বলল,

-এই মেয়ে তুমি কি বলো তো?ঘুরতে যাবো বললেই কি ঘুরা যায় না কি?হুটহাট এরেঞ্জমেন্ট না করেই একটা জায়গায় এসে পড়ছো?টিকিটটাও কাটো নাই। কি করবো তোমাকে নিয়ে? তুমি থাকো আমি আমার বাস ধরে চলে যাচ্ছি।

প্রীতি তখন বিড়ালটার মাথায় হাত বুলাচ্ছিলো।পা ধরে দেখছিলো নাক ধরছিলো।যার কারনে নীলাভের একটা কথাও সে শুনে নি।একটু পর মাথা উঠিয়ে নীলাভের দিকে চেয়ে বলল,

-আপনি কি কিছু বললেন আমায়?

নীলাভ এখন নিজেই হা হয়ে গেছে।বলে কি মেয়ে? এতোগুলা কথা তাহলে আমি কার সাথে বললাম?ভুতের সাথে?এ আমি কার পাল্লায় পড়লাম? ওহ গড, সেভ মি ফ্রম দিস মেন্টাল গার্ল প্লিজ।

নীলাভ নিজের মাথার চুল হাত দিয়ে মুষ্টি বদ্ধ করে ধরে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো।

প্রীতি বিড়ালটার সাথে খেলতে খেলতেই বলল,

-আপনি আছেন তো। আপনি আমাকে নিয়ে যাবেন।

নীলাভের রাগ যেনো এবার আকাশ ছুলো।সাথে সাথে চিল্লিয়ে বলল,

-আমি নিয়ে যাবো মানে?তোমার বাপ কি আমাকে তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাকরি দিছে হ্যা?

নীলাভের এমন চিতকারে আশেপাশের বেশ কিছু মানুষ তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
নীলাভ আশেপাশে একটু আড়চোখে তাকালো।

তাকিয়ে চুপ হয়ে গেলো।কিন্তু প্রীতির কোনো ভাবাবেগ নেই। ও ওর মতো করে দাত কেলিয়ে বলল,

-আপনি চাইলে আমার বাবা রাখতেও পারে।আমার বাবা আবার খুব দয়ালু মনের মানুষ😁
#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি 💕
The_Unexpected_love
#মুমুর্ষিরা শাহরীন
Part-4

প্রীতি দাত কেলিয়ে ও ওর মতো বলল,

-আপনি চাইলে আমার বাবা আপনাকে চাকরিতে রাখতেও পারে।আমার বাবা আবার খুব দয়ালু সাথে আমিও😁।

নীলাভ দাতে দাত চেপে বলল,

-ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল…

বলেই রেগে মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে লাগলো…

রাস্তার এই পাড় থেকে ওই পাড়ে চলে গেছে নীলাভ।

প্রীতি এতোক্ষন ওই বিড়ালটা নিয়েই ব্যাস্ত ছিলো।যখনি মাথা উঠিয়ে সামনে তাকালো দেখলো নীলাভ রাস্তায় ওইপাড়ে চলে গেছে।তাই চিল্লিয়ে বলল,

-এই…শুনুন..কই যান?

চিল্লাতে চিল্লাতে রাস্তার মাঝে এসে পড়লো প্রীতি।
নীলাভ প্রীতির চিল্লানো দেখে পিছনে তাকালো।

সাথে সাথে একটা গাড়ি প্রীতির দিকে তেড়ে এলো।প্রীতি গাড়ি টা দেখে ভয়ে শিউরে উঠলো চোখ মুখ কুচকে ফেলল…গাড়ি টা প্রীতির একদম কাছে এসে ঘেঁষে থামলো। প্রীতি ভয়ে ধাক্কা লাগার আগেই রাস্তায় পড়ে গেলো😂।পড়ে গিয়ে হাত ও ছিলে ফেলেছে।

