ডার্ক ডায়মন্ড
#আফরিন ইভা
#পর্ব-২৫
____________________
– সময় যতো অতিবাহিত হচ্ছে মেথিসের গায়ের বর্ন ততোটা গাঢ় নীলচে হচ্ছে।
মীরার ভয় হতে লাগলো বুকের বাঁ পাশের তীব্র ব্যাথাটা যেনো আরো বেশি চেপে ধরেছে মীরা কে।
শুধু ভয় হচ্ছে মীরার যদি সত্যি মেথিসের কিছু হয়ে যায়। তাহলে কি সত্যি মীরা মেথিস কে হারিয়ে ফেলবে চিরকালের মতো। না কিছুতেই মীরা হারাতে চায় না মেথিস কে।
।
মীরার চোখের জল একফোঁটা দু’ফোটা করে মেথিসের গালের উপর গড়িয়ে পরছে।
মীরা মেথিসের মাথা টা কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো, মেথিস উঠুন আপনি চোখ খুলে দেখুন আপনার প্রিন্সেস আপনাকে কতটা পাগলের মতো করে ভালোবাসে।
আপনি হয়তো ভেবেছেন আপনি একাই ভালোবেসেছেন আপনার প্রিন্সেস কে।
কিন্তু না আমিও আপনাকে সমান তালে ভালোবেসে ফেলেছি।
আমার যে সবকিছু মনে পড়েছে কিন্তু এখন আপনিই তো অভিমান করে চোখ বন্ধ করে আছেন। একটি বার আমার কানে কানে বলুন ” প্রিন্সেস ডু ইউ নো ইউ আর মা’ই ডার্ক ডায়মন্ড। ”
আপনি কি একটি বার বলবেন না বলুন না প্রিন্স। একটিবার চোখ মেলে তাকিয়ে দেখুন।
ডার্ক ডায়মন্ড প্যালেসে আপনি আমায় নিয়ে এসে আবার নিজেই হারিয়ে যাচ্ছেন?
আমাদের ভালোবাসা কি এতোটাই ঠুনকো যে আর কখনো পূর্ণতা পাবে না?
মীরা মেথিসের গালে নিজের উষ্ণ গাল ঘষছে আর কথাগুলো বলছে আর চোখের কোন বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে মেথিসের গালের উপরে।
.
.
.
-হঠাৎ কেউ একজন মীরার গালে আছড় কাটলো।
– মীরা চোখ খুলে তাকিয়ে হতভম্ব।
এ কাকে দেখছে মীরা এ যে আর কেউ নয় স্বয়ং কেবিন ক্রুজ।
মীরা বেশ অবাক চোখে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বললো স্যার আপনি?
– হ্যাঁ আমি।
মা’ই গড তাহলে তুমি আমায় চিনতে পেরেছো?
– মীরা চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো শুধু চিনিই নি আপনাকে বেশ ভালো করেও মনেও রেখেছি আপনি ভালো’র খোলস পড়ে থাকেন কিন্তু আপনি আসলে একটা বদ নেকড়ে।
– ওহ্ তাঁর মানে তুমি আমায় চিনতে পেরেছো অবশেষে।
আমি তো ভেবেছি আমায় বুঝি এ জনমেও তুমি আর চিনতে পারবে না আর আমার মনের আশা টাও পূর্ণ হবে না।
– মীরা ক্রুজের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো মনের আশা মানে?
– ক্রুজের চোখে-মুখে রহস্যময় হাসি রেখা ফুটে উঠলো।
মীরার মনে অদ্ভুত ভয় এসে জমতে লাগলো।
মীরা মেথিসের গালে আলতো হাত ছুঁইয়ে ডেকে যাচ্ছে, মেথিস প্লিজ উঠুন, আমাকে দেখুন, আপনার প্রিন্সেস আপনারই আছে।
।
ক্রুজ বিকট শব্দ করে হাসতে লাগলো। ক্রুজের হাসি প্রতিধ্বনি হয়ে ডার্ক ডায়মন্ড প্যালেসে যেনো এক অদ্ভুত নিত্য খেলে গেলো। ক্রুজ তাঁর হাসি থামিয়ে মীরার কাছে এসে কানে ফিসফিসিয়ে বললো তোমার প্রিন্স আর চোখ মেলে তাকাবে না, তুমি ওর আঘাতের তীর দেখোনি বুঝি!
এ তীর ভ্যাম্পায়ারদের জন্য মরণশীল তীর। যা আমাদের নেকড়েদের জন্য আশীর্বাদ।
– ক্রুজের কথা শুনে মীরার চোখ রাগে লাল হয়ে গেলো।
মীরা গজগজ করে ক্রজের গলা চেপে ধরলো।
.
.
