#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ১৫
“”সুজন ভাই!আপনাল সাথে সিলেট যাবাল অনুমতি যখন পেয়ে গেছি,তখন এডমিশনেল আগে আপনাল ভালোবাসাও আমি ঠিক পেয়ে যাবো””
কথাগুলো মনে মনে ভেবে স্মিত হাসলো,,,সুজন সবাই কে বলে তুলিকে নিয়ে যাবার অনুমতি পেলো,,,তুলি দ্রুত খাবার খেয়ে শেষ করে নিজের ব্যাগ সাথে সুজনের ব্যাগ গুছিয়ে রাখলো,,,
❤️❤️❤️❤️❤️❤
সুজন তুলি সবার থেকে বিদায় নিয়ে রাতের বাসে রওনা করলো সিলেটের উদ্দেশ্য,,,এই প্রথম তুলি রাতের বেলা লং জার্নি করছে,,,রাতের দৃশ্যগুলো সত্যি মনো মুগ্ধকর হয়,,,তুলি মিটিমিটি হেঁসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে চাঁদনী রাতের দৃশ্য উপভোগ করছে,,,
সুজন তুলিকে সাথে নিয়ে যেতে পেরে মনে মনে খুব খুশি হলো,,,প্রতিদিন একবার হলেও অন্ততো তুলিকে দেখতে পাবে ভেবে তুলির মুখের দিকে চেয়ে ঠোঁটের হাসিটা প্রসারিত হলো,,,সুজন হাসি মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে তুলির হাসিমাখা মুখের পানে,,,মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”তুলি!””
তুলি সুজনের ডাক শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,,,
“”কি হয়েছে সুজন ভাই!””
সুজন আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে কপালে সুক্ষ ভাঁজ ফেলে মনে মনে বললো,,,
“”নাহ্!অচেনা লোকজনের মাঝে কর্কশ কন্ঠে কথা বলা ঠিক হবে না আমার””
তুলি কপাল কুঁচকে সুজনের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো,,,সুজন গলাটা খ্যাক করে তুলির দিকে হালকা ঝুকে চাঁপাস্বরে বললো,,,
“”এতো খুশি কেনো তুই!তোর মুখটা দেখে মনে হচ্ছে!তুই হানিমুন করতে যাচ্ছিস!এতো খুশির কারন কি!””
কথাটা বলে সীটে মাথা এলিয়ে দিয়ে ঠিক হয়ে বসলো,,,তুলি সুজনের দিকে চেয়ে স্মিত হেঁসে মৃদুস্বরে বললো,,,
“”সুজন ভাই!আমি আমাল স্বামীল সংসালে পা লাখতে চলেছি,এটা কি আমাল খুশিল অন্যতম কালন নয়!””
সুজন তুলির কথা শুনে রাগী লুক নিয়ে কপাল কুঁচকে চাঁপা স্বরে বললো,,,
“”এতো খুশি হবার কিছু হয়নি তুলি,তোকে মেডিকেলে ঢুকতে বলেছি আমি,স্বামীর সংসারে নয়,কথাটা তোর মোটা মাথায় ভালো করে ঢুকিয়ে নে,যত্তসব””
তুলি সুজনের কথা শুনে মুখ ভেঙচি কেটে রাগ করে গা থেকে শালটা খুলে সুজনের কোলের উপর ছুড়ে দিয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বললো,,,
“”মুড টায় নষ্ট কলে দিলো,লাক্ষস একটা!””
সুজন কপাল কুঁচকে তুলির দিকে তাকালে তুলি আবারো সুজনকে মুখ ভেঙচি কেটে জানালার বাইরে তাকিয়ে রাতের দৃশ্য দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো,,,
সুজন তুলির মুখ ভেঙচি কাটা দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,সুজন শালটা তুলির গায়ে জড়িয়ে দিলে তুলি এক ঝটকা দিয়ে শালটা গুছিয়ে সুজনের মুখে ছুড়ে মারলো,,,সুজন তুলির রাগ হয়েছে বুঝতে পেরে স্মিত হেঁসে শালটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিলো,,,তুলি মুখটা গম্ভীর করে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে বিরবির করে বললো,,,
“”কত সুন্দল একটা চাঁদনী লাত!ভেবেছিলাম পাশে বসে হাতে হাত লেখে স্বামীল কাঁধে মাথা লেখে জার্নিটা উপভোগ কলবো,কিন্তু তা আল হলো কোথায়!স্বামী তো নয়!যেনো বাঘেল থাবাল মুখে বসে আছি,যত্তসব””
সুজন তুলির কথা শুনতে পেয়ে মনে মনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো,,,তুলি আকাশের দিকে চেয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বিরবির করে বললো,,,
“”ওহ গড!তুমি এই আনলোমান্টিক মানুষটাকেই কেনো আমাল কপালে লাখলে,আমাল এইটুকু মনে!স্বপ্ন সাজানোল আগেই তো এই লাক্ষসটা স্বপ্ন ভেঙে দেই!””
সুজন তুলির কথা শুনে মুচকি মুচকি হেঁসে চলেছে,,,বাসের ভিতর থেকে লাইট অফ করে হালকা মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখা,,,মাঝেমাঝে রাস্তার ল্যম্পোস্টের মৃদু আলো গাড়ির ভিতর বজ্রপাতের মতো আলো দিয়ে যাচ্ছে,,,বাসের ভিতর প্রায় সবাই সীটে মাথা এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে গেছে,,,তুলি ঠান্ডায় কাঁপছে তবুও রাগ করে শাল গায়ে জড়ালো না,,,
সুজন সীটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো,,,তুলি আর বেশিক্ষণ জেগে থাকতে পারলোনা,,,সীটে মাথা এলিয়ে দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করলো তুলির চোখে,,,কিছুসময় পর সুজন তুলির ঘনঘন শ্বাস পড়ছে বুঝতে পেরে তুলির মাথা আলতো করে ধরে নিজের কাঁধে রাখলো,,,
ঠান্ডায় তুলির গা হাত পা শীতল হয়ে গেছে,,,সুজন গা থেকে শালটা খুলে ডান হাতে তুলিকে জাপটে ধরে তুলিসহ নিজে শালের মধ্যে আবদ্ধ করে নিলো,,,ঘুমের মাঝে গায়ে উষ্ণতা পেয়ে তুলি দু’হাতে সুজনের গলা জড়িয়ে ধরলো,,,সুজন স্মিত হেঁসে তুলির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে মনে মনে বললো,,,
“”এতোক্ষনে স্বস্তি পেলাম,বকবক করে আমার মাথাটাই পাগল করে দিচ্ছিলো,পাগলি একটা!””
হালকা মৃদু আলোয় সুজন অপলক দৃষ্টিতে তুলির ঘুমন্ত মুখের পানে চেয়ে রইলো,,,পুরো জার্নিটা সুজন তুলির ঘুমন্ত মুখের পানে চেয়ে ছিলো,,,স্টেশনে নামার আগ মুহুর্তে সুজন তুলিকে জাগিয়ে দিলো,,,তুলি সুজনের গলা জড়িয়ে ধরে আছে বুঝতে পেরে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে দুহাত সরিয়ে নিলো,,,
দ্রুত নিজের সীটে ভালোভাবে বসতে গিয়ে দেখলো,,,সুজন শাল পেচিয়ে একহাতে তুলিকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে,,,তুলি নিজের মাথায় নিজেই একটা গাট্টা দিয়ে স্মিত হাসলো,,,স্টেশনে এসে বাস থেকে নেমে দুজনে রেস্তোরাঁ থেকে ডিনার করে নিলো,,,বাসায় পৌঁছাতে রাত প্রায় একটা পার হয়ে গেলো,,,
তুলি বাসায় ঢুকে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে টিশার্ট আর ট্রাউজার পরে শুয়ে পড়লো,,,সুজন ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো তুলির চোখ দুটো বন্ধ,,,তুলি ঘুৃমিয়ে পড়েছে ভেবে লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে বেডে এসে শুয়ে পড়লো,,,তুলি দ্রুত সরে এসে সুজনের গায়ের উপর পা তুলে দিলো,,,
সুজন তুলির কান্ড দেখে রাগী লুক নিয়ে কপাল কুঁচকে কিছু বলতে যেতেই তুলি সুজনের বুকে মাথা রেখে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো,,,সুজন শুয়ে থেকেই মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে বললো,,,
“”তুলি!কি হচ্ছেটা কি!গায়ে পা দিলি কেনো!””
তুলি সুজনের বুকে মাথা রেখে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”এই চুপ কলুন তো!সালাক্ষন শুধু সিংহেল মতো গর্জন কলতেই থাকে,এই ভাবে না শুলে আমাল ঘুম আসেনা,গায়ে পা দিয়েছি বেশ কলেছি””
সুজন তুলির কথা শুনে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,
“”তুলি!বেশি বাড়িস না বলে দিলাম,এর ফল কিন্তু ভালো হবে না””
তুলি সুজনের কথা শুনে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে হতাশ হয়ে বললো,,,
“”আবাল সেই একই হুংকাল!সুজন ভাই!এতো কথা না বলে আমায় ঘুমাতে দিন,আল নিজেও ঘুমান”
সুজন তুলির কথা শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,আর কিছু না বলে চুপটি করে শুয়ে থেকে তুলির অজান্তে মিটিমিটি হাসতে লাগলো,,,তুলি সুজনের বুকে মাথা রেখে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মৃদু স্বরে বললো,,,
“”সুজন ভাই!একটা কথা না!আমি ভালো কলে বুঝে গেছি””
সুজন কপালে সুক্ষ ভাঁজ ফেলে মৃদুস্বরে বললো,,,
“”কি বুঝে গেছিস!””
তুলি চোখের পলক ফেলে মৃদুস্বরে বললো,,,
“”না আপনাল কর্কশ কন্ঠ বদলাবে!আল না আমাল উচ্চালণ সঠিক হবে,আপনি সালাজীবন এমনই কথা বলুন,ছোট থেকেই আপনাল কর্কশ কন্ঠ শুনে শুনে আমি অভ্যস্ত,তাই পলিবর্তন না হলেও সমস্যা নেই,কিন্তু আমাকে একটু তো ভালোবাসতেই পালেন তাইনা!””
সুজন তুলির কথা শুনে স্মিত হেঁসে দু’হাতে তুলিকে জড়িয়ে ধরে মনে মনে বললো,,,
“”তোতলা রানী!তোমায় তো খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করে,কিন্তু আমাদের দু’জনের মাঝে যে তোমার মেডিকেল এডমিশন বাঁধা হয়ে আছে””
সুজন তুলিকে জড়িয়ে ধরায় তুলি স্মিত হাসলো,,,সুজন চোখ দুটো বন্ধ করে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে মনে মনে বললো,,,
“”আমি সাড়াশব্দ দিলে তুলি কথা বলেই যাবে,তারচেয়ে ভালো আমি চুপচাপ চোখ দুটো বন্ধ করে থাকি””
খরগোশের মতো মাথা উঁচু করে সুজনের মুখের দিকে চেয়ে দেখলো সুজন ঘুমিয়ে পড়েছে,,,তুলি ভেবেছিলো হয়তো সুজন ইচ্ছে করেই তুলিকে জড়িয়ে ধরেছে,,,তুলি একবুক হতাশা নিয়ে মুখটা গম্ভীর করে সুজনের বুকে মাথা রেখে চুপচাপ শুয়ে মনে মনে বললো,,,
“”সুজন ভাই!আমাল কেনো জানিনা সালাক্ষন মনে হয়!আপনাল কোনো গার্লফ্রেন্ডই নেই,আপনি গার্লফ্রেন্ডেল কথা মিথ্যা বলেন আমায়””
তুলি মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললো,,,
“”সুজন ভাই!আপনি আমাকেই ভালোবাসেন,আল সেটা আপনাল মুখ থেকে কালই শুনবো,আপনাল মুখ থেকে ভালোবাসাল কথা শুনাল জন্য আমাকে একটু অভিনয় কলতে হবে””
#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ১৬
“”সুজন ভাই!আপনি আমাকেই ভালোবাসেন,আল সেটা আপনাল মুখ থেকে কালই শুনবো,আপনাল মুখ থেকে ভালোবাসাল কথা শুনাল জন্য আমাকে একটু অভিনয় কলতে হবে””
কথাগুলো মনে মনে ভেবে মুচকি হেঁসে চোখ বন্ধ করলো,,,অল্পকিছু সময়ের মধ্যে দুজনের চোখেই রাজ্যের ঘুম এসে ভর করলো,,,সকালে ভোরের আলো ফুটতেই তুলির ঘুম ভেঙে গেলো,,,আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলে চেয়ে দেখলো সুজন চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে,,,
তুলি আস্তে করে সুজনের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে স্মিত হেঁসে কপালে আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিলো,,,ধীরে ধীরে বেড থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে একটা চিরকুট লিখে সেন্টার টেবিলের উপর রেখে ফোন চাঁপা দিয়ে রেখে দিলো,,,মনে মনে দুষ্টু বুদ্ধি এঁটে ফ্ল্যাটের সদর দরজা খোলা রেখে হালকা চাপিয়ে দিলো,,,
বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে ফ্ল্যাটের ভিতরই লুকিয়ে পরিস্থিতি দর্শন করতে লাগলো,,,সুজনের ঘুম ভাঙলে চোখ মেলে চেয়ে পাশে তুলিকে দেখতে না পেয়ে ধরফরিয়ে বেডে বসলো,,,তুলি হয়তো ড্রয়িং রুমে আছে ভেবে ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলো,,,মিররের সামনে দাঁড়িয়ে ভেঁজা চুল দু’হাতে আঁচড়িয়ে ঠিক করতে করতে মুচকি হেঁসে মনে মনে বললো,,,
“”তোতলা রানী!আমার ছুটি এখনো এক সপ্তাহ আছে,তোমার সাথে একাকি সময় কাটাতে খুব ইচ্ছে হলো,তাই একটু মিথ্যাের আশ্রয় নিলাম””
তুলি আড়াল থেকে সুজনকে মুচকি হাসতে দেখে কপাল কুঁচকে মনে মনে বললো,,,
“”সুজন ভাই হাসছে কেনো!আমাকে কি দেখে নিয়েছে নাকি!ধ্যাত!দেখলে দেখবে,তবুও আমি লুকিয়ে থাকবো””
সুজন টিশার্ট গায়ে জড়িয়ে মুচকি হেঁসে ড্রয়িং রুমে গেলো,,,তুলিকে দেখতে না পেয়ে কিচেনে খুঁজেও না পেয়ে সবগুলো রুম ভালো করে খুঁজে দেখলো,,,পুরো ফ্ল্যাটে কোথাও তুলিকে না পেয়ে মনের ভিতর ভয় ঢুকে গেলো,,,দ্রুত হেঁটে সদর দরজার কাছে আসলো,,,সদর দরজা খোলা দেখে মনের ভয়টা যেনো বাড়তে লাগলো,,,
দ্রুত রুমে এসে বাইকের চাবিটা নিয়ে ফোনটা নিতে গিয়ে একটা চিরকুট দেখতে পেলো,,,চিরকুট দেখে ভয়ে সুজনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ছুটতে লাগলো,,,শুকনো ঢোক গিলে তড়িঘড়ি করে চিরকুট খুলে দেখলো,,,তাতে লিখা,,,
“”সুজন ভাই!আমাকে খুঁজে লাভ নেই,আপনি যখন এই চিরকুট পড়বেন!তখন আমি আপনার কাছ থেকে বহু দূরে চলে যাবো,যার কাছে ভালোবাসা থাকেনা,তার সাথে কেউ বাস করতে পারেনা,আমি বাসায় ফিরবো না,কোথায় যে যাচ্ছি আমি নিজেও জানিনা,তবে যেখানেই থাকি না কেনো!আপনার ডিভোর্স পেপার আমি ঠিক পাঠিয়ে দিবো,এতো শর্ত দিয়ে কেনো ভালোবাসতে হবে শুনি!আমায় যদি একটু ভালোবেসে বলতেন!তুলি!আমার খুব ইচ্ছে!আমার বউ একজন বড় ডক্টর হবে,আমার এই ইচ্ছেটা পুরন করে দিবি!আমি হাসিমুখে আপনার ইচ্ছে পুরন করে দিতাম,নিজে থেকে তো কখনো কাছে আসেননি,কিন্তু!আমি যখনই আপনার কাছে যেতে চাই!আপনি তখনই লম্বা শর্ত জুড়ে দেন,কিন্তু কেনো সুজন ভাই!যে ভালোবাসা শর্ত রেখে হয়!ওটাকে কি ভালোবাসা বলা যায়!আমার তো মনে হয় ওটা কেনাবেচার সম্পর্ক হয়ে যায়,এতো কষ্ট করেও যদি আমি মেডিকেলে চান্স না পাই!তাহলে কি আমি কোনদিনও আপনার ভালোবাসা পাবোনা!হেরে গেলে তখন খুব কষ্ট হবে আমার,তাই আগে থেকে আপনার জীবন থেকে সরে গেলাম,আমি হয়তো ভেসে আসা মেঘের ভ্যালি হয়ে আপনার আকাশে এসেছিলাম!তাই আবার ভেসেই চলে গেলাম””
চিরকুট টা পড়ে সুজন বুকের বাম পাশে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো,,,নিঃশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে যেতে চাইলো,,,পুরো পৃথিবীর অক্সিজেন দিলেও হয়তো অক্সিজেনের ঘাটতি পরে যাবে,,,তুলিকে হারিয়ে ফেলেছে ভাবতেই নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো,,,চিরকুট হাতে নিয়ে হতাশ হয়ে ধপাশ করে হাঁটু ভেঙে ফ্লোরে বসে পড়লো,,,
তুলি আড়াল থেকে সুজনকে এভাবে বসতে দেখে ভয় পেয়ে গেলো,,,শুকনো ঢোক গিলে দাঁত দিয়ে নখ কাঁটার ভঙ্গিতে আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলো,,,সুজন চোখ দুটো আলতো করে বন্ধ করে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,,,
“”এমনটা কেনো করলে তুমি!কেনো বুঝলেনা আমার না বলা ভালোবাসার কথা!কেনো বুঝলেনা আমার রাগের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা!আমি এখন কোথায় খুঁজবো তোমায়!
কথাগুলো বলে দু’হাতে চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়ালো,,,বাইকের চাবিটা নিয়ে তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে লক করে বেরিয়ে পড়লো তুলির খোঁজে,,,তুলি সুজনের কথা শুনে আড়ালে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলো,,,সুজনের যাবার পথে চেয়ে কপাল কুঁচকে মনে মনে বললো,,,
“”সুজন ভাই আমাকে এতো ভালোবাসে!অথচ আমাকে এতোদিনে কিছুই বুঝতে দেইনি!আমিও কেমন মাথামোটা!সত্যিকালেল ভালোবাসা দেখেও দেখতে পেলাম না!””
তুলি নিজের মাথায় নিজেই একটা গাট্টা দিয়ে কপাল কুঁচকে বিরবির করে বললো,,,
“”তুলি!তুই এতো মাথামোটা কেনো!মেয়েলা নাকি ছেলেদেল চোখেল ভাষা পড়তে জানে!তাহলে তুই সুজনেল চোখেল ভাষা পড়তে পাললিনা কেনো!””
তুলি দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মৃদু স্বরে বললো,,,
“”তুলি!সুজন ঠিকই বলে!তুই আসলেই একটা মাথামোটা!ধ্যাত!তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা””
কথাগুলো বলে রুমে এসে বেডে পা ঝুলিয়ে বসলো,,,দু’হাতে পেট মুচড়ে ধরে মুখটা গম্ভীর করে বিরবির করে বললো,,,
“”খুব খুদা লেগেছে আমাল,সুজন ভাই কোথায় যে বেলিয়ে গেলো,নাহ্!খাবালেল ব্যবস্থা আমাকেই কলতে হবে দেখছি””
তুলি দ্রুত পায়ে কিচেনে ঢুকে কি রান্না করবে ভাবতে লাগলো,,,ফোনের ইউটিউব দেখে ডালে চালে মিশিয়ে খিচুড়ি রান্নার বন্দোবস্ত শুরু করলো,,,সব কিছু রেডি করে রান্না শেষ করতে করতে দুপুর হয়ে গেলো,,,সুজন বাইকে করে শহরের প্রতিটি গলির আনাচে কানাচে খুঁজেও তুলিকে না পেয়ে হতাশ হয়ে বাসায় ফিরে আসলো,,,
তুলি গোসল সেরে ডাইনিং টেবিলে খাবার রেখে কিছু একটা আনতে কিচেনে ঢুকলো,,,সেই সময় সুজন ফ্ল্যাটে ঢুকে শব্দ করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো,,,দরজা দেয়ার শব্দ শুনে তুলি কিচেনে দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে সুজনকে দেখে থমকে গেলো,,,
সুজনের চোখে দুটো লাল হয়ে ফুলে গেছে দেখে তুলি বুকের ভিতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো,,,সকাল থেকে কিছু না খাওয়ায় সুজনের চোখ মুখ বিধস্ত দেখাচ্ছে,,,ঠিক যেমন প্রকৃতিতে ঝড় এসে সবকিছু তছনছ করে দিয়ে যায়,,,সুজনকে দেখেও সেই একই রকম লাগছে,,,সুজন ফ্লোরে বসে কাঁদতে কাঁদতে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,,,
“”আর কোথায় খুঁজবো তোমায়!সব জায়গায় খুঁজে দেখলাম!কিন্তু কোথাও তো তোমায় পেলাম না!কোথায় চলে গেলে তুমি!তোতলা রানী!আমার এতোদিনের আগলে রাখা ভালোবাসা হারিয়ে গেলে যে আমি বেঁচে থেকেও মরে যাবো,খুব ভালোবাসি তুলি!আই রিয়েলি লাভ ইউ তুলি!প্লিজ কাম ব্যাক””
কথাগুলো বলে ফ্লোরে ডান হাত ভর করে মাথা নিচু করে নিরব চাহনিতে ফ্লোরের দিকে চেয়ে রইলো,,,এক মুহুর্তের মধ্যেই কথা বলার বাক শক্তি যেনো হঠাৎ করেই হারিয়ে গেলো,,,সত্যি কারের ভালোবাসা এমনি হয়,,,তুলিকে হারিয়ে ফেলেছে ভাবতেই সুজনের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টির ফোঁয়ারা নামছে,,,
অল্প কিছুসময়ের ব্যবধানে সুজনের জীবনটা কেমন ওলটপালট হয়ে গেলো,,,সুজন যে তুলিকে এতোটা ভালোবাসে তুলি ভাবতেই পারিনি,,,এমন বিধস্ত অবস্থায় দেখে তুলি নিজেকে খুব অপরাধী মনে করলো,,,শব্দহীন পায়ে ধীরে ধীরে সুজনের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে মৃদুস্বরে বললো,,,
“”স্যলি সুজন ভাই!আমি খুব স্যলি!আমি বুঝতে পালিনি আপনি এতোটা দুঃখ পাবেন””
তুলির কন্ঠ শুনে মাথা উঁচু করে তুলিকে দেখতে পেয়ে সুজনের চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো,,,তুলি আঁড়চোখে একপলক সুজনকে দেখে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো,,,সুজন খুশিতে দ্রুত বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তুলিকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,,,
যেনো হাতের বাঁধন হালকা করলেই তুলি আবারো হারিয়ে যাবে,,,যদি পারতো তাহলে হয়তো তুলিকে হৃদয়ের মণি কোঠায় লুকিয়ে রাখতো,,,তুলি স্মিত হেঁসে সুজনের পিঠে আলতো করে হাত রাখলো,,,সুজন তুলিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে ব্যস্ত স্বরে বললো,,,
“”আই লাভ ইউ তুলি!আই রিয়েলি লাভ ইউ,আমি এমনিতেই তোকে অনেক ভালোবাসি,মেডিকেলে চান্স না পেলেও আমার কিচ্ছু যাবে আসবেনা,সত্যি বলছি!আমি আর কখনো তোকে বকবোনা,তবুও প্লিজ!তুই আমায় একা ফেলে যাসনা,তোকে ছাড়া আমি যে বেঁচে থেকেও মরে যাবো””
তুলি সুজনের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো,,,সুজন কথাগুলো বলে তুলির মুখটা দু’হাতে ধরে তুলির চোখে মুখে চুমোয় ভরিয়ে দিলো,,,তুলি শুধু সুজনের কান্ড গুলো দেখে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে চেয়ে রইলো,,,
সুজন তুলিকে এলোপাতাড়ি কিস করতে লাগলো,,,অবস্থা বেগতিক দেখে তুলি মৃদু ধাক্কা দিয়ে সুজনকে সরিয়ে দিয়ে গম্ভীর মুখ করে বললো,,,
“”সুজন ভাই!আমাল খুব ক্ষুধা লেগেছে,সালাদিন কিচ্ছু খাওয়া হয়নি আমাল””
সুজন তুলির কথা শুনে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কপাল কুঁচকে মৃদু হেঁসে বললো,,,
“”তুলি!তুই কি দিয়ে তৈরি বলতো!এতো সিরিয়াস মুহুর্তেও তোর খিদে পেয়ে গেলো!””
তুলি সুজনের কথা শুনে মুখটা গম্ভীর করে করুন স্বরে বললো,,,
“”সত্যি বলছি!খুব খুদা লেগেছে আমাল””
সুজন তুলির কাছে এগিয়ে এসে তুলির কপালে উপচে পড়া চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বাঁকা হেঁসে বললো,,,
“”এখনকের মতো ছেড়ে দিলাম,বাকিটা পরে হবে,আমার আর তোর মাঝে আমি আর কোনো দেয়াল রাখতে চাই না,খাবার রেডি কর!আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি””
চলবে,,,
(