#ভালোবাসা ভালোবাসা
#পর্ব – ০২
#লেখিকা > জান্নাতুল ইসলাম মাওয়া
অয়ন চলে যেতে চাইলে। অধরা হাত চেপে ধরে। অয়ন ভ্রু কুঁচকে অধরার দিকে তাকায়।হাত ধরলেন কেনো?
-আপনি যাবেন না তাই।
-হাত ছাড়ুন আমি বাহিরে যাবো।
-আমি বলছি যাবেন না।
অয়ন অধরার হাত সরিয়ে দিয়ে।নিচু স্বরে বললো, আমার চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের চিন্তা করো ভালো হবে।অয়ন ঘুরে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো অধরা দরজার আটকে দিয়ে সয়তানি হাসি দিলো।অয়নের রাগ হচ্ছে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ইচ্ছে করছে গালে দুইটা থাপ্পড় দিতে।কিন্তু পাচ্ছে না প্রিয় মানুষ কে কখনো আঘাত করা যায় না।আঘাত করলে নিজেকে কষ্ট পেতে হয়।অয়ন রাগ চেপে নিয়ে চুপচাপ দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে।অধরা ভ্রু কুঁচকে অয়নের সামনে এসে দাঁড়ায়।আমার সাথে লড়তে আসবেন না জিতবেন না।বারবার হার মানতে হবে আপনাকে।তাই বলছি আমি যা বলি তাই শুনবেন এই বলে অধরা চলে গেলো।অয়ন দাঁড়িয়ে হাসছে,সত্যি আমি তোমার কাছে অনেক আগেই হেরে বসে আছি।তোমার কাছে হার মানতেও আমি রাজি।অয়নের খালা ব্যাগ নিয়ে বের হচ্ছে।অয়ন তাকিয়ে থেকে বললো,কোথায় যাচ্ছো?
-কোথায় যাচ্ছি মানে কি।
-কয়দিন থাকো তোমার বাসায় যাওয়ার এতো তাড়া কেনো?
-নীলার পরিক্ষা তুই তো জানিস।বাসায় না থাকলে পড়বে না ঠিক মতো।
-ব্যাগটা আমার হাতে দেও।
অয়ন ব্যাগটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অধরা এসে অয়নের হাতে ব্যাগ দেখে চিন্তিত দৃষ্টিতে তাকালো,বাসা থেকে চলে যাচ্ছে না কি?বাবা,মা সবাই এখানে দাঁড়িয়ে অয়ন চলে যাচ্ছে কিছু বলছে না।অধরা আস্তে আস্তে অয়নের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়,একেবারে ব্যাগ গুছিয়ে বাসা থেকে চলে যাচ্ছেন।
-মানে?
-মানে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।মনে হচ্ছে বাসা ছেড়ে চলে যাবেন এই আর কি।
-আমি গেলে তুমি খুশি?
-আপনি গেলে আমি খুশি হবো কেনো?
অয়নের খালা সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।পেছন ঘুরে একবার তাকিয়ে আবারও হাঁটতে শুরু করলো।অয়ন ব্যাগ নিয়ে হাঁটছে পেছন ঘুরে অধরা কে চোখ টিপ দিয়ে বেরিয়ে গেছে।অধরা বিরক্ত নিয়ে বলে,আসুক বাসায় তারপর দেখাবো মজা।
রহমান আলী সোফায় বসে খবরের কাগজ হাতে নিয়ে পড়ছেন।চশমা ঠিক করে আবারও খবরের কাগজে নজর দেয়।বউমা আমাকে এক কাপ চা দিয়ে যাও।
অধরা রান্না ঘর থেকে চা বানিয়ে এনে দিলেন।রহমান আলী চায়ে চুমুক দিয়ে খবরের পড়ছেন।অধরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছে অয়ন কখন আসবে।অয়নের অপেক্ষায় রান্নাও বসায় নি।অধরা দেখলো অয়ন নাচতে নাচতে আসছে।
দারোয়ান অয়ন কে এতো খুশি দেখে জিজ্ঞেস করেই নিলো,ভাই আজ এতো খুশি খুশি লাগছে কেনো?
-কোথায় খুশি?
-ও বুঝছি নতুন বিয়ে করেছেন। তাই এতো খুশি ভাবি অনেক ভালো মনে হচ্ছে।
অয়ন দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বললো, হ্যাঁ অনেক ভালো।অয়ন কলিং বেল বাজতেই অধরা দরজা খুলে হাসি দেয়।অধরার হাসিতেই অয়ন বুঝে যায়। কোনো সয়তানি বুদ্ধি আছে এই মেয়ের।অয়ন ভেতরে ঢুকে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো।প্রচন্ড গরম লাগছে বাহিরে ভালোই গরম লাগে।অধরা দূর থেকে তাকিয়ে থেকে শুধু হাসছে।অয়ন অস্বস্তি বোধ করছে।আমার দিকে তাকিয়ে এভাবে হাসে কেনো রহস্য কি।অয়ন বিরক্ত জড়ানো কন্ঠে বললো,সমস্যা কী তোমার?এভাবে হাসছো কেনো শুধু শুধু?
-আমি হাসবো, আপনি কাঁদবেন তাই।
-আমি কাঁদবো কেনো?
অধরা অয়নের হাত ধরে টানতে টানতে রান্না ঘরে নিয়ে যায়।অয়ন রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছে।আমাকে রান্না ঘরে কেনো নিয়ে আসলে?
-রান্না ঘরে মানুষ কেনো আসে?
-এই তুমি সোজা কথার উওর সোজা ভাবে দিতে পারো না?
