#My vampire lover comes again
#এসেছি ফিরে তোমারই ডার্ক প্রিন্স
#লেখিকা_তামান্না
#পার্ট_14
–“এখন বলো কোথায় যাবে? সিরাত ইরিনের খুব কাছে চলে আসে। ইরিন তো সিরাতের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকেই পিছে যেতে থাকে।
খেয়ালই করে নি কখন দেওয়ালের সাথে লেগে একদম সিরাতের খুব কাছে চলে এসেছে।
–“দে….দেখেন স্য….স্যার এটা কিন্তু অফিস। আ….আপনি বস পাবলিক প্লেসে এটা কিন্তু……বাকি কিছু ইরিন বলতে চেয়েও পারলো না তার আগেই সিরাত তার তর্জনী আঙুল ইরিন এর ঠোঁটের উপর রেখে তাকে চুপ করিয়ে দে।
–“উম উম উম ইরিন ভয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু করে দে সাথে লজ্জা ত আছেই বোনাস।
–“শালা বদমাইশ লুচ্চু এভাবে আমাকে ধরে রাখছে যেনো আমি তার বিয়ে করা ঘরের বউ। দাঁড়া বেডা তেরা বারা বাজাতা হুন।
ইরিন এর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপে। সে সিরাত এর পাশ কাটতে চাইলেই সিরাত সাথে সাথে তার বাহুডোরা দিয়ে ইরিনকে দেওয়ালের সাথে লাগিয়ে আবদ্ধ করে ফেলে।
–ইয়া আল্লাহ ইনার ফেস দেখে ত আমি আমার কাজই করতে পারবো না। এতো ইনোসেন্ট ফেস দেখলে ত আমিই সেন্টি মাখা কারেক্টর হয়ে যাবো। কি করি কি করি??
ইরিন নিজে নিজেই মনের মধ্যে কথাগুলো ভাবতেছে।
সিরাত কিছু বলছে না শুধু ইরিন এর কান্ডগুলো দেখছে। তখনি সে খেয়াল করলো ইরিনের কানের নিচে গলার দিকে ছোট একটা তিল আছে।
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো তিলটা দেখতে চাঁদের আকৃতির মতো।
সিরাত চোখজোড়া সরু করে আস্তে আস্তে তার হাত দিয়ে ইরিনের সামনের চুলগুলোতে নিজের হাত স্পর্শ করার চেষ্টা করে।
ইরিন বেচারি এমনেই ফ্রিজড হয়ে অাছে সেখানে আবার সিরাতের স্পর্শে তার ত যায় যায় অবস্থা।
–“আ….আপনি কি করছেন? এভাবে কে….কেনো ধরে রেখেছেন? প্লিজ ছাড়েন আ…আমি যায়।
সিরাতের কানে ইরিনের কোনো কথাই কানে যাচ্ছে না। সে তো মুগ্ধ নয়নে শুধু তিলটার দিকে তাকিয়ে তার গলার কাছাকাছি চলে আসে।
কিন্তু তাদের চক্রকান্তের দিকে নজর রেখে চলেছে সেই সবুজ পাতার অদৃশ্য ফুলঝুড়ি। সে জানালার গ্রিল দিয়ে পানির মতো গড়িয়ে এসে তাদের পাশে থাকা এক ফুল টবকে স্পর্শ করে।
স্পর্শ করার সাথে সাথেই অদৃশ্য সবুজ পাতার ফুলঝুড়ি ফুলের টবের মতো রুপ ধারণ করে ফেলে।
সিরাতের ধ্যান ফিরলো কিছুটা বিকট গন্ধে যে গন্ধটা শুকলেই পিশাচিদের রক্ত চলাচল অচল হওয়ার মতো অবস্থা হয়।
সে ইরিনকে বাহুডোরা থেকে মুক্ত করে পিছে ফিরে তাকিয়ে আশপাশ ভালো করে দেখে নে । কিন্তু তেমন কোনো জিনিসই নজরে পড়ছে নাহ।
–“এই গন্ধটা কোথার থেকে এসেছিলো? লেগেছিলো ত এখানে কেউ আসছে ! তবে কাউকে ত দেখছি না।
তাহলে কি সব আমার ভ্রম? এ কিভাবে হতে পারে যা শুকি,,যা ভাবি,, যা দেখি,,যা শুনি সবি কি আসলে ভ্রম নাকি কোনো অশুভ সংকটের নিদেশ??
