#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ১৩
“”আমাল বয়ে গেছে কোলবালিশ লুমে আনতে,আপনাল বুকে মাথা লেখে ঘুমানোল জন্য প্রয়োজন পড়লে আমি বাসাল সব কোলবালিশ লুকিয়ে লাখবো,আপনাকে আমি কোলবালিশেল সাথেও শেয়াল কলতে পালবোনা,আপনি শুধু আমাকেই ভালোবাসবেন,আমাকেই জলিয়ে ধলবেন””
তুলি সুজনের বুকে মাথা রেখে মনের মধ্যে এক অন্যরকম প্রশান্তি অনুভব করলো,,,তুলির মনে হলো যেনো এটাই ওর নিরাপত্তার স্থান,,,তুলি স্মিত হেঁসে আলতো স্পর্শে টুপ করে সুজনের বুকে কিস করে দিলো,,,সুজন তুলির স্পর্শ পেয়ে স্মিত হেঁসে মনে মনে বললো,,,
“”পাগলী একটা!””
তুলি সুজনের বুকে আলতো করে মাথা ঘষে চুপচাপ চোখ দুটো বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো,,,কিছুসময় পর তুলির ঘনঘন শ্বাস পড়ছে বুঝতে পেরে সুজন স্মিত হেঁসে তুলির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো,,,তুলির কাটা ছেড়া অবাধ্য চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়লো,,,
জানালার থাই গ্লাস ভেদ করে সকালে সূর্যের কিরণ চোখে পড়তেই সুজনের ঘুম ভেঙে গেলো,,,আঁড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলে দেখে তুলি ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে গায়ের উপর পা তুলে নিশ্চিতে ঘুমিয়ে আছে,,,সুজন তুলির কান্ড দেখে মুচকি হাসলো,,,ঘুমন্ত তুলিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে দেখতে,,,সুজন মুচকি হেঁসে তুলির ঘুমন্ত মুখের পানে চেয়ে রইলো,,,
তুলির ঘুম ভাঙতেই চোখ বন্ধ করে বড় করে হাই তুললো,,,চোখ মেলে চেয়ে দেখলো সুজন ওর দিকে মুচকি হেঁসে চেয়ে আছে,,,তুলি হুট করে চোখ মেলে চাওয়াতে সুজন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”রাতে তোকে কোলবালিশ বানিয়েছি বলে তুই তার শোধ নিচ্ছিস!তোর এত বড় স্পর্ধা হয় কি করে!আমার গায়ে পা দেওয়ার!””
তুলি সুজনের কথা শুনে কপাল কুঁচকে নিজের দিকে চেয়ে দেখলো সুজনের গায়ের উপর পা দিয়ে শুয়ে আছে,,,দ্রুত পা সরিয়ে দিয়ে ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে মাথা নিচু করে মুখটা গম্ভীর করে ঘুম জড়ানো স্বরে বললো,,,
“”স্যলি সুজন ভাই,আমি বুঝতে পালিনি আপনাল গায়েল উপল পা চলে যাবে””
সুজন মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে তুলির দিকে চেয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”তুলি!এখন থেকে সুজন ভাই বলাটা বন্ধ কর,তোর সুজন ভাই বলার কারনে দেখা যাবে!আমার বাচ্চা আমাকে বাবা না বলে মামা বলে ডাকছে””
তুলি সুজনের কথা শুনে খিলখিল করে হেঁসে দিলো,,,সুজন মুগ্ধ নয়নে তুলির হাসিটা উপভোগ করলো,,,তুলি হাসি থামিয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,
“”সুজন ভাই!আপনি এতো হাসিল কথা কি কলে বলেন!আপনাল প্রতিটা কথায় আমাল খুব ভালো লাগে,আপনি সালাজীবন এমন কলেই কথা বলবেন””
সুজন তুলির কথা শুনে রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”আমাকে দেখে কি তোর জোকার মনে হয়!””
তুলি সুজনের রাগ দেখে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে হালকা শব্দ করে বললো,,,
“”না সুজন ভাই!আমি সেটা কখন বললাম!””