-আরে হাঁদারাম আমি উওর সোজা ভাবেই দিয়েছি।আপনি বুঝে নেন।
-হাঁদারাম কে?
-এখানে আপনি ছাড়া কেউ নেই।
-আপনি কিন্তু মাত্রাঅতিরিক্ত করছেন?
-চুপ একদম চুপ বেশি কথা বললে খবর আছে।হাতের চুরিটা দেখেছেন জিহ্বা কেটে দিবো বেশি বকবক করলে।
অয়ন বিড়বিড় করে বলে যাচ্ছে। সবাই বিয়ে করে লক্ষী বউ।আমি বিয়ে করে এনেছি ডাকাত। আমাকে খুন করতেও হাত কাঁপবে বলে মনে হচ্ছে না।যেই মেয়ে যার ঘাড়ে পড়বে সে টের পাবে। আপাতত কয়েকটা দিন আমার ঘাড়ে আছে।এই কয় দিনে আমি শেষ। এখন রান্নাও করতে হবে।
-কি এতো বিড়বিড় করছেন।মনে মনে গালি দিয়ে লাভ নাই। দিতে হলে জোরে জোরে দিবেন।
-কই আমি কিছু বলছি না তো।গালি দিবো কেনো তোমাকে?
-না দিলেই ভালো। কাজ শুরু করেন এতো কথা বললে কাজে সমস্যা হবে।
-আমি রান্না করতে পারি না।
-এই নেন পেঁয়াজ আগে পেঁয়াজ কাটুন।
অয়ন পেঁয়াজ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পেঁয়াজ কাটলেই চোখ জ্বালা করবে।কিন্তু কিছু করার নেই যেই মেয়ে কাটতেই হবে।অয়ন পেঁয়াজ কাটতে শুরু করে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।অয়নের চোখ লাল হয়ে গেছে। অধরা মুগ্ধ দৃষ্টিতে অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে।অয়নের অশ্রু ভেজা চোখ এতো সুন্দর অধরার হৃদয় ছুঁয়ে যায়।অয়ন চোখ মুছে অধরার দিকে তাকিয়ে দেখলো অধরা তাকিয়ে আছে। অয়ন নজর দিতেই অধরার লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নেয়।কিছুটা সময় দুজনে চুপচাপ থেকে অয়ন বললো,পেঁয়াজ কাটা শেষ তারপর কী করবো?
-এখানে যতো সবজি আছে সব কাটেন।
-এতো সবজি আমি কতক্ষণে কাটবো?
-কথা হবে না কাজ হবে।
অয়ন সব সবজি কাটতে শুরু করে।অধরা পাশে দাঁড়িয়ে ঠোঁট চেপে হাসছে।গম্ভীর কন্ঠে বললো, এতোক্ষণ লাগে সবজি কাটতে। আপনাকে চাকরি কি দিলো ভাবছি।
-কেনো? চাকরির কথা আবার এখানে আসছে কেনো?
-আপনি তো কাজের না।আপনাকে দেখে মনে হয়,আপনি বোকা।
অধরার কথায় অয়ন রেগে যায়।অধরার ডান হাত ধরে একটানে অয়নের সামনে নিয়ে আসে।আমি বোকা না বুঝছো।এর পরে যদি বোকা বলো তাহলে তোমার খবর আছে।
অয়নে কে রাগান্বিত দেখে অধরা ভয় পেয়ে যায়।ঢোক গিলে বললো,ছাড়ুন আমার হাত। আপনাকে এতো সাহস কে দিলো আমার হাত ধরার।আপনি মানুষ ভালো না।আমি প্রথমেই বুঝছি আপনার চরিত্র খারাপ।
-নাউজুবিল্লাহ। এসব কি বলছেন।
-হ্যাঁ আমি ঠিক বলছি।আপনি মানুষ ভালো না।সুযোগ পেলেই আপনি..
-কি আমি?
-কিছু না।আপনি আমার হাত ছাড়ুন।
-ছাড়বো না কি করবে?
-দেখুন হাত ছাড়ুন আবারও বলছি।
-ছাড়বো না।
অধরা অয়নের হাতে কামড়ে দেয়।অয়ন চিৎকার দিয়ে অধরার হাত ছেড়ে দিয়ে নিজের হাত চেপে ধরলো।অয়নের চিৎকারে পাশের রুম থেকে বাবা,মা ছুটে আসেন।অয়নের বাবা অয়ন কে জিজ্ঞেস করলো, কী হয়েছে?অয়ন হাতটা পিছে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
-এভাবে চিৎকার কেনো করলি?কী হয়েছে?
-তেমন কিছু না বাবা।একটা মশা কামড় দিছিলো।মশার দাঁতগুলো অনেক বড় বড় থাপ্পড় দেওয়ার সময় পাই না।থাপ্পড় দেওয়াই আগেই উড়ে গেছে। যদি মশাটা কে একবার সামনে পাই এক থাপ্পড়ে কান গরম করে দিবো।
-মশার কামড়ে এভাবে কেউ চিৎকার করে। আমরা ভয় পেয়ে গেছি।দুজনে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলেন।
অধরা কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এই আমি মশা তাহলে আপনি কী?
-আপনি মশা না রাক্ষসী।
-কথা ঠিক করে বলেন।আপনি বাবা,মা কে কেনো বললেন মশা কামড়ে দিছে?
-তাহলে কি বলবো।আমার বউ আমাকে কামড় দিছে?
অধরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে ভাবছে হঠাৎ করেই বললো,বলতে পারতেন কুকুর কামড় দিছে।
-বাহ বাহ নিজেকে কুকুরের সাথে তুলনা করলেন।
চলবে..
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।