সিরাত আনমনে ভেবেই নিজের কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে চলে যায়।
_________________
ইরিন কাঁপতে কাঁপতে সেখানেই ঠাই মেরে দাঁড়িয়ে থাকে। লামিয়া হাতে ফাইল দেখে দেখেই ইরিনের কেবিনের দিকে যাচ্ছিলো তখনই তার কানে না না প্লিজ দেখেন কেউ দেখবে প্লিজ??
লামিয়া কথাটার আওয়াজ কোথার থেকে আসছে তা দেখার জন্যে পিছে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো ইরিন ফুলের টবের পাশে ঘুটি সুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।
–“আরে শাকচুন্নির আবার কি হলো? যেয়ে দেখি।
লামিয়া ইরিনের পাশে এসে শুনতে পেলো সেইম কথাটা। সে নিজের চোখ ঘুরিয়ে ইরিন এর কাঁধে হাত দিয়ে নাড়া দে। কিন্তু ইরিন আবারো সেইম কথা বললো।
এবার লামিয়া দুই চার না ভেবেই ইরিনের হাতে খামচি মারে। খামচি খেয়ে ইরিন উহহহহ কে রে কে রে আমাকে খামচি মারছে??
ইরিন চোখজোড়া খুলে পাশে লামিয়াকে দেখে এপাশ ওপাশ খেয়াল করে দেখলো সিরাত ত কি সিরাত এ ছায়াও নেই তার আশেপাশে। সে খামাখা এতোক্ষণ ধরে ভয়ের চৌদ্দ গৌষ্ঠি উজার করে ফেলতেছিলো।
—“কি কি আবার কাকে খুঁজছিস? মাথা শরীর ঠিক আছে ত? লামিয়া দুই হাত বুকের উপর গুঁজে জিগ্গেস করে।
—“আরে হ্যাঁ আমি ঠিক আছি। আমার কিই বা হবে? আমার কি কিছু হয় নাকি? আবুল !
ইরিন হাসার চেষ্টা করে আমতা আমতা করে বললো।
লামিয়া শুনে নিজের চোখ ঘুরিয়ে বলে–“এত ভাবতে হবে না আমি সব জানি। যতো জলদি পারিস আমাকে খালা বানানোর প্রস্তুতি করে ফেল। মুচকি হেসে ফাইলের দিকে নজর দিলো।
ইরিন কথাটা শুনে ড্যাব ড্যাব করে লামিয়ার দিকে তাকায়। কিন্তু লামিয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব করেই ফাইলের দিকে তাকিয়ে আছে।
ইরিন কোমরে হাত রেখে লামিয়ার হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে বলে–” তোর মানে কি হুমম?? খালা কিভাবে কি হ্যাঁ?
–“এ্যাহ তুই বুঝবি না ! দুলাভাই বুঝিয়ে দিবে কেমন! টাটা আমি গেলাম। এ….এই ওয়েট এই লামি শুন ! ধ্যাত গেলো গা ফাজিল মাইয়া এক্কখানা। লামিয়া কথাটা বলেই চলে যাচ্ছিলো কিন্তু ইরিন থামতে বললেও সে থামে নি।
ইরিন ও নিজের কেবিনে চলে গেলো।
_________________
অদৃশ্য ফুলঝড়ি নিজের সবুজ রঙে জর্জরিত হয়ে উঠে চোখজোড়া খুলে। তার চোখের মণিগুলো শেয়ালের কাটাযুক্ত মণির মতো। কিন্তু তার আক্রমণে বাঁচা পিশাচিদের জন্যে এতো সহজ নয়।
সে সেখান থেকে গড়িয়ে সিরাতের কেবিনে ঢুকে আশে পাশে সিরাতকে খুঁজতে থাকে। তাকে না পেয়ে সে সিরাতের টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটা দেখে শয়তানি হাসি দে।
