#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_৪৬
#সুলতানা_সিমা
সকাল গড়িয়ে বিকেল চলে আসলো,এখনো নেই দিহানের কোনো খোঁজ। সেই যে ফোন রাখার পর থেকে বন্ধ পাচ্ছিলো এখনো বন্ধ তাঁর ফোন। কাঁদতে কাঁদতে অরিনের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। বার বার দিহানের শেষ কথাটা কানে এসে বাজতেছে। দিহানের মামা অনেকবার এসে বলে গেছেন কান্না না করতে, কিন্তু অরিন তা শুনছে না। কান্না করেই যাচ্ছে। অজনি মায়ের কান্না দেখে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে। তানভী কোলে নিয়ে হাঁটছে, কিন্তু তাঁর চাপা কান্না থামছে না। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা চলে আসলো। অরিনের আর সয্য হচ্ছেনা। যতক্ষণ দিহানের খোঁজ না জানবে সে শান্তি পাবেনা।
বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। অরিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে দেশে চলে যাবে। দিহানের খবর তাঁকে জানতেই হবে। ব্যাগ গোছানো শুরু করলো। অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ এলো “ডক্টর অরিন, রুফটপে আসবেন?” মেসেজ পড়ে অরিনের রাগ হলো। এই বৃষ্টির মধ্যে কে আবার ছাদে ডাকছে? প্রথমে যাবেনা ভাবলেও পড়ে না গিয়ে থাকতে পারলো না অরিন। ছাঁদের দরজা খুলতেই কিছু বৃষ্টি এসে চোখে মুখে ছিটকে পড়লো। অরিন চোখ খিঁচে হাতের উল্টো পিঠে মুখ ঢেকে নিলো। একটু একটু করে হাত সরিয়ে সামনে তাকাতেই চোখে পড়লো তাঁর প্রাণের স্বামীকে। বৃষ্টিতে ভিজে একদম কাকভেজা হয়ে আছে। ছাদের পুরো রেলিংয় জুড়ে কত রঙ বেরঙের ফুল আর বেলুন বাঁধানো। বৃষ্টির ফোঁটার সাথে সাথে বেলুন গুলা নেচে উঠছে। দিহানের টাকনো পর্যন্ত পানিতে ডুবে আছে। পানি গুলা সব লাল হয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে এইখানে একটা মানুষকে কেটে রক্তে সব ভাসিয়ে দেওয়া হইছে। পানি পড়ার পথটা মনে হয় দিহান বন্ধ করে রাখছে। নয়তো এতো পানি জমার কথা না। অরিন ছাদে পা রাখলো। পানির মধ্যে ছপ ছপ শব্দ করে হেঁটে এগিয়ে গেলো দিহানের দিকে। দুজনের চেহারা জানান দিচ্ছে তাঁরা কাঁদছে কিন্তু বৃষ্টির পানি তা ধুয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলে চোখের পানিটা দেখা যাচ্ছেনা। অরিন দিহানের সামনে যেতেই দিহান হাঁটু গেড়ে বসে হাত সামনে বাড়িয়ে দিলো। বৃষ্টির পানিতে তাঁর হাতের তালু ভরে যাচ্ছে। দিহান অরিনের দিকে মুখ তুলে বলল
_দেখো বউ, এই সেই বৃষ্টি জল। যে বৃষ্টি জল দিয়ে তোমার কাছে ভালোবাসার দাবি নিয়ে এসেছিলাম। আজও করছি ভালোবাসার দাবি। দেবে বউ আমাকে আরেকটা সুযোগ? তোমাকে ভালোবাসার? এই বৃষ্টি জলে মুছে দাওনা সব রাগ । মনের ঘৃণা সব ধুয়ে নাও। ভাসিয়ে দাও সব অভিমান। মনটা স্বচ্ছ করে আবার ভালোবাসার প্রদীপ জ্বেলো। প্লিজ বউ। একটা সুযোগ দাও আমায়। প্লিজ। পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে। খুব বেশি ভালোবাসি তোয়ায়। দেখো, উপরওয়ালাও চান আমরা আবার এক হয়ে যাই। তাইতো উনিও আমাদের জন্য উনার আকাশকে কাঁদাচ্ছেন। যেন সব মান অভিমান ধুয়ে ফেলে আবার নতুন করে বাঁচতে শিখি। দাওনা বউ মনের সব জেদ মুছে। এভাবে থাকলে আমি মরে যাবো।”
মরে যাবো বলা মাত্রই অরিন দিহানকে থাপ্পড় দিলো। দিহান গালে হাত দিয়ে কাতর চোখে তাকালো। অরিন দিহানকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল। কাঁদতে কাঁদতে বলল ”
_জানেন কতো ভয় পেয়ে ছিলাম। আর একটু হলে তো মরেই যেতাম। সেই রাত থেকে ফোন বন্ধ। কারও নাম্বার নেই আমার কাছে, যে আমি একটা খোঁজ নেবো। কত টেনশনে ছিলাম জানেন?
