#চল তবে শূন্যতা ধরে হাঁটি
Zannatul ferdaous zannat
part:2
বালিশে মুখ গুঁজে উপুর হয়ে শুয়ে আছে অন্তি। পিহু চুপচাপ অন্তির পাশে বসে আছে। কেমন যেনো থমথমে একটা পরিবেশ।
অন্তির স্কুল ছুটির পর ও আর মিলি রোজ হেঁটে হেঁটেই বাড়ি ফিরে। ক্লাস সিক্স থেকেই একই স্কুল ওদের। ওদের প্রতি দিনের অন্যতম রুটিন হলো স্কুল গেট থেকে ঝালমুড়ি কিনে বাসায় যাওয়ার পুরো পথটা আড্ডা দিয়ে ঝালমুড়ি খেয়ে খেয়ে যাওয়া। দুই বান্ধবী ক্লাসেও একই সিটে বসে। তবু যেনো সারাদিনেও তাদের গল্প শেষ হয় না। এই জন্য যে কতো বার “তোমরা কাল থেকে আলাদা সিটে বসবে”। এ কথাটা শুনতে হয়েছে স্যার ম্যাম এর কাছে তার হিসাব নেই।
দিনটা খুব গরমের। কেমন কাঠ ফাটা রোদ। রোজকার মতো অন্তি আর মিলি ঝালমুড়ি কিনতে দাড়িয়ে আছে। হঠাৎই কেমন ঝরো হাওয়া বইতে শুরু করে দিলো।
পরিবেশ দেখে মিলি বললো
-অন্তি চল আজ আর ঝালমুড়ি না খাই। জলদি চল বাড়ি চলে যাই। দিনের অবস্থায় এখই মনে হচ্ছে ঝড় শুরু হবে।
অন্তি বললো,
-কিন্তু মিলি আমরা তো পাঁচ মিনিট দাড়িয়েছি আর একটু না হয় দাড়াই।
ঝালমুড়ি হাতে নিয়ে দুকদম এগিয়ে আসতে না আসতেই ঝুম বৃষ্টি। মুহূর্তেই হাতের ঝালমুড়ি ভিজে গেলো আর সাথে ঝালমুঠির কাগজটা ছিড়ে মুড়ি গুলো রাস্তার উপর ছড়িয়ে গেলো। কেমন এক বিদঘুটে অবস্থা। অন্তি আর মিলি দুজনের ব্যাগ যেনো ভিজে না যায় দৌরে স্কুল গেটের সামনে আসলেও স্কুল ছুটির টাইম অনেক স্টুডেন্ট এর ভিড়ে না দাড়িয়ে কিছুটা সামনে এসে একটা গাছের নিচে দাড়ালো।
মিলি খুব বিরক্তি নিয়ে বললো
-তোকে বলছিলাম অন্তি শুনলিনা আমার কথা। বাসায় চলে যেতে পারতাম এর মাঝে। এখনও যেতে পারবো। চলনা দৌড়ে চলে যাই।
-তোকে বাসায় গেলে বৃষ্টিতে ভিজতে দিতো?
-আমার বৃষ্টি পেনপেনে লাগে। তবে ভিজতে চাইলে দিতো।
-আমায় দিতো না। কেমন না বল, আমার বৃষ্টি কত প্রিয় অথচ আমার বৃষ্টিতে ভেজা একদম এলাও না।
পায়ের কের্স এ বৃষ্টির পানি ঢুকে কেমন যেনো প্যাচপ্যাচে লাগছে অন্তির।
মুজা আর কের্সটা খুলে খালি পায়ে মাটিতে দাড়ালো অন্তি।
বৃষ্টি হলে বাতাসে কেমন যেনো একটা গন্ধ ছড়ায়। এই গন্ধটা অন্তির খুব ভালো লাগে। পায়ের নখ দিয়ে মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে পিচের রাস্তার উপর থেকে বালি ধুয়ে যাওয়ার দৃশ্যটা অন্তি খুব উপভোগ করছে।
মিলি অন্তির কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো
-অন্তি দেখ তখন থেকে একটা ছেলে ভাঙ্গা ছাতা হাতে ঘুরঘুর করছে। বিষয়টা একদম কিন্তু ভালো লাগছে না।
অন্তি খেয়াল করলো একটা ছেলে সত্যি কেমন যেনো এদিক ওদিক ঘুরছে। আর এখন অন্তিদের দিকটাতেই আসছে
-মিলি আমার মনে হয় উনি কোনো প্রবলেমে পরেছেন।দেখ চেহারা টা কেমন যেনো দেখাচ্ছে।
ছেলেটা অন্তির সামনে এসে দাড়িয়ে বললো
-তোমার ব্যাগটা কি রেক্সিনের?
অন্তি আর মিলি একটু চোখাচোখি করে অন্তি উত্তর দিলো
-কেনো বলুনতো?
-আসলে আমার কিছু দরকারি কাগজ পত্র এই ফাইলে।(একটা গোলাপি ফাইল দেখালো।) হাতে ছাতাটাও বাতাসের তোড়ে ভেঙ্গে গেলো। একটা রিক্সাখোজা পর্যন্ত যদি ব্যাগে রাখতে।
-আসলে ব্যাগটা রেক্সিনের কিনা জানিনা।
-ওয়াটার প্রুভ তো?
