Lover boss part 8

#Lover_Boss
#Season_2
#part_8
#Mihika_Rahman

“কাজটা আপনি ঠিক করছেন না মাহিন সাহেব ।”চিৎকার করে উঠল রিশাদ । দড়ি দিয়ে বাঁধা হাতদুটোকে ছাড়ানোর ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে সে কিন্তু ফলাফল শূণ্য । পাশেই দীপ বাঁধা,মাথা থেকে এখনো ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরছে দীপের,জ্ঞান ফেরেনি এখনো । রিশাদের রাগের মাত্রা দেখে হাসিতে ফেটে পড়ছে মাহিন সাহেব । রিশাদের চিৎকার তৃপ্তি দিচ্ছে তাকে,অব্যক্ত এক চিরতৃপ্তি । রিশাদের কষ্টের মাঝে অপার আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন তিনি ।

ফ্ল্যাশব্যাক ।।

লোকটা পিছনে ঘুরতেই রিশাদ আর দীপ আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে উপনীত হলো কেননা লোকটা আর কেউ না,মিহির বাবা মাহিন । মাহিন সাহেবকে দেখামাত্র রিশাদ দীপকে সাবধানে এগোতে বলে । এমন সময় কে যেন লাঠি দিয়ে দীপের মাথায় আঘাত করে । রিশাদ দীপকে ধরতে যেতেই পিছন থেকে কেউ রিশাদের মুখে ক্লোরোফর্মযুক্ত রুমাল চেপে ধরে । রিশাদ জ্ঞান হারানোমাত্র মাহিন সাহেবের লোকগুলো এসে দীপ আর রিশাদকে ভিতরে নিয়ে গিয়ে চেয়ারের সাথে বেঁধে ফেলে ।

।।

আচমকাই রিশাদের রাগটা আরো বাড়াতে মন চাইল মাহিন সাহেবের । ঠোঁটে এক তাচ্ছিল্যকর কিন্তু রহস্যময় হাসি ঝুলিয়ে বললেন,

–আচ্ছা রিশাদ!জানতে মন চাচ্ছেনা পিছন থেকে তোমার বন্ধুকে আঘাত আর তোমায় অজ্ঞান কে করেছিল ?

–নাহ!সেটা আপনারই কোন নিকৃষ্ট লোকের কাজ ।

–আরেহ নাহ রিশাদ চৌধুরী!এটা আমার কোন লোকের কাজ না । এটা তোমার লোকের কাজ । বিশ্বাস হচ্ছে না?

–নাহ!

–আসো বিশ্বাস করাচ্ছি । এই!ওরে নিয়ে আয় তো কেউ ।

মাহিন সাহেবের তাচ্ছিল্যের হাসির মাঝে এক অদ্ভুত বিশ্বাসঘাতকতার ঘ্রাণ পাচ্ছে রিশাদ । কে আঘাত করেছে তাকে?মাথাটা ঝিমঝিম করছে রিশাদের । চোখে ঝাপসা দেখছে । হঠাৎ হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল । কারো আগমনী বার্তা আশঙ্কার ঝড় তুলল রিশাদের মনে । ঝাপসা চোখে উপরে তাকাতেই জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা বুঝি সে খেল । সামনে রিত্ত দাঁড়িয়ে, মাথা নিচু করে জড়সড় হয়ে,ভয়ে কাঁপছে সে । একটা মেয়ে কোন ছেলেকে কি পরিমাণ ভালোবাসলে তাকে বাঁচানোর জন্য নিজের বিয়ে করা স্বামীকে অবধি আঘাত করতে দুবার ভাবে না?সত্যিই দিব্যর ভাগ্যের উপর বড্ড হিংসা হয় রিশাদের । এতটা হয়তো রিশাদও রিত্তকে ভালোবাসতে পারেনি যতটা রিত্ত দিব্যকে ভালোবেসেছে । রিত্তর কাছে কি রিশাদের ভালোবাসার নূন্যতম দামটা অবধি নেই?না থাকারই কথা । জোর করে তো ভালোবাসা আদায় করা যায় না । এক অদৃশ্য বেদনায় রিশাদের বুকের ভেতরটা চিনচিন করছে । আর সেই চিনচিন ব্যথার পরিপূর্ণ তৃপ্তি নিচ্ছে মাহিন সাহেব ।
“আমার মত সুন্দর রাধে যদি পেতে চাও
গলায় কলসি বেঁধে যমুনাতে যাও

কোথায় পাব হার কলসি, কোথায় পাব দড়ি
তুমি হও যমুনা রাধে, আমি ডুইবা মরি”

মাহিন সাহেব লাইনগুলো গাইতে গাইতে বিশ্রীভাবে হাসছেন তবে এই বিশ্রী হাসির অন্তরালে চাপা একটা বেদনা প্রকাশ পাচ্ছে । হয়তো সেই বেদনার রেশটা কেউ ধরতে পারবে না ।

ধীরে ধীরে চোখ খুলতে লাগে দীপ । প্রচণ্ড যন্ত্রণায় কাঁতরাচ্ছে সে । মাথার ক্ষতটা আসলেই অনেকটা গভীর ,এখনো রক্ত পড়া বন্ধ হয়নি । চোখ খুলতেই ঝাপসা চোখে সামনে মাহিন সাহেবকে দেখতেই রাগে কপালের রগ ফুটে উঠল দীপের । দীপের জ্ঞান ফেরা দেখে মাহিন সাহেব আবারো অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন যেন দীপের জ্ঞান ফেরার অপেক্ষাতেই তিনি ছিলেন । হাততালি দিতে দিতে দীপের সামনে আসলেন তিনি । দীপের থুতনি উঁচু করে ধরে জোরে জোরে হাসতে লাগলেন ।

–আরে জামাই বাবাজী যে!তা মেয়ে আমার এতদিন ঠিকমতো যত্নআত্তি করেছে তো?না করলে আমায় বলো,আমি একটু সেবা করি ।

–লজ্জা করে না আপনার?নিজের স্বার্থের জন্য নিজের মেয়ের ক্ষতি করতেও একটাবার ভাবলেন না?

–মেয়ের ক্ষতি?কে বললো আমি মিহির ক্ষতি করেছি?ও তো সবই জেনে বুঝে আমায় এসবে সাহায্য করেছে । তোমার সাথে পালানো থেকে শুরু করে তোমাদের মাঝের ভুল বোঝাবুঝি,তোমাকে দেশে ফেরানো এবং তোমাদের দুইজনকে একসাথে আমার পায়ের নিচে আনা । এই মাস্টারপ্ল্যানটা তো তোমার বউয়েরই ছিল । আমি তো শুধু আমার ভিলেন রোল প্লে করেছি ।

মাহিন সাহেবের কথা শেষ হতে না হতেই মিহি এসে দাঁড়ালো তার পাশে । মিহির চেহারার মাঝে আগে যেমন মায়া আর বোকামি ফুটে উঠত আজ তার পরিবর্তে হিংস্রতা আর কুটিলতা ফুটে উঠছে । নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে দীপের তবুও মিহির দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকাতে পারল না সে । ভালোবাসলে হয়তো এমনটাই হয় । যাকে ভালোবাসা যায় তাকে কখনো ঘৃণা করা যায় না । ভালোবাসার অনুভূতিটা বড়ই প্যাঁচালো । যখন ভালোবাসার মানুষের কথাকে ভুল ভাবা হয় তখন সেই মানুষটা আর চাইলেও কোনদিন নিজের ভালবাসাকে আগের মতো ভালোবাসতে পারে না । সেদিন যদি দীপও মিহিকে ভুল বুঝে রিশাদের সাথে থাকত হয়তো ভালোবাসার নামে আজ এতবড় বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করতে হত না । কয়েকটা পেপার হাতে নিয়ে রিশাদের দিকে এগিয়ে এলেন মাহিন সাহেব ।

–কি এসব?