_তুমি কীভাবে ভাবলা আমি তোমাকে এতো সহজে ছেড়ে দিবো। আমি তো ফোন রেখেই চলে আসছি আর বাসায় যাইনি।
_আমাকে একটা ফোন দেননি কেন? খুব পাষাণ আপনি।
_জানো সকাল থেকে এখানে আছি। কত কষ্ট করে সবকিছু সাজিয়েছি। কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টি এসে সব ভাসিয়ে দিলো।
_সরি। ক্ষমা করে দিন প্লিজ।
_তার আগে বলো আমায় ক্ষমা করছো।”
অরিন দিহানের বুক থেকে মাথা তুলে বলল” আপনার কোনো ক্ষমা নেই। ক্ষমা পেয়ে গেলে আবার মাথায় চড়ে বসবেন। শাস্তি সরূপ সারাজীবন আপনাকে জ্বালাবো আমি।” দিহান অরিনের হাতে চুমু এঁকে কান্নাজড়িত গলায় বলল”
_তবুও কাছে থেকো বউ প্লিজ। তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকা অনেক কঠিন বউ। প্লিজ আর কখনো দূরে যেওনা।” অরিন দিহানকে আবার জড়িয়ে ধরে বলল, “ভালোবাসি প্রিয় খুব ভালোবাসি। দূরে থাকার উপায় নেই। নয়তো যে আমি নিজেই মরে যাবো।
দিহান আর অরিন একে ওপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। সুখের কান্না এটা। কত খুশি দুজন। আজ তাঁদের ভালোবাসার মাঝখানে অভিমানের দেয়ালটা ভেঙে গেছে। বৃষ্টির ফোঁটা এসে দুজনের উপর পড়ছে। আর চোখ বন্ধ করে একে ওপরকে অনুভব করছে। অনেক্ষণ পরে দিহান বলল”
_এই বউ জানো। তোমাকে এভাবে অনেক হট লাগছে।
_ছিইইইইই।
_সত্যি বলছি।
অরিন দিহানকে ছেড়ে বলল”
_হইছে সত্যি বলা? এবার আসেন নিচে। ঠান্ডা লাগবে।
_আরেকটু থাকি।
_উঁহু। আর একটুও না।” অরিন দিহানকে টেনে নিয়ে নেমে আসলো ছাদ থেকে।
____________________________
শান্তি নীড়। এটাতো ভালোবাসার আরেক নাম। তিন ভাই থেকে শুরু করে তাদের সন্তানদের বেড়ে উঠার নীড় এটা। কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বাড়ির প্রতিটি কোণায় কোণায়। শান্তি নীড়ের সদস্যরা সবাই দাঁড়িয়ে আছেন শান্তি নীড়ের গেটের বাইরে। সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আবার বাড়িতে থাকবেন। আর আলাদা থাকবেন না। তাই বাড়ি পরিষ্কার করার জন্য মানুষ লাগিয়েছেন। বাড়িটার দিকে তাকিয়ে পুরোনো সব স্মৃতি মনে পড়ছে। সব কিছু যেন টিভির পর্দায় দেখছেন। বাড়িটা আর আগের মতো নেই। চারদিকে শ্যাওলা ধরে গেছে। ঘাস অনেক লম্বা লম্বা হয়েছে। গাছের লতাপাতা বেড়ে জঙল হয়ে আছে। বাগানের সব ফুলের গাছ মারা গেছে। লম্বা লম্বা ঘাস শুধু দেখা যাচ্ছে। বাগানের দোলনাটা যেন ঘাসের তৈরি। ঘাস ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। দিয়া লুপা দিশা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিলো। দিয়া লুপাকে ফিসফিসিয়ে বলল ” আপু আমি যাবোনা ভিতরে আমার ভয় লাগছে।
_কেন?
_আমি জানি এতোদিনে বাড়িতে ভূতেরা বসবাস করা শুরু করে দিছে।
_সারাদিন ভূতের ফিল্ম দেখলো তো এগুলা মনে উঠবেই। ভূত বলে কিছু আছে নাকি।
_আপু দেইখো আমি সত্যি বলছি। এই বাড়িতে কেউ থাকতে পারবেনা। আমার তো কলিজা পর্যন্ত কাঁপছে।
_তোর তো হাত পা কলিজা সব কাঁপে, বুচি একটা।
“রুহানের গলা শুনে পিছনে তাকালো দিয়া। রুহান তাঁর থেকে এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে। দিয়ার হার্টবিট বেড়ে গেলো। এই ছেলেটা বড় হয়ে একদম হিরোদের মতো হয়ে গেছে। দিয়া যতবার দেখে ততবার ক্রাশ খায়। প্রথমবার যখন হসপিটালে দেখছিলো। দিয়ার তো বিশ্বাস হচ্ছিলো না এটা রুহান। চিকনা ছেলেটার কী বডি হইছে। কত লম্বা হইছে। বড় হয়ে কত সুন্দর হইছে দেখতে দিয়ার ভাষায় প্রকাশ করতে পারেনা। রুহান দিয়ার মাথায় চাপড় দিয়ে বলল” ওই চোখ দিয়ে খেয়ে ফেলবি নাকি? চোখ নামা। নজর লাগবে আমার।” লুপা রুহানকে ধমক দিয়ে বলল” ওই যা তো সর এখান থেকে।” বোনের ধমক খেয়ে রুহান চলে গেলো অন্য সাইডে। কিন্তু ওখান থেকে দিয়ার সাথে ইশারা ইঙ্গিতে ঝগড়া করে যাচ্ছে।