অদৃশ্য ফুলঝড়ি পানির গ্লাসের কাছে এসে সে গ্লাসের উপর নিজের পাতা মোড়ানো হাতটা ধরে। হঠাৎ তার হাতের ভেতর থেকে রসালো বিষময় একফুট পানি চুয়ে গ্লাসের মধ্যে পড়ে যায়।
পড়ার সাথে সাথেই সেই গ্লাসের পানি লালবর্ণ হয়ে আবারো সাদা মিঠা পানির মতো হয়ে গেলো। ফুলঝড়ি শয়তানি হাসি দিয়ে কেবিন থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে বের ফুলের টবের কাছে এসে আবারো ফুলের রুপ ধারণ করে ফেলে।
তার সূক্ষ্ম নজর সিরাতের কেবিনের দিকে গ্লাসটার মধ্যে রাখে।
–“অপেক্ষা অপেক্ষা কবে সিরাত পানিটা পান করবে? একবার পানিটা খেলেই সে আমার নিয়ন্ত্রণে হয়ে যাবে।
এই সাত বছর কিভাবে অপেক্ষা করেছি পিশাচ বংশের রাজপুএ কে মেরে ফেলার জন্যে। কিন্তু তার সেই চার রক্ষাকবচ সবসময় আমার কাজে নাক ডুকাতো। শুধু ব্যর্থতা ছাড়া আমাকে আর কিছু দেই নি। তবে এবার ঠিকিই আমি সফল হবো। হাহাহাহা ব্যস কয়েক মুহুর্তের অপেক্ষা।
____________________
মায়াবিনী নিজের রসায়নিক রুমে বিভিন্ন পাতা ফুল ফল মাটি সরঞ্জাম দিয়ে বোতলের মধ্যে এক এক রঙের পিশাচদের জন্যে রসালো সুগন্ধময় আতর প্রস্তুত করছে।
অনর্ব নিজের রুমে এক হরিণকে শিকার করে এনে তাকে আগুনের উপর জ্বালিয়ে হাড্ডিগুলো ছাই করে পুড়া পুড়া করলো। সেখানে বসেই পুরু হরিণ কে চাবিয়ে চাবিয়ে খেয়ে ফেললো। হরিণের দেহের সব রক্ত শিকার করার সময়ই চুষে নে। পরে বাসায় এসে জঙ্গলবাসীদের মতো খেলো।
অনর্ব খাওয়া শেষ করে এসে বেডের উপর বসলো। কিন্তু কি করবে বুঝছে না? রাত হোক দিন হোক না আছে পিশাচদের চোখে ঘুম,,, না আসে শএু চক্রের শেষ!
পিশাচদের চোখে ঘুম আসে না বললেই চলে সারাক্ষণ পেঁচা মতো রাত জাগে আর দিন হলে মানুষের মতো কাজে লেগে পড়ে। তবে তাদের কাজই বা কি তাদের রাজবংশের খেয়াল রাখা সেটাই তাদের প্রধান কাজ।
সে বেড থেকে উঠে ঘড়ির দিকে মায়াবিনীর কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হয়। তখনই তার কানে রসায়নিক রুমের থেকে কোনো কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ আসে।
তার চোখজোড়া সরু হয়ে যায়। সে ঝড়ের গতিতে সেখানে পৌঁছে দেখে মায়াবিনী দাঁড়িয়ে আছে তার মুখে চিন্তার চাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। ফ্লোরে বোতল ভেঙ্গে পড়ে আছে সেই বোতলের দিকে মায়াবিনী ভয়ার্তভাবে তাকিয়ে আছে।
—“মায়াবিনী মায়াবিনী কি হলো? কি হয় ছে?
মায়াবিনী অনর্বের ডাকে ধ্যান থেকে ফিরে আসে। সে তার দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে—“ফিরে আসছে সেই বিকুট গন্ধ। সেই সবুজ পাতা,, সেই শেয়ালের চোখজোড়া,,সেই ফুলঝড়ি শরীর।
অনর্ব কথাগুলো শুনে এক নিশ্বাসে বলে ফেলে—“বিষপাতা??
মায়াবিনী ভয়ার্ত ভাবে নিজের মাথা নাড়ায়। তখনই সেই রুমে…………..
#My vampire lover comes again
#এসেছি ফিরে তোমারই ডার্ক প্রিন্স
#লেখিকা_তামান্না
#পার্ট_15
রুমে নিকেল দৌড়ে এসে হাঁপাতে থাকে। তাকে হাঁপাতে দেখে মায়াবিনী অনর্ব তার কাছে এসে বলে।
অনর্ব–“কি ব্যাপার এভাবে দৌড়ে আসছিস কেন? কি হয়ছে? চিন্তিত হয়ে সে নিকেল কে ধরে চেয়ারের মধ্যে বসায়।
মায়াবিনী নিকেল এর ঘাড়ে হাত রেখে বলে–” কি হলো বল?
নিকেল হাঁপিয়ে বলে–“শ্র…..শ্রেয় এর জীবন সর্বনাশের দিকে।
মায়াবিনী অনর্ব দুইজন চিন্তিত হয়ে নিকেল কে বলে–“কি ! কথা পুরোপুরি বল হয়ছে তা কি?
নিকেল হুট করে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল।
–“গাইস আমি বেলকণিতে গাছের মধ্যে পানি দিচ্ছিলাম তখনই গাছের ডালে পাতার কোণায় হাত লেগে কেঁটে যায়। ঐ সময় ভেবেছিলাম সামান্য ব্যাপার তারপর যা হলো তা বুঝার সাথে সাথে এখানে এলাম।
–” কি….কি বুঝছিস কোথায় লেগেছে তোর? মায়াবিনী নিকেল এর হাত চেক করে দেখে তখনই তার নজর পড়ে কাঁটা অংশে সে অংশটা গাড় হলুদ বর্ণ ধারণ করছে।
মায়াবিনী অনর্ব একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলে–“বিষপাতা তোর বেলকণিতে? এটা কিভাবে সম্ভব!
নিকেল–“আমি কুড়িয়ে এনেছিলাম যাতে বিপদে কাজে আসে।
অনর্ব শুনে রাগী সুরে বলে–“তোরে বলেছিলাম বিষপাতার কাছেও না যেতে। তাদের সাথে আমাদের শএুতা বহু যুগের তাহলে কেনো তুই বিষপাতা বাসায় এনেছিস?
নিকেল কিছু বলছে না সে মাথা নিচু করে থাকে। কিন্তু মায়াবিনী খেয়াল করলো নিকেলের হাতের সেই কাঁটা অংশটা হলুদ থেকে পাথরের রুপ ধারণ করছে। সে অনর্বকে থামিয়ে বলে–“অনর্ব নিকেল এর হাত দেখো….
অনর্ব নিকেল এর হাত উঠিয়ে দেখে তার সেই হাতের আঙুলগুলো নাড়ানো যাচ্ছে না সেই হাতটা পাথর হতে শুরু করে। সে মায়াবিনীর দিকে তাকিয়ে বলে–“এ….এখন কি করবো মায়ু? এর হাত থেকে ধীরে ধীরে পুরু শরীর পাথর হয়ে যাবে।
মায়াবিনী নিজের কেমিস্ট্রি রুমের মধ্যে প্রতিটা কোণা কোণা খুঁজতে লেগে পড়ে বিষপাতা থেকে কিভাবে রক্ষা পাবে তার উপায় । সে খুঁজতে থাকে সাথে নিকেল এর দিকে তাকিয়ে বলে—“নিকেল শ্রেয় এর ব্যাপারে কি বলতে চাইছিলি?
নিকেল মায়াবিনীর কথাটা শুনে আরেক হাত দিয়ে কপালে বারি মেরে বলে–“উফফ এতো বড় ভুল করে ফেললাম। শুন তোরা আমাকে পরে বাঁচাইস আগে পিশাচরাজ কে বাঁচাতে হবে।
অনর্ব ভ্রু কুঁচকে বলে–“মানে?