সুজন শোয়া থেকে উঠে বসে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”তোর কথাবার্তা শুনে তো সেটাই মনে হয়,এসব কথা ছেড়ে বই নিয়ে পড়তে বস,আর হ্যাঁ!শুধু একটা চান্স দিয়েছি তোকে,কথাটা মাথায় রাখিস””
কথাগুলো বলে বেড থেকে নেমে গেলো,,,তুলি শোয়া থেকে উঠে বসে কপাল কুঁচকে বিরবির করে বললো,,,
“”ভাবীল মুখে শুনেছি!বাসল লাত নাকি অনেক লোমাঞ্চকল হয়,কিন্তু আমাল বেলায় কেনো তাল উল্টো হলো!””
সুজন মিররের সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে গিয়ে তুলির বলা কথা গুলো শুনে মুখ টিপে হাসলো,,,তুলি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বিরবির করে বললো,,,
“”ভাবী,লিয়া,আমাল বন্ধুলা যখন জানতে চাইবে!তুলি!তোল বাসল লাতেল কোনো লোমাঞ্চকল মুহুর্ত বল!তখন আমি কি বলবো!আমাল সাথে তো তেমন কিছুই হয়নি!””
সুজন তুলির কথা শুনে মুখ টিপে হেঁসে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে রাগী লুক নিয়ে তুলির পাশ বসে কপাল কুঁচকে বললো,,,
“”একা একা কি বিরবির করছিস,বাসর রাতে রোমান্স করতে হয় তোকে কে বললো!””
তুলি সুজনের রাগী লুক দেখে শুকনো ঢোক গিলে কিছু বলতে যেতেই সুজন শাহাদাৎ আঙুল উঁচিয়ে তুলির ঠোঁট চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বললো,,,
“”শশশশশশশশ””
সুজন নেশা ভরা দৃষ্টিতে তুলির চোখে তাকালো,,,তুলি সুজনের চাহনি দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো,,,সুজন ধীরে ধীরে তুলির ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো,,,তুলি ঘনঘন শ্বাস নিয়ে মুচকি হেঁসে আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে রইলো,,,সুজন তুলির ঠোঁট দুটো নিজের দখলে করে নিলো,,,তুলি চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে চেয়ে রইলো,,,
তুলির গরম নিঃশ্বাস গভীর থেকে গভীর হতে লাগলো,,,তুলি সুজনের মাথার চুল খামচে ধরে রেসপন্স করতে লাগলো,,,একমিনিট পর সুজন তুলিকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”এবার আশা করি তোর মনের আকাঙ্ক্ষা দূর হয়েছে,কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে বলিস এতোটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিলো,মাথামোটা একটা!””
তুলি সুজনের কথা শুনে মুচকি হেঁসে বেড থেকে নেমে দাঁড়িয়ে নেশা ভরা দৃষ্টিতে সুজনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,,,সুজন কপাল কুঁচকে চেয়ে রইলো তুলির দিকে,,,তুলি বাম হাতে সুজনের গলা জড়িয়ে ধরে দাঁড়ালো,,,সুজন তুলির কান্ড দেখে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,,,তুলির নেশা ভরা চোখের দিকে চেয়ে মনে মনে বললো,,,
“”বাব্বাহ্!আমার তোতলা রানী দেখছি হেব্বি রোমান্টিক,এতো রোমান্টিকতা দেখলে তো নিজেকে কন্ট্রোলে রাখা মুশকিল হয়ে যায়””
তুলি মুচকি হেঁসে ডান হাতের শাহাদাৎ আঙুল উঁচিয়ে সুজনের ঠোঁটের দিকে চেয়ে ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে বললো,,,
“”সুজন ভাই!আমাল জীবনে প্রথম কিস ছিলো এটা,ভালোই তো লাগলো,কিন্তু ভালো কলে উপভোগ কলতে পালিনি আমি,আলেকটা কিস কলুন না আমায়!””