দিহানের বড় চাচ্চু গেটের ভেতর পা রাখতে গিয়েও পিছিয়ে নিলেন। তারপর এসে দিহানের বাবার আর লুপার বাবার হাত ধরে বললেন” আমরা তিন ভাই একসাথে গেটের ভেতর পা রাখবো।” লুপার বাবা মৃদু হাসলেন। কিন্তু দিহানের বাবার মুখটা কালো হয়ে গেলো। উনার ভাইয়ের ব্যবহারে উনি আহত হলেন। যেখানে সবাই দেখছে দিহান এখানে নেই, সেখানে বাড়িতে পা রাখার কথা বলেন কেমনে তিনি। ভাইয়ের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন” আমি আমার ছেলেকে ছাড়া বাড়িতে ঢুকবো না।” উনার কথার উপর কেউ আর কথা বলল না। দিহানের বড় মা বললেন “দিহানকে ফোন দাও ও আসুক।” দিশা বলল “ভাইয়া আসতে পারবে না। সকালে ফোন দিয়ে ভাইয়া জানিয়েছে সে ইন্ডিয়া আছে।” দিহানের মায়ের কপাল কুঁচকে গেলো। সকালে দিহানকে কম হলেও বিশটা কল দিয়েছেন, দিহান কল ধরে নি। দিশাকে কিঞ্চিৎ রাগান্বিত স্বরে বললেন “তোর কথা হয়েছে তো আমাকে বললি না কেন? আমি যে সকাল থেকে দিহানকে নিয়ে চিন্তিত, এটা তোর চোখে পড়েনা?” দিশা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো। তাঁর বিয়ের কথা শুনেছে থেকে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিছে। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। জিহান তাঁর বাবাকে বলল” বাবা, তাহলে এখন কাজ চলুক বাড়িতে। সব কাজ শেষ হলেই আমরা ঢুকবো।” জিহানের কথায় সবাই রাজি হলো।
সবাই যার যার বাসায় চলে গেলো। লুপার বাবা মা তাঁদের বাসায় গেলেন, লুপা হসপিটাল গেলো। কেবিনে গিয়ে দেখলো কেউ বসে আছে। প্রথমে নীলের পিছন দিক দেখেছে লুপা তাই চিনেনি। সামনে গিয়ে নীলকে দেখে লুপার কলিজা মুচড় দিয়ে উঠে। নীলকে দেখলেই তাঁর মনে ভালোবাসার ঢেউ উঠে। নীল যদি একটাবার বলতো, চলো লুপা সব ছেড়ে ছুঁড়ে আমরা হারিয়ে যাই অনেক দূরে, তাহলে লুপা এক সেকেন্ডও ভাবতো না। চলে যেতো নীলের সাথে কোনো অচিন দেশে। নীল যদি একটাবার তাঁর ভালোবাসা বুঝতো,তাহলে নীলের অনুমতি ছাড়াই নীলের বাড়িতে গিয়ে উঠতো। ভালোবাসা নয় বউয়ের দাবি নিয়ে। কিন্তু নীল যে তাঁর ভালোবাসা বুঝেনা। কেন নীল তাঁর ভালোবাসা বুঝেনা? সে খুব খারাপ এ জন্যই?
চেয়ার টেনে লুপা বসলো। নীল বা লুপার মুখে কোনো কথা নেই। দুজনের বুকেই হাহাকার। নীল টেবিলে রাখা পানির বোতল নিয়ে পানি খেলো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সে। আজ লুপাকে বিয়ে করে সোজা বাসায় গিয়ে উঠবে। তাঁর মা রাগ করলে পায়ে পড়ে থাকবে। তবুও লুপাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবে না সে। সকালে তাঁর মাকে জানিয়ে দিয়েছে সে শামুকে বিয়ে করবে না। উনি জানিয়ে দিলেন শামু ছাড়া কোনো মেয়েকে বউ হিসাবে মানবেন না তিনি। এ নিয়ে অনেক রাগারাগি চেঁচামেচি করে নীল। জীবনের প্রথম সে তাঁর মায়ের সাথে গলা উঁচিয়ে কথা বলেছে। খারাপ লাগছে তাঁর। কিন্তু যা হবার হোক,বিয়ে সে শামুকে করবে না। গলা খাঁকারি দিয়ে একটু নড়েচড়ে বসে লুপাকে বলল ” লুপা তোমাকে কিছু বলতে চাই।”
_হুম বলুন।
_আমি জানি লুপা, আমি যা বলবো শুনে তোমার খারাপ লাগবে। কিন্তু এ ছাড়া উপায় নেই। লুপা আমি চাই তুমি আর আমি,,,,,। নীলের ফোন বেজে উঠতেই এইটুকুতেই থেমে গেলো নীল। ফোন রিসিভ করে নীলের নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো। আর কিছু বলতে পারলো না লুপাকে। তাঁর মায়ের অবস্থা খুব খারাপ। এক্ষুনি তাঁকে বাসায় যেতে হবে। নীল আর একমূহুর্ত বসে থাকলো না,উঠে চলে গেলো। লুপার অসহায় চোখ দুটো তাকিয়ে থাকলো নীলের যাওয়ার পথে।
______________________
ভালোবাসা হচ্ছে জল রংয়ের মতো রঙহীন। যখন তাঁকে যেভাবে রাখবে তাঁর রং সেভাবে ধারণ করবে। তুমি ভালোবাসাকে অবহেলা করলে, তুমি ভালোবাসার কাছে অবহেলিত হবে। তুমি ভালোবাসাকে আঁকড়ে ধরলে,ভালোবাসা তোমায় আঁকড়ে ধরে থাকবে। তুমি ভালোবাসার কাছে কঠোর, তো ভালোবাসা তোমার কাছে কঠোর। ভালোবাসাকে যত্ন করতে হয়। ভালোবাসার জগতটা রঙিন রাখতে হয়। তবেই তো ভালোবাসা রঙিন হবে। দিহানের বুকে তাঁর কলিজা মাথা রেখে শুয়ে আছে। অজনি ঘুমিয়ে যাওয়ার পরে দিহান তানভীর কাছে রেখে এসেছে। অরিন এখনো ঘুমায়নি। স্বামীর গল্প শুনছে সে। এই ছ’বছর কী হয়েছে না হয়েছে। তাঁদের পরিবারের আলাদা হওয়া। ইশির খুনিকে খুন করা সব কিছু বলে যাচ্ছে দিহান। সবকিছু শুনে অরিন মাথা তুলে দিহানের দিকে তাকিয়ে বলল” জিহান ভাইয়া তো সি আই ডি পুলিশ। উনি একজন আইনের মানুষ হয়ে ইশি আপুর খুনিকে আইনের হাতে তুলে না দিয়ে নিজে খুন করে ফেললেন।
_হুম। কারণ আমাদের হাতে কোনো প্রমাণ ছিলোনা। সব প্রমাণ জামিল খানের টাকায় মুছে গেছিলো। জামিল খান জেলে গেলেও তাঁকে মুক্ত করে আনার মতো অনেকে ছিলো। যাদের কাছে আমাদের আইন কিছুই না। যখনই তদন্ত করে জানা যায় জামিল খান হচ্ছেন আসল খুনি, তখন জিহান ভাইয়া সিদ্ধান্ত নেয় খুনের বদলে খুন করবে সে। তাই সুযোগ পেয়ে কাজ সেরে নেয় সে।
_কেউ দেখেনি?