নিকেল চোখ সরু করে জানালার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল।
–“কাঁটা অংশ হলুদ হচ্ছে তার মানে বিষপাতার প্রভাব শুরু হচ্ছে। কিন্তু আমার তো কখনো এভাবে হওয়ার কথা না । আমার শরীরে ব্যথা পাবো তখনই যখন পিশাচরাজ…. আমার জানে জিগার কোনোভাবে ব্যথা পেলে বা তার কিছু হওয়ার আশংকা হলে। ইটস ক্লিয়ার নাউ। সিরাত এর সাথে কিছু একটা হবে এখনই মায়াবিনী অনর্বকে খবরটা বলতে হবে।
অনর্ব মায়াবিনী নিকেল এর কথা শুনে ভ্রু কুঁচে একে অপরের দিকে চিন্তিত মুখ করে তাকায়।
অনর্ব–“মায়ু তাড়াতাড়ি আমার লাইব্রেরি রুম থেকে বিষপাতার ইতিহাস লেখা বইটা তোমার মন্ত্র পড়ে নিয়ে আসো।
মায়াবিনী অনর্ব এর কথামতো মন্ত্র পড়ে বইটা নিয়ে আসলো।
তারা তিনজন বইটা টেবিলের উপর রাখে। অনর্ব বইটার কভারে লাগানো চাবিটা হাতে নেই।
এসব ধরনের বইগুলো খুবই আদিম যুগের মানুষদের লেখা কাহিনি নিয়ে তৈরি। এগুলোর কভার থাকে শক্ত যার মধ্যে চাবি আটকানো থাকে। এই চাবি দিয়ে বইয়ের কভার খুলে প্রতিটা পাতা দেখা যায়।
অনর্ব বইটা খুললো। সাথে সাথে বিষপাতার আসল রুপ সামনে পড়লো। বইয়ের প্রথম পাতায় বিষপাতার ছবি আঁকা হয়েছিলো। সেই সবুজ পাতা মোড়ানো হাতজোড়া,,মুখখানির চামড়া ছিঁড়া চোখগুলি কাঁটা শেয়ালের মতো,,রক্ত মাখা শরীর কাঁটাযুক্ত প্রতিটা অংশ তার শরীরে বিদ্যমান।
মায়াবিনী অনর্ব এর দিকে তাকিয়ে বলে–“নিকেল কে আর শ্রেয় কে বাঁচানোর একমাএ পায় বিষপাতা।
অনর্ব ভ্রু নাচিয়ে মায়াবিনীর দিকে তাকিয়ে বলে–“কি বল তুমি ত এখনো বিষপাতার ইতিহাস পড়ো নি।
মায়াবিনী মুচকি হেসে বলে–“ইতিহাস পড়তে হবে না। কারণ শ্রেয় এর পিতা মানে পিশাচ বংশের প্রধান রাজা রাওল ড্রেক । আমি উনার মেয়ে জানোই ত শ্রেয় এর বড় বোন। দেখো কি দুভাগ্য আমার। শ্রেয় আমার সামনে থেকেও আমি নিজেকে তার বোন দাবি করতে পারছি না।
অনর্ব মায়াবিনীকে জড়িয়ে ধরে বলে–“সময় আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
–“হুম এমনই যেনো হয়। অনর্বকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। নিকেল মুচকি হেসে অন্যদিকে ফিরে বললো।
–“আচ্ছা আমরা কিছু একটা খুঁজতেছিলাম। সেই টপিকে যাওয়া গেলে ভালো হয়।
মায়াবিনী আর অনর্ব নিজেদের কে ছেড়ে দে।
অনর্ব আমতা আমতা করে বলে–“আ আ কি যেনো ওও হ্যাঁ মায়ু কিভাবে কি করবে বলো?
মায়াবিনী বাঁকা হেসে বলে–“যেখানে ঘি সেখানেই আটা।
নিকেল অনর্ব দুইজন অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে–” মানে?
মায়াবিনী বাঁকা হাসি দিয়েই বলে–“যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াস।
___________________
সিরাত ওয়াশরুম থেকে এসে চেয়ারে গা হেলিয়ে বসে পড়লো। মাথাটা যেনো জিম জিম করছে।
কেন করছে কিছুই বুঝছি না আর বুঝতেও মন চাচ্ছে না ! এতো প্যারা কেন?
সে পানির গ্লাসের দিকে তাকায়। গলাটা শুকিয়ে গেলো পানিটা খেয়ে নি। এই ভেবে সে পানির গ্লাসটা হাতে নিলো।
—“খাও খাও পিশাচরাজ একবার খেয়ে নাও তারপর তোর শরীরটা আমার হবে নিয়ন্ত্রণ করবো আমি শুধু আমিই। খেয়ে ফেল।
বিষপাতা ফুলটবের রুপ করে সিরাতকে দেখতে থাকে।
ইরিন লেপটপে ফাংশন এর ডকুমেন্টস ফাইল তৈরি করছে সাথে আড়চোখে কলম নিয়ে খাতায় নাম লেখছে। যারা ফাংশনে বিশেষ অতিথি হয়ে আসবে।
ইরিন এর সামনের চুলগুলো বার বার সামনে এসে চোখের পাতার সাথে লেগে বারি খাচ্ছে। সে বার বার আরেক হাত দিয়ে চুলগুলো সরাতে সরাতে বিরক্তি অনুভব করছে।
একরাশ বিরক্তি নিয়ে বলতে লাগে–“চুল ! একসময় চুল ছিলো না বলে কত কিছুই না করেছিলাম বড় করার জন্যে। কিন্তু এখন বড় হলো তো কষ্ট বাড়লো। কাজের টাইমে চোখে শুধু গুতা দেই। যেমন কষ্ট করছি তেমন ফল প্লাস সহ্যও করা লাগতেছে।
সাথে সাথে তার মাথায় একটা বুদ্ধি এসে যাই। সে মাথার ক্লিপটা খুলে চুলগুলো পেঁচিয়ে পেনবক্স থেকে দুইটা পেন নিয়ে চুলের মধ্যে আলগা করে লাগিয়ে সব চুল একসাথে করে নে।
–“মে আই কামিং ম্যাম…..লামিয়া ইরিন এর কেবিনে ডুকে বলেই থেমে যায়।
সে তার পাশে এসে দুইহাত বুকের উপর গুজে ফেসে দুষ্টুমির ভাব করে বলে–“কি রে ম্যাডাম হেয়ার স্টাইল তো এমন ভাবে করেছো যেনো কাউকে এই সুন্দর মাশাআল্লাহ বহুত সুন্দর চুলগুলি দিয়ে আঘাত করবে।
ইরিন লামিয়ার কথা বলার ধরণটা দেখে হাসতে লাগে। তার সাথে লামিয়াও হেসে দে।
–“আরে নাহ আমার ক্লিপটার মাঝখানের পিনটা ভেঙ্গে গেলো তাই এভাবে চুলগুলি বেঁধে নিলাম।
লামিয়া—“হুমম ভালোই করছিস এখন জোশ লাগতেছে।
ইরিন–“হুরর পাগলী। মুচকি হেসে বলে।
লামিয়া–“ওহ আমি যে কাজে আসছিলাম শুন নামের লিস্ট তৈরি হয় ছে?
ইরিন–“হুম না আরো ছয়জনের নাম লিস্টে এড করা বাকি। কেন আর কেউ বাদ আছে?(ফাইলটা লামিয়ার হাতে দিয়ে বলে)
লামিয়া ফাইলটা চেক করে সবগুলো নামই এসেছে। সে দেখে বলে–“হুম সব আসছে তবে এখন আরেক জনের নাম এড কর।
ইরিন ভ্রু নাচিয়ে বলে–“সবার নামই ত এড আছে আবার কার নাম এড করবো?
লামিয়া–“যার নাম বলবো শুনলে তোর মাথা হেংগ খাবে।
ইরিন–“কে কার কথা বলছিস? অবাক হয়ে।
লামিয়া–“সে একজন ফেমাস বিজনেস ডিলার। তার সাথে আজ অদ্বি যারা যারা ডিল ফাইনাল করছে তাদের কোম্পানি চরম সীমানা পাড় করেছে। এতো বড় ডিলার তিনি ভাবতেই অবাক লাগে আমার।
ইরিন–“হুমম তবে এতো লোভী হওয়া ভালো না মিস লামিয়া। টেডি স্মাইল দিয়ে লামিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ ঘুরিয়ে বলে।
লামিয়া ভেবাচ্যাকা খেয়ে বলে–“আ….আমি কবে লোভ দেখাইছি? আমি ত যাস্ট কোম্পানির ভালোর জন্যে বললাম।
ইরিন দাঁড়িয়ে লামিয়ার কাছে এসে বলে–“কোম্পানির লাভ তার মানে আপনারও লাভ। এটাই ত? মুচকি হেসে ভাব দেখালো।
লামিয়া চোখজোড়া সরু করে নিজের মাথা নাড়ালো।
–“আচ্ছা এখন বল নাম কি? ফেমাস ডিলার যখন আমাদের বস এর সাথেও দেখা করানো দরকার। আমাদের বসও কোনো খান থেকেও কম না। উনার সাথে যে ডিল করছে তার লাইফ ত সেট বলে দিলাম।
