দু মুঠো বিকেল পর্ব ১+২

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#সূচনা_পর্ব
Writer-Afnan Lara
আমার সারাটাদিন মেঘলা আকাশশশশ, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম
শুধু….
আজকেও কেন মনের ভেতরটা সাঁই দিচ্ছে যে লোকটা আমার আাশে পাশেই আছে
কিন্তু কই আমি তো দেখছি না! যা বুঝলাম এটা আবারও সেই মনের ভ্রম
.
ভাবনা থেকে বেরিয়ে মেয়েটি ছাতা ঠিক করে আবারও হেঁটে চললো, হাতে তার এক ঝুড়ি আপেল,ফুফুর বাড়ি থেকে ফেরার সময় ফুফু তার শৌখিন আপেল গাছটা থেকে আপেল পেড়ে দিয়েছে তার হাতে,সে যেন তার বাবার হাতে দেয়,তার বাবার আপেল অনেক পছন্দ
সবুজ রঙের মিনি সাইজের আপেলগুলো দেখতে একদম নজরকাড়া,খেতেও বেশ
মেয়েটা একবার আপেলের দিকে তাকাচ্ছে আবার পিচ্ছিল পথটার দিকে তাকাচ্ছে
আপেলগুলোর প্রতি লোভ হয় তবে তার দায়িত্ব যেটা সেটাই করতে হবে,তা নাহলে কথার মান রাখা হবে না
বাবাকে দেওয়ার পর নাহয় একটা নেবো
.
প্লাজোটা খানিকটা উঠিয়ে হাঁটতেছে মেয়েটি,মাঝে মাঝে পিছলিয়ে পড়ে যাওয়া ধরে আবারও সামলে নেয় নিজেকে,অনেকটা পথ হাঁটতে হবে এখনও
বৃষ্টির মধ্যে এই এক জ্বালা,সহজে রিকসা পাওয়া যায় না তার উপর অন্য কোনো যানবাহন ও চোখে পড়ছে না,শূন্য একটা পথ দিয়ে হেঁটে চলছে সে,মাঝে মাঝে ঝড়ো হাওয়া এসে গায়ে লাগলেই থেমে যায় মেয়েটি
বাতাসের শক্তি ভেদ করে হাঁটা টা জটিল,আর আমি তো শুকনা মানুষ,যদি উড়ে যাই,আমি না যাই আমার ছাতাটা যদি উড়ে যায়?তাহলে পুরো পথটা ভিজে যেতে হবে
সন্ধ্যা হতে আর এক কি ২ঘন্টা বাকি,জলদি করে হাঁটতে হবে আমাকে
আর একটু!
রাস্তায় পানি নেই তবে জুতোয় আমার পানিতে ভর্তি,প্রতিবার পা রাখতেই প্যাচ প্যাচ করে শব্দ করে
ভালো ও লাগে আবার বিরক্ত ও লাগে,বৃষ্টির যেমন ভালোলাগার দিক আছে আবার বিরক্তিকর দিক ও আছে
আমি এখন দুটোই অনুভব করছি
আর ২০/২২কদম পার হলেই আমার বাসা এসে যাবে,গলিতে ঢুকে পড়েছি অলরেডি
দোকানপাট খোলা তবে সেখানে কোনো ক্রেতা নাই,শুধু বসে আছেন বিক্রেতারা
যতই এগোচ্ছি ততই বুকের ভেতরটার ডিপডিপ বেড়ে যাচ্ছে,এখন এই মূহুর্তে সে কেন থাকবে?
আর আমার মন কেন বলছে সে এখানে আছে?
এসব ভেবে মেয়েটা হাত দিয়ে কুঁচকানো প্লাজোর খানিক অংশটা ছেড়ে দিলো
প্লাজোটা আবারও সেই ভেজা রোড ছুঁয়ে ফেলেছে সাথে সাথে
মেয়েটা ছাতা দিয়ে মুখটা ঢাকার চেষ্টা করে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো
আর ৭কদম গেলে বাড়ি,তবে এই ৭কদমে হয়ে গেলো বিপত্তি
যেটার ভয় পেয়েছিলাম এতক্ষণ ধরে ঠিক সেটাই হলো
আমার হাত না ধরুক ঝুড়িটা ধরে ফেলেছে সে
আমি পিছনে তাকানোর সাহস পাইনি,চুপ করে দাঁড়িয়ে পড়েছি
যে ধরেছে সে ঝুড়ি থেকে একটা আপেল নিয়ে ঝুড়ি ছেড়ে দিলো তারপর শুধু একটা কথাই বললো আর সেটা হলো”যাও”
.