_কে দেখবে? খুন তো হয়েছে জামিল খানের গুদামঘরে যেখানে মানুষের আনাগুনা নেই। আর লাশটাও পুলিশ তিনদিন পরে উদ্ধার করেছে। আরে আমাদের দেশের অলিতে-গলিতে কত কত খুনি আছে, যা আমাদের চোখের সামনে থেকেও আমরা ধরতে পারিনা। আর এটাতো জিহান ভাই। [একটু থেমে] বউ তুমি কী সত্যি আমাকে ক্ষমা করে দিছো?
_উঁহু।
_ক্ষমা করনি?
_না।
_প্লিজ বউ। আমি তো শিকার করছি আমি দুষী তাইনা?
_ক্ষমা না করলে বুঝি বুকে মাথা রাখতাম? পাগল।
_ক্ষমা করলে তো আরো অনেক কিছু করতা। শুধু বুকে মাথা রাখতা না।
_আর কী করতাম?
_আদর করতা। ঠিক আগের মতই।
_একটা মেয়ের বাপ হয়ে গেছেন।
_বুড়ো তো আর হইনি। এখনো ত্রিশ।” অরিন৷ হাসলো লজ্জার হাসি। দিহান অরিনের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলল “আর ইউ রেডি?” অরিন ঠোঁট কামড়ে হাসলো। লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারছে না। দিহান বলল” চুপ থাকা কিন্তু সম্মতির লক্ষ্মণ” অরিন লজ্জায় দুহাতে মুখ ঢেকে নিলো। এতো বছর পর আবার সে তাঁর স্বামীর সাথে ডুব দিচ্ছে। অনুভূতি গুলা সেই প্রথমবারের মতো লাগছে। লজ্জা শিহরণ সব মিলিয়ে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। দিহান অরিনের মুখ থেকে হাত সরিয়ে অরিনের ঠোঁট জোড়ায় ডুব দিলো।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দিহানের বুকে নিজেকে আবিষ্কার করে অরিন। দিহানের ঘুমন্ত মুখের দিকে চেয়ে মৃদু হাসলো সে। ঘুমন্ত দিহানের দিকে তাকালে নেশা ধরে যায় তাঁর। ভালোবাসতে ইচ্ছে করে খুব। তাঁর স্বামীটা মনে হয় পৃথীবির সব থেকে সুন্দর মানুষ। দিহানের কপালে চুমু এঁকে ওয়াসরুমে গেলো অরিন। ভালোবাসা অনুভূতিগুলা তাঁদের আগের মতোই আছে। শুধু মান অভিমান আর ভুল বুঝাবুঝিতে হারিয়ে গেছে কিছু বছর। ওয়াসরুম থেকে এসে দেখলো দিহান শুয়ে ফোনে কথা বলছে। কথা শুনে মনে হচ্ছে শাওন বা নীলের সাথে কথা বলছে। ঘুম ঘুম কণ্ঠে কথা বললে অরিনের মনের অনেক গভীরে গিয়ে শিহরণ জাগে। ফোন রেখে ঘুম কণ্ঠে দিহান বলল” বউ।” অরিন সাড়া দিলোনা। দিহানের ঘুম কণ্ঠে তাঁর ঘোর লেগে যায়। দিহান আবার ডাক দিলো “এই বউ” অরিন টাওয়াল রেখে দিহানের পাশে বসলো। দিহান অরিনকে টান দিয়ে নিজের বুকে ফেলে বলল” ইস বউ টা দিন দিন শুধু আবেদনময়ী হচ্ছে।
_ছাড়ুন তো।
_হুম ছেড়ে দিবো। মর্নিং কিস দাও।” অরিন দিহানের কপালে চুমু এঁকে দিলো। দিহান অরিনের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে হাসলো। অরিন হেসে উঠে গেলো। দিহান বলল” পালাচ্ছো নাকি পালানোর চেষ্টা করছো?
_কোনোটাই না।” দিহান অরিনের কোমর জড়িয়ে বলল”মাথায় হাত বুলিয়ে দাও। ঘুম হয়নি আমার।” অরিন দিহানের চুলে হাত ডুবাতে ডুবাতে বলল”আগে কিছু খেয়ে নিন পরে ঘুমাবেন।
_উঁহু। ঘুমবো আমি। মাথা ধরছে।
_কে ফোন দিছিলো আগে, নীল ভাই?