সুজন তুলির কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে সময় লাগলো,,,মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে তুলিকে ধাক্কা দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে তুলির ঠোঁট দুটো নিজের আয়ত্তে নিলো,,,তুলি নিজেও সুজনের সাথে রেসপন্স দিতে লাগলো,,,পাক্কা তিন মিনিট হয়ে গেলো তবুও সুজন ছাড়ছেনা দেখে তুলি কথা বলার চেষ্টা করলো,,,
কিন্তু কথা বলতে না পেরে শুধু উমমমমমম শব্দ করতে লাগলো,,,তুলির নিঃশ্বাস আঁটকে যেতে লাগলো তবুও সুজন ছাড়ছেনা দেখে তুলি সুজনের পিঠে আলতো কিল ঘুষি দিতে লাগলো,,,তুলির চোখ দিয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো,,,অবস্থা বেগতিক দেখে সুজন পাক্কা চার মিনিট পর তুলিকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দিলো,,,
তুলি বেডে বসে বুকে হাত দিয়ে ঘনঘন কয়েকটি শ্বাস নিয়ে ঠোঁটে স্পর্শ করে দেখলো ঠোঁট কেঁটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে,,,সুজন মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”আশা করি এই কিসটা খুব ভালো করে উপভোগ করেছিস তুই!প্রথম এবং শেষ!দুটোই স্বরণীয় করে রাখ তোর মনে,আমি শেষ বারের মতো বলছি!মেডিকেল এডমিশনের আগে এসব চিন্তা ভাবনা মাথায় এনেছিস তো!তোর সাথে এর থেকে খারাপ কিছু করবো বলে দিলাম””
তুলি হাত দিয়ে ঠোঁটের রক্ত মুছতে মুছতে অশ্রু সিক্ত নয়নে সুজনের দিকে চেয়ে মৃদু স্বরে বললো,,,
“”আপনি খুব খালাপ সুজন ভাই,যাকে বলে নষ্ট খালাপ,আপনি আস্ত একটা লাক্ষস,আমি আল কখনো আপনাল কাছে কিছু চাইবো না””
তুলির চাহনি দেখে সুজনের হৃদয়টা ভেঙেচুরে ক্ষয় হয়ে যেতে লাগলো,,,তুলির ঠোঁটে রক্ত দেখে সুজন চমকে উঠলো,,,ঠোঁট ফুলে গেছে দেখে সুজন মনে মনে বললো,,,
“”নাহ্!বাড়াবাড়ি টা বোধহয় বেশি করে ফেলেছি,আমার এমন টা করা মোটেও উচিত হয়নি””
তুলির ঠোঁট জ্বলে পুরে ছারখার হয়ে যাচ্ছে,,,তুলি ঠোঁট দুটো হাত দিয়ে ঢেকে রেখে বেডে বসে কাঁদতে লাগলো,,,সুজন মিররের ড্রয়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স থেকে অয়নমেন্ট নিয়ে তুলির পাশে বসলো,,,তুলির মুখ থেকে হাত সরাতে গেলে তুলি এক ঝটকায় সুজনের হাত সরিয়ে দিলো,,,
সুজন রাগী লুক নিয়ে তুলির দিকে চেয়ে জোর করে তুলির হাত ধরল,,,তুলি সুজনের রক্তিম বর্ন চোখ দেখে ভয়ে শান্ত হয়ে গেলো,,,ঠোঁটের ব্যাথায় নিরবে শুধু চোখের অশ্রু ঝড়াতে লাগলো,,,সুজন তুলির ঠোঁটে আলতো করে অয়নমেন্ট লাগিয়ে দিয়ে করুন স্বরে বললো,,,
“”তোর খুব লেগেছে না!খুব কষ্ট হচ্ছে তোর!আমি খুব স্যরি তুলি””
কথাগুলো বলে তুলির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো,,,আবেশে তুলি চোখ দুটো বন্ধ করে নিলে চোখের পানি গাল বেয়ে পড়লো,,,তুলি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ম্লান হেঁসে বললো,,,
“”আপনি এতোদিন শুধু আমাল মনকে আঘাত কলতেন,কিন্তু আজ আপনি আমাল শলীল কেও আঘাত কললেন সুজন ভাই,কিন্তু তাতেও আমাল কোনো আফসোস নেই,কেনো জানেন!””
