#মন_পাড়ায়
#পর্ব_৫০
#নিলুফার_ইয়াসমিন_ঊষা
পঞ্চম চিঠিঃ
নূহা আমাকে হুমকি দিয়েছে যদি আমি প্রভার কাছে ফিরে যাই তাহলে কারও জন্য ভালো হবে না। আজ ওর ব্যবহারে আমি হতবাক। ওর এমন ব্যবহার আমি কখনো দেখি। আর আমি নিশ্চিত কেউ দেখে নি। আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গেছিলাম। ও পাগলদের মতো রাগে সব ভাঙচুর করে মুহূর্তে আবার কেঁদে দিলো। কেমন যেন করল। আমার ভয় লাগছিলো প্রচুর। ও বলছিলো হয়তো আমার ওর হতে হবে অথবা এই পৃথিবী থেকে যেতে হবে, নাহয় সবার আমাদের জীবন থেকে যেতে হবে। হয়তো তোর ও প্রভার সাথে বিশ্বাসঘাতকতার ফল পাচ্ছি আমি। আমি থাকি বা না থাকি আমি চাই তুই যেন চিঠিগুলো পড়িস। কারণ কী? কারণ আমি চাই তুই আর আমার এই মিথ্যে বন্ধুত্বের পট্টি না পড়ে থাকিস। তুই জানতে পারিস আমি কত জঘন্য! তোর বন্ধুত্ব ও প্রভার জীবন নিয়ে খেলা করেছি আমি তাই ফাতেমাকে বলে যাচ্ছি। বেঁচে থাকলে কখনো মাফ করিস না। তোর ক্ষমার যোগ্য না আমি। তোদের ক্ষমা না করাটাই আমার সবচেয়ে বড় শাস্তি। আর যদি চলে যাই তাহলে মাফ করে দিস। অনেক পাপ করেছি রে৷ পাপের পাল্লাটা ভারী তাই একটু কমিয়ে দিস। আর তোর আমানতটাকে ফিরিয়ে নিস। প্রভাকে সবসময় সুখে রাখিস৷ কারণ ও পৃথিবীর সব সুখের যোগ্য যা আমি ওকে কখনো দেই নি। আর আমার বাচ্চা দুইটাকে ভালো মানুষ করিস। তোর মতো মানুষ করিস, আমার মতো না। আমি জানি তুই ছাড়া অন্যকেউ ওদের খেয়াল রাখবে না। আমার পরিবারও অবহেলা করবে ওদের দুইজনকে। আর প্রভার বাবাই বা আর কয়দিন বাঁচবে?
প্রভার খেয়াল রাখিস বন্ধু আর পারলে মাফ করে দিস। হয়তো আর বাঁচব না, আজ আমার করা সব গুনাহ শুধু চোখের সামনে ভাসছে।
(২০১৭)
অর্ক দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকালো। আর আর চোখের কোণে দিয়ে ঝরতে থাকলো বুকের ভেতর জমে থাকা কষ্টগুলো।
.
.
বিকেল চারটায় দীপ্তি চক্রবর্তীর সাথে দেখা করার জন্য রওনা দেয় সৈকত ও ইকবাল। বহু কষ্টে কিছু সময় বের করেছে মিসেস দীপ্তি। গত এক সাপ্তাহ ধরে সৈকত তার সাথে দেখা করতে চাইছিল কিন্তু তিনি এতদিন চট্টগ্রামে ছিলেন। গতকাল রাতে এসেছেন। আর এসেই আজ অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইট নিবে। এর মাঝেই একটু সময় বের করেছেন তিনি সৈকতের অনুরোধে।
মা’য়ের কাছে মিথ্যা বলে সকালেই বের হয়েছে তারা। এতক্ষণ আশেপাশে ঘুরাঘুরি করে হাস্পাতালে গেল।
হাস্পাতালের চারতলায় যেয়েই সে দেখতে পায় দীপ্তি চক্রবর্তীকে। সৈকত রুমে ঢুকেই নমনীয় সুরে বলল,
“আপনাকে অপেক্ষা করানোর মাফ করবেন ম্যাম।”
“না না অসুবিধা নেই। আমি একটু আগে আসলাম। কিছু কাজ বাকি ছিলো তাও সেরে ফেললাম। তো বলুন কী জানতে চান?”
সৈকত ও ইকবাল সামনের চেয়ারে বসে বলল,
“ম্যাম আপনাকে বলেছিলাম যে নূহার ব্যাপারটা একটু খুলে বললে অনেক সুবিধা হতো।”
“আমি কাউকে আমার পেসেন্টের ইনফরমেশন দেই না কিন্তু আপনি যেহেতু আমাকে পরিস্থিতিটা আসলে বুঝালেন তখন না দিয়ে উপায় নেই। প্রভা ভীষণ ভালো মেয়ে। ওর সাথে যা হয়েছে তা ঠিক হয় নি। তাই ওর জন্য দিচ্ছি। আর এটা আইনগতভাবে জড়িত তাই প্রভার কিছু হোক আমি চাই না।”
“প্রভা ভাবির অতীত সম্পর্কে আপনি জানেন?”
“মানসিক সমস্যাগুলো বেশিরভাগই ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে হয় তাই একজন সাইক্রিয়াটিস্ট হিসেবে এইটা প্রয়োজন। তবে একেকজনের পদ্ধতি একেক রকম হয়ে থাকে। আমি সবার আগে কাউন্সিলিং করি এরপর প্রয়োজনে ঔষধ দেই বা অন্য কোনো ব্যবস্থা করি।”
“ভাবির অবস্থা এখন কেমন বলতে পারেন?”
“গত একমাত্র ধরে ও সেশনের জন্য আসছে না। কিন্তু কল দিয়েছে কয়বার। গত দুইদিন আগেও কল দিয়েছিলো। ওর সমস্যা হচ্ছে না আর। ও একসাপ্তাহ আগের একটা ঘটনা বলল যেখান থেকে বুঝতে পারলাম ওর যে ভয় ছিলো তা কেটে গেছে। আর এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো ওর স্বামী। ওর এক্স-হাসবেন্ড ওকে প্রোটেক্ট করতে পারে নি কিন্তু উনার প্রেসেন্ট হাসবেন্ড ওকে সেফ ফিল করিয়েছে। ওকে বুঝিয়েছে যে কোনো বাঁধা আসুক না কেন উনি প্রভাকে রক্ষা করবেন এবং ওকে বিশ্বাস করবেন।”
কথাটা শুনতেই সৈকতের ঠোঁটের কোণে হাসি এঁকে এলো। সে একরাশ হাসি নিয়ে সে ইকবালের দিকে তাকালো। কিন্তু সে হাসিটা ছিলো সে মুহূর্তের জন্যই। দীপ্তি চক্রবর্তীর পরবর্তী কথাটাতেই তার সে হাসি উড়ে গেল।
“ফোনটা করেছিলো প্রভার বোনের জন্য। আপনি বললেন আপনি প্রভার দেবর। আপনি নিশ্চয়ই চেনেন ওর বোনকে।”
“ঝিনুক? ঝিনুকের কী হয়েছে?” অস্থির হয়ে প্রশ্ন করল সৈকত।
“এটা বলা ঠিক হবে কিনা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।”
“ও আমার ওয়াইফ। প্লিজ বলুন কী হয়েছে?”
সাথে সাথে দীপ্তি চক্রবর্তীর কপাল কুঁচকে গেল। সে বলল,
“আপনার ওয়াইফের খবর আপনার কাছে নেই?”
সৈকত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“কিছু পারিবারিক সমস্যা হয়েছে ম্যাম। এইজন্য ওর সাথে যোগাযোগ রাখাটা উচিত মনে হচ্ছে না।”
“আপনার ওর সাথে যোগাযোগ করা উচিত। প্রভার কথানুযায়ী আপনার ওয়াইফ সম্ভবত ডিপ্রেশনে ভুগছে। যদিও আমি তা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত না। বিষণ্ণতাও ডিপ্রেশন দুটো আলাদা জিনিস। দুইটার লক্ষ্মণের মাঝে পার্থক্য সূক্ষ্ম কিন্তু এদের প্রভাব অনেক। বিষণ্ণতা খানিক সময় থাকে আমাদের অনেক কষ্ট দেয় আর দূর হয়ে যায় এবং ডিপ্রেশন এমন এক রোগ যা মানুষকে ভেতর থেকে শেষ করে দেয়। ডিপ্রেশনে মানুষ একবার প্রবেশ করলে সেটা আমাদের জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে পারে। প্রায় মানসিক সমস্যাগুলোর শুরুটা কিন্তু ডিপ্রেশন দিয়েই হয়। এমনকি মানুষ সুসাইড করারও চেষ্টা করে।”
শেষের কথাটা শুনতেই বুকের ভেতরটা কামড়ে ধরে সৈকতের। সে বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় সামনে থাকা নারীটির দিকে।
দীপ্তি চক্রবর্তী দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও বলে,
“আচ্ছা আমার যেতে হবে দ্রুত তাই আসল কথায় আসি। নূহার ‘schizoaffective disorder’ ছিলো। আর এটা ছোট থেকেই ওর।”
ইকবাল বলল,
“আমি ভেবেছিলাম ওর ওসিডি বা মাল্টিপাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার আছে। কারণ আমি যতটুকু দেখেছি নূহাকে দেখে কখনো মনে হয় নি যে ও বিনয়ের সাথে জড়িত অথবা অর্ক ভাইয়ার প্রতি ভালোবাসা নেই তার। তাই যখ মানসিক সমস্যার কথা শুনেছি মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার ছিলো।”
“নূহা অনেকটাই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। ও নিজেকে অনেক কান্ট্রোল করতে পারতো, নাহয় আগে তো যে ভয়ানক অবস্থা ছিলো!”
“কী অবস্থা হয়েছিল?
” ও একবার তো নিজের ছোট বোনকে খুন করার চেষ্টা করে প্রায় দশ বারো বছর আগে। তখন ওকে আমার কাছে আনা হয়। যা এর থেকেও আগে আনা উচিত ছিলো। ওর রোগ ঘনিয়ে গিয়েছিল। ওর বাবার সমাজ থেকে তার মেয়ের রোগ লুকানোর জন্য সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে আনেন নি। ভেবেছিলেন মানুষ তার মেয়েকে পাগল ভাববে অথচ তিনি তার মেয়ের জীবন ও তার আশেপাশের সবার জীবনে যে ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন তা তিনি বুঝতেই পারেন নি। আমিই প্রায় নূহাকে ওর বাসায় যেয়ে চিকিৎসা করতাম। ভালো মেয়ে ছিলো কিন্তু রাগ উঠতে ওকে চেনাই যেত না। এই রোগে বেশিরভাগ নেগেটিভ খেয়াল আসে, হেলুসিনেশন হয়, মন কেউ তাকে ফলো করছে, আরও অনেক খারাপ চিন্তাভাবনা হয়। ওর বোনও ওর অনেক খেয়াল রাখতো এত বড় দুর্ঘটনার পরও। ওর বোনকে চেনো তুমি?”
সৈকত কিছু মুহূর্ত সময় নিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে। আর জিজ্ঞেস করে,
“আপনার মনে হয় যে নূহা বিনয়কে খুন করে নিজেই নিজের জীবন দিয়েছে।”
দীপ্তি চক্রবর্তী তার চশমাটা ঠিক করে বলল,
“আমি শিউর বলতে পারব না কিন্তু ওর মেডিক্যাল হিস্ট্রি দেখে এমন করার চান্স আছে। যদি ও নিজের সব কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে তাহলে হতে পারে। কিন্তু আবার নাও হতে পারে।” আবার সে ঘড়ি দেখে বলল,
“আমার ফ্লাইটের দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
সৈকত দাঁড়িয়ে বলল,
“ধন্যবাদ ম্যাম আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।”
“মাই প্লেজার। আর আপনি আপনার ওয়াইফের সাথে যোগাযোগ করবেন। মানসিক অশান্তি অনেক বাজে, এই কারণে আমি আমার মা’কে হারিয়েছি। সমাজে মানুষ পাগল বলবে বলে পরিবারে দেখায় নি আর আমার মা চলে গিয়েছে। তাই আমি আজ সাইক্রিয়াটিস্ট হয়েছি যেন আমার মা’য়ের মতো আর কাউকে এত কষ্ট পেতে না হয়। শারীরিক অশান্তি মানুষকে বলে বুঝানো যায় মানসিক না। মানসিক অশান্তি থেকে নিজে লড়াই করতে করতে যদি হেরে যায় তাহলে এক ভয়ানক পরিণতি হয়। জীবনে এক বড় ছাপ রেখে যায়।”
“আপনি চিন্তা করবেন না ম্যাম।”
দীপ্তি চক্রবর্তীকে গাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে এসে সৈকত ইকবালকে বলল,
“তুই বাসায় যা। আমি এক কাজ সেরে আসছি।”
“ঝিনুকের সাথে দেখা করতে যাবি?”