_শাওন ফোন দিছে। সে নাকি আমায় কী বলবে। তোমায় বললাম না, দিশার আর ওঁর ব্যাপার টা। দিশার বিয়ে শুনেছে থেকে ওঁর মুখটা তো দেখার মতো হয়েছে।
_এসব সারপ্রাইজ টারপ্রাইজ দেওয়ার থেকে আগেই জানিয়ে দিন। পরে দেখবেন উল্টা পাল্টা কিছু করে বসেছে।
_আমার বিশ্বাস আছে। তুমি চিন্তা করনা। দিশা বা শাওন কিছু করতে পারবে না। নীল আর দিয়া ওদের পাহারা দিবে। ওঁরা জানে বিষয়টা।
অরিন আর দিহান কথা বলছিলো তখন তাঁদের কানে এলো অজনির কান্না। দুজনই ততক্ষণাৎ উঠে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। অরিনের মামা বা তানভী কেউ অজনিকে শান্ত করতে পারছেনে। সার্ভেন্টরা সবাই এখানে আছে। অরিনের মামা কিঞ্চিৎ ধমক দিয়ে বললেন “আরে ভাই কাঁদিস কেন সেটা তো বলবি?” অজনি কাঁদতে কাঁদতে বলল “রাতে মাম্মাম আর পাপা আমায় খাম্মনির রুমে দিয়ে আসছে।” অজনির কথা শুনে অরিন আর দিহানের লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে। হায় লজ্জা। দিহান আর দাঁড়ালো না চুল ঠিক করতে করতে চলে গেলো রুমে। আল্লাহ তাকে এক্কান মেয়ে দিয়েছেন। পুরাই ভাঙ্গা রেডিও। চললে আর থামেনা।
#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_৪৭
#সুলতানা_সিমা
অনুতপ্ততা এমন একটি শব্দ যা কখনো মানুষকে ভালো থাকতে দেয়না। হাজারও খুশির মাঝে মনটা করে রাখে অশান্ত। মনের মধ্যে চলে ভয়াবহ ঝড়। যে ঝড়ে কলিজা ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হয়। অনুতপ্ততার থেকে কঠিন শাস্তি দ্বিতীয়টা আছে বলে মনে হয়না। বেচিনে চাল ধুয়ে ধুয়ে নিঃশব্দে কেঁদে যাচ্ছে লুপা। চোখ যেন আজ কোনো বাধা মানছে না। আজকে তাদের বাসায় তাঁর দুই চাচাদের পরিবার এসেছেন। ড্রয়িংরুমে বসে সবাই কতো মজা করছে, কিন্তু লুপা তাঁদের ধারে কাছেও যাচ্ছে না। রুহান এসে কিচেন থেকে নাস্তা নিয়ে গেছে। সবাই থাকে ডেকেছে যাওয়ার জন্য, সে আসছি বলে আর যায়নি। সত্যি বলতে তাঁর মন চাচ্ছে না কারও সামনে যেতে। আজ অরিনের কথা খুব মনে পড়ছে। অরিনের সাথে করা অন্যায় থাকে ধুঁকে ধুঁকে খাচ্ছে। এক মূহুর্ত তাকে ভালো থাকতে দিচ্ছে না
_কাঁদছো কেন লুপা?” লারার গলা কানে আসতেই তড়িঘড়ি করে চোখ মুছে পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে থাকালো লুপা। জোরপূর্বক হেসে বলল “ক্ক ক্ক কই না তো। কাঁদবো কেন? যাও না ভাবি বসো গিয়ে।
_অরিনকে মিস করছো? ” লুপা কিছু বলল না। তাঁর চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে, চাল তুলে বাসনে ঢালতে লাগলো। লারা বলল”
_আর কতো কাঁদবে? গত কদিন থেকে সবার আড়ালে কাঁদতে দেখছি তোমায়। তুমি যা করেছো পরিস্থিতিতে পড়ে করেছো। কিন্তু তোমার একটা ভুল ছিলো লুপা। অরিনকে ব্যবহার করা তোমার ঠিক হয়নি। সে তোমার বন্ধু। তোমাকে সে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেছে। আর তুমি তাকে ঠকিয়েছো।” লুপা কিছু বলল না। এই একটা অনুশোচনা তাকে ভালো থাকতে দেয়না। অরিন তাকে কত বিশ্বাস করতো। আর সে তাঁর বন্ধুকে বানিয়েছিলো তাঁর প্রতিশোধের হাতিয়ার। লারা লুপাকে বলল ”
_কেঁদনা লুপা। মানুষ ভুল করে আবার ভুল থেকে শিক্ষা নেয়। মানুষ বলতেই তো ভুল।” লুপা ডুকরে কেঁদে উঠল। কাঁদতে কাঁদতে বলল ”
_আমি খুব খারাপ ভাবী। ভুলের ক্ষমা হয় ভাবী কিন্তু অপরাধের নয়। আমি তো অপরাধী। শুধু অপরাধী নয় পাপী আমি। বিশ্বাস ভাঙ্গার মতো বড় অপরাধ করেছি আমি। আমার শাস্তি তো মৃত্যু হওয়া উচিত ভাবী। [একটু থেমে] কত খুঁজেছি অরিনকে আমি। পায়নি, কোত্থাও পাইনি। বন্ধুত্বের জন্য খুঁজিনি তাঁকে। আমি তো বন্ধু হওয়ার যোগ্যই নই । আমি খুঁজেছি শুধু পায়ে ধরে একটাবার ক্ষমা চাইতে। অরিনের অভিশাপ, আমার এতো সুন্দর একটা পরিবারের অভিশাপ আমাকে ভালো থাকতে দিচ্ছেনা ভাবী। এক এক করে আমার থেকে সব কেড়ে নিয়েছে। শেষ পর্যন্ত আমার শেষ চাওয়াটাও কেড়ে নিয়েছে।” লারা আঁচল দিয়ে চোখের পানি মুছলো। লুপার কষ্টে খুব কষ্ট হয় তাঁর। সেদিন শান্তি নীড় থেকে আসার পথে যেখানে সবার মুখ ছিলো হাস্যজ্বল সেখানে লুপার চোখ থেকে অঝোর ধারা বৃষ্টি ঝরছিলো। কাঁদতে কাঁদতে লুপার হেঁচকি ওঠে গেছে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। লারা চলে গেলো। লুপাকে স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা জানা নেই তাঁর।