সুজন তুলির কথা শুনে কপালে সুক্ষ ভাঁজ ফেলে তুলির দিকে চেয়ে রইলো,,,তুলির চোখের পানি দু’হাতের উল্টো পিঠে মুছে নিয়ে স্মিত হেঁসে বললো,,,
“”আঘাত কলাল পল যদি আপনি ভালোবেসে আমাল আঘাতে মলম লাগিয় দেন!তাহলে আমি হাজাল বাল এল থেকেও আপনাল দীর্ঘ আঘাত সইতে লাজি””
সুজন তুলির কথা শুনে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে তুলির পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”তুই জীবনেও শুধরবি না,মিনি মাম লজ্জা টুকু থাকা উচিত তোর””
কথাগুলো বলে অয়নমেন্ট ফার্স্ট এইড বক্সে রাখলো,,,তুলি সুজনের কথা শুনে খিলখিল করে হেঁসে দিয়ে মৃদু স্বরে বললো,,,
“”আপনাল কাছে আবাল কিসেল লজ্জা সুজন ভাই!আপনাল কাছে লজ্জা পেলে আমি তো কখনো মাতৃত্বের স্বাধই অনুভব কলতে পালবো না””
সুজন তুলির কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তুলির দিকে চেয়ে কপাল কুঁচকে মনে মনে বললো,,,
“”কি মেয়েরে বাবা!এতো রোমান্টিক চিন্তা ধারা আসে কি করে এর মাথায়!এতো দেখছি আমার থেকে আরও একধাপ এগিয়ে””
সুজন তুলির দিকে রাগী লুক নিয়ে চেয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো,,,তুলি সুজনের যাবার পথে চেয়ে মুচকি হেঁসে মনে মনে বললো,,,
“”সুজন ভাই!এই যে আপনি সালাক্ষন আমাল সাথে লাক্ষসেল মতো কথা বলেন,এটা পলিবর্তন কলে আপনাল লাক্ষস মনটাকে নষ্ট কলে দিতে আমাকে তো এই টুকু দুষ্টু হতেই হবে””
সুজন ফ্রেশ হয়ে আসলে তুলি ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে ঢুকলো,,,সুজন বেডে বসে ফোন ঘাটতে লাগলো,,,তুলি ফ্রেশ হয়ে লং কামিজের সাথে প্লাজু পরে মিররের সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল আঁচড়াতে লাগলো,,,
সুজন মুচকি হেঁসে ফোনের স্কিনে চেয়ে আঁড়চোখে তুলিকে দেখতে লাগলো,,,তুলি মিররের ভিতর থেকে সুজনের মুচকি হাসি দেখে কপাল কুঁচকে মনে মনে বললো,,,
“”সুজন ভাই ফোনেল স্কিনে চেয়ে এতো হাসছে কেনো!সুজন ভাই গার্লফ্রেন্ডেল সাথে চ্যাট কলছেনা তো আবাল!আমাকে দেখতে হবে ব্যাপালটা””
#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ১৪
“”সুজন ভাই ফোনেল স্কিনে চেয়ে এতো হাসছে কেনো!সুজন ভাই গার্লফ্রেন্ডেল সাথে চ্যাট কলছেনা তো আবাল!আমাকে দেখতে হবে ব্যাপালটা””
কথাগুলো মনে মনে ভাবতেই সুজন বেড থেকে নেমে দাঁড়ালো,,,ফোনটা বেডের উপর রেখে বেরিয়ে যেতে গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”নাস্তা করতে যাবি!নাকি সারাদিন ধরে চুল চিরুনিই করতে থাকবি!””