মেয়েটি আর ১সেকেন্ড ও দেরি না করে ৪তলা বাড়িটার ভিতর চলে গেছে,তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি বেয়ে উপরেও চলে গেছে সে আর পিছনে তাকালো না,একটিবার থামলো ও না
এখন তার একটাই লক্ষ্য আর সেটা হলো নিজের বাসার ভেতর অবস্থান নেওয়া
২তলায় তাদের বাসা,এখানে ভাড়া থাকে তারা,মেয়েটি এবং তার বড় একটা ভাই, ছোট একটা ভাই আর মা বাবাকে নিয়ে তাদের পরিবার,বাবা আর বড় ভাইয়ের চাকরিতে সংসার চলে তাদের
মেয়েটি দরজায় টোকা দিয়ে ঝুড়িটা নিচে ফ্লোরে রেখে ওড়না দিয়ে মুখ মুছলো কারণ একে তো বৃষ্টির পানি আরেক তো কিছুক্ষন আগের ঘটনায় ভয়ে কপাল ঘেমে গেছে তার
তারপর হাত থেকে ছাতাটা নিয়ে অফ করে ছাতাটাও একপাশে হেলান দিয়ে রেখে দিলো সে
৫মিনিট পর একটা ৬বছরের ছেলে এসে দরজা খুললো
সে তার আপুর দিকে না তাকিয়ে নিচে রাখা ঝুড়িটার উপর হামলিয়ে পড়লো দেরি না করে
মেয়েটি মুচকি হেসে ভিতরে চলে গিয়ে মাকে ডাক দিলো একবার তারপর নিজের রুমে এসে খোঁপা থেকে কাঠি খুলে চুলগুলো ছেড়ে দিলো
চুলগুলো ভিজে গেছে,ঝাড়তে ঝাড়তে সে বারান্দার দিকে তাকালো,বারান্দার দরজা লাগাতে হবে,সন্ধ্যা নেমে গেছে
সেদিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তার কি যেন মনে পড়লো তারপর আরও ৫/৬কদম পিছিয়ে গেলো সে
গভীর চিন্তাভাবনা করে সে তার ছোট ভাইটাকে ডাকতে ডাকতে চলে গেলো ডাইনিং রুমের দিকে
.
তামিম!
.
হুম আপু বলো,আপেল গুলো কিন্তু অনেক মজার,ফুফির বাগানের বুঝি?
.
হুম,যাও তো আমার বারান্দার দরজাটা লাগিয়ে আসো,ছিটকিনি নিচের টা লাগিও,উপরেরটা লাগাতে তোমার চেয়ার আর মোড়ার প্রয়োজন লাগে,এত খাটনির দরকার নেই শুধু নিচের ছিটকিনি লাগালেই হবে
.
কেন আপু?
.
যা বলছি করো,মা কোথায়?
.
মা তো বাথরুমে!
.
এটা বলেই তামিম চেয়ার থেকে নেমে আপেল খেতে খেতে তার আপুর বারান্দায় এসে এদিক ওদিক তাকালো,তারপর নিচের দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখে চোখ বড় করে লুকিয়ে পড়লো সে
গুটি গুটি হামাগুড়ি দিতে দিতে বারান্দা দিয়ে রুমে এসে দরজা লাগিয়ে এক দৌড় দিলো তামিম
মেয়েটি সোফায় পা তুলে বসে টিভি চালিয়ে একটা কার্টুন দেখছিল
তামিম দৌড়ে এসে মেয়েটির কোলে বসে বললো”আপু আপু!! সে নিচে দাঁড়িয়ে আছে”
.
কথাটা শুনে মেয়েটির মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো মূহুর্তেই,চুপ করে থেকে বাইরের আবহাওয়া খেয়াল করলো সে
ঝুম বৃষ্টি,কোনো থামাথামি নেই
আর মেয়েটি খুব ভালো করে জানে সে বারান্দায় না দাঁড়ালে ছেলেটি এখান থেকে যাবে না,বৃষ্টি হলে হোক
তুফান হলে হোক,এক বিন্দু ও নড়বে না
মেয়েটি তাও গেলো না,চুপ করে টিভির দিকে চেয়ে রইলো
.
কিরে রিম কখন এলি?
.
টিভির দিকে তাকিয়েই রিম বললো”মাত্রই”
.
আপেলগুলো তো বেশ তাজা মনে হচ্ছে!
.
মা আপেলগুলোর ঝুড়িটা নিয়ে রান্নাঘরে যেতে যেতে বললেন”তামিম তুই বুঝি আপেল না ধুয়েই খেয়েছিস?”
.
তামিম সোফার নিচ থেকে একটা আপেলের বিচি নিয়ে সেটা পকেটে ঢুকিয়ে বললো”আমি এখনও একটাও খাইনি আম্মু,সত্যি বলছি”
.
রিমঝিম উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে সোফা থেকে,তারপর টেবিল থেকে পানি নিয়ে খেলো চুপচাপ
ঘুরেফিরে আবারও সোফার রুমের জানালাটা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো সে,বৃষ্টি এখনও সেই আগের সাইজেই আছে,কমছে না কেন!
রিম বিরক্ত হয়ে খোঁপা করতে করতে তার রুমে আসলো,গায়ের ওড়নাটা ঠিক করে বারান্দার দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো সে,প্রচণ্ড রকম বিরক্তি নিয়ে দরজাটা খুললো এবার
সন্ধ্যাবেলা বলে মাথায় ঘোমটা দিয়ে নিলো
তারপর নিচের দিকে তাকিয়েই বারান্দায় পা রাখলো
বাসার সামনে আরেকটা বাসা,মাঝখান দিয়ে চিপা গলি
রিম বামপাশে তাকিয়ে আছে,তারপর বড় করে শ্বাস নিয়ে ডান পাশে মুখ ঘুরিয়ে নিচে তাকালো,তার বরাবর নিচে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে
পরনে সাদা ফুল শার্ট,বোতাম নিচের ২টো লাগিয়েছে সে,বাকিগুলো খোলা,শার্টটা মনে হয় এই বুঝি পড়ে যাবে,অবশ্য ভিতরে একটা গেঞ্জিও পরেছে সে
ফুল শার্টটার হাতগুলো গুটিয়ে কুনুই পর্যন্ত এনে রেখেছে সে
শার্টটার সাথে আবার জিন্স ও পরেছে,১৪/১৫ছেঁড়া
ডিজাইন,অভাবে নয় স্বভাবে!
রিমকে দেখেই তার ঠোঁট জোড়া নড়েছড়ে একদম টাইট হয়ে গেছে
এক গাল হাসি দিয়ে সে রিমের দিকে তাকিয়ে আছে,এত এত বৃষ্টিতে সে স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে দোতলার বারান্দার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে পারছে বেশ
.
২মিনিট তাকিয়ে থেকে সে ব্রুটা কুঁচকালো তারপর একটু এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো কোমড়ে হাত দিয়ে
রিমের হাতের সবগুলো পশম দাঁড়িয়ে গেছে ভয়ের চোটে
সে বুঝেছে ছেলেটার এগিয়ে আসার কারণ
তাই ঘোমটার ভিতরে হাত নিয়ে খোঁপাটা খুলে ফেললো সে
চুল গুলো ছড়িয়ে যেতেই ছেলেটা মুচকি হেসে আবারও আগের জায়গায় পিছিয়ে চলে আসলো,তার চোখ এখনও রিমের দিকে
রিমের সারাটা দেহ কাঁপছে,আর পারছে না সে দাঁড়িয়ে থাকতে,৫মিনিট কখন হবে!
.
ছেলেটা হাতের ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে মাথার চুলগুলো ঝেড়ে নিলো মাথা হেলিয়ে দুলিয়ে
তারপর হাত দিয়ে ভেজা মুখ মুছতে মুছতে সোজা হেঁটে চলে গেলো,হাত দুলিয়ে দুলিয়ে বৃষ্টির মধ্যে সে হেঁটে চলেছে
রিম বড় করে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ছেলেটার চলে যাওয়া দেখে নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে ফেললো

স্পর্শ ভাই!
.
ছেলেটা থেমে গিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে বললো”কি?”
.
একটা লুঙ্গি পরা ছেলে ছাতা নিয়ে দৌড়ে এসে স্পর্শের মাথার উপর ধরে বললো”ভাই বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট দিয়েন না আমাদের,একটামাত্র কলিজা আপনি আমাদের,আপনার যদি জ্বর সর্দি দেখা দেয় এই মহল্লা গরম আগুন হয়ে যাবে,তারপর ব্লাস্ট!
.
কিছু হবে না আমার,চল চা খাবো আজ
চলবে♥
দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_২
Writer-Afnan Lara
রিমঝিম রুমে এসে বিছানায় বসে গায়ের থেকে ওড়নাটা নিয়ে একপাশে রেখে চুপ করে আছে
এই ছেলেটাকে এত ভয় পাই আমি অথচ ছেলেটা আজ পর্যন্ত একটা টোকাও দেয়নি যেটাতে আমার কষ্ট হবে কিন্তু সে আমাকে যে বন্দি জীবন দিয়েছে সেটার চেয়ে কষ্ট আর কিছু হতে পারে না
সে কি বুঝে না আমি তাকে পছন্দ করি না,তাকে ভালোবাসি না??
আমাকে কেন সে এত বছর ধরে ভালোবেসে আসছে,আমাকে পাবে না জেনেও সে বারবার আমাকেই কেন চায়?
তার এরকম আচরণের জন্যই তাকে আমি পছন্দ করি না
আবার এভাবে কষ্টও দিতে পারি না
পারতাম আজ সন্ধ্যায় তার সামনে গিয়ে না দাঁড়াতে কিন্তু তাও আমার বিবেক আমাকে দিলো না এতটা নিষ্ঠুর হতে
.
আমি আজ বারান্দায় না দাঁড়ালে সে এখান থেকে যেতোই না
তার এসব পাগলামিতে সাঁই দিতে দিতে আমার এখন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে সবটা
ছেলেটা কেন বোঝে না আমাকে,কেন আমাকে এরকম কষ্ট দেয় সে,নিজের রুমেও আমি নিরাপদ ফিল করি না
উত্তরের জানালাটা দিয়ে সোজা তার রুম দেখা যায়,জানালাটায় পর্দা টানানো কড়া নিষেধ,টানালেই তার সামনে জবাবদিহি দিতে হয় আমাকে
৩টা বছর আগে এই ফাঁদে পা দিয়ে আমি এমন ফাঁসছি একেবারে আজীবনের জন্য,আমি আর নিতে পারবো না এসব

ভাই নেন তোয়ালে,এটা দিয়ে মাথাটা মুছে নেন
.
এটা পেলি কই?
.
খালা থুরি ম্যাডাম পাঠিয়েছে
.
হাহা,মা বুঝি তোকে বলেছিলো ম্যাডাম ডাকতে?
.

.
স্পর্শ তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে চায়ে চুমুক দিলো,তারপর রিমদের বাসার ছাদের দিকে তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টিতে,১০সেকেন্ড ধরে তাকিয়ে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে গেলো সে,চায়ের কাপটা টেবিলে রেখেই!
তারপর রিপন থেকে ছাতাটা নিয়ে সে ছুটলো রিমদের বাসার ছাদের দিকে
.
৩মিনিট লাগে রিমদের বাসার ছাদে উঠতে কিন্তু স্পর্শ ১মিনিটেই দৌড়ে উঠে গেছে
ছাদের শেষ কোণায় রিম বসে আছে গুটিশুটি দিয়ে, চোখ তার আকাশের দিকে
সারা গা ভিজে একাকার হয়ে গেছে তার
স্পর্শ নিচে থাকতে রিমের ওড়না দেখছিল বলেই সে বুঝেছে রিম ওখানেই আছে
.
রিমের চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে,বৃষ্টির কারণে বোঝা যায় না
তবে স্পর্শ বুঝেছে কারণ সে যতবারই রিমকে কোনো কিছুতে জোর করে ততবারই রিম কাঁদে এটা তার জানা আছে
কি এমন জোর করলাম?বিকেলবেলা বারান্দায় এসে দাঁড়াতে হয় ওকে চুল ছেড়ে দিয়ে এটাতে আবার কাঁদতে হয়?
আবার এই বৃষ্টির মধ্যে বসেও আছে
ভাবতে ভাবতে স্পর্শ কাছে এসে রিমের মাথার উপর ছাতাটা ধরলো,রিম মাথা নিচু করে বসে আছে
.
গায়ে বৃষ্টির পানি পড়ছে না দেখে রিম উপরের দিকে তাকালো,স্পর্শ আরেকদিকে ফিরে তাকিয়ে আছে,বাম হাত পকেটের ভেতরে,আরেকহাতে ছাতা ধরে আছে,নিজে ভিজে শেষ হয়ে যচ্ছে সেদিকে তার খবর নেই,মাঝে মাঝে পকেট থেকে হাতটা বের করে চুলগলো থেকে টেনে হিঁচড়ে পানি ফেলতেছে সে
.
রিমঝিম কপাল কুঁচকে আরেকটু পিছিয়ে গিয়ে বললো”আপনার সাহস হয় কি করে আমার এত কাছে আসার?”
.
স্পর্শ যেন কথাটা শুনলোই না,সামনেই তাদের বাসা,সে তাদের বাসার ছাদে থাকা গাঁদা ফুলের গাছগুলো দেখছে মনযোগ দিয়ে
এই বাসার মালিক স্পর্শের বাবা,৫তলার একটি বাড়ি,তারা থাকে দোতলায়,বাকি সব গুলো ভাড়া দেওয়া
.
স্পর্শের কথার উত্তর না পেয়ে রিমঝিম উঠে পড়লো তারপর চোখ রাঙিয়ে নিজের বাসার দিকে চললো সে
তার এসব ছোটখাটো প্রশ্নের জবাব স্পর্শ কখনও দেয়না তা জানা আছে তার
.
রিম চলে যেতেই স্পর্শ ওর দিকে তাকালো তারপর ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটিয়ে ছাতাটা বন্ধ করে নিজেও চললো সেদিকে
রিমঝিম স্পর্শকে মনে মনে গালি দিতে দিতে বাসার সামনে এসে কলিংবেলে চাপ দিলো
.
তামিম রিমঝিমের একটা ওড়না গলার পিছনে নিয়ে গিট্টু দিয়ে সোফার উপর দাঁড়িয়ে সেখান থেকে লাফ দিয়ে সুপারম্যান সাজছে
এত এক কাতারে কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে সে চোখের চশমাটা ঠিক করে বললো”জনগণকে আমাকে বাঁচাতেই হবে,বাসার বাইরে নিশ্চয় কোনো অহসায় জনগন এসেছে?তাকে আমি বাঁচাবোই
ইয়া!!!!!!”
.
তামিম দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেখলো রিমঝিম কোমড়ে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে তারপর এক ধমক দিয়ে বললো”এত দেরি হয় কেন দরজা খুলতে?”
.
ওহ তুমি?আমি তো ভাবলাম অসহায় জনগন
.
স্পর্শ পাশেই সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে একবার তাকালো ওদের দিকে
.
আপু এরকম ভিজছো কি করে?
.
রিম স্পর্শের দিকে তাকিয়ে দরজা ঠাস করে লাগিয়ে দিয়ে বললো”পাড়া প্রতিবেশীর অত্যাচারে!”
.
কথাটা বলে রিমঝিম সোজা নিজের রুমে এসে দরজাটা লাগিয়ে ফেললো,তারপর ফ্লোরে বসে পড়লো সে,,
সন্ধ্যা গড়িয়ে এখন বাজে সাড়ে সাতটা
বাবা আসার সময় হয়ে গেছে
ভাইয়া আসতে আরও কয়েক ঘন্টা বাকি,তাড়াতাড়ি চুল শুকাতে হবে তা নাহলে মা হাজারটা প্রশ্ন করবে
.
রিম আবারও উঠে তোয়ালে নিয়ে চুল মুছতে লাগলো হেঁটে হেঁটে

আঁখি!দরজা খুলো,মনে হয় স্পর্শ এসেছে
.
আচ্ছা আম্মু!!
.
আঁখি পড়ার টেবিল থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুললো
স্পর্শর সারা শরীর ভিজে টইটুম্বুর হয়েছে দেখে আঁখি এক চিৎকার করতে নিতেই স্পর্শ মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকতে বললো ওকে
.
তারপর আঁখি ফিসফিস করে বললো” কিন্তু ভাইয়া এরকম ভিজলে কি করে?আম্মু যদি জানে এক গাদা বকবে”
.
মা জানলে তো বকবে,আর তুই মাকে জানাবি না,আমি আমার রুমে যাচ্ছি,ছেলেদের চুল শুকাতে বেশি সময় লাগে না,এক কাজ কর কড়া লিকারের একটা দুধ চা বানিয়ে আমারে রুমে পাঠা
মাথা ধরে আছে প্রচন্ড,চিনি এক চামচ দিবি,বেশি দিবি না,তোর তো আবার চিনি বেশি দেওয়ার অভ্যাস
.
আঁখি মাথা নাড়িয়ে দরজা লাগিয়ে রান্নাঘরের দিকে চললো,মা নিজের রুমে বসে টিভিতে সিরিয়াল দেখতেছিলেন,ওখানে বসেই বললেন”আঁখি কে এসেছে রে?”
.
কথাটা শুনে স্পর্শ এক দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে ফেলেছে
আঁখি রান্নাঘরে গিয়ে চা বসাতে বসাতে বললো”পাশের বাসার আন্টি চিনির জন্য এসেছিলো আম্মু”
.
স্পর্শ এখনও ফেরেনি?
.
ভাইয়া তো এত তাড়াতাড়ি ফেরে না আম্মু,
আরও রাত হবে
.
ওহ,ঠিক আছে

স্পর্শ জলদি করে আলমারি থেকে একটা টিশার্ট নিয়ে গায়ের শার্ট আর গেঞ্জি খুলে সেটা পরতেছে আর এদিক ওদিক তাকিয়ে তোয়ালে খুঁজতেছে,রিপন যে তোয়ালে নিয়েছিলো ওটা কোথায় ফেলে এসেছি এখন চুল মুছবো কি দিয়ে
ভাবতে ভাবতেই স্পর্শ ডান পাশে থাকা জানালায় চোখ রাখলো, রিমঝিমের রুমের দিকে
রিমঝিম পায়চারি করতে করতে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতেছে আর কিসব ভাবতেছে
স্পর্শ মুচকি হেসে জানালার গ্রিলে মাথা রেখে মুগ্ধ চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো
রিমঝিমের মনে হলো কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে সাথে সাথে মনের সন্দেহটা দূর করতে সে বাম পাশে তাকালো,সাথে সাথে স্পর্শ ব্রু নাচিয়ে হাত উঠিয়ে হাই জানালো ওকে
রিমঝিমের রাগ এবার শেষ সীমানায়,জানালার কাছে এসে এক টান দিয়ে পর্দা টেনে দিলো সে
যা হবে হোক,এই জানালার পর্দা আর সরবে না
.
স্পর্শ আর কি করবে ফেরত এসে নিজের আরেকটা জামা দিয়ে মাথা মুছে চুল শুকিয়ে নিলো তারপর বিছানায় একটু শুয়ে জিরিয়ে নিয়ে আঁখির বানানো চা টা খেলো পর্দা টাঙানো জানালাটার দিকে চেয়ে,ওপাশের মানুষটা কি করছে বোঝা যাচ্ছে না একটুও
চা খাওয়া শেষে আবারও লুকিয়ে লুকিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো স্পর্শ,একেবারে রাত করে ফিরবে,বৃষ্টি থেমে গেছে এতক্ষনে

তামিম গলা থেকে রিমের ওড়না খুলে ওর রুমের কাছে এসে বললো”আপু আমি তোমার হলুদ রঙের ওড়নাটা দিয়ে সুপারম্যান খেলছি নাও ওটা ফেরত নাও আমার খেলা শেষ
.
রিম জামা পরতে পরতে বললো”সেই ওড়নাটা পারলে ছিঁড়ে ফেলো,ওটার আর প্রয়োজন নেই”
.
আপু তুমি তো এই নিয়ে আমাকে দিয়ে কত ওড়না ছিঁড়াইসো তোমার
মা তোমাকে বকে না এটা নিয়ে?ঐদিন আমি পড়ে গিয়ে আমার জিন্স একটু ফাটিয়েছে বলে মা কত বকলো আবার আমার চকলেট খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে শাস্তি হিসেবে,আমি মাকে বলবো তুমি ইচ্ছে করে তোমার ওড়না নষ্ট করো সবসময়
.
রিম আর কিছু বললো না,ওয়ারড্রোবের কাছে এসে একটা এ্যাশ কালারের ওড়না নিয়ে সেটা পরে বসে থাকলো চুপচাপ
.
মা মা!!রিম আপু সবসময় তার ওড়নাগুলো আমাকে ছিঁড়তে বলে,তুমি আপুকে বকবা না?আমি জিন্স ফাটিয়েছি বলে আমাকে কত বকেছিলা
.
মা তরকারিতে লবণ দিয়ে নাড়তে নাড়তে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তারপর বললেন”এই ওড়নাগুলো তো আমরা কিনে দিই নাই রে,দিয়েছে সেই ছেলেটা তাই তো রিম তোকে ওড়নাগুলো ছিঁড়তে দেয় সবসময়”
.