লুপার ফোনে টুং করে মেসেজ টোন বেজে উঠল। চোখের পানি মুছে ফোন হাতে নিলো লুপা। ধূসর গোধূলি নামে আইডি থেকে মেসেজ এসেছে। “হাই কী করো বন্ধু” গত এক সপ্তাহ থেকে এই আইডির সাথে কথা বলে সে। খুব অল্পসময়েই এই আইডির মানুষটার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে তাঁর। তবে আইডির মালিক ছেলে নাকি মেয়ে এটা জানেনা লুপা। তবুও তাঁর মনের সব কষ্টগুলো শেয়ার করেছে সে। শুধু নীলের বিষয়টা বাদে সব শেয়ার করেছে। লুপা নীলের বিষয় কাউকে বলতে চায়না। কী বলবে সে? তাঁর এক তরফা ভালোবাসার কথা শুনে লোকে বা কী বলবে? দুদিন আগে নীল তাঁর হসপিটালে এসে বলল তাকে কিছু বলতে চায়। কিন্তু না বলেই চলে গেলো, আর লুপার সামনেই এলো না। লুপার মনটা খুব জানতে চায়। নীল কী বলতে চেয়েছিলো তাকে। হয়তো কখনো জানা হবেনা হয়তো বা জানা হবে। কিন্তু তা শুনে সয্য হবেনা।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন রেখে রান্নায় মন দিলো লুপা।
দিয়া হেঁটে হেঁটে সব রুম দেখছে। একটা রুমের সামনে এসে থেমে গেলো সে। বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে রুহান খাটে বসে খুব মনোযোগ দিয়ে ফোন টিপছে। মনে হয় কোনো মেয়ের সাথে চ্যাট করছে। পা টিপে টিপে রুমে ঢুকে রুহানের সামনে বসলো। যা ভেবেছিলো তা নয়। রুহান গেইম খেলছে। দিয়ার যে এসে বসেছে রুহানের খেয়াল নেই। দিয়া নিজের দিকে তাকানোর জন্য গলা খাঁকারি দিলো। রুহান তাকালো। দিয়াকে দেখে ভ্রু উঁচিয়ে দিয়ার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে বললো ”
_ মুটকি উঠ আমার খাট ভেঙে ফেলবি।” মুটকি বলায় দিয়া রেগে গেলো। নাক মুখ ফুলিয়ে বলল” আমি মুটকি? আমি বসলে তোর খাট ভেঙে যাবে? তোর এতো সস্তা খাট কেনো রে? একটা মানুষ বসলেই ভেঙে যাবে। যাস আমাদের বাসা, গিয়ে দেখিস, আমি কেমন খাটে থাকি। দশ বাজার ঘুরে কিনেছে বাবা।
_চাচ্চু তো জানে তুই অনেক মুটা। তোর জন্য মজবুত খাট না কিনলে তো প্রথমদিনই ভেঙে ফেলবি। তাই চাচ্চু দশ বাজার ঘুরে একটা খাট কিনেছে।” নিজের কথার জালে নিজে ফেসে গিয়ে দিয়া চুপসে গেলো। রুহান দিয়াকে বলল “তুই দেখিস চাচ্চু তোর বিয়েতে লোহার খাট দিবে। কারণ তোর বরটাও তোর মতো মুটা হবে।” দিয়া এবার প্রচন্ড রেগে গেলো। খপ করে রুহানের চুলে মুঠি ধরে মারতে লাগলো।রুহান বলল”
“মুটকি তোর গায়ে এতো শক্তি কেন রে।” দিয়া আরও জোরে মারলো। রুহান দিয়াকে ধরে দিয়ার হাত দুটো পিছনে এনে শক্ত করে ধরল। দিয়া ছটফট করছে ছুটতে। তাঁর পিঠ রুহানের বুকের সাথে ঠেকে আছে। দিয়ার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। দিয়া চোখ বন্ধ করে থাকলো। রুহানের ছোঁয়া তাকে অন্য রকম সুখ দিচ্ছে। মনে দিচ্ছে অন্য রকম দোলা। রুহান বলল “চোখ বন্ধ করে আছিস কেন চোখ খুলে সামনে থাকা।” দিয়া চোখ খুললো। আয়নার মধ্যে তাঁর আর রুহানে প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছে। রুহানের ঘাড় সমান হয় দিয়া। ইস রুহানের সাথে তাকে কতো সুন্দর মানিয়েছে। এই হিরোটা যদি তাঁর স্বামী হয় তাহলে সে হবে অনেক ভাগ্যবতী মেয়ে। কারণ এমন হিরো যে সবার ভাগ্যে থাকেনা। রুহান দিয়াকে বলল “আগে জানতাম তুই বুচি। পড়ে জানলাম তুই মুটকি। এখন দেখি তুই খাটোনি।” দিয়া চোখ ছোট ছোট করে বলল “ওই খাটোনি কী?”