-কি জানি?
ছেলেটা কয়েক সেকেন্ড অন্তির দিকে তাকিয়ে আবার বললো
-তোমার বই পত্র ভিজবে না?
-না তো।
-হুম। আচ্ছা। ফাইলটা প্লিজ রাখো। আমি জাস্ট একটা রিক্সা জোগার করবো।
ছেলের এমন এটিটিউড দেখে অন্তি আর মিলি দুজনই হা করে দাড়িয়ে থাকলো
কয়েকমিনিটের মাঝেই বৃষ্টি কমে গেছে। হঠাৎ করেই বৃষ্টিটা আর নেই। অন্তি আর মিলি ছেলেটার ফাইল দেওয়ার জন্য এখনও একি জায়গায় দাড়িয়ে আছে।বৃষ্টি কমেছে কয়েক মিনিট হলো। ছেলেটার আসার নাম নেই। মিলি বললো
-এটা কেমন লোকরে বাবা। নিজে সেধে ফাইল দিয়ে গেলে এখনো আসার নাম নেই। এই তার দরকারি কাগজের গুরুত্ব।
-এমন ছেলে আমি জীবনেও দেখিনি বাবা।
-হুম।
অন্তি তার স্কুল ড্রেসের স্কার্ট টার নিচের অংশ ধরে চিপে পানি ঝড়িয়ে মাথা উচু করে তাকাতেই দেখলো ছেলেটা দাড়িয়ে আছে।
ছেলেটা একটু অসহায় ভঙ্গিতে বললো
-জী আসলে রিক্সা পেতে দেরি হয়ে গেলো। ফাইলটা..
অন্তি ব্যাগ থেকে ফাইল বের করতে করতেই ছেলেটার চোখ অন্তির দিকে গেলো
“দুইসাইডে ঝুটি বাধা চুলগুলো পানিতে ভিজে কাধে লেপ্টে আছে। মুখের পাশে ছোট চুলগুলোও লেগে লেগে আছে। অন্তি হাত এগিয়ে ফাইল দেওয়ার সময় অন্তির মুখটাও ছেলেটার মাঝে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিলো। ছোট মুখটাতে সবার আগে যেটা চোখে পরে তা হলো বাদমি লেন্স আর ঠোটের একটু উপরে একটা তিল।”
গালের উপর জমে আছে ফোটা ফোটা পানি।
নিরবতা ভেঙ্গে অন্তি বললো
-আপনার ফাইল।
-জ্বি। থ্যাংকস। আমি আরশান রহমান।
-ওহ।
অন্তি বা মিলি কেউ আর কিছু বললো না। অন্তি কের্স জোড়া আংগুলে আটকিয়ে হাঁটা ধরলো। মিলি বললো
-তুইই বল অন্তি উনার পরিচয় জেনে আমরা কি করবো,আসছে নাম বলতে।
-বাদ দে তো। জানিস মিলি আমার না বৃষ্টির পর এই শান্ত প্রকৃতিটা খুব বেশি ভালো লাগে।
আরশানের কানে অন্তির বলা শেষ কথাটা আবছা শোনা গেলো
সেদিন বাসায় ফিরে অন্তির অনেক বকা শুনতে হয়েছিলো। স্কুল থেকে বাসা বড়জোর দশ মিনিটের পথ। বৃষ্টি থামার আরও অনেক পরে যাওয়ায় সেদিন ওর মা ওকে অনেক বকেছে। রাতে অবশ্য বাড়াবাড়ি পর্যায়ের জ্বর উঠে গেছিলো।
-অন্তি। এই অন্তি। তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?
মার ডাকে হঠাৎই অন্তির ঘুম ভেঙ্গে গেলো। কখন চোখ লেগে এসেছিলো অন্তির খেয়াল নেই। বিছানার পাশে পিহুও ঘুমিয়ে আছে।অন্তি উঠে বসলো।
মিসেস হাসনাত চিন্তিত হয়ে বললেন
-রাতে খেয়ে ঘুমাও। শরীর খারাপ করবে না হয়। তোমার বাবাও বকবে। ওদের প্রোগ্রাম এখনও শেষ হয় নি? আমি বরং খাবার দিয়ে যাই।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো মাত্র আধাঘন্টার মতো ঘুমিয়েছে। এতো অল্প সময়ে মরার মতো পরে পরে কিভাবে ঘুমালো অন্তি নিজেও জানে না।
অন্তির মা একপ্লেট ভাত আর কয়েক টুকরা গোস্ত এনে সামনে রাখলো।
অন্তির চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে চোখ থেকে ঘুম ছাড়ে নি এখনো। তাই মিসেস হাসনাত নিজে ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিতে লাগলেন। খাওয়ানোর এক ফাঁকে বললেন,
-অন্তি তোমাকে ঢাকায় কোথাও ভর্তি করলে কেমন হয়?