তামিম ওড়নাটার দিকে তাকিয়ে বললো”ওড়নাটা কিন্তু সুন্দর”
.
ওড়না যে কিনে দিয়েছে সে নিজেও সুন্দর,তার দেওয়া সকল উপহার সুন্দর শুধু সুন্দর না তার স্বভাব,আমার রিমের মন জয় করার একটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার স্বভাবটা
কলিংবেল বাজতেছে, যা যা দরজা খুল,তোর বাবা এসেছে মনে হয়
.
তামিম দৌড়ে গেলো দরজা খুলতে,দরজা খুলে দেখলো রিহাব ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে,হাতে অফিস ব্যাগ,পরনে
হালকা নীল রঙের শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স
টাই টানতে টানতে ভিতরে ঢুকে রিহাব বললো”রিম!!এক গ্লাস পানি দে”
.
রিহাবের আওয়াজ পেয়ে রিমঝিম জলদি করে দরজা খুলে বের হয়ে ডাইনিং থেকে পানি এক গ্লাস নিয়ে রিহাবের দিকে বাড়িয়ে ধরলো
.
রিহাব পানি খেয়ে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছে,প্রচুর কাজ ইদানীং
এই অফিসের বসটা বেতন দেয় ২০হাজার আর কাজ করায় ৪০হাজারের খাটনির
এদের বস কে বানায় কে জানে,ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেছে
আব্বা এসেছে?
.
না ভাইয়া,আজ বাবার আসতে দেরি হবে মনে হয়
.
আচ্ছা আমি আমার রুমে যাচ্ছি,তামিম একদম ডিস্টার্ব করবা না আমাকে
.
তামিম মাথা নাড়িয়ে চোরের মত দাঁড়িয়ে আছে রিমের পিছনে
.
রিহাব মুচকি হেসে ব্যাগ থেকে একটা কিটকাট চকলেট বের করে তামিমের হাতে দিয়ে যেতে যেতে বললো”আজ হাতে টাকা কম ছিল বলে একটা এনেছি,অর্ধেক রিমকে দিবা ঠিক আছে?”
.
আচ্ছা
.
রিহাব নিজের রুমে এসে শার্টটা খুলে ফেলে ফোনটা নিলো চার্জ দেওয়ার জন্য,দেখলো ১২টা মিসড কল
আবারও কল আসতেছে দেখে রিহাব রিসিভ করলো
.
ওপাশ থেকে ছোট্ট আওয়াজে ভেসে আসলো”বাসায় ঢুকছেন বুঝি?”
.
জি ঢুকছি,নিজের চোখেই তো দেখোস তাহলে জিজ্ঞেস করস কেন?তোকে বলছি না আমায় ফোন দিবি না?
.
আমি ফোন দিলে আপনার ভালো লাগে না বুঝি?
.
জি না,ভালো লাগে না বুঝি
.
আমাকে কপি করছেন?
.
চুপ থাক,তোর হিটলার মায়ের কাছে বিচার দিব তুই যে আমাকে এত জ্বালাস
.
রিহাব!
.
কি?কি বললি?
.
সরি,রিহাব ভাইয়া
.
হুম,কি হয়েছে?
.
না কিছু না,বাই
.
বাই,আমাকে আর ফোন দিবি না,বেয়াদব একটা,মেয়ে হয়ে ছেলেদের জ্বালাস আসলে তোর বিবেক কেমন??
.
পাথর মনের কাউকে পটাতে পারলে সে শুধু তোমার তোমার তোমার!!
.
পড়াশুনা বাদ দিয়ে এসব শেখা হচ্ছে??আমি আঙ্কেলের কাছে বিচার দেবো
.
প্লিস জানালাটা খুলুন না
.
রাত বিরাতে আমি জানালা খুলি না
.
মিথ্যা বলেন কেন?আমি রাতের ১২টায় টর্চ দিয়ে আমাদের রান্নাঘরে এসে একদিন চেক করেছি,আপনি তখন জানালা খুলে ল্যাপটপে ইউটিউব দেখছিলেন
.
রাতে ঘুম না যেয়ে এসব করো তুমি?
.
আপনি তো করেন না,এখন চুপচাপ যেটা বলছি সেটা করেন,জানা খুলেন,আমি সেই কখন থেকে চা বানানোর ভান ধরে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছি
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here