মনের গহীনে পর্ব ৪+৫

#মনের_গহীনে
৪র্থ+৫ম পর্ব
লেখনীতে :নাদিয়া হোসাইন

সকালে প্রাচুর্য সামায়াদের বাসায় গেলো, ওর সাথে দেখা করতে। বেশ কয়েক বছর ধরে ও সামায়ার সাথে খানিকটা দূরত্ব তৈরি করে ফেলেছিলো। সামায়াকে দেখলেই প্রিয়র কথা মনে হতো, যা প্রাচুর্যকে বেশ টানা পোড়ায় ফেলতো।কিন্তু আজ ওর সামায়ার সাথে খোলামেলা আলোচনা করা দরকার, এটলিস্ট নিজের জন্য।

সামায়া চুল বাঁধছিলো,তখন প্রাচুর্যকে দেখতে পেয়ে বললো, __এই তুই সারাদিন কই থাকিস-রে?দুদিন হলো এলাম আর তোর দেখা-ই নেই।
সরি রে সামু, কিন্তু আমার কিছুই ভালো লাগছে না। কিছু মনে করিস না। তোর এতো ভালো সময়েও আমি তোর পাশে থাকতে পারছি না।
সামায়া হাসলো। প্রাচুর্যর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে এলো।
আমি জানি তুই কেনো এমন আপসেট। সেটা আজ-কাল থেকে নয়!বহু দিন আগে থেকে।খুব ভালোবাসিস না প্রিয় ভাইয়া কে?
প্রাচুর্য সামায়ার কথা শুনে চমকে গেলো, __কি বলছিস তুই এসব? আমি কেনো উনাকে ভালোবাসতে যাবো।
শুন, ছোট থেকে আমরা এক সাথে ছিলাম। আর এটা আমি বুঝবো না, সেটা হতেই পারে না।তুই আমার থেকে আড়াল করতেই পারিস, কিন্তু তোর চোখ সেটা আড়াল করতে পারে নি ।
প্রাচুর্য হঠাৎ-ই কেঁদে দিলো।কান্নারত সুরে বললো,__হুম অনেক ভালোবাসি উনাকে আমি। আমার মনের সবটা জুড়ে শুধু তারই বসবাস। কিন্তু তার কোন কিছুতেই আমার অস্তিত্ব নেই। কেনো নেই জানিস? কারন উনি শুধুই তোকে ভালোবাসে। আমি উনার জীবনে আসার আগেই উনি তোকে তার সবটা দিয়ে দিয়েছে।
সামায়া বিষ্ময়ের দৃষ্টি নিয়ে প্রাচুর্যর দিকে তাকালো। কি বলছিস তুই? প্রিয় ভাইয়া আমাকে কীভাবে ভালোবাসতে পারে? আর আমি তো ওকে কখনো ভাই ছাড়া কিছু ভাবি-ই নি
তুই না-ই ভাবতে পারিস, কিন্তু উনি তোকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে। এমনকি চাচ্চুর কাছে বিয়ের প্রপোজালও দিয়েছিলো।
তুই এসব কবে থেকে জানতে পারলি, যেখানে আমি টের-ই পেলাম না।
ঠিক যে সময় থেকে আমার ভালো লাগাটা উনার উপর ভালোবাসায় রূপ নিয়েছিলো, তার কিছুদিন পরই উনি আমাকে ফ্রেন্ড মনে করে নিজের অনুভূতির কথাগুলো বলেছিলো। জানিস কাল উনি আমায় ঢেকে কি কান্নাটাই না করেছিলেন। দেখতে পারছিলাম না উনার এ কষ্ট। তার চেয়ে ভালো হতো যদি উনি তোকে পেতো।
ওহ, কিন্তু আমার এখানে কিছু করার নেই। আমি কিছুই জানতাম না।আর ইহানকেও আমি এখন নিজের স্বামী বলে মেনে নিয়েছি৷ সব থেকে বড় কথা, আমার কাছে তুই অনেক মূল্যবান। তুই যেমন আমার জন্য নিজের অনুভূতির কথা ওনাকে বলতে পারিস নি।তেমনি, আমার বিয়ে ঠিক না হলেও উনাকে আমার মনে যায়গা দিতে পারতাম না।তুই উনাকে কিছুদিন স্পেস দে। দেখবি ঠিকই একদিন তোর ভালোবাসাটা উনি বুঝতে পারবে। বেশি দেরি না করে ঠিক টাইমে নিজের মনের কথাটা উনাকে বলে দিস।
আচ্ছা থেংক্সস আমার মনের অবস্থাটা ঠিক করে দেওয়ার জন্য। আমি উনাকে পাই বা না পাই, আমার কাছে উনার হ্যাপিনেসটাই সব থেকে বড় পাওয়া।
তা তো বুঝতেই পারছি। তার জন্য মরে যাবি, তাও তাকে কষ্ট পেতে দিবি না।
প্রাচুর্য স্লান হাসলো।তার মনে আবারো প্রিয়কে পাওয়ার আশা জেগে উঠিলো। জীবনটা আরো সুন্দর মনে হচ্ছে কেনো জানি। এটাই হয়তো ভালোবাসার জোর।