অন্তি হ্যা না কিছু না বলে গ্লাস থেকে কিছুটা পানি মুখে তুলে নিলো
-আম্মু আমি আর খাবো না।
-কিন্তু এখনো অনেক ভাত।
-আম্মু খুব খারাপ লাগছে।
-জামাটা পাল্টে শুয়ে পরো তাহলে।
মিসেস হাসনাত আর জোড়াজোড়ি করলেন না। অন্তি একটা পাতলা সুতির কামিজ পরে জানালা খুলে দাড়ালো।
জানালার গ্রীল ধরে একমনে ভাবতে লাগলো
-আমি যদি ঢাকায় ভর্তিও হতে চাই তবুও তোমরা আমার ইচ্ছর গুরুত্ব না দিয়ে নিজেরা যা ইচ্ছা করবে।শুধু শুধু আমার ইচ্ছা প্রকাশ কারাটাই বৃথা।
প্রিয়া অন্তির পাশে এসে দাড়াতেই অন্তি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো
-কিরে প্রোগ্রাম শেষ হলো??
-আর হলো, বাইরে যা ঝরো হাওয়া শুরু হয়েছে না। এই বুঝি বৃষ্টি নামে। তাইতো সবাই ছাদ ফাঁকা করে চলে আসলো।
-কই জানালার ধারে দাড়িয়ে তো বোঝা যাচ্ছে না।
-আপু এইটা তো আরেক ফ্লেটের সাথে এডজাস্ট তাই বুঝবি না। এই দিকে আস এখানে একটা খোলা বারান্দা আছে।
অন্তির হাত ধরে প্রিয়া একটা দরজা খুলতেই খোলা বারান্দা চোখে পরলো। কোমর পর্যন্ত রেলিং টানা।অন্তি এই রুমে এতোক্ষন থাকলেও এই দরজাটা কিভাবে ওর চোখে পড়লো না ও নিজেও জানে না। প্রিয়া বললো,
-আপু তুই বরং একটু থাক আমি ঝটপট ভাত খেয়ে আসছি। তুই খেয়েছিস তো???
-হ্যা। তুই খেয়ে আস।
অন্তি বারান্দায় কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকলো। খেয়াল করলো একটা লোক এই ঝরো হাওয়ার মাঝেও রাস্তার অপর পাশে এই বিল্ডিংটার দিকে তাকিয়েই পায়চারি করছে। ওপাশের রাস্তায় গোটা কয়েক সোডিয়াম বাতির আলোয় লোকটার চেহারা স্পষ্ট না দেখা গেলেও ওইটা যে অন্য কোনো প্রাণী নয়, একজন মানুষ, অন্তি তা এগারোতলা উপর থেকেই বুঝতে পারছে। লোকটা এভাবে পায়চারী করছে কেনো কে জানে।
বেশ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকায় অন্তির শরীর বাইরের ঝরো হাওয়ায় ঠান্ডায় জমে যাচ্ছে। অন্তি রেলিং ধরে ফ্লোরে বসো পড়লো। রেলিং এ মাথা ঠেকাতেই মনটা আবার ভার হয়ে আসলো। আজ আবার আরশানের সাথে কেনো দেখা হলো। দেখা না হলে কি হতো। অন্তির মাঝে আবার তোলপার উঠতে শুরু করলো। বুকের এই এক একটা চিনচিনে ব্যাথা যেনো আরশানের জন্য জমে থাকা ভালোবাসাগুলোর বহিঃপ্রকাশ।
আরশানের সাথে মাঝে কয়েকদিন স্কুল ছুটির পর অন্তির দেখা হলেও আজকাল স্কুল শুরু হওয়ার আগে একবার স্কুল ছুটি হওয়ার পরে একবার রোজই দেখা হয়। এটা কোইনসিডেন্স নাকি ইনটেশনালি অন্তি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।
মেয়েদের একটা ক্ষমতা আছে। ওরা খুব করে বুঝতে পারে কোন ছেলে তার দিকে তাকাচ্ছে, আর চোখ দেখে বলে দিতে পারে মনের মাঝে কি মতলব ঘুরছে।
সেদিন অন্তি দুই বিনুনি দুই হাতে নিয়ে হেলেদুলে বাসায় ফিরছে। মিলি আসে নি স্কুলে।
এতোদিন যেনো এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলো আরশান।
অন্তি স্কুল গেট থেকে কিছু দূর এগোতেই পিছন থেকে কেউ একজন তার নাম ধরে ডাকলো।
অন্তি দাড়িয়ে যেয়ে পিছন ঘুরতেই আরশান অন্তির পাশে এসে দাড়ালো।
অন্তি বললো
-জ্বী আমাকে বলছেন?
-হ্যা।
-কেনো বলুন তো? আমি তো আপনাকে চিনিনা। (ঢের চিনে, শুধু আরশানকে তা বুঝতে দিলো না)
-আরে ভুলে গেলে সেদিন বৃষ্টিতে আমি তোমাকে ফাইল রাখতে দিলাম।
-হবে হয়তো, (বলেই অন্তি হাটা ধরলো)
-তোমার জন্য ঝালমুড়ি এনেছিলাম।
-সরি আমি অপরিচিতো কারো কাছ থেকে কিছু খাই না।
-অন্তি।
-আচ্ছা আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে? আর এভাবে রাস্তায় বার বার ডাকছেন কেনো?
-নাম তো এমনিতেই জানা যায়।
-আপনি কি জানেন আপনার এই আচরনগুলো ইভটিজিং এর পর্যায়ে পরছে।
-তুমি কি বলতে চাচ্ছো আমি ইভটিজার?
-হ্যা।
-আমাকে দেখে কি তাই মনে হয় তোমার?
-অন্তি পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখলো আরশানের। মুখ বাকিয়ে উত্তর করলো “না ঠিক তা মনে হয় না” তবুও এগুলা ইভটিজিং।
আরশান অন্তির কথায় হেসে দিলো। একটা ছেলের হাসি যে এতোটা সুন্দর হয় অন্তি আরশানের হাসি না দেখলে জীবনে জানতই না। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে অন্তি আবার হাটা ধরলো।
আরশান এখনো ওর পিছুপিছু হাটছে। অন্তি বললো
-দেখুন এইতো আমার বাড়ির সামনে এসে গেছি। কেউ দেখলে আমার খুব প্রবলেম হবে। আমি কোনো প্রবলেমে ফাসতে চাই না। আপনি দয়া করে যান।
-আমি তোমার জন্য কিছু এনেছি। তবে তা শুধু আজ বৃষ্টি হলেই প্যাকেটটা খুলে দেখবে আর না হলে ফেলে দিবে।
-মানে, আমি কেনো নিবো?
-অন্তি আমি বলেছিতো বৃষ্টি হলেই তা খুলে দেখবে।আর কাল সকালের আগে বৃষ্টি না হলে তা না দেখেই ফেলে দিবে। আর আমিও তোমাকে কখনও বিরক্ত করবো না।
-এটা কেমন কথা?
আরশান একটা কাগজের শপিং ব্যাগ অন্তির দিকে এগিয়ে দিলো। অন্তি না নিতে চাইলে অনেক
অনুনয় বিনয় করে অন্তির হাতে পেকেট গুজে দিয়ে চলে গেলো আরশান ।যাওয়ার সময়ও বার বার বললো বৃষ্টি হলেই খুলবে না হলে ফেলে দিও।
সেদিন অন্তি রাত আটটা পর্যন্ত বৃষ্টির অপেক্ষা করে পরতে বসলো। আর একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লো।পরতে পরতে আরশানের দেয়া পেকেট টার কথা অন্তির মাথা থেকেই বেড়িয়ে গেছে।
হঠাৎ ই বজ্রপাতের শব্দে অন্তি চমকে উঠলো ঘুম থেকে। জানালার পর্দাটা খুলেই ঘুমিয়ে গেছিলো। বজ্রপাতের ঝলকানি বার বার চোখে পড়ছে। অার সাথে ঝুম বৃষ্টি। অন্তি দ্রুত উঠে জানালা বন্ধ করে দিলো। বৃষ্টির ছিটা এসে টেবিলে রাখা দুই একটা বই ভিজে গেছে। বই গুলো ছড়িয়ে দিতে দিতেই অন্তির মনে পড়ে গেলে আরশানের দেয়া পেকেট টার কথা।বিকালে বাসার গেটে এসে পেকেট টা যেনো কারো চোখে না পরে তাই ব্যাগে লুকিয়ে রেখেছিলো।
পেকেট খুলতেই অন্তি বিস্ময়ে হা করে থাকলো।একগুচ্ছ কদম ফুল মোরানো একটা সাদা কাগজ দিয়ে। সারাদিন শেষে ফুলগুলোর সাদা অংশটুকু কেমন যেনো একটা বাদমি রং ধারন করেছে। সাদা কাগটাতে অন্তি একটা চিঠি দেখলো। রুমের মাঝে যে কোনো সময় কেউ চলে আসতে পারে। বিশেষ করে ঝরের সময় তার মা আসতে পারে এই ভেবে ফুল গুলোকে একটু আরাল করে রুমের লাইট টা নিভিয়ে ওয়াশরুমে চিঠিটা নিয়ে ঢুকে গেলো।
“অন্তি,
কি বলবো জানিনা। আজ সকালে দেখলাম তুমি একা স্কুলে যাচ্ছো। মনে হলো আজই তোমাকে মনের কথা বলার সঠিক দিন। শুধু বিকালের অপেক্ষা,
অন্তি তুমি কি জানো? তুমি বৃষ্টি কন্যা।৷ তোমার নাম মেঘোবতী হলে বেশ হতো অথবা বৃষ্টিমালা। আমি যখন সেদিন বৃষ্টিতে তোমাকে প্রথম দেখলাম তাকাই নি ভালো করে। কিন্তু বৃষ্টি শেষে যখন তোমায় দেখলাম প্রকৃতির সেই স্নিগ্ধতা তোমার মাঝে আমি পেয়েছি।অন্তি আমি সরাসরি এটা বলতেই পচ্ছন্দ করবে যে আমি তোমার প্রেমে পরে গেছি ভালোবেসে ফেলেছি অন্তি।
তুমি যেহেতু চিঠির এটুকু পরে ফেলেছো তার মানে আজ বৃষ্টি হচ্ছে। আমি তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাকে বৃষ্টির উপরই ছেড়ে দিয়েছি বৃষ্টি সহায় হলে তুমি জানবে আর তা না হলে কোনোদিনও জানতেও পারবে না আমার মনের কথাটা।”
অন্তি চিঠি থেকে চোখ তুলে মুখ বাকিয়ে মনে মনে বললো আমি এমনিতেও আপনার হাব ভাবে মনের কথা বুঝে গেছি।
আবার চিঠিতে চোখ ফেললো
“আমি উত্তরের অপেক্ষা করবো অন্তি। এই বাদল দিনের প্রথম কদম ফুলটা তোমার জন্য।
আরশান রহমান”
অন্তি চিঠিটাকে আরো দুবার রিভিশন দিয়ে কুটি কুটি করে ফ্লাশ করে দিলো টয়লেটে।
ওয়াশরুমের দরজা খুলে গুন গুন করে গান করছে অন্তি
“-বাদল দিনের প্রথমও কদম ফুল করেছো দান ”
বিছানায় তাকাতেই চোখে পড়লো অন্তির মা বিছানায় শুয়ে আছে। অন্তি কে দেখেই তিনি বললেন,
-এখনো ঘুমাও নি?
-আম্মু বজ্রপাতের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেছিলো।
আর কথা না বাড়িয়ে অন্তি ওর মার পাশে শুয়ে পড়লো। মনে মনে ভাবলো এর আগে যা হয় প্রতি দিন সব তার মাকে ও জানাতো কিন্তু আরশানের সাথে প্রথম দেখা থেকে শুরু করে আজকের সব কিছু কেনো অন্তি লুকাচ্ছে তার মার থেকে। উত্তরটা সে নিজেও জানে না।
সেরাতে অন্তি ঘুমিয়েছিলো ঠিকি কিন্তু আরশানের চোখের ঘুম উড়ে গেছিলো। বৃষ্টি হওয়ার আগে বৃষ্টি না হওয়ার চিন্তায়, আর বৃষ্টির পর অন্তির মনের কথা জানার চিন্তায়।
অথচও আজও কিছু উত্তর অন্তির অজানা। আরশান কি অন্তি ওকে ছেড়ে যাওয়ার পর নতুন কোনো সম্পর্কে জড়িয়েছিলো? আচ্ছা আরশান নতুন কাউকে ভালোবাসলে কি অন্তির খুব কষ্ট হবে? চোখ থেকে কিছু পানি গড়িয়ে পড়লো অন্তির গালে।
প্রিয়া এসে ধপ করে অন্তির পাশে বসে পড়ে বললো,
-আপু তুই এখনো রুমে আসিস নি?
-না এখানে ভালো লাগছে।
-আজ প্রকৃতিটা অনেক সুন্দর মনে হয় বৃষ্টি হবে।
অন্তি নিচের দিকে তাকিয়ে পথে পায়চারি করা লোকটাকে আবার দেখতে পেলো
-আচ্ছা প্রিয়া ওই লোকটা এখানে অনেক্ষন ধরে পায়চারি করছে। এই ঝরো বতাসের মাঝেও।
কোন লোকটা?
প্রিয়া কিছুটা ঝুকে দেখলো লোকটাকে
-ওহ এই লোকটা? পাশের ফ্লাটের আন্টি বলেছে এই লোকের প্রেমিকার বিয়ের পর নাকি বর নিয়ে এই ফ্লাটে উঠেছে। চারতলায় থাকে উনার এক্স। প্রতি বৃহস্পতি বারই উনি এভাবে পায়চারি করেন এই টুকু জায়গায়।হয়তো একটু উনার প্রাক্তন কে দেখার জন্য।
অন্তি কিছুক্ষন অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো
-মেয়েটা অনেক আনলাকি উনার মতো কাউকে হারিয়েছে।
ভাগ্যটা কেমন যেনো দেখ এতো ভালোবেসেও মানুষকে আলাদা থাকতে হয়। যার প্রতি কোনো ফিলিংস নেই তার সাথে জীবন জুড়ে যায়। ভালোবাসাটা কেবলই যাতনা ময়।
#চল তবে শূন্যতা ধরে হাঁটি
Zannatul ferdaous zannat
part:3
আরশান মাঝরাতে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো। গন্তব্য তার জানা। অন্তি ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পর যখনই অন্তির কথা মনে হতো আরশান রোজ অন্তির স্কুল গেটের সামনে এসে দাড়াতো। অন্তির স্কুল থেকে অন্তি যে বাসায় থাকতো সে বাসার রাস্তা পর্যন্ত পায়চারি করতো। কিন্তু হঠাৎ করে একদিন অন্তি ঢাকার সাথে সাথে আরশানের জীবন থেকেও চলে গেলো। এরপর দরকারেও এ পথে আসা হয় নি।
উত্তরায় খুব একটা পানি জমে না। আরশান অন্তির স্কুল গেটের সামনে জুতা খুলে দাড়লো। পায়ে একটু পানি ছুঁয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষন আগেই খুব জোর ঝড় হয়ে প্রকৃতিটা এখন একদম নিরব। স্কুলের সামনের রাস্তাটার দিকে আরশান কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হাঁটা শুরু করলো।
অতীত গুলো আরশানের চোখে এখন ঝাপসা।
অন্তি কোনো ভনিতা ছাড়াই হুট করে একদিন আরশানের সামনে এসে বলেছিলো
-আপনি অনেক কিউট। আপনাকে আমার ভালো লাগে।
বিস্ময়ে যেনে আরশানের চোখ বড় বড় হয়ে গেছিলো। অবশ্য অন্তিকে এই অবস্থায় আনার জন্য আরশানের বেশ কাঠখর পুড়োতে হয়েছিলো। এর পেছনে আরশানের অনেক বেশি পাগলামিটাই খুব কাজে দিয়েছিলো। দিন দিন অন্তির ভালোলাগাটার পরিমাপ বেড়ে ভালোবাসা হয়ে গেলো।
সম্পর্কটা একটা গতি নিয়ে চলতে শুরু করেছে সবে। আরশান অন্তির ভেতর দিন দিন এতো এতো বিস্ময় কর বিষয় আবিষ্কার করছিলো যে আরশান নিজেও বিষম খেয়ে বসত।
অন্তিকে বেশির ভাগ সময় আরশান মেঘবতী বলেই ডাকতো। ততোদিনে অন্তি আরশানের নামটা ছোট করে শান বলে ডাকতে শুরু করেছে।
অন্তির দিনগুলো তখন রঙ্গিন ফানুসের মতো। কেমন রং ছড়িয়ে আকশে পাড়ি জমাচ্ছে। তার স্বপ্নগুলোও সাথে তাল মিলিয়ে দিনকে দিন পাহাড় সমান হচ্ছে।
ক্লাস নাইন এর শেষ থেকে মোটামুটি শান আর ওর রিলেশনটা শুরু হলেও টেনে উঠার পর সবাই জানলো অন্তির বয়ফ্রেন্ড আছে।
বিষয়টা অন্তির বাসায় পৌঁছাতেও যেনো খুব একটা সময় নিলো না।
অন্তির বাবা মা শুধু এটুকু জানে যে অন্তি আর মিলি স্কুল থেকে ফেরার পথে কোন এক ছেলেকে প্রায়ই তাদের সাথে দেখা যায়। অন্তির সাথে বেশি কথা হয়। তাই কি না কি মনে করে অন্তির বাবার সন্দেহের তীর টা মিলির দিকেই ঘুরে গেলো। পেশায় ব্যাবসায়ী হলেও উনার আচরন বরাবর ডিটেকটিভদের মতো। উনার মতে অন্তি যেহেতু প্রাণ খুলে কথা বলে তার মানে ও কালপ্রিট না। যে লোকের ভয় করে সেই দোষী। তবুও অন্তি তখন মোটামুটি নজর বন্দি। স্কুল থেকে এখন রোজ অন্তির মা নিয়ে আসে। স্কুলে যাওয়ার সময় রিক্সা করে দেয়।
প্রেম পাহাড়া দিয়ে আটকানো যায় না। ঠিক তাই। অন্তির উপর থেকে সন্দেহটা একটু হালকা হতেই মাসে পনেরো দিনের প্রাইভেট ক্লাসের জায়গায় বিশ দিনের রুটিন ধরিয়ে দিলো অন্তি তার মার হাতে।
খুব যাচাই বাছাই করেই বাকি দিন ঠিক করলো অন্তি। যে দিন অন্তির মা ব্যাস্ত থাকে অন্তির ছোট ভাই রুশ্যকে নিয়ে, বিশেষ করে বুধবার। এ সময়টা রুশ্যর এক্সট্রা কারিকুলার ক্লাশ। আর সপ্তাহের তিনদিন অন্তির বাবা ঢাকায় থাকলেও চারদিন ব্যবসার দরকারেই চট্টগ্রাম থাকে। রবি থেকে বুধ বার চট্টগ্রাম থাকেন তিনি। এই রুটিনটা ফিক্সট। অন্তি দিন আর সময় গুলো সেভাবেই গুছিয়ে নিলো। ঠিক বিকাল ৪ টা থেকে ৫ টা। আসা যাওয়া নিয়ে আরও ত্রিশ মিনিট। প্রায় দের ঘন্টা আরশান আর ও পুরো শহর সপ্তাহের এই একটা দিন চশে বেরাতো বাইকে করে।
বেশির ভাগ সময় তারা দিয়া বাড়িতে বেড়াতে যেতো। লোকজনের ভির একটু কম বটে বুধবারে। আরশান মুগ্ধ হয়ে অন্তিকে দেখতো। রোদের আলোয় অন্তির চুল গুলো কেমন যেনো লালচে আভা ছড়ায়। আরশানের মুগ্ধচোখের সামনে ছটফট করে কথা বলেযেতো এক অবাধ্য ষোড়শী।
এক শরৎশুভ্র বিকেলে আরশান অন্তির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতেই বললো
-অন্তি এই বর্ষায় তুমি নজর বন্দি ছিলে আর আমার সেকেন্ড সেমিস্টার। বর্ষা নিয়ে আমার একটা ফেন্টাসি আছে বুঝলে।
অন্তি চারপাশের কাশ ফুল মুগ্ধ হয়ে দেখছিলো। যেনো ও মেঘের রাজ্যে নরম তুলোর মতো মেঘ গুলোর মাঝে হারিয়ে গেছে।
অন্তির নিরবতা দেখে আরশান আবার বললো
-এই অন্তি।
-হুম বলো।
-আমি চাই এক বর্ষায় তুমি আমি দুজন কোনো এক খোলা মাঠে দাড়িয়ে হাতে হাত ধরে ভিঝবো। ঝুম বৃষ্টি হবে। অথবা কোন ঝিলের বুকে নৌকায় থাকবো তুমি আর আমি। বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা তোমায় ছুঁয়ে যাবে। আর আমি মুগ্ধতা নিয়ে দেখবো। তুমি নীলপেড়ে সাদা শাড়ি পড়ে খোপায় পড়বে বেগুনী জারুল ফুল। জানো অন্তি বৃষ্টি যখন থেমে যায়, চার পাশটা কেমন যেনো স্নিগ্ধতায় ভরে উঠে। নীরব সবুজ। গাছের পাতাগুলো যেমন ঝুবঝুবে ভিজে থাকে ঠিক তেমনি তোমার খোলা চুলগুলো তোমাতে লেপ্টে থাকবে। তোমার চোখের পাপড়ি ছুঁয়ে ফোটা ফোটা পানি পরবে। নাকের ডগায় থাকবে শিশিরের মতো জমে থাকা পানি আর ঠান্ডায় থরথরে কাঁপা তোমার ঠোঁট।
-অন্তি নৌকার মতো ব্রু গুলো উচু করে আরশানকে প্রশ্নছুড়ে বসলো “আচ্ছা শান জারুল ফুল কোনটা?দেখতে কেমন?”
