Lover boss part 3

#Lover_Boss
#Season_2
#Part_3
#Mihika_Rahman

রিত্ত গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে । বিছানার পাশে কাঁথা সেভাবেই পড়ে রয়েছে অথচ শীতে কাঁপতে কাঁপতে মেয়েটা এখন বুঝি অসুখ বাঁধাবে । রিশাদ কাঁথাটা আলতো ভাবে রিত্তর গায়ে জড়িয়ে দিতেই বুঝতে পারল ইতিমধ্যে অসুখ বাঁধিয়ে ফেলেছে মেয়েটা,জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে । রিত্তর চোখের কোণে অশ্রুবিন্দু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে । রিশাদের সামনে কাঁদতে মানা বলে এত অপমানের পরও মেয়েটা কাঁদেনি । আবারো আগের ন্যায় রিত্তর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে রিশাদ । তবে এই দুর্বলতা শুধু একটা দুর্বলতা নয়,এর একটা নাম দেওয়া যেতে পারে,হয়তো ভালোবাসা । এসব ভাবতেই কেমন একটা অনুভূতি রিশাদের মনে রঙিন প্রজাপতি হয়ে ধরা দেয় কিন্তু দিব্যর মুখটা মনে পড়তেই রিশাদের সমস্ত অনুভূতি যেন কর্পূরের ন্যায় উবে যায় কিন্তু মায়াটা কাটিয়ে উঠতে পারে না । পানির বোল আর জলপট্টি নিয়ে বিছানার একপাশে বসে রিশাদ । আলতো ভাবে রিত্তর মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে ।

🖤

–হ্যালো সিফাত!!

–জ্বী ভাইয়া ।

–তোমার ভাবী একা একা বিডিতে চলে গেছে । জানোই তো কত রিস্কি । যেজন্য আমি বাংলাদেশে কখনোই ফিরতে চাইনি,আমি চাইনা সেরকম কিছু মিহির সাথে ঘটুক ।

–আচ্ছা ভাইয়া । আমি ভাবীকে খোঁজার ব্যবস্থা করছি ।

–আর শোন,ঐ লোকটা যেন কোনভাবে জানতে না পারে মিহির সম্পর্কে । মিহি জান আমার । ওর কিছু হলে ওদের কাউকেই আমি ছেড়ে দেখবো না । নিজেকে বদলেছি আমি কিন্তু এতটাও না যে মিহির উপর একটা আঁচড় অবধি লাগলে আমি কাউকে বাঁচিয়ে রাখবো ।

দীপের কথায় অদ্ভুত এক আশঙ্কা পাচ্ছে সিফাত । দীপের রাগ সম্পর্কে সে ভালোভাবেই অবগত । মিহি দীপের অতীত না জানলেও সিফাত তো জানে । দীপ যখন ঠিক করেছে দেশে ফিরবে তার মানে পাঁচ বছরের আগের সে অসমাপ্ত অমীমাংসিত যুদ্ধটা আবার শুরু হবে । নিমেষেই আতঙ্ক এসে বাসা বাঁধলো সিফাতের মনে ।

🖤

“রিত্ত!!রিত্ত।”আলতো স্বরে রিত্তকে ডাকতে লাগল রিশাদ । জ্বর নেই এখন তবে রিত্তর শরীর বেশ দুর্বল । ঘুমে বিভোর সে । এলোমেলো চুলগুলো সারা বালিশ আচ্ছন্ন করে রেখেছে,হিমশীতল বাতাসে চোখমুখ লালচে হয়ে আছে । রিত্তর মুখটা যেন মাত্রাতিরিক্ত মায়াবী হয়ে ধরা দিচ্ছে রিশাদের মনে । রিশাদের খুব ইচ্ছে করছে রিত্তকে একটুখানি ছুঁয়ে দিতে কিন্তু রিত্তর মায়ায় জড়াতে ভয় হচ্ছে রিশাদের । আবারো প্রতারিত হতে যাচ্ছে না তো সে?

🖤

–কেন এনেছো এখানে আমায়??লিভ মি!!জাস্ট লিভ মি ।

–তোমায় তো ছাড়া যায় না !! তুমি যে দীপের জান । আর দীপের জান এখন আমার মুঠোয় ।

–কে…কে তোমরা?? আর দীপ??দীপকেই বা কি করে চেনো??

–সে তোমার না জানলেও চলবে । শুধু জেনে রাখো,খুব শীঘ্রই দীপ শেষ হতে চলেছে আর কারণটা হবে তুমি ।

লোকটার কথা শুনে গলা শুকিয়ে আসে মিহির । দেশে ফিরতেই কাদের পাল্লায় পড়ল সে?এয়ারপোর্ট থেকে বেরোতেই তাকে কেন এখানে ধরে আনা হলো??দীপের সাথে এই গুণ্ডাদের কি সম্পর্ক??কেন দীপকে শেষ করতে চাচ্ছে এরা ??অজস্র প্রশ্ন জমাট বেঁধে একটা বড়সড় জঁট বাঁধায় মিহির মস্তিষ্কে ।

মিহির জন্য চোখ খোলা রাখাটাও মুশকিল হয়ে পড়ছে । কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ নেশাদ্রব্য হয়ে কাজ করছে যেন মিহির উপর । আধো খোলা চোখ দিয়ে মিহি শুধু নিজের অনিশ্চয়তা দেখতে পাচ্ছে । লোকগুলো মিহির সকল কর্মকাণ্ড ভিডিও ধারণ করছে । কী হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না মিফি । একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো মিহির সামনে । নেশার্ত অবস্থায়ও যেন মিহি বুঝতে পারল কোন এক অনাকাঙিক্ষত ঘটনা ঘটতে চলেছে তার সাথে । ছেলেটা ধীরে ধীরে মিহির কাছে আসতে লাগল । দু হাত বাঁধা মিহির,কী করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না, মস্তিষ্কও যেন কাজ করা বন্ধ করে অচল হয়ে রয়েছে ।

🖤

চোখ খুলতেই রিত্ত অনুভব করে কেউ তার উপর ভর দিয়ে আছে । ধীরে ধীরে নিজের দিকে ভালোভাবে তাকায় রিত্ত । রিশাদ বাচ্চাদের মতো রিত্তর পেটে মুখ গুঁজে আছে , জলপট্টিটা এক হাতে । রিশাদের ঘুমন্ত চেহারার নিষ্পাপ চাহনি রিত্তকে টানলেও দিব্যর ভালোবাসা তাকে রিশাদের মায়ায় আর জড়াতে দিল না । বেশ কড়া কণ্ঠে রিশাদকে উঠতে বলল রিত্ত । রিত্তর কণ্ঠ শুনতেই রিশাদের ঘুম ভেঙে গেল । সারারাত নির্ঘুম কাটানোর পর মাত্রই ঘুমিয়েছিল সে । রিত্তর ডাকে উঠে বসল সে । ঘুমের ঘোর আর বেখেয়ালে রিত্তর পেটেই মাথা রেখেছিল বুঝতে পারেনি । রিত্ত কি ভুল বুঝলো ?? উল্টাপাল্টা কিছু ভাবছে না তো? ছোট্ট একটা স্যরি বলে রুম থেকে বেরিয়ে হলের দিকে এগোল রিশাদ । রিত্তও রেডি হলো অফিসে যাওয়ার জন্য । রিশাদের ওয়ারড্রোবের একাংশ জুড়ে মেয়েদের জামাকাপড় । রিত্ত ভাবতো হয়তো রিশাদ মেয়েদের প্রতি দুর্বল কিন্তু রিশাদের আশেপাশে তো দূরে থাক ত্রিসীমানায়ও রিত্ত ব্যতীত কোন মেয়ের ছায়া অবধি দেখেনি সে । রেডি হয়ে নিচে নামতেই রিশাদের দিকে চোখ গেল রিত্তর । কালো রঙ বুঝি একটু বেশিই প্রিয় ছেলেটার তবে সচরাচরের মতো ফর্মাল লুকটা নেই আজ রিশাদের । কালো শার্টটা যেন কোনরকম গায়ে জড়িয়েছে,হাতাগুলো বেসামালভাবে ছেড়ে দেওয়া, ঠিকমতো ফোল্ডও করেনি , চুলগুলো এলোমেলো । রিশাদের এই অগোছালো অবস্থার সাথে একেবারেই পরিচিত নয় রিত্ত । ছেলেটা বরাবরই ফর্মাল আর আজ এমন ছন্নছাড়া কেন?

🖤

দীপের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । মিহির উপর মারাত্মক রাগ হচ্ছিল এতক্ষণ । যে ভয়টা দীপ পাচ্ছিল,সেটাই সত্যি হয়ে গেল । শয়তানগুলো মিহিকে জিম্মি করল । রাগে চোখমুখ লাল হয়ে আসছে দীপের । ফোনে থাকা ভিডিও ক্লিপটা অটোপ্লে হচ্ছে যদিও একবার দেখেই দীপ বুঝে গেছে এটা দ্বিতীয়বার দেখা তার পক্ষে সম্ভব না । ফোন বিছানায় ছুঁড়ে ফেলেছে সে বহু আগেই । নিজেকে প্রচণ্ড অসহায় মনে হচ্ছে দীপের । মিহিকে এত সামলানোর পরও মেয়েটা বারবার একই ভুলগুলো যে খেন করে বসে!!মিহিকে নিয়েই দীপের যত ভয় আর এখন সেই ভয়গুলোই বাস্তব হয়ে ধরা দিচ্ছে । কি ঈরবে বুঝতে পারছেনা দীপ । আপাতত দেশে ফেরাটাই তার জন্য সবচেয়ে জরুরি । মিহিকে খুঁজে বের করতে হবে আগে,তারপর দেখে নেবে ঐ শয়তানের বাচ্চাগুলোকে । সিফাতকে বলে দেশে ফেরার এবং দেশে ফিরেই পরবর্তী কাজকর্মের ব্যবস্থা করে ফেলে দীপ ।

ঘুম ভাঙতেই মিহি অনুভব করে দুহাতে বিন্দুমাত্র জোর নেই মিহির । টানা বারো ঘণ্টা দড়িতে বাঁধা হাতদুটো , তার উপর লোকগুলোর অমানবিক অত্যাচার । দীপের শূণ্যতাটাও যেন আরো বেশি করে ক্ষত-বিক্ষত করতে থাকে মিহির মনটাকে । দীপের কথা না শোনার শাস্তি সে পাচ্ছে এখন কিন্তু মিহি এখনো বুঝে উঠতে পারছে না এদের সাথে দীপের সম্পর্কটাই বা কি??

🖤

অফিসে ঢুকতেই রিত্ত রিশাদের কেবিনে যায় । ব্ল্যাক কফি বানাতে যাবে ঠিক এমন সময় পেছন থেকে রিশাদের কণ্ঠ শুনতে পায়,”দরকার নেই কফির!!তুমি যাও,নিজের কাজ করো।”রিশাদের এ কথা যেন বিদ্যুতের গতিতে সারা মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যায় রিত্তর । রিত্তকে কি আপনাআপনি নিজের বন্দি খাঁচা থেকে মুক্ত করতে চাচ্ছে রিশাদ??তাহলে তো ভালোই কিন্তু রিশাদের এমন বিষণ্ণ চেহারার পেছনে কোন রহস্য লুকিয়ে নেই তো?রিশাদের অবহেলাটাও যেন উপভোগ করতে পারে না রিত্ত । অবহেলাটা উল্টো মন খারাপ হয়ে কষ্ট দিতে থাকে তাকে । কাজের বেশিরভাগ সময় রিত্ত রিশাদের সামনেই বসে থাকে কিন্তু আজ রিশাদ রিত্তর দিকে তাকাচ্ছে না অবধি । রিশাদের এই নতুন রূপ মারাত্মক ভাবে ভাবাতে থাকে রিত্তকে ।

–রিত্ত,কিছু কথা ছিল ।

–জ্বী স্যার বলুন ।

–কেবিনে এসো ।

রিত্ত কেবিনে ঢুকতেই রিত্তকে জড়িয়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে থাকে রিশাদ । আচমকাই এমন করায় রিত্ত কি করবে বুঝে উঠতে পারে না কিন্তু রিশাদকে সরিয়ে দেওয়াতেও কেন যেন মন সায় দেয় না । অগত্যা রিশাদের বাহুডোরেই আবদ্ধ রয় সে ।

চলবে……

[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন ।অত্যন্ত দুঃখিত আমি আগামীকাল গল্প দিতে পারছি না তবে চেষ্টা করব । শুক্রবারে পাবেন ইনশাআল্লাহ।ধন্যবাদ সবাইকে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here