_খাটো ছিনিস? তুই হচ্ছিস খাটো মানুষ। আমাকে দেখ, আমি কতো লম্বা।
_ওরে আমার লম্বা রে। দেখতে একদম বাঁশের মতো লাগে জানিস। বাদর কোথাকার।
_তুই জানিস বাঁশ হচ্ছে মজাদার খাবার, যা সবাই খায়।
_বাঁশ সবাই খায়, তোকে তো কুত্তাও খাবে না। ছাড় আমায়।” রুহান দিয়াকে ঘুরিয়ে বলল “কী বললি তুই?” দিয়ার রুহানের চোখে চোখ রেখে বলল” বলছি তোরে কুত্তাও খাবেনা। মানে তুই খুব পঁচা।
_আমি পঁচা?
_হ্যাঁ তুই পঁচা। তুই হচ্ছিস,,,,,আর কিছুই বলতে পারলো না দিয়া রুহান আর ঠোঁট আঁকড়ে ধরলো। দিয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকলো। এটা রুহান কী করলো। মাথায় ঢুকছে না তাঁর।
কিছুক্ষণ পরে দিয়াকে ছেড়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে চলে গেলো রুহান। রিহানের ঠোঁটে দুষ্টুমির হাসি। দরজার সামনে গিয়ে দিয়াকে ফ্লায়িং কিস দিয়ে ঠোঁট কামড়ে হেসে চলে গেলো। সবকিছু দিয়ার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এখনো সে ঘোরের মধ্যে আছে। রুহানের ছোঁয়া যেন এখনো তাঁর ঠোঁটে লেগে আছে। রুহান এটা কেন করলো? তাহলে কী রুহানও তাকে ভালোবাসে? দিয়ার লজ্জা লাগছে নিচে যেতে। কারণ নিচে রুহান আছে। আজব, এতোক্ষণ তো লজ্জা লাগেনি তাহলে এখন এতো লজ্জা লাগছে কেন? রুহানের রুম থেকে বেরিয়ে লুপার রুমে চলে গেলো দিয়া। নিচে গেলে যেন লজ্জায় সে মরেই যাবে।
অনেকক্ষণ পরে টেবিলে খাবার দেওয়া হলো। সবাই খেতে বসলো। শুধু দিয়া নাই। লুপার মা দিয়াকে খুঁজে উপরে গেলেন। লুপার রুমে বসে ছিলো দিয়া। তিনি গিয়ে বললেন “কী ব্যাপার মামনি তুমি এখানে কেনো? আসো সবাই খেতে বসে গেছে।
_ছোট আম্মু আমি খাবো না। আমার ক্ষিধে নেই।
_কোনো কথা শুনছি না আসো।” লুপার মা দিয়াকে টেনে নিয়ে গেলেন নিচে। সবাই টেবিলে আছে। লুপা আর রুহান সার্ভ করছে। দিয়া চেয়ার টেনে বসলো। তাঁর অনেক লজ্জা লাগছে। রুহান দিয়ার প্লেটে ভাত বেড়ে দিয়ে তরকারি বেড়ে দিলো। লুপার বাবা মা বসেছেন। সবাই লুপাকে আর রুহানকে বসতে বলল। তাঁরা বলল তাঁরা ভাইবোন পরে খাবে। খেতে খেতে দিহানের বড় চাচ্চু বললেন
“দিহানের নাম্বারটা আমায় দিস তো দিশা। ওঁর সাথে কথা বলবো।” দিহানের বাবা বললেন ”
_দিহানের হঠাৎ করে কী যে হয়েছে ওঁর মায়ের সাথে কথা বলেনা।” দিহানের বড় মা বললেন “কী বলো মায়ের সাথে কথা বলবে না কেন? বাড়ির কারো সাথে আর কথা বলে?” দিশা অভিমানী স্বরে বলল “আজকাল তো দিয়ার সাথে সারাদিন ফুসুরফুসুর করে। আমার ফোনে একটা কল দিলে দিয়াকে দশটা কল দেয়।” দিশার কথা শুনে জিহান দিয়াকে বলল” দিয়া। “দিয়া কেঁপে উঠল। তাঁর মন ধ্যান সব কিছু রুহানের মাঝে হারিয়ে আছে। জিহান বলল” তাই নাকি রে দিয়া? তো কী এতো কথা বলিস ভাই বোন মিলে?” দিয়া বলল” তেমন কিছু না। আসলে ভাইয়া, আপু আর শাওন ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করেছে। তাঁদের সারপ্রাইজ দিতে চায়। তাই ভাইয়া বলেছে আমি যেন কাউকে না জানাই।
_কিন্তু এখন তো সবাই জেনে গেলো।” লারার কথায় হা হয়ে যায় দিয়া। এতোক্ষণ ধরে বোকার মতো পেটের কথা সব বলে দিছে সে খেয়ালই করেনি। মাথার মধ্যে শুধু রুহানের কর্মকান্ড গুলা ঘুরপাক খাচ্ছে। দিয়ার বাবা মা থেকে শুরু করে সবাই দিয়ার দিকে জিজ্ঞাসুক চোখে তাকিয়ে আছে। পাত্র তাহলে শাওন? দিশার তো খুশিতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। এতো খুশি সে কই রাখবে। তাঁর বিয়ে হবে শাওনের সাথে? দিয়া কাঁদো কাঁদো মুখ করে সবার দিকে তাকালো। দিহান এত্ত এত্ত প্ল্যান করেছে, আর এখন সে সব কিছুতে পানি ঢেলে দিলো। যখন দিহান এটা জানবে তাঁকে তো কেটে ফেলবে।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই কিছুক্ষণ গল্প করলো। তারপর বিদায় নিতে শুরু করলো। দিয়া মনে মনে রুহানকে খুঁজছে, কিন্তু রুহানকে দেখা যাচ্ছে না। দিয়ার খারাপ লাগছে। দিয়াদের বাসায় রুহানদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। আর মনে হয় তখনই দেখা হবে। দিয়ার মনে প্রেমের শিহরণ জাগিয়ে এখন রুহান উধাও হয়ে গেলো। দিয়ার ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে। এতোদিন রুহানকে শুধু ভালোবাসতো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে রুহানের জন্য পাগল হয়ে গেছে।
