তুমি অতঃপর তুমিই পর্ব ১৭+১৮

তুমি অতঃপর তুমিই
পর্ব-১৭
#Taniya_Sheikh

আজকে দুপুরের খাবারে নিমন্ত্রণ করা হয়েছে ইরার বর আরশাদ শিকদারকে। আরশাদ পেশায় একজন ব্যবসায়ী।আরশাদের বাবা আনিস শিকদারও ব্যবসায়ী। তাদের নিজস্ব কাপড়ের ব্যবসা। তবে আরশাদ ফ্যামিলি বিজনেস বাদ দিয়ে নিজের পছন্দের ভিন্ন বিজনেস গড়েছে। আরশাদের বিয়ে নিয়ে প্রথমে বাড়ির লোকের আপত্তি থাকলেও এখন তারা খুশি। এই খুশি হওয়ার অন্যতম কারণ ইরা। মেয়েটিকে দেখে প্রথমে অবাকই হয়েছিলেন আনিস শিকদার। তার ছেলের সুবুদ্ধি হয়েছে এ যেন চোখে না দেখলে তিনি বিশ্বাসই করতেন না। তাদের মনে আশা জেগেছে নতুন করে। তাদের বিশ্বাস এই মেয়েই আরশাদের বেপরোয়া জীবনে লাগাম টানবে। মানুষের আশা,স্বপ্ন মরিচিকা হয়ে ধরা দেয় মাঝে মাঝে। আনিস শিকদার ছেলেকে বুঝিয়েছে। বলেছেন,

” জীবন বদলানোর এই সুযোগ পায়ে ঠেলো না বাবা। এই মেয়ে লক্ষি। এর মনে কখনো কষ্ট দিও না। এই তোমার ভবিষ্যত সুন্দর করতে সাহায্য করবে।”

আরশাদ অদ্ভুত ভাবে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেঁসে বলেছিল,

” জি আব্বু।” আনিস শিকদার আল্লাহর কাছে শোকরিয়া করলেন। সেদিন রাতে বহুবছর পর ভালো ঘুমিয়েছিলেন তিনি।

আরশাদকে আকাশী রঙের শার্ট, কালো প্যান্টের ফর্মাল সাজে চমৎকার লাগছিল। এখনকার তাকে দেখে আনিস শিকদার কেন! যে কারোই ভ্রম হবে। বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের আড়ালে কতোটা কপটতা ধারণ করা যায়, কেবল আরশাদই জানে। গিরগিটি দেখেছেন কখনো আপনারা? এ হচ্ছে সেই গিরগিটি।

ইমা নিচতলায় এসে বসার ঘরে আরশাদকে দেখল। একমনে মোবাইল টিপছে। ইমা এদিক সেদিক চেয়ে মামিদের কাউকে না দেখে বসার ঘরে পা রাখল। সাবধানে ধীর পায়ে গিয়ে দাঁড়াল আরশাদের সামনে। আরশাদ মোবাইলে এতোটাই মগ্ন ছিল যে, ইমার উপস্থিতি সে টের পায় নি। ইমা গলা ঝাড়তেই ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে। মোবাইলটা দ্রুত পকেটে পুরে দাঁড়িয়ে যায়। ইমার কপাল কুঁচকে গেল আরশাদের ভয় পাওয়া দেখে। আরশাদ ইমার মুখের ভাব বুঝে নিজেকে সামলে বোকার মতো হাসল। বললো,

” আসসালামু আলাইকুম। আপনি নিশ্চয়ই ইমা আপু। আমি আরশাদ।”

ইমা কঠিন স্বরে বললো,

” ওয়ালাইকুম আসসালাম। বসেন।”

আরশাদ বসল। অনবরত ঢোক গিলছে, হাত কাঁপছে তার। সেটা লুকাতেও সফল একপ্রকার সে। ইমা টিস্যু বক্স টা সামনের সেন্টার টেবিলের উপর শব্দ করে রেখে বললো,

” আরশাদ সাহেব, আমি বাঘ, ভাল্লুক নয় যে এমন ভয় পাওয়া লাগবে। নাকি মনে চোরা বিড়াল নিয়ে ঘোরেন? ”

আরশাদ সোজাসুজি ইমার দিকে তাকাচ্ছিল না। ইমার কটাক্ষে নড়চড়ে বসল। মৃদু শব্দে গলা ঝেড়ে বললো,

” সরি আমি বুঝি নি আপনার কথার অর্থ?”

” না বুঝলে সমস্যা নাই মাগার বেশি বুঝলে সমস্যা প্রকট। আশা করব বোধবুদ্ধি বুঝে শুনে খাটাবেন।”

” আপনি কী আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন? ”

” ভয়! আপনাকে ভয় কেন দেখাব? আমার ইরার বর আপনি। ভয় আমি দেখাই না জনাব। তবে মনে চোর থাকলে মানুষ এমনিই ভয় পায়।”

” মানে!”

ইমার মুখের কাঠিন্য সাথে সাথে হাসির ঢেউয়ে মুছে যায়। শব্দ করে হেঁসে দু’টো টিস্যু এগিয়ে দিয়ে বলে,

” মানে মোবাইলে মনোযোগ কম দিয়ে আমার বোনের দিকে মনোযোগ বাড়ান। নতুন নতুন বিয়ে অথচ মোবাইল নিয়ে পড়ে আছেন। খুবই খারাপ।”

আরশাদ টিস্যু হাতে নিয়ে ঢোক গিলে ফের হাসল,

” ওহ! আমি ভেবেছি।”

” কী ভেবেছিলেন?”

” না! তেমন কিছুই না। আপনি বেশ মজার। পরিচিত হয়ে ভালো লাগল। বসুন না।”

” না থাক। আপনি নাস্তা খান আমি দেখি ইরা কী করছে?”

আরেকবার হাসি বিনিময় করে ইমা বেরিয়ে যায়। আরশাদ লম্বা করে শ্বাস ছেড়ে আনমনে হাসে। হাতের টিস্যু দিয়ে কপাল মুছতে মুছতে তাকিয়ে রইল ইমার যাওয়ার পথে।

বিকেলে খাওয়া দাওয়া শেষে আরশাদের অনুরোধে ইরা লং ড্রাইভে যেতে রাজি হয়। ওদের আকদ হয়েছে একদিনও হয়নি এরমধ্যেই আরশাদকে মনে ধরেছে ইরার। বিয়ে নামক সম্পর্ক বুঝি একেই বলে। অচেনা,অজানা মানুষও একরাতের ব্যবধানে কতো জনমের আপন হয়ে যায়। আরশাদ বেশ খোশমেজাজে,রোমান্টিক। গতকাল রাতে তো ঘুমাতেই দেয়নি ওকে। সারারাত মোবাইলে গল্প করে কাটিয়েছে দু’জন। জীবনটা স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর মনে হচ্ছে এখন ইরার। মনে হচ্ছে দারুন ভালোলাগার একটা ঘোরের মধ্যে আছে সে। ইরার মনে বিয়ে নিয়ে যত কষ্ট, অভিমান,অভিযোগ ছিল। সব দূর হয়ে গেছে আরশাদের সান্নিধ্য পেয়ে। ড্রাইভে যাওয়ার আগে বাড়ির সবার সাথে হেঁসে কথা বলেছে ও। গাড়িতে ওঠার আগে ইমাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে বলেছে,

” অনেক গল্প করব আজ তোমার সাথে। যতরাতই হোক ঘুমাবা না কিন্তু।”

ইমা বোনের কপালে চুমু দিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলেছিল। যাওয়ার সময় কড়িডোরে দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিয়েছিল ইরাকে। ইমার মনটা আজ খুব ভালো। ইরাকে খুশি দেখে মনের সব শঙ্কা,বেদনা দূর হয়েছে। হালকা লাগছে ভেতরে ভেতরে। ইরার যাওয়ার মিনিট পাঁচেক পর শানের কল আসে। অবশেষে শান ফিরছে আগামীকাল। মোবারকের স্ত্রী এখন অনেকটাই সুস্থ। ইমার বুক দুরুদুরু করছে। শান কুমিল্লা থেকে সোজা এখানেই আসবে। আর তারপর কী হবে! ইমা ভাবতে পারছে না। এসব ভাবনা চিন্তা থেকে নিস্কৃতি পেতে সাজ্জাদ কে নিয়ে বাড়ির পাশের মাঠে চলে আসে। অনেকদিন বাদে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্রিকেট খেলে পাড়ার ছেলেপেলের সাথে। সন্ধ্যার পর সাজ্জাদকে নিয়ে মাঠের পাশের খালপাড়ে বসে। সন্ধ্যার পর খালপাড়ের পরিবেশ মনোরম হয়ে ওঠে। বেশিভাগ বড়রাই নামাজ শেষে এখানকার খোলা বাতাসে বসে গল্পে মেতে ওঠে। মাঠের পাশের হেডলাইটের আলোও কিছুটা এখানে পড়ে। খালপাড়ের এককোনে অনেক কচুরিপানা জমেছে। ইমারা বসেছে উল্টো দিকে। এদিকটার পানি টলমলে। উপরে যতোই টলমলে দেখাক এই পানিতে রয়েছে হাজার হাজার জীবাণু। পুরো এলাকার ময়লা এর পুব পাশে ফেলা হয়। ওদিকটাই কেউ তেমন যায় না। এদিকের পরিষ্কার দিকটার দেয়ালের উপরই সবাই বসে আড্ডা দেয়। আর মধ্যে রাতে চলে মদ জুয়ার আসর। অদূরে বাদাম ভাঁজা হচ্ছে ভ্যানের উপর, ঝালমুড়িওয়ালা বসেছে। যারা আড্ডা দেয় তাদেরই বেশিরভাগ ক্রেতা।