মুচকি হেসে কথাগুলো বললো।
–“বাহ বাহ আপনি দেখি আমাদের বসের সম্পর্কে একটু বেশিই ভালো জানেন। দুষ্টুমি ফেস করে টেডি স্মাইল দে।
ইরিন লজ্জা পেয়ে আর কিছু বললো না। সে নিজের চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লো। ফাইল রেডি করতে লাগে।
লামিয়া ও যেতে লাগে তখনই নামটা বলে দেওয়ার কথা মনে পড়লো। সে ইরিন এর দিকে তাকিয়ে বলে–“নাম হলো এরিক কেনেল।
ইরিন নামটা লেখার পর পরই তার হাত কাঁপতে থাকে। কপালে বিন্দু বিন্দু পানি এসে জমা হয়ে যায়। সে হুট করে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
চোখ বন্ধ করতেই তার মনের কোণায় ভেসে উঠলো এক অজানা দৃশ্য বিশাল আগুনের গোলা তার পাশেই সে আর দুইজন মানুষরুপী কারা যেনো দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মাঝে একজনের হাতে কাচেঁর সেই লোহার তলোয়ার। সে আঘাত করলো তার সামনে থাকা মানুষটিকে।
মানুষটা আগুনের গোলায় পড়তে পড়তেই একজন কে ডাকতে লাগলো—“অরিনইইইইই………….
ইরিন জট করে চোখ খুলে ফেললো। সে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে লামিয়া নেই। সে নাম টা জানিয়েই নিজে কেবিনে চলে যায়। ইরিন উঠে ফ্রেশ হতে যায়।
____________________
সিরাত পানিটা মুখের কাছে আনতেই হঠাৎ….
—“আহেম আহেম স্যার আমি কি আসতে পারি? সিরাত কণ্ঠটা শুনে মুখ উপরে করে তাকায়। তাকাতেই যাকে দেখে তাকে দেখার সাথে সাথে সিরাত এর মুখে আনন্দ এর পরিমাণ উচ্চসীমায় পাড়ি দিলো।
সে হুট করে গ্লাসটা রেখে বসা থেকে উঠে মানুষটার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে।
মানুষটাও দ্বিগুণ খুশি হয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে—“ইয়ার হে তু মেরা,,,অর মে হু ইয়ার তেরা।
হাম হামেশা এসেহি রেহেনগে।
সিরাত মানুষটার পিঠে এক চড় মারে। সে চড় খেয়ে বলে–“ঐ হারামী তুই কি আগের যুগের মতো এই যুগেও শুধু আমাকেই পাস মারার জন্যে?
—“জিগরি দোস্ত যখন তোরে না মেরে আমার চলে নাহ। ইউ নো দ্যাট। মুচকি হেসে সিরাত বললো।
মানুষটা সিরাতের হাসিমাখা ফেস দেখে সেও মুচকি হেসে বলে–“হুম আই নো। দ্যাটস ওয়াই আইম উইড ইউ জানে জিগার।
সিরাত আর মানুষটা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করে।
মানুষটা নিজের চোখজোড়া দিয়ে আশপাশ ভালোভাবে দেখে নিলো। সে সিরাত থেকে সরে আসতেই মানুষটার নজরে সিরাতের টেবিলে রাখা পানির গ্লাস এর দিকে চোখ পড়ে।
বিষপাতা বাহিরে দেখে আগুনের মতো জ্বলতে থাকে। সে মনে মনে বলে।
—“কাজটা হওয়ার পর মানুষটা আসতো। এখন না জানে কবে সিরাত পানিটা খাই? কিন্তু মানুষটা কে যে আমার কাজে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। তারও হিসাব আমি নেবো। আগে দেখি এরা করতেছি টা কি?
বিষপাতা রাগে ফুসতে থাকে। মানুষটা অনুভব করতে লাগলো সিরাতের কেবিনের কোনো এক জায়গায় বিষপাতা লুকিয়ে আছে। যার বিকট গন্ধ মানুষটা পেতে থাকে।
সিরাত তাকে ছেড়ে পানি খেতে গ্লাসটা হাতে নিয়ে মুখে নেই……….
…………চলবে……….
………………..চলবে……………..
[