________________________________
অরিন আলমারিতে কাপড় রাখছিলো। দিহান এসে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। অরিন কিছু বলল না। দিহানের অরিনের ঘাড়ে চুমু দিতেই অরিন বিরক্তি স্বরে কিঞ্চিৎ ঝাঁজালো গলায় বলল” এই ছাড়েন তো সবসময় এসব ভালো লাগেনা।” দিহান ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। অরিন তাঁর কাজ করতে লাগলো। মেজাজ খারাপ হয়ে আছে তাঁর। আজ মহীনির শাশুড়ী নাকি মহীনিকে বলেছেন উনার ছেলের ঘর করতে হলে বাচ্চা জন্ম দিতে হবে। মহীনি হসপিটাল এসেছিলো আজ। খুব কান্না করে গেছে। অরিন কী স্বান্তনা দিবে খুঁজে পায়নি। আজ বিয়ের এতো বছর হয়ে গেছে তবুও এতো চেষ্টার পড়ে তাঁরা বাচ্চা শূন্য।
কাপড় গুছিয়ে কিচেনে গিয়ে রান্না বসালো। দিহানের পছন্দের কয়েকটা কারী করবে আজ। রান্না শেষ করে রুমে এসে দেখলো অজনি একা একা বসে খাতায় আঁকছে। অরিন বলল” তোমার পাপা কই তোমাকে পড়াচ্ছেনা?” অজনি অরিনকে বলল “পাপাকে তো পাচ্ছি না মাম্মাম।” অরিনের কপাল কুঁচকে গেলো। অজনিকে পড়তে বলে দিহানের খুঁজে বের হলো। পুরো বাসায় খুঁজেও পেলোনা। শেষ মেষ অরিন ছাদে গেলো। দিহান ছাদের রেলিংয়ে হাতের ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এক হাতে সিগারেট রাখা। সিগারেটের ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে। ঠান্ডার মধ্যে শুধু একটা শার্ট গায়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অরিন ঘুরে নিচে আসলো। তানভীকে অজনির কাছে রেখে, একটা শাল আর এক মগ কফি নিয়ে ছাদে গেলো। কফির মগ রেলিঙের উপর রেখে শাল সহ দিহানকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। দিহান আগের মতোই থাকলো একটুও নড়লো না। অরিন বলল “সরি।” দিহান এখনো চুপ। অরিন দিহানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দিহানের চোখ ফুলা। তারমানে দিহান কেঁদেছে। অরিনের কলিজা মুচড় দিয়ে উঠল। অরিন দিহানকে জড়িয়ে ধরে অপরাধী গলায় বলল” ক্ষমা করে দিন প্লিজ। আআমার মাথা ঠিক ছিলোনা” দিহান চুপ। অরিন দিহানকে মহীনির ব্যাপারটা খুলে বলল। দিহান এখনো রাগ। অরিন দিহানকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকল। দিহান রাগ করে থাকলে খুব কষ্ট হয় তাঁর। অরিন কেঁদে দিলো। দিহানের নিরবতা তাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে।
কিছুক্ষণ পরে দিহান নিজের বুক থেকে অরিনের মুখ তুলে চোখের পানিটা মুছে দিয়ে, অরিনের কপালে চুমু এঁকে দিলো। তারপর বলল” স্বামী রাগ করলে, তাঁর রাগ আদর করে ভাঙ্গাতে হয়, ফ্যাস ফ্যাস করে কেঁদে নয়।” অরিন চোখ ভর্তি জল নিয়ে হাসলো। তারপর উঁকি দিয়ে দিহানের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। দিহান অরিনের কোমর জড়িয়ে ধরে এক হাতে অরিনের মাথা চেপে ধরে। কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দিহানের গালে চুমু এঁকে দিয়ে বলল “রাগ ভেঙেছে?” দিহান অরিনের থেকে চাদর নিয়ে অরিনকে পিছন থেকে চাদর সহ জড়িয়ে ধরলো। তারপর অরিনের ঘাড়ে চুমু খেয়ে বলল ”
_এমন বউ থাকলে রাগ করে থাকা যায়?
_রাগ করেই তো ছিলেন এতোক্ষণ।
_এটা তো আদর পাওয়ার জন্য করেছিলাম।” দিহান কফির মগ নিয়ে দুলনায় গেলো। অরিনকে তাঁর কোলে বসিয়ে চাদরে পেছিয়ে নিলো। অরিন দিহানের গলা জড়িয়ে তাঁর গলায় মুখ গুঁজে বসে থাকলো। দিহান কফির মগ হাতে নিয়ে বলল” বউ মুখ তুলো কফি খাবা।
_উঁহু। আমি খাবো না।” দিহান মগ রেখে অরিনের মুখ তুলে ধরে বলল” ইস কী হট গলা বউটার। ইচ্ছে করছে আদর করি।” অরিন দিহানের কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল” যার স্বামী পুরাই হট তাঁর গলা তো কিঞ্চিৎ হট হবেই।” দিহান হেসে উঠল। অরিনকে জড়িয়ে ধরে বলল “ভালোবাসি রে পাগলী। খুব বেশি ভালোবাসি।”
চলবে……।
চলবে……।