–আরেহ রিশাদ চৌধুরী,কুল!তেমন কিছু না । আপনার আন্ডারওয়ার্ল্ডে যে পজিশন ছিল তার পাওয়ার অফ অ্যাটর্নীটা আমার চাই যেটা একসময় দীপের ছিল । দুজনেই চটপট সাইন করে দিন তো ।

–আন্ডারওয়ার্ল্ড থেকে আমি বেরিয়ে এসেছি অনেক আগেই । যা অপরাধ করেছি একসময় তার সবটুকু শুধরাতে না পারলেও চেষ্টা করে যাচ্ছি । আমার নাম ব্যবহার করে আবার কেউ খারাপ কাজে দাম্ভিক্য দেখিয়ে বেড়াবে এটা রিশাদ আফসান চৌধুরী বেঁচে থাকতে কখনোই সম্ভব না ।

–সাইন করবি কি না বল?

–না মানে না ।

মাহিন সাহেবের রিত্তর কপালে রিভলবার তাক করল । মুহূর্তেই রাগে চোখ লাল হয়ে গেল রিশাদের । দড়ি খোলার চেষ্টায় হাত-পা ছুঁড়তে লাগল সে । রিশাদের এমন উদগ্রীব হওয়াটা যেন আরও আনন্দ দিতে লাগল মাহিন সাহেবকে । রিত্ত চোখ বন্ধ করে আছে,কোন কথা নেই তার মুখে,একেবারে নিস্তব্ধ যাকে বলে । চোখটাও যেন শূন্যতায় ভরা,বাঁচার আকুতিটা অবধি প্রকাশ পাচ্ছে না । সত্যিই রিশাদের এখন মনে হচ্ছে রিত্তর মাঝে ডুবে মরতে । এ কেমন মায়ায় জড়িয়েছে সে যেখানে তার একতরফা ভালোবাসার কষ্টের চেয়ে মৃত্যু সুখকর মনে হচ্ছে । বেশ শান্ত ভঙ্গিতে রিশাদ বলল হাত খুলে দিতে,সে সাইন করবে । দীপ নিশ্চুপ,সে কিছুই বলছে না । সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা তো সেই খেয়েছে । মিহি নামক মেয়েটাকে নিজের জীবনের চেয়েও অনেকটা বেশি ভালোবেসেছিল সে অথচ আজ তার এই প্রতিদান পেল । রিশাদ সাইন করতেই দীপও সাইন করে দিল পেপারটাতে । মাহিন সাহেবের লোকগুলো দিব্যর লাশটা ফেলে দিয়ে গেল । ছেলেটাকে মেরেই ফেলেছে তারা ,কোন প্রমাণ রাখতে চায়নি হয়তো । রিশাদ রিত্তর কাছে দাঁড়ায় কিন্তু রিত্ত দৌড়ে দিব্যর লাশের পাশে বসে । দিব্যর রক্তাক্ত লাশটাকে জড়িয়ে ধরে । বাঁধভাঙা আহাজারিতে ফেটে পড়ে সে । দিব্যর রক্তাক্ত মুখে ওড়না দিয়ে ক্ষত মুছে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে । চিৎকার করে কাঁদছে রিত্ত । দূরে দাঁড়িয়ে রিত্তর কান্না দেখছে রিশাদ । সত্যিই কি কাউকে এতটা ভালোবাসা যায়? এতটা ভালোবাসার এক শতাংশও যদি রিত্ত রিশাদকে করুণা ভেবেই দান করে তাতেও রিশাদ আমৃত্যু কৃতজ্ঞ থাকবে তার কাছে কিন্তু রিত্ত কি আদৌ দিবে সেই এক শতাংশ?

দিব্যর লাশটা দাফনের পর থেকে রিত্ত যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে । কাঁদছেও না আর । রিশাদ রিত্তর পাশে অবধি যেতে পারছে না । প্রথমবারের মতো কিন্তু তীব্র একটা সংকোচ কাজ করছে তার মনে । এইমুহূর্তে রিত্তর পাশে গিয়েও বা কি বলবে রিশাদ?দিব্যর মৃত্যুর জন্য তো রিশাদই দায়ী । বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে রিশাদ ।

সিগারেটটা জ্বালিয়ে হাতে ধরে দীপ,ঠোঁটে লাগাতে আর মন চায় না । ঠোঁটটার উপর সিগারেটের নয়,অন্যকারো অধিকার আর আজীবন তারই অধিকার থাকবে । জীবনে সে থাকুক বা না থাকুক,অধিকারটা তারই থাকবে ।

চলবে….
[ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here