ইমা সাজ্জাদকে দিয়ে বাদাম, ঝালমুড়ি এনে খেতে খেত গল্প করছে। গল্প করতে করতে সাজ্জাদ মুখ ফসকে বলে দেয় শান এবং তার গোপন কথা। সেদিন শানের সাথে সাজ্জাদ ইমাকে নিয়েই কথা বলছিল। শানের নিষেধ থাকায় ইমাকে সেদিন বলতে পারেনি। সাজ্জাদই শানকে বলেছে ইসরাত জাহান ইমার সার্টিফিকেটের নাম। বেচারা ইমার সামনে এসব বেফাঁস করে দেওয়ার পর মুখ কাচুমাচু করে ফেলে। সাজ্জাদের ওমন ভীতু চেহারা দেখে হাসতে লাগল ইমা। সাজ্জাদের গলা একহাতে পেঁচিয়ে ধরে বললো,

” তোকে তো অস্কার না হয় নোবেল দেওয়া উচিত। ইশ! আজ যদি আলফ্রেড নোবেল হতে পারতাম। আচ্ছা যা, আলফ্রেড নোবেল না হয়েছি তো কী? ইমা তো! তোকে একটা নতুন সাইকেল কিনে দেব।”

সাজ্জাদ চোখ কপালে তুলে বললো,

” সাইকেল!”

” হ্যাঁ। কাজই করেছিস এমন যে আরও বড় কিছু দিতে ইচ্ছা করছে তোকে।”

সাজ্জাদ ভাবতে লাগল কী এমন মহৎ কাজ করেছে সে। ভেবে ভেবেও কূলকিনারা পেল না। তবে শানকে ইমার নাম বলাতেই যে বিশেষ কিছু হয়েছে, সেটা বুঝে ইমার দিকে ভ্রুকুটি করে বললো,

” তুমি শান ভাইকে লাইক করো?”

ইমার ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। সাজ্জাদের মুখ চেপে এদিক সেদিক তাকিয়ে বললো,

” হুশ!”

সাজ্জাদের চোখ দু’টো চকচক করে ওঠে। কোনোমতে ইমার হাতটা মুখ থেকে সরিয়ে দৌড়ে দূরে গিয়ে বললো,

” হে!হে! শুধু সাইকেলে হবে না। আরও কিছু নেব আমি।”

” তবে রে বজ্জাত। দাঁড়া তুই।”

ওরা দৌড়ে মাঠে চলে এলো। ক্লান্ত হয়ে ইমা হাঁটু ভর দিয়ে নুয়ে থামলেও সাজ্জাদ দৌড়ে মাঠের বাইরে যেতে যেতে বললো,

” ইমাপু, আমি যা চাইব না দিলে কিন্তু সব ভাইরাল।”

ইমা পা গুটিয়ে বালুর মধ্যে বসে লাজুক হাসি হাসতে থাকে। সে জানে সাজ্জাদ বলবে না। তবুও ছোট তো! মুখ ফসকে যদি বের হয়? হোক! কালই তো সবাই জানবে। কী জানবে! জানবে ইমার শানের বউ! ইমা লজ্জা রাঙা হয়ে ওড়না কামড়ে উঠে দাঁড়ায়।

রাত একটা হয়ে গেলেও ইরা ফিরল না। ইমার ছোট মামা,বড় মামা কল করে বন্ধ পাচ্ছে আরশাদ, ইরার নাম্বার। মামাদের সাথে ইমাও চিন্তিত। ইরার মা,চাচি ওদের এমন বার বার কল করতে দেখে ভৎসর্না করল। নতুন বর বউকে এমন বিরক্ত করাটা পছন্দ হলো না তাদের। যদিও মনে মনে তারাও চিন্তিত। ইমার কথামত ইমার বড় মামা আরশাদের বাবাকেও কল করে। দু একবার রিং হতে তিনি রিসিভ করেন। সব শুনে অভয় দেন ইমাদের। কিন্তু কেন যেন ভীত ইমার মন। শানকে জানাতেই শান ইমাকে সান্ত্বনা দিয়ে খোঁজ খবর শুরু করে।

মধ্যরাতে ইমার মামার মোবাইলে আননোন নাম্বার থেকে কল আসে। জানানো হয় যত তাড়াতাড়ি তারা যেন মিটফোর্ড হসপিটালে পৌঁছে যায়। কেন তার কারন তাদের বলা হলো না। পুরো বাড়িতে হুলস্থূল লেগে গেল। ইমা মামাদের সাথে গেল হসপিটালে। সেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল ভয়ংকর হৃদয়বিদারক এক দৃশ্য। রিশিপসনিস্টের ইশারায় একজন ওয়ার্ড বয় এসে ওদের মর্গে নিয়ে এলো। ইমার হাত পা কাঁপছিল মর্গ দেখে। ছোট মামার মুখের দিকে তাকাতে পারছিল না কিছুতেই। কেন যেন ভয় ইরাকে ঘিরেই ওদের। সেই ভয় সত্যি হলো ইরার লাশের উপর থেকে সাদা কাপড় সরাতেই। ইমার মনে হলো পায়ে কেউ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। একচুল নড়তে পারল না ও। আশেপাশে কী হলো কিছুই বুঝতে পারল না সেই মুহুর্তে। ইরা যখন বাসা থেকে বের হচ্ছিল, তখন নীল শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর সেঁজেছিল। মুখে ছিল চিরচেনা মিষ্টি হাসি। এখন তার লেশমাত্র নেই। রক্তে সারা শরীর ভেজা। চুলগুলো উশকোখুষকো। ইমার ছোট মামা বাকরুদ্ধ। তাকে সামলানোর মতো অবস্থা ইমা কিংবা ইমার বড় মামার রইল না। তবুও ইমার বড় মামা নিজেকে সামলে চিৎকার করে ওয়ার্ড বয়কে জিজ্ঞেস করলেন,

” কেমনে হলো এই সর্বনাশ। আমার পুতুল মা’টা এমন করে শেষ হয়ে গেল কেমনে?”

ওয়ার্ড বয় শান্ত গলায় জবাব দিল,

” রোড এক্সিডেন্ট। সন্ধ্যায় যখন উনাদের নিয়ে আসা হয়েছিল তখনই মেয়েটা মারা গেছে। তার স্বামী আইসিইউতে আছে।”
তুমি অতঃপর তুমিই
পর্ব-১৮
#Taniya_Sheikh

ইরার মৃত্যুর তিনদিন অতিবাহিত হলো। ইমার ছোটো মামা-মামি কন্যার মৃত্যু শোকে পাথর। ইমা সব ভুলে মামা-মামির সেবা করছে।বড়ো মামি, বড়ো মামাও সারাক্ষণ বিষন্ন মুখে থাকে। আরশাদকে আইসিইউ থেকে বেডে শিফট করা হয়েছে। জ্ঞান ফিরলেও নির্বাক চেয়ে থাকে শুধু। ইমা মাকে নিয়ে গতকাল দেখা করে এসেছে ওদের সাথে। আরশাদের বাবা ওদের দেখে হাউমাউ করে কেঁদেছে। ইমা তাকে সান্ত্বনার কোনো বানীই শোনাতে পারি নি। চুপচাপ চলে এসেছে সেখান থেকে। ইমার মায়ের শরীরও তেমন ভালো যাচ্ছে না। আরশাদকে দেখে আসার পর থেকেই তার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করছে ইমা। সবসময়ই সাথেই ছিল। না সবসময়ই নয়, পাঁচ মিনিট মাকে একা ওয়েটিং রুমে বসিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গিয়েছিল সে। তারপর থেকেই একেবারে চুপ করে আছেন ওর মা৷ জিজ্ঞেস করলেও জবাব দেননি। এতো চিন্তার মধ্যে মা’কে আর খেয়াল করে নি ইমা। ফিরে এসে কতো কাজ সে করেছে। রাতেও কাজ করেছে। কাজ না থাকলেও এটা,ওটা করে নির্ঘুম রাত পার করেছে ইমা। ঘুমালেই ইরা রক্তাক্ত শরীরে চিৎকার করে ওকে বলে,

” তুমি সবার জন্য সব পারো, কেবল আমার বেলায় তুমি চুপ থাকো। বলেছিলাম বিয়ে দিও না। তোমরা শুনলে না। দেখো আমাকে। দেখেছ? খুশি হয়েছ না, বলো? এই রক্তলাল শাড়িতে সুন্দর লাগছে না আমাকে, বলো?” কথা শেষ করেই কী ভয়ানক চিৎকার কানে বাজত ইমার। নিমেষেই ঘুমের ঘোর কেটে যেত। রাতের ভয়,ডর উপেক্ষা করে ছুটে যেত ইরার কবরের পাশে। খুব কাঁদে তখন ইমা। কেউ দেখে না ওর কান্না। সবার চোখে পাষান মূর্তি ও। এতো মানুষ যখন কেঁদে ভাসিয়েছে, ইমা তখন অনুভূতিশূন্যের মতো এটা, ওটা করছে। এমন করলে লোকে তো বলবেই পাষান! ইমা কাউকে বলতে পারে না নিজের কষ্টের কথা। কতোটা বুকচাপা ব্যথা তার বোঝাতে পারে না কাউকে।

মামিকে কিছু খাইয়ে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় ইমা। মামি ঘুমিয়ে যেতেই বাইরের বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়েছে। পুরো বাড়িটা খাঁ খাঁ করছে কী এক শূন্যতায়। আগের মতো নেই কোনো হুল্লোড়, চেচাঁমেচি, হাসির শব্দ। ইমা এই তিনদিনে আয়নার সামনে যায় নি। বিবর্ণ মুখ,উসকোখুসকো চুল, আর নিস্প্রভ চোখের চাহনী। ইমা ধীর পায়ে রুমে আসে। সামনে ড্রেসিং টেবিলটার সামনে দাঁড়িয়ে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়। শুকনো ঠোঁট কিছুটা ফেটে ফেটে গেছে। একটু ফাঁক করতে গেলেই ব্যথা জেগে ওঠে। তবুও সে ব্যথা মনের ব্যথার কাছে কিছুই না। দর্পণে নিজের প্রতিচ্ছবির উপর হাত রেখে শীতল গলায় বলে,

” তুমি আসছ না কেন শান? আমি যে ভেঙেচুরে শেষ হয়ে যাচ্ছি। প্লীজ তাড়াতাড়ি আসো।”

সিঙ্গাপুরের একটি হসপিটালে অচেতন মঈন খানের হাত ধরে বসে আছে শান। সেই রাতেই ইমার্জেন্সি তাকে ঢাকা ফিরতে হয়েছিল। বড়ো বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে হঠাৎ। ল্যাব এইডে রাখা হয়েছিল একরাত। সেখান থেকে পরদিন সিঙ্গাপুর। বড়ো বাবার অসুস্থতায় পুরো পরিবার ভেঙে পড়ে। শানের কোনো হুশ ছিল না আশেপাশের চিন্তা করার। ইমরোজকে কল করে ইরার খোঁজ করার কথা সে আগেই বলেছিল। কিন্তু তারপর আর কোনো খোঁজ শান নিতে পারে নি। পরিস্থিতিই তাকে ইমার খোঁজ নেওয়ার অবসর দেয়নি। একদিকে মঈন খানের অসুস্থতা অন্যদিকে শায়লা খানের অসহায়ত্বের কান্না। শায়লা খান সেই প্রথম শানের সাথে ভালো ব্যবহার করেছে। পুরো দুইদিন শানের হাত ছাড়ে নি। সিঙ্গাপুর সাথে করে নিয়ে এসেছে। শান এতোকিছুর মাঝেও চেষ্টা করেছিল ইমার খোঁজ নেওয়ার,কিন্তু সেখানে আরেক বাধা হয়ে দাঁড়াল মোবাইল। শানের মোবাইল হঠাৎ করে নিখোঁজ বলতে গেলে চুরিই হয়েছে। ইমার মোবাইল নাম্বার মুখস্থ রাখেনি সে। অন্যদিকে ইমরোজের টাও না। সুতরাং ইচ্ছা থাকলেও সে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না এমুহূর্তে। তিলে তিলে কষ্ট পাচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত ইমার বিরহে।

” শান, বাবা,কোথায় তুই?”

শান মাথা তুলে দরজার দিকে তাকাল। শায়লা খানের চোখে মুখে আতঙ্ক দেখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শান। এই তিনদিন আগেও শান ভাবে নি, শায়লা খান কোনোদিন তাকে মা বলার সুযোগ দেবে, অথচ আজ শান তাকে মা বলতে পারে। শান একটু নজরের আড়াল হলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে শায়লা খান। এই যেমন এখন পড়েছে। মিনিটের ব্যবধানে ছুটে এসেছে শানের খোঁজে। উঠে দাঁড়ায় শান। বড়ো মা’কে ধরে আবার ফিরে আসে পাশের কেবিনে। বেডে শুইয়ে দিতেই শানের হাত ধরে শায়লা বলে,

” আমাকে ছেড়ে কোথাও যাস না বাবা।”

” কোথাও যাচ্ছি না। আপনি ঘুমান।”

পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই চোখ বোজে শায়লা খান। মা-বাবার এই দুঃসময়েও মাহিব দূরে। একবার মাত্র এসেছিল হাসপাতালে। একনজর দেখে, কিছুক্ষণ মায়ের সাথে ঝগড়া করে চলে গেছে। তারপর থেকেই কেমন ভয়ে ভয়ে থাকে শায়লা খান। শানকে বার বার বলে, মাহিবকে সে ত্যাজ্য করবে। এমন কুসন্তান পেটে ধরে সে পাপ করেছে। শান যেন তাকে একা ফেলে না যায়। এই কথা না বললেও শান কোনোদিন এদের এই অবস্থায় ছেড়ে যেত না। জন্ম না দিক তবুও এদেরকেই পিতা -মাতা, এদের পরিবারকে পরিবার ভেবেছে। এদের এই চরম মুহূর্তে মাহিবের মতো সব ছেড়ে, গায়ে বাতাস লাগিয়ে নিজের স্বার্থের কথা ভাবত না কোনোদিন। পরের জন্যে নিজেকে বিলিয়ে ভেতরে ভেতরে এক অজানা ভয়ে দিন পার করতে লাগল শান। মন প্রাণ ছুটে যাচ্ছে ইমাকে একনজর দেখবে, ও কেমন আছে জানবে বলে। কিন্তু সে আশা কেবলই আশা হয়ে বুকে লুকিয়ে আছে। এখানে কেউ এমন অবস্থায় নেই, যাকে সে মনের কথা বলে হালকা হবে। সবার কষ্ট দূর করতে গিয়ে নিজের কষ্টে জ্বলছে সে। বড়ো মায়ের বিছানায় মাথা রাখতেই ক্লান্ত শরীরে ঘুম নেমে এলো শানের। ঘুমের রাজ্যে হাস্যোজ্জ্বল এক চঞ্চল তরুনী তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। একটু একটু তাকে ছোঁবে বলে এগোচ্ছে শান। চোখের সামনে ধোঁয়াশা, কুয়াশা হয়ে গেল হঠাৎ।

” ইমাপু, তোমাকে ফুপি ডাকছে।”

সাজ্জাদ কথাটা বলেই ছুটে চলে গেল। আজকাল সামনে আসে না সাজ্জাদ। কারো সাথে তেমন কথাও বলে না। সুযোগ পেলেই ইরার কবরের পাশের গাছটায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদে। ইমা রুম ছেড়ে বাইরে এসে দাঁড়ায়। সর্বদক্ষিণের কৃষ্ণচূড়া গাছটা খুব পছন্দের ছিল ইরার। মন খারাপ হলেই সেখানে গিয়ে বসে থাকত। আর এখন চিরনিদ্রায় শুয়ে আছে। চোখের কোনের জল টুকু মুছে নিচে নেমে আসে ইমা। মায়ের রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে। আগুন জ্বলা দুটি চোখ ইমার দিকে স্থির। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ইমা। এগিয়ে মায়ের দিকে যেতেই, ওর মা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই এলোপাথাড়ি চড় নেমে আসে ওর উপর। ইমা স্তম্ভিত। বিভা মারতে মারতে একসময় ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। হাতের মধ্যে তখনও ইমার ছেঁড়া চুল জড়ানো। সামনে উপুড় হয়ে পড়ে আছে ইমা। অসাড় শরীরে অশ্রুসিক্ত চোখে চেয়ে আছে মায়ের দিকে। কী দোষে শাস্তি পেল তাই যেন ও দু’চোখ জানতে চাইছে। বিভা তারপর যা বললো, তা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না ইমার এই দূর্বল মন। সর্বশক্তি দিয়ে হেঁচড়ে শরীরটাকে মায়ের পায়ের কাছে এনে দু’হাত জোড় করে কাকুতি করে। বিভার কঠিন চাহনী সে কাকুতি বিন্দুমাত্র গ্রাহ্য করল না। গতকাল ঐ মেয়ে আবার এসেছিল তার সামনে। রাক্ষুসী! হ্যাঁ রাক্ষুসী ফিরে এসেছে বিভার দুয়ারে। তার স্বামী-পুত্র খেয়ে এবার এই একমাত্র অবলম্বনটাকে শেষ করবে বলে পিছু নিয়েছে। বিভা কোনোদিন এমন হতে দেবে না। সে অনেকদূরে চলে যাবে। তার মেয়েকে এই মৃত্যুপুরীর ছায়া থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে। বিভা কপাল চাপড়ে ইমার মুখে দিকে ঝুঁকে বলে,

” হতভাগী, দুনিয়াতে এতো মানুষ থাকতে, তুই ঐ শানকেই কেন আপন করতে গেলি? ও যে তোর জন্য মরণ ফাঁদ। আমার ইমতিয়াজকে খেয়েছে ওরা। তোরেও মেরে ফেলবে। আমার ইরা, তুই জানিস ইরা কেমনে মরছে? জানিস না। আমি জানি। ঐ পিশাচী আমারে বলছে। আমার ইরা! কী কষ্টটাই না দিয়ে মারছে ওরে। তোরেও মারব বলে হুমকি দিয়ে গেছে। আমি তোরে মরতে দেব না। আমার তুই ই তো আছিস। তোর কিছু হইলে আমি কেমনে বাচুম। আমরা এই খানে থাকব না। অনেকদূর চলে যাব। যাবি না বল?”

ইমা মাথা নাড়ায় ও যাবে না। বিভা ঠোঁট চেপে কাঁদে। ইমার অসাড় দেহ বুকে জড়িয়ে চাপাস্বরে বলে,

” আমি তোরে মরতে দেব না রে মা। ওরা তোকে মেরে ফেলবে বিশ্বাস কর। আমার কথায় রাজি হ মা। রাজি হ। নয়ত,,”
————————————————————————————————-
ইমা চোখের সামনে ঝাপসা দেখে। ধীরে ধীরে দু’চোখ বন্ধ হয়ে আসে ওর।

একসপ্তাহ পর দেশে ফেরে শান। মঈন খানের অবস্থা আগের থেকে ভালো হওয়ায় শায়লা খানও স্বাভাবিক হয়েছেন৷ শান তখনই ইমা সম্পর্কে সবকথা খুলে বলে তাকে। শায়লা খান অনুশোচনা করে সব শুনে। শানকে দ্রুত দেশে ফেরার আদেশ করেন। নিজের হাতের বালাজোড়া দেন ইমাকে পুত্রবধূ স্বীকার করে। দেশে ফিরে ধুমধাম করে ইমাকে বরণ করার কথাও বলেন তিনি। শান দেশে ফিরেই ছুটে আসে ইমার মামার বাড়ি। হিসেবে কয়েকদিন! কিন্তু শানের কাছে মনে হচ্ছে একযুগ অতিবাহিত হয়ে গেছে সে ইমাকে দেখে নি। বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে গেট ঠেলে ভেতরে ঢোকে।

” শান,” দোতলার কড়িডোর থেকে চিৎকার করে ডাকে ইমা। দৌড়ে সিঁড়ি দিকে ছোটে। কী হাল হয়েছে ওর ইমার। শান দু’হাত মেলে দাঁড়িয়ে আছে। সিঁড়ি মাড়িয়ে নিচে আর আসে না ইমা। এতোক্ষণ লাগে নিচে আসতে! শান শঙ্কিত চোখে এগিয়ে যায়। এগিয়ে যেতে যেতে,

” স্যার, এসে পড়েছি।” ড্রাইভারের ডাকে চোখ মেলে তাকায় শান। এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল সে। গাড়ির ভাড়া চুকিয়ে নেমে দাঁড়াল ইমার মামার বাড়ির সামনে। ঠিক একটু আগে যেমন দেখেছিল। বুকটা দুরুদুরু করছে কেন যেন। নিজেকে সামলে গেট ঠেলে ভেতরে ঢুকল।

” আপনি?”

শানকে বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেখেই সাবিহা এগিয়ে এলো। শান সাবিহার কথার জবাব দেওয়ার আগে দোতলার দিকে তাকাল। কিছু নেই সেখানে। সাবিহা সামনে হেঁসে ভ্রু কুঁচকে বললো,

” কাকে খুঁজছেন? ইমাকে?”

শান চোখ সরিয়ে সাবিহার দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ বলার পূর্বেই সাবিহা মুখ ভেংচে বললো,

” কী আর বলব? মানুষের সামনে মানসম্মান আর রাখল মা -মেয়েতে। মাইয়্যা তো ছাইড়া দিয়া রাখত। কী জানি, কী করছে! কার লগে! মুখ দেখাইতে পারব না বইলা রাতের আন্ধারে পলাইছে। যাওনের আগে চিঠি ফালাই থুইয়া গেছে তাগো যেন না খুঁজি। তা আপনি কারে খোঁজেন? মা না মাইয়্যারে?”

শেষ কথাটা বিদ্রুপ করে বলে সাবিহা। শান অগ্নিদৃষ্টিতে তাকাতেই সাবিহার মুখ চুপসে যায়। দ্রুত সামনে থেকে কেটে পড়ে সে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না শান। হাত -পা কাঁপছে রীতিমত। ইমা নেই। কোথায় গেছে? কী হয়েছিল ওর সাথে? এসব আবার তার দুঃস্বপ্ন নয়ত। হ্যাঁ!সে এখনই হয়ত জেগে উঠবে। তারপর দেখবে তার সামনে হাসি মাখা মুখে দাঁড়িয়ে আছে ইমা। ঠোঁট ফুলিয়ে এগিয়ে এসে বলবে,

” কাইষ্টা কোথাকার! এতোদিন কোথায় ছিলেন? যান কথা নেই আপনার সাথে।”

“ইমাআআআআ,,,,”

সাবিহা সচকিতে ঘুরে তাকায় চিৎকার শুনে। পাগলের মতো শানকে উপরে উঠতে দেখে হায়ঃহায়ঃ করে লোক জড়ো করে। ইমার রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে শান। কিছুই নেই রুমে। শূন্য! এই চারদেয়ালে কোথাও কিছু নেই। তার ইমা নেই। হাঁটু ভেঙে বসে পড়ে শান। বাড়ির লোক উপরে আসার আগেই সেখানে সাজ্জাদ এসে উপস্থিত হয়। শানের সামনে মাথা নুয়ে দাঁড়ায়। শান ওর দিকে তাকাতেই একটা চিঠি ফেলে দৌড়ে দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যায়। চিঠিটা হাতে নিয়ে বসে আছে শান। দরজায় ভীর করেছে সাবিহা সহ আরও অনেকে। সবার চোখে কৌতূহল। শান ধীরে ধীরে চিঠির ভাঁজ খুলল।

” কী বলে সম্বোধন করব আপনাকে?
ধোঁকাবাজ নাকি বিশ্বাসঘাতক!
যাই বলি হয়ত কম হবে। কী চমৎকার অভিনয় করেছেন।ওয়াও! এই চিঠি যখন আপনার হাতে তখন আমি অন্যকারো, নয়ত না ফেরার দেশে। এমন যত্ন করে ধোঁকা দিয়েছেন যে, বাঁচার ইচ্ছেটাই মরে গেছে। জানি না এই চিঠি কোনোদিন পাবেন কী’না। কারন এখন তো আমার প্রয়োজন আপনার শেষ। যা হোক! কথা এবং সম্পর্ক এখানেই শেষ আমাদের। আর যেন দেখা না হয় ইহজনম অথবা পরজনমে।”

চিঠিটা হাতের মুঠে দুমড়ে মুচড়ে উঠে দাঁড়ায় শান। দরজার দিকে ঘুরতেই সবাই সরে যায়। এলোমেলো পায়ে,উদভ্রান্ত বেশে রাস্তায় নামে। আকাশে হঠাৎ বজ্রপাত। ঘনকালো মেঘে ছেয়ে গেছে আকাশ। সবাই ছুটোছুটি করছে। শান মাঝ রাস্তা ধরে হাঁটছে। বৃষ্টি নামল প্রবল বেগে। শান হেঁটে চলছে গন্তব্যহীন। জীবনের সব হিসেব তার এলোমেলো। স্বপ্নের পৃথিবী তার দুঃস্বপ্ন হয়ে গেছে। বিনা দোষে সে আজ বিশ্বাসঘাতক। বাঁচার মাধ্যম হারিয়ে অর্ধমৃত। টালমাটাল পায়ে চলতে না পেরে ফুটপাতের উপর ধপ করে বসে পড়ে শান। দু’হাতে মুখ ঢেকে বৃষ্টির তালে তাল মিলিয়ে নয়নজলে ভাসল তার পৃথিবী। হাত থেকে পড়ে যাওয়া চিঠিটা বৃষ্টির পানিতে ভাসতে ভাসতে দূরে হারিয়ে গেল। তার জীবনে “তুমি” বলে যে ছিল, সে হারিয়ে গেল। এখন তুমি বলতে কিছুই নেই তার, কেউ নেই। তুমি অতঃপর বিরাট এক শূন্যস্থান।

[ গল্পটার প্রথম খন্ড শেষ। দ্বিতীয় খন্ড সুযোগ- সুবিধা মতো ইনশাআল্লাহ ভবিষতে পেয়ে যাবেন। যতো প্রশ্ন রেখেছি এই খন্ডে সবটার জবাব পাবেন দ্বিতীয় খন্ডে। ভালো থাকবেন সবাই ]
চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here