Unexpected_lover
part_03
#Rimy_Islam
অনিব দাঁতে দাঁত পিষে রাজ্যের বিরক্ত নিয়ে বললেন,
” চলো। এখানেও দেরি করো না। নইলে রেখেই চলে যাবো।”
গাড়ির দরজা খুলে দিলো না। আমাকে নিজে খুলতে হলো। সামান্য ভদ্রতা লোকটা জানে না।গাড়ির দরজা খুলতে অনেক কসরত করতে হলো। একটুও সাহায্য করবো না। তিনি বললেন,
” মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে তো! গাড়ির দরজা খুলতে পারছো না, অভ্যেস নেই যে! চেষ্টা করো খুলে যাবে। আমার বউ হলে এসবে অভ্যাস থাকা লাগবে।”
আমি মনে মনে শত গালি দিয়ে দরজা খুললাম।
গাড়ির গ্লাস নামিয়ে দিলাম। আকাশে কালো মেঘের ছায়া। এই সময়টাও যখন তখন মেঘ করে। আর বৃষ্টি! এতো প্রতিটা মেয়েরই সর্বোচ্চ পছন্দের তালিকায় রয়েছে। আমি আকাশ দেখে বললাম,
” মেঘ করেছে। বৃষ্টি হলে একটু গাড়ি কোথাও দাঁড় করাবেন।”
অনিব বললেন,
” ভিজবে নাকি? ”
” না। শুধু গাড়িতে বসে জানালা দিয়ে মুখটা বের করবো। আমার মুখে বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ফোঁটা এসে জমবে। ইশ, ভাবতেই শিরহণ হচ্ছে খুব!”
” গাড়ি চলতে চলতেও উপভোগ করতে পারবে।”
” আপনি বুঝবেন না।”
” বেশ, বুঝতে চাইও না। একটা কথাও আর বলবে না। বিয়ে করছি বলে মাথায় উঠে নাচবে না। আমি ছেলেটা খুব বাঁকা। সহজে বাঁকি না। তবে একবার বাঁকলে আশেপাশের সবাইকেও বাঁকা বানিয়ে দেই। তাই সাবধান!”
আমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। এই লোককে কিছু বলে লাভ নেই।বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। পুরো সকাল যা ধকল গেল আমার উপর! হঠাৎ আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলতে দেখি আমি আমার রুমে। অর্থাৎ এ বাড়িতে আসার পর যেটাকে আমার রুম হিসেবে বলেছে আর কি! অনিবের সাথে এক ঘরে থাকতে হচ্ছে না ভেবে কিছুটা আরামেই দিন পার হচ্ছে। বিয়ে অবধি এ আরাম অব্যাহত থাকবে।
মূল কথা, আমি গাড়িতে ছিলাম। বৃষ্টির অপেক্ষা করতে করতে কখন ঘুমিয়েও পড়েছিলাম হয়তো। কিন্তু ঘরে এলাম কিভাবে? ওই ছেলে আমাকে এনেছে বেশ টের পাচ্ছি। আমাকে ছুঁয়েছে অগোচরে? উনি কি বাড়িতে আছেন! একবার দেখতে রুম থেকে বেরোলাম। খুব একটা সুবিধে করতে পারলাম না। কাউকে দেখতে পাই না। পুনরায় রুমে ফিরে শুয়ে পড়ি। অপেক্ষা করতে থাকি কখন অনিব নিজ ইচ্ছেতে রুমে আসবেন।
ঘন্টা চার বাদে তিনি আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। সকালের ওই পোশাকেই এখনো রয়েছে। বুঝলাম, কেবল অফিস থেকে ফিরছেন।
তিনি কিছু বলার আগেই ঝাঁঝাঁ করে বললাম,
” আপনি আমাকে রুমে এনেছিলেন। ঘুমিয়ে পড়েছি দেখে কোলে নেয়ার লোভ সামলে উঠতে পারেননি! কোন অধিকারে নিয়েছেন?”