এইসব দেখে নীলাভ কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে ছিলো।এই ঘটনার কি এক্সপ্রেশন এই মুহুর্তে দেওয়া দরকার ও বুঝতে পারছে না।রাগে কপালে দু আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে বলল,

-আহমক……

তারপর দাত কটমট করতে করতে নীলাভ এগিয়ে গেলো প্রীতির দিকে।

প্রীতি ওই গাড়ির ড্রাইভারের সাথে ঝগড়া করছে।গাড়ির মালিক বের হয়ে এসে শুধু বলেছিলো,

-আফা বেশি ব্যাথা পাইছেন।হসপিটালে নেওয়ার লাগবো।

প্রীতি মুখ তেরি করে জবাব দিলো,

-এহহহ…নিজে আমারে ধাক্কা দিয়ে এখন বলে হসপিটালে নেওয়ার লাগবো।

লোকটা থতমত খেয়ে বলল,

-আপনি তো ধাক্কা দেওয়ার আগেই পইড়ে গেছেন। না জানি ধাক্কা দিলে কোন চান্দের দেশে যায়ে পড়তেন।

প্রীতি -ওই বেটা ওই…নিজে দোষ কইরে এখন আমারে বলতাছেন?দেখেন তো কতোখানি ছিলে গেছে।ভ্যাবলাকান্ত বেটা একটা।

লোকটা অবাক হয়ে বলল,

-আমি ভ্যাবলাকান্ত?

প্রীতি -তা নয় তো কি?

লোকটা -মানে আপনার মা আপনারে কি খায়ে জন্ম দিছিলো?

প্রীতি দাত কেলিয়ে বলল,

-বাঙ্গী খায়ে😁।দেখেন না বাঙ্গী খাইতে চিনি লাগে।তেমনি আমার সাথে কথা কইতেও রস কস হয়া লাগে।

নীলাভ এতোক্ষণ প্রীতির এসব পাগলামি কথা শুনে বিরক্তিতে তাকিয়ে ছিলো আর ভাবছিলো,

-একটা মানুষ কিভাবে সারাদিন এতো পকপক করতে পারে? এতো কথা বলতে পারে?

সব বিরক্তি ঢেলে দিয়ে এবার নীলাভ ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

-চাচা আপনি কিছু মনে করবেন না।ওর মাথায় একটু ছিট আছে।আপনি কোথায় যাচ্ছেন চাচা?

ড্রাইভার একবার ভালো করে নীলাভ কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো।তার মুখের ভাব দেখে মনে হলো।তার নীলাভ কে বেশ পছন্দ হইছে।সে হাসি মুখে বলল,

-বান্দরবান, বাবা।তা তোমরা কই যাইতাছো?

নীলাভ-চাচা আমরাও তো বান্দরবান যাবো।

ড্রাইভার -তাই।তাইলে চলো গো আমি তোমাদের নিয়ে যাই।একা একা এতো দূর যাইতে ভালোও লাগতো না।চলো গাড়িতে উঠো।

নীলাভ হাসি মুখে বলল,

-সো কাইন্ড অফ ইউ, চাচা।আপনি গাড়ি স্টার্ট দেন আমি আসছি।

,

নীলাভ এবার প্রীতির কাছে গিয়ে প্রীতিকে টেনে তুলল।প্রীতি একটু আহ…করে শব্দ করলো।নীলাভ ওর হাতের যেই জায়গায় ছিলে গেছিলো সেই জায়গায় ধরছিলো।

নীলাভ কাটা স্থান টা ভালো ভাবে দেখে বলল,

-চলো গাড়িতে ব্যান্ডেজ করে দিবো।

পরমুহূর্তেই আবার প্রীতি কে শাসিয়ে বলল,

-খবরদার যদি আর একটা কোনো কিছু গরমিল করছো তো তোমার একদিন কি আমার দেড়দিন।তোমার জন্য,শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি বাস ছেড়ে এই গাড়ি দিয়ে যাচ্ছি।কেয়ারলেস মেয়ে একটা।

প্রীতি ঠোঁট উল্টে দিলো।

নীলাভ একটা ধমক দিয়ে বলল,

-আসো।

প্রীতি সুরসুর করে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।নীলাভ প্রীতির হাত ধরে ব্যাগ থেকে একটা মলম ,স্যাভলন ,তুলো আর ব্যান্ডেজ বের করলো।প্রীতির হাতে যত্নসহকারে ব্যান্ডেজ করে দিলো।

প্রীতি কিছু বলার জন্য মুখ হা করতেই।নীলাভ ওর মুখ হাত দিয়ে চেপে বন্ধ করে বলল,

-আমি যেখানেই যাই সেখানে এসব ওষুধ পত্র ব্যান্ডেজ নিয়ে যাই।এবার দয়া করে চুপ থাকো।সারাদিন তোমার কথার পেচে আমার মাথা ধরছে এখন।লাইফে কারোর কাছে থেকে এতো কথা শুনছি বইলে আমার মনে পড়ে না।

প্রীতি আর কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে বসে রইলো।

লুকিং গ্লাস এ তাকিয়ে দেখলো ওই ড্রাইভার টা ওর দিকে দাত কেলিয়ে চেয়ে আছে।তা দেখে প্রীতি একটা মুখ টানা মেরে দিলো।ড্রাইভার থতমত খেয়ে সাথে সাথে দাত কেলানি অফ করে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

______________________________

বান্দরবান এসে নেমে প্রীতি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।বুক ভরে শ্বাস টেনে নিলো।এতোসুন্দর কেনো জায়গাটা।

নীলাভ গাড়িটার ভাড়া মিটিয়ে এসে।প্রীতির হাত ধরে বলল,

-চলো..

প্রীতি -মানে কোথায়?

নীলাভ-এখানে কাছে কোথাও একটা রিসোর্টে তোমাকে রেখে আমি নিশ্চিন্তে আমার মতো ঘুরবো।না হলে দেখা যাবে যে তুমি এই বান্দরবানেতে রিসোর্ট খুজতে খুজতেই আবার হারায় গেছো।

প্রীতি মুখ গোমড়া করে রাখলো।

নীলাভ প্রীতির হাত ধরে একটা রিসোর্টের রুম ভাড়া করে সেখানে রেখে এলো।পিছন ফিরে একবারো তাকালো না।আসার সময় ম্যানেজারকে বলে এলো, ‘মেয়েটা কোথাও বের হলে আমাকে কল দিয়ে জানায়েন।’

এই বলেই নীলাভ চলে গেলো।তখন কেবল বিকাল ছিলো।

প্রীতি রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে বসে আছে খাবারের জন্য।মন টা খুব খারাপ লাগছে ওর। ভাবছে, হয়তো খিদের জন্য। খিদা চলে গেলে মন খারাপ ও ভেনিস।খাবার আসার পর প্রীতি খেয়ে নিলো।কিন্তু নাহ…তাও মন ভালো হচ্ছে না।

ওইদিকে নীলাভ ও আরেকটা রিসোর্টে উঠেছে।

ফ্রেস হয়ে এসে খেয়েদেয়ে ভেবেছে একটা ভালো ঘুম দিবে।কারন কালকে রাতে তার একটু ঘুম হয় নি।কিন্তু যখনি সে চোখ টা বন্ধ করছে তার সামনে প্রীতির সেই ঠোঁট উলটানো মুখ,ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়ার মুখ,গাল ফুলানির চেহারা ভেসে উঠছে। ঘুমেরা চোখেতে কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না।বুকটা কেমন ফাকা ফাকা লাগছে।

,
,

মন খারাপের মাঝেই কেটে গেলো প্রীতির বিকেলটা।

এদিকে ফোনের ও নেট নেই যে একটু ফোন চালাবে বা কারো সাথে কথা বলবে।সন্ধ্যার পর প্রীতি আর থাকতে না পেরে বাইরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো এইভেবে যে বাইরে গেলে একটু আশেপাশে দেখেও আসা যাবে আর ফোনের নেটওয়ার্ক ও পাওয়া যেতে পারে।

প্রীতি যেমন আছিলো তেমন ভাবেই বের হলো শুধু গায়ে একটা শাল জড়ালো।

নীলাভ রেডি হচ্ছে বাইরে বের হবে বলে।যেহেতু ঘুম আসছে না সেহেতু বাইরে যেয়ে রাতের প্রকৃতি দেখাটাই ব্যাটার অপশন বলে মনে হয়েছে ওর কাছে।যেই বের হতে যাবে ওমনি ওর ফোনে ম্যানেজার ফোন দেয় আর বলে,

-স্যার ম্যাম বাইরে বের হয়েছে কিছুক্ষণ আগে।

নীলাভ ফোন কেটে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলল,

-কাজ সারছে।আল্লাহ ই জানে আবার কোন বিপদ ঘটায়। এই চিন্তা কইরেই তো আমি ম্যানেজারকে আগেই বলে রাখছিলাম।

নীলাভ হন্তদন্ত হয়ে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যায়।

এদিকে প্রীতি বের হয়েও দেখলো ফোনে ওইভাবে নেট নেই। এক কি দুই দাগ।

তাই প্রীতি ফোনটা হাতে নিয়ে আশেপাশের পরিবেশ দেখতে লাগলো।যত দূর দেখা যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। গাছপালা আর গাছপালায় চারিপাশ অন্ধকার হয়ে উঠেছে এখন।সন্ধ্যা পাড় হয়ে গেছে তো তাই মনে হয় এমন অন্ধকার লাগছে।
আশেপাশের কিছু বাড়ি হোটেল রিসোর্টের আলোয় রাস্তাটা ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। হালকা কুয়াশায় ঘেরা চারিপাশ।

প্রীতি হাটতে হাটতে রাস্তায় এসে পড়লো।

কিছুক্ষণ হাটার পর দেখলো ২-৩ জন লোক হেলেদুলে ওর দিকেই আসছে।হাতের ফোনের ফ্লেশ লাইট টা অন করে দিয়ে দেখলো যে তারা মাতাল। তাই এমন ভাবে দুলে আসছে।

প্রীতি একটু ঘাবড়ে গেলো তাও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে আবার উল্টো পথে হাটতে লাগলো।ওমনি মাতাল গুলো তাড়াতাড়ি এসে প্রীতির হাত খামছে ধরলো।

আসলে ওরা মাতাল সাথে ছিনতাইকারীও।

প্রীতির হাতে ছিলো আইফোন 11 pro max। মাতালগুলো প্রীতির হাত থেকে ফোন টানছে আর বলছে,

-দে বলছি তাড়াতাড়ি দে।যা আছে সব দে।তাড়াতাড়ি।

এক মাতাল আরেক মাতাল রে বলতাছে যে,

-ভাই মা* টাও কিন্তু খুব সুন্দর আজকে রাতে ভালো জমবো।

প্রীতি এখনো ফোন হাড়ে নি হাত থেকে।বেচারার প্রিয় ফোন।

মাতাল গুলা এবার প্রীতির হাত ধরে টানছে ফোনসহ ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। প্রীতি এবার ফিল্মী নায়িকাদের মতো বলে উঠলো,

-শয়তানের দল ছাড় আমাকে।ডান্ডার বারি পাবি তবু আমাকে আর আমার ফোন পাবি না🤣

মাতাল গুলা চোখ বড় বড় করে প্রীতির দিকে চেয়ে রইল।

প্রীতির কথা শুনে ওদের মাথা আরো বেশি আওলায় গেছে।তাই এবার এক মাতাল ছুরি বের করলো।প্রীতি ভয় পেয়ে তুতলাতে তুতলাতে বলল,

-তোতোররা ককি ভেবেছিস শশশয়তানের দল..এএএমন ছুরি বের ককরলেই আমি ভভয় পেয়ে তোদের সাথে যাবো।আমারে কি ফিল্মের ন্যাকা নায়িকা পাইছোস?

মাতাল-না তোরে সিনেমার নায়িকা পাইছি এখন যাবি কি না?

প্রীতি -যামু না।আমার সামনে থেকে আগে ছুরি নামা তারপর ভাইবে কইতাছি।

মাতাল রা কনফিউশানে তাকিয়ে আছে প্রীতির দিকে।

এরপর তারা আবার প্রীতির হাত ধরে টানাটানি শুরু করলো।

প্রীতি এবার আর ছাড়াতে পারছে না।প্রীতির ঘাড় ধরেছে ওরা।

এরই মাঝে কই থেকে হিরোদের মতো নীলাভ এসে এক মাতাল কে লাত্থি মারলো সাথে সাথে নিচে পড়ে গেলো।পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে কয়েক জায়গায় ছিলেও গেছে।তা দেখে বাকি সব মাতাল দৌড় দিলো।কিন্তু যে মাতালের কাছে ছুরি ছিলো সে সেই ছুরি দিয়ে প্রীতির হাতে একটা টান মেরে দৌড়ে চলে গেলো।

প্রীতি জোরে চিল্লিয়ে উঠলো।নীলাভ ভয় পেয়ে প্রীতির কাছে গিয়ে হাত ধরলো।সাদা ব্যান্ডেজ টা লাল টকটকে হয়ে আছে।সকালে যে যায়গায় ছিলে গেছিলো সেই জায়গায় আবার ওরা আঘাত করছে।

এতো রক্ত দেখে নীলাভ ঘাবড়ে গেলো।নীলাভের সাদা শার্ট লাল হয়ে যাচ্ছে রক্তে।প্রীতি তো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে।নীলাভ একবার অসহায় ভাবে প্রীতির মুখের দিকে আবার ওর হাতের দিকে তাকাচ্ছে
এতো রক্ত এতো রক্ত….নীলাভ কি করবে বুঝতে পারছে না।

এইদিকে প্রীতির চোখের পানি ওর গায়ে কাটার মতো বিধছে।শেষে প্রীতি এতো রক্ত দেখে আর কান্না করতে করতে নীলাভের বুকে ঢলে পড়লো।

নীলাভ প্রীতির মুখের দিকে তাকালো কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে মুখ কিছুক্ষণের মধ্যেই।

আর দেরি না করে নীলাভ তাড়াতাড়ি প্রীতিকে কোলে তুলে নিলো।প্রীতির মাথা নীলাভের একদম বুকের সাথে লেগে আছে।হাত টা বাম পাশের বুকের উপর রাখা।নীলাভ কিছুক্ষন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হাটা দিলো রিসোর্টের দিকে।

,
,

নীলাভ একটা ডাক্তার যোগাড় করল। বেশি বেগ পেতে হয়নি কারন ডাক্তার এই রিসোর্টেই ছিলো।ডাক্তার এসে প্রীতিকে একটা ইঞ্জেকশন, ঘুমের ওষুধ আর ব্যান্ডেজ করে দিলো।

নীলাভ প্রীতির সেই ক্ষত হাতটা ধরেই সারা রাত প্রীতির মাথার কাছে বসে রইল।

কারন সে প্রীতিকে একটা ফুটা বিশ্বাস করে না।কখন জানি আবার প্রীতি ঘুমের ঘোরে হাত টা নড়াচড়া করবে আর যা থেকে আবার ব্লিডিং শুরু হবে।তাই নীলাভ ওর হাতটা ধরে বসে আছে ওর মাথার কাছে।

চলবে🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here