তুলি ভাবনায় বিভোর থাকায় সুজনের কর্কশ কন্ঠ শুনে কিছুটা চমকে গেলো,,,শুকনো ঢোক গিলে জোর করে হাসার চেষ্টা করে মাথা উপর নিচ করে বললো,,,
“”হুম!যাচ্ছি””
সুজন তুলির দিকে কপাল কুঁচকে চেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,তুলি চিরুনি মিররের উপর রেখে বুকে হাত দিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললো,,,
“”সুজন ভাই!আপনি কাল সাথে ফোনে চ্যাট কলছিলেন!আমাকে সেটা এক্ষুনি দেখতে হবে””
তুলি দ্রুত সুজনের ফোনটা হাতে নিয়ে স্কিনে চেয়ে দেখলো ফোন লক করা,,,ফোনে যা নয় তাই পাসওয়ার্ড দিয়ে ফোনের লক খোলার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো,,,লক খুলতে না পেরে একবুক হতাশা নিয়ে ফোনটা জায়গা মতো রেখে দিয়ে বিরবির করে বললো,,,
“”লাক্ষস একটা!ফোনে পাসওয়ার্ড কেনো দিতে হবে!আমাল ও টাচ্ ফোন আছে!কই!আমি তো কখনো পাসওয়ার্ড দিয়ে লাখিনা,যত্তসব””
তুলি রুম থেকে বের হচ্ছেনা দেখে ফোনটা নেওয়ার উদ্দেশ্যে সুজন দ্রুত রুমের দরজায় এসে তুলির বলা কথাগুলো শুনে কপাল কুঁচকে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”কি হয়েছে তুলি!কাকে রাক্ষস বলছিস””
তুলি সুজনের কথা শুনে চমকে উঠলো,,,তুলি সুজনকে দেখে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো,,,সুজন তুলির চমকানো দেখে কপাল কুঁচকে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”সারাক্ষণ কি ভাবিস বলতো!কিছু বললেই দেখি চমকে উঠিস,সমস্যা কি তোর!””
কথাটা বলে ফোনটা হাতে নিয়ে লক খুলতে গেলো,,,কিন্তু ফোনে আগে থেকে লক খোলার চেষ্টা করা হয়েছে,,,যার কারনে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হবে,,,এটা দেখে সুজন রাগী লুক নিয়ে তুলির দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যেতেই তুলি শুকনো ঢোক গিলে বললো,,,
“”সুজন ভাই!আমাল চমকে ওঠাল মূল কালন আপনাল কর্কশ কন্ঠে কথা বলা,আমি তো অন্য কালো কথায় চমকায় না,আপনাল কথা শুনলেই ভয়ে আপনাল কাছে যেতেও ইচ্ছে কলে না””
সুজন তুলির কথা শুনে কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেলো না,,,তুলি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে আলতো করে চোখের পলক ফেলে মৃদুস্বরে বললো,,,
“”সুজন ভাই!আমি র উচ্চালণ ঠিকই কলতে পালি,কিন্তু আপনাল কর্কশ কন্ঠে কথা বলা,আল আপনাকে দেখে ভয় পাওয়া,এই দুটো কালনে আমাল উচ্চালণ সঠিক হয় না””
তুলির কথা শুনে সুজন কপালে সুক্ষ ভাঁজ ফেলে তুলির দিকে চেয়ে রইলো,,,তুলি রুম থেকে বেরিয়ে যেতে গিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে চেয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,
“”সুজন ভাই!যখন আপনাল এই কর্কশ কন্ঠ পলিবর্তন হবে,আপনাকে দেখে আমাল মনেল ভয় কাটবে,তখন হয়তো আমাল উচ্চালণ কলাটা সঠিক হবে!যেদিন আমি সঠিক উচ্চালণ কলে কথা বলতে পালবো!সেদিন ভাববেন আমাল মনেল ভয়টা কেটে গেছে””
সুজন তুলির কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো,,,গম্ভীর মুখ করে তুলিকে কিছু বলতে যেতেই তুলি কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে বললো,,,
“”আমাল মনেল ভয় কাটানোল সম্পূর্ণ দায়িত্ব আপনাল,আপনি কি কলে আমাল মনেল ভয় দূল কলবেন!সেটা না হয় আপনিই ভেবে দেখুন””
কথাগুলো বলে তুলি গটগট করে হেঁটে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,সুজন তুলির যাবার পথে চেয়ে ধপ করে বেডে বসে পড়লো,,,কপাল কুঁচকে মনে মনে বললো,,,
“”তুলি আমাকে দেখে এতোটা ভয় পায়!তুলির মন থেকে ভয় কাটানোর জন্য আমাকেই কিছু একটা করতে হবে””
কথাগুলো ভেবে ফোনটা রেখেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,নাস্তার টেবিলে বসে তুলির দিকে একপলক চেয়ে মনে মনে কিছু ভেবে মুচকি হাসলো,,,খাবার খেতে খেতে সকলের উদ্দেশ্য মৃদুস্বরে বললো,,,
“”আমাকে আজ রাতেই সিলেট ব্যাক করতে হবে,মা!তোমরা কিছুদিন থেকে এসো!আমার তো ছুটিও নেই যে কয়েকদিন থাকবো””
সুজনের চলে যাবার কথা শুনে তুলির মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো,,,চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো,,,বিয়ে হয়েছে কতদিন হয়ে গেলো,,,তবুও সুজনের সাথে ভালো করে সময় কাটানো তো দূরের কথা!ভালো করে দুটো কথাও বলতে পারেনা,,,চোখের পানি আড়াল করতে খাবার না খেয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে চলে গেলো,,,
উপস্থিত সকলে তুলির যাবার পথে চেয়ে কপাল কুঁচকে একে অপরের দিকে তাকালো,,,সুজন তুলির যাবার পথে একপলক চেয়ে খাবার খেতে লাগলো,,,তুলি খাবার ছেড়ে উঠে যাওয়ায় সকলের মাঝে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করলো,,,নীরবতা কাটিয়ে শাহানাজ বেগম মৃদুস্বরে বললো,,,
“”মেয়েটা না খেয়ে উঠে গেলো কেনো!কিছুই তো বুঝতে পারলাম না,আমি বরং খাবার টা তুলির রুমে দিয়ে আসি””
কথাটা বলে তুলির খাবার প্লেট হাতে নিলে সুজন চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বললো,,,
“”ছোট মামী!আমার খাওয়া শেষ,আমি তুলির খাবার নিয়ে যাচ্ছি””
কথাটা বলে দ্রুত হাত ধুয়ে তুলির খাবার নিয়ে রুমে গেলো,,,উপস্থিত সকলে সুজনের কথা শুনে মুখ টিপে হাসলো,,,রিয়া সুজনের যাবার পথে চেয়ে মৃদু হেঁসে মুখ ফসকে বললো,,,
“”হাউ রোমান্টিক!সুজন ভাই এতো রোমান্টিক কবে কবে হলো!””
রিয়ার কথা শুনে উপস্থিত সকলে চোখ বড়বড় করে রিয়ার দিকে তাকালো,,,ইভা রিয়ার হাতে চিমটি কেটে ফিসফিসিয়ে বললো,,,
“”কি হচ্ছে কি রিয়া!বুঝে শুনে কথা বলবিতো!বড়রা সবাই আছে এখানে””
রিয়া ইভার কথা শুনে হাত ঢলতে ঢলতে সবার দিকে একপলক চেয়ে জোর করে হাসার চেষ্টা করলো,,,সুজন রুমে এসে দেখলো তুলি বেডে হাঁটুর ভাঁজে মাথা গুঁজে বসে আছে,,,সুজন খাবার প্লেট টা বেডের উপর রেখে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”তুলি!হঠাৎ করে কি হলো তোর!খাবারের উপর রাগ করতে নেই,চুপচাপ খেয়ে নে””
তুলি সুজনের কথা শুনে মাথা উঁচু করে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,,,
“”আমাল যখন ইচ্ছে হবে আমি খেয়ে নিবো,আমি আপনাকে বলেছি!আমাল খাবাল নিয়ে লুমে আসুন!””
তুলি মাথা উঁচু করলে সুজন তুলির চোখে পানি দেখে থমকে গেলো,,,তুলি রুমে এসে কাঁদছিলো ভাবতেই সুজনের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠলো,,,সুজন তুলির পাশে বসে মৃদুস্বরে বললো,,,
“”তুলি!কি হয়েছে তোর,কাঁদছিস কেনো!””