বিকেলের দিকে প্রাচুর্য কুর্মিটোলা হসপিটালে গেলো রিপোর্ট আনতে। সেদিন প্রাচুর্যর এখানেই প্রিয়র সাথে দেখা হয়েছিলো।সেদিন এক্সিডেন্টলি প্রিয়কে সে এখানে দেখেছিলো কিন্তু আজ দেখতে চায় না।চাই বোরকা করে গেলো, যেনো প্রিয় থাকলেও চিনতে না পারে। প্রাচুর্য এখন ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে।
মিস প্রাচুর্য, সবে মাত্র আপনার এ রোগটা ধরা পরেছে। আই থিংক এখন থেকেই ট্রিটমেন্ট করতে হবে।
জ্বী ড. করবো। আর এখনো তো কিছুই হয়নি। বাড়িতে বোনের বিয়ের জন্য সবাই বিজি। আমি চাচ্ছি, বিয়েটা শেষ হলেই সব কিছু করতে।
আচ্ছা, আপনার যা ভালো মনে হয়। ঔষুধ গুলো টাইমলি নিয়েন। আর বেশি দেরি করিয়েন না।
ওকে ডক্টর।

প্রাচুর্য সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিলো, তখন দেখতে পেলো প্রিয় এপ্রন পড়ে আছে আর কফি খাচ্ছে। খুব সুন্দর লাগছে প্রিয়কে দেখতে। ফর্সা গায়ের রঙয়ে এপ্রনটা মন্দ লাগছে না।ইচ্ছা করছিলো প্রিয়র কাছে যেতে, কিন্তু নিজের ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখলো। প্রিয়র দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনের দিকে হাটা ধরলো। হাসপাতাল প্রাচুর্যের কাছে বরাবরই জঘন্য মনে হয়। এক রকম দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই সারা জীবন যতভাবে পেরেছে,হসপিটালকে এড়িয়ে গেছে। কিন্তু ভাগ্য বোধহয় কেউর সহায় হয়-ই না।সেই জন্যই হয়তো এখন নিজের অপছন্দের যায়গায় এভাবে না চাইতেও ছুটতে হচ্ছে।

সন্ধ্যার দিকে প্রাচুর্য বাড়িতে ফিরে এলো৷ তখন মিসেস শান্তা ও তার এগারো বছরের মেয়ে যোহরা এলো প্রাচুর্যের কাছে।
প্রাচুর্য, তোদের এখানে দু’দিন থাকলাম। আজ রাতের ফ্লাইটে তোর ফুপা অস্ট্রেলিয়া থেকে আসবে। তাই আমাদের যেতে হবে। তুই তো আমাদের বাড়িতে সেই কবে গেলি। আজ আমার সাথে আয় মা!
যোহরা বলে উঠলো,__ হ্যাঁ প্রাচুর্য আপু আসো না আমাদের সাথে। দু’দিন পর আবার আমরা তোমাদের বাসায় আসবো।প্লিজ না করো না!
প্রাচুর্য কি বলবে বুঝতে পারছে না। অনেক মাথা ব্যাথা করছে, কিন্তু প্রিয়কে দেখার এক অদম্য ইচ্ছা জাগলো প্রাচুর্যের। তাই সব ভুলে ফুপির কথায় রাজি হলো।