অনিব বিছানার এক কোণে বসতেই আমি দ্রুত পা সরিয়ে নিলাম। তিনি গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,
” তোমাকে দারোয়ান এনেছে। ”
” কি বলছেন! একটা দারোয়ান হয়ে আমাকে ছুঁয়ে দিলো আর আপনি নিজের হবু বউকে অন্যের কোলে তুলে দিলেন? একবার আমাকে ডাকলেই তো ঝামেলা মিটে যেত।”
” একটু আগে বললে, আমি কেন তোমাকে কোলে নিলাম। এখন বলছ, আমি কেন অন্যের কোলে তোমায় তুলে দিলাম! অদ্ভুত! ”
” না মানে অন্যের ছোঁয়ার চেয়ে আপনার ছোঁয়া হালাল বেশি। তবে পুরোপুরি না। বিয়ে এখনো হয়নি। এরপর দারোয়ান, আপনি কেউ আমাকে ছোঁবেন না।”
অনিব কায়সার চৌধুরী উঠে দাঁড়ালেন। দরজা পর্যন্ত গিয়ে পুনরায় ফিরে তাকিয়ে বললেন,
” তুমি কখনো কাউকে ভালবেসেছ? কিংবা প্রেমে পড়েছ কারো?”
আমি থমকালাম। ভীষণভাবে! পুরনো ঘায়ে মলম লাগালেও কিছু কিছু সময় তা আবারো জেগে ওঠে। তখন একমাত্র মলম কেবল ওই ঘা সৃষ্টিকারী। কিছু কথা কাউকে বলা যায় না। কারণ তা সবার বোধগম্য হয় না। হলেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। আমি মনের ক্ষত গোপন করে বললাম,
” কেন এই প্রশ্ন? আপনি তো বলেছিলেন, আমার কোনো বিষয়েই আপনি আগ্রহী নন। তবুও বলছি উত্তরটা ‘না’।”
” সত্যি! ”
অদ্ভুত! মিথ্যে বলতে যাবো কেন? আপনি আমার পুরনো প্রমিক নন, সত্যিকারের স্বামীও নন। অযথা গোপন করবো কেন?”
“হুম।”
পুনরায় অনিব বললেন,
” একটা প্রশ্ন করেছিলে যে কোনো অধিকারে তোমাকে ছুঁয়েছি আমি। উত্তরটা হলো, কিছু অধিকার পূর্ব থেকেই থাকে। চেয়ে নিতে হয় না। গুড বাই।”
আমি পুরো অবাক হয়ে যায়। অনিবের কথার অর্থ কি দাঁড়ালো। এত কুটিল কেন ওঁ? যত বুঝতে চাই তত অবুঝ হয়ে রয়ে যায়। প্রতিবার নিরাশ হই। আর কত! বাবা- মার কথা খুব মনে পড়ছে। কষ্টও হচ্ছে এই ভেবে আমি কত মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছি। আর ওরও কি? আচ্ছা সে কি আমার কথা ভাবে? আমি কোথায় আছি, পরবর্তীতে যোগাযোগ কেন করিনি? নাকি কালের স্রোতে দূরত্বের সাথে সাথে সব দূরে পাড়ি জমিয়েছে। হয়তো ওর ভালোবাসাও সেই স্রোতে গা ভাসিয়েছে! হয়তোবা না!
.
.
.
.
.
.
.
.
বিয়ে আয়োজন পুরোদমে চলছে। রুনা বেগম ভীষণ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন । আমাকে সময় দিতে পারছেন না দেখে খুব অনুতপ্ত হয়ে পড়ছেন। আমি শান্তনা দিয়ে বলি,’ ঠিক আছে। অসুবিধে নেই। ‘ তিনি আবার কাজে মন দেন।তবে এর মাঝে ভালো দিক হলো মিতিকে একা পাওয়া গেছে। দিতি বয়সে ভারী হওয়ার মিতির কাছে সব খবর যতটা মেলে, দিতির কাছে তা মেলে না। দিতি মাকে সাহায্য করছে বলে মিতি সর্বদা আমার পাশে। আমি একসময় ওকে কথার ছলে বলি,
” আচ্ছা মিতি, তোমার ভাইয়া আলাদা বাড়িতে থাকে কেন?”