তুলি সুজনের কথা শুনে রাগী লুক নিয়ে বললো,,,
“”আমাল কাঁদতে ইচ্ছে কলছে তাই কাঁদছি,আপনাল কোনো সমস্যা আছে!থাকলে বলুন!আমি অন্য কোথাও গিয়ে কাঁদবো””
সুজন তুলির কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,তুলি রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”এতোদিন বিয়ে হয়েছে আমাদেল,অথচ দেখো!স্বামীল সাথে একাকি একটা মুহুর্তও কাটাতে পাললাম না,স্বামীল ভালোবাসা পেতে হলে নাকি আমাকে শর্ত পুলন কলতে হবে,আমাল মনই যদি অশান্ত থাকে!তাহলে আমি শর্ত পুলন কলবো কি কলে!লাগবেনা আমাল এমন ভালোবাসা””
সুজন তুলির কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,হাসবে না কাঁদবে বুঝে উঠতে সময় লাগলো,,,তুলির দিকে কপাল কুঁচকে তাকালে তুলি বেড থেকে নামতে গিয়ে বললো,,,
“”না আছে আমাল ঘল!না আছে আমাল বল!সব কিছু থেকেও আমাল কিছুই নেই,এমন বিয়েল বন্ধনে আমি আঁটকে থাকতে চাই না,আমি এক্ষুনি গিয়ে সবাই কে বলবো আমি বিয়েটা ভেঙে দিতে চাই””
কথাটা বলে চলে যেতে গেলে সুজন পিছন থেকে খপ করে তুলির হাত টেনে ধরলো,,,তুলি রাগী লুক নিয়ে সুজনের দিকে চেয়ে হাত ছাড়াবার বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো,,,তুলি আজ ভীষণ রেগে গেছে বুঝতে পেরে সুজন মুচকি হেঁসে বললো,,,
“”তুলি!তুই সিলেট যাবি আমার সাথে!””
সুজনের মুচকি হাসির সাথে মৃদুস্বরে বলা কথা শুনে তুলির রাগ নিমিষেই পানি হয়ে গেলো,,,তুলি চোখ দুটো গোল করে মনে মনে বললো,,,
“”এটা কি সুজন ভাই!নাকি সুজন ভাইয়েল ছায়া,আমি স্বপ্ন দেখছি না তো!সুজন ভাই কি সত্যি এতো সুন্দল কলে কথা বলছে আমাল সাথে!একটা চিমটি কেটে দেখি তো!””
তুলি নিজের হাতে চিমটি কেটে ব্যাথা পেয়ে আহ্ করে উঠলো,,,সুজন তুলির বোকামো দেখে মৃদুস্বরে বললো,,,
“”আমি তোর থেকে দূরে থাকলে তোর পড়াশোনায় লাল বাতি জ্বলবে এটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি,আমি সিলেট তোকে কোচিং এ ভর্তি করে দিবো,এখন খাবার টা খেয়ে ব্যাগ প্যাক করে রাখ””
তুলি সুজনের কথা শুনে সব কিছু ভূলে খুশিতে টুপ করে সুজনের গালে কিস করে দিলো,,,সুজন তুলির কান্ড দেখে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে তুলির দিকে তাকালো,,,তুলি নিজের বোকামি বুঝতে পেরে লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো,,,সুজন মুচকি হেঁসে মনে মনে বললো,,,
“”পাগলি একটা!””
সুজন গলাটা খ্যাক করে মৃদুস্বরে বললো,,,
“”তুলি!আমি কেয়ারিং হ্যাজবেন্ড হয়ে তোর সব কিছুর কেয়ারিং আমি করবো!কিন্তু!মেডিকেলে চান্স না পাওয়া অবদ্ধি তুই আমার ভালোবাসা এমনকি স্বামীর অধিকারও পাবিনা,কথাটা মাথায় রাখিস””
তুলি মাথা নিচু করে সুজনের কথা গুলো শুনলো,,,সুজন নিজের বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে বললো,,,
“”খাবার খেয়ে শেষ কর,আমি সবাই কে গিয়ে বলছি!তুই আমার সাথে সিলেট যেতে চাস””
কথাগুলো বলে সুজন গটগট করে হেঁটে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,সুজন চলে যেতেই তুলি সুজনের যাবার পথে একপলক চেয়ে খুশিতে উরাধুরা ড্যান্স শুরু করে দিলো,,,সুজন দরজার আঁড়ালে দাঁড়িয়ে তুলির কান্ড দেখে স্মিত হেঁসে চলে গেলো,,,তুলি স্মিত হেঁসে বেডে পা ঝুলিয়ে বসে মনে মনে বললো,,,
“”সুজন ভাই!আপনাল সাথে সিলেট যাবাল অনুমতি যখন পেয়ে গেছি,তখন এডমিশনেল আগে আপনাল ভালোবাসাও আমি ঠিক পেয়ে যাবো””
চলবে,,,
চলবে,,,
(