প্রাচুর্য নিজের ব্যাগ গুছিয়ে বাসার সবার পার্মিশন নিয়ে বেড় হলো। সামায়ার যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো, পরক্ষণেই তার মনে হলো প্রাচুর্য আর প্রিয়কে আলাদা স্পেস দেওয়ার প্রয়োজন।তাছাড়া প্রিয়কে দেখলে তার মধ্যে এখন গিল্টি ফিল হবে। প্রাচুর্যকে দেখেই জারিফ বায়না ধরলো প্রাচুর্যের কোলে উঠার। তাই প্রাচুর্য জারিফকে কোলে নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো৷ প্রাচুর্য জানতো না যে,প্রিয়-ই ওদের নিতে আসবে৷ প্রিয়কে দেখে মুহুর্তেই প্রাচুর্যের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। প্রিয় গাড়ি ড্রাইভ করছে আর প্রাচুর্য জারিফকে কোলে নিয়ে প্রিয়-র পাশের সীটে বসে আছে। পিছনের সীটে শান্তা আর যোহরা বসে আছে। গাড়ির জানালা খুলে প্রাচুর্য বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আর কিছুক্ষণ পর পর আঁড়চোখে প্রিয়কে দেখছে। সে জানে যে প্রিয় তার দিকে কোন ভাবেই তাকাবে না, এমনকি কোন কথাও বলে নি। তাও প্রাচুর্যের কাছে যথেষ্ট মনে হলো। প্রিয়র এতোটা কাছাকাছি-ই যে তার জন্য অনেক, আর কি-ই বা চাওয়ার থাকতে পারে জীবনে।

চলবে,

#মনের_গহীনে
৫ম পর্ব
লেখনীতে:নাদিয়া হোসাইন

রাতে প্রাচুর্য বারান্দায় গেলো। প্রাচুর্য যেই রুমটায় রয়েছে সেই রুমটার পাশের রুমটা প্রিয়র, তাই প্রিয়র রুমের বারান্দাটা প্রাচুর্য দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু সেখানে প্রিয় নেই। সে বারান্দার এক কোনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো। আনমনে সেইসব দিন গুলোর কথা ভাবতে লাগলো।

এই বাসা থেকেই প্রিয়র প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়েছিলো প্রাচুর্যর। তাই আজ প্রিয়দের বাসাটাও তার অনেক প্রিয় মনে হচ্ছে। প্রিয়দের বাসার নিচে অনেক বড় যায়গা রয়েছে। সেখানে প্রিয় আর প্রিয়র ভাই প্রান রাতের দিকে রাতের দিকে ক্রিকেট খেলতো। প্রাচুর্য ভেবে পেতো না, সারাদিন এতো সময় থাকতে এই দুই ভাইয়ের কেনো রাতেই খেলতে হয়। প্রান প্রাচুর্যের থেকে এক বছরের ছোট। এবাসায় প্রানের সাথে প্রাচুর্যের তেমন কোন সখ্যতা ছিলো না।প্রান খুব ভাবুক ছেলে৷ সব কিছুতে বড়দের মতো অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলে৷ সেই জন্য প্রাচুর্য বরাবরই ওর থেকে দূরে থেকেছে৷
সে বরাবরই এই বারান্দায় এসে প্রাচুর্যকে দেখতো। প্রিয়র ঘাম যুক্ত চুল গুলো তখন প্রাচুর্যের সব থেকে ভালো লাগতো৷ ইচ্ছে হতো চুল গুলো গিয়ে ছুঁয়ে দিতে৷

প্রাচুর্যের ঘোর ভাংলো হঠাৎ কেউর কন্ঠস্বর শুনে। প্রাচুর্য নিচে বসে ছিলো বিধায় প্রিয় তাকে দেখতে পায় নি। প্রিয় ফোনে কার সাথে জানো কথা বলছিলো খুব শান্তস্বরে। প্রাচুর্য উঠে দাঁড়ালো আর প্রিয়র ফোনে কথা শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগলো। প্রায় পাঁচ মিনিটের মধ্যে প্রিয়র কথা বলার সমাপ্তি ঘটলো।

প্রিয় ভাইয়া?
প্রিয় হকচকিয়ে গেলো আচমকা কেউর কন্ঠস্বর শুনে। চোখ ঘুরিয়ে দেখলো প্রাচুর্য দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয় শান্ত হয়ে প্রাচুর্যের দিকে ভ্রূ কুঁচকিয়ে তাকালো। তুমি এখনো ঘুমাও নি?
নাহ ঘুম আসছিলো না। আপনিও তো ঘুমান-নি।
প্রিয় একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে প্রাচুর্যকে কোন জবাব না দিয়ে রুমে চলে গেলো। প্রাচুর্যর নিজের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হলো। সে ভাবতেও পারে নি, প্রিয় এভাবে চলে যাবে। প্রাচুর্যের খুব কাঁদতে মন চাচ্ছে। যার কাছে আসার জন্য মন আকুল হয়ে থাকে, তার অবহেলা যেনো কেউরই সহ্য হয় না।প্রাচুর্যও মন খারাপ করে রুমে চলে এলো। ঘুম আর সে রাতে চোখে ধরা দিলো না।

প্রিয় রুমে এসে কপালে হাত দিয়ে শুয়ে পরলো। সে জানে যে, মাত্র যে কাজটা করলো সেটা মোটেও শোভনীয় হয় নি। কিন্তু তার কিছুই করার নেই৷ইদানিং প্রিয়র কথা বলতে একদমই ভালো লাগে না। চার বছর ধরে যাকে ভালোবেসে আসছে, যাকে পাওয়ার জন্য কোনদিন তাকে মনের কথা বলাই হয় নি। তাকে কীভাবে অন্যের হতে দেখা যায়। প্রিয়র বরাবরই মনে হতো , ভালোবাসার মানুষটা দূরে থাকাই ভালো৷ পরবর্তীতে যদি সেই মানুষটা খুব সহজেই পেয়ে যায়, তাহলে হয়তো অবহেলার চাদরে ভালোবাসাটা ঘিরে থাকবে। তাই সেও এতোদিন সামায়ার কাছে যেতে চায় নি, যেনো ভালোবাসার অমর্যাদা হয়ে যায়। কিন্তু এটা যে তার লাইফের সব থেকে বড় ভুল হবে, তা ভাবতেও পারে নি। সামায়ার ফ্যামেলির প্রতি প্রিয়র খুব রাগ কাজ করছে। আজ যদি সামায়ার বাবা তার প্রস্তাবটা প্রত্যাখ্যান না করতো, তাহলে তার ভালোবাসা তারই থাকতো । রাতে প্রিয়ও আর ঘুমাতে পারলো না৷
দুটো মানুষের রাতটাই নির্ঘুম কাটছে। দু’জনারই ভালোবাসার মানুষটাকে না পাওয়ার আক্ষেপ বিরাজ করছে। রাতও জানে না তাদের এই আক্ষেপের সমাপ্তি কোন পর্যায়ে গিয়ে থামবে।

পরদিন প্রাচুর্যের দিন কোন রকম গেলো। সকালে ঘুম থেকে উঠে কোন যায়গায়-ই প্রিয়র দেখা পায় নি।মিসেস শান্তার কাছে শুনেছে, প্রিয় কলেজে গেছে। বিকেলের দিকে প্রিয় বাসায় এলো।তখন যোহরা আর জারিফ বাইরে যাওয়ার বায়না ধরলো প্রিয়র কাছে৷ প্রিয় জারিফ আর যোহরাকে অনেক ভালোবাসে। তাই নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের বাইরে নিয়ে যেতে রাজি হলো।ওরা যখন বাসা থেকে বেড় হবে তখন মিসেস শান্তা বলে উঠলো, __ প্রিয় বাবা, প্রাচুর্যও সারাদিন বাসায় বসে আছে। ওর ও তো বোরিং লাগছে। তুই বরং ওদের সাথে প্রাচুর্যকেও নিয়ে যা।
প্রাচুর্য কোন কথাই বললো না।ওর-ও ইচ্ছে হচ্ছে প্রিয়র সাথে বাইরে যাওয়ার। কিন্তু ও জানে না প্রিয় ওকে নিয়ে যাবে কি-না। প্রাচুর্য প্রিয়র মুখের এক্সপ্রেশন দেখে বুঝার চেষ্টা করছে যে, প্রিয়র উত্তর কি হবে।
প্রিয় কিছু বলতে যাবে তখনি প্রিয়র মা প্রিতি চৌধুরী বলে উঠলো, __প্রিয় এখনি বলিস না যে, পারবি না।ও আমাদের বাড়ির অতিথি। মেয়েটাকে তোর কাকিমা কতোদিন পর নিয়ে এলো। আর এ কিনা বাসায় একা বসে থাকবে। যা নিয়ে যা। নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
প্রিয় আর কিছুই বললো না মায়ের মুখের উপর। শুধু হাত দিয়ে প্রাচুর্যকে ইশারায় বেড় হতে বললো।কিন্তু প্রাচুর্য পাঁচ মিনিট বলে দৌড়ে রুমে চলে গেলো।
পাঁচ মিনিট পর প্রাচুর্য ড্রেস চেঞ্জ করে একটা কালো রঙের ওনান-পিছ, অ্যাঁশ কালারের পেন্ট আর হিজাব পরে বেড়িয়ে এলো। প্রিয়র অবশ্য সেদিকে কোন মাথা ব্যাথা নেই। সে একবারো প্রাচুর্যের দিকে ফিরে তাকালো না।প্রাচুর্য ব্যাপারটায় কিছুটা আপসেট হয়ে গেলো।

প্রিয় ওদের বেশি দূরে নিয়ে যাবে না, তাই গাড়ি বেড় করলো না। দুটো রিক্সা নিয়ে নিলো৷ একটাতে প্রিয়, জারিফ ও অন্যটাতে প্রাচুর্য আর যোহরা বসলো। রিক্সা এসে কাওলা পার্ক থামলো। যোহরা আর জারিফ দুজনের মতো খেলতে চলে গেলো। প্রাচুর্য এক সাইডে দাঁড়িয়ে প্রিয়র দিকে তাকিয়ে রইলো। এবারও প্রিয় প্রাচুর্যের সাথে কোন কথা বললো না। প্রিয়র নিরবতা আরো কষ্ট দিচ্ছে প্রাচুর্যকে। কিছুক্ষন পর প্রাচুর্য প্রিয়কে দেখা বন্ধ করে অন্যদিকে হাটা ধরলো। আসার সময় চারপাশের রাস্তাটার দিকে তাকিয়েছিলো। এর আগেও একবার এদিকে এসেছিলো তিন বছর আগে। সেবারও প্রিয় এসেছিলো। কিন্তু তখনের প্রিয়র সাথে এখনের প্রিয়র যেনো কোন মিলই নেই।

প্রাচুর্য সামনের দিকে এগিয়ে গেলো৷ এদিকটায় শেষ বিকেলের দিকে অনেক মশার উপদ্রব থাকে। তাই প্রাচুর্য আশেপাশে হাটতে বেড় হলো। প্রাচুর্য যে এদিকটায় নেই, তা প্রিয় খেয়ালই করলো না৷ প্রাচুর্য হাটতে হাটতে অনেকটা দূর চলে এলো। আনমনে প্রিয়র কথা ভাবছিলো, তাই খেয়ালই করে নি যে কোন দিকে চলে এসেছে৷ প্রাচুর্য রাস্তার মাঝ দিয়ে হাটছিলো। হঠাৎ একটা যায়গায় দাঁড়িয়ে গেলো কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখে। আর তখনি একটা রিক্সা প্রাচুর্যের বাম পায়ের আঙ্গুলের উপর দিয়ে চলে গেলো। দোষটা প্রাচুর্যরই ছিলো, কিন্তু রিক্সাওয়ালা আর দাঁড়ায়ও নি। আচমকা পায়ে এমন ব্যাথা পেয়ে প্রাচুর্য কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। কোন রকম রাস্তার এক সাইডে এসে বসে পরলো। পা কিছুটা ছিলে গেছে আর খানিকটা রক্ত ও বেড় হচ্ছে। প্রাচুর্য কি করবে বুঝতেও পারছে না। মাগরিবের আজানও দিয়ে দিয়েছে, কিন্তু এখন আশেপাশে কোন মানুষও দেখতে পাচ্ছে না।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here