অন্তিকে আর জারুল ফুল দেখানো হয় নি। নীল পেড়ে সাদা শাড়িও কিনে দেওয়া হয়নি। এই ইচ্ছা গুলো আরশানের স্বপ্ন হয়েই থেকে গেলো। অন্তির সাথে আর কোনো বর্ষায় দেখা হয় নি। তার আগেই অন্তি আবারও বাসায় ধরা পরে গেলো। আর এবার তো বাসার বাইরে যাওয়াও বারন। আরশানকে অন্তির বাবা মা দেখেনি তবে প্রাইভেট থেকে আনতে যেয়ে মেয়েকে পেলেন না মিসেস হাসনাত।
সেদিন অন্তি ঠিক সময়েই ঘরে ফিরলো। কোনোকিছু বুঝতে আর যেনো বাকি রইলো না।
একে একে অন্তির এস এস সি শুরু হলো। পড়ালেখার চাপ বেড়েছে। তখন আরশানের সাথে কথা হয় ছোট্ট মুঠোফোনে। খুব লুকিয়ে, সবাই ঘুমিয়ে গেলে ওয়াস রুমে ঢুকে ফিসফিসিয়ে দুচার কথা।
পরীক্ষা গুলো ভালো খারাপ মিলিয়েই হলো। অন্তির বাবা মা সহজ সমাধান বের করলেন, মেয়েকে এপথ থেকে ফেরাতে হলে শহর পাল্টাতে হবে। স্বপরিবারে চট্টগ্রাম শিফট হয়ে গেলেন। এতে অন্তির বাবা সহজে ব্যবসাও দেখতে পারবে আর মেয়েকেও।
ঢাকা ছেড়ে আসার দিন আরশান অন্তিদের বাসা ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে ছিলো। সেই কয়েক পলকের দেখা এখনো যেনো অন্তির চোখে দূর্স্বপ্ন হয়ে আসে।
খুব বাজে ভাবে অন্তির ঘুমটা ভাংলো। প্রিয়া অন্তিকে ডেকে তুললো। চোখ খোলার পর প্রিয়া চেহারাটা দেখে অন্তি কিছুটা ঘাবরে যেয়ে বললো
-কি হয়েছে? তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?
-আপু কাল রাতে যে লোকটি পায়চারি করছিলো উনি বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। রাস্তার ঠিক ওই ল্যাম্প পোষ্ট টার নিচেই পরে আছেন।
অন্তি চশমাটা কোনো ভাবে চোখে দিয়ে উরনা পেচিয়ে দৌড়ে বারান্দায় এসে দাড়ালো।
নিচে অনেক মানুষের ভীর। লাশের চারপাশে পুলিশ বেস্টনি।
অন্তির হাত পা কেমন জানি কাঁপছে। কাল রাতেও লোকটাকে জীবন্ত চলাফেরা করতে দেখলো। আর এখন নীথর দেহটা পরে আছে।
ফ্রেশ হয়ে বের হতেই পুনমকে দেখলো বিছানায় বসে বসে কাঁদছে।
অন্তি পুনমের পাশে বসে বললো
-কাঁদছো কেনো আপু??
-এমন দিনে এমন একটা অলুক্ষনে বিষয়।
-তুমি এসব বিশ্বাস করো। লোকটা মারা গেছেন। তার আয়ু ছিলো এতোদিন।
প্রিয়া কথা টেনে বললো
-এভাবে ভালোবেসে পাগলের মতো রোজ ছটফট করার থেকে মারা গেছেন এই ভালো।
পুনম যেনো প্রিয়ার কথায় খুব চটে গেলো। এ কেমন কথা একটা মানুষ মারা গেছেন।
কিন্তু প্রিয়ার কথাটা অন্তির বুক চিড়ে অনেক গভীরে পৌছালো।
মনের মাঝে একা একাই শব্দ যুদ্ধ শুরু হলো,আরশানও কি এভাবে ছটফট করেছিলো সেদিন?