” ক্রুজ মীরা কে এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে হাহা করে হেঁসে মীরার খুব কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো,প্রিন্সেস তুমি একা তা-ও আমার সাথে পারবে?
.
.
” ক্রুজের কথায় মীরার পুরো শরীর অন্তরাত্মা সহ জ্বলে উঠলো।
মীরার ইচ্ছে করছে এখুনি ক্রুজের পুরো শরীরের রক্ত শুষে খেয়ে রক্তশূণ্য করে তাঁর নিথর দেহ টাকে পুড়িয়ে আগের জন্মের সব শোধ মিটিয়ে নিতে।
কিন্তু মীরা এখন ক্রুজের সাথে লড়াই টা করতে চাইছে না। ক্ষুন্ন মন নিয়ে মীরার পক্ষে এখন কিছুই করা সম্ভব নয়।
মীরা মেথিসের কাছে ছুটে গেলো।
মেথিসের মাথাটা নিজের বুকে আগলে রেখে মেথিসের গালে আলতো করে হাত বুলিয়ে বললো, প্রিন্স দেখো কে এসেছে আমাদের চিরশত্রু ক্রুজ এসেছে।
তাকিয়ে দেখো ও কিভাবে তোমাকে নিয়ে হেয়ালি পনায় মেতে উঠেছে।
একটি বারের জন্য তাকাও বলছি, তোমার প্রিন্সেস তোমাকে ডাকছে তুমি কি তা শুনতে পাচ্ছ না না-কি এখনো আবার অভিমান করে চোখ বন্ধ করে রাখবে।
মীরা ক্রুজের দিকে তাকিয়ে আবার মেথিস কে ডাকতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।
.
.
ক্রুজ মীরার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললো, তোমার প্রিন্স চিরনিদ্রায় শায়িত ওকে হাজার ডাকলেও ও আর ফিরে আসবে না। ওর আর এই জন্মেও তোমাকে পাওয়া হলো না।
কিন্তু……
– মীরা ক্রুজের দিকে বেশ রাগান্বিত চোখে তাকালো
– ক্রুজ মুখে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে বললো কিন্তু আমি তোমায় ঠিক নিজের করে পাবো।
।
– মীরা ক্রুজের মুখে থুঃথুঃ ছিটিয়ে বললো, তুই আমার থুতুর উপযুক্তও নয়।
আর তুই কি করেছিস ভেবেছিস আমি কিছুই জানি না।
মীরা লম্বা একটা নিঃশ্বাস টেনে নিয়ে বললো, তুই লিজ কে নিজের কাছে আটকিয়ে রেখেছিস।
তুই ভেবেছিস কি আমাকে না পেয়ে তুই আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড লিজ কে অত্যাচার করে পার পেয়ে যাবি।
কিন্তু না তা কখনো নয়।
তোকে এবার এর উপযুক্ত শাস্তি ঠিক দিয়ে দিবো।
।
– ক্রুজ মীরার মুখপানে নিজের মুখ বাড়িয়ে বলতে লাগলো, প্রিন্সেস তুমি যা শাস্তি দাও আমি মাথা পেতে নিবো কিন্তু তোমাকে যে আমার হতেই হবে বলে টানতে টানতে মীরা কো নিজের কাছে এনে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলো।
.
.
– মীরা বিশাল এক প্যালেসের এক সজ্জিত রুমে শুয়ে আছে।
মীরা চোখ ফিট ফিট করে তাকালো। চারদিকে তাকিয়ে ভীষণ অবাক হলো।
একদম অপরিচিত, অচেনা জায়গা হলেও খুব পরিচিত লাগছে মীরার কাছে।
মীরা ক্লান্ত শরীর নিয়ে উঠে বসলো।
চারদিকে তাকিয়ে দেখলো এটা তো সেই ভ্যাম্পায়ার প্যালেস যেটা একসময় ভ্যাম্পায়ারদের দখলে ছিলো।
হঠাৎ মেথিসের সেই নীল বিমর্ষ মাখা মুখ মীরার মনে পড়লো। মীরার ভেতর টা গুমরে মুচড়ে যাচ্ছে, বুকের ভেতর টা কষ্টে যেনো পুড়ে যাচ্ছে।
মীরা আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য যে-ই পা বাড়ালো সাথে সাথে কারো সাথে ধাক্কা খেলো।
।
মীরা চোখ তুলে তাকিয়ে যাকে দেখলো দু নয়ন যেনো আজ ভরে গেলো।
মীরা বেশ কিছুক্ষণ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে জড়িয়ে ধরলো।
লিজ তোকে আবারো আমি দেখবো সত্যি আমি ভাবিনি কখনো।
আমার হৃদয়, প্রাণ যে শুধু তোকে খুঁজে বেড়িয়েছে যদি তুই একটিবারের জন্য বুঝতি।
– লিজও মীরা কে জড়িয়ে ধরলো।
আজ যেনো দুটি আত্মা এক হয়েছে কয়েকশতক যুগ পরে।
লিজ হাত দিয়ে মীরাকে ছুঁয়ে দেখলো আর বললো তুই সেই আগের কার মতোই রূপ-লাবণ্যে ভরা।
তোকে দেখে আজ আমি নিজেকেই সার্থক মনে করছি।
তোকে হারিয়ে আমি একদম নিষ্প্রাণ হয়ে গিয়েছিলাম আজ যেনো সেই প্রাণ আবারো আমি ফিরে পেলাম।
– মীরা কয়েকশতক বছর পর তাঁর পুরনো বান্ধবী লিজ কে ফিরে পেয়েছে ঠিকই কিন্তু তাঁর ভাঙ্গা মন নিয়ে খুব একটা খুশি হতে পারেনি।
– মীরা মেথিসের কথা ভেবে লিজ কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
লিজ আমি তোকে ঠিকই ফিরে পেয়েছি কিন্তু আরেক জনকে যে হারিয়ে এসেছি।
আমাকে যে তাঁর বড্ড বেশি প্রয়োজন।
সে আদৌও বেঁচে আছে না-কি মরে গেছে আমি তা-ও জানি না।
।
– লিজ মীরা কে সামনে এনে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বললো তুই কার কথা বলছিস!