“না জ্যোতির সাথে।”
মুহূর্তে ইকবালের হাসিউজ্জ্বল মুখটা রাগান্বিত হয়ে গেল। সে চেঁচিয়ে উঠে,
“একটু আগে ডাক্তার কি বলে গেল কানে যায় নি তোর? তুই কীভাবে ঝিনুকের কাছে না যেয়ে জ্যোতির কাছে যেতে পারিস?”
“আমি জানি আমি কি করছি। আমি রাস্তায় ঝিনুককে কল দিব। ওর চিন্তার কারণ এইটা না যে আমি ওর কাছে নেই কারণ হচ্ছে এত বড় সত্য আমার সামনে আসার পর আমি ঠিক আছি কি-না এইটা। আর এই ব্যাপারটার সাথে ও নিজেকে যুক্ত করছে। ওর মা বাবাকে যুক্ত করছে।”
“তাই বলে তোর জ্যোতির কাছে যেতে হবে?”
“হ্যাঁ, কারণ আমি ওর সাথে অন্যায় করেছি। ক্ষমা চাইতে হবে আমার। আমি এই দুইটা বছর ওর সাথে মিথ্যা বলেছি, অন্যায় করেছি, ওকে ব্যবহার করেছি। ওর তো এইসবে কোনো দোষ ছিলো না। ও কারো ক্ষতি করে নি। আমি গত দুইবছর ধরে এই গিল্টি ফিলিংটা নিয়েই আছি যে যখন ওকে সত্যিটা বলব তখন ও আমাকে ক্ষমা করবে কি’না! এখানে আমি ভুল, ও না।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইকবাল। শুধু বলে,
“ঝিনুকের সাথে কথা বলে নিস।”
.
.
ঝিনুক গলির মাথায় দাঁড়িয়ে ছিলো হাতে ব্যাগ নিয়ে। পরিশ গেছে সিএনজি আনার জন্য। পরিশ দুপুরেই এসেছে তাকে নেওয়ার জন্য। দুপুরের খাবার খেয়ে তার সাথে খালুর বাসায় যাচ্ছে। গত এক সাপ্তাহ ধরে খোঁজ নেই সৈকতের। তার চিন্তায় ঠিক মতো ঘুমও হচ্ছে না। সে সৈকতের কষ্টের সাথে নিজের মিল খুঁজে পায়। খুব করে চায় এই সময়টা যেন সৈকতের পাশে থাকে কিন্তু সৈকত তা চায় না। নিজে তো তার নাম্বার ব্লক করেই রেখেছে ইকবাল ভাইয়াকে বা অন্য কাউকে দিয়ে যোগাযোগ করতে চাইলেও করে না। কোথায় আছে, কীভাবে আছে কে জানে?
আজ তার সাথে অভিমান করেই এক বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে ঝিনুক। যে বাড়িতে বউ সেজে এসেছিলো সে বাড়ি থেকেই বিদায় নিচ্ছে একরাশ অভিমান নিয়ে।
ফোনটা বেজে উঠে ঝিনুকের। ব্যাগ থেকে ফোন বের করে নাম দেখতেই চমকে যায় সে। তার নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস হচ্ছিলো না। হাত কাঁপছিল বরাবরই। মুহূর্তে সব মান অভিমান ভুলে কলটা রিসিভ করে বলে,
“তুমি কোথায় ছিলে এতদিন? আমাকে অশান্তিতে রাখতে তোমার শান্তি লাগে তাই না?”
ফোনের ওপাশ থেকে সৈকত তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
“কেন সহানুভূতি দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো ভীষণ?”
“সহানুভূতি দিতাম না অন্যকিছু সামনে আসলেই বুঝতে পারবে।”
“ভয় পেলাম ভীষণ। সামনে দেখি আর আসা যাবে না। তোমার মতো শুন্ডীর হাত থেকে নিজেকেই রক্ষা করতে হবে।”
“তোমার সাহস কত আমাকে গুন্ডী বলছ?”
খানিকটা হাসলো ঝিনুক। এরপর গভীর কন্ঠে বলল,
“তুমি ঠিক আছো তো?”
” আমি ঠিক আছি। তোমার কথা বলো।”
“আমার আবার কী হবে?”
অনেক সময় দুইপাশে নিরবতা ছেয়ে রইলো। ঝিনুক মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“আমাকে ব্লক দিয়েছিলে কেন? কোনো যোগাযোগ করো নি কেন?”
“আমার তোমার সহানুভূতির প্রয়োজন নেই ঝিনুক। আমি এতটুকু শক্ত আছি যে নিজেকে সামলাতে পারি। যে যত অন্যের উপর নির্ভর সে ততই দুর্বল। তুমি যদি অন্যের সহানুভূতির জন্য ক্ষুধার্ত থাকো তাহলে নিজেকে শক্ত করার ক্ষমতা তোমার হবে না। আর আমি নিজেকে একশোবার কষ্ট দিতে রাজি আছি জীবনে ব্যর্থ হতে নয়।”
“আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।”
“আগামীকাল রমনায় বিকেল চারটায়। এখন ফোন রাখি।”
“এক মিনিট, তুমি কী এতদিন জ্যোতির সাথে যোগাযোগ করেছ।”
সৈকত ফিক করে হেসে দিলো। ঝিনুক রাগান্বিত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
“আমি কী মজার কোনো কথা বলেছি হাসছ কেন?”
“ক’দিন আগে যে মেয়ে বিবাহবিচ্ছেদের কথা জানিয়েছে আজ সেই তার স্বামীকে নিয়ে পজিসিভ হচ্ছে। এটা মজা ব্যাপার না?”
“খবরদার কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবে না।”
“অর্ক ভাইয়া থেকে ওর কথা জিজ্ঞেস করে নিও।”
“দুলাভাইয়ার থেকে কেন করব?”
“কাল বিকেল চারটায় রমনা পার্কে থাকব।”
বলেই সৈকত ফোন কেটে দিলো। ঝিনুক মৃদু হেসে তাকাল ফোনের দিকে। সে ফোনটা বুকের কাছে চেপে ধরলো। আর চোখ বন্ধ করে গভীর নিশ্বাস ফেললো। একবার তার ব্যাগের দিকে তাকাল আবার গলির অপর দিকে। এরপর দ্রুত বাসার কাছে চলে গেল ঝিনুক। দরজায় একবার কলিংবেল বাজাতেই বিনু দরজা খুলল। সে দৌড়ে গেল প্রভার রুমে। প্রভা কিছু একটা দেখছিলো। ঝিনুককে দেখতেই সে তা বালিশের নিচে লুকিয়ে ফেলে। উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“তুই এইখানে কীভাবে?”
“আপি আমি যাব না প্লিজ। তুমি ভাইয়াকে বুঝাও না আমি যাব না।”
“হঠাৎ কী হলো তোর? তুই তো যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলি।”
“তখন তো সৈকত কল দেয় নি। এখন দিয়েছে। প্লিজ তুমি ভাইয়াকে বুঝাও যে আমি যাব না।”
“আচ্ছা বাবা ঠিকাছে তুই রুমে যা, আমি ভাইয়াকে বলে আসছি।”
ঝিনুক দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে একরাশ হাসি আঁকলো ঠোঁটের কোণে। গুণ গুণ করতে করতে নিজের রুমে গেল। ব্যাগ থেকে ফোন ও হেডফোন বের করে বিছানায় আয়েশে শুয়ে হেডফোন কানে গুঁজে গান শুনলো আর অতীতের পাতায় ভেসে গেল।
বেখেয়ালি দিনগুলো আজ ফিরে পেতে চাই,
চাই না যে আর কিছু শুধু তোমাকে চাই,
আমার….. মনের ধারে শুধু তোমাকে তোমাকে চাই,
এই মন পাড়ায় আর জায়গা নাই,
শুধু তোমাকে চাই, শুধু তোমাকে চাই।
এই মন পাড়ায় আর জায়গা নাই,
শুধু তোমাকে চাই, শুধু তোমাকে যে চাই।
ও হো হো হো…..ও হো হো হো…
দিনের শেষ প্রহরে তোমাকে চাই,
আকাশ মেঘলা হয় যদি তোমায় যেন পাই,
ও আমার স্বপ্নবিলাসী
এই মন পাড়াটা লিখে দিব তোমায়।
ও হো হো আহা….
ওহ হো হো আহা…..
ভালোবাসা, ভালোলাগার হাজারো পরিণাম,
তোমাকেই আমি পাব যদি হতে চাও আমার।
আমি তোমায় ঘিরে, তোমার মনে,
ভালোবাসব তোমায় জীবন ভরে,
এই মন পাড়াটা……শুধু তোমায় দিলাম,
তোমায় দিলাম তোমায় দিলাম।
চলবে……..
[