মনে মনেই অন্তি বললো “আরশান আমায় ক্ষমা করে দিও”। অন্তির ভেজা চোখ টা মুছে নিলো।
বিকালের দিকে পরিস্থিতি কিছুটা পাল্টালো। সন্ধ্যায় গায়ে হলুূদ। এর মাঝে হলুদের স্টেজ করা হলো। রংবেরং এর কাগজ আর কাপর দিয়ে পুনমদের বাসার সামনের মাঠ টুকু সাজানো হলো।
সন্ধ্যায় মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। পুনম আর অভির গায়ে হলুদ এক সাথেই তবে দুইজনের স্টেজ দুটো।মাঝখানে নেটের পর্দা টানা।
গায়ে হলুদেও যে এতো মানুষ আসতে পারে অন্তির জানা ছিলো না। কনে পক্ষে যতো না মানুষ বর পক্ষের মানুষে গিজগিজ করছে।
বরপক্ষের কিছু মেয়ে এসে পুনমকে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে গেলো।
ল
এক মেয়ে তো অতিরিক্ত নেকামি করে বললো,
-ওফ আই লাভ দিজ প্রোগ্রাম। ব্রাইডাল শাওয়ার ইজ মাই ফেভরেট পার্ট অফ এনি ওয়েডিং।
কথাটা শুনেই প্রিয়া ফিক করে হেসে দিয়ে মুখ বাকিয়ে বললো
-আই লাভ টু সি দেট টাইপ অফ মেকআপ লাইক আ আ, আচ্ছা অন্তি আপু পেত্নির ইংরেজি কি?
-আহ প্রিয়া কি হচ্ছে, শুস, একদম চুপ।
-বুঝেছি তুমিও পেত্নির ইংরেজি জানো না।
ছেলেকে হলুদ দিতে এসে প্রিয়া, উরশী আর পুনমের কিছু বন্ধু বান্ধবি বরের স্টেজে বসলেও অন্তি একটু সাইড হয়ে দূরেই দাড়িয়ে দেখছিলো সবটা। লচোখ দুটো কিছু একটা খুঁজছে।
অস্ফুট বেলি ফুলের একটা মালা অন্তির বরাবর কেউ একজন এগিয়ে দিতেই অন্তি তাকালো সেদিকে
-শান(খুব নিচু গলায় অন্তি বললো)
-ভয় পেয়ে গেলে? আমায় খুজছিলে?
-না (মাথা নিচু করে অন্তি জবাব দিলো)
-কিন্তু আমায় যে বললো তুমি আমায় খুঁজছিলে
-কে?
-ইউর আইস।
অন্তি আর কোনো জবাব দিলো না। আরশান এখনো কতো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছে। আচ্ছা আরশান কি অন্তি কে ক্ষমা করে দিয়েছে নাকি অন্য কিছু। অন্তি যেনো আর ভাবতে পারছে না। তার আগেই চোখ পানিতে ভরে গেলো।
আরশান আবার নিরবতা ভেঙ্গে বললো,
-খোপায় ফুলটা পরো পরিপূর্ণ লাগবে। (হাতে রাখা বেলির মালাটা এগিয়ে ধরলো আরশান)
-লাগবে না।
-জানি তো। মানুষটাকেই আর লাগে না। তার দেয়া ফুল, অতি নগন্য কিছু একটা।
আরশান ছুড়ে ফেলেদিলো মালাটা।
অন্তি এবারও কোনো জবাব দিলো না।
আরশান রাগী গলায় বললো,
-এই মেয়ে তুমি কি এখনো জামা কাপর গুছিয়ে রাখতে শিখো নি? শাড়ি সামলাতে জানোনা পড়েছো কেনো?
-মানে?
-কোমর দেখা যাচ্ছে। আর তুমি মানে জিঙ্গেস করছো?
-অন্তি আঁচল টেনে কোমর ঢেকে নিলে। এমন একভাজের শাড়ি অন্তি কখনো পড়ে নি তাই ঠিক ভাবে সামলে উঠতে পারে নি। কিন্তু আরশানের ধমকে একদম চোখ থেকে পানি ঝরে গেলো অন্তির।
প্রিয়া অন্তিকে পাশে না পেয়ে আশেপাশে তাকাতেই কিছু দূরে দেখলো কাল যে ছেলেটা গান করেছিলো তার সাথে দাড়িয়ে কথা বলছে
প্রিয়া উঠে এসে অন্তির পাশে দাড়াতেই খেয়াল করলো অন্তি কান্না করছে।
প্রিয়া অবাক হয়ে বললো
-আপু এনি প্রবলেম?
-না। আমি একটু বাসায় যাবো।
-কিন্তু,
-আমার ভালো লাগছে না।
প্রিয়া আর কথা বাড়ালো না
অন্তি একবার আরশানের দিকে তাকিয়েই প্রিয়ার সাথে চলে গেলো।
চলবে…
চলবে……