তুই কি প্রিন্সের কথা বলছিস?
প্রিন্স ঠিক আছে তো!
– মীরা লিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললো লিজ আমি জানি না সত্যি জানি না উনি কেমন আছেন।
” লিজ চোখ বন্ধ করে মন্ত্র পাঠ করে প্রিন্স কে খুঁজে দেখলো বেশ কিছুক্ষণ কিন্তু ব্যার্থ হয়ে চোখ মেলে তাকাল।”
– মীরা বেশ উৎসুক হয়ে লিজের দিকে তাকিয়ে রইলো।
– লিজ মীরার গালে আলতো করে হাত ছুঁয়ে দিয়ে বললো, প্রিন্সেস আমি ব্যার্থ তোমার প্রিন্স কে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না আমি।
– হঠাৎ কেউ রুমে প্রবেশ করলো।
– মীরা লিজের দিকে তাকালো।
– লিজ বেশ চটে গিয়ে ক্রুজের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো এবং বললো শতবছর অত্যাচার, নিপীড়ন করেও কি আপনার প্রতিশোধ নেওয়া শেষ হয়নি?
– ক্রুজ হাহাহাহা করে ঘর কাঁপানো হাসিতে ফেটে পড়লো এবং বললো, তোকে তো আমি আমার দাসী হিসেবে ব্যাবহার করেছি। আর প্রতিশোধ সে তো নিবো আমার প্রিন্সেসের থেকে।
।
ক্রুজ মীরার খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
মীরার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললো তোমার রূপে আমি যে সেই কবেই নিমজ্জিত হয়ে আছি, আমার উন্মাদ মন তোমাকে দেখতে বাংলাদেশ পর্যন্ত ছুটে গিয়েছে সে কি আর এমনি এমনি।
।
– মীরা ক্রুজের হাত সরিয়ে দিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো, আমি হয়তো তখন জানতাম না তুই এতোটা পাপিষ্ঠ কিন্তু এখন তো আমি জেনেছি গত জন্মেও তুই আমাকে আমার প্রিন্স থেকে আলাদা করেছিস, আবার এ জন্মেও তুই আমার প্রিন্স কে আঘাত করেছিস বলে মীরা যে-ই ক্রুজের ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে দিয়ে রক্ত খেতে লাগলো ঠিক তখুনি ক্রুজ নেকড়ে দের মন্ত্র পাঠ করে মীরার উপর ফুঁ দিলো সাথে সাথে মীরা মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।
।
– ক্রুজ মীরার কানে ফিসফিসিয়ে বললো তোমার প্রিন্স আর কখনো ফিরবে না তোমার কাছে।
এখন তুমি শুধু আমার, তোমাকে আমি আমার নেকড়েদের প্রিন্সেস হয়ে আমার সাথে শত জনম ভর থাকবে আর আমায় ভালোবাসবে।
– ক্রুজ লিজের কাছে এসে কানে কানে কিছু কথা বললো।
তারপর দু’জন রহস্যময় হাসিতে ফেটে পরলো।
#চলবে—–
বিদ্রঃ সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।
খুবি অসুস্থ ঠান্ডা লেগেছে জ্বর এসেছে সবাই দোয়া করবেন।
আগামীকাল গ্রুপে আড্ডা সবাই গ্রুপে জয়েন করে নিবেন।
ফাস্ট কমেন্টে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো