বেস্টু পর্ব ৪+৫

#বেস্টু
#পর্ব_০৪
#Ariyana_Nur

—আপনি কাকে গাধা বললেন???

আমার কথা শুনে লোকটি আমাকে বলল…..

—আমি তো মনে করেছিলাম তোমার যথেষ্ট বুদ্ধি আছে।এখনতো দেখছি পুরোই খালি।

আমি কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম লোকটি কি বুঝাতে চাচ্ছেন।আমি কিছু বলব তার আগেই সে আহাদকে বলল…

—তুমি একজন ছেলে মানুষ হয়েও এই ঘাস ফড়িং কে আটকাতে পারলেনা??

আহাদ কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।
এমনি তো আমার মাথা গরম আছে তার উপর এই লোকের কথা শুনে আমার মাথা আরো গরম হয়ে গেল।আমি তাকে বললাম…..

—সমস‍্যা কি আপনার???তখন থেকে একের পর এক বলেই যাচ্ছেন???আর আপনি আমাকে ঘাস ফড়িং কেন বললেন???

—ঘাস ফড়িং কে ঘাস ফড়িং বলবো না তো কি বলবো।এমনিতো মাথায় কিছু নেই তার উপর বেশি গরম হলে সমস‍্যা আছে।এই বলে লোকটি চলে যেতে নিয়ে আবার আমার দিকে ঘুরে বলল…
—এভাবে চেয়ে থেকো না দেখার আরো সময় পাবে।ভালো থেকো ঘাস ফড়িং।
এই বলে লোকটি সেখান থেকে চলে গেলো আর আমি ভেবলার মত তাকিয়ে থাকলাম।

জানোস আমার মুখ দিয়ে আর কোন কথাই বের হলো না।মনে হচ্ছিল আমার মুখ কেউ ফেবিকল দিয়ে আটকাইয়া রাখছে।

এতক্ষন তাহিয়া আমার কথা দুগালে হাত দিয়ে মনোযোগ দিয়ে শুনছিল।আমার কথা বলা শেষ হতেই ও গালে হাত রাখা অবস্থাই বলল…

—আর এখান থেকেই তোদের লাভ স্টোরি শুরু।

আমি রাগি গলায় বললাম….

—ঐ বান্দর ছেরি তুই এই যায়গায় লাভের কি দেখলি???

ও কিছু না বলে হু হা করে হাসতে লাগলো।তা দেখে আহাদ বলল….

—লা-ইলাহা-ইন্তি-কুন্তি কিরে এই শেওরাগাছের পেত্নিরে কি ভূতে ধরলো নাকি??

আমি আহাদের পিঠে একটা তাল ফালিয়ে বললাম…

—বদমাইশ ঐটা লা-ইলাহা-ইল্লা-আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুংতুম মিনার যো-লেমিন হইব।

আহাদ পিঠ ডলতে ডলতে বলল…

—ভালো ভাবে বললেই তো হয়।আবার কেলাস কেন।আর তুই থামবি তা নাহলে কিন্তু আমি তোর দাত ভাংগুম।আহাদ রাগ দেখিয়ে কথা গুলো তাহিয়াকে বলল।

তাহিয়া কোন মত হাসি থামিয়ে বলল….

—এই প্রথম কেউ আমাদের বেবির মুখ বন্ধ করতে পেরেছে।এই বলে আবার হাসতে লাগলো।আর আমি ওর পিঠে তাল ফালাতে লাগলাম।

_______________________

সেদিন রাগ করে মানহা নিহাদদের বাসার থেকে আসার পর থেকে মানহ নিহাদের সাথে আর কোন কথা বলেনি।নিহাদ অনেক বার ওর সাথে কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু প্রতি বারি মানহার রাগের কাছে হার মেনে চলে গেছে।ইমু,ফেসবুক, মেসেঞ্জার সবগুলোতে নিহাদকে ব্লক করে রেখেছে।নিহাদ কোন ভাবেই মানহা সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না।

আরহাম আর নিহাদ রাতের বেলা ব্রীজ এর উপর দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ ধরে।কিন্তু কারো মুখেই কোন কথা নেই।নিরবতা ভেংগে আরহাম বলল….

—দেখ তুই জানিস আমি কেমন।ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে কথা আমি পছন্দ করি না। তোর আর মানহার মাঝে যে সমস্যা টা হচ্ছে তার মূল কারন হলাম আমি।আর আমি চাইনা আমার জন‍্য তোদের ভাই বোনের মাঝে কোন সমস‍্যা হোক।তাই আমি অনেক ভেবে চিন্তে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি মানহাকে বিয়ে করবো না।আর আজই বাড়িতে গিয়ে ওদেরকে বাবাকে দিয়ে না করে দিব।

কথাগুলো বলার সময় আরহামের কথা বারবার আটকে যাচ্ছিল।

নিহাদ ওর দিকে তাকিয়ে বলল….

—তোর কি মনে হয় তাহলে সব সমস্যা শেষ হয়ে যাবে???

আরহাম কিছু না বলে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।

নিহাদ একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলতে লাগলো….

—মানহা আমার সাথে অভিমান করেছে।আর ওর অভিমান ভাংতে আমার এইবার একটু সময় লাগবে।তাতে কোন সমস‍্যা নেই।আমার এই ক্ষনিকের কষ্টের জন‍্য এমন একটা সিদ্ধান্ত নিস না।

আরহাম এবার গম্ভীর গলায় বলল….

—আমি যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাই হবে।

নিহাদ মুচকি হেসে ওর কাধে হাত রেখে বলল….
—আমার পগলি বোনটাকে পারবিনা সারা জীবন আগলে রাখতে যেভাবে এখন আমরা রাখছি???আমি জানি তুই আমাদের থেকেও ভালো পারবি তাই তো আমাদের কলিজার টুকরাকে তোর কাছে দিচ্ছি।

আরহাম কিছু না বলে নিহাদকে জরিয়ে ধরলো।নিহাদও মুচকি হেসে আরহামকে জরিয়ে ধরলো।

______________________

রাস্তা দিয়ে একা একা হাটছি আর রিকশা ওয়ালাদের ১৪গুষ্টি বকে উদ্ধার করছি।আজ কলেজ শেষে তাহিয়াদের বাসায় গিয়েছিলাম।সেখান থেকে এখন বাড়িতে যাচ্ছি কিন্তু একটা রিকশাও পাচ্ছি না।আর যা পাচ্ছি তা ১০টাকার ভারা ২০টাকা চাচ্ছে।কেনরে ভাই টাকা কি গাছে ধরে যে ১০টাকার ভারা ২০টাকা দিয়ে যাব।হুহ আমার তো খেয়ে দেয়ে আর কাজ নেই।আমি হেটেই কত যেতে পারি।কি মনে করে তারা আমার পায়ে জোর নেই।আমি হেটে যেতে পারবোনা।একা একাই মনে মনে এসব আবোল তাবোল বলছি আর রাস্তা দিয়ে হাটছি।এমন সময় আমার সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো।আমি কিছু বলবো তখন গাড়ি থেকে একজন নেমে এলো।তাকে দেখে আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম।
#বেস্টু
#পর্ব_০৫
#Ariyana_Nur

সামনের মানুষটি দেখে আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম।কেননা তাকে জোকারের চেয়ে কোন অংশে কম লাগছে না।পুরো মুখে সরি স্টিকার আর গলার মধ্যে সরি সাইনবোর্ড লাগালো।আমার সামনে এসে কান ধরে দাঁড়িয়ে বলল…

—সরি বুড়ি আর কখনো তোকে না জানিয়ে কিছু করবো না।এবারের মত মাফ করে দে আমায়।

(যারা বলেছিলেন আরহাম তাদের জন‍্য আধা বালতি সমবেদনা।)

আমি নিহাদ ভাইয়ার ফেস আর কথা বলার ধরন দেখে হু হা করে হাসতে লাগলাম।আর বললাম….

—তুই ভাইয়া কোন সারর্কাস থেকে পালিয়ে এসেছিস।তোকেতো পুরো জোকারের মত দেখাচ্ছে।এই বলে আমি আবার হাসতে লাগলাম।

ভাইয়া আমার মাথায় একটা গাট্টা দিয়ে বলল…

—তোর এই হাসির জন‍্যই তো এই জোকার সাজলাম।তোর জন‍্য তো জোকার কেন আরো অনেক কিছু সাজতে পারি।তার পরেও প্লিজ আর আমার সাথে রাগ করে থাকিস না।

আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়ার চোখ ছলছল করছে।আমি তো কখনই ওর সাথে রাগ করে থাকতে পারি না।এবার যে কি ভাবে এতো দিন রাগ করে ছিলাম আল্লাহয় জানে। আমি ভাইয়াকে বললাম….

—উম…তোকে আমি মাফ করে দিব যদি তুই আমায় তোর এই নতুন গাড়ি দিয়ে ঘুরাতে নিয়ে যাস।আর আমাকে অনেক অনেক অনেকগুলো চকলেট কিনে দিতে হবে সাথে ললিপপও।

ভাইয়া সাথে সাথেই বললেন….

—আজ আমি তোর সব শর্ত মানতে রাজি।চল…

ভাইয়া আমায় হাত ধরে গাড়িতে উঠাতে নিলেই আমি বললাম…

—আরে দাড়া আমি আমার জানুরে ফোন দিয়ে আসতে বলি।আমার জানুরে ছাড়াতো আমি কোথাও ঘুরতে যাই না।

ভাইয়াকে দাড় করিয়ে আমি এক সাইডে গিয়ে তাহিয়াকে ফোন দিলাম।দু বার রিং হওয়ার পর ফোন রিসিভ হলো।ওপাস থেকে হ‍্যালো বলার সাথে সাথেই বললাম….

—তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে থাক আমরা এখন ঘুরতে যাব।

তাহিয়া ঘুম জরানো কন্ঠে বলল….

—বেবি আমার না পেট ব‍্যথা করছে।আমি যাবনা তুই যা।

আমি চিন্তিত কন্ঠে বললাম…

—জানু তুই ঠিক আছিস???ঔষধ খেয়েছিস???

—আরে বেবি থাম এতো হাইপার হতে হবে না।সামান‍্য ব‍্যথা করছে।আর আমি ঔষধ খেয়েছি।তুই যা ঘুরতে…

—আমি কখনো তোকে ছাড়া একা ঘুরতে যাই।যে এখন যাব।তুই ঠিক হওয়ার পরেই আমরা একসাথে ঘুরতে যাব।

ও হাসতে হাসতে বলল….
—আমি মরে গেলে তখন কি আমায় কবর থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাবি।

ওর মুখে মরার কথা শুনে আমার মাথা সাথে সাথেই গরম হয়ে গেলো।আমি রাগি গলায় বললাম….

—আরেক দিন মরার কথা বললে আমিই তোকে মেরে ফেলবো।আর কাল তুই রেডি থাকিস আমি তোকে চাটনি বানাবো ।এই বলে ওকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোন রেখে দিলাম।

আমরা সবাই জানি দুনিয়ার জীবন আমাদের ক্ষনস্থায়ী।যার যতদিন হায়াত আছে সে ততোদিন বাচবে। মৃত্যুর স্বাদ আমাদের সবারই গ্রহন করতে হবে।তার পরেও কারো মুখে মৃত্যুর কথা শুনলেই মনের মধ্যে কেমন ভয় কাজ করে।আর যদি সে হয় প্রিয় মানুষ তখনতো কোন কথাই নাই।

আমি নিজেকে সামলিয়ে বড় করে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে ভাইয়াকে গিয়ে বললাম….

—ভাইয়া আজ আমায় শুধু চকলেট কিনে দে।আর আমরা আন‍্য দিন ঘুরতে যাবো।

ভাইয়া আমাকে বলল…

—কেন কি হয়েছে??তোর কি শরীর অসুস্থ লাগছে???

—আরে আমি ঠিক আছি জানুর শরীর অসুস্থ তাই ও যেতে পারবে না।আর আমি তো ওকে ছাড়া যাবো না।তাই প্লিজ…
রাগ করিস না।

ভাইয়া মুচকি হেসে বলল…

–ঠিক আছে। চল তোকে চকলেট কিনে দেই।

আমি মুচকি হেসে বললাম…

—চলো….

এতক্ষন আরহাম ফোনের মাধ‍্যমে সব কথা শুনছিল।নিহাদ আরহামকে লাইনে রেখেই এতক্ষন মানহার সাথে কথা বলছিল।আরহাম মানহার মুখে জানু শুনে রাগে লুচির মত ফুলছে।আর একা একাই বিরবির করছে…
—ওর সাহস কত বড় আমার বউ হয়ে আরেক জনকে জানু বলছে।ঐ ছেলেকে পেলে আমি ওর চেহারার নকশাই বদলিয়ে দিব।তার আগে ওর ব‍্যবস্থা করতে হবে।আর শালা নিহাদও কিছু বলল না।দুটোকেই আমি দেখে নিব।

আহাদ একা একা আনমনে রাস্তা দিয়ে হাটছে।মাথার মধ্যে তার হাজারো চিন্তা।সব সময় হাসি খুশি থাকা ছেলেটার মনেও যে,এতো কস্ট লুকিয়ে আছে তা কেউ বুঝতেও পারবে না।

আসলেই কি যারা সব সময় মুখের মধ্যে বড় একটা হাসি ঝুলিয়ে রাখে তাদের মনে কি হাজারো কস্ট লুকিয়ে থাকে???🤔🤔

#চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here