মিতি বললো,
” ভাইয়ার ইচ্ছে। ”
” কেন?”
মিতি ইতস্তত করছিল। আমি বুঝতে পেরে বলি,
” ভয় নেই।কাউকে বলবো না। আমিতো তোমার ভাবি। এখন সব জানার অধিকার কি আমার নেই?”
মিতি বলতে লাগলো,
” ভাইয়ার তো বউকে নিয়ে আলাদা বাড়িতে থাকার খুব ইচ্ছে ছিল। তাছাড়া আগের বিয়েটা ভেঙে যাবার পর ভাইয়া খুব ডিপ্রেশনে ভুগছিল। একাকিত্ব তার নিত্য সঙ্গী তখন থেকেই।”
” কি বলো! বিয়ে ভেঙেছিল! কেন? দেখতে সুন্দর, ধনসম্পদ মাশাল্লাহ। কোন মেয়ে এমন বিয়ে ভাঙবে?”
মিতি মনমরা হয়ে বললো,
” ভাইয়ার তখন একটা রিলেশন ছিল। আর প্রচুর ড্রিংসও করতো৷ এক কথায় টাকায় বিগড়ানো ছেলে যাকে বলে। হঠাৎ ভাইয়া বদলে যায়। ওই আগের গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ব্রেকাপ করে। তবুও কিছুতেই লাভ হয়নি। কন্যাপক্ষ খবর পেয়ে যায় ছেলে মাতাল, মেয়েবিলাসী। তবে ভাইয়া আর যাই হোক মেয়েবিলাসী নয়। একটাই গার্লফ্রেন্ড ছিল, তবে সেটা ততটা গভীর না।তাই ব্রেকাপ করে।”
” ও। যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল সেই মেয়ে কিছু বলেনি?”
” বলতে পারি না। মেয়েকে আমরা সরাসরি একবারো দেখিনি। ভাইয়া ছবি দেখেই পাগল হয়ে গেছিল।”
” আচ্ছা। তাহলে যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল মেয়েটা নিশ্চয়ই খুব ধনী আর সুন্দর? ”
মিতি হেসে বলে,
” না।একদম সাদামাটা, মধ্যম ঘরের মেয়ে। শহরে মানুষ হলেও খুব সিম্পল। তাইতো ভাইয়া পাগল হয়ে পড়েছিল। যার রেশ এতদিন ছিল। তুমি এসেছ, এর অর্থ ভাইয়া নতুন করে জীবন গুছিয়ে নিয়েছে। ”
” নাম কি ছিল মেয়ের?”
” মনে পড়ছে না। দাঁড়াও ভেবে বলি।”
এমন সময়ে তড়িৎ গতিতে ঘরে ঢুকে অনিব। তিনি এত দ্রুত এসে হাঁপসে উঠেছেন। হাঁপাতে হাঁপাতে মিতিকে বললেন,
” ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেব। তুই এক্ষুনি ঘর ছেড়ে যা। আর খবরদার বর্ষার আশেপাশে আসবি না। সারাদিন বকতে আর খেতে জানিস। যা কাজ কর, মাকে হেল্প কর।”
বর্ষা অশ্রুভেজা চোখে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে। আমি বিষ্মিত হতেও ভুলে যাচ্ছি। একটা মানুষ কতই আর বিষ্মিত হবে! এই মানুষট হঠাৎ কেন নিজের ছোট বোনের সাথে এমন আচরণ করলেন? তিনি কি বাড়ির সবার সাথেই একরোখা আচরণ করেন? তাহলে এমন একজনের সাথে পুরো জীবন কাটাবো কিভাবে? ভাবতেই চোখে জল এসে পড়ে। এ ছাড়া কোনো উপায় কি আছে! নেই